সিসিবির আজকের প্রথম পাতা

আজে বাজে কাজে বেশি ব্যস্ত থাকায় আজকাল সিসিবি পড়ি মোবাইলে। এই যন্ত্রে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আমার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।যন্ত্রের ভাষা ঠিক আয়ত্ব করতে পারিনি।অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী কথাটা মুঠোফোনে লিখতে গিয়ে টের পাই। আমার শব্দগুলিকে পাত্তা না দিয়ে, সে নিজের মত করে শব্দ সাজায়।মন্তব্য হয়ে ওঠে অবোধ্য। আজ ঠিক করেছি আগে সিসিবির সব লেখা গুলোর একটা জবাব একবারে দিয়ে তারপরে অন্য কাজ।
৭টি কবিতা, একটি গল্প, একটি অডিও ব্লগ, একটি আলোচনা, আর পাঁচটি বৈচিত্রময় লেখা নিয়ে আজকের প্রথম পাতা। কবিতার ভালো সমঝদর নই আমি। কবি কী বলেন কি ভেবে লেখেন তার ব্যখ্যা কবির চেয়ে ভালো কেউ দিতে পারেনা। আমি শুধু সরল অর্থ বুঝি। প্রথমে যদিও ৭ টি কবিতার কথা লিখেছি। তবে এই ৭টির বাইরেও একটি কবিতা এসেছে পারভেজের আলোচনার লেজুড় হিসেবে, এবং কী আশ্চর্য আলোচনার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ‘আরেক প্রস্থ কাল্পনিক কথোপকথন’
পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, পারভেজ সত্যিকার কবি হয়ে উঠেছে। একেবারে সাধারন মানুষের কবিতা। আমার হিসাবে এই সাধারণের হয়ে ওঠার মত অসাধারণ কাজ আর নেই।
কবিতার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ওবায়েদুল্লাহ ভাইয়ের কথা বলতে হচ্ছে। সিসিবিতে তাঁকে আগে পাইনি।তবে তাঁর কবিতা পড়ে মনে হয়েছে তিনিঅনেক আগে থেকেই কবি, সিসিবিতে এসে কবি হননি। সূর্য সারথী আর মা সিসিবেকে সমৃদ্ধ করেছে। ওবায়েদুল্লাহ ভাইকে স্বাগতম।
আজ সকালে প্রথম পড়েছি সাদাতের কবিতা, একটু আলোই তো করেছ চুরি / আমার দশ দিগন্তের অন্ধকারে/ কেউ বসাতে পারোনি ভাগ। এই লাইন তিনটি আমাকে অনেকক্ষণ ভাবিয়েছে।
অরূপ,লুৎফর আর খায়রুল আহসান সিসিবির প্রতিষ্ঠিত কবি। খায়রুল ভাইয়ের কোন কবিতাই পড়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়না। আজকের দু’টি কবিতার মধ্যে কী হবের দিগন্তে যে সূর্যটা হারিয়ে যায় / ভূঁই ফুঁড়ে সে আবার বের হয় পরদিন। লাইন দু’টি ভীষণ ইন্সপায়ারিং।
অরূপের বিচ্ছিন্ন আবেগে আমিও আবেগাক্রান্ত হয়েছি। লুৎফরের জলরং মাখা চাঁদে মন্তব্য এত কম কেন বুঝলাম না।
রেজা শাওনের গল্প আগে পড়েছি কীনা মনে করতে পারছি না। বকুল পড়তে গিয়ে মনে হল, অনেকদিন পর এক জন গদ্য লেখকের আবির্ভাব হয়েছে, যার গন্তব্য অনেক দূর। পারিপার্শের বর্ণনা চরিত্র নির্মান সব কিছু মিলিয়ে অসাধারণ। তবে আমার মনে হয়েছে গল্পটি আর একটু আগে শেষ হলে বকুলের প্রতি পাঠকের পক্ষপাত বাড়তো।
সাবিনার লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।বর্ণনার গুনে তাঁর ফুল পাখিরাই আমাদের আত্মীয় হয়ে ওঠে আর এত মানুষ নিয়ে লেখা, মানুষের স্বপ্ন নিয়ে লেখা। এখানে আমাদের আর কী বলার থাকতে পারে।
মাসরুফের আরেকটি লেখা পড়ে ছিলাম, সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ নিয়ে। এই লেখাটি তাকে ছাড়িয়ে গেছে।বার বার হেরে যাবার গল্প কত মানুষকে যে জিততে শেখাবে তার ইয়ত্তা নেই। চমৎকার।
ওম মনিপদ্মে হুমের ৩য় পর্ব শেষ হল।অতীশ দিপংকরকে নতুন করে চেনাচ্ছে রমিত আজাদ, এই লেখাটিতে কোন মন্তব্য নেই দেখে বিস্মিত হলাম।আমার ধারণা পাঠকরা ভাবছেন আরেকটু সময় নিয়ে আস্তে ধীরে পড়ে দেখবেন।
‘প্রেম প্রণয় যদাপি দীপ্য বহমান | জীবন ঋতি নিয়ত ঋদ্ধিমান’ বরাবরেই মতই তার নিজস্ব ঢঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে লেখক মনের আনন্দে লিখছেন।অথবা কী বোর্ড তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে জাদুর পেন্সিলের মত।
ইন্টার কন্টিনেন্টাল আড্ডার প্রি এনেউন্সমেন্ট যথেষ্ট আলোড়িত করেছে সিসিবির মানুষদের। প্রি এনাউন্সমেন্ট শিরোনাম হলেও আসলে যত খুটি নাটি বিষয় এখানে এসেছে, তাতে ফাইনাল এনাউন্সমেন্টের আর কিছু বাকী নেই। অসাধারণ উদ্যোগ।
এ পর্যন্ত নুপুরের যত আবৃত্তি শুনেছি, এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি সব গুলিকে ছাড়িয়ে গেছে। কয়েক বার শুনেছি। আরও নতুন কবিতা শুনতে চাই।

সাইদুলের আবার কলকাতা পাঠক টানছে না। গত পাঁচ দিন ধরে টিকে আছে, প্রথম পাতায় লেখার অভাবে। সিসিবি’র এটি একটি বড় সমস্যা। প্রথম পাতার ১৫টি লেখা পোষ্ট হয়েছে ৬ দিন ধরে, প্রথমটি ৩ তারিখে আর শেষটি ৮ তারিখে। অংশ গ্রহণ না বাড়লে ভালো লাগে না।

৩৫ টি মন্তব্য : “সিসিবির আজকের প্রথম পাতা”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ব্লগ নিয়ে ব্লগ আসলেই দারুন একটা উদ্যোগ। আমিও একবার লিখেছিলাম।
    পরে আর টানা হয় নাই, নানা কারনে।
    আপনারটা দেখে মনে হলো ভবিষ্যতে আবার নামতে হবে এই কাজে এবং এই মডেলেই।

    আসাধারন একটা প্রচেষ্টা।

    এতটা ইন্সপায়ার্ড আগে অনুভব করি নাই।
    ::salute:: ::salute:: ::salute::


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • সাইদুল (৭৬-৮২)

      এটা আসলে এক ধরণের অপরাধ বোধ থেকে লেখা,
      দিব্যি পড়ে যাচ্ছি, মুঠো ফোনের যন্ত্রণায় মন্তব্য করা হচ্ছে না, ভাবলাম একবারে সব লিখে ফেলি, তোমার মন্তব্য দেখে মনে হল, কাজটা খারাপ হয়নি


      যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

      জবাব দিন
  2. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    চমৎকার বিশ্লেষণমূলক লেখা সাইদুল ভাই।
    দর্শন জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এই শাখাটি বর্তমানে আমাদের দেশে খুবই দুর্বল ও অবহেলিত। অথচ অবাক করার বিষয় হলো, আমাদের এই বাংলায়ই জন্ম নিয়েছিলো পৃথিবীর প্রথম দর্শন সাংখ্য দর্শন (যতদূর জানতে পেরেছি), গ্রীকদেরও কমপক্ষে একশত বছর আগে। চেষ্টা করছি আমাদের জাতির এই উজ্জ্বল দিকটি সবার মাঝে তুলে ধরতে।

    জবাব দিন
  3. আজে বাজে কাজে ব্যস্ত থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সিসিবিতে কোন পোস্ট না দিয়ে দেখছি লস করে ফেললাম!

    অনেকগুলো লাইনকেই কপি/পেস্ট করে দিতে ইচ্ছা করছিল। শেষে নীচের লাইনটাকেই চূড়ান্ত করলাম!

    আমার হিসাবে এই সাধারণের হয়ে ওঠার মত অসাধারণ কাজ আর নেই।

    লাইনটা অদ্ভুত লেগেছে ভাই! ধন্যবাদ!

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    অংশ গ্রহণ না বাড়লে ভালো লাগে না।

    মন্তব্যে একমত জানিয়ে অংশগ্রহন করে গেলাম।

    আপাততঃ দৌড়ের উপ্রে আছি আর কয়েকটা দিন। তারপর ব্লগসহ অংশগ্রহন করবো।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অংশগ্রহনের সর্বোচ্চ ইচ্ছা থাকলেও সময় বের করতে পারছি না। আজ বেশ কিছুদিন পরে একটু সময় বের করে সিসিবিতে ঢুকে আপনার প্রথম পাতার রিভিউ পড়ে দারুন ভাল লাগলো, এক ঝলকে পুরো পাতা :boss:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    সহমত জানিয়ে গেলাম, ভাইয়া। সেইসাথে বলে রাখি, সিসিবিতে সাইলেন্ট রিডারও কিন্তু কম নেই। এইসব নিরব পাঠককুল লগ ইন করে মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নন, অথবা ঝামেলা মনে করেন। ইমোটিকনে সংক্ষিপ্ত আকারেও কাজ সারা যায় বটে, সেটিই বা কে করেন!

    জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    যেন ট্রেইলার দেখলাম! 😀
    এরকম একটি লেখা সিসিবির পাঠক-লেখক উভয় দলকেই দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে! :salute:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  8. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    একটানে একদিনের একটা ব্লগরোল দেখতে পেয়ে মনটা চনমনে হয়ে উঠলো।
    সেখানে নিজের পাঠের উল্লেখ দেখে সবিশেষ শ্লাঘা অনুভব করছি বৈ কি।
    সবশেষে,

    সাইদুলের আবার কলকাতা পাঠক টানছে না

    কথাটি ঠিক নয়। ধারাবাহিক লেখায় অনেকসময় মন্তব্যের ফ্লো কমে আসে, কিন্তু পাঠক ঠিকই অনুসরণ করতে চলে লেখাটিকে।

    আশা করছি, মাঝে মাঝেই 'সিসিবির প্রথম পাতা' বিভাগটি আপনার হাত দিয়ে বেরুবে। 🙂

    জবাব দিন
  9. রেজা শাওন (০১-০৭)

    ভাই এ ধরণের যেকোন চেষ্টা অনুপ্রাণিত করে। খুবই ভাল লাগলো। লেখালিখির বাইরে আমি নিজেও নীরব পাঠক দলের। লজ্জা পাইলাম। অলসতা বাদ দিয়ে লাইনে আসতে হবে।

    জবাব দিন
  10. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    শব্দের আকারে নেহায়েত মিতব্যয়ী লেখা, কিন্তু প্রকারে সাগর সেচা মানিক। এত অল্প কথায় সবার লেখার চৌম্বক অংশটুকু বের করে এনে এত প্রাঞ্জল বর্ণনায় তা পরিবেশন করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। হ্যাটস অফ, সাইদুল! :hatsoff:
    "অংশ গ্রহণ না বাড়লে ভালো লাগে না" - আমারও ভালো লাগেনা। তবে অংশগ্রহণ অগত্যা না বাড়লে প্রথম পাতায় অন্ততঃ সাময়িকভাবে একেকজনের দুটির জায়গায় তিনটি লেখার ঠাঁই দেয়া যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে এডমিনগণকে অনুরোধ করবো।

    জবাব দিন
  11. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    সিসিবির কাছে আমার সারাজীবনের কৃতজ্ঞতাঃ হাতি ঘোড়া যাই ভাবি সেটা লিখার একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়া, এবং সেই হাতি ঘোড়া পড়ে বাহবা কুড়াবার সুযোগ। তাই চেষ্টা করি সিসিবির এই ধারাবাহিকতা জারি থাকুক। গুপ্ত পাঠকের তালিকায় আমার নিজেরই নাম অনেক বার এসে যাবে। সময় অসময় গতি কিছুটা মন্থর হয় ঠিকই কিন্তু আবারও গরম হয়ে যায় প্রথম পাতা। এরকম চমৎকার সম্পাদকীয়র মত লিখা আগে দেখেছিলাম সম্ভবত পারভেজ ভাই শুরু করেছিলেন। আপনি শুরু করলেন। মাঝেমাঝে এরকম একটা পোস্ট করে দিন আপনারা। পাঠকদের সুবিধা হয় অনেক। চোখ বুলিয়ে নিলে আড়াল হয়ে যাওয়া লিখাও পড়তে পারবে পাঠক। :hatsoff:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।