২০০২, ১৯ সেপ্টেম্বর, হতবাক আমি, হতবাক তিনি

সিরিয়াল ১৩
২০০২, ১৯ সেপ্টেম্বর
হতবাক আমি, হতবাক তিনি

আমার মাথায় কোন কাজ করছে না।রিকশায় বাসায় ফিরছি। কোন কথাই বলছি না। কোন ঝগড়াও না।
আমিঃ আপনি এটা কি করলেন?
আরিফঃ কি করেছি? একটা মালাই তো পড়িয়েছি। হাতে দিলাম নিলা না, তাই গলায় পড়ায় দিলাম
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
আরিফঃ কি হল চুপ করে আছো কেন? আমি খারাপ কি করলাম? কি হল তাকাও এদিকে। একি, চোখে পানি কেন? আরে কি করলাম, ধুর!
বাসায় পৌছে দিয়ে আরিফ সাহেব চলে গেল।কোন কথা বা দেখা আর হয়নি। তিনি আর আসেন নি। ফোনও দেন নি।
আব্বুঃ আরিফ আসে না বহুদিন
আম্মুঃ আসলেই। মনে হয় ব্যস্ত।একটা কল দিয়ে দেখ
আব্বু কল দিয়ে বাসায় আসতে বললো। কিন্তু আরিফ সাহেব আসতে মানা করে দিলেন। তার কাজ অনেক।
৫ ডিসেম্বর
আমি ব্রিটিশ কাউন্সিলে ক্লাস করছি IELTS। বিদেশ যাবার অপেক্ষায়।ফিরার পথে রাস্তা পেরিয়ে দেখি আরিফ সাহেব দাঁড়িয়ে।
আমিঃ আপনি এখানে? হঠাত
আরিফঃ আমি মাঝে মাঝেই আসি। ওই যে ওখানে প্রিন্টিং কাজে আসি।
আমিঃ আমিতো দেখিনি কোন দিন
আরিফঃ আমিতো রোজ দেখি
আমিঃ আপনি বাসায় আসেন না কেন? আব্বু মন খারাপ করে। খেলা হয় না কবে থেকে।
আরিফঃ আমার অপরাধ না জানা পর্যন্ত আমি যাব না।
আমি ডায়রী বের করে দেখালাম। যেখানে ১৯৯৯ সালে স্পষ্ট করে লিখা, আমি শীউলী মালা পুরণিমার রাতে পরালে তাকেই বিয়ে করব। লোকটা খুশিতে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।বকুল ফুলের মালা নিয়ে যাচ্ছিল এক পিচকি। ওইটাই কিনে পড়িয়ে দিল।এত হাসছে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না! কেমন পাগল পাগল লাগছে তাকে। অবশেষে বাসায় আসলেন তিনি। আর আব্বুও মজা করে ক্যারাম খেললো।

সিরিয়াল ১৪
১৫ ডিসেম্বর
শেষ হল লুকচুরি

ভালোই কাটছে দিন। ফোনে কথা বলা, বাসায় দেখা।আমি ফোনে কথা বলছি এক বন্ধুর সাথে।আমার ঘরে। কলিংবেল বাজলো। কেউ এসেছে।আব্বু ড্রইংরুমে কথা বলতে গেল। আম্মু নাস্তা রেডি করে ড্রইংরুমে ঢুকছে।আমি তাকালাম ঐদিকে। ঝটকা লাগলো পরদার নিচ দিয়ে পা দুইটা দেখে। ঠিক এইভাবে জ্যাকেট ওয়ালা বসে।পা দুইটা একসাথে জড়ো করে, একটু বাকা করে। আমি ফোন ছেড়ে কখন চলে গেছি পরদার কাছে চুপ করে দেখার জন্য, নিজেই বুঝিনি। আম্মু চা ঢালছে, চেহারা দেখা যাচ্ছে না। ওই যে, ব্লু নকিয়া মোবাইল। আব্বুর কথা শুনতে শুনতে খেলছে।ইস আম্মু সরে না। সারাজীবনের চা ঢেলে ফেলছে। ঊফ আবার কি করে! আরে সেমাই পরে দাও না! চা আর সেমাই একসাথে খাবে নাকি? ধুর!না পেরে আমি নিজেই ড্রইংরুমে ঢুকে গেছি। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও আমি এত অবাক হতাম না মনে হয়! আমার সামনে আরিফ সাহেব বসে আছে সেই জ্যাকেটটা পড়ে!জ্যাকেটওয়ালা তাহলে আরিফ!মাথা কেমন ভো ভো করছে
আব্বুঃ তোমার ফোনে কথা শেষ? বস
আমি হা করে তাকিয়ে আছি।আম্মু হাতে কখন চা দিয়ে চলে গেছে দেখিনি। ঐটা নিয়েই দাঁড়িয়ে আছি
আব্বুঃ কি হল? কি চিন্তা কর? আব্বু ধমকে উঠল।
আমিঃ জি, না, মানে, আমি কাল পরীক্ষা তো ভয় লাগছে
আমি কোনভাবেই নরমাল হতে পারছি না। তাই আস্তে উঠে চলে আসলাম।ভাবছি কিভাবে এই কথা তাকে বলব।যাবার আগে দেখাও করলাম না।
অবশেষে ফোন করলাম বাইরে থেকে। ব্রিটিশ কাউন্সিল যাবার রিকশা ভাড়া বাচিয়ে।আর তাই রাজাবাজার থেকে ধানমন্ডি আমার হেটে যেতে হল, আর আসতে হল।কিন্তু ফোনে তো কিছুই বলতে পারলাম না! ব্রিটিশ কাউন্সিলের গল্পই করলাম।এভাবে তিন দিন ফোন দিলাম কিন্তু কথা ব্রিটিশ কাউন্সিলের গল্প নিয়েই হচ্ছে। কি বিপদ!প্রতিদিন হেটে রাজাবাজার থেকে ধানমন্ডি। পা দুটো আর রইল না আমার।

৬০১ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “২০০২, ১৯ সেপ্টেম্বর, হতবাক আমি, হতবাক তিনি”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ১ম পেইজে একই লেখকের ২ টার বেশি লেখা দেয়াটা সিসিবির রীতিবিরুদ্ধ।
    তারপরো লেখকের কলমে লেখা আসবে।
    সেক্ষেত্রে সীক রিপোর্টে এডমিন বা এডুকে উদ্দেশ্য করে নিবেদন করো যাতে একটা লেখা ২য় পেইজে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    লেখায় যদি আগের পর্বগুলোর লিংক থাকত তাহলে অনিয়মিত পার্টির মনে হয় পড়তে সুবিধে হত। চিন্তা করে দেখতে পার।

    লেখা চলুক। :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।