সেন্টমার্টিন থেকে চলে আসার পর মনটা কেমন অবসাদগ্রস্ত হয়ে ছিলো। এতো আনন্দ ফুর্তির হঠাৎ পরিসমাপ্তি খুবই বেদনাদায়ক। তাই চলে আসার পর থেকেই মনে মনে ফন্দি আঁটতে শুরু করি যে আবার কোথায় যাওয়া যায়। ভাবলাম সমুদ্রতো দেখা হলো, বাকি রইলো পর্বতশৃংগ। বাকি রইলো হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্গা। নামটা মনে হতেই এক অজানা রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। যে করেই হউক হিমালয়কে কাছ থেকে একবার দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। অন্তত পশ্চিমে আসার আগে হিমালয় আমাক দেখতেই হবে। কামরুল যথারীতি প্রস্তাব পেশ করলো এবং যথারীতি তা পাশ হলো। গন্তব্য দার্জিলিং। :awesome:
২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ষোল তারিখ আবারো ৯ জন রওনা দিলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে। আগেই প্ল্যান করা ছিলো সতেরো-আঠারো তারিখ কলকাতা থেকে ঊনিশের রাতে সবাই জলপাইগুড়ি রওনা দিবো। কলকাতা দেখার সময় পেলাম হাতে দুই দিন। সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম ইডেন গার্ডেন, ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কালীঘাট আর দক্ষিনেশ্বর মন্দির দেখার জন্যে। সে এক দারুণ অনুভূতি। এতোদিন সুনীল-সমরেশ-আর শীর্ষেন্দু’র বই পড়ে কলকাতার অনেক জায়গা কেমন আপন হয়ে গিয়েছিলো। নিজের মতো কল্পণা করেছি কেমন হতে পারে এ জায়গাগুলি। এবার সামনা সামনি দেখলাম। অঞ্জন-নচিকেতা-আর সুমনের গানের সেই চিরচেনা কলকাতা।
পার্কস্ট্রিট থেকে পাতাল রেলে উঠে দমদম বিমানবন্দর পর্যন্ত গেলাম, আবার দমদম থেকে টালিগঞ্জ। ধর্মতলায় এসে পানিপুরি আর মাটির ভাড়েতে চা খাওয়া হলো দেদারসে। তারপর সন্ধ্যায় সুমনের গানের মতো ‘নিজামে’ গিয়ে কাবাব ভরপেট। কাবাব খেয়ে প্ল্যান করলাম সিনেমা দেখব। ‘লাইট হাউজে’র সিনেমা হলে সিনেমা চলছিলো। একপাশে ‘এক টিকেটে দুই ছবি’ অন্যপাশে অপর্না সেনের বিখ্যাত ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’। সবাই মিলে হইহই করে হলে ঢুকে গেলাম সিনেমা হলে। কে কোনটা দেখতে গিয়েছিলো সেটা এখানে আর বলা যাবে না, 😉 মাইর খাওয়ার চান্স আছে। ;;;
কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমার আর মাসুদের যেন সিনেমাতে মন বসছে না। বেরিয়ে পড়লাম হল থেকে।
