ভুমিকা
সেই অর্থে ‘বই পর্যালোচনা’ বা ‘বুক রিভিউ’ কখনও করা হয়ে ওঠেনি। এটা আমার প্রথম চেষ্টা। এই কাজটা করতে উৎসাহিত বোধ করার কারণ যে বইটা নিয়ে কাজ শুরু করলাম তার লেখক এবং বই নিজেরাই। বইটা আমার একজন সহকর্মী আমাকে উপহার দেন। ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এই বইটার ভুমিকা লিখেছেন। সেখান থেকে কিছুটা উদ্ধৃত না করলেই নয়-“ আমাদের দেশে লেখাপড়া নিয়ে অনেক সমস্যা- সবাই বছরের শুরুতে বই পেয়ে যায় কিন্তু বইগুলো খুব ভালো না; আরো অনেক ভালো হতে পারত। কিন্তু যারা চোখে দেখতে পায় না তাদের জন্য কিছুই নেই, তারা কোন বই পায় না। তারা তো আর সাধারণ বই পড়তে পারে না, তাদের দরকার ব্রেইলে ছাপানো বই। সেই বইগুলো তাদের হাতে দেয়ার জন্য অনেক ব্যক্তিগত বা আলাদাভাবে চেষ্টা করেও সুবিধে করতে পারে না। কারণ বোর্ডের বইগুলোর কোন ইলেকট্রনিক কপি নেই। ব্যপারটা রাগিব হাসানের চোখে পড়ল এবং সে দশজনের মত ব্যপারটা নিয়ে হা-হুতাশ না করে সরাসরি কাজে লেগে গেল। সারা পৃথিবীর সব উৎসাহী বাঙালি তরুণদের দিয়ে বইগুলো নতুন করে টাইপ করানো শুরু করল এবং দেখতে দেখতে বইগুলোর ইলেকট্রনিক কপি তৈরি হয়ে গেল, অডিও কপি তৈরি হতে লাগলো, ব্রেইল বই বের হতে লাগল। কি চমৎকার একটা ব্যপার- এই জন্য আমি আমার দেশের তরুণদের এত পছন্দ করি। তারা ধানাইপানাই হা-হুতাশ অজুহাত অভিযোগ না করে কাজ শুরু করে দেয়”। একজন লেখক সম্পর্কে যখন জাফর ইকবাল স্যার এর মত মানুষ এ রকম সার্টিফিকেট দিয়ে দেন, তার বই তো না পড়ে পারা যায় না।
মূল আলোচনা
এখনও কিন্তু বইটার নাম বলা হয়নি। মূল আলোচনার প্রথমে সেই কাজটি সেরে ফেলি –মন প্রকৌশল, স্বপ্ন অনুপ্রেরণা আর জীবন গড়ার ফরমুলা’। এখানেও নিজে থেকে শুরু না করে বইটির ‘লেখকের কথা’ থেকে কিছু অংশ ধার নিই– “বাংলা ভাষায় অনুপ্রেরণামূলক বইয়ের বড়ই অভাব। প্রিয় জিনিসটি না পেয়ে, স্বপ্নের পেশা কিংবা পড়ার বিষয় না পেয়ে জীবন থেকে আশা, স্বপ্ন চলে গেছে বহু মানুষের। এই বইটা তাঁদের জন্যই লেখা। জীবনের দুঃসময়ে অল্প একটু কথা, অল্প একটু স্বপ্ন দেখাতে পারলেই কারো কারো জীবন যেতে পারে পাল্টে। গত এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই স্বপ্ন দেখার কথাগুলো বলে প্রচুর মানুষের সাড়া পেয়েছি, স্বপ্ন দেখতে চাওয়া স্বপ্নবাজদের সংখ্যা দুনিয়াতে কম নয়”।
এখান থেকেই নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি লেখক কেন বইটা লিখেছেন। আমি নিজে ইংরেজিতে বেশ কিছু অনুপ্রেরণামূলক বই পড়েছি, কিছু পড়ার চেষ্টা করেও শেষ করতে পারিনি। সেই বইগুলোর যে মূল সীমাবদ্ধতা আমার নজরে এসেছে তা হল, পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে ফেলা। বেশিরভাগ সময়ই মনে হয়েছে লেখক তার পাঠকের সাথে যথাযথ মানসিক সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন, কেউ কেউ সংযোগ ঘটিয়ে তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধরনের বইয়ের জন্য এই ব্যপারটি কিন্তু একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলব রাগিব হাসান এই ব্যপারে পুরোপুরি সফল হয়েছেন। কিভাবে তিনি এই অসাধ্য সাধন করলেন তার একটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করি।
১। এই বইটির ব্যপ্তি মাত্র ৮০ পৃষ্ঠা, কাজেই শুরুতেই আশা জাগানিয়া যে স্বল্প সময়েই তা পড়ে শেষ করা সম্ভব।
২। বইটি ৩৫ টি ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করা, আড়াই পৃষ্ঠার চেয়ে বড় কোনটিই নয়, কাজেই কাজের ফাঁকে, লাঞ্চ ব্রেকে বসেও দ্রুতই শেষ করা যায়।
৩। প্রতি অধ্যায়েই সুনির্দিষ্ট এক একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সংক্ষেপে কাজের কথাটি বলা হয়েছে।
৪। লেখক পুরনো থেকে শুরু করে হাল আমলের অনেক মানুষের উদাহরণ দিয়েছেন, এমনকি নিজেরও, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই অনুপ্রেরণাদায়ক।
৫। লেখক খুব সাধারণ এবং প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করেছেন, যেটার মাধ্যমে উনি পাঠকের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
দাম নিয়ে দু’চারটা কথা না বললে বই নিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বইয়ের গায়ের মূল্য ১৫০ টাকা। এই মূল্যে এর চেয়ে ভালো বই কেনা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। এই লেখা যারা পড়ছেন, কিনে সম্ভব না হলে ধার নিয়ে হলেও এই বইখানা পড়ুন। কথা দিতে পারি, আপনার অর্থ এবং সময় কোনটাই বৃথা যাবে না।
উপসংহার
বইটা আমার খুব ভালো লেগেছে, কারণটা ব্যখ্যা করার চেষ্টা করি ৫০ নম্বর পৃষ্ঠার কিছু অংশ উদ্ধৃত করেই- “ বেশি বেশি কথা বলে, মিটিং টক শো করে, আলোচনা করে সময় নষ্ট করার সময় কোথায়, বরং ‘কথা নয়, কাজ’ এই প্রবাদটাকে প্রিন্ট করে টেবিলের সামনে রাখুন টাঙিয়ে। পারফেকশনের অন্ধ মোহে সময় কাটালে দুনিয়া হবে গদ্যময়, কিন্তু আসল কাজটা হবে কচু আর ঘণ্টা”। সুতরাং আর কথা নয়, আসুন কাজে লেগে পড়ি, মানে বইটা যত দ্রুত সম্ভব পড়ে ফেলি।
পর্যালোচনার স্টাইলটা ভাল লেগেছে।
বইটা কেমন তা তো না পড়ে বলা যাচ্ছে না।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
অনেক ধন্যবাদ ভাই, তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলুন, ভাল না লাগলে মাইর দিয়েন......... 😀
আমার বইটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বইটি লেখার উদ্দেশ্য ছিলো অনুপ্রেরণা দেয়া, যাদের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে, তাদের আশার আলো দেখানো। আপনি সহ পাঠকদের ভালো লাগলে সেটাই লেখক হিসাবে আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।
বইটির কিছু অধ্যায় এর সাইটে ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে, এখানে http://www.elochinta.com/mon-prokoushol/
আর বইটির ফেইসবুক পাতায় বেশ কিছু অধ্যায় দেয়া আছে। https://www.facebook.com/monprokoushal/
দুই এক দিনের মধ্যে বইটির ২য় সংস্করণ আদর্শ প্রকাশনী হতে বের হতে যাচ্ছে, আশা করি বইমেলা শেষ হবার আগেই সেটা হবে। ১৪টা নতুন লেখা এই সংস্করণে আছে।
আর বইটা থেকে উপকৃত হওয়াটাই বড় কথা, বইটা কেনার দরকার নাই, আমার ফেইসবুক টাইমলাইনে গেলে এই বইয়ের অনেকগুলা লেখাই সেখানে পাওয়া যাবে। গত ২ বছরে নানা সময়ে সেগুলা পোস্ট করেছি।
লেখকের কাছ থেকে মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল বোধ করছি।
বইয়ের খবর, সুন্দর আলোচনা আর সেই সাথে মন্তব্যের ঘরে লেখককে পেয়ে দারুন হলো।
ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে ইতিমধ্যে না দেয়া হয়ে থাকলে (বিক্রির জন্য) কিছু কপি দিলে ভালো হয়।
"স্বপ্ন দেখতে চাওয়া স্বপ্নবাজদের সংখ্যা দুনিয়াতে কম নয়” -- কথাটা খুবই ভালো লাগলো, কারণ, আমিও তাদেরই একজন মাত্র।
আহমদ এর সাথে আমিও একমত, রিভিউ এর স্টাইলটা খুব ভালো হয়েছে।
লেখকের বক্তব্য পড়েও খুব ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ ভাই, আরও লেখার অনুপ্রেরণা পেলাম।
আমাদের সময়ে অনুপ্রেরনাদানকারি সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলা ছিল ডেল কার্নেগির লিখা।
পাশাপাশি ছিল ডাঃ লুতফর রহমানের কিছু প্রবন্ধ।
অনেকেই খুব উতসাহের সাথে ওগুলো পড়তো এবং ওগুলো থেকে নানা লেসন নিজের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টাও করতো।
কিন্তু ক্যাডেট কলেজের পিকুলিয়ারিটির কারনে বন্ধুমহলে আচিরেই আমরা ঐ বইগুলাকে হাস্যকর বস্তুতে পরিনত করেছিলাম।
ঐগুলার নতুন নামকরনও করা হলো "খুতবা" আর বিভিন্ন কৌতুককর পরিবেশে ওখান থেকে লাগসই উদ্ধৃতি করে আসর জমানোটাও হয়ে উঠলো একটা নৈমিত্তিক ঘটনা।
এরপর থেকে ঐসব খুতবার ফ্যানরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। পড়লেও তারা তা পড়তো গোপনে। টিটকারি তামাসার ভয়ে তারা আর প্রকাশ্য হতো না। আমার কেন যেন মনে হতো, ওগুলো যারা পড়ে তারা বেশিরভাগেরই কিছু কিছু একটা জটিলতা ছিল।
সেই থেকে অনুপ্রেরনাদানকারি কোনো লিখাকেই আমার কাছে খুতবা ছাড়া আর কিছু মনেহয় না।
বিশেষ করে এর বক্তব্য প্রদানের স্ট্যাইলটার জন্য।
কেমন যেন একটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ, সর্বজ্ঞ টাইপ মনভাবের প্রকাশ পেত কথাবার্তায়। আবার একজনের সবকিছু বাতিল বলে ছুড়ে ফেলে দেয়ারও একটা সুর থাকতো কথাবার্তায়। এতে করে জানার জয় যারা পড়তে চাইতো তাদের কাছে ঐ লিখাগুলো নানা কারনে হয়ে দাড়াতো দুষ্পাঠ্য।
যাহোক, এই বইটার রিভিউ পড়ে মনে হলো, এটা হয়তো অমন না ও হতে পারে।
অনুপ্রেরণাদানকারী লিখালিখির প্রতি দীর্ঘদিনের একটা ডিটেস্ট তৈরী হওয়ায় শুরুতেই নিজের জন্য বইটা পড়ায় কোনো আগ্রহ বোধ করছি না তবে যারা এটা পড়তে ইচ্ছুক, তাদেরকে বলছি, আমাকে ফলো করার দরকার নাই।
জাস্ট ডু এজ ইউ ডিজায়ার। বলা তো যায় না, কোনো উপকার হলেও হতে পারে.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
এটা ট্রাই করে দেখুন ভাই, ফিরে আবার আগ্রহ জাগতেও পারে।
:thumbup:
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...