‘ফালা দাও’ সমাচার
শাজাহান আলী স্যার ক্লাসে এসেই বললেন,
‘ক্যাডেটস্, তোমরা এখন এখনই বর্ষণমুখর সন্ধ্যা নিয়ে একটা রচনা লিখে ফালা দাও দেখি।’
স্যারের ‘ফালা দাও’টি একাদশ শ্রেণীর ক্যাডেটদের মাঝে খানিক আলোড়ন সৃষ্টি করলো। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কী যেন বলাবলি করে নিল। স্যার ক্যাডেটদের দুষ্টুমি অনুধাবন করতে পারলেন বলে মনে হলো না। তিনি সময় কাটানোর জন্য চেয়ারখানা টেনে একটা বই নিয়ে বসলেন। বাইরে মেঘের ঘনঘটা, দমকে দমকে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। কুড়ি মিনিট পর ক্লাসের নেতৃস্থানীয় একজন আপা রচনা লেখার পর ডেস্ক থেকে ‘বর্ষণমুখর সন্ধ্যা’ লেখা খাতাটি মেঝেতে ফেলে মৃদুস্বরে বললেন,
‘স্যার, বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা লিখে ফালা দিসি!’
আপার দেখাদেখি তার কিছু সহচরও ‘ফালা দেয়া’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।
শাজাহান আলী স্যার অতি সরল মানুষ। তিনি আপার কথাবার্তা কিছুই বুঝতে না পেরে প্রথমে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন। স্যারের মত সাদাসিধে মানুষেরা রাগ করেন কদাচিৎ কিন্তু একবার ফুসে উঠলে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মত লাভার বন্যায় খাক করে দেন চারপাশ! স্যারের সুরমা টানা চোখের পাতা রাগে কাঁপছে তিরতির করে! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। তাঁর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল মুহুর্তেই, তারপর তিনি ঝড়ের বেগে ক্লাস থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটা দিলেন। মিনিট দশেক পর তিনি প্রিন্সিপাল স্যার এবং ডিউটি মাস্টার স্যারকে নিয়ে ক্লাসে ফিরে এলেন! এতোক্ষণ যে ক্যাডেটরা স্থুল হাস্যরসময় বিষয় নিয়ে মশগুল ছিল তারাই এবার করিমউদ্দীন স্যারকে দেখে আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস টের পায় ভীষণভাবে। করিমউদ্দীন স্যার সব কিছু জেনে শুনেই ক্লাসে এসেছিলেন। তিনি সরাসরি জানতে চাইলেন কারা সেই দুর্বিনীত ক্যাডেট যারা শিক্ষককে অসম্মান করে? পুরো ক্লাস রুমে পিনপতন নিরবতা নেমে এলো। আপারা মাথা নীচু করে বসে রইল। স্যার নিস্তব্ধতা ভেঙে বললেন, তোমরা যদি না বল কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাহলে পুরো ক্লাস আজ দাঁড়িয়ে থাকবে। এরপরও সবাই চুপচাপ বসে রইলে স্যার একাদশ শ্রেণীকে দাঁড় করিয়ে রেখে সবাই বেরিয়ে গেলেন।
হাউস ইন্সপেকশন
