-এখানে?
শেলফের উপরে রাখা পেপার রোলগুলোর মধ্যে বাঁদিক থেকে দ্বিতীয় রোলটার পেটে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করলেন তৌহিদ ভাই।
-হ্যাঁ। ওখানেই।
পাশ ফিরে শুয়ে কাঁথাটা গায়ে টেনে নিতে নিতে জবাব দিলাম।
চড়ুই পাখির বাসা।
ঘুমে দুচোখ লেপ্টে আছে। এখানে ভোরবেলা শীতশীত লাগে। ইলেক্ট্রিসিটি রিকশাওয়ালাদের মত। রিকশাওয়ালারা যেমন ভাড়া বাড়ানোর জন্য রোদ, বৃষ্টি, রাত ইত্যাদি অজুহাত খোঁজে, এখানকারর ইলেক্ট্রিসিটিও খালি যাওয়ার জন্য অজুহাত খোঁজে।
মশারী টাঙানোর অভ্যাস নেই। তাই ম্যালেরিয়ার পরোয়া না করে দরজা জানালা খুলেই ঘুমাই। সন্ধ্যারাতের গরম থিতু হয় ধীরে ধীরে, তারপর শেষরাতে শীত হয়ে গায়ে জমে। তখন কাঁথাটা টেনে দিই। আরাম!
এটা অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টেকে না। ভোর হতে না হতেই জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে কয়েকটা নচ্ছার চড়ুই। যেখানে যাই সেখানেই এদের অত্যাচার। এবার তাই প্রথমে দু-একদিন জানালা দরজা বন্ধ করে ঘুমালাম। পরিণতি হল আরো ভয়াবহ।
কয়েকটা চড়ুই আসে, দুইটা জানালায় ঠোঁট দিয়ে মৃদু ঠুকে যায়। ঘুম ভেঙে যায়। চড়ুইগুলি কিছুক্ষণ পরে ব্যর্থ হয়ে ক্ষান্ত দেয়। আমার চোখ লেগে আসে আবার। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। চমকে চোখ মেলে উঠি। বিহ্বল দৃষ্টিতে শব্দের উৎস খুঁজি।
একটা কাঠঠোকরা পর্যাবৃত্ত গতিতে লাল ঝুটি দুলিয়ে দুলিয়ে থাই গ্লাসের উপর সর্বশক্তিতে ঠোঁট ঠুকে যাচ্ছে! এই শব্দ আর ক্যাডেট কলেজে ভোরবেলা কাঁচের জানালায় ডিউটি ক্যাডেটের চাবির শব্দের সাথে কোন পার্থ্যক্য নাই! এই বিকটতা ভাষায় অপ্রকাশ্য।
আমি অনিচ্ছা নিয়ে উঠি, কাঠঠোকরা তাড়াই, শুই । ওটা কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে ঠোকাঠুকিতে মন দেয়। আমি রক্তচক্ষু মেলে পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ঝুটির দিকে তাকিয়ে থাকি।
-ভাই। ফেলে দিয়ে আসছি। চড়ুই পাখি আপনারে আর ডিস্টার্ব করবে না।
তৌহিদ ভাই চড়ুই নিষ্কাশন শেষে জানালেন।
– ভাই জীবনডা বাঁচাইলেন।
– ডিম ছিল।
ঘুম কেটে গেল।
– কী বলেন!! এত তাড়াতাড়ি ডিম পেড়ে ফেলছে!!! দুইদিন আগে বাসা বানাইল! কয়টা?
-চারটা।
– কি করছেন? ফেলে দিছেন নাকি?
– নাহ! বাসায় রেখে দিয়েছি।
– ভেঙে- টেঙে গেছে নাকি?
– না, ভাঙেনাই একটাও। বাসায় রেখে বাসাটা দেয়ালের উপরে তুলে রেখেছি।
– যাক! ভাল করছেন।
– এখন আরাম করে ঘুমান।
– ভাই দরজাটা একটু খুলে দিয়ে যান প্লিজ। আকাশ দেখি।
তৌহিদ ভাই দরজাটা খুলে দিয়ে চলে গেলেন। আমি পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছি। আকাশ কিছুটা মেঘলা। মৃদু বাতাস। উঠানে লম্বা লম্বা গাছগুলো আশ্চর্য গাম্ভীর্য নিয়ে সামনে পেছনে দুলছে। মোটামুটি স্বর্গীয় সকালের কাছাকাছি।
চার টুকরা মেঘের মত চারটা কাক উড়ে এসে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসল চারটা ডালে। তাদের দৃষ্টি নিচের দেয়ালে।
বারান্দার গ্রিলে দুটা চড়ুই বসে আছে। তারা ভীত দৃষ্টিতে ইতিউতি তাকাচ্ছে। কাঠঠোকরাটাকে আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি না। চড়ুইগুলোর অসহায়ত্ব খুব দ্রুত গ্রাস করে নিচ্ছে আমাকে।
মিঃ কোপ 🙂 খুব ভালো লিখছ। এরকম অনুভূতি আমারও হয় মাঝে মাঝে।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ভাই লেখালেখি আমার জন্য না। এইজাতীয় ঘটনা আমার সাথে প্রায়ই হয়। আগেও চড়ুই বিষয়ক পোষ্ট দিতে হয়েছে। কাজকর্ম নাই। হাবিজাবি লিখি। হেহে। 😛
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
দারুন লিখেছো :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আকাশ ভাই, লোকজন যে এইসব ছাইপাঁশ পড়বে এটাই বিশ্বাস হতে চায় না। সেখানে "ভাল লেগেছে" এইজাতীয় কমেন্ট পড়ে গায়ে চিমটি কেটে দেখি হাহাহা। 😀
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
চমৎকার শুরু দেখে অনেক কিছু আশা করেছিলাম। শেষটা শুরুর মত থাকলো না
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ভাইয়া, আপনার আশাভঙ্গ হয়েছে জেনে আমি ব্যথিত। আসলে 'দিনলিপি' তো, যা ঘটেছে তাই লেখার চেষ্টা করেছি। গল্প হলে কিছু একটা করার চেষ্টা নেয়া যেত। আপনার মূল্যবান ফিডব্যাক পেয়ে আমি আনন্দিত। ধন্যবাদ। 🙂
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
চমৎকার ভাই :thumbup:
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
সামি!!!!!! কিছু কইলাম না তোরে।
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
ভালো লাগলো । সুন্দর লেখা । সুন্দর টুইস্ট ।
🙂
ভাইয়া, সর্দিকাশি লেগে অবস্থা খারাপ, "নেতিয়ে" পড়েছি। নইলে আনন্দে নাচানাচি শুরু করে দিতাম। 😛
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
আমার নিজের একটা ককাটিয়েল আছে, জানো! তিন বছর বয়েসের ফ্লাফি ছোটবেলায় খুব ফুলফুলে ছিল দেখতে তাই আমার কন্যা ওর নাম রেখেছে ফ্লাফি। ফ্লাফি বাড়িময় ঘুরে বেড়ায় নিজের খুশীমত। দোতলা থেকে সে উড়ে চলে আসে নিচে খাবার ঘরে খেতে। আমার মাথায় বসে দিব্যি টিভি দেখে সে, মাঝেমধ্যে লিভিং রুমে গাছের পাতার নীচে লুকিয়ে বসে থাকে ও। মায়ের প্লেট থেকে বিরিয়ানি খেতে শিখেছে ও সম্প্রতি, চিপসও খায় কুড়মুড়িয়ে, জানো!
খুব ঝরঝরে লেখা তোমার ভাইয়া! একটানে পড়ে ফেলা গেলো। শেষটায় যদিও হুমায়ূন আহমদীয় প্রভাব আছে বলে মনে হলো হঠাৎ। আরো লেখা দেখতে চাই ব্লগে তোমার।
আমার বিশ্বাস হতে চায় না যে আপনার মত গুণীজন সময় নিয়ে এগুলা পড়ে। 😛
হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। তাঁর প্রভাব থাকলে মনে হয় খুশিই হব। হাহা।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু অনুপ্রেরিত করার জন্য। আপনার ফ্লাফির সাথে একবার দেখা হলে ভাল হত। 😀
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
"অসংখ্য ধন্যবাদ আপু অনুপ্রেরিত করার জন্য" - কথাটা 'অনুপ্রাণিত' হবে বোধহয়।
তাই তো! আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
এডিটিং উইন্ডো এক্সপায়ার করেছে বোধহয়। ফোনে দেখাচ্ছে না। কারেকশন করা গেল না। 🙁 😀 (সম্পাদিত)
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
:thumbup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
"চড়ুইগুলোর অসহায়ত্ব খুব দ্রুত গ্রাস করে নিচ্ছে আমাকে", "আগেও চড়ুই বিষয়ক পোষ্ট দিতে হয়েছে", তোমার এসব কথা জানার পর আমারও লিখে জানাতে ইচ্ছে করছে চড়ুই এর প্রতি আমার কি রকম দুর্বলতা রয়েছে। পাখি নিয়ে আমার বেশ কয়েকটি কবিতা রয়েছে, তবে বিশেষ করে চড়ুই নিয়ে লেখা একটা কবিতা আমার পাঠকমহলে ভীষণ সমাদৃত হয়েছিলো। সেটা এখানে দেবার ইচ্ছেটাকে সংবরণ করতে পারছিনা, কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা ইংরেজীতে লিখা। কিছুদিন আগে এই ব্লগে ইংরেজীতে লেখা নিষেধ, এই মর্মে পুরনো নোটিশ নতুন করে শোনানো হয়েছে বিধায় সেটা এখানে দিতে সাহস পাচ্ছিনা, তবে আমা্র কবিতাটার একটা লিঙ্ক এখানে দিলাম। সময় সুযোগ হলে পড়ে নিও,
দেখবে যে চড়ুই এর সাথে আমার মাখামাখি সেই কবে থেকে...
http://www.poemhunter.com/poem/the-sparrow-and-the-lesson/
কবিতাটা পড়লাম ভাইয়া। অসাধারণ!!!
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
ভাল লেগেছে।
একটানে পড়ে ফেলা জাতীয় ভাল লাগা।
পরে একটু ভাবার মত ভাল লাগা
আবার একটু উকি দিয়ে দেখা, যে কি পড়লাম-এর মত ভাল লাগা।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
অত্যধিক পুলকে কি বলব খুঁজে পাচ্ছি না। 🙂
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক