চুরি কাহিনীঃ প্রিলিউড

[এই ব্লগটি যারা পড়ছেন তাদেরকে যদি একাদশ/দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়মভাঙার গল্প বলতে বলা হয়, তাহলে আপনারা কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবেন তাই নিয়েই হয়তো দ্বিধান্ধিত হয়ে পড়বেন। কারণ এদিক দিয়ে আমাদের (মগকক) চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ আপনাদের গল্পের ঝুড়ি; লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া বা কলেজ পালিয়ে খেজুরের রস চুরি করতে যাওয়া। গল্পগুলি আসলেই অনেক মজার। কিন্তু একজন এমজিসিসিয়ানকে যদি তার ক্যাডেট লাইফের কিছু নিয়মভাঙার গল্প বলতে বলা হয় তাহলে সে রীতিমত চিন্তায় পড়ে যাবে কারণ দেখা যাবে তার গল্পের ভান্ডার প্রায় শুন্য (কারণটা একটু পরেই বলছি)। তাই যারা এই লেখাটি পড়বেন তারা দয়া করে তাদের নিজেদের অসম্ভব মজার এবং দুঃসাহসিক অশিষ্টাচারের সাথে তুলনা করবেন না, তাহলে হয়তো আমার এই টুকরো গল্পকে ‘নিয়মভাঙার গল্পের নিয়ম ভাঙা’ মনে হতে পারে!]

আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি, আমাদের গাইড সিনিয়র ব্যাচ থেকে লিটা আপা SSC তে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করেছিল। সেই সুবাদে ছেলে ক্যাডেটরা যারা স্ট্যান্ড করেছিল, প্রথমবারের মত MGCC তে আসার সুযোগ পেল তাদের ভাল ফলাফলের পুরস্কার নিতে। তাদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল গার্লস-দের হাউস থেকে অনেক দূরে স্যার ম্যাডামদের নতুন কোয়ার্টারে। এবার তারা উতলা হয়ে উঠলো একটু নিয়মভঙ্গ করে গার্লস ক্যাডেটদের সাথে গণসংযোগ করতে (তারা অসাম্প্রদায়িক ছিল, নাকি রোমান্টিক ছিল — তা আমি ঠিক বলতে পারছি না!!?!) কিন্তু নিজ নিজ এডজুটেন্ট দের অত্যাচারে তাদের সে ইচ্ছা পূরণ হলনা। এবার তারা মন খারাপ করে ঘরেই বসে রইল, কেউ কেউ বারান্দার গ্রীল ধরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, কেউ কেউ জানালা দিয়ে (আমি বাড়িয়ে বলছিনা; আমাদের কলেজ প্রিফেক্ট গিয়েছিল তাদের দেখতে, এরকম ই একটা বর্ননা শোনা গিয়েছিল তখন তার কাছ থেকে)। কিন্তু কোন গার্লস তো দেখাই যায়না, যা দেখা যায় সেটায় ঐ ‘র্ল’ টা নেই, নারিকেল ‘গাস’ (গাছ) দেখা যায় শুধু। তাই তারা আর কিছু করতে না পেরে সবাই মিলে ডাব চুরি করে ফেলল। স্ট্যান্ড করা ছেলেরা প্রথমবারের মত এমজিসিসি-তে ঢুকেই ডাব চুরি করে খেয়েছে এ ঘটনা তখন (২০০০-এ) কলেজে খুব আলোড়ন তুলেছিল। আমাদের স্যার ম্যাডামরা রীতিমত হতাশ কারণ এ ধরনের ঘটনার সাথে তারা অভ্যস্ত নন। সত্যি বলতে কি, আমার ব্যাপার টা বেশ মজাই লেগেছিল, প্লানটা মাথায় রয়ে গেল – ভাবলাম কাস 11 এ উঠে হাতে কলমে একটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

এই ঘটনার ঠিক এক বছর পর আমরা SSC তে যখন খুব ভাল ফলাফল করে কলেজে ফিরলাম তখন তো আমরা সেখানে একেবারে স্টার! জুনিয়ররা ব্যানার-ট্যানার বানিয়ে আমাদের অভিনন্দন জানাল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল প্রিন্সিপাল স্যার প্রায় রোজ কিছু সাংবাদিককে তার মেধাবী ছাত্রীদের সাক্ষাতকার না নিতে দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পেরে মহা গর্বিত হয়ে যেতেন। আর উইকেন্ড-এ প্রিন্সিপাল এসেম্বলীতে এ লাইনটা নিয়মিত থাকতঃ “আমি প্রথম আলোর সাংবাদিককে ফিরিয়ে দিয়েছি… তারপর এল ইত্তেফাকের সাংবাদিক…” শুরু হয়ে গেলেন স্যার। সে যে তার ক্যাডেট দের রেজাল্টে অসম্ভব আনন্দিত সেটা কিছুতেই চেপে রাখতে পারছেন না।

এবার ক্লাসমেটদের মাঝে একটা গা ছাড়া ভাব চলে এল। আগে সবাই খুব পড়ালেখা করেছিল। ভাল রেজাল্ট হয়েছে। HSC পরীক্ষার অনেক দেরি এবার তাই কিছুটা মাস্তি করে নিতে চায় সবাই। কি করা যায়, কি করা যায়… বিনোদনের উপায় তো খুবই সীমিত। টিভিতে ডিশ নাই। ফার্স্ট টার্ম তাই তেমন কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও নাই যেটা দিয়ে ক্লাস 11 ব্যস্ত থাকতে পারে। একটাই কম্পিটিশন ছিল ‘ক্বিরাত’ আর ‘কবিতা আবৃত্তি’ যেটার প্রতি ক্লাস 11 এর আকৃষ্ট হবার কথা নয়। এক্ষেত্রে শুধু JP গুলাই গাধার খাটনি খাটল বাকিরা নয়। বিনোদনের যেহেতু কিছু নেই, সুতরাং ডেয়ারিং একটা কিছু করে দেখাতে হবে।

(চলবে)

৩,৫৫০ বার দেখা হয়েছে

৫৫ টি মন্তব্য : “চুরি কাহিনীঃ প্রিলিউড”

  1. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    প্রিন্সিপাল স্যার প্রায় রোজ কিছু সাংবাদিককে তার মেধাবী ছাত্রীদের সাক্ষাতকার না নিতে দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পেরে মহা গর্বিত হয়ে যেতেন।

    সিরাম ভাব যে!!

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)
    সেই সুবাদে ছেলে ক্যাডেটরা যারা স্ট্যান্ড করেছিল, প্রথমবারের মত MGCC তে আসার সুযোগ পেল তাদের ভাল ফলাফলের পুরস্কার নিতে।

    সেইবার আমাদের মত সদ্য এইচ.এস.সি পাশ করা কয়েকটাকেও ওখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। :shy: :shy: আর ডাব খাওয়া সেই ক্যাডেটদের মধ্যে আমিও ছিলাম। 😀 😀

    আইরিন, লেখা মজার হচ্ছে। চালিয়ে যাও। :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    নিয়ম ভাংল কই? 😮

    আমি ভাবছিলাম, ছূডু আপু ক্যামনে নারিকেল "গাছে" উইঠ্যা ডাব পাইড়া খাইছিলা সেই কথা কইবা। :grr: অন্তত দুয়েক টান বিড়ি-সিগারেটেও চলতো। ~x(

    দেখি, পরের পর্বে কি কও...

    অফটপিকঃ অংকের হাই স্যার মগকক'তে ছিলো মনে হয় সেসময়। উনি সিরাম এক "মস্তান" আছিলেন। B-)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমাদের ব্যাচ থেকে ঐবার আমরা ১৮ জন স্টান্ড করেছিলাম, যতদূর মনে পড়ছে আমরাই ছিলাম সর্ব্বোচ্চ, চরম মজা হইছিল, অনেকটা লং এক্সকার্সন টাইপ...

    @ তানভির ভাই, আপনারা মনে হয় ৫ জন এসেছিলেন আর খুব সম্ভবত আমাদের ফ্লোরেই ছিলেন।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    এবার তারা মন খারাপ করে ঘরেই বসে রইল, কেউ কেউ বারান্দার গ্রীল ধরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, কেউ কেউ জানালা দিয়ে (আমি বাড়িয়ে বলছিনা; আমাদের কলেজ প্রিফেক্ট গিয়েছিল তাদের দেখতে, এরকম ই একটা বর্ননা শোনা গিয়েছিল তখন তার কাছ থেকে)। কিন্তু কোন গার্লস তো দেখাই যায়না, যা দেখা যায় সেটায় ঐ ‘র্ল’ টা নেই, নারিকেল ‘গাস’ (গাছ) দেখা যায় শুধু।

    আহারে বেচারারা!! আপু তোমাদের কি ওদের জন্য একটুও মন খারাপ লাগেনি?


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. তৌফিক

    ক্লাস সিক্সে থাকতে আপারে দিয়া আসতে এম জি সি সি গেছিলাম। এর পর এক-দুইবার যাওয়া হইছে। আমাদের মির্জাপুরের ময়মনসিংহ পার্টির একটা অবসর বিনোদন ছিল যদি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এম জি সি সি-র জায়গায় হইতো, তাইলে কি কি বানরামি আমরা করতাম। অবশ্য জুনিয়ার থাকাকালীন এই রকম হা হুতাশ করছি, সিনিয়ার হইলে পরে মনে হইছে মির্জাপুর মির্জাপুরের জায়গাতেই বস। 🙂

    সুন্দর ওপেনিং সুরভী। :thumbup:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।