হাউস ইন্সপেকশন অনেকের কাছে মূর্তিমান সমস্যা মনে হলেও আমার মিলি আপার কাছে সেটি বিপুল আনন্দের ব্যাপার ছিল। আমরা ঠিক শুচিবায়ুগ্রস্ত না হলেও আমাদের বিছানার চাদরটি সব সময় টানটান থাকা চাই, লকারের খাকী কি ট্রাউজার্স কিংবা নিভিয়া ক্রিমটি অথবা নীচের তাকে বইগুলো সুবিন্যস্ত করে রাখা চাই। চিরুনিটি ঠিক জ্যামিতি বক্সের পাশে এক সমান্তরালে রাখা চাই। আমি আপার সাথে গল্প করতে ভালবাসতাম। মিলি আপা হুকুম করলে কোন কাজকেই কাজ বলে মনে হতো না। আপা কাওকে ডেকে আনতে বললে আমি তাকে বেঁধে সামনে হাজির করি। এক মাথা ঝাঁকড়া চুল নেড়ে সুইচবোর্ড থেকে দরজার চৌকাঠ অথবা খাটের পায়া সব চকচকা বানিয়ে ফেললাম ভেজা কাপড়ে মুছে মুছে। মাকে হামেশাই চিঠি লিখি, আসছে প্যারেন্টস ডে’ তে রুমের জন্য ফুল এনো, সাথে সাদা সিরামিকের দুটি ফুলদানী আর লকারে বিছানোর জন্য নকশাকাটা কাগজ এনো। পরিচ্ছন্ন আর সুসজ্জিত আমাদের রুমটি অসংখ্যবার শ্রেষ্ঠ রুম নির্বাচিত হয়েছে।
এদিকে সত্য হাউসে আমাদের আইনস্টাইনের রুমে কতক মহাপড়ুয়া মহামনীষী ক্যাডেট একসাথে থাকতো। ওরা লাইটস আউটের পর বাথরুমে চেয়ার নিয়ে বসে দুলে দুলে পড়া মুখস্ত করতো। ওরা জ্ঞান বিজ্ঞানের নানান সূত্র নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত থাকতো যে নিজের বিছানার চাদর পাল্টাতে ভুলে যেতো, সপ্তাহ দুই পার হয়ে গেলেও নিজের মোজাটি ধোয়ার কথা মনেই পড়তো না। হাউস ইন্সপেকশনে এসে এ্যাডজুটেন্ট স্যার ইতোমধ্যে দুই বার সতর্কবাণী দিয়ে গেছেন। তৃতীয় বার পরিদর্শনের আগে হাউস মাস্টার স্যার ওদের সবাইকে ডেকে বিশাল একখানা বয়ান দিলেন। স্যারের কথা শুনে উঠতি আইনস্টাইনরা এবার নড়েচড়ে বসলো। ফলশ্রুতিতে রুমের চারজন মিলে ঘষে মেজে বছরকার আবর্জনা সাফ সুতরো করলো। লকারের কাপড়চোপড় টানটান করে রাখলো সবাই মিলে। সিলিং ফ্যানের তার থেকে তোষকের তলা ঘষে মেজে রং অবধি তুলে ফেললো। সবশেষে প্রিন্সিপাল, এ্যাডজুটেন্ট সহ সবাইকে স্বাগত জানাতে এখানে সেখানে তিব্বত ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে নিঁখুতভাবে মেঝেটাও পলিশ করে রাখলো!
এ্যাডজুটেন্ট স্যার রুমে এসেই চেয়ার ক’টা উল্টে দিয়ে মশারির স্ট্যান্ডের ওপরে হাত ঘষে নিলেন! নাহ্ কোথাও কিছু নেই! এবারে চারখানা চিরুনি জানালার আলোতে ধরে দেখলেন কোথাও কোন ময়লা কি খুশকি আছে নাকি। স্যার আশাহত হয়ে হাল ছেড়ে দেবার মুহুর্তে আবিষ্কার করলেন ভূলন্ঠিত একটি দীর্ঘ বেয়ারা চুল লুকোবার পথ খুঁজছে! বিজয়ের আনন্দে বিহ্বল স্যার অতি সতর্কতার সাথে বাঁ হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাংগুলির সাহায্যে চুলটি তুলে রুম লিডারকে জিজ্ঞাসা করলেন, হোয়াটস্ দ্যাট?
পরবর্তী দৃশ্যে দেখা গেল রুমের বড় আইনস্টাইনের নেতৃত্বে অবশিষ্ট ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা সেই একটি চুল হাতে হলওয়েতে মার্চপাস্ট করছে!
শম্পার চেহারায় ভাল মানুষীর ছাপ সুস্পষ্ট। ছিপছিপে লম্বা শম্পা ঝড়ের গতিতে ড্রিবলিং করতে করতে এগিয়ে যেতো সামনের দিকে। সে খেলাধূলায় ভাল আর পড়াশোনায় চৌকশ। একবার হাউস ইন্সপেকশনের ঠিক আগ মুহূর্তে দেখা গেল ওর রুমে কোন একজনের ভেজা আন্ডারপ্যান্টটি তখনো আলনার শোভা বাড়াচ্ছে। এ্যাডজুটেন্ট স্যার রুমে এসে প্রথমে সুইচবোর্ডের নীচে ঝুল পরীক্ষার পরই বিছানার তোষক আর আমাদের আলনা নিয়ে গবেষণা করেন। রুমের অন্য সবাই যখন অনাকাংখিত এই ভেজা রঙীন বস্ত্রখন্ডটি কোথায় লুকানো যায় ভাবছে, তখন মুহুর্তের মাঝে ওদেরই একজন আন্ডারপ্যান্টটি জুতো গলিয়ে সালোয়ারের ওপর পরে কামিজটি টেনে দিল!
বিয়ের শানাই
রুহুল আমিন স্যার তখন হাউস মাস্টার। কিছুদিন ধরে স্যারের বড় মেয়েটির বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। তারপর আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসেই একদিন কনে দেখা হলো, পানচিনি হলো, তারপর গায়ে হলুদ শেষে বিয়ের শানাই বাজলো অবশেষে। সেদিন স্যারের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানমালা চলছিল কলেজে। শম্পা যে খুব খানাপিনা ভালবাসতো তা ঠিক নয়। কিন্তু স্যারের কন্যার বিয়ের খবরে তার শরীরে বেশ একটা জোশ এসে গেল। মনে মনে ভাবলো, কলেজের ভেতরে আজ সবাই ভোজ খাবে আর আমরা হাউসে বসে আঙুল চুষবো তা তো হয় না। শম্পা সবার অজান্তে হাউস থেকে বেরিয়ে গেল বিয়ে বাড়ির উদ্দেশে; সাথে নিল একসেট সিভিল জামাকাপড়, হাউস বেয়ারার থেকে ধার করা ঢোলাঢালা কালো একখানা বোরখা, রংচটা একজোড়া চপ্পল আর কাঁধে ঝোলানোর একটা ব্যাগ। একাডেমিক ব্লকে পৌঁছে সে ছুটির দিনের সাদা সালোয়ার কামিজ বদলে সিভিল পোষাক পরে নিল; তারপর চুলগুলি টেনে ব্যান্ড বাঁধলো উঁচু করে। সবশেষে আছিয়া বুয়ার বোরখাটি পরে, পায়ে চপ্পল গলিয়ে সে যাত্রা করলো বিয়ে বাড়ির দিকে। ধীরেসুস্থে একাডেমিক ব্লক পেরিয়ে ছোট একখানি দেয়াল টপকে আমাদের বোরখাওয়ালী শম্পা পৌঁছে গেল স্যারের বাড়িতে। ততোক্ষণে অতিথিদের হাসিগল্পে মুখর হয়ে উঠেছে বিয়ে বাড়ি। তৌহিদা ম্যাডামের আদুরে কন্ঠ শোনা যাচ্ছে ঐতো; ফারুখ স্যার খাবার তদারকি করছেন টের পায় শম্পা। এরই মাঝে নিকাবে মুখ ঢেকে নিয়েছে ও, তারপর ধীর পায়ে লিয়াকত ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিনতাইকারীদের সুরে বললো,
‘যা আছে ব্যাগে ভরেন জলদি!’
লিয়াকত ভাই আমাদের কলেজের বাবুর্চি। কলেজের স্টাফদের বড়সড় উৎসব পার্বণে লিয়াকত ভাইয়ের ডাক খোঁজ পড়ে। বিশাল বপুর লিয়াকত ভাই আমাদের রোগাপটকা শম্পাকে দেখে প্রায় মূর্ছা যাবার দশা। নিজেকে কোন মতে সামলে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, ‘আআপাগো স্যারে দ্যাখলে আআমার এই চাচাকরীটা থাথাকতো না!’
লিয়াকত ভাই দূর্দান্ত প্রতাপে আমাদের হেঁশেল চালান। তার এহেন দূর্দশা দেখে শম্পা হেসে বললো,
‘চাকরীটা যদি সত্যি রাখতে চান তবে আমাদের সবার জন্য খাবার দেন ঝটপট!’
বেচারা লিয়াকত ভাই নিজেকে বাঁচাতে দ্রুততার সাথে খাবার পলিথিনের ব্যাগে পুরে অনাহুত অতিথি বিদায় করলেন!
সার্ক সম্মেলন
উনিশশো পঁচাশীর ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় প্রথম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশী সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে আয়োজিত এই মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সাজ সাজ রব পরে যায়। সেই আনন্দযজ্ঞের ঢেউ আমাদেরও ছুঁয়ে ছিল একটু সময়ের জন্য। সম্মেলন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন সার্কভুক্ত দেশের ছায়াছবি প্রচার করতো প্রতি রাতে। আমাদেরও সৌভাগ্য হয়েছিল সেই সব মুভি দেখার। তখন আমরা এসএসসি পরীক্ষার্থী ব্যাচ। ডিনারের পর থার্ড প্রেপ বাতিল হলো মুভির কারণে। ভারতীয় ছায়াছবির সাথে আমাদের আগেই পরিচয় ছিল। সার্কের কারণে পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, আফগানিস্তান আর শ্রীলংকার ছায়াছবি দেখা হলো।
আমাদের টেলিভিশন রুমে তিনভাগে বসতাম আমরা। টিভির ঠিক সামনে মেঝেতে বসতো আমজনতা জুনিয়ররা। মাঝে সিনিয়রদের বসার জন্য চেয়ার ছিল। সবার পেছনে ছিল বেন্চ পাতা, সেখানে মাঝের ক্লাসগুলি বসতো। বেন্চের শেষে আবার দাঁড়িয়ে থাকা পার্টিও থাকতো। এরা না পারে নীচে বসতে, না পারে বেন্চে বসতে; হাতলবিহীন চেয়ারে বসা তো সুদূরপ্রসারিত! ঢাকাই ছবির শাবানার নিরন্তর চোখের জল, জসীমের ঢিসুম ঢাসুমের সাথে ‘চৌধুরী সাহেব আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু ভিখারি নই’ মার্কা সংলাপের ভীড়ে আমাদের মত ক্ষুদে দর্শকদের মন জয় করেছিল বিদেশি কয়েকটি ছবি। উত্তম-সুচিত্রা অনেক আগেই আমাদের মুগ্ধ করেছিল; এবারে পাকিস্তানি ছায়াছবি আয়না আমাদের মন কেড়ে নিল। ধনীর দুলালী শবনম আর দরিদ্রপুত্র নাদিমের ভালবাসার কাহিনী ছিল আয়না। আমাদের ষোল বছরের আবেগকম্পিত ভীরু মনে আয়না দীর্ঘদিন রেখাপাত করেছিল বলাবাহুল্য।
ওভালটিন কিংবা ঘরে পাতা দই
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রাত জেগে পড়বার অনুমতি না থাকলেও অতি পড়ুয়া কেউ কেউ ডর্ম কিংবা বাথরুমের আলো জ্বেলে পড়াশোনা করতো। রাত ন’ টায় আমাদের বাড়তি এক মগ গরম দুধ দেয়া হতো। এটি শুধুমাত্র পরীক্ষার্থী ক্লাসের জন্য বরাদ্দ ছিল। আমরা দলবেঁধে কমনরুম থেকে দুধ আনতে যেতাম। মায়েরা আমাদের জন্য পুরো মাসের হরলিক্স, ওভালটিন কিংবা মালটোভার কৌটো পাঠিয়ে দিতো রুমে রাখার জন্য। আমরা প্রথম দুই চারদিন দুধে সেসব মিশিয়ে খেতাম। পরে মেঝেতে খবরের কাগজ বিছিয়ে এর ডানো তো ওর হরলিক্স, পাশের রুমের চিনি আর মালটোভা মিশিয়ে শুকনো এই পাঁচমিশালী দ্রব্যটি বুভুক্ষের মতো খেতাম। আমাদের কাজলনয়না কাকলীর পছন্দ ছিল ঘরে পাতা দই। ও কমন রুম থেকে দুধ এনে যত্ন করে ঢেকে রাখতো খাতা দিয়ে, পরদিন সেটি জমে দই হয়ে যেতো। সবাই যখন এক চুমুকে দুধ খায়, কাকলী তখন আয়েশ করে দই-চিড়াতে বিভোর।
তমা আপা
আপা কৈশোর উত্তীর্ণ বয়সে আমাদের সাথে কলেজে যোগ দেন। আজ তিন দশক পরে তার আসল নামটি নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করতে চাই না। ডাক খোঁজের জন্য একটি নাম দরকার। মনে করা যাক তার নাম তমা!
তমা আপা আমার রুমমেট ছিলেন। তিনি কথা বলেন মেপে তাও আবার নিচু লয়ে, হাসিতে প্রাণ আরো কম। তার অভিব্যক্তি দ্বিধাগ্রস্ত, হাঁটেন ঈষৎ নুয়ে। পড়াশোনায় তার সুনাম শুনতে পেয়েছি আগেই। রুমে আপা আমাদের কাওকে পাত্তা টাত্তা দেন না। খুব বেশী প্রয়োজন না পরলে কথাও বলেন না। তিনি নিজের মাঝে বিভোর থাকেন, মাঝেমধ্যে রাত গাঢ় হয়ে এলে নীচু গলায় জানতে চান ঘুমিয়ে পরেছি কিনা। আমি
উ উ বলে উত্তর দিই, যার মানে হ্যা কিংবা না উভয়ই হতে পারে। একদিন দেখি আপার পায়ের গোড়ালি রক্তেভেজা। আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে হৈচৈ করে বলি,
‘কি হলো? কি হলো আপনার? চলেন হাসপাতালে নিয়ে যাই!’
আপা ভয় পেয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটে ছুঁইয়ে চুপ করতে বললেন। হতবিহ্বল আমি ফিসফিস করে বললাম,
‘কি করে এমন হলো?’
রুমে আমরা দু’জন ছাড়া তখন আর কেউ নেই; আমি ঝটিতি দরজার ছিটকিনি আটকে আপার পাশে বসি। ধরা পরে গিয়ে তাকে খুব অসহায় দেখায়। আমার হাত ধরে ফিসফিসিয়ে মিনতি করে বলেন,
‘কাওকে বলো না। আমার মা জানতে পারলে রক্ষা নাই। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। আমাকে বাঁচাও তুমি!’
আমি শপথ করে বলি,
‘কখনোই বলবো না। কিন্তু আমাকে বলতে হবে কী করে এমন ব্যাথা পেলেন।’
তমা আপার ভাল লাগে না ক্যাডেট কলেজ। মাকে সে কথা বলেছেন অনেকবার। মা কোন কথা শুনতে ইচ্ছুক না। সংসারে বাবা নাই, ছোট ভাইবোন আছে আরো তিনজন। তমা পড়াশোনায় ভাল। বন্ধুদের সবার সাথে সদ্ভাব থাকলেও হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরী হয়নি কখনো। হঠাৎ করে কারো সাথে আগ বাড়িয়ে আলাপ পরিচয় করতে তার মন চায় না। তমা একা থাকতে ভালবাসে। কথাবার্তা কিংবা গল্প বলার পাটটিও তার নিজের সাথেই। আপা ভেতরকার ক্ষরণ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে। তমা আপা সুযোগ পেলেই বলাকা ব্লেডের ধার পরীক্ষা করে নিজের পায়ে, হাঁটুতে, উরুতে!
চলবে
//‘স্যার, বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা লিখে ফালা দিসি!’//
শাহজাহান আলী স্যারকে আমরাও পেয়েছিলাম। ফালা দিসি বোধ হয় পরবর্তীতে কারেক্টেড হয়েছে। স্যারকে আমার ভালোই লাগত। যাই হোক মজা পেলাম পড়ে।
আপু সবতো ফাঁস করে দিচ্ছ। কি যে, তোমার কপালে আছে।
অবশ্য এরকম করে লিখতে লিখতে শাকুর মজিদ ভাইয়ের মত ক্যাডেট কলেজ নিয়ে একটি বই বের হয়ে যাবে মনে হয়।
লিখে যাও আপু। :clap:
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
শাজাহান আলী স্যার মানুষ হিসেবে অসামান্য ছিলেন নিঃসন্দেহে। আমাদের প্রথম দিককার শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর পড়ানোর ধারাটি ইউনিক ছিল। আগেই লিখেছিলাম, আমি স্যারের অতি প্রিয় একজন ক্যাডেট ছিলাম।
অনেক গল্প জমে আছে, জিয়া। জানিনা কতটুকুই বা বলতে পারবো। আজকাল মানুষের অনুভূতি বড় নাজুক, একটুতেই তা টালমাটাল হয়ে পড়ে!
বইয়ের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না; তোমরা যে আগ্রহ নিয়ে আমার ব্লগ পড়ছো তাতেই আমি খুশী। ভাল থেকো!
শাজাহান আলী স্যার এর সরলতার সুযোগে‘ফালা দেয়া’ কর্মসূচিটি বেশ জমে উঠেছিল, তা বোঝাই যাচ্ছে।
পরিচ্ছন্ন আর সুসজ্জিত আমাদের রুমটি অসংখ্যবার শ্রেষ্ঠ রুম নির্বাচিত হয়েছে। - 🙂 :clap:
পরবর্তী দৃশ্যে দেখা গেল রুমের বড় আইনস্টাইনের নেতৃত্বে অবশিষ্ট ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা সেই একটি চুল হাতে হলওয়েতে মার্চপাস্ট করছে! - 🙂
বেচারা লিয়াকত ভাই নিজেকে বাঁচাতে দ্রুততার সাথে খাবার পলিথিনের ব্যাগে পুরে অনাহুত অতিথি বিদায় করলেন! -- 😀
তমা আপা সম্বন্ধে আগেও বোধ হয় কোথাও কিছু জেনেছিলাম।
ভাল লাগলো মজার এসব ঘটনাগুলোর কথা পড়তে। সতীর্থদের নিশ্চয়ই আরো বেশী ভাল লাগবে।
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
এমজিসিসি তথা আমার সতীর্থদের অনেকেই বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন আমার এই স্মৃতিচারণ নিয়ে। ছেলেরাও দেখছি পড়ছে আমাদের গল্প! আর আমার সিসিবিয়ানদের ভালবাসায় তো আমি সতত ঋণী!
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ, কবি।
আপা হেসেই যাচ্ছি
চমৎকার লেখা।
চমৎকার।
বাহ! এবার দেখি অনেকগুলো স্মৃতিচারণ একসাথে!
খুব ভাল লাগল!
আপা প্রতিটি অণুস্মৃতির শিরোনাম 'বোল্ড' করে দিতে পারো।
তাহলে হয়ত পাঠকদের আরও সুবিধে হবে! O:-)
অনেকটা এমন-
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
জুনা, তোর আদেশ শিরোধার্য! আগামী পর্বে তবে বোল্ডই চলুক।
আমার লেখার জন্য একটি নাম খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। প্রতি পর্বে নতুন নাম ভাল লাগছে না। নামের মাঝে ক্যাডেট শব্দটি থাকলে ভাল হয়। যেমন ক্যাডেটের জার্নাল কিংবা ক্যাডেট কলেজের দিন টাইপের কিছু একটা। তোর মতামত জানাস।
আমার লেখার জন্য একটি নাম খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম -- ক্যাডেট কথিকা দিতে পারো।
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
বাহ্! কি সুন্দর শুনালো ক্যাডেট কথিকা! খুব ভাল লাগলো নামটা। অনেক অনেক ধন্যবাদ, কবি।
🙂 প্রীত হ'লাম। 🙂
আপা,
বরাবরের মতই একটানে পড়ে ফেললাম।
মজাই লাগছিল।
কিন্তু শেষ প্যারায় যে ধাক্কাটা খেলাম, সেটা সামলাতে সময় লাগছে।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আমার ব্লগবাড়িতে ঢু দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ছোটভাই। পরবর্তী পর্ব গুলোতে সাথেই থেকো।
শাহজাহান স্যার ক্লাসে একরকম আর প্রেপ ডিউটিতে আরেকরকম। উনি প্রেপে ঢুকতেন তুত গাছের ডাল হাতে নিয়ে। 🙁
একটা বই লিখে ফেলেন আপু। 🙂
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য