১৫ জানুয়ারী ’৮১।
সকালে জালাল চাচার সাইকেল নিয়ে বিয়ানী বাজার গিয়েছিলাম জমিনের রেজিষ্ট্রি হবে। বড় চাচার আসার কথা ছিলো ১টা পর্যন-। কিন’ ২টা পর্যন- যখন এলেন না, তখন আমি সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। বিয়ানী বাজারে খবর পেলাম আমাদের গ্রাম দোয়াখার সাথে পাশের গ্রাম পুরষপালের মারামারি হয়েছে। তাতে আমাদের গ্রামের একজন মারা গেছে। আমি দ্রুত বাড়ির দিকে আসতে থাকি। এ সময় শুনি আমাদের গ্রাম নয়, পুরুষপালের একজন মারা গেছে। ২জন গুরুতর আহত। আমাদের বড় চাচার ঘরের রাখাল গরুর জন্য ঘাষ কাটতে গিয়ে পুরুষপালের একজনের সাথে ঝগড়া বাধায়, সেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।
৮ ফেব্রুয়ারী ’৮১।
শীতের রাত। বাড়িতে হারিকেনের আলোয় আমি এখন পড়াশুনা করার চেষ্টা করছি। সবাই ঘুমে। কোথাও কোনো শব্দ নাই। আমার ন্যাশনাল প্যানাসনিক রেডিও টা আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে। এখন বিবিসিতে নিউজ হচ্ছে। ফ্লাস্কে চা আরো এক কাপ আছে। চা টা খেয়ে রাত ১টার দিকে ঘুমিয়ে যাবো। নিজের তৈরী রুটিন মতো নিজে পড়ছি। রাত ১১-১টা পর্যন- আমার ইলেকটিভ ম্যাথ করার কথা।
৭ মার্চ ১৯৮১।
আজ সেনসাস ডে। কলেজ বন্ধ। পিটি, প্যারেড নাই। সকাল বেলা ক্লাস নাইনের শাহ সালাহউদ্দিন আমাকে ডেকে তুললো ‘ভাই উঠেন। আমাদের এডজুটেন্ট স্যার আত্নহত্যা করেছেন ট্রেনের তলায় জাম্প দিয়ে’।
খালি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখি রেল লাইনের কাছে লোকজনের ভিড়। সবার একটাই প্রশ্ন ‘কেন এ কাজ করতে গেলেন?’
আমাদের কলেজ এডজুটেন্ট মেজর জাহাঙ্গীর গত রাত ২.১৫ এর সময় বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সকালে তার লাশ রেল লাইনের উপর পাওয়া যায়। দুপুর ১টায় প্যারেড গ্রাউন্ডে তার নামাজে জানাজা হয়। আজ জুমার নামাজের সময় মসজিদে ‘ম’ প্রস্রাব করে দিল। এর আগে সে বিছানায় এ কাজ নিয়মিত করে বলে ফজলুল হক হাউজের ছেলেরা বললো।
১ এপ্রিল’ ৮১।
আজ ফার্স্ট প্রেপে হানিফের কাছ থেকে খুব আঘাত পেলাম। অন্য কেউ এমন করলে কিছু হতো না। কিন’ হানিফ এমন করলো কেনো?
৩০ মে’ ৮১।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় বোধহয় শুরু হলো। ফোর্থ পিরিয়ডের পর ‘মিলক’ এ এসে লাইনে খবর পেলাম – প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। আজ চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে তিনি মারা গেছেন। মেজর জেনারেল মন্জুর হয়তো তাঁকে হত্যা করিয়েছে। বর্তমানে একটিং প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তার।
হাউজের বারান্দা থেকে দেখা যায়, ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে ধরে অনেকগুলো আর্মিও গাড়ি চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছে। আজ কলেজে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ দেখানো হয়।
৩১ মে’ ৮১।
আজ প্যারেন্টস ডে। গতকালের খবরটা দুশ্চিন-ায় ভোগাচ্ছে আজ জেনারেল এরশাদ দুপুর ১২টার মধ্যে মনজুর সহ সবাইকে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। পরে ৩টা পর্যন- এবং তারও পরে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন- সময় বাড়ানো হয়েছে ।
১জুন’ ৮১।
Result of 1st term, Class X
Subject 75 ২5 100 Previous Term
Bengali 50 16 66 62
English 35 14 49 58
Physics 70 23 93 91
G.Maths 74 25 99 88
E.Maths 73 25 98 90
Chemistry55 20 75 91
Islamiat 57 21 78 84
Biology 56 19 75 74
I obtained 633, 79.12%
Previous term 639, 79.89%
Present Position 12 th
Previous Position 9th
১৭ আগষ্ট’৮১।
আমি একদিন ঔপণ্যাসিক হবোই। আমি একদিন বড় বড় উপন্যাস লিখবোই।
৭ সেপ্টেম্বর ’৮১।
অনেককে কথাবার্তায় ভদ্রঘরের মনে হয়। কিন’ আসলে ওদেও ভেতরটা খুব খারাপ। আজ একজনকে দেখলাম বায়োলজী প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস থেকে একটা কাঁচ পকেটে ঢুকিয়ে হাউজে নিয়ে এসেছে। বলে- বাসা থেকে এনেছি। কি মিথ্যুক!
১৪ সেপ্টেম্বর ’৮১।
পড়ালেখায় আমার কোনো মনযোগ নাই। অথচ পড়তে তো হবেই। সামনে মেট্রিক পরীক্ষা। মেট্রিকের রেজাল্ট ভালো না হলে ক্যাডেট কলেজে পড়ার কোন সার্থকতা নাই।
২২ সেপ্টেম্বর ’৮১।
আমি বুঝতে পারিনি কেমন ধরনের ছেলে সে। আজি ইভনিং প্রেপে তাকে অন্য রকম মনে হলো। আমার সাথে কি সে তাহলে অভিনয় করেছিল? কেন সে আমার সব কথা প্রত্যাখ্যান করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল? আজ কেনোই বা ক্যান্টিনে গেলাম? সে আমাকে দু’টো চকলেট দিয়েছিল, আমি খেয়েও ছিলাম। কিন’ কেনো যে দু’বছর আগের কথা পাড়লাম? আজ আমার প্রেপটা মাটি। একদম পড়াশুনা হয়নি।
কথা প্রসঙ্গে ওর কথা শেষ করে আমাকে বলেছিল-
এবার তোমার কিছু বলার আছে?
আমি আশ্চর্য হই ‘তোর’ থেকে ‘তোমার’ হলো কেন?
আমি বলি – না
– সিওর?
– সিওর
‘আমি লাস্ট টাইম বলছি তোমার কিছু বলার নাই?’
– না
– ওকে
এই বলে সে চলে গেল।
২৪ সেপ্টেম্বর ’৮১।
I cadet Fazle, promise that I will be able to be in the list of first ten in the test exam which will be held on 1st December. If I fail to get the position, I will dedicate two ‘ Fanta’to my loving friend Shakoor.
(¯^v¶i) Shakoor (¯^v¶i) Fazle
I cadet Shakoor, Class X, Shahidullah House, FCC, Cadet No 1236, Challenging Fazle to come in the first Ten in the test examination ’81. If I can’t, I will feed two Fantas to Fazle in the first week of February
(¯^v¶i) Shakoor (¯^v¶i) Fazle
[এই তারিখের নীচে লেখা আছে, Fazle Failed but I was able to keep my promise – 9-12-81]
৭ নভেম্বর’৮১।
ক্লাস এইটের মাহবুব আকবর কে হাউজ চেঞ্জ করা হলো। সে নজরুল হাউজে ছিলো, শাসি- স্বরূপ শহীদুল্লাহ হাউজে আজ ট্রান্সফার করা হলো। মাহবুব আকবর কলেজ থেকে পালিয়ে বাসায় চলে গিয়েছিল। তার বাবা মা আবার তাকে কলেজে ফেরত দিয়ে গেছেন।
৯ নভেম্বর’৮১।
‘জগৎ ও জীবনকে আন-রিকতার সাথে বুঝবার ও চেনবার চেষ্টা করো। মনে রাখবে সু শিক্ষিত লোক মাত্রই স্ব শিক্ষিত।’
– আবুল কাসেম
(কলেজ থেকে বিদায়ের আগে)
১১ নভেম্বর’৮১।
আজ কাপ্তাই বাঁধে আমাদের এডুকেশনাল ভিজিট ছিলো। একটা পাহাড়ের উপর থেকে নীচে কর্ণফুলী নদীতে ছোট ছোট ইটের টুকরা দিয়ে ঢিল মারছিলাম। কে কত দূর ঢিল ছুড়তে পারি, তার পরীক্ষা হচ্ছিলো। নীচে অনেক দূরে শওকত ও ছিলো। কিন’ আমি তাকে খেয়াল করিনি। আমার একটা ইটের টুকরা ওর মাথায় পড়লো এবং মাথা থেকে রক্ত বেরোলো। আমাদের সাথে ফার্স্ট এইড নিয়ে কম্পাউন্ডার ছিলেন। সাথে সাথে ব্যান্ডেজ দেয়া হয়। আমি বিষয়টির জন্য খুব অনুতপ্ত।
আমাদের ফর্ম টিচার মিস্টার হুমায়ূন কবীর এবং তার ছোট্ট ছেলে আমাদের সাথে ছিলো।
২১ নভেম্বর’ ৮১।
Test exam is over. I think I will be in first ten.
২৮ নভেম্বর’৮১।
আজগুবি প্রশ্ন?
জীবনটা কেমন যেনো একটা খোলশে ঢাকা বস’মাত্র। একটু ফাঁক পেলে চলে যায়। মাঝে মাঝে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। মনে হয় কেনই বা এলাম এই পৃথিবীতে? মানুষ মরে যায় কেন? যদি মরে যাবে, তবে সে পৃথিবীতে আসে কেন? সামান্য দিনের জন্য মানুষ এতো আয়োজন করে কেন? কেনো মানুষ বড় হবার জন্য এতো প্রাণপণ চেষ্টা করে? পৃথিবীতে এতো নাম, এতো যশ, এসবের কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে?
পড়াশুনায় মন বসে না। মনে হয় এসব করে কি হয়? ক’দিন পরে তো মরেই যেতে হবে।
৪ ডিসেম্বর’ ৮১।
বিকেলে ভলিবল খেলার সময় মিস্টার মান্নান আমার কাছে এসে বললেন, আজ দুপুরে বাবা কলেজে এসেছিলেন। তিনি প্রিন্সিপালের কাছ থেকে আমার খবর নিয়েছিলেন। কিন’ প্রিন্সিপাল স্যার আমার সাথে দেখা করতে দেন নি। বলে দিয়েছেন, আমি ভালো আছি। বাবা এক সপ্তাহের মধ্যে লন্ডন চলে যাবেন। ওখানে গিয়ে জাহাজে জয়েন করবেন। এক বছর আর বাবার সাথে দেখা হবে না।
৯ ডিসেম্বর’ ৮১।
টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট’৮১
আমি পেলাম সর্বোচ্চ
বাংলা -১ ৫৫ ৬২
বাংলা- ২ ৬৪ ৬৭
ইংরেজী-১ ৬০ ৬৩
ইংরেজী-২ ৫০ ৫২
সাধারণ অংক ৯৭ ৯৭
ইলেকটিভ ৯৫ ১০০
ইসলামিয়াত ৮০ ৮৭
ফিজিক্স ৮৫ ৯০
কেমিস্ট্রি ৭৯ ৯৩
বায়োলজী ৫৫ ৭৩
মোট নম্বর ৭২০, পার্সন্টেজ ৭২%
বর্তমান পজিশন ৬,
পূর্বের পজিশন ১২
ভাল লাগল খুব। আমিও আমার কলেজ লাইফের ডায়েরী খুলে দেখি মাঝে মাঝে। ছেলেমানুষীভরা দিনগুলোর কথা পড়ি আর আপন মনে হাসি।
:just: ::salute::
আপনার determination অতুলনীয়।
একটানা বেশিদিন ডায়রী লিখতে পারিনি, মনে হতো ডায়রী আমাকে চলাচ্ছে.. 😛
আপনার ধৈর্যশক্তি অসাধারণ, বলাই বাহুল্য।
মাঝে বহুবছর কেটে গেলেও কৈশোরের ক্যাডেট কলেজ এখনো প্রত্যেকের কাছে একইরকম আছে বলেই মনে হয়।পড়াশোনাটাকে আপনার মত সিরিয়াসলি নিলে কিছু একটা করতে পারতাম।এখন আর সময় নাই.... 🙁
চমৎকার লাগলো। আসলেই।
চমৎকার! আচ্ছা, আপনাদের সময় এ্যাডজুটেন্টের মৃত্যু নিয়ে আর কিছু জেনেছিলেন পরে?
বাপ্রে! লেখকদের কি সাংঘাতিক প্রত্যয় থাকে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
চমৎকার!
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
অসাধারণ।ভাইয়া আপনার ক্লাস সেভেন বইটা পড়ছি।অসাধারণ!!!
খুব ভাল হয়েছে ভাইয়া।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