তিনতলার পেছনের ব্লকের দ্বিতীয় রুমটি আমার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। কেউ একজন জানালো, আমার নতুন ঘর বাড়ি সরেজমিনে দেখতে মা হাউসে যেতে পারবেন কিন্তু বাবাকে অডিটোরিয়ামে বসে থাকতে বলা হলো। অগত্যা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা হাউসের দিকে রওনা দিলাম। আসিয়া খাতুন নামের একজন অল্প বয়েসী মহিলা আমাদের সেখানে পৌঁছে দিয়ে গেল। নির্ধারিত রুমে ঢুকে দেখি আমার আগেই দুই জন ক্যাডেট চলে এসেছে। একজন শ্যামলা মতন দেখতে, কাঁধ অব্দি স্ট্রেট চুল; অন্যজন বেশ লম্বা ছিপছিপে দেখতে, একমাথা চুল তার পিঠ ছাড়িয়েছে। আমাকে দেখেই কেশবতী মানুষটি বলে উঠলো, আরে! আরে! আমাদের কাজী নজরুল ইসলামও দেখি চলে এসেছে! আমার তখন একমাথা ঝাঁকড়া চুল। সদ্য কৈশোরের চেহারায় বালক বালক ভাবটি প্রকট। মেয়েটির কথা শুনে আমি সজোরে হেসে উঠলাম। এভাবে কখনো কেউ আমার সাথে কথা বলে নাই। প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর জানা গেল, তার নাম মিলি, পড়েন ক্লাস টেনে। অন্য জন বেশ চুপচাপ, রিপা তার নাম, নবম শ্রেণীর ক্যাডেট। মিলি আপা জানালো, আমার বয়সী একটি বোন আছে তার, নাম রুহী। আপাটির আন্তরিক সম্ভাষণ আমার ভাল লাগলো! রিপা আপার মা চলে গিয়েছিলেন আমি আসার আগেই। আপা নিশ্চয়ই অনেক কান্নাকাটি করেছে। একবার মুখ তুলে দেখলেন কেবল, তার দু’চোখ ফোলা, একটু পরপর নাক থেকে গড়িয়ে পরা পানি মুছছেন হাতের চেটোয়!
শৈশবের কল্পনায় সব কিছু বিশালাকার থাকে; এই যেমন নানা বাড়ির এঁদো পুকুরকে তখন অ্যাড্রিয়াটিক সাগর মনে হতো, বাঁশবাগানে গিয়ে মনে হতো আমাজন রেইনফরেস্টে আছি! আমাদের রুমটা বড় বেশী সাদামাটা আর ছোট। একটু যেন নিরাশই হলাম। আমাদের বাড়িটা খোলামেলা ও প্রশস্ত। আকাশের সমান বড় একটা ছাদও আবার আছে তিনতলায়। আমার রাত্রিকালীন ভয়জনিত কারণে বড় আপার সাথে এক কক্ষে ঘুমাতাম বাড়িতে। দিনের বেলা মায়ের আদরে আমি সাক্ষাত ফুলন দেবীর মত প্রতাপশালী থাকলে কী হবে, রাত এলে ড্রাকুলা পড়ে ভয়ে মূর্ছা যাবার দশা হতো। মনেমনে ভাবতাম, কলেজে গিয়ে একসাথে অনেকে থাকবো এক রুমে, রাতের আঁধারে কাউন্ট ড্রাকুলা কিংবা জেসন বোরহিস যে’ই আসুক না কেন আমি আর ভয় পাবো না। আমার কিশোর মনের কল্পনায় কলেজের রুমটি ছিল সুবিশাল, যেখানে দোতলা খাটে সবাই ঘুমায় আর সকালবেলা বাথরুমে যাবার জন্য হাসি মুখে লাইনে দাঁড়ায়! বাস্তবে দেখা গেল, যদিত্ত আমাদের সবার জন্য আলাদা বিছানা এখানে; বেডগুলো ঠিক বাড়ির মত নয়, কেমন যেন দীনতার ছোঁয়া সেখানে! আছে দেয়ালের সাথে লাগোয়া একটি করে লকার আর ছোট একখানা পড়ার টেবিল। একটু পর দেখি চোখের জল নাকের জলে একাকার করে উর্মি রুমে ঢুকছে। বহুদিনের পুরনো বন্ধুকে নিজের রুমে দেখতে পেয়ে তার শোক যেন উথলে উঠলো। বেচারা অঝোর ধারায় কান্না করছে। আমরা বাকীরা ওকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম! এর মাঝে মিলি আপা আমার বিছানা দেখিয়ে দিলে মা চটজলদি লাল তোষকটি বিছিয়ে তার ওপর একখানা চাদর চাপিয়ে দিলো। কাঁচের একটি জানালা আমার বিছানার মাথার দিকে। শৈশবের অন্ধকার ভীতি আমার যায় নাই তখনো। রাত বিরাতে বাথরুমে গেলে জোহরা বেগমকে দাঁড় করিয়ে রাখি দরজার ওপারে। মুহূর্তের মাঝে মা কী যেন ভাবলো জানালার দিকে তাকিয়ে। গল্পে গল্পে মায়েদের বিদায়ের সময় এলে উর্মি ফুলে ফুলে কাঁদলো। ওর কান্না দেখে রিপা আপা নিঃশব্দে ঘনঘন চোখ মুছলো। আমি আর মিলি আপা কেবল নিজেদের ভাইবোনেদের গল্প করলাম!
কলেজে আমরা তখন তিন ক্লাসের দেড়শো ক্যাডেট। হাউসের নীচতলায় ডাইনিং হলে একসাথে দেড়শো মানুষের স্থান সংকুলান করা বেশ কষ্টকর। এক একটি টেবিলে ছোটবড় মিলে দশজনকে বসতে হত। আমাদের সবার বসার জন্য কোন চেয়ার ছিল না। জুনিয়র আমজনতা ক্যাডেটদের জন্য বরাদ্দ ছিল টানা লম্বা বেনচ্। টেবিলের দুই পাশে চেয়ারে বসতেন দুইজন সিনিয়র আপা। সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলেজে আমার মত একজন জুনিয়র যতটুকু কনফিউজড, পাশের সিনিয়র আপাটিও সমান বিভ্রান্ত। কে কাকে শেখাবে? সবাই তো একই পথের পথিক। অন্ধের যষ্টি হয়ে এলেন মুনিম ম্যাডাম। ম্যাডাম এই সময়টিতে আমাদের নিয়মকানুন বলে দিতেন। ডাইনিং হলের এটিকেট আর ম্যানারস্ও মুনিম ম্যাডাম শেখালেন। ডান হাতে ছুরি ধরতে হবে, কাটা চামচের সাথে প্লেটে ঠোকাঠুকি করে প্রলয় সৃষ্টি করা যাবে না। মুনিম ম্যাডাম কী সুন্দর ইংরেজীতে কথা বলেন, মনেহয় বড় পর্দায় জেন ফন্ডা কথা বলছে! কেউ যদি ভেবে থাকেন মুনিম ম্যাডামের চোস্ত বক্তৃতা শুনে আমরা ছুরি, কাটাচামচে খেতে শিখে গিয়েছিলাম তবে জানবেন আপনি ভুল! ম্যাডামের দেয়া মুখস্ত বিদ্যেটি ব্যবহারিক নিয়মে ফেলতে অনেকেরই অনেক কসরত করতে হয়েছিল! প্রথম কিছুদিন খাবার ঘরে চামচের ধাতব শব্দে নিজেদের কানেই তালা লাগতো। মাঝেমধ্যে ডিউটি মাস্টার ম্যাডাম আমাদের খাওয়া থামিয়ে দিতেন শব্দদূষণের অপরাধে। ছুরি আর কাটার যথার্থ সমন্বয়ের অভাবে কারো প্লেটের গরুর গোস্ত ছিটকে পরেছে টেবিল কর্তার প্লেটে; কারো চামচের ঝোল হয়তো গড়িয়ে পরেছে নিজেরই সাদা কামিজে।
রাত দশটায় গগনবিদারী শব্দে বাঁশী বাজলে রুমের আলো নিভিয়ে দিতে হলো। আগেই আমরা সাদা সালোয়ার কামিজ বদলে রাতের পোষাক পরে নিয়েছিলাম। আমি মিলি আপার অনুমতি নিয়ে মাথার পাশের জানালাটি বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম। বাতি নেভানোর কিছুক্ষণের মাঝে অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য চেপে বসলো বুকের মাঝে। আপারা দেখি কেউ কোন কথা বলেনা। উর্মি দিনভর কান্নাকাটি করে ক্লান্ত। সবাই ঘুমিয়ে পরলো নাকি? কর্মব্যস্ত দিনের ছুটোছুটিতে বাড়ির কথা মনে করবার মত অবকাশ মেলে নাই। এখন আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে, আমার বোনদের কথা মনে পড়ছে, বিশেষতঃ আমার ছোট ভাইটির কথা মনে করে চোখের জল আর আটকে রাখা গেল না। কতক্ষণ আর নিঃশব্দে কান্না করা যায়, অচিরেই আমার নীরব কান্না ফোঁপানিতে রুপ নিল। আমার নাম ধরে কে যেন ডাকছে শুনতে পাচ্ছি কিন্তু সিনিয়রের ডাকে সাড়া দেবার মত অবস্থায় আমি নাই তখন। দুই আপার একজন এবার কোমল কন্ঠে বললেন, বাড়ির কথা মনে পড়েছে? এবার আর নিজেকে ধরে রাখা গেল না। বিছানায় উঠে বসে আমি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম!
দীর্ঘ কান্নাকাটির পর্ব শেষে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম ভাঙলো মাঝরাতে। দূরে নয় খুব কাছে একযোগে শেয়ালের হুক্কাহুয়া ডাকে। আমরা সবাই প্রায় একসাথে হুড়মুড় করে উঠে বসলাম। হায় আল্লাহ্! এ কোথায় এলাম!
কান্নাকাটি আর রাতভর শৃগাল সংগীত শেষে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাকে স্বপ্ন দেখলাম। কোথায় যেন বেড়াতে গেছি, মা আমাকে দেখতে না পেয়ে নাম ধরে ডাকছে ক্রমাগত। আমি তার ডাকে সাড়া দিচ্ছি কিন্তু গলা থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না! এমন সময় দূরে কোথাও ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজলো। বাইরে তখনো অন্ধকার। এতো ভোরবেলায় উঠিনি কখনো। কেমন শীত শীত একটি অচেনা প্রভাত!
আমরা যখন কলেজ শুরু করেছি তখন মার্চ মাস। গারো পাহাড়ের দেশ ময়মনসিংহে তখনো বেশ ঠান্ডা। বাড়ি থেকে আনবার জিনিসপত্রের তালিকায় কাঁথা কম্বল কিছু ছিলনা। প্রথম রাতে আমাদের শীতে খানিকটা কষ্ট হয়েছিল তাই পরের দিন নির্দেশ এলো, কমন রুমে কম্বল রাখা আছে, আমরা যেন নিজ নিজ কম্বল সংগ্রহ করি। কমন রুমে গিয়ে দেখি সেখানে মেয়েরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও তাদের সাথে সামিল হলাম। একসময় আমার পালা এলে একখানা কম্বল পেলাম হাতে। কালচে ধূসরবর্ণ কম্বলটি হাতে নেয়া মাত্র চিরিং করে একটি লাল পিঁপড়া যেন কামড়ে দিলো। আরে! এই কম্বল তো আমি চিনি! আমাদের বাড়ির স্টোরেজে এই বস্তুটি নীল পলিথিনে মুড়ে রাখা আছে। আমার বাবা কোন এক বিবাহ বার্ষিকীতে মাকে একখানা সিংগার সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছিল। সিংগার মেশিনের সাথে ফাও পাওয়া গিয়েছিল একখানা কম্বল। সেই সময় সিংগারের বিজ্ঞাপণী ভাষা ছিল এমন- একটি সিংগার কিনে বিনামূল্যে জিতে নিন একটি আকর্ষণীয় উমদা কম্বল! মায়ের নতুন সংসারে তখন সেলাই মেশিন নাকি উমদা কম্বল বেশী প্রয়োজন ছিল তা অবশ্য আমি জানিনা। বড় হয়ে বাবার কাছে গল্প শুনেছি, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সাড়ে সাত কোটি কম্বলের একটিও তার ভাগ্যে না জুটলে কী হবে; সিংগার কোম্পানী জনগণের কম্বল মুড়িয়ে শেলাই মেশিন বিক্রি করে ফেললো। সে যাই হোক, বাবা কম্বল না পেলে কি হবে, আমার কম্বল তো পাওয়া গেল! সমস্যার শুরু হলো রাতে; যখন সেই কম্বল জড়িয়ে ঘুমাতে গেলাম তখন। যথারীতি রাত দশটায় বাঁশী বাজলো। মুনিম ম্যাডাম পইপই করে বলে দিয়েছেন, বাঁশী বাজলে আলো নিভিয়ে শুয়ে পরতে হবে। সারাদিনের নানারকম কর্মকান্ডে আমি বেশ ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম। ডর্মের আলো জ্বলছে তখনো। বিছানায় গিয়ে কম্বলখানি গায়ে দিতেই বিপত্তি বাঁধলো, মনেহলো এক সারি ছোট লাল পিঁপড়া দল বেঁধে কোথাও চলেছে; তাদের সেই চলার পথে আমার মত আলাভোলা কাওকে পেয়ে দুটো চারটে চুম্বনের সাথে দাঁতের মৃদু কামড়ও দিচ্ছে! অচেনা পরিবেশ নাকি কম্বলের কুটকুটানি কোন একটি কারণে সে রাতেও আমাদের কারোর ভাল ঘুম হল না।
মুনিম ম্যাডাম আমাদের উদ্দেশে ক্রমাগত বলে চলেন, উঁচু লয়ে কথা বলা যাবে না; পিঠ বাঁকা করে বসা যাবে না; কথা বলার সময় অ্যা অ্যা করা যাবেনা, স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি! প্রেপে আমাদের অনেকেই উচ্চস্বরে ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী’ ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী’ বলে দুলে দুলে পড়া মুখস্ত করতো। ম্যাডাম ‘সুশশ’ বলে এক ধমকে বাংলাদেশের রাজধানীকে স্থবির করে দিলেন!
মেজর মনোয়ার হোসেন স্যার এমজিসিসির প্রথম এ্যাডজুটেন্ট ছিলেন। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সেখানে মেয়েদের জন্য ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করবার যে প্রজেক্ট নিয়ে মনোয়ার স্যার ময়মনসিংহ এসেছিলেন তা শেষ হলে তিনি আবার সামরিক ব্যারাকে ফিরে গেলেন! আমাদের প্রথম বছরেই মেজর খায়রুল আলম বেলাল স্যার কলেজে এ্যাডজুটেন্ট হয়ে এলেন। নতুন এ্যাডজুটেন্ট এসেই নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। ছিপছিপে সুদর্শন তরুণ আলম স্যার নিজে একজন প্রাক্তন ক্যাডেট। আমাদের কলেজে আসার আগে রংপুর ক্যাডেট কলেজে তিনি এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রংপুরের ক্যাডেটরা নানান উৎপাত করে স্যারকে ক্রমাগত জ্বালিয়েছে। সুতরাং এইবার স্যার সাবধান। বারবার ঘুঘুকে ধান খেতে দেয়া যাবে না। রংপুরে স্যারের বাসার পাশেই একটি চৌবাচ্চায় পরীক্ষামূলকভাবে তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হচ্ছিল। কৃত্রিম জলাশয়ে তেলাপিয়া মাছ চাষের ব্যাপারটি দেশে তখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তরুণ মেজর সাহেব উৎসাহের আধিক্যে নিজে মাছেদের খাবার খাওয়ান মাঝেমধ্যে। একদিন সকালে দেখা গেল চৌবাচ্চা শূন্য, একটি মাছও নেই সেখানে। ব্যাপার কি? মাছেরা কি সব গাছে চড়তে শিখেছে নাকি? ব্যাপার আর কিছু নয়, গত রাতে ক্যাডেটরা নিজেদের মশারিটিকে জাল বানিয়ে চৌবাচ্চার সব ক’টি মাছ ধরে রাতেই সেগুলো কেটেকুটে ভেজে সাবাড় করেছে! রংপুরবাসীর সাম্প্রতিক এই ভোজনবিলাসে স্যারের মনটি স্বভাবতই খানিক ক্ষুব্ধ। এমজিসিসিতে এসে স্যার তাই প্রথমেই নিজের শৌর্য প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিলেন। যে করেই হোক শুরুতেই এদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে হবে!
প্রাক্তন এ্যাডজুটেন্ট মনোয়ার স্যার এমজিসিসির সদ্যোজাত ক্যাডেটদের আড়মোড়া ভাঙাতে পারলেও আমাদের মাঝে ক্যাডেটসুলভ ক্ষিপ্রতা আসে নাই তখনো। আমাদের অনেকেই তখন লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে ভূপাতিত হই। খাড়া রোদে প্যারেড করতে করতে ঝপাস করে কেউ হয়তো শুয়ে পরলো! পিটি করতে করতে কেউ হয়তো ফিট খেয়ে গেল-এমন নানান সব তেলেসমাতি ব্যাপার স্যাপার চলছিল কলেজে। আগে মনোয়ার স্যার এসব অনাচার দেখেও না দেখার ভান করতেন; ওস্তাদজীরা সামাল দিতো এসব। আলম স্যার এসেই আমাদের ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাগুলি কঠিন হাতে দমন করতে সচেষ্ট হলেন। ফলশ্রুতিতে দেখা গেল, আগে মুন আপা হয়তো একাই ধপাস করে পড়ে যেতেন, এখন মুন আপার প্রতি সলিডারিটি দেখাতে টুশি আপাও অজ্ঞান হয়ে গেছেন প্রিন্সিপালস্ প্যারেড ডে তে!
টুকটুকি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতো বাড়ি যাবে বলে। সে মুখ অন্ধকার করে দিন পার করে। কত রকমের সমস্যা আমাদের। কারো হয়তো মন বসে না কলেজে, কারো বা প্যারেড করতে ভাল লাগেনা, কারো অভিযোগ এতো কম সময় পড়াশোনা করে পাশ করবো কেমন করে? সব অভিযোগগুলোর প্রতিফলন পরতো প্যারেড গ্রাউন্ডে। ক্যাডেট কলেজীয় পানিশমেন্টের প্রথাটি আলম স্যার আমাদের কলেজে চালু করেন। দলে দলে বিভক্ত করে নানা কায়দাকানুন করে স্যার আমাদের শাস্তি দিতেন বিচিত্র সব উছিলায়! আজ হয়তো পুরা সদাচার হাউস রগড়ানি খাচ্ছে দেরী করে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার কারণে, কাল হয়তো সত্য হাউস তিন চক্কর বেশী দৌড়াচ্ছে লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলার অপরাধে। স্যার আমাদের ভেতরকার আহ্লাদী, পুতুপুতু ভাবটি ঝেঁটিয়ে দূর করতে সর্বতোমুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন!
হাউসের বাইরে যেতে হলে আমাদের চুল বাঁধতে হতো; বিশেষতঃ খোলা চুলে প্যারেড গ্রাউন্ডে ফল ইন হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। একদিন তুমুল গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ফার্স্ট প্রেপে যাওয়ার আগে আমি চট করে গোসল করে নিলাম। ঝাঁকড়া চুল থেকে পানি ঝরতে না ঝরতে প্রেপে যাওয়ার জন্য ফল ইন করতে হয়েছে নীচতলায়। এই ছুটোছুটিতে ভুলে গেলাম চুলের ব্যান্ডপ্রস্থ নিতে। ক্লাসে বন্ধুদের কারো কাছে খুঁজে পেতে একখানা বাড়তি রাবার ব্যান্ড পাওয়া গেল না। সুতরাং খোলা চুলেই গেমসে গেলাম। মনে মনে একের পর এক দোয়া দরুদ পড়ছি, আজ যেন স্যারের নজরে না পরি! আলম স্যার এমনিতে বিকেলে খোশ মেজাজে থাকেন এবং প্রায়শঃ ক্যাডেটদের সাথে বাস্কেট বল খেলতে ভালবাসেন। হায়! সেদিন স্যার বাস্কেট বল গ্রাউন্ডে এসেই খোলা চুলের ক্যাডেটদের আলাদা লাইনে দাঁড় করালেন। আমার মত কতিপয় এলোকেশী শাখামৃগ ক্যাডেটের সাথে জুটলো চোখে কাজল আঁকা এক সিনিয়র আপাও। বাকী ক্যাডেটদের খেলতে পাঠিয়ে স্যার আমাদের সামনে এসে দুই পা ছড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন, ‘সো, টেল মি হোয়াই ইউ আর হিয়ার?’ তারপর ফিসফিস করবার ছলে একটু সামনে ঝুঁকে আবারও বললেন, ‘ইউ গাইস থিংক দ্যাট আই ডোন্ট সি ইউ?’ চারদিকে ক্যাডেটরা তখন খেলা শুরু করেছে। বাস্কেট বল গ্রাউন্ডে নাজুর উচ্চকিত হাসি শুনতে পাচ্ছি; এই মেয়েটার হাসির ব্যামো আছে, একবার শুরু করলে চোখ থেকে পানি বের না হওয়া পর্যন্ত গমকে গমকে উপচানো হাসি চলতেই থাকবে। স্যার আবার বললেন, ‘হোয়াই ডিডন্ট ইউ টাই ইয়োর হেয়ার?’ আমরা সব চুপ করে আছি। ‘টুডে ইউ উইল কিপ রানিং আন্টিল আই স্টপ ইউ, আন্ডারস্ট্যান্ড?’ বিচার শেষ হয়ে গেল দুই মিনিটের মাঝে, অপরাধীরা সাজা ভোগ করতে নির্বাসনে চললো। স্যার আমাদের দৌড়াতে পাঠিয়ে নিজে বাস্কেট বল খেলতে লেগে গেলেন।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে আমরা কয়েকজন নিরন্তর দৌড়াদৌড়ি করে চল্লাম। বাস্কেট বল গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের একজন খুকখুক করে কাশলো খুব, একজন জুতোর ফিতা বাঁধলো লাইন থেকে বেরিয়ে; স্যার আমাদের দিকে ফিরেও তাকালেন না। ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে আমাদের একজন সটান শুয়ে পরলো ঘাসে। বাকীরা দৌড়াদৌড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। স্যার দেখছি খুব কায়দা করে ড্রিবলিং করছেন। সাদা টি-শার্ট আর সোয়েট প্যান্টে স্যারকে সিনেমার নায়কদের মত দেখায় যদিত্ত তার কর্মকান্ডে আজ ভিলেনের ছাপটাই বেশী! বাস্কেট বল গ্রাউন্ডের চলমান নাটক আর নিজের দৌড়ঝাঁপে আমার জিভ বেরিয়ে গেছে মুখ থেকে, গালে মুখে উত্তাপ টের পাই; কিন্তু চোখে একফোঁটা পানি নাই!
হাউসে ফিরে ভোতা একখানা কাঁচি নিয়ে আমার যত্নলব্ধ ঝাঁকড়া চুলগুলি কেটে ফেললাম!
সময় অসময়ে গল্পের অবসরে লেখিকার কাছ থেকে গল্প গুলো খন্ড খন্ড ভাবে অনেকবার শুনেছি। আজ নতুন করে গল্পটা পড়ে ভীষণভাবে মাটির একটা টান অনুভব করছি। কারণ আমাদের গল্পগুলো যে প্রায় একই রকম। ফিরে যাচ্ছি পঁয়ত্রিশ বছর আগের সময়ে। প্রবাসী জীবনটা এই টান কে আরো প্রকট করে তুলেছে।
প্রিয় সাবিনা, তোমার আরো লেখা নিয়ে বেঁচে থাকো দীর্ঘদিন। আমার শুভাশীষ রইল।
সময় অসময়ে গল্পের অবসরে লেখিকার কাছ থেকে গল্প গুলো খন্ড খন্ড ভাবে অনেকবার শুনেছি। আজ নতুন করে গল্পটা পড়ে ভীষণভাবে মাটির একটা টান অনুভব করছি। কারণ আমাদের গল্পগুলো যে প্রায় একই রকম। ফিরে যাচ্ছি পঁয়ত্রিশ বছর আগের সময়ে। প্রবাসী জীবনটা এই টান কে আরো প্রকট করে তুলেছে।
প্রিয় সাবিনা, তোমার আরো লেখা নিয়ে বেঁচে থাকো দীর্ঘদিন। আমার শুভাশীষ রইল।
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আতিক, আমার গল্পের বিন্দু হয়ে তুমিও আছো সবার মাঝে। তোমার পড়তে ভাল লেগেছে কারণ এটি আমাদের সব্বার গল্প। তোমার হাজারো গল্পের কিছু এবার আমাদের ব্লগে নিয়ে এসো, প্লিজ!
সময় নিয়ে অবশেষে পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ওয়াও!!! :boss: :boss: :boss:
আমি সাধারনতঃ ক্যাডেট কলেজ জীবনের স্মৃতিচারন পড়ি না।
যদিও সংগ্রহে আছে প্রায় সবই। কিন্তু পড়া হয়ে ওঠে না 🙁 🙁 🙁
সবার লিখাই আমার কাছে মোটামুটি একই লাগে, খুব চেনা লাগে।
তাই আগ্রহ নিয়ে পড়ার মত, জানার মত, তেমন কোনো স্পেশাল কিছু খুজে পাই না তাতে।
কিন্তু দু'টি কারনে তোমার এই লিখাগুলা না পড়ে কোনো উপায় থাকছে না:
১) এ শুধু ক্যাডেট জীবনের স্মৃতিচারন নয়, একটি ক্যাডেট কলেজ, বিশেষ করে গার্লস ক্যাডেট কলেজের শুরু হবার প্রক্রিয়াটা জানা যাচ্ছে এই স্মৃতিচারনার মধ্য দিয়ে।
২) এমনিতেও আমি বরাবরই তোমার লিখার দারুন ভক্ত। স্মৃতিফৃতি না হয়ে যদি একগাদা গালাগালি দিয়েও ভরে রাখতা, তাও পড়ে ফেলতাম গোগ্রাসে। 😀 😀 😀
চমতকার প্রোজেক্ট।
চালিয়ে যাও। আর লক্ষ রেখো, নিজেদের গল্পের চেয়ে আনুসাঙ্গিক বর্ননা যত বেশি দিতে পারবে, লেখাটার ভ্যালু ততই বাড়বে...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
ভাইয়া, তুমি বড় ভালবাসো তাই ফিরে ফিরে পড়তে আসো আমার লেখা। তোমাদের প্রশ্রয় পেয়ে অনেক কিছু লিখে ফেলি সাহস করে। আমি এবার লিখতে বসে দেখলাম হাজার স্মৃতির সমুদ্রে অবগাহন করে আছি। কত ভুলে যাওয়া গল্প মনেপড়ে গেল, কত হারানো মুখ, কত কান্নার দাগও! বন্ধুদের একে ওকে কল করছি স্মৃতি ঝালিয়ে নেবার জন্য। ভুলভাল তথ্যে বিভ্রম সৃষ্টি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি।
তোমার আদেশ শিরোধার্য মনে করে পরবর্তী পর্বের জন্য কলম ধরবো অচিরেই।
অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য।
লিপি just চোখে জল এলো। লিখতেই থাক । ❤
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
সালাম আপা, আমার ব্লগ পোস্টে আপনার মন্তব্য দেখে অনুপ্রাণিত হলাম। আপনি আর সোহেলী আপা নদীর মত কথা বলতেন আর কত যে হাসাহাসি করতেন! লিখতে বসে আপনাদের হাসিও শুনতে পেলাম টাইম মেশিনে বসে।
আমাদের সাথেই থাকুন।
নাম তার লিপি,
কাজে লিপিকার
এমন মানিকজোড়
দেখা মেলা ভার!!!
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
তুমি আমার বিচ্ছিরী নামটা নিয়ে এতো সুন্দর একখানা ছড়া লিখে ফেললে যে এই প্রথমবারের মত মনে হলো, নাহ্! খুব একটা বাজে না নামটা। তোমার লেখাটা ফাটাফাটি হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া। বাবা আমাকে লিপু নামে ডাকতেন, এখন মা ছাড়া এই নামে ডাকবার মত অবশিষ্ট কেউ আর নাই।
কতদিন পর তোমার একখানা লিখা নিয়ে সিসিবিতে আড্ডা জমে উঠতেছে, দেখেছো?
ভাগ্যিস, ছড়াটা মনে এসেছিল, আর আড্ডার অংশ হিসাবে সেটা পোস্ট করেছিলাম...
কারন সেজন্যই তো জানা হলো, এই নামটা তোমার তেমন একটা পছন্দের না।
যার "সাবিনা"-র মত একখানা আন্তর্জাতিক মানের শ্রুতিমধুর ও অর্থপূর্ন নাম থাকে, তাঁর কাছে অন্য যেকোনো নাম অপছন্দ হতেই পারে। কিন্তু, আমি জানি, লিপি নামধারী অন্যান্য অনেকেরই কিন্তু এই নামটা বেশ পছন্দের।
তোমার যেহেতু আপত্তি আছে, থাক, আর তোমাকে এই নামে ডেকে বা কাব্য করে বিরক্ত করবো না।
ছড়া ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
শেষ বাক্যটা ছুঁয়ে গেল।
বুঝলাম, মুখে যতই বিচ্ছিরী বল না কেন, নামটার প্রতি এক গোপন মমতা এখনো আছে অবশিষ্ট...
"বাবা আমাকে লিপু নামে ডাকতেন, এখন মা ছাড়া এই নামে ডাকবার মত অবশিষ্ট কেউ আর নাই..."
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারী স্কুল থেকে আমি ক্যাডেট কলেজে এসেছিলাম। স্কুলটির সুনাম আছে আমাদের জেলা শহরে। সেই স্কুলে গিয়ে দেখলাম আমাদের ক্লাসেই ছয়জনের নাম হলো লিপি। কী যন্ত্রণা! কী যন্ত্রণা! ফলাফল হিসেবে দেখা গেল, কারও নাম হলো কালা লিপি তো কেউ হলো ধলা লিপি। একজন হয়তো কবি লিপি, অন্যজন হয়তো মিচকা লিপি। কী সর্বনাশ! অবস্থা বেগতিক দেখে আমি নিজের নামটা বেমালুম চেপে যাবার চেষ্টা করলাম। কাওকে এই নাম বলিনা। এই হলো কাহিনী, ভাইয়া।
তুমিই তো বলেছো, সিসিবির সাত ভাই চম্পা হলাম আমি, ভাইয়া। বোনকে ঘিরে তাই ভাইদের আড্ডা তো জমবেই। এমেকের পাতাতেও আমাদের এমজিসিসির একখানা আড্ডা চলছে বেশ। অনেকেই স্মৃতিচারণ করছেন সেখানে। আমি ফেসবুকে নীরব পাঠক বৈ তো নই, তবে লুবনার পিড়াপিড়িতে সেখানেও আড্ডা দিলাম। সিসিবি আমাদের প্রাণের আবাসস্থল। তাই যে কোন উসিলায় আড্ডা চলে।
তোমার ছড়া চাই এবার সিসিবিতে, ভাইয়া। জোর দাবী জানিয়ে গেলাম কিন্তু।
"কারও নাম হলো কালা লিপি তো কেউ হলো ধলা লিপি। একজন হয়তো কবি লিপি, অন্যজন হয়তো মিচকা লিপি..."
😛 😛 😛
এবার বোঝা গেল, লিপি নামটা আসলে না-পছন্দ না, বরং কমন পড়াজনিত বিরক্তির।
তুমিতো এখন সেই একমাত্র পারুল বোনের মত, একমাত্র লিপি বোনও।
এখন তাইলে তো আর বিরক্ত হবার উপলক্ষটা নাই...
🙂 🙂 🙂
আমি তো ছড়াকার না।
লিখতেও পারি না।
যেটা দেখলা, এটা হঠাত এসে পড়া। নিজের ইচ্ছায় লিখা না
এরকম হঠাত যদি আবারো কখনো আসে, দেখতে পাবা!!!
😀 😀 😀
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
Khubi shundor likha Sabina apa. 🙂
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
লেখাটি পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আহসান।
সাবিনাপুউইইউউউউউউউ :((
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আমাদের সেলিব্রেটি ব্লগারের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম!
কান্দো ক্যানে, মাসফি?
🙂
পড়বার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
যা লিখছিস তাই পড়ে মনে হচ্ছে অসাধারণত্ব ছড়িয়ে আছে প্রতিটি বাক্যে। আগের চেয়েও ভালো লাগছে এই লেখাটা। ক্যাডেট কলেজ আমাদেরকে অনেক বেশি সাহসী হতে শিখিয়েছে। আমার জীবনে অন্তত আমি তাই দেখি। নিজেকে ভালবাসতে শিখিয়েছে। মানুষজন নিয়ে ছিলাম বলেই হয়তো মানুষেরই জন্যে কিছু না কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে শিখিয়েছে। আরো অনেক বড় করে লিখে পোস্ট করবি। মনেহয় আরো বড় হলোনা কেন? এতো জলদি পড়ে কেন শেষ করে ফেললাম!!
লুবনা, আরো বড় করে লিখতে বলছিস? লোকজন তখন আর পড়বেনা যে!
আপা আপনার বই এর অপেখখকায় আছি। আপনার লিখা গুলু অনেক জীবনত। আমার কলেজ এর প্রথম দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে চোখ ভিজিয়ে দিলো...!!!
নুসরাত, আমার ব্লগ পোস্ট পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের সাথেই থেকো।
বরাবর এর মতোই অসাধারণ লিখা সাবিনা আপা। খুব ভাল লাগলো, আপনার সাথে আমিও চলে গিয়েছিলাম সেই সোনালি অতীতে। অপেক্ষা করছি পরবর্তী স্মৃতিকথার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
অর্চি, আমার ব্লগে বেড়িয়ে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আপু। তোমরা সবাই মিলে দারুণ ভাবে অনুপ্রাণিত করছো বলেই না লেখার সাহস পাচ্ছি। আমাদের সাথেই থেকো।
বাহহ ! নিজের স্মৃতিকুঠুরির পাশাপাশি অন্য একটা কলেজেও যেনো থেকে আসা হলো। কলেজে ভর্তি হবার সময়টা সবার মাঝেই বিশেষ রকম দাগ রেখে যায়।
প্রাণবন্ত লেখায় উপভোগ্য পাঠ বোনাস।
আমার সামান্য লেখাটি পড়বার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভাইয়া। আপনার থেকে পাওয়া মন্তব্য আমাকে বরাবর সম্মানিত করে।
আপা, এটা স্বাভাবিক যে তোমাদের সাথে অনেকখানিই মিলবে না, কিন্তু তারপরও নস্টালজিক হয়ে গেলাম।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 🙂
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আমাদের গল্পগুলো তোদের সবার থেকে খানিক ভিন্ন জানি। এমজিসিসি তো গার্লস ক্যাডেট কলেজ, তায় আমরা পাইওনিয়র ব্যাচ, জুনা। আমরা যেমন নতুন ছিলাম তেমনি আমাদের টিচিং স্টাফদের অনেকেই নতুন শিক্ষক ছিলেন। শুরুতে অভাব ছিল অনেক কিছুর; যেটি অফুরান ছিল সেটি হলো উদ্যম আর নতুন কিছু গঠন করবার অপরিমেয় প্রচেষ্টা। তোদের গল্পগুলি অনেকটা একই রকম, আমাদের খানিক ভিন্ন গল্প আশা তোদের মন্দ লাগবে না, ভাইডি!
এইবার বল জুনা, এতোদিন কোথায় ছিলি? ভাল আছিস আশাকরি, ভাইয়া। তোর জন্য শুভকামনা রইল!
কে কাকে শেখাবে? সবাই তো একই পথের পথিক -- এটা এক ধরণের সৌভাগ্যই বলা চলে। শেখানোর লোক থাকলে খুব বেশী কিছু শেখানোর চেষ্টা করতো, আর তখন খারাপ লাগতো।
কাটা চামচের সাথে প্লেটে ঠোকাঠুকি করে প্রলয় সৃষ্টি করা যাবে না -- 🙂 এ অমোঘ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ জীবনে দুই দুইবার লাভ করেছি। একবার এমসিসিতে, আরেকবার বিএমএ তে। আবদুল্লাহ আল আমীন স্যার আমাদের প্রায়ই বলতেন, দেখো, তোমরা আবার নিজের বাড়ীতে গিয়েও কাঁটা চামচ দিয়ে খাবে বলে জেদ ধরোনা। এতদসত্তেও ময়মনসিংহের সানকি পাড়ায় বসবাসরত আমাদের এক বন্ধু ঐ কম্মটিই করেছিলেন বলে আমরা ময়মনসিংহের অন্যান্য বন্ধুদের কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়েছিলাম। আর বিএমএ তে আমাদের দ্বারা ওরকম প্রলয় সৃষ্টির অপচেষ্টা দেখলে প্লাটুন কমান্ডার কাজী শাহেদ এসে ছুড়িটা কেড়ে নিয়ে বলতেন, Do not try to slaughter your chicken with this!
ম্যাডাম ‘সুশশ’ বলে এক ধমকে বাংলাদেশের রাজধানীকে স্থবির করে দিলেন! হা হা হা! 🙂
গত রাতে ক্যাডেটরা নিজেদের মশারিটিকে জাল বানিয়ে চৌবাচ্চার সব ক’টি মাছ ধরে রাতেই সেগুলো কেটেকুটে ভেজে সাবাড় করেছে! রংপুরবাসীর সাম্প্রতিক এই ভোজনবিলাসে স্যারের মনটি স্বভাবতই খানিক ক্ষুব্ধ - চিরটা কাল ক্যাডেটরা এমনই করে গেছে, আর স্যারেরা ক্ষুব্ধই হয়ে গেছেন। অবশ্য মাঝে মাঝে যে তারা মশা মারতে কামান দাগান নি, তা নয়।
হাউসে ফিরে ভোতা একখানা কাঁচি নিয়ে আমার যত্নলব্ধ ঝাঁকড়া চুলগুলি কেটে ফেললাম! -- হায় হায়! এর জন্য শাস্তি হয় নি?
মানুষজন নিয়ে ছিলাম বলেই হয়তো মানুষেরই জন্যে কিছু না কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে শিখিয়েছে - লুবনা শারমিন এর এ কথাটা ভাল লেগেছে।
স্মৃতিচারণ খুব আবেদনময় হয়েছে, এ কথা পাঠকদের মন্তব্যগুলো থেকেই বেশ বুঝা যায়। বই প্রকাশের দাবী দিন দিন আরো জোরালো হচ্ছে!
অভিনন্দন একটা চমৎকার সিরিজ হাতে নেয়ার জন্য।
আপা,আপনি এত সুন্দর করে লেখেন!!পড়ার সময় আমি আমার স্মৃতিগুলো হাতরাই।
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
আপনার মন্তব্য দেখে আজ ভোরবেলা মন ভাল হয়ে গেল, কবি। আপনি আমাদের আসরের প্রাণ। তাই আপনার মতামতের অপেক্ষায় ছিলাম। সে যাই হোক, এবার লিখতে যাই। সিসিবির প্রথম পাতায় আমার দুটো লেখা আছে, পরবর্তী পর্ব প্রকাশে কতদিন না জানি লেগে যায় ভাবছি!
অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটি পড়বার জন্য।
লিমিট বাড়ানো হয়েছে, আপা। চারটা থাকতে পারবে প্রথম পাতাতে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
@জিহাদ, চারটা বেশী হয়ে গেছে। তিনটে হলে ভাল হতো মনে হয়।
আমি যখন সিসিবিতে লেখা শুরু করেছিলাম, তখন এ আসরের প্রাণ ছিল নূপুর, অরূপ, লুৎফুল, পারভেজ, মোস্তফা, জুনায়েদ এবং তুমিসহ আরো অনেকে। তারপর হঠাৎ করে কেন জানি খরা নেমে আসে। এর মাঝেও আমি নিয়মিতভাবে সময় হলেই দুটো করে পোস্ট লিখে যাই। কখনো কখনো দেড় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবু মনে হয়েছে, চেনা কয়েকজনের লেখা ঘন ঘন আসার চেয়ে নতুনদের লেখা আসুক, তাই অপেক্ষাকে অসহ্য মনে হয় নাই। তবে যখন দেখেছি অনেকেরই লেখাগুলো বহুবার পঠিত কিন্তু মন্তব্য নেই, তখন একটু খারাপ লেগেছে বৈকি। অবশ্য শেষের দিকে আমিও একই দোষে দুষ্ট হয়েছি বটে! 🙂
যাহোক, বহুদিন পর তুমি আবার লেখা শুরু করেছো দেখে আনন্দিত, আশাকরি বাকীরাও সময় করে এগিয়ে আসবে। সিসিবি আবার চিন্তক আর লেখকদের কলতানে মুখরিত হয়ে উঠুক!
আপনি আমাদের আসরের প্রাণ -- কথাটা জেনে যারপরনাই বিস্মিত এবং সেই সাথে প্রাণিত হ'লাম! 🙂
জেসিসি'র সাইদুলের নামটা উপরের তালিকা থেকে ভুলক্রমে বাদ পড়ে গেছে। ওর প্রাঞ্জল লেখা আর সুবিবেচিত মন্তব্যগুলো মিস করি। কানাডা প্রবাসী হবার পর থেকে মাঝে মাঝে ফেইসবুকে লিখে থাকে, কিন্তু সিসিবি'তে অনেক দিন ধরেই অনুপস্থিত।
ক্লাস টেনের সেই মজা ছিল তো! তিন বছর প্রিফেক্টশিপ পেয়েছে? 😛 :O
এত চমৎকার একটা সিরিজ দেরিতে পড়তে হচ্ছে 🙁
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য