(দু’দিন আগে,রাত দশটা)
রুমী
জানালার কাঁচ অল্প নামানো। কুয়াশার মত বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। এই বৃষ্টির ফোঁটা হয়না। ঝাপসা বাষ্পের মত ভাসতে থাকে, কিংবা মাকড়সার সুক্ষ জালের মত। আমিও ভাসছি। প্রবল উত্তেজনার সাথে কাজ করছে আদিম উদবেগ। আমি ক্লাচে পা দিয়ে ফোর্থ গিয়ারে শিফট করলাম। সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি। এবারের শিকার সিলেট পৌঁছেই করবো। দ্রুত গন্তব্যে উপস্থিত হবার প্রবল তাড়া অনুভব করছি। পিঠ টান টান হয়ে আছে। শরীরে তীব্র বিদ্যুতের আনাগোনা টের পাচ্ছি। পুরো আনুষ্ঠানিকতায় এটা আমার অন্যতম প্রিয় ধাপ। এই প্রত্যাশা মিশ্রিত অপেক্ষার মাঝে আমার ঘোর লাগানো নেশা হয়। স্টেরিওতে মৃদু গুঞ্জন তুলে পথকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করছে জন ডেনভার, আর আমি আমার আসল ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গান না শুনে আমি প্রায় কিছুই করতে পারিনা। এর পেছনের কারণটা খুব সরল। আমি যা করি, তাতে ছন্দের একটা তাড়না আছে। গানের তাল আমার প্রতি পদক্ষেপে মেট্রনোমের কাজ করে।
হাত আলগোছে রাখা স্টিয়ারিং-এ। তালুর এক মোচড়ে সাবধানে বাঁক ঘুরলাম। ঘুরতেই হেডলাইটের আলো গিয়ে পড়লো এই সময়ে সাধারণত জনমানবহীন জীর্ণ যাত্রী ছাউনিতে। আমি বলতে গেলে কখনোই অবাক হইনা। কিন্তু চমকে আবিষ্কার করলাম ছাউনির সামনে দাঁড়িয়ে এই মধ্যরাতে আমাকে থামানোর জন্য অসহায় চোখে হাত ইশারা করছে – একটা মেয়ে। খুব ই অদ্ভুত ব্যাপার, সাহায্যের জন্য আবেদন করতে থাকা মেয়েটা তেমন, ঠিক যেমনটা আমার চাই। কাকতালীয় না দৈবের যোগসূত্র সে হিসাব মনে মনে মিলাতে মিলাতে আমি ধীরলয়ে ব্রেক কষলাম। পাশ দিয়ে আরো একটা গাড়ি শোঁ করে চলে গেল। আমি কাঁচ নামাতে নামাতে ত্রস্ত পায়ে মেয়েটা আমার দিকে এগুতে থাকলো। প্রকৃতির সব স্বাভাবিক নিয়ম উপেক্ষা করে আজ হরিণী ক্ষুধার্ত সিংহের কাছে এসেছে, নিজের সব উজাড় করে দিতে।
………………………………..
(দুদিন আগে)
ঐন্দ্রিলা
আমার প্রচণ্ড অসহায় লাগছে। বাবা বাসায় নেই। মা’কে এ কথা কোনভাবেই বলা যাবেনা। মা’র অল্পতে বিচলিত হবার রোগ আছে। দড়ি দেখলে মা অজগরের ভয় পায়। আর এ কথা শুনলে তো নির্ঘাত হার্ট এটাক করবে। কিন্তু কাউকে না বলে থাকতেও পারছিনা।
আগে কখনো ওরা এগিয়ে এসে কথা বলেনি। অনুসরণে,দৃষ্টি বিনিময়ে ব্যাপারটা থেমে ছিলো। কিন্তু গতকাল..মা গো! ভেবেই আমার গা ঘিন ঘিন করে উঠছে। কি বিশ্রী চেহারা ছেলেটার। আমাদের বয়সের হবে। অথচ কি ভীতিকর মুখের ভঙ্গী। আমি অজান্তে হাতের কবজি স্পর্শ করি। এখানটা ধরেই টান দিয়েছিলো ছেলেটা। গা থেকে সস্তা পারফিউমের সাথে মেশা সিগারেটের উৎকট ঘ্রাণ আসছিলো। আমার পাকস্থলী উলটে আসছিলো। আর আমাকে যা বলল!কি নিঃস্পৃহ মুখে এত বড় একটা কথা নির্দ্বিধায় বলে ফেললো! সে কথা পৃথিবীর কোন মেয়ের যাতে শুনতে না হয়। আমি বাসায় এসে বমি করেছি, আটকে রাখতে পারিনি। মানুষ এতটা খারাপ ও হতে পারে! ওর ঘরে কি মেয়ে মানুষ নেই? আমার সম্মান এত ঠুনকো না যে রাস্তার একটা বদলোকের কথায় নষ্ট হয়ে যাবে। তবু আমার নিজেকে কেমন নগ্ন লাগতে থাকে। বাবা বাসায় থাকলে এখুনি নালিশ করতাম। আমার বাবা নিরীহ মানুষ এ কথা সত্য, কিন্তু আমি জানি আমাকে এত বড় কথা বলেছে শুনলে বাবা ছেলেটাকে টুকরো করে ফেলত। অন্তত নরম গলায় বকে দিত। বাবা কাউকে টুকরো করতে পারে এই চিন্তাটা এতোটা হাস্যকর যে আমি এত বাজেরকম মন খারাপের মাঝেও ফিক করে হেসে ফেললাম। শ্রাবন্তীকে বলেছিলাম যে ছেলেগুলি আমাকে প্রতিদিন ফলো করে। ও আমাকে বলেছিলো ব্যাগে ছুরি,কাঁটাচামচ এরকম কিছু একটা সাথে নিয়ে বের হতে। ও নাকি এটাই করে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাঁটাচামচ সাথে থাকলে লাভ কি? তুই কি ওটা দিয়ে কাউকে মারতে পারবি? ও বলেছিলো নিরাপত্তার জন্য রাখা। এলাকার একটা বদমাইশ বিরক্ত করছিলো। ব্যাগে কাঁটাচামচ রাখার পর থেকে নাকি অন্তত মানসিক একটা শান্তি পায় ও। কিন্তু সত্যিকারের বিপদ হলে এরকম ভোঁতা একটা জিনিস আরেকটা মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়ার সাহস হবে কি না সে ব্যাপারে ওর সন্দেহ আছে।
_বুঝলি ঐ, আমি খুব নরম। এসব খুনাখুনি টাইপের ব্যাপার রক্তে থাকতে হয়। আঙ্কেলকে দেখে বোঝা যায় উনি অহিংস মানুষ। আমি নিশ্চিত উনার গায়ে মশা বসলেও উনি মায়া মায়া চোখে তাকায়। আমাকে দিয়ে যেমন হবেনা, তোকে দিয়ে আরো বেশী হবেনা।
-ফাজলেমী ছাড়! চল আমরা থানায় কমপ্লেন করি। বাবা আসুক। এক সপ্তা পরেই আসবে থাইল্যান্ড থেকে। বাবাকে পাঠাব থানায়।
-হুম ভালো হবে। ঐ ছেলেরই বা কি দোষ! তুই যা সুন্দর! তোর জন্য ফিদা না হয়ে উপায় আছে! তুই তো মনে হয় জানিস না, আফনান আছেনা?
-ঐ যে ফর্সা করে ছেলেটা? লম্বামতোন?
-হুম। ও কিন্তু তোর জন্য পুরা পাগল। আমাকে সাহিল বলল। আমি নিজেও জানতাম না। খেয়াল করে দেখিস, হাঁ করে সারা ক্লাস তোকে দেখে। হিহি।
-ধুর! বাদ দে তো এসব কথায়। আমি এদিকে চিন্তায় অস্থির আর তুই কি না!
আমার গাম্ভীর্য শ্রাবন্তীর মুখেও ছায়া ফেলে। আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে এরকম একটা আশ্বাস আমি ওর কাছে পেয়েছিলাম। অথচ সেদিনের পরেরদিনই ছেলেটা আমার হাত ধরে কি জঘন্য কথাই না বলল! আমার আবার বমি চলে আসলো!
মুখ চেপে বাথরুমের দিকে এগুতে এগুতে ঠিক করলাম, কালকে থেকে ব্যাগে ভরে বাবার বড় সাইজের কাগজ কাটার ছুরিটা নিয়ে বের হবো।
……………………………………….
(দুদিন আগে)
রুমী
-অনেক বিপদে পড়েছি। আর কেউ থামতে চাইছিলোনা। আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন! প্লিজ!
চোখে আকুতি নিয়ে মেয়েটা এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো।
-অবশ্যই। মানুষের মাঝ থেকে মানবিক বোধ উধাও হয়ে গেছে। নাহলে এরকম বৃষ্টির রাতে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দিয়ে পারে। আপনি উঠে আসুন।
আমার সবচে বড় মারণাস্ত্র- আমার হাসি- দিয়ে মেয়েটাকে অভয় দিই আমি। অন্য কোন পুরুষ হলে, গাড়িতে ওঠার আগে অনেকবার ভাবতো মেয়েটা। দ্বিধায় পড়ে যেতো। যত বড় বিপদই হোক না কেনো- হয়ত একলা ভ্রাম্যমাণ পুরুষের পেছনের সিটে, এই গভীর রাতে অচেনা রাস্তায় সে উঠতোনা। কিন্তু আমি জানতাম আমার সাথে উঠবে। সবাই ওঠে। আমাকে কেউ মানা করেনা। আমাকে প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা আমি মানুষকে দেইনি।
মেয়েটা সংকোচ মাখা পায়ে ধীরে ধীরে আমার পাশে বসে। ড্যাশবোর্ড থেকে রুমাল বের করে আমি এগিয়ে দিই।
-মাথাটা মুছে নিন। সর্দি লেগে যাবে।
সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে মেয়েটা বলে,
-ধন্যবাদ। আসলে বাস থেকে নামলে এই ছাউনির এখান থেকেই আমার গ্রামের বাড়ি যাবার ভ্যান পাওয়া যায়। বৃষ্টির কারণে সব উধাও। অনেকক্ষণ ধরে আটকে আছি। আপনি না আসলে কি হোতো উপরওয়ালা জানেন। আপনি এসে জীবন বাঁচালেন!
কথাটার মাঝে আয়রনির মাত্রা উপলব্ধি করেই কি না আমি সত্যি সত্যি হেসে উঠি।
-না না! আমি নিশ্চিত, আমার জায়গায় যে কোন ভদ্র লোক হলে এটাই করতো। আপনি আমাকে পথ দেখান আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।
-তা কোথা থেকে আসলেন?
আমি কথোপকথন এগিয়ে নিই।
লজ্জাবনত কন্ঠে মেয়েটা উত্তর দেয়
-জ্বি, আমি সিলেটে মাস্টার্স করছি। ছুটিতে এসেছি।
-বেশ, বেশ। নাম কি আপনার?
-রুমকী।
আজ দেখি কাকতালীয়ই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে!
-বাহ! কি অদ্ভুত! আমার নাম রুমী। যাক নামের দিক থেকে আমরা প্রায় মিতা! কি বলেন!
আমি এখন রয়েছি আমার মনোমুগ্ধকর রূপে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মত কাজ চলছে। আমার বুকের ভেতরে হাতুড়ীর বাড়ি পড়ছে ক্রমাগত। উত্তেজনার প্রবল তোড়ে আমার বোধশক্তি ভেসে-ডুবে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েক চাল বাকি!
পাশাপাশি কিছুক্ষণ থাকলেই আমার জাদুমন্ত্র ওর উপর কাজ করা শুরু করবে। আমার হিসাব আর অতীত অভিজ্ঞতা বলে আর বিশ মিনিটের মাঝে আমার সাথে সিলেট ভ্রমণের আমন্ত্রণে সাড়া দেবার জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে যাবে ও। এখন শুধু সূক্ষ্ম জাল বিছানোর পালা।
-আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই আমার। সামনে একটু এগুলেই ডান দিকে একটা পথ আছে। ওটা ধরে এগুতে থাকুন।
আমি স্টিয়ারিং-এ এক হাত রেখে মেয়েটার দিকে এক পলক তাকাই। বেশ সুন্দর চেহারা। একটা বাচ্চাসুলভ ভাব আছে। পাতলা ঠোঁট। চুল ভিজে লেপ্টে আছে। ভরাট স্বাস্থ্য। হাত কোলের ওপর রাখা। সুন্দর ফর্সা হাত, ছিমছাম। পরিপাটি হাতের মেয়েরাও পরিপাটি হয়। এই হাত আমি বারো ঘন্টার মাঝে কবজি থেকে আলাদা করে নিয়ে আসবো। ভেবে আমার শরীরের ভেতর অদৃশ্য ঝাঁকুনি লাগতে থাকে।
ঝাঁকুনি লাগে আমার মাথাতেও। বিদ্যুৎ গতিতে স্টিয়ারিং-এর দিকে ধাবিত হয় আমার মাথা। জ্ঞান হারানোর আগে খেয়াল করলাম আমার সাইডের দরজায় এগিয়ে আসছে ছায়ার অবয়ব। গাড়ির বনেট উপড়ে গেছে রাস্তায় ফেলে রাখা গাছের গুঁড়িতে ধাক্কা খেয়ে।
………………………………………………
(এখন, ইশতিয়াক আহমেদের অফিস ঘরে)
-আপনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিলো?
আমি নিজের চোখ দেখতে না পেলেও বুঝলাম সেখানে এখন খেলা করছে অবিশ্বাস।
-হুম। আমার জ্ঞান ফিরতে বেশিক্ষণ লাগেনি যদিও। পানির ঝাঁপটায় চোখ খুলে দেখি আমাকে ঘিরে আছে পাঁচজন। একজন মুখের খুব কাছে। গালে চড় দিচ্ছে আস্তে আস্তে। জ্ঞান ফেরানোর জন্য। পাঁচজনের মাঝে মেয়েটাও আছে দেখে অবশ্য আমি খুব একটা অবাক হইনি। আমার মন বিক্ষিপ্ত ছিলো আরো বড় চিন্তায় নয়ত মেয়েটা যখন অভ্যস্ত হাতে সিটবেল্ট পড়লো তখনই আমি বুঝে যেতাম।
-তারপর?
-তারপর আর কি। হাতের ঘড়ি। মানিব্যাগ, গাড়ির চাবি সব নিয়ে নিলো। আমি বিত্তবান, এটা বুঝে গিয়েছিলো। তাই আমাকে সাথে সাথে মেরে ফেলেনি। ওদের ইচ্ছা ছিলো আমাকে ধরে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা। আমাকে রাখা হয়েছিলো একটা গোয়ালের মত জায়গায়। মুখে কাপড় গুঁজে দেয়া। চিৎকার করার উপায় ছিলোনা। কিছু না থাকলেও আমি চিৎকার করতাম না। আমাকে নিরীহ ভেবেই কি না খুব বেশী সাবধানতা অবলম্বন করেনি। শুধু হাত বেঁধে রেখেছিলো।
আপনার কাছে শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে। কিন্তু প্রাণ নেয়ার চেয়েও বড় একটা ইচ্ছা আমার মাঝে কাজ করে। সেটার নাম সারভাইভাল। সারাজীবনে আমার এত সাবধানতা শুধুই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
-মরতে ভয় পান?
আমি জিজ্ঞেস করি।
-তাও ঠিক না। এটা অনেকটা স্বয়ংক্রিয় একটা মেকানিজম। নিজেকে শেষ হতে দেখার ইচ্ছেটা আমার মাঝে নেই। আপনার কাছে চলে এসেছি নিতান্তই আবেগের বশবর্তী হয়ে। জীবনে প্রথমবারের মত আমি আবেগের কাছে হার মেনেছি।
-মানে বুঝলাম না?
-সে প্রসঙ্গে একটু পড়ে আসছি। আমি শিকারে বের হলে সব সময় মোজার ওখানে একটা সুইস নাইফ রাখি, জাস্ট ইন কেইস। সেটা দিয়েই হাতের বাঁধন কেটে রেখেছিলাম। প্রচণ্ড দুর্বল এই ভান করে পড়েছিলাম মেঝের ওপর। একটা হলুদ বাতি টিম টিম করে জ্বলছিলো। সেটা খুলে এনে লুকিয়ে রেখেছিলাম। প্রথম ঢুকেছিলো শক্তসমর্থ একটা ছেলে। পালের গোদা । অন্ধকার দেখে হাতে হারিকেন নিয়ে ঢোকে। পেছনে পেছনে আরো দুজন। আমি ঝিম ধরে মেঝেতে মাথা এলিয়ে পড়েছিলাম । ও হারিকেন নিয়ে এগিয়ে আসলো… আমার মুখের উপর ধরলো। অজ্ঞান হয়ে আছি কি না বোঝার চেষ্টা করছিলো। হারিকেনে খুব বেশী আলো হয়না। তাই আমার চাকুর ফলা ওর চোখে পড়েনি। এক ধাক্কায় হাতল অব্দি ঢুকিয়ে দিতেই কাটা কলাগাছের মত পড়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় বাকি দুজন ও কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলনা। গাট্টা-গোট্টা ধরনের আরেকটা ছেলে ছিলো, ওকে বাকিরা বাপ্পী বলে ডাকছিলো। সে আগে ধাতস্ত হল। হুঙ্কার তুলে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো। আমি তখন নিরস্ত্র। আমাকে শরীরের ধাক্কায় মাটিতে ফেলার উদ্দেশ্যে ষাঁড়ের মত তেড়ে আসতে থাকা অবয়বটাকে আমি পড়ে থাকা হারিকেনের আবছা আলোয় দেখতে পেলাম। অল্প সরে গেলাম, ওর মাথাটা মাথাটা কোমরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাথার পেছনে কনুই দিয়ে শক্ত আঘাত করলাম। ভারসাম্য হারিয়ে ও পড়ে গেলো। আমি যখন হাঁটুটা ওর গলায় গিলোটিনের মত নামিয়ে আনলাম, আমার আত্মরক্ষার দক্ষতায় ওর চোখে তখন অবিশ্বাস। সাথে আরেকজন যে ছিলো তার গায়ে হাড্ডী ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার রুদ্রমূর্তি দেখে পালানোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলো সে। হেডলাইটের আলোয় মন্ত্রমুগ্ধ হরিণের মত অনড় দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি দলপতির গলা থেকে ছুরিটা বের করে ওর বাম চোখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়ার সময়ও ও একদম ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো।
বাপ্পির হুঙ্কারে আরেকটা ছেলে বের হয়ে দৌড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো। হাতের কাছে একটা চোখা কাঠের টুকরো পেয়েছিলাম। সেটা ওর কান দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছি।
-একজন ও কি বেঁচেছে?
আমি জানি উত্তর কি,তবু প্রশ্ন করলাম।
-বেঁচে যদি থাকেও, হুইচ ইজ ভেরি আনলাইকলি, একজন আজীবনের জন্য বোবা, একজন কানা আর আরেকজন কালা হয়ে গেছে।
লোকটার চোখেমুখে স্পষ্ট দম্ভ। যেনো পোকামাকড় বুটের তলায় পিষে মারার বর্ণনা দিলো।
আমি লোকটাকে আপাদমস্তক আবার দেখলাম। এই রুম থেকে তার জায়গা হবে সরাসরি লক-আপে। কিন্তু আমার মাথায় একটা ফিল্মি চিন্তা কাজ করলো। যদি আমি এর সাথে হাতে হাতে লড়াই করি, কে জিতবে? আনারমড কম্ব্যাটে আমি নিজেও বেশ দক্ষ, বক্সিং করার অভ্যাস অনেক দিনের। কিন্তু এ শুধু দক্ষ না, প্রচণ্ড নিষ্ঠুরও। নিষ্ঠুরতার সাথে পেরে ওঠা মুশকিল। ধুর। কি ভাবছি! আমি মনোযোগ আবার ফিরিয়ে আনি।
-আর মেয়েটা?
-মেয়েটাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাইনি। গাড়িটাও না। আর আরেকদিকে শরীরে শিকারের তীব্র ডাক এসে গেছিলো। এরকম হলে আমি স্বাভাবিক থাকতে পারিনা। তাই বাধ্য হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবারের শিকার আমাকে করতে হবে আমার পুরনো হান্টিং-গ্রাউন্ডে।
আমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ছাউনির সামনে এসে বাসে করে শহরে চলে আসি। লাশের শরীর খুঁজে খুঁজে যা টাকা-পয়সা পেয়েছিলাম তাই নিয়ে রওনা হয়ে শহরে ফিরে আসলাম। আমার শরীর তখনো কাঁপছে। আমার রিচুয়াল শেষ না করলে যে কাঁপুনি থামবেনা। কিন্তু আমি যদি জানতাম, আর ছয় ঘন্টা পরেই আমাকে কি পরিমাণে চমকাতে হবে, আমি হয়ত শহরের আসার সিদ্ধান্তটা কখনো নিতাম না। এত বড় দোটানায় আমাকে পড়তে হবে আমি কোনদিন কল্পনা করিনি। আই ওয়াজ নট মেন্ট টু বি হিয়ার। জীবনে প্রথমবারের মত আমি মানুষের আবেগের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে পরিচিত হয়েছি। আবেগটার নাম সম্ভবত দুঃখ, হয়ত কিছুটা অনুশোচনাও। এখানে বসে থাকতে থাকতে সে আবেগ আমার কেটে গেছে। এখন আমার অন্যরকম ইচ্ছা করছে। আপনি কি আমার গল্পের শেষ অংশ শুনে আমাকে যেতে দেবেন?
লোকটার মুখে মুচকি হাসি দেখতে পেলাম। কেমন জানি একটা শীতল মুখভঙ্গী। সে হাসিতে প্রচ্ছন্ন তাচ্ছিল্য।
আমার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। শালার পুত কি আমাকে চদু মনে করে নাকি!
-জাস্ট জোকিং! একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে পেরে বেশ ফুরফুরে লাগছে।
-কি সিদ্ধান্ত?
-সেটা না হয় গল্পের শেষের জন্য তোলা থাক!
প্রথমবারের মত লোকটার চোখে আমি অল্প কৌতুকের ছায়া দেখি। আমার কেমন একটা অস্বস্তি লাগতে থাকে।
কৌতুকের ছায়া ! হন্তারকের কায়া !
যবনিকার আগে কৌতুহল মুচড়ে দেয়া ...
অপেক্ষায় দেখি মেলে কি আলেয়া !
খুব আগ্রহ নিয়ে বসেছিলাম কয়েকদিন ধরে। যাক পর্বটা এসে গেলো।
ভালোই লাগলো। চারমিনারের ধোয়া কেন ? চারমিনার তো ফেলুদার সিগারেট। বাংলাদেশে পাওয়াও যায়না। রুমী'র অন্য কিছু মনে হতে পারে না ধোঁয়াটাকে?
এই প্রশ্নটি তোমার কাছে গুরুত্ব নাও পেতে পারে। কিন্তু তোমার লেখা যতগুলি পড়েছি, তোমাকে পারফেকশনিষ্ট মনে হয়। সে জন্যে বলা
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
vaia..it was a hint of how fancy the protagonist is...as we came to know from the earlier parts...his vanity is his sin..in taste he remains exotic....all part of his veil. my apologies as im currently unable to type in bangla. i always am looking forward to your kind feedbacks. its quite inspiring. thank you. ☺☺☺☺
(সম্পাদিত)
many thanks vaia ☺☺☺☺ though as it draws towards the fag end i m growing nervy...really dont want to drag it all this way and put an unceremonious conclusion...*touch wood*
যথারীতি দুর্দান্ত! একটি সতর্ক বাণী। জায়গাবিশেষে 'মাসুদ রানা' প্যাটার্ণের ভেতর ঢুকে না পড়ে ভিন্নতর বলন সৃষ্টি কর।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
I will do my best vaia. 🙂 🙂
এ পর্বের বুনোটটা আগের গুলোর তুলনায় একটু হাল্কা মনে হলো।
It's the calm before the storm! 🙂 🙂