আবার কলকাতা
রিজেন্ট এয়ারলাইন্সে চড়ে কলকাতায় যাচ্ছি শুনে অনেকেই নাক সিটকে ছিলেন। হয় ভালো এয়ারলাইন্সে যাও না হলে ট্রেনে যাও রিজেন্টে কেন?
এবার আর হঠাত করে যাওয়া নয়। প্রায় মাস খানেক খুঁজে টুজে সবচেয়ে সস্তার টিকেট কেটেছি। ১০,৪০০ টাকায় আসা যাওয়া। কিন্তু উপরে বসে যিনি আমাদের সবার চলাফেরার উপর নজরদারি করছেন, তাঁর দৃষ্টি এড়াবো কী করে। যাওয়ার দুইদিন আগে আমার এক সহযাত্রী কে জ্বরে ফেলেদিলেন। আর আমাকে আরও সাড়ে সাতহাজার টাকা জলে ফেলে টিকেট বদলাতে হল।তারপরও সময় মত যাত্রা শুরু হলনা। সকালের তুমুল বর্ষায় ডুমুর পাতার নিচে লুকিয়ে থাকা দোয়েল পাখির মত ঘাড় গুজে পড়ে রইলো রিজেন্ট।
একটু পর বড়, মাঝারি দুই একটা প্লেনের অড়া শুরু হল। ক্ষুদ্র রিজেন্টের ঠাঁই হয়েছে প্রায় ট্যাক্সিওয়ের মাথায়। ব্যাপারটা মন্দ হলনা। এ জার্ণি বাই বাস ফ্রম লাউঞ্জ টু এয়ার ক্র্যাফট করে যখন প্লেনে উঠে বসলাম তখনও থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছে। দু’একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর রিজেন্ট জনিত আশঙ্কা আমাতেও সংক্রমিত হতে শুরু করছে। রিজেন্টের কেবিন ক্রুদের সেবা যত্নে সে শঙ্কা কেটে গেল ধীরে ধীরে। বার্গার, কেক আর জুসের নাস্তা শেষ হতে হতে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টারমাক ছুলো আমাদের প্লেন।
গতবার কলকাতায় আসার সময় খুত ধরার মানসিকতা নিয়ে এসেছিলাম। অনেক কিছুই ভালো লাগেনি। এবার ব্যাপারটি হল উলটো, কলকাতা বিমান বন্দর অনেক দিক দিয়েই ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের চেয়ে আধুনিক। খুব বেশি প্লেন ওঠা নামা করেনা বলে ভিড় ভাট্টা কম। ইমিগ্রেশন পার হতে সময় লাগলো না। লাগেজ কালেকশনও হলো ঝামেলা ছাড়াই।
কলকাতা বিমান বন্দরের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে ভ্রমণ সংক্রান্ত নানা রকম সেবা ও তথ্যের চমৎকার পরিবেশনা। কাস্টম পেরুনোর পর রেলের টিকেট বুকিং কাউন্টার আছে। মোবাইলের সিম কেনার কাউন্টার আছে, তিন রকম ট্যাক্সির কাউন্টার আছে, চিকিৎসা নেবার জায়গা আছে। ট্যাক্সির জন্যে তাড়াহুড়োর দরকার নেই। একটু কষ্ট করে লাইনে দাঁড়ালেই প্রিপেইড ট্যাক্সি পাওয়া যায়। নিয়ম হলো কাউন্টারে গন্তব্য বলে পয়সা দিয়ে একটি রশিদ নেওয়া। রশিদটা বাইরের কাউন্টারে দিলে তারাই আপনাকে ট্যাক্সি চিনিয়ে দেবে। পুরো ব্যাপারটা বড় জোর পাঁচ ছয় মিনিটের কাজ।
এসব শেষ করে ট্যাক্সি চড়ে বিধান নগর এয়ারপোর্ট অথরিটির কাছে এসেছি, ড্রাইভার বলল, স্যার মির্জা গালিব স্ট্রিট তো আপনি চেনেন?
বললাম আমি আরো দু’বার ছিলাম। চিনি। ড্রাইভার বলল, ;খুবই ভালো হল স্যার আমি কলকাতায় নতুন এসেছি। পথ চিনিনা’।
আমি ভাবলাম বলে কি?বললাম পথতো আমিও চিনিনা।
৬ টি মন্তব্য : “আবার কলকাতা”
মন্তব্য করুন
:boss: :boss: :boss:
🙂
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"বললাম পথতো আমিও চিনিনা" -শেষ কথাটা যেন আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার পূর্বাভাস দিয়ে গেল।
এমন ঝরঝরে লেখা পড়তে বেশ ভালো লাগে!
না স্যার, খুব বেশি রোমাঞ্চ নেই। আবার কলকাতা ২ প্রথম পাতায়ই আছে। পড়ে দেখবেন আশাকরি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
'কে যেন বলছে হিল রাহাহে' - এর চেয়ে বড় রোমাঞ্চ আর কী হতে পারে?
ধন্যবাদ স্যার
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান