গ্রিটসের মোহনভোগ রান্না করেছিলাম ব্যাপক আয়োজন করে। গ্রিটস হলো হলুদ ভুট্টার গুড়ো, যা বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। আমাদের দেশের সুজির চাইতে একটু বড় দানার এই গ্রিটস ইউরোপ, আফ্রিকা অথবা এশিয়ার দেশ গুলোতে কোথাও পোলেন্টা, কোথাও মাহলামা আবার কোথাওবা কুকু নামে পরিচিত। নরম আর সহজপাচ্য বলে আমেরিকার বুড়োবুড়িদের কাছে সকালের নাস্তায় গ্রিটস পছন্দের খাবার। সামান্য মাখন ছড়িয়ে, নুন আর গোল মরিচে গ্রিটস খেতে আমার মন্দ লাগেনা।
একদিন নুসায়েরা ফারিস্তার বাড়িতে গ্রিটস উইথ শ্রিম্প খেয়েছিলাম দুপুরের খাবারে, সাথে ব্রকলি আর লাল পেপারও ছিল। খানিক স্লাশি চেহারা আর অতিরিক্ত বাটারের কারণে তেমন ভাল লাগেনি খেতে। মনে হয়েছিল, এর চাইতে আমাদের দেশের ঢ্যালঢ্যালা খিচুরী অনেক মুখরোচক হয় খেতে, সাথে গরুর গোস্তের মাখামাখা ঝোল হলে তো কথাই নেই। প্লেটের উত্তরে মায়ের বানানো সর্ষের তেলে ডুবানো জলপাই এর আচার ইজ আ মাস্ট!
সুইট টুথ ফেইরি আমার আত্মার আত্মীয়; বাজারে সবুজ কচি লাউ দেখলে লাউ চিংড়ির বদলে আমার দুধ লাউ খেতে মন চায় অথবা তাজা পামকিন দেখলেই মনে হয় পামকিন পাই খাইনা কতদিন! মিজ ফারিস্তা সব্জী চিংড়িতে গ্রিটস রাঁধতে পারলে গ্রিটসের মোহনভোগ কেনো হবেনা আমি ভাবি। ভাবতে ভাবতেই ট্রেডার জো’স থেকে পাথরে ভাঙ্গা গ্রিটস নিয়ে এলাম একদিন। লর্ড কৃষ্ণের অপর নাম মোহন কে না জানে, তাঁর পূজোর প্রসাদে সনাতন হিন্দুরা যে ভোগ সামনে হাজির করতেন সেটিই মোহনভোগ নামে পরিচিত।
এলাচ, দারুচিনি আর খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে গ্রিটস ভেজে নিলাম প্রথমেই। দুধে জাফরান, আখরোট, পেস্তা বাদাম, আর ম্যাকাডেমিয়ার টুকরো ডুবিয়ে রেখে দিয়েছিলাম আগেই। ঘিয়ে ভাজা গ্রিটস এবার ঘন দুধের মালাই আর চিনির সিরাপে খুব অল্প আঁচে চুলোয় সেদ্ধ করি। মাখামাখা হয়ে এলে সোনালী কিসমিস, নরম বাদাম আর জাফরান ছড়িয়ে দিই মোহনভোগের ভাঁজে ভাঁজে! প্রাণ আনচান করা খুশবুতে মোহিত হয়ে আমি গোটা কয় ফুলকো লুচি বানিয়ে ফেলি চটপট।
ফোনে রান্নাবাটির হট্টগোল শুনে রুন্টি এসেছিল ফেইস টাইমে। আমার উচ্ছাস দেখে সে বলল, আপনার মোহিনীমোহন রাজাটিকে আমি নিলাম, ভোগটা দিলাম গুণীজন রাঁধুনির করকমলে। বন্ধুর উদারতায় গদগদ হয়ে বলি, তোমার মোহন আর আমার ভোগ দুটোই তোমায় দেয়া হলো, ছোটবোন!
ভগবান কৃষ্ণের মন পেতে এরপর আমার আর বিলম্ব হয়নি!
সপ্তাহান্তে লুবনাকে কল করতেই হয় দেশে। কাজ ও অকাজের ভিড়ে প্রতিদিনকার সুখ আর অসুখের গল্প জমে থাকে সপ্তাহ জুড়ে! তাই বিটিভির এ সপ্তাহের নাটকের মতো আমাদের সপ্তাহান্তের ফোনালাপ।
দুটো রিং বাজতেই তের নদীর ওপারে তার টনটনে কণ্ঠ,
কিরে জাজা, আছিস কেমন?
জাজা? নাকি যা যা?? আই মিন, মাধবী এসেই বলে যাই? কপট অভিমানে বলি আমি।
হুম, জা-জা! তুই তো আমার জাজাই, বন্ধু!
টিভিতে নাটক দেখে নতুন সম্বোধন শিখেছেন লুবনা। জাজা মানে হল জানের জান!! নাট্যকারের প্রতিভার কথা আর নাইবা বলি। জাজার ইতিবৃত্ত শুনে আটলান্টিকের দুইপারে দু’জন হাসাহাসি করি আশেপাশের সবাইকে ভড়কে দিয়ে।
আমার তিতকুটে বন্ধু জবুমাফুর পাঠানো গজল শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি কাল রাতে! মেহেদি হাসানের সুরের জাদু ছড়িয়ে পরেছিল শরীর, মন আর পুরো ঘর জুড়ে! গভীর রাতে দরজায় মৃদু টোকা শুনে প্রথমেই সেল ফোনের দিকে হাত বাড়াই। ফ্লাফি খুব মৃদু স্বরে একবার টুইট বলে আবার ঘুমে তলিয়ে গেল বুঝতে পারি। বাড়িতে জনমানব বলতে আমি আর তারা তবুও অভ্যাসবশত বলি, হু ইজ ইট?
সন্ধ্যায় আহারবিহারের পর নিচতলায় লিভিং রুমে মা-মেয়ের আড্ডা, পড়াশোনা, মুভি দেখা অথবা গান শোনার পালা। রাতে যে যার রুমে শুয়ে পরার পর তারার সাথে আমার যোগাযোগ হয় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে।
ক্যান্ট স্লীপ, মা!
চলে এসো আমার কাছে। চুলে হাত বুলিয়ে দিলেই ঘুম আসবে
ডায়িং ফ্রম আ ন্যাস্টি হেডেক, মাগো!
আমি আসছি ভিক্স নিয়ে।
ক্যান ইউ প্লিজ স্ক্রাব মাই ব্যাক, প্রিটি মামা?
হোয়াই নট!
ওয়ানা কুইজ মি ফর দা টেস্ট?
এবসোলিউটলি!
তারা ইজ মিসিং হার কোজি ওম্ব নেস্ট।
এর কোন উত্তর হয়না; কন্যাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি অন্ধকার ঘরে!
এই হলো মাতা-পুত্রীর নিত্যদিনের কথোপকথন। মায়েরা তাদের সন্তানের জীবনে সর্ব রোগের দাওয়াই হয়ে আসেন সব সমাজেই। মাথা ব্যাথা, দাঁত ব্যাথা, মাঝ রাত্তিরে আইসক্রিম খাবো, বাজ পরার ঠা ঠা শব্দে ভয় পাওয়া অথবা বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতার গল্প তো একমাত্র মায়ের কাছে বলা যায় অকপটে। ওয়ান্স আ মম, অলওয়েজ আ মম!
হু ইজ ইট এর উত্তরে দরজার ওপাশে তারার মিনমিনে কন্ঠ, মা তোমার বাড়ি বেড়াতে আসতে পারি? টেক্সট না পাঠিয়ে একেবারে হাজির হয়েছে সে; ঘুমে জড়িয়ে এসেছিল চোখ তবুও বলতে পারিনা, অতিথশালার দুয়ার বন্ধ এখন! কন্যা ফ্লোরিডা যাচ্ছে একটা সামার ক্যাম্পে যোগ দিতে সেই উদ্দীপনায় তার ঘুম হচ্ছে না, এমন সময়ে মায়ের বাড়ি না এলে তার চলবে কেনো!
অতএব,
ঘুমের পরী রইল ‘পরে শিকের পরে;
আমার রূপের পরী আসন বিছায় আঁধার ঘরে!
আপনার ব্লগ লেখার ধারাবাহিকতা রীতিমত হিংসা করার মত। আমি বছরে দুইটা লিখতেই এখন প্রচন্ড আলসেমি বোধ করি। 🙁
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
এক কুমিরের সাতটি ছানা প্রদর্শনের অপরাধে পাঠকের বিরাগভাজন না হই আবার, জিহাদ! আতঙ্কে আছি!
এখন?
তুই তো বরাবরই 'বছরে দুইটা লেখা দেয়া পার্টি' ছিলি... x-(
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনার কথাগুলো ভুল প্রমাণ করে তুমি অতি সত্বর একখানা ব্লগ নামিয়ে ফেলো, জিহাদ।
বড় ভাইদের কথা ভুল প্রমাণ করার মত দু:সাহস দেখানো কি ঠিক হবে? 😛
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
অনেকদিন তোমার বাজনা শুনিনি, জিহাদ! দুটো লিখো, কিন্তু বাজিও সপ্তাহান্তে!
কিছু কথা আর গুপন থাকতে দিলেন না :((
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
:brick: :brick: :brick: :brick:
জাজা বন্ধু আমার। এতো দুরে আছিস যে ইচ্ছে হলেই মাথায় হাত বুলিয়ে আসতে পারি না।জীবনের প্রথম বারের মতোন মা মেয়ের বিচ্ছেদ, খারাপ লাগছে জানি ।কিন্তু জিবনতো এমনই ।অনেক বলিষ্ঠ লেখা। অনেক কিছুই শিখতে পারি ।আরো অনেক লেখা চাই। :boss: :boss: :clap: :clap:
অপরিচিতির সাথে হাতে কলমে পরিচয়ের এইতো সুযোগ কন্ন্যারত্নের। বিচ্ছেদ নইলে মিলনসাধক কেউ কি হয় এ জগতে, বল! তারা আমায় ছেড়ে ঠিক মানিয়ে নেবে সবার সাথে, সমস্যা কেবল তার মাতাটিকে নিয়ে!
তোকে দেখতে চাই সিসিবিতে, বন্ধু। কত যে গল্প করিস উইকেন্ডে আমার সাথে সেগুলোই দিনলিপি আকারে লিখ, প্লিজ!
পড়লাম। আহারে মা- মেয়ের প্রেম আর জাজা আপুর কথা। মনে হল নীললোহিত এর গল্প পড়ছি। সামার ক্যাম্প, তারপর আরও কোথাও একদিন যাবে, আকাশ ছোঁবে গাছের ডালপালার মত আর মা পড়ে থাকবে শিকড়ে, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। ভালো থেকো তোমরা। :clap: :clap:
🙂 🙂 🙂 🙂
কী সুন্দর করেই না কথা বলো তুমি, জিয়া! তারা সুপার একসাইটেড হয়ে গোছগাছ করছে। কত কি ফমর্ পূরণ করছে, লিস্টি বানাচ্ছে তো কেনাকাটা করছে।
তোমার শেকরের গল্প শুনে ডলি পারটনের কথা মনে পরলো। সংগীত শিল্পী ডলি পারটন টুয়েনটি টুয়েনটি তে ইন্টারভিউ দিতে এসে নিজের সংগ্রামশীল মায়ের গল্প বলতে গিয়ে বলেছিলেন, Storms make trees take deeper roots....আমাদের মায়েরা হলেন এই ডিপার রুট।
একেবারে যথার্থ দিনলিপি! টক-ঝাল-মিষ্টি!
খাওয়া-দাওয়া আমাকে তেমন টানে না, তবে তোমার সাবলীল লেখনীতে সবকিছুই আকর্ষনীয় লাগে! 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
🙂 🙂 🙂 🙂
আমি ভোজনবিলাসী মানুষ জুনা, তাই আমার দিনলিপিতে ঘুরেফিরে প্রাচ্য বা প্রতিচ্যের ডেলিকেসি চলে আসে। পারফেক্ট টক-ঝাল-মিষ্টি দিনলিপির জন্য আশেপাশে ম্যাটেরিয়ালের অভাব নেই।
কি সুন্দর করে যে লিখো!!!
মুগ্ধ হয়ে পড়ি আর ভাবি, "আল্লা, শেষ হয়ে গেল???"
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂
আমাদের জীবনটা অনেকাংশেই পিয়ানোর মত, ভাইয়া! সাদা কী গুলো ঝলমলানি রোদ, অন্যদিকে কালো কী গুলো মেঘমেদুর বিকেল যেন উপচে পরছে বিষণ্ণতা! দিনলিপিগুলো অনেকটাই এই আলোর ঝনর্াধারা অথবা প্রদীপের নিচের আঁধার বৈ নয়। আমার সামান্য এলেবেলে, উরাধুরা লেখাগুলোতে তোমাদের অসামান্য মন্তব্য নিয়তই আমায় সম্মানিত করে! :hatsoff:
ঝলমলানি রোদ আর মুখ গোমরা করা কালো আকাশের মেঘমেদুরতা তোমার আঙুলের স্পর্শে যে সুর তোলে, তা খুবই সুখশ্রাব্য হয়।
আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে ঢাকার আকাশের মেঘ না কাটলেও মধ্যরাতে যে আটলান্টার আকাশ যে তারায় তারায় উজ্জল হয়ে উঠেছিল সেটি বলতে পারি।
সোনালী কিসমিস, নরম বাদাম আর জাফরান মোহনভোগের ভাঁজে ভাঁজে !
লাউ চিংড়ির বদলে দুধ লাউ ! মায়ের বানানো সর্ষের তেলে ডুবানো জলপাই এর আচার ! ঢ্যালঢ্যালা খিচুরী !
এমন নানান খাবারের মন কাড়া অভিনব ফিরিস্তির সাথে দারুন মিশেলে তত্বকথা ...
লর্ড কৃষ্ণের অপর নাম মোহন কে না জানে, তাঁর পূজোর প্রসাদে সনাতন হিন্দুরা যে ভোগ সামনে হাজির করতেন সেটিই মোহনভোগ নামে পরিচিত।
তার সাথে নিত্য দিনের যাপনের নিপূণ পোর্ট্রেট ...
কাজ ও অকাজের ভিড়ে প্রতিদিনকার সুখ আর অসুখের গল্প জমে থাকে সপ্তাহ জুড়ে! তাই বিটিভির এ সপ্তাহের নাটকের মতো আমাদের সপ্তাহান্তের ফোনালাপ।
এর পর যখন সেই একই লেখায় উঠে আসে ...
মাথা ব্যাথা, দাঁত ব্যাথা, মাঝ রাত্তিরে আইসক্রিম খাবো, বাজ পরার ঠা ঠা শব্দে ভয় পাওয়া অথবা বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতার গল্প তো একমাত্র মায়ের কাছে বলা যায় অকপটে।
তখন অবাক হতেই হয় । লোভ লাগা খাবারের রেসিপির সাথে জীবনের মেরিনেটেড স্বাদ আর যাপনের তৃপ্তি মাখা ডেজার্টের মতোন মাতা-কণ্যার মনের আর কথার টুকরো টুকরো অনুভূতি ভাগাভাগি ।
এক সঙ্গে এতো কিছু ! সবাই পারে না । পড়ি আর অবাক হই ।
🙂 🙂 🙂 🙂
লাবণ্যহীন আটপৌরে বসন ব্যসন, রংচটা দেয়াল অথবা
রূপমাধুরীর কারুকার্য, তার বাঁকা ভুরুর ধনু, কিংবা
স্বপ্নবান যুবকের কথকতা এইসব নিয়েই তো আমাদের দিনলিপি! :hatsoff:
এঁকেই চলেছ এঁকেই চলেছ একের পর এক -- গীতল গদ্য।
মা তারা এবং তারার মায়ের দিনপঞ্জি দেখে আপ্লুত হলাম। (সম্পাদিত)
🙂 🙂 🙂 🙂
গীতল গদ্য! শুনিনি তো আগে কখনোই, কবি! কেমন যে ছন্দকাব্যময় শব্দ, কি করে বলি! তুমিই বানালে বুঝি গীতিময় গদ্য বুঝাতে?
হা হা, না। গীতল কথাটা তো বহুল ব্যবহৃত।
একটা অনুরোধ আপা, 'কবি' শুনতে অস্বস্তি হয়। এখনো হয়ে উঠতে পারিনি। লিখি যা, তা কবিতা হয়ে উঠছে কি না সে চিন্তা যায় না।
সিরিয়াস রিকোয়েস্ট কিন্তু। 🙂
আপা টেস্ট কমেন্ট করলাম। দেখেন তো নোটিফিকেশান আসে কিনা?
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ইয়েয়েয়েসসস, মোকা! :tuski: :tuski:
তিনটে পৃথক বিষয়ের উপর লেখা, তবুও পড়ে মনে হলো যেন তিনটেই একটা গোপন সূত্রে গাঁথা।
🙂 🙂 🙂 🙂
আপনি ঠিকই ধরেছেন, ভাইয়া! সূত্রটি বোধকরি ভালবাসার সূত্র! প্রথমটিতে মিষ্টান্নের প্রতি, দ্বিতীয়টিতে বন্ধুর প্রতি আর সবশেষে আত্মজার প্রতি। :clap: :clap: :clap: :clap:
এক্সাক্টলী সো! সেরকমটিই ভেবেছিলাম।
🙂 🙂 🙂 🙂
আপনার এই লিখাটি দিনলিপি না। এটি একটি গল্প। এত সুন্দর করে লিখেন কিভাবে? কি চমৎকার ফিনিশিং! গ্রিটস বলেন আর সুজি বলেন, জিনিসটাই আমার বদখত লাগে। 😕 একেবারেই সুইট টুথ হইতে পারি নাই। লাউ দেখলে লাউ-গুঁড়া চিংড়ির বদলে দুধ কদুর কথা বন্দুক ধরলেও আমার মনে পড়বে না! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
🙂 🙂 🙂 🙂
কেউ চাইলেও কি একা একা সুইট টুথ বানাতে পারবে, মোকা? পারবেনা। এটি জন্মগত বলতে পারো। একবার তো রসে ডুবানো সাদা স্পঞ্জ রসগোল্লা খেতে এতো মন চেয়েছিল যে, একঘণ্টা ড্রাইভ করে বাঙ্গালী দোকানে গিয়ে দুই প্যাকেট মিষ্টি কিনে বাড়ি অবধি ফিরে আসার তর সইল না। গাড়িতে বসে আগে চারটে সাবার করে পরে স্টিয়ারিং এ হাত দিয়েছি।
আমার ভাই, বিশেষ করে মামাতো ভাইরা এরকম। দাওয়াতে যাবার জন্য মিষ্টি কিনে পারলে ওটার উপরই হামলা চালায়! 😕 আমার মিষ্টি বেশী খেলে মাথা ঝিমঝিম করে! 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
🙂 🙂 🙂 🙂
আমার দেখি মিষ্টি না খেলে মাথা ঝিমঝিম করে হে! একবার আমি ডিনারের পর আটটা রসগোল্লা খেয়েছিলাম, জানো! জীবনে কোন কিছুর রেকর্ড গড়তে পারিনি, ওটিই আমার একমাত্র রেকর্ড বলতে পারো। 😀
রসগোল্লা আবার ঠিকই খেতে পারি। বিপদ হয়ে যায় চমচম টাইপের SMD (Sweets of Mass Destruction) গুলোতে গিয়ে!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
SMD! হাহা, ভেরি ক্রিয়েটিভ! এটি খেতে পারি আধখানা বটে। বালিশ মিষ্টি ট্রাই করেছিলাম একবার, এত্তোবড় বালিশের মত দেখতে বলেই তার এমন নামকরণ। চিনিতে ঠাসা এই মিষ্টি ভাল লাগেনি খেতে, জানো!
মুক্তাগাছার মন্ডা পেলে আমাকে কেউই দাবায় রাখতে পারেনা। আমার বাড়িও আবার মুক্তাগাছায় কিনা 😀
;))
মুক্তাগাছার মন্ডা একটা ভাল মিষ্টি! 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
আমাদের প্যাড়া, ছানার পোলাউ, মালাইকারিও কিন্তু জোস, মোকা! সুইট টুথ কি আর এমনি এমনি হয়েছে হে?
বাবারে। এত কিছু? ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রসমালাই আর ছানামুখী বলে একটা মিষ্টি আছে। তা বাদে বলার মত কোন মিষ্টি নাই। মিষ্টির বাহার দেখেছিলাম দিনাজপুরে গিয়ে "পাবনা সুইটমিট" নামে একটি দোকান। আলিশান কারবার!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
গেলবার দেশে গিয়ে মুক্তাগাছার মন্ডা কিনতে ওদের আদি দোকানটিতে হাজির হলাম। শহর থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ড্রাইভ। গিয়ে আমাদের সত্যি সত্যি লাইনে দাঁড়াতে হলো। আমার আগে আরো তিনজন রয়েছেন। প্রায় খুপড়ির মত একটা ঘর। মাথায় টিনের চাল। জানালার কাঠে রংচঙ্গের বালাই নেই। সাদামাটা একটি ছেলে বসে রয়েছেন রেজিস্টারে। বাকী আরো তিনজন কাজ করছেন ভেতরে। ব্যাস্ততার শেষ নেই তাদের। তারা মিষ্টি প্রায় খায়না বলতে গেলে। ওকে বললাম, মন্ডা না খেলে এ জীবনের আর রইল কিরে, বল! আমার পিড়াপিড়িতে ও মন্ডা খেয়ে বলল, এতোদিন পরে আমরা এখানে এলাম কেনো, মা?
আমি শুনেছি, বা কোথাও পড়েছি হয়তোবা, যে মুক্তাগাছার মন্ডা নাকি স্ট্যালিনের বাড়ীতে পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছিলো। রুশ শাসকের জিহ্বায় ভদকার পাশাপাশি মুক্তাগাছার মন্ডা কেমন লেগেছিলো জানিনা।
🙂 🙂 🙂 🙂
ভদকার সাথে মন্ডা কেমন হবে ভাবছি, ভাইয়া! ট্রাই করে দেখবেন নাকি একবার?
১।অনেক সুন্দর লিখেন আপা আপনি। পড়ি আর মুগ্ধ হই। 🙂
২। গ্রিটসের মোহনভোগ খেতে কেমন হয়েছিল?
দারুন হবার কথা, বর্ণনা শুনেই মন ভরে গেছে।
৩। কোন হাউসে ছিলেন আপা? আমি নিচতালার বাসিন্দা, শান্তিয়ান। 🙂 🙂
🙂 🙂 🙂 🙂
আমাদের হাউসপ্রীতি ছিল কিংবদন্তির মত। মজার ঘটনা হলো, তিন হাউসের তিন রকমের সুর ছিল। বাইরে বন্ধুত্ব যতোই থাকুক না কেন হাউসের প্রশ্নে সবাই একজোট! আমাদের সম্মিলিত অবসারভেশন ছিল এরকমঃ শান্তি হাউসের মেয়েগুলো সব নজরকাড়া সুন্দরী ছিল, রূপের সাথে খানিক অহংকারের মিশেলে তারা খানিক অন্য রকম। কিন্তু শান্তি হাউস বরাবর পড়াশুনোয় ডাব্বা টাইপের। তিন হাউসের মাঝে তারা তৃতীয় ছিল। সত্য হাউসের মেয়েরা সামান্য মোটা আর একটু বোঁচামত ছিল বটে কিন্তু তারা সবাই আইনস্টাইনের বংশধর। সব ক্লাসের সব পড়ুয়া মেয়েগুলা কি করে যে সত্য তে জুটে গেলো জানিনা। বোর্ডে স্ট্যান্ড করা চশমা চোখের মেয়েরা রাত জেগে দুলে দুলে বাথরুমের আলোয় পড়তো খুব। অন্যদিকে সদাচার হাউস পরপর তিনবারের চ্যাম্পিয়ন হাউস। বলা হতো বিউটি এন্ড ব্রেনের কম্বিনেশন হলো হাউস হলো সদাচার। তাদের মাঝে ক্লিউপেট্রাও ছিলনা আইনস্টাইন তো নয়ই। তবে থোরাসা মেধা, থোরাসা রূপ আর থোরাসা গুণের কারণে উতরে গিয়েছিল সদাচারিয়ানরা। আমি কোন হাউসের ছিলাম বলো এইবার।
নাইস টু মিট ইউ, সাবাবা!
আমার ঘরবাড়িতে ঘুরে যাবার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে।
আপা আমার কিন্তু শুরুতেই মনে হয়েছিল আপনি সদাচার হাউসের B-)
সে যা হোক, আমাদের সময় কিন্তু পুরো চিত্রই ভিন্ন ছিল । কিন্তু তিন হাউসের তিন রকমের সুর, সে সময় ও। শান্তি হাউসের আমরা আর যা হারাই না কেন, একাডেমিক্স এর ট্রফি টা হারাই নাই কখনও 😀 আমাদের ব্যাচের আইনস্টাইনের নাতি-নাত্নি সব কিভাবে কিভাবে যেন আমাদের হাউসেই ছিল (আমি বাদে, আমি সারা জীবন ই ডাব্বা 🙁 )
সদাচার ছিল আমাদের মধ্যের "নাচানাচি" পার্টি। তুমুল হাসিঠাট্টার মধ্যে, মৌজ-মাস্তিতে দিন কাটতো নীলদের :goragori: তাদের জীবনের মন্ত্রই ছিল "কাল হ না হ" আর "সত্য" ছিল ঠিক উল্টা। ওদের দেখলেই কেন জানি মন খারাপ হয়ে যেত। খুব কষ্টে থাকতো ওরা 🙁 কিন্তু ওদের নিজেদের মধ্যেকার বন্ডিং ছিল দেখার মতন :salute: অন্য হাউসের সাথে যদিও নিরাপদ দূরত্ব বজায় চলত তারা। আর,আমরা লালেরা ছিলাম সর্বেসর্বা :shy:
আমাদের সময় হাউস কম্পিটিশন গুলোয় সদাচারের দাপট ছিল দেখার মতন :boss: সত্য তেমন হুমকি হতে পারেনি কারো জন্যই, কোন এক কারনে। শান্তি আর সদাচারের মধ্যেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দেওয়া-নেওয়া হত :shy: অবশ্য আমাদের লিডিং এ আমরাই চ্যাম্পিয়ন ছিলাম, B-) কিভাবে? -সে গল্প আরেকদিন হবে আপা 😉 😛 (সম্পাদিত)
তোমাদের সময়কার সদাচারিয়ান হলে আমাদের আর চ্যাম্পিয়ান হাউস হতে হতো না হে, ছোটবোন! দেখেছো, আগেই বলেছি তো, হাউসের প্রশ্নে আমরা কেমন জোটবদ্ধ আর এথনোসেন্ট্রিক? সব্বাই ভাবি আমরাই সেরা। শান্তি হাউসের বোকা সুন্দরীগুলো কি করে কালে কালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো ভাবছি। 😀
"শান্তি হাউসের বোকা সুন্দরীগুলো কি করে কালে কালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো ভাবছি।"-এত্তো সুন্দর করে কথা বলেন কি করে,আপা?
(সম্পাদিত)
😀 😀 😀 😀
ওগো চ্যাম্পিয়ন হাউসের কন্যা, এবার তোমার লেখা দেখতে চাইহে সিসিবিতে। গল্পের ঝাঁপিটা খোল এবার, নাকি তুমিও কবি?