প্রজন্ম এক
আমার বাবাটা আর দশজন মানুষের মতোই, তবে রাগটা একটু বেশি। এই মানুষটার সাথে অন্য কারো পার্থক্য নিয়ে চিন্তা করতে গেলে সবার আগে আমার মনে আসে তার বাচ্চা বাচ্চা স্বভাবের কথা। সবসময় উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়ানো, সুযোগ পেলেই আমার মা কিংবা তার মাকে খোঁচানো ( দাদী যখন বেঁচে ছিলেন ), কখনো আমার সাথে লুকোচুরি খেলা, কখনো বা বাসার বিড়ালটাকে ভেংচানো! একদিন দুপুরে বেশ আরাম করে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছিল সে। কিছুক্ষণ পর দেখি উঠে বসে আছে। জিজ্ঞেস করতে বলল ” এত জোরে নাক ডাকি যে ঘুম ভেঙ্গে গেল।” গুরুজনদের কাছে শোনা , বালক বয়সে বান্দরামিতে কখনো নাকি কম ছিল না এই বান্দা। বাবার ছোটবেলা কেটেছে তার দাদা দাদীর কাছে। দাদাটি ছিলেন ভীষণ কড়া। মাটির তৈরি কল্কির হুক্কা খেতেন তিনি। যেদিন বাবাকে বকাবকি বেশি করতেন সেইদিন বাবা হুক্কাটা নিয়ে আস্তে করে আছাড় দিয়ে রেখে আসত। ফলাফল? হুক্কায় আগুন ধরিয়ে টান দিলেই কল্কি ভেঙ্গে সব আগুন গায়ে। পাড়ায় একজন ডাক্তারের চেম্বারে একটা মানুষের কংকাল ছিল। ছোট ছেলেপিলেদের ডাক্তার সাহেব সাধারণত ওইটা ধরতে দিতেন না। বাবা একদিন রাতে কংকালটা চুরি করে কাছেই এক গাব গাছে ঝুলিয়ে রেখে এসেছিল। পরবর্তীতে এটা নিয়ে কি হয়েছিল তা আমার ঠিক জানা নেই। এইসবের মাঝে দিয়েই তার দিন কেটে যাচ্ছিল। তারপর… বাবা বড় হয়ে গেল……. তার একটা মেয়েও হলো ;;)
প্রজন্ম দুই
আমি নেহায়েত হাবাগোবা লক্ষী মেয়ে হিসেবেই পরিচিত। আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব এর পিছনে আমার বাবার ভুমিকা কম না। সারাক্ষণ তটস্থ হয়েই ছোটবেলার দিনগুলি কেটেছে আমার। একসময় ভর্তি হলাম ক্যাডেট কলেজে। আমরাই মনে হয় সেই সময়কার একমাত্র ব্যাচ ছিলাম যারা প্রথমেই ৮৬ দিনের লম্বা একটা টার্ম পেয়েছিলাম। টার্ম শেষ করে বাসায় এসে শাসন খুব একটা পাইনি। আমার বাবা ভোজনরসিক মানুষ। খেতে এবং খাওয়াতেই তার যতো আনন্দ। আমি নাকি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় আসার পর আমাকে খাওয়ানোটা মোটামুটি অত্যাচারের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কলেজে গিয়ে সাহস কিছু বেড়েছে। তাই একদিন খাওয়ার সময় আমি একটা গল্প বলে ফেললাম। এক বুড়ি উঠানে হঠাৎ পায়ের আওয়াজ পেয়ে চিৎকার করে উঠল, “হাত্তির (হাতির) মতো পা ফেলে কে যায়রে?” বাইরে থেকে ভেসে আসল, “মা আমি !” ছেলের কন্ঠ পেয়ে বুড়ির পরবর্তী কথা “আহারে বাজান, শুকায়ে গেছিস ।” এরপর থেকে বাবা অনেকদিন পর্যন্ত খাওয়া নিয়ে আর জোরাজুরি করে নাই 😀
প্রজন্ম তিন
এইবার যেইসব আন্ডাবাচ্চা দেখে মনে হয় বুড়া হইয়া যাইতেছি তাদের দুই একটা গল্প। আমার এক কাজিনের কাছ থেকে শোনা। তার সাথেই ঘটনাটা ঘটেছিল কিনা তা নিয়ে আমি একটু কনফিউজড। ধরে নেই তার সাথেই পিচ্চির কথা হয়েছিল। এক শপিং মলে ঢুকে সে দেখে এক কিউট পিচ্চি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মা আশেপাশের দোকানেই আছে। আমার কাজিনটা দুষ্টামি করার জন্য তাকে বলল, “এই পিচ্চি, তোমাকে আমি ট্যাবলেট বানিয়ে খেয়ে ফেলি ?” পিচ্চির উত্তরঃ ” খাও।” ভ্যাবাচেকা খেয়ে আমার কাজিন চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর সেই পিচ্চি এসে ওর হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে বলে, “খাও না কেন, খাও। খেতে তো পারবা না, খালি খালি কথা বলো।” =))
পিচ্চিদের গল্প বলব আর আমাদের ভাগিনা বাদ যাবে তাই কি হয়? সে বাক্য বলার চেষ্টা করে আজকাল। পুরাপুরি পারে না তবে কী ওয়ার্ডগুলো বলে। একদিন নারিকেল তেলের বোতল জানালা দিয়ে ফেলে গিয়ে বলে, “বোতল….ফেলিছি ” আম্মা জিজ্ঞস করলেন, “কেন ফেলিছ?” হাসি হাসি মুখ করে সে জানালো, “নতুন কিনি।”
ফোনে সাধারণত সে কথা বলতে চায় না। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর সেদিন তার দয়া হলো। পাশ থেকে শুনে শুনেই বলল, “মামা, নামিনি, বাসায় আসো।” আমাদের দুইজনের চোখেই পানি চলে এলো। কি হবে এই মরার দেশে পড়ে থেকে ?
আজিব ব্যাপার ...... আমার বাবাও নাকি ছোটবেলাতে অনেক মাইরপিট করতো। আর আমি ছোটবেলাতে শান্তশিষ্ট চুপচাপ ছিলাম। এইসব ব্যাপার মনে হয় এক প্রজন্ম পরপর আসে।
হ্যা ভাই । আমারও তাই ধারণা ।
তোমার নেক্সট এর জন্য তাইলে সেইভাবেই প্রস্তুত হও 😀
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
🙁
আপনি দেখি পুরা উলটা ছিলেন। আবার বাবা ছোট বেলায় ভীষণ শান্ত ছিলেন, আর আমি তার পুরোই উলটো। লঙ্কার রাজা-মহাশয়ও বোধকরি আমার কীর্তিকলাপে বেমক্কা চমকে যেতেন। যাই হোক, এইসব না বলি, আমি আবার এখন খুল হইয়া গিয়েছি।
বহুতদিন পর লিখলেন আপু, দ্বিতীয় পোষ্ট উপলক্ষ্যে এইবার মিষ্টি খাওয়ান।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
খাইতে হইলে চইলা আয় । সামার তো প্রায় শেষ ।
এই লাইনদুটোতে ইমোশন অনেক বেশি। লেখাটা ভাল লেগেছে। জীবনের খন্ডচিত্র পড়তে ভাল লাগে।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
লেখালেখিতে আমার হাত ভালো না , আবেগ প্রকাশে আরো আনাড়ি । আজকাল মনে হয় শেয়ার করতে পারার মাঝেও একটা দক্ষতা প্রয়োজন । সেইটাই ডেকেডুকে আনার চেষ্টা করছি । ভালো লেগেছে শুনে আশা জাগল মনে , হয়ত আমিও পারব ।
নিঃশন্দেহে অনেক ইমোশনাল একটা লাইন, কিন্তু হঠাত" করে কেমন যেন একটা ধাক্কা লাগলো। 3 idiots মুভীটাতে "All is Well" গানটার শেষে যেমন আচমকা জয় লোবো'র ঝোলানো লাশটা ধাক্কা খেয়েছিলাম, অনেকটা তেমন =((
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ঠিক! ঠিক! ঠিক! :thumbup:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
মজা পেলুম 🙂
বড় হইতে মঞ্চায় না 🙁
বড় হইয়ো না । বড় হওয়া ভালু না B-)
বড় হওয়ার সমস্যাসমূহঃ
১. সারাক্ষন অতীতের কথা চিন্তা কইরা "আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম, আমরা" গান মনে করা :bash:
২. মিথ্যা করে হলেও বিজ্ঞ বিজ্ঞ বা জ্ঞ্যানী জ্ঞ্যানী ভাব ধারণ করা :-B
৩. সংসারে বউ/স্বামী এবং কর্মস্থলে বসের পাঙ্গার লক্ষবস্তুতে পরিনত হওয়া :gulti: 😡 :chup:
৪. জীবনের কঠিন বাস্তবতা দেখে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে নিজেই নিজের চুল ছেড়া ~x( অথবা আপনা থেকেই 🙁
৫. সবরকমের স্বাধীনতা ;;; খর্ব হওয়া।
😐 🙁 :(( :no:
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
সহমত না, আমি এবং আমার জামাই কেউ কাউরে পাঙ্গাই না, আমরা ভালু লুক B-)
হি !!!!!!!!!! হি !!!!!!!!!!!!!!!!! হি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! হি!!!!!!!!!!!!!!!!!! ভাবী খুব মজা পাইলাম। আপনারা ভালু লুক = ভাল্লুক।
=)) =))
লেখাটা ভালো লাগলো আপু :hatsoff:
অনেকদিন পর ... এইবার মিষ্টি খাওয়ান 😀
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
থ্যাংকস । পুলাপাইন খালি খাইতে চায় ! আমিও মিষ্টি খাবো :((
দেশে আসলে খাওয়াবোনে । আপাতত " রেইন চেক " লিখে রাখো 🙂
ভাল্লাগছে.....।
থ্যাংকস। নিজেরা লিখা দেও না ক্যান ? আমার জামাইটারে গুতাইতেছি । কাজ হয় না খুব একটা । মাইর খাওয়ার টাইম হইছে তার :grr: ।
একটা গল্প মনে পড়ে গেল । আমাদের এডজুডেন্ট একটা বুদ্ধি বের করে ফেললো। কেও কোনো ফল্ট করলেই তারে বলত "তোমার বাবা কি করে?.... এই জন্যই তোমার এই অবস্হা..." । আমাদের পোলাপান পড়ল বিপদে। বাপ মা নিয়ে কেও কথা শুনতে রাজি না। সবাই মোটামুটি ঠাণ্ডা । তখন আমাদের এক বন্ধু ধরা খাইল এডুর কাছে। সেই প্রশ্ন: তোমার বাবা কি করে?........শেষ করার আগেই আমাদের দোস্ত উত্তর দিয়ে দিল "আমার বাবা স্কুল টিচার...কিন্তু আমার দাদা ডাকাত সর্দার ছিলেন..."
:pira: :khekz:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
মিলা কেমুন আছ তোমরা? স্যারের যে চেহারার বর্ণনা দিলা আমি রীতিমত অবাক হইলাম। তুমি তোমার ভাইগ্নার কথা বলছ খুব মজা করে। আমাদেরও তো মামা/চাচা হইতে মঞ্চায়। :)) 😛
মুহিব ভাই, আমারও চাচী হইতে মন চায়, আর আপ্নারে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা জানাইতে ও মঞ্চায় :dreamy:
পোলাপাইনের ভালো লাগা না লাগার চেয়ে তোমার ভালো লাগা না লাগাটা বেশি ইম্পর্টেন্ট। নিজের মনের আনন্দে লিখে যাবা, অন্যদের ভালো লাগলে সেটা হবে বোনাস। লেখালেখি নিয়ে এত ভয়ের কিছু নেই। 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাল ছিল।
🙂 🙂
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা 😛
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।