বেরিয়ে এসে সামনে দাঁড়াতেই শুনতে পেলাম সিনেমা হলের দো’তালা থেকে গান ভেসে আসছে। কৌতুহল নিয়ে দু’জন দো’তলায় উঠে গেলাম। দেখি একটা বিয়ার বারে হিন্দী গান হচ্ছে। প্রায় ৮ -১০ জন গায়িকা স্টেজে গান করছেন আর স্রোতারা বিয়ার খেতে খেতে যার গান ভালো লাগছে তার গায়ে নোট ছুড়ে দিচ্ছেন। এই প্রথম হিন্দি সিনেমার বাস্তব স্বাদ পেলাম। আমাদেরও একজনের নাঁচ ভালো লাগলো, ‘আপ য্যায়সা কই মেরে জিন্দেগীমে আয়ে তো বাত বান যায়ে’ গাইতে গাইতে মেয়েটা যখন আমাদের টেবিলের সামনে এসে শরীরটা একটা ঝাকি দিলো তখন একবার ভাবলাম দেই কয়টা রুপি ছিটাইয়া ;;; । কিন্তু সামলে নিলাম। আসলে নোট ছিটানোর মতো অবস্থা ছিলো না। দুইজন দুইটা কিংফিসার মেরে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।
হোটেলে ফিরে সবার কাছে সিনেমার প্রশংসা শুনে খুব মন খারাপ হলো। কিন্তু কেউই বুঝতে পারলো না ভিতরে ভিতরে আমরা দু’জন কতটা প্রফুল্ল। এমনকি মাসুদ আর আমি একে অপরকে বুঝতে দেইনি আমরা কতোটা আনন্দিত। নীরব রসের একটা আলাদা নিশ্চুপ স্বাদ আছে সেদিন আমরা দু’জন টের পেয়েছিলাম। সেদিনের ক্লান্তির পরিসমাপ্তি টানলাম হোটেলে বেঘোরে ঘুমিয়ে। তার আগে ইচ্ছে মতো চেখে নিয়েছিলাম খাটি রাশিয়ান ভদকা, যার জন্যে কে কার কোলে ঘুমিয়েছিলাম কারোর মনে নেই। শুধু মনে আছে স্বপ্নে সেই মেয়েটা এসে আমাকে আবার ঝাকি দিয়ে গান শুনিয়ে দিয়েছিলো ‘আপ য্যায়সা কই মেরে জিন্দেগীমে আয়ে তো বাত বান যায়ে।’
পরদিন সকালে উঠে সকালে নাস্তা সারলাম লুচি, তরকা, হিংয়ের কচুরি, আর ডাল দিয়ে। সঙ্গে মহিষের দুধের অখাদ্য চা। কিপ্টার দল চা’টাও ঠিক মতো বানাতে পারে না x-( । তবে কলকাতার নিরামিষ খুবই সুস্বাদু। নাস্তা সেরে আবার বের হলাম কলকাতা দর্শনে। যেহেতু আমার আগেই আরো কয়েকবার যাতায়ত ছিলো আমার উপর দায়িত্ব পড়লো সবাইকে গাইড করার। কিন্তু আমি শুরুতেই প্যাচ লাগিয়ে ফেললাম। সবাইকে কালীঘাট নিয়ে গেলাম দক্ষিনেশ্বর মনে করে। গিয়ে সবাই আমার উপর হতাশ। একি দেখালাম!! গঙ্গা নামের এক ড্রেনের মতো নালা বয়ে গেছে যার জল অমাবশ্যার মতো কালো। কিন্তু আমি খেই হারালাম না।
দক্ষিনেশ্বর মন্দির যাবার পর সন্তুষ্ট হলো সবাই। একলাফে উঠে পড়লাম বেলুর মঠ যাবার নৌকায়। নৌকায় কলকাতার কাকা, মাসিরা আর আমরা ক’জন। আমাদের দেখলে মুহুর্তেই ধরে ফেলা যায় আমরা হরলিক্স খাওয়া বাংলাদেশি আর ওরা পান-বিড়ি খাওয়া কলকাতার লোক। নৌকাতে দাঁড়িয়েই মাসুদ ছবি তুলতে তুলতে নৌকার কিনারে চলে এলো তখন কলকাতার এক দাদা বললেন, ‘ দাদা সাবধানে ছবি তুলুন, নইলে পরে গেলে আপনাকেই ছবি করে দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে।’ পুরো নৌকা হাসিতে ফেটে পড়লো :khekz: ।
বেলুর মঠ দেখে লাঞ্চ সেরে নিলাম। তারপর বিকেলে গেলাম সাইন্স সিটি আর সল্ট লেকে নিকো পার্ক দেখতে। বিকের নাস্তা সারা হলো ভেলপুরি দিয়ে তারপর বিখ্যাত কফি হাউজে গেলাম সন্ধ্যাটা কাটাতে। চারমিনার সিগারেটের সঙ্গে কোল্ড-হট কফি চললো অনেক্ষণ। আর বইয়ে পড়া কলকাতার সাথে বাস্তবের পার্থক্য নিয়ে জম্পেশ তর্ক। হোটেলে ফিরে আসার পথে শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে কেনা হলো পরদিন রাতের ‘দার্জিলিং মেইলে’র টিকেট। ট্রেনের নাম শুনেই মনটা কেমন চনমন করে উঠলো। সত্যজিতের ফেলুদা কতোবার এই ট্রেনে চড়েছে ভাবতেই একটা রোমাঞ্চ জাগলো মনে।
পরেরদিন রাতে জার্নি করতে হবে এইজন্যে দিনে আর বেশি ঘুরাঘুরি করলাম না। সিনেমা দেখে আর নিউমার্কেটে কেনাকাটা করে কাটলো সারাদিন। হোটেলে ফিরে আড্ডা আর বোতলের পর বোতল ভদকা। রাত দশটা বাজার কিছুক্ষণ আগেই সবাই পৌছে গেলাম শিয়ালদাহ স্টেশনে। আগেই ডিনারের জন্যে খাবার দাবার কিনে রেখেছিলাম। উঠে নিজেদের বার্থ খুজে নিয়ে বসে পড়লাম । তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ডিনার সেরে দিলাম ঘুম। রাত একটা’র দিকে মুর্শিদাবাদে ট্রেন থামার পর হঠাৎ কার ডাকে যেন ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি শুয়েছিলাম বাঙ্কারের উপরে। চোখ মেলে দেখি কয়েকজন হিজড়া ডাকাডাকি করছে আমাদের। বলছে, ‘এই উঠ, মাসিরা এসেছে, মালকড়ি কিছু ছাড়’ 😮 । এই রকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কামরুল ফাজলামি করে মাসুদকে দেখিয়ে বললো, ‘মাসি টাকা পয়সা সব ওর কাছে’। মুহুর্তেই সবাই মাসুদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো। বলে, ‘জলদি মালকড়ি দে, নইলে তোরে উঠিয়ে নিয়ে যাবো’ :grr: । ভয়ে মাসুদ পকেট থেকে রুপি বের করে মাসিদের খুশি করে দিলো। তারপর ওরা চলে গেলে আমরা মাসুদকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করলাম। মাসুদ থ্রেট দিলো আবার হিজড়ারা আসলে ও আমাদের কাউকে দেখিয়ে দেবে। বাকি রাত আর ঘুম হলো না। সিগারেট আর গল্প করতে করতে দেখি ভোর সাতটা বেজে গেছে। ট্রেনের ক্যাফেতেই অখাদ্য মহিষের দুধের চা খেতে খেতেই ট্রেনটা এক স্টেশনে এসে থামলো। জানালা দিয়ে মুখ বের করে দেখি স্টেশনের নেমপ্লেটে লেখা ‘নিউ জল্পাইগুড়ি’। বুঝলাম এসে গেছি।
চলবে নাকি? :dreamy:
না পইড়া ১ম।
আমিন ভাই খেলমু না....
কেন? আমি তো আজকে কমেন্টে ফার্স্ট হওয়ার প্রতিজ্ঙা নিয়া নামছি। আমার মত লোকের লেইগা এই চান্স প্রতিদিন আসে না। তয় এখন মাঠ ফাঁকা হয়া গেছে। পোস্ট লিখতে বসুম।
যা যা পোস্ট লেখতে যা, ইস কতদিন তোর পোস্ট পড়ি না...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
চলবে মানে? জোরে জোরে....১ম নাকি?? 😕
=)) =))
ওয়াও আরেকটা ভ্রমন কাহিনি...... যাই দার্জিলিং ঘুইরা আসি
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
১ম।
দোস্ত কঠিন হইসে লিখাটা।
:boss: :boss: :boss:
ধন্যবাদ দোস্ত।
সবাই কনফিউ্জড তাই আমি ১ম বইলা দাবি করলাম।
গ্যাটিস টা সেরকম হইছে :thumbup: ;;;
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
গ্যাটীস শব্দের অর্থ টা একটু ভেঙ্গে বলবেন কি?
:khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আবার জিগান বস?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খুব ভালো লাগলো পড়ে, মনে হচ্ছে আমিও জানি ঘুরছি কলকাতায়। খুব ভালোভাবে চলবে, পরের পর্ব জানি তাড়াতাড়ি পাই
ইস...............।
বিরাট মিস...............।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাই,আমার ব্লগ রেগুলার পরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবার জিগায়? x-(
অবশ্যই চলবে :thumbup:
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
ঐ... B-)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ঐ… B-)
ঐ.. :-B
কটঠিন হইছে :hatsoff:
:thumbup: :thumbup:
এতো আগের কাহিনি এত ডিটেইলে মনে রাখস ক্যাম্নে মিয়া, ডায়রি লেখতা নাকি? নেক্সট পার্ট কুইক :clap:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
না ভাই,জীবনে কোনোদিন ডাইরি লিখি নাই।তবে এই বন্ধুদের সাথে থাকা অবস্থায় যা যা ঘটেছিল তা ভোলা সম্ভব না।আপনি চেস্টা করেও ভুলতে পারবেন না বলে আমার বিস্বাস।
ভাই আপনেতো সমস্যায় ফালাই দিলেন খুব্ ঘুরতে ইচ্ছা করতেসে 🙁
ভাই লেখাটা অসাধারণ হইসে :boss: :boss:
ঐ :clap: :clap: :thumbup: :thumbup:
দেশে যখন একবারে চলে আসব তখন যাবনে একবার সবাই মিলে ঘুরতে।কি বল?
চমৎকার হয়েছে। :clap: একেবারে নিজেরও কলকাতা ট্যূরের স্মৃতিচারণ হয়ে যাচ্ছিল। পার্থক্য শুধু শৃঙ্গ দেখাটার কাজটা দার্জিলিং এ না হয়ে হিমাচলে হয়েছিল। 😉
ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।
দোস্ত তাড়াতাড়ি পরের পর্ব লেখ ।
চলে গেছে অলরেডি।কামরুল দিতে দেরি করতাছে। x-(
চলবে মানে? দৌড়াবে !!
দোস্ত, তুই ভ্রমন কাহিনি খুব ই সুন্দর করে লিখিস।এক কাজ কর আমার দুই একটা লিখে দে।
তরে তো আর খুইজা পাইলাম না সেসের দিকে।হারাইয়া গেছিলি নাকি।।?
কিসের শেষের কথা কস?
ও ভ্রেম হইয়া গেছে।এখনও তো কিছু শেষ হইয় নাই।আরো অনেকখানি বাকি আছে।
কি কস রে
ঈমানে কই, এই লেখা না চালাইলে আপনার কাকা মাসীর খবর আছে কিন্তু 😡
ব্যাপক হইতেসে। পুরাই পাঙ্খা।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
লেখা পড়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ...জিহাদ
দারুণ লেখো তুমি।
ছবি-টবি দেয়াতে মনে হচ্ছে
আমিও আরেকবার ঘুরে এলাম
কলকাতা শহর থেকে।
তোমার এই "চলবে নাকি?"
দেখলেই মনে হয়
:frontroll: দেওয়াই তোমারে! 😀
হ্যা দাদা, :frontroll: দিতেই আছি।
eibar
এইবার বুঝেন, আমার দোকানের চা কত ভালো :teacup:
সৈয়দ মুজতবা আলী কি আপনার আত্মীয় হন নাকী??? গুরু লেখা যে ঐন্দ্রজাল ছড়াচ্ছে, দিব্যি করে বলছি পরের পর্ব না পড়া পর্যন্ত শান্তি মিলছে না। :hatsoff:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আরও,আরও অনেক কাহিনী স্টকে আছে ভাই।কবে যে তোমাদের পাশে গিয়ে বসে শোনাতে পারব মাঝে মাঝে সেটাই চিন্তা করি।
অসাধারন :clap: :clap: