ক্যাডেট কথিকাঃ পর্ব ৪

উনিশশো তিরাশি সালের মে মাসে এমজিসিসির প্রথম প্যারেন্টস ডে অনুষ্ঠিত হলো। আমাদের বন্ধুদের মাঝে যাদের বড় ভাই ক্যাডেট কলেজে পড়তো তারা প্যারেন্টস ডে সম্পর্কে জানতো ভাল। আমরা যারা প্যারেন্টস ডে সম্পর্কে অন্ধকারে ছিলাম তারা হাউস মাস্টার স্যারের বক্তৃতা থেকে অনেক কিছু জানলাম। করিমউদ্দীন স্যার সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন যে পুরুষ এবং মহিলারা একসাথে বসে ক্যাডেটদের সাথে গল্প গুজব করতে পারবে না, অর্থাৎ বাবা উত্তরে বসলে মাকে বসতে হবে দক্ষিণে। তিনি বললেন, অডিটোরিয়ামে ঢুকতেই বাঁয়ের সারিতে বসবে ছেলেরা, মাঝের সারিতে অপেক্ষমাণ ক্যাডেটরা থাকবে, আর ডানের সারিটি মেয়েদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে!
আমরা তিনবোন সেই সময়ে কলেজে আছি বলে আত্মীয় স্বজনের এক বিশাল বহর আসবে ধরেই নিয়েছিলাম। আমাদের মা-খালারা সাত বোন, মামাও আছে দুইটি, তারা সবাই আবার তাদের তুতো সম্পর্কিত ভাইবোনদের সাথে ব্যাপক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। সেই অনুপাতে আমার বাবার পরিবারটি অপেক্ষাকৃত ছোট। বাবা-মায়ের দুই পরিবার এলে আমাদের ছোটখাট একটি মেলা বসে যাবে!

প্যারেন্টস্ ডে’ র সকালবেলা আমরা কোন রকমে ব্রেকফাস্ট সেরে ঠোঁটে পমেটম মেখে অডিটোরিয়ামে চলে এলাম। মিনিট দুই পরে দেখি ইতি আপা হঠাৎ ‘আম্মু’ বলে চিৎকার করে একজন ভদ্রমহিলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে আমাদের অনেকের পরিবার চলে এলো। আমাদের সম্মিলিত কথাবার্তা, হাসি হাসি মুখ আর খাবারের সুগন্ধে অডিটোরিয়াম মৌ মৌ করছিল! এই হলো তবে প্যারেন্টস ডে? মাঝের সারিতে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে বিশাল পরিসরের পর্দায় সবাইকে দেখতে আমার বেশ লাগে। মা আসছে না বলে আমার ঠিক পাশের চেয়ারে রুমানা আপা নীরবে চোখের জল ফেলছিল। ইতি আপার মা কন্যার বান্ধবীকে ডেকে বললেন, তোমার মা আসে নাই তো কী হয়েছে; আমরা তো এসেছি। আসো, আমাদের সাথে খাবে। বেচারী রুমানা আপা এতোক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদছিল, এখন বন্ধুর মায়ের কথা শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো!

প্যারেন্টসরা প্রথমে আলাদা আলাদা বসলেও পরে একজন দু’জন করে একসাথে বসতে শুরু করলো। অচিরেই দেখা গেল বাবা মা ভাই বোন সবাই মিলে গল্প হচ্ছে একসাথে। কলেজ কতৃপক্ষ এসব দেখে পরে আর উচ্চবাচ্চ করে নাই। একে একে অনেকেই চলে এসেছে মেয়েদের দেখতে, কেবল আমার পরিবারের কোন দেখা নাই! অনেক সময় পরে এক দল মানুষের সম্মিলিত হট্টগোলে বুঝতে পারি আমাদের বৃহত্তর পরিবারটির আগমন ঘটেছে!

বাবা মা, ভাই বোন ছাড়াও মামা, চাচা, খালা, ফুপুদের বিশাল দল এলো আমাদের দেখতে। সবার মাঝে বেশ একটা ঈদ ঈদ ভাব দেখি। মা-খালারা কেউ পোলাও-রোস্ট এনেছে তো কেউ ভাত-মাছ ভাজা আর মুরগীর ঝোল। কেউবা আমার প্রিয় ছোলার ডালের বরফির সাথে মালাইকারি নিয়ে এসেছে। জীবনে প্রথমবারের মত নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। বিশাল বপুর ছোট মামা বিচিত্র কারণে আমাকে ন্যাপ্পো বলে ডাকতেন। ছোটবেলা অন্য সব বাচ্চাদের মত ট উচ্চারণ করতে পারতাম না; বলতাম ত! তখন ছোট মামাকে দেখলেই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে তার কোলে চড়ে একটা চিমটি কাটতে কাটতে বলতাম, ‘মামা তোয়ে একতা তিনতি দেই?’ আজ বহু বছর বাদে হেলে দুলে এসে ছোটবেলার মত মামা বললো, ন্যাপ্পো, তোয়ে একতা তিনতি দেই?’

আমাদের এতো বেশী খাবার এলো যে, যাদের বাবা মা তখনো আসেনি আমার মা তাদের ডেকে ডেকে খাওয়ালো। প্যারেন্টস ডে উপলক্ষে খালা-ফুপুদের বেশ একখানা পারিবারিক রিইউনিয়ন হয়ে গেল। সবাই কী সুন্দর খাইয়ে দাইয়ে, গল্প করে, সুখ সুখ মুখে হাসতে হাসতে চলে গেল! আমার বাবা-মা গেল সবার শেষে, তাদের মুখখানি মলিন। আমি ততোদিনে কান্না লুকোতে শিখে গেছি!

হাউস মাস্টার স্যার বলে দিয়েছেন ছুটির দিন সকালবেলা বাড়িতে চিঠি লিখে খোলা খামে জমা দিতে হবে। খাম খোলা থাকবে কারণ আমাদের লেখা চিঠি আগে সেন্সরড্ হয়ে পরে বাড়ি যাবে। মায়ের কাছে লেখা ব্যক্তিগত চিঠিটি কেন স্যার-ম্যাডামরা পড়বেন ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না। প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটি ভাবতেই আমার খুব অস্বস্তি হতো। মাঝেমধ্যে আমাদের কাওকে কাওকে ডেকে চিঠির ভাষা বদলে দিতে বলা হতো। হাউস মাস্টার স্যার শেখালেন, বাবা হলো আমাদের গুরুজন, গুরুজনের নামের আগে তাই মিস্টার কিংবা জনাব লিখতে হবে। ঠিক তেমনি মা হলো স্বর্গাদপী গরিয়ষী, মায়ের নামের আগে বসবে মিসেস অথবা বেগম শব্দটি। জগতের কত কিছুই না অজানা তখন! নিজের চিরচেনা বাবাটিকেও যে মিস্টার বলতে হয় ক্যাডেট কলেজে না এলে কেউ কি কোনদিন জানতো? আমি বাড়ি ফিরে বাবাকে ‘মিস্টার বাবা’ বলে ডাকতে শুরু করলাম!

বাড়ি থেকে স্ট্যাম্প, হলুদ খাম আর গোলাপী মতন একখানা চিঠি লেখার প্যাড দিয়ে দিয়েছিল মা। বাবা কিংবা মা একজনকে লিখলেই চিঠি লেখার দায়িত্ব পালন করা যায়। প্রথমদিকে আমি বাড়ির সবাইকে দীর্ঘ চিঠি লিখতাম।
বাবার বুকের ব্যাথাটা আর নাই তো?
ছাদের বেলী গাছে কি ফুল ফুটেছে?
আমাদের কুকুরছানা টমি কত বড় হলো?
নিন্টুর পড়াশোনার খবর কি?
নিজেদের জরুরী আলাপের সাথে সাথে নানারকমের খেজুরে গল্প করতাম চিঠিতে। বাড়িতে ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা গুছিয়ে রাখি নাই কখনো। নারকেল শলার দু’ খানা বাড়ি দিয়ে জোহরা বেগম বিছানা টানটান পরিপাটি করে রাখতো। সে আমাদের বোনেদের কাপড়চোপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করতো, আর বিকাল হলে পেঁয়াজ থেতো করে আপার চুলে তার রস লাগিয়ে দিতো। আমার রুখু সুখু বাবরি চুল কাওকে ধরতে দিতাম না বটে, কিন্তু আমার গান বাজনা তাকে শুনতে হতো। জোহরাকে বসিয়ে রেখে আমি প্রভাতকালীন রেওয়াজ করতাম। প্রতি রোববার সন্ধ্যায় ওস্তাদ সুনীল ধর বোনেদের গান শেখাতে আসতেন। আমাদের সময়ে বাড়ি বাড়ি গান শেখার চল ছিল। বিশেষতঃ মেয়েরা তানপুরা বাজিয়ে দু’ চারটে গান গাইতে না পারলে বাড়ির সম্ভ্রম থাকে না! গানে আমার মন নাই, কিন্তু এই কথা মাকে বুঝাবে কে? রোববার এলে আমি আতংকগ্রস্ত হয়ে পরি। কলেজে চলে আসাতে আমার সংগীত জীবনের আনন্দময় সমাপ্তি ঘটলো। বড় আপার গলা ভাল, এলেমও আছে, ও লেগে রইল। আমার অনুপস্থিতিতে জোহরা বেগমের কাজ অনেক কমে গেল। কলেজ থেকে আমার লেখা চিঠি প্রাপকদের মাঝে জোহরা, সাহারা বুয়া আর রফিকও বাদ পরে নাই।

প্রথম প্রথম আমাদের নামে চিঠি এলে প্রতি বুধবার দুপুরে সেসব বিলি করা হতো। পরে অবশ্য এসব নিয়মকানুন শিথিল করা হয়েছিল। বড় বোনের নাম করে লেখা চিঠিতে মাঝেমধ্যে বড় বোনের চাইতেও আদরের ভাগটা বেশী পরাতে সেই চিঠি আটক করা হতো। নীল খামে লেখা চিঠি যদি বা কখনো হাউস টিউটরের অসতর্ক চোখ এড়িয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে তখন দেখা গেল প্রাপকের হাতে পরার আগেই ব্লকের সব বন্ধুরা মিলে আহা উহু করে সেই চিঠি পড়ছে। বগুড়া থেকে রোমেল নামের কেউ একজন গোটা গোটা অক্ষরে চিঠি লিখতো আমাদের এক বন্ধুকে। পোস্টকার্ডে প্রাপকের নাম থাকলেও ভেতরে তাকে সম্বোধন করা হতো আঁচল নামে। আমরা বন্ধুকে খেপাই, রোমেল তোর নাম অক্সফোর্ড স্যু রাখতে পারতো, গান্ধা মোজা কিংবা ডিউটি ক্যাডেটের ঝুঁটিত্তয়ালা টুপি রাখতে পারতো, তা না করে সে নাম রাখলো আঁচল! এইটা একটা কথা হলো? একজন ক্যাডেটের সাথে আঁচল নামটা যায় না, তোর নাম বদলে তুই বরং ‘আঁচড়’ করে দে! রোমেলের চিঠিতে ‘আকাশের মন খারাপ’ তো ‘তুমি গোলাপের চেয়ে সুন্দর’ ইত্যাদি নানা মনভুলানো কথা লেখা থাকতো। চিঠি পড়ে আমাদের সবারই মনে হতে লাগলো এটি আমার উদ্দেশে লেখা নয়তো? তার পোস্টকার্ডটি কি করে আমাদের সদাচার হাউসে এসে পৌঁছুতো সে রহস্য স্বয়ং ফেলুদাও উদঘাটন করতে পারবে কিনা তাতে সন্দেহ আছে। সে যাই হোক, বন্ধুর চিঠিতে আমাদেরও অংশ আছে ভেবেই মন শান্ত হতো। ফুলপাখি লতাপাতা চিঠির প্রাপক একজন কেন হবে; জগতের সবাই তো প্রকৃতির সন্তান!

কলেজে আমাদের জন্য প্রজেকটর কেনা হয়েছিল। বৃহষ্পতিবার রাতে অডিটোরিয়ামে সেই প্রজেকটরে আমরা সিনেমা দেখতাম। বন্ধুরা পাশপাশি বসবো বলে একসাথে অনেকগুলো চেয়ার দখল করে রাখি। সে রাতে খানিকটা সাজগোজ করলে কেউ কিছু বলতো না। সাজগোজ বলতে গালে ঠোঁটে রুজ, লিপস্টিক ব্যবহার করা বুঝাতো না। ছোট চুলের কেউ হয়তো পনি টেইলের বদলে দুই ঝুঁটি বাঁধতো, অথবা কারো চুলে কেউ একজন হয়তো একখানা ফ্রেন্চ বিনুনী বেঁধে দিল যত্ন করে। ঠোঁট সাজাতে ডিমের কুসুম রঙা পমেটমের বদলে পানির মত রংহীন একটা লিপ গ্লস লাগাতো কেউ কেউ। ফ্রুটি ফ্লেভারের সেই গ্লসে আমি তরমুজের গন্ধ পেতাম। মাহফুজা আপা তার শ্যামলা গায়ের রং নিয়ে খানিক হীনমন্যতায় ভূগতো বলে লুকিয়ে লুকিয়ে পার্ল ক্রিম ঘষতো মুখে। মুভি নাইটে সবার অগোচরে আপার পার্ল ঘষার পর্বটি দীর্ঘায়িত হতো বলাবাহুল্য।

উত্তম সুচিত্রার মুভি আমাদের প্রায় সবার পছন্দ ছিল। উত্তম কুমার কার-এ নিয়ে আমাদের মাঝে খুনসুটি চলে। ‘দ্যাখ দ্যাখ উত্তম আমার দিকে তাকিয়ে আছে’ বলে নিজেই পলকহীন দৃষ্টিতে পর্দায় চোখ রাখতাম! তখনো আমরা ‘সুন্দর’ আর ‘হ্যান্ডসামের’ পার্থক্য বুঝবার মত সেয়ানা হইনি। উত্তম কুমারকে আমাদের ‘সুন্দর’ মনে হতো। তার পেন্সিলে আঁকা ঠোঁট, ব্যাক ব্রাশ করা চুল আর ভুবন ভুলানো হাসি দেখে আমরা পাগল হয়ে গিয়েছিলাম! একে একে ইটি আর গান্ধীর মত বিশ্ব বিখ্যাত সিনেমাও দেখলাম কলেজে। ইংরেজী মুভি দেখানো হলে অডিটোরিয়ামের সামনে সিনেমার একটি পোস্টার সাঁটা হতো। রোমান হলিডে ছায়াছবিতে অড্রে হেপবার্নকে জড়িয়ে গ্রেগরি পেকের নাকে নাক ঠোকাঠুকি করে দু’জনের ঠোঁট বিপদসীমার খুব কাছাকাছি করা পোস্টার দেখে আমাদের মাথা নষ্ট হওয়ার দশা হয়েছিল। বন্ধুরা শলা পরামর্শ করে ঠিক করি এই দৃশ্য এলে সবাই একসাথে সিটি বাজাবো। কিন্তু গ্রেগরি পেক দেখি অড্রে হেপবার্নের পাশে বসার আগেই মাছের বাজারে চলে যায়। কী মুসিবত!

প্রায় সব শিক্ষকেরই প্রতিটি ক্লাসে এক বা একাধিক প্রিয় ছাত্র থাকে। তাঁদের এইসব প্রিয় ছাত্ররা অন্য ক্লাসে হয়তো ফ্যালফ্যালিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু ঐ নির্দিষ্ট ক্লাস সে হলো রাজাধিরাজ। প্রিয় ক্যাডেট মাঝেমধ্যেই টিচারদের তুরুপের তাশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে অন্য সবার মতামত পছন্দ হয়েও যেন হয়না। প্রিয় পাত্রটির উত্তরে কেবল শিক্ষকের চোখ দুটি দ্যুতিময় হয়ে ওঠে। বাংলার শাজাহান আলী স্যারের অতি প্রিয় ক্যাডেট ছিলাম আমি।

শাজাহান আলী স্যারের উচ্চারণে ঈষৎ পাবনার টান ছিলো। ফ্রেন্চকাট দাড়ির আড়ালে সাদাসিধে, ভাল মানুষ ছিলেন তিনি। সুগন্ধি তেল চর্চিত কালো চুলে নদীর মত সরল একটি সিঁথি কাটতেন স্যার। আমাদের অনেকেই আড়ালে আবডালে স্যারের মত কথা বলতে চেষ্টা করতো; ‘হাশিল ঘর’ মানি হলো রান্নাঘর, বুইঝলু? আমি নিয়ম করে অখাদ্য সব কবিতা লিখে স্যারকে দেখাতাম। শাহাজান আলী স্যার অতি আবেগে আমার কবিতা পড়ে বলতেন, যাও আরো দুটি লিখে আনো তো দেখি। আমি পাতার পর পাতা কবিতা লিখে স্যারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললাম। তাঁকে নতুন লেখা দেখালে মার্জিনে মন্তব্য লিখে দিতেন যত্ন করে। আমার কাঁচা হাতের কবিতা কিংবা স্যারের অতি ভালবাসার কারণে পাক্ষিক বাংলা পরীক্ষায় বন্ধুদের চাইতে এক আধ নম্বর বেশী পেতে লাগলাম!

ডাইনিং হলে ব্রেকফাস্টের সেট মেন্যু ছিল আমাদের। সপ্তাহে ছয় দিন ছিল সাদা পাউরুটি, বাটার, সেদ্ধ ডিম আর চা। সকালবেলা আমার পাউরুটি খেতে ভাল লাগতো না। টেবিল লিডার আপার চোখ এড়িয়ে এর ওর পাতে রুটি চালান করে দিতাম। আমার বরং ভাল লাগতো ডিম খেতে। কোয়ার্টার বয়েলড্ ডিম দিতো কলেজে; সেই ডিমের ভেতরে খানিক জমা কুসুমের একটা নদী ছিল। চা চামচে অল্প অল্প করে কুসুম তুলে মুখে পুরে চোখ বুজে ফেলতাম আবেশে। শুক্রবার ছুটির দিনে খুব বিচ্ছিরী স্বাদের একটা খিচুড়ি আর ডিমের কারি থাকতো। না ভুনা না পাতলা সেই খিচুড়িতে না ছিল কোন সুবাস, না ছিল কোন স্বাদ। পাতে খিচুড়ি নিয়ে আমি ঘসটাতে ঘসটাতে প্রায় ভর্তা করে ফেলতাম।

আমাদের অস্থায়ী ডাইনিং হলে একদিন ক্যাডেটদের টেবিল ম্যানারস্ আর এটিকেট দেখতে এলেন ভাইস প্রিন্সিপাল আশরাফ আলী স্যার। স্যার এসে ঘুরেফিরে দেখতে লাগলেন চারদিকে। আমাদের বন্ধু মিষ্টি পাউরুটির চারপাশের শক্ত অংশটুকু ফেলে ভেতরের নরম রুটি খেতো কেবল। মিষ্টির কপাল খারাপ, সে স্যারের চোখে পড়ে গেল। সওয়াল জবাবে জানা গেল মিষ্টি ওদের বাড়িতে এমন করেই ব্রেড খায়। ভিপি স্যার ওকে কিছু বললেন না। সোজা ডাইনিং হলের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন তার সারমর্ম হলো, যে দেশের লাখো মানুষ অভুক্ত রাত কাটায় সেই দেশের মানুষের টাকায় পড়তে এসে পাউরুটির চারপাশ ফেলে দেয়া হলো বিলাসিতা। ক্যাডেট কলেজে এই সব বিলাসিতার কোন স্থান নাই!

জহির মামা আমাদের ক্যান্টিন চালাতেন। একাডেমিক ব্লকের শেষ মাথায় ছোট একটি রুমে মামার ক্যান্টিন। বুধবারে আমরা ব্যাংকিং এর কাজ সেরে রাখতাম; শুক্রবার এগারোটায় মামার ক্যান্টিন খুলবে। আমাদের প্রথম সেই ক্যান্টিনের কোন ছিরিছাদ ছিল না। ছোট রুমটিতে গাদাগাদি করে জিনিসপত্র রাখা। সেই ক্যান্টিনে না ছিল মজার কোন খাবার, না ছিল জগত থেকে বিচ্ছিন্ন সব মানুষের জন্য চিত্তগ্রাহী কোন বস্তু। সেখানে রুল টানা খাতা, টু-বি পেন্সিল, জুতার কালি, চিরুনী, ঝর্ণা কলম আর সুগন্ধী ইরেজারের মত প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যেতো। আমাদের সেই বয়সে মেটাল পালিশ কিংবা টুথব্রাশের চাইতে এক প্যাকেট চুয়িং গাম অথবা একখানা ইগলু আইসক্রীম বেশী আরাধ্য ছিল। ডাইনিং হলের গৎবাঁধা খানা মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগতো; ঢাকা লিটনের চিনিওয়ালা বেবী টোস্টের জন্য মন ছুটে যেতো। মিষ্টির শহরে বাস করে আমরা ছানার পোলাও কি আধখানা লাড্ডু খেতে পাইনি কখনো। একবার ঘিয়ে রঙা গোল গোল বিস্কুটের ভেতরে পুরু আনারসের ক্রীম লাগানো পাইনঅ্যাপেল কুকিজ নিয়ে এলে আমরা বুভুক্ষের মত ক্যান্টিনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। পেপসি পাওয়া যেত ক্যান্টিনে। আর ছিল চানাচুর, বিস্কুট, আলুর চিপস্ কিংবা সস্তাপনা কিছু লাঠি লজেন্স। আমরা শুকনো খড়খড়ে নাবিস্কো বিস্কুট কিনে গরম কোমল পানীয়ের সাথে কায়দা করে খেতাম। বলা বাহুল্য, আমাদের জীবনের বিলাসিতা ফান্টা আর পেপসির কাঁচের বোতলে এসে খাবি খেতে লাগলো!

মামা আমাদের কলেজের অফিশিয়াল আলোকচিত্রীও ছিলেন। তরুণ জহির মামা কবিতা লিখতেন। আমাদের সাথে তার দারুণ সদ্ভাব ছিল। আমরা দলবেঁধে ক্যান্টিনে গেলে মামা লাজুক মুখে কখনো দৈনিক জাহান কখনো বাংলার দর্পণ পত্রিকাটি এগিয়ে দিয়ে বলতেন, এখানে আমার লেখা আছে, পইড়ো!

করিমউদ্দীন স্যারের ধ্যানজ্ঞান আর স্বপ্নের মাঝে আমরা ছিলাম। মন চাইলেই তিনি আমাদের ডেকে বিশাল বক্তৃতা দিতেন। শিলাইদহ, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি কিংবা কবির ইউরোপ যাত্রা, তাঁর প্রেম কিংবা বিরহ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেন তিনি। স্যার ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এডুকেশন ব্রান্চের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ভারতে ইয়ুথ ক্যাম্পের মহাপরিচালক ছিলেন। একমুখ শুভ্র দাড়ি, লম্বা আচকান আর ঈষৎ নুয়ে হাঁটার ভংগীমায় তাঁকে আমাদের সাক্ষাত রবি ঠাকুর মনে হতো!

স্যার বড় খেয়ালী মানুষ ছিলেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মেয়েদের স্বাবলম্বী আর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ গড়ার কাজটিকে তিনি শেষ জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। একবার স্যারের মনে হলো, ক্যাডেটরা বড় বেশী যান্ত্রিক আর পশ্চিমী মেয়েদের মত হয়ে যাচ্ছে। এরা অক্সফোর্ড শু পরে ঠক করে পায়ে চেক মারে আর ছুরি কাটায় মেম সাহেবের মত নিঃশব্দে খায়! এরা না শিখছে স্বদেশী আদব, না শিখছে ঠাকুরের গান। ফলশ্রুতিতে ছুটির দিন সকালবেলা ওস্তাদ চলে এলেন আমাদের গান শেখাতে। স্যার কলেজে পরীক্ষামূলকভাবে সপ্তাহের কয়েকদিন ডাইনিং হলে চিড়া-কলা-দৈ খাবার আয়োজন করলেন। পাউরুটি-ডিমের হাত থেকে রেহাই পেয়ে তখন আমাদের আনন্দ আর ধরে না। সকালবেলা বাঙাল সাজতে আমরা দিব্যি হাতখানা ধুয়ে চিড়া কলা চটকে ফলার খেতে বসি। বেশ একটা শান্তি নিকেতন শান্তি নিকেতন ভাব চারপাশে। কে কত শৈল্পিক উপায়ে ফলাহার করতে পারে এ নিয়ে টেবিলে টেবিলে খানিক হাসিঠাট্টাও চলে। স্যারের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল সন্দেহ নাই; কিন্তু অচিরেই দেখা গেল চিড়া, কলা, দৈ এর প্রভাবে আমরা একাডেমিক ব্লকে নিয়ম করে ঝিমাতে শুরু করেছি। অতএব, প্রজেক্ট ফলার বাতিল হয়ে গেল!

শুরুতে আমাদের কলেজে একখানা পানা পুকুর ছিল। আকার আয়তনে বড় হলেও সেই পুকুরে কোন মাছ ছিল না। করিমউদ্দীন স্যার আমাদের পানা পুকুর সাফ সুতরো করিয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করলেন। মাছের চাষই যদি হলো তবে ক্যাডেটদের দিয়ে মাছ ধরালে কেমন হয়! সুতরাং আমাদের জন্য বড়শী কেনা হলো, সুতোও আনা হলো। পানিতে আটা গুলে বাবুর্চি লিয়াকত ভাই মাছের খাবার বানিয়ে নিয়ে এলে আমরা পালা করে মাছ ধরলাম। আমাদের বড়শীতে অবশ্য দুই চারটা চুনোপুঁটি ছাড়া তেমন কিছু ধরলো না। বড়শীতে মাছ ধরবার নাটকীয় পর্ব শেষ হলে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা হলো। নিজেদের পুকুরের মাছ আর মুড়োঘণ্ট খাওয়ার সপ্তাহে বাড়িতে লেখা আমাদের চিঠিগুলোর আকার বেশ বড় হয়েছিল! পুকুরে মাছ চাষ করে স্যার ক্ষান্ত হলেন না। পুকুরের চারপাশে তিনি কলা গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করলেন। মেয়েরা কলেজে শুধু লেফট্ রাইট করলে চলবে? তাদের নিজ হাতে কলার কাঁদি পেড়ে খেতে হবে। স্যার পুকুর পাড়ে বস্তা বস্তা মাটি ফেলে উঁচু ঢিবির মতো বানালেন। তিনি বললেন, এটা হলো মাটির পাহাড়! ঢিবি সদৃশ সেই মাটির পাহাড়ে সবুজ কলা গাছের সারি। বয়সের ভারে নুব্জ, ঋজুপ্রকৃতির স্বপ্নবান এই মানুষটির ছেলেমানুষি দেখে দূর থেকে চোখ জ্বালা করে! তিনি ভাবলেন, মেয়েরা এমনি এমনি কলার কাঁদি পেড়ে খাবে? তাহলে আর কষ্ট করে ক্যাডেট কলেজে পাঠানো কেনো? মেয়েরা ঢিবি পেরিয়ে, পাহাড়ে চড়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে তবেই না কলার কাঁদি পেড়ে খাবে!

৭,৯০২ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট কথিকাঃ পর্ব ৪”

  1. আপা, প্রতিবার আপনার লিখাগুলো বুভুক্ষুর মত পড়ি। যদিও আমাদের মাঝে ১০ বছরের ব্যবধান, তবুও ক্যাডেট কলেজের মন্থর পরিবরতনের কারণেই বোধ হয় মনে হয় "এই গল্পগুলো একদম আমার"। অসাধারণ আপা!

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    জীবনে প্রথমবারের মত নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো -- 🙂
    আমারও এরকম মনে হয়েছিল, তবে প্রথম প্যারেন্টস ডে থেকে নয়, নির্বাচিতদের চূড়ান্ত তালিকায় যেদিন নাম উঠলো, সেদিন থেকেই। এটা জানার পর থেকেই আগের স্কুলের পড়াশুনা, হোম ওয়ার্ক, ইত্যাদি একেবারেই বাদ দিয়েছিলাম।
    আমি ততোদিনে কান্না লুকোতে শিখে গেছি! -- 🙁
    প্রথমদিকে আমি বাড়ির সবাইকে দীর্ঘ চিঠি লিখতাম -- আমিও! 🙂
    আঁচল - নামটা দারুণ কাব্যিক ছিল। তাদের শেষ পরিণতিটা কেমন হয়েছিল? 🙂 (মিলনাত্মক হবার কথা নয়!)

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

      চিঠি লিখতে সিদ্ধহস্ত ছিলাম। ছোটবেলায় প্রাইমারী স্কুলে পড়বার সময়ে আমার এক নিকটাত্মীয় দেশের বাইরে থাকতেন। তিনি নানা সময়ে আমাদের ভাইবোনদের কাছে চিঠি লিখতেন। অন্যরা চিঠির উত্তর না দিলেও আমি লিখতাম তাকে। তার কাটাকুটিবিহীন গোটা গোটা হাতের লেখা আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছিল। বিদেশের গল্প শুনতে আমার বেশ লাগতো।

      আমি কান্না লুকাতে শিখেছিলাম সেই সময়েই। এর আগেও যে জনসম্মুখে উচ্চকিত কান্নাকাটি করে সবাইকে অপ্রস্তুত করেছি তা নয়। দুঃখ কষ্টে আমার মন কাঁদতো, চোখ কাঁদতো কিন্তু মুখে মুখে কান্না আসে নাই। বই পড়ে কাঁদতাম, মুভি দেখে তো ফোঁপানি এসে যেতো।

      আঁচল নামটি আমাদেরও মুগ্ধ করেছিল। আমরা আরো খানিক বড় হলে রোমেল মশাই আমাদের কলেজে এসেছিল। তার আনা চানাচুরের ভাগ সবাই পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে বাবা এবং আপন ভাই ছাড়া মামা কাকাদের ওপর প্যারেন্টস ডে তে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কৈশোরের প্রেমের পরিণতি হলো বিচ্ছেদ। বলাবাহুল্য আমাদের ছদ্মনামা আঁচলেরও তাই হয়েছিল।

      সময় নিয়ে পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ, কবি। আশাকরি কুশলে আছেন।

      জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    ফুলপাখি লতাপাতা চিঠির প্রাপক একজন কেন হবে; জগতের সবাই তো প্রকৃতির সন্তান! -- :boss:
    মুভি নাইটে সবার অগোচরে আপার পার্ল ঘষার পর্বটি দীর্ঘায়িত হতো বলাবাহুল্য -- 🙂
    বাংলার শাজাহান আলী স্যারের অতি প্রিয় ক্যাডেট ছিলাম আমি। -- এটাই স্বাভাবিক ছিল! 🙂
    এ লেখাটা এবং তোমার অন্যান্য লেখা পড়ে বেশ বোঝা যায়, বাংলায় দক্ষতা তোমার একদিনে গড়ে উঠে নাই। ছোটবেলা থেকেই এর শুরু হয়েছে।
    ঢাকা লিটনের চিনিওয়ালা বেবী টোস্টের জন্য মন ছুটে যেতো -- সেই চিনিটুশ!

    জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    আমার চিনিটুশের লেখাটি আপনার এখনো মনে আছে, কবি? ইশ! সবাই মিলে কী আড্ডাটাই না দিতাম তখন ব্লগে! একটা লেখা এলে সবাই মিলে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে মন্তব্য করতাম। আপনি, নূপুর, পারভেজ ভাইয়া, মোকা, জুনা, আকাশ, মাহবুব ভাইয়া, লুৎফুল ভাইয়া, সাইদুল হক ভাইয়া, সজীব.. সবাইকে নিয়ে আবারও আড্ডা দিতে মন চায়।

    জবাব দিন
  5. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

    আমার ব্লগে তোমাকে স্বাগতম, সেলিম। সিসিবিতে এসে নানান সময়ে আমরা কলেজের স্মৃতিচারণ করেছি নানাজনের লেখায়। নিজেও যে দু চারটি ব্লগ লিখিনি তা নয়, আবার সহপাঠী কিংবা অনেকের সাথে কথা প্রসংগে কলেজ তো ঘুরেফিরে আসেই। এবার লিখতে বসে নিজের যেমন মনেপড়ে যাচ্ছে নানা ঘটনা তেমনি অনেকেই নানা সূত্রে স্মৃতিচারণ করছেন। শেষ খন্ড লিখবার সময়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকারোক্তি দিতে হবে সবাইকে।

    তোমার নতুন লেখা পড়বার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থেকো, ভাইটি!

    জবাব দিন
  6. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এই পর্বটা যখন এসেছে, আমি তখন শ্রীলঙ্কায়।
    তাই পড়া হয়নি তখন।
    পড়ি পড়ি করে এত দিন লাগলো পড়তে।
    শেষ করে বুঝলাম, আরও আগেই পড়া উচিৎ ছিল...
    তোমাকেতো খুব ভাল খুব ভাল বলে বলে মুখ ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
    অবাক লাগে, কি দিয়ে লিখো, আঠা দিয়ে?
    একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না - তাই জিজ্ঞাসা করলাম...
    😀 😀 😀 😀
    যাই, পরের পর্বটা পড়ে আসি গিয়ে.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  7. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

    তুমি না পড়লে আমার ব্লগ পোস্ট পূর্ণতা পায় না, ভাইয়া। মন্তব্য করো কিংবা না করো, তুমি যে পড়ছো, তাতেই আমি ধন্য।

    বহুদিন তোমার লেখা পড়িনা। সিসিবিতে আগুন জ্বালিয়ে একখানা পোস্ট দাও দেখি। এছাড়া তোমার লংকা বিজয় কিংবা পারভেজের লংকাকান্ড পড়বার জন্য আবদার জানিয়ে গেলাম কিন্তু।

    জবাব দিন
  8. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    শাহজাহান স্যার কে আমরাও পেয়েছিলাম। চমৎকার মানুষ। উনার ক্লাসগুলো আসলেই উপভোগ্য ছিল। কোন কোন দিন আমাদের নিয়ে গাছ তলায় ক্লাস করাতেন। আর মাঝে মাঝে পারস্য রমনীদের গল্প করতেন। কি তাদের সৌন্দর্য্য! কি তাদের গায়ের কালার! আস্তাগফিরুল্লাহ। আস্তাগফিরুল্লাহ। হা হা হা।

    একদিন স্যারের ক্লাসে ডিস্টার্ব করার জন্য আমি সিটকিনি দিয়ে খুব সুক্ষ্ম শব্দ করছিলাম। সাথে সাথে স্যার ক্লাস থামিয়ে দিয়ে, বয়েজ, দেখো পাখি কী সুন্দর করে ডাকছে! শুনতে পাচ্ছো তোমরা?

    স্যারই প্রথম তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানার পরিবর্তে সাইমুম সিরিজের বই পড়তে দিয়েছিলেন। 😛

    আর চিঠির কাহিনীগুলো সব কলেজে কেমন জানি একই রকম হয়। 😛


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।