ইসলামের স্বর্ণযুগ – পর্ব ৫
ড. রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম পলিথেইজম ও পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণাকারী একেশ্বরবাদী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর জীবন ও কর্মের উপর। আজকের পর্বে আলোচনা করবো একেশ্বরবাদী পরবর্তি মহামানবের কথা।
উনার নাম জরথুস্ত্র। উনার জীবনকালের সঠিক সময় জানা যায়না। কোন কোন সূত্রমতে উনার জীবনকাল ছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ সালে, আবার কোন কোন সূত্রমতে উনার জীবনকাল ছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ১২০০ সালে। যদি আমরা প্রথম সময়টিকে সঠিক ধরে নেই, তাহলে একেশ্বরবাদের ইতিহাসে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর নামের পরেই আসবে জরথুস্ত্র-এর নাম।
জরথুস্ত্র (খ্রীষ্টপূর্ব ১৮০০ (অথবা ১২০০)):
জোরোয়াষ্টার (গ্রিক Ζωροάστρης, Zōroastrēs) বা জরথ্রুস্ট্রা (এভেস্টান: Zaraθuštra), অথবা জরথ্রুস্ট (ফার্সি ভাষায়: زرتشت ), ছিলেন একজন প্রাচীন পারস্যীয় ধর্ম প্রচারক এবং জরথ্রুস্ট ধর্ম মতের প্রবর্তক। জরথ্রুস্ট এমন একটি ধর্ম, যা ছিল প্রাচীন ইরানের একামেনিড (ACHAEMENID RELIGION), পার্থিয়ান সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের জাতীয় ধর্ম; যা মূলত বর্তমানে আধুনিক ইরানের জরথ্রুস্ট সম্প্রদায় এবং ভারতের পার্সী সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত হয়।
ধর্ম প্রচারক জরথ্রুস্ট সাধারনভাবে স্বীকৃত একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তার সমসাময়িক কাল সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে তেমন কিছুই জানা যায়না। অনেক পন্ডিতের মতানুসারে তিনি আনুমানিক ১২০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়ের একজন মানুষ, যিনি প্রাচীন ধর্মমত প্রবর্তকদের অন্যতম, যদিও অন্য অনেকের মতে তিনি ১৮০০ খ্রীস্ট পুর্বাব্দ হতে ৬ষ্ঠ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ মধ্যবর্তী সময়ের একজন ধর্ম প্রচারক ছিলেন।
জরাথ্রুস্টবাদ /ˌzɒroʊˈæstriənɪzəm/ (ইংরেজি: Zoroastrianism বা Zarathustraism, Mazdaism এবং Magianism) একটি অতিপ্রাচীন ইরানীয় একেশ্বরবাদী ধর্ম বা ধর্মীয় মতবাদ। উপমহাদেশে এটি পারসিক বা পার্সি ধর্ম নামেও পরিচিত।
নামের অর্থ:
জোরোয়াস্টার” নামটি মূলত দুটি আভেস্তিয়ান (Avestian) ভাষা’র শব্দ সমষ্টি, যা নিম্নোক্ত উপায়ে ব্যাখ্যা করা যায়ঃ জোরো- (“পুরাতন”) + আস্ট্রা (“উট),” অর্থ “বুড়ো উটওয়ালা”, এভাস্টিয়ান জারাই/আধুনিক পার্সী জারেড (“হলুদ” বা “সোনালী”) + উস্ট্রা (“উট”), অর্থ “হলুদ উটওয়ালা” বা সম্ভবত “সোনালী উটওয়ালা; যিনি উটের মাধ্যমে পন্য ফেরী করে সম্পদশালী হয়েছেন।” জারা (“উজ্জ্বল”; “স্বর্ণ”; “আলো”) + তুস্ট্রা/তুস্ট (“বন্ধু”; “প্রেমিক”), অর্থ “যে আলো ভালবাসে।”, জারা (“স্বর্ণ”) + ঊষা (“ভোর”), ভুল অনুমানে এভেস্টিক যা বৈদিক সংস্কৃতি অনুরূপ অর্থ “সোনালী ভোর আনয়নকারী।
ভাষাগত প্রমাণ:
আদিকাল হতে বার্থহোলোমিয়া এবং ক্রিস্টেনসেন এর মতো পন্ডিতেরা “ঐতিহ্যগত সময়” নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন মূলত ভাষাগত সমস্যা হতে যা উৎসরিত। ঐতিহ্য হতে দেখা যায় জোরোয়াস্টার ১৮ টি কবিতা লিখেন, যার সমন্বয়ে এভেস্টা’র পুরাতন খন্ড, গ্রাথাস গ্রথিত হয়েছে। “গ্রাথাস” এর ভাষা এবং রচনা সাধারণত “ইয়াসনা হাপ্তানগাইতি” (সপ্তম অনুচ্ছেদ [[ইয়াসনা|সারমন””, সপ্তমগাঁথা)’কে বলা হয় পুরাতন “এভেস্টান” বা গাথিক এভেস্টান, এবং যা এভেস্টার পরবর্তী খন্ডগুলোর ভাষা হতে অনেকটাই সেকেলে। শব্দের ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে গাথিক এভেস্টান এর সাথে বৈদিক সংস্কৃত’র ঋগবেদ প্রচুর মিল রয়েছে।
যদিও ঋগবেদের এর সংস্কৃতের সাথে গাথিক এভেস্টানের এর ভাষা কিছুটা বেশি মাত্রায় রক্ষণশীল, ধারণা করা হয় যে এভেস্টা ঋগবেদের এর কয়েক শতক পরে গ্রথিত হয়েছে। ধারণা করা হয় ঋগবেদ গ্রথিত হয়েছে ১৫০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ হতে ১২০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ এর মধ্যবর্তী সময়ে। সে অনুসারে গাথিক এভেস্টান গ্রথিত হয়েছে ১০০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ হতে ২০০ বছর সময়কালের এর মধ্যে।
ঐতিহাসিক নিদর্শন:
ঐতিহাসিক অনসন্ধানে সাধারণত গ্রাথাসে বর্ণিত সামাজিক রীতি-নীতি ব্যাখ্যার মাধ্যমে সময় নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যেহেতু “গ্রাথাস” এর ভাষা দুবোধ্য এবং ব্যাখ্যা করার জন্য উন্মুক্ত সেহেতু এর থেকে আনুমানিক সময় নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন:
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন-এর মধ্যে অমিল থাকতে পারে। কোনটি চুড়ান্তভাবে সঠিক সেটাও একটা প্রশ্ন। বর্তমান যুগটি যেহেতু বিজ্ঞানের যুগ সুতরাং প্রত্নতাত্তিক কোন বিষয় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হলে সেটিই বেশী গুরুত্ব বহন করবে। যদিও, রাশিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক ভিক্টর সারিয়ানিদি (Viktor Ivanovich Sarianidi or Victor Sarigiannides (Russian: Ви́ктор Ива́нович Сариани́ди), দেখান যে জোরোয়াস্টার আনুমানিক ২০০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়কালের এবং তা তিনি বিএমএসির (Bactria-Margiana Archaeological Complex) খনন হতে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন। (আসগারভ, ১৯৮৪)।
যরথুস্ত্রার গোড়ার দিকের জীবন:
১৬ বৎসর বয়সে যরথুস্ত্র পার্থীব জীবনের সকল মোহ ত্যাগ করেন। তিনি কেবল ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন সকল জীবের প্রতি। চার বৎসর পর ২০ বৎসর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন, পবিত্র ও বিশুদ্ধ জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে। জ্ঞানতৃষ্ণায় তাড়িত হয়ে তিনি স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরতে শুরু করেন। তিনি সফর করেন শুধু নগর নয়, বন ও পর্বতমালায়ও তিনি বিচরণ করেন। তিনি বেশীরভাগ সময়ই ধ্যান করে কাটাতে থাকেন।
অবশেষে একদিন সাবাতাম পর্বতের চূড়ায়, বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক ‘আহুরা মাজদা’-র সাথে উনার কথপোকথন (Samadhi) হয়। তারপর তিনি নবুওত প্রাপ্ত হন। এভাবে তিনি পরিণত হন ‘আহুরা মাজদা’-র দূত-এ। এই স্বর্গীয় প্রজ্ঞা লাভের পর অশুভ শক্তি ‘আহরিমান’ (যরথুস্ত্রা ধর্মের শয়তান) উনাকে আক্রমণ করে। কিন্তু শয়তানের সেই প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়।
একে একে তিনি বিভিন্ন দেবদূত (archangel)-এর সাথে কথপোকথন করেন, যা উনার মধ্যে এনে দেয় গভীর প্রজ্ঞা। যে প্রজ্ঞা তিনি লাভ করেছিলেন বিশ্বজগতের প্রভু ‘আহুরা মাজদা’-র কাছ থেকে তার সবকিছু লিপিবদ্ধ আছে পবিত্র গ্রন্থ ‘জেন্দ আভেস্তা’-য়।
Early Life
At the early age of 16, Zoroaster was indifferent of all the worldly pleasures. For the young Zoroaster, all that mattered was love and care. He rose above all the materialistic desires and displayed intense love and compassion for all living beings. Four years later i.e. at 20 years of age, Zoroaster left his home, to lead a life of purity and virtue. In his quest for knowledge, he moved from one place to another. Zoroaster explored not only cities, but also forests and mountains. He did not speak much and dominated his other senses as well. Zoroaster spent most of his time in meditation and reflections and had also moderated his diet.
The Seven Visions
On the top of Mount Sabatam, Zoroaster experienced Samadhi or communion with Ahura Mazda, the Supreme Lord of the Universe. Thereafter, Zoroaster had prophetic divine visions. Upon conversations with Ahura Mazda, Zoroaster received wisdom in the form of the seven revelations, which turned him into the Prophet of God. He, thence, became the renowned messenger of Ahura Mazda. In his spiritual path, Zoroaster had direct conversations with archangels, who helped him immensely.
Vohumanah, the archangel of good thought and the presiding Lord of domestic animals, directed Zoroaster’s soul to the supreme abode of Ahura Mazda. While coming down from the celestial abode, after receiving the divine wisdom, Zoroaster was also attacked by the evil force Ahriman, the Satan of Zoroastrianism. However, the attempt failed, as the spiritual powers of the Prophet presided over the evil.
After conquering the Satan, Zoroaster became a master of the other demons. He experienced a second vision from Vohumanah, which asked him to take great care of the animals and to protect them. A third vision came from Asha Vahishta, the archangel of righteousness, the presiding Lord of sacred fires. The vision commanded Zoroaster to protect the sacred fire and all fires. After the conversation with Khehathra Vairya, the archangel of good royalty, the presiding Lord of metals, Zoroaster was asked to take care of the metals.
Zoroaster’s fifth vision was with Spenta Armaith, the archangel of modesty, the presiding Lord of earth. Thereafter, he communicated with Hauravatat, the archangel of health, the presiding Lord of the waters. Zoroaster’s last conversation was with Ameretat, the archangel of immortality who presides over plants. These visions enabled Zoroaster to have a perfect vision of the hierarchy of Gods. The Holy Book, Zend Avesta, include the wisdom that the Prophet received from Ahura Mazda, the Supreme Lord.
আহুরা মাজদা:
Ahura Mazda – আলোকিত শক্তি/শুভ শক্তি। যরথুস্ত্রার মতে ‘আহুরা মাজদা’ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বব্যাপী, জ্ঞানময় ঈশ্বর। সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তু উনারই অধীন। তিনি আলোকিত শক্তি। আলো ও অগ্নি হলো পরিচ্ছন্ন বিস্ময়কর এমন এক বস্তু যা কখনোই দূষিত করা সম্ভব নয়। তাই তিনি আলোকে ‘আহুরা মাজদা’-র প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি একমাত্র স্রষ্টা, উনাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। তিনিই একমাত্র উপাস্য।
আহুরা-মাজদা (“the lord of life and wisdom”) ছয়টি মৌলিক গুনাগুনের অধিকারী: ১। শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা/মনন (Vahishta Manah), ২। সত্য, সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা ( Asha Vahishta ) ৩। সীমাহীন গঠনমূলক দৈবশক্তি (Khshatra Vairya), ৪। সার্বজনীন ভালোবাসা, প্রশান্তি, এবং শান্তি ( Spenta Armaity ), ৫। পরিপূর্ণতা ও নিখুঁততা ( Haurvatat ), ৬। অমরত্ব (Ameretat )
Ahura Mazda is defined by six cardinal attributes: (1) sublime wisdom ( Vahishta Manah ); (2) truth, justice, and righteousness ( Asha Vahishta ); (3) boundless constructive power ( Khshatra Vairya ); (4) universal love, tranquility, and peace ( Spenta Armaity ); (5) wholeness and perfection ( Haurvatat ); and (6) immortality ( Ameretat ). Ahura Mazda is described in the Gathas as the giver ( Datar ) and the shaper ( Tasha ). Thus He (although in the Gathas the pronoun referring to Ahura Mazda is gender neutral) has not created the world, ex nihilio, but from His own existence. The Bounteous Good Spirit ( Spenta Mainyu ) that is in Ahura Mazda unfolds His immanence in its fullness, in His creation. Thus there is a unity of existence in Zoroastriansim. The teachings of Ahura Mazda, revealed to Zarathushtra, appear in the Gathas as holy hymns or mantra ( Manthra ), meaning thought-provoking words.
ধর্মের আদি নাম:
যরথুস্ত্র-এর প্রচারিত ধর্মের আদি নাম ‘মাজদা-ইয়াস্না’। শব্দটি আভেস্তান শব্দ, যার অর্থ ‘প্রজ্ঞার উপাসনা’।
The word Mazda-Yasna is avestan and is translated as “Worship of Wisdom”.
পলিথেইজমের প্রতিবাদ:
জরথুস্ত্রের প্রচারিত ধর্ম ছিলো একেশ্বরবাদী বা একত্ববাদী। উনার সময়ে প্রচলিত ‘মিথ্রা’ ধারনা বা ধর্মমত যা কিনা বেদে ‘মিত্র’ ধারনা হিসাবে পাওয়া যায়। এই বিধান মতে ‘ইন্দ্র’ এবং ‘বরুণ’ উভয় দেবতাই সমমর্যাদায় পূজিত হতেন। প্রথানুসারে পশু (ষন্ড বা ষাড়) বলি দেওয়া হত, এবং হাওমা নামক একরকম মৃদু নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করা হতো। বেদে এই হাওমাকে সোমরস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা ছিলো যে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলিকৃত পশুর রক্তে ভূমী উর্বরতা লাভ করে। জরথুস্ত্র এই প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি কেবলই একেশ্বরের ধারনা প্রচার করেন।
প্রচলিত আছে যে, কোন এক সময়ে আর্যদের কয়েকটি গোত্র একত্রিত হয়ে ‘ইন্দ্র’ নামক এক সেনানায়কের নেতৃত্বে পরশুজন ও নিম্নমাদ্রজনের উপর আক্রমন করে তাদের অনেক পুরুষ এবং শিশুদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এবং রমনীগণকে তাদের অধীন করে নেয়। কালক্রমে আর্যধর্মে/বৈদিকধর্মে এই ইন্দ্র দেবতা হিসাবে পূজিত হতে থাকে। পরবর্তিকালে এই পার্শব-রাই পার্শিয়ান ও মাদ্র-রা মিডিয়ান নামে পরিচিতি লাভ করে। বংশানুক্রমে তারা ইন্দ্রের অত্যাচারের কাহিনী পরিবহন করে। ধারনা করা হয় যে, যরথুস্ত্র সেই নিপীড়িত-দের বংশধর ছিলেন।
যরথুস্ত্র-এর ধর্মের ডকট্রাইনসমূহ:
১। সর্বশ্রেষ্ঠ ও শ্বাশত ঈশ্বরে বিশ্বাস (Belief in Supreme and Universal God): ঈশ্বর একজনই, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বব্যাপী। উনার নাম ‘আহুরা মাজদা’ (Ahura Mazda – আলোকিত শক্তি/শুভ শক্তি)। তিনি একমাত্র স্রষ্টা, উনাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। তিনিই একমাত্র উপাস্য।
There is one universal and transcendental God, Ahura Mazda, the one Uncreated Creator to whom all worship is ultimately directed.
২। Ahura Mazda’s creation-evident as asha, truth and order-is the antithesis of chaos, evident as druj, falsehood and disorder. The resulting conflict involves the entire universe, including humanity, which has an active role to play in the conflict.
৩। তিনটি নৈতিক বিধি (three commandments): সৎ চিন্তা, সৎ কর্ম এবং সৎ কাজের দ্বারা জীবনে সক্রিয় অংশগ্রহন করতে হবে । এতে সুখ নিশ্চিত হবে। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে। জরাথুস্ত্রবাদ বৈরাগ্যবাদ (সন্ন্যাসজীবন)-কে সমর্থন করে না। (এই সৎ চিন্তা, সৎ কর্ম এবং সৎ কাজ হল three commandments)
Active participation in life through good thoughts, good words and good deeds is necessary to ensure happiness and to keep the chaos at bay. This active participation is a central element in Zoroaster’s concept of free will, and Zoroastrianism rejects all forms of monasticism.
৪। আংরা মাইনয়ু (আহরিমান): আহুর মাজদার বিপরীত অশুভ শক্তি হল আংরা মাইনয়ু (আহরিমান)। চূড়ান্তভাবে আহুরা মাজদা জয়ী হবেন। এখানে মহাবিশ্ব একটি নবীকরণ হবে এবং সময়ের সমাপ্তি ঘটবে। এরপর সকল মৃত আত্মার পুনর্জাগরণ হবে।
Ahura Mazda will ultimately prevail over evil Angra Mainyu / Ahriman (see below), at which point the universe will undergo a cosmic renovation and time will end (cf: Zoroastrian eschatology). In the final renovation, all of creation-even the souls of the dead that were initially banished to “darkness”-will be reunited in Ahura Mazda returning to life in the undead form. At the end of time a savior-figure [a Saoshyant] will bring about a final renovation of the world, and in which the dead will be revived.
৫। চূড়ান্ত যুদ্ধ, পরলোকে বিশ্বাস: অবশেষে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ হবে। পরিশেষে সত্যের/মঙ্গলের জয় হবে এবং প্রতিটি ব্যাক্তি রূপান্তরিত হবে আধ্যাত্মিক দেহ ও আত্মায়। যারা পরিণত বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন তারা নিজেদের পাবেন চল্লিশ বছর বয়স্ক সুস্থমানুষ হিসাবে, আর যারা অল্প বয়সে ইন্তকাল করিয়াছিলেন তারা নিজেদের পাবে পনের বছর বয়স্ক চির তরুণ হিসাবে। এই নবরূপে মানুষ খাদ্য-পানীয় ছাড়াই বেঁচে থাকবে। পুরো মানবজাতি কথা বলবে একটি মাত্র ভাষায়, তাদের একটিই জাতি হবে, কোন রাজনৈতিক সীমারেখা থাকবে না। সকলেই অমর হবে (Ameretat) এবং সকলের একই লক্ষ্য হবে, ঈশ্বরের মহত্বকে মহিমান্বিত করা। (পরলোকে বিশ্বাস)।
There will then be a final purgation of evil from the Earth (through a tidal wave of molten metal) and a purgation of evil from the heavens (through a cosmic battle of spiritual forces). In the end good will triumph, and each person will find himself or herself transformed into a spiritualized body and soul. Those who died as adults will be transformed into healthy adults of forty years of age, and those who died young will find themselves permanently youthful, about age fifteen. In these new spiritual bodies, humans will live without food, without hunger or thirst, and without weapons (or possibility of bodily injury). The material substance of the bodies will be so light as to cast no shadow. All humanity will speak a single language and belong to a single nation without borders. All will experience immortality (Ameretat) and will share a single purpose and goal, joining with the divine for a perpetual exaltation of God’s glory.
৬। পবিত্র আত্মা: আংরা মাইনয়ু (আহরিমান) দ্রোহী, অপরপক্ষে অনুগত স্বর্গীয় সেবক-সহচর এক পবিত্র আত্মা; তাঁর নাম স্পেনটা মাইনয়ু। স্পেনটা মাইনয়ু-এর মধ্যে দিয়ে অতিন্দ্রীয় ‘আহুরা মাজদা’ মানবজাতির মধ্যে পরিব্যাপ্ত রয়েছেন।
In Zoroastrian tradition the malevolent is represented by Angra Mainyu (also referred to as “Ahriman”), the “Destructive Principle”, while the benevolent is represented through Ahura Mazda’s Spenta Mainyu, the instrument or “Bounteous Principle” of the act of creation. It is through Spenta Mainyu that transcendental Ahura Mazda is immanent in humankind, and through which the Creator interacts with the world. According to Zoroastrian cosmology, in articulating the Ahuna Vairya formula Ahura Mazda made His ultimate triumph evident to Angra Mainyu.
As expressions and aspects of Creation, Ahura Mazda emanated the Amesha Spentas (“Bounteous Immortals”), that are each the hypostasis and representative of one aspect of that Creation. These Amesha Spenta are in turn assisted by a league of lesser principles, the Yazatas, each “Worthy of Worship” and each again a hypostasis of a moral or physical aspect of creation.
অন্যান্য বৈশিষ্ট (Other characteristics):
৭। আদি উপাদানসমূহ: পানি ও আগুন হলো ধর্মীয় বিশুদ্ধতার প্রতীক। আদি উপাদানগুলোর মধ্যে পানি হলো দ্বিতীয় সৃষ্টি এবং আগুন হলো সর্বশেষ সৃষ্টি। পানি ও আগুন দুটো ছাড়াই জীবন অচল। আবার আগুনের অরিজিন হলো পানি। মনে করা হয় আগুন হলো সেই মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক অন্তদৃষ্টি ও প্রজ্ঞা অর্জিত হয়েছে, এবং পানি হলো প্রজ্ঞার উৎস।
Water and fire: In Zoroastrianism, water (apo, aban) and fire (atar, adar) are agents of ritual purity, and the associated purification ceremonies are considered the basis of ritual life. In Zoroastrian cosmogony, water and fire are respectively the second and last primordial elements to have been created, and scripture considers fire to have its origin in the waters. Both water and fire are considered life-sustaining, and both water and fire are represented within the precinct of a fire temple. Zoroastrians usually pray in the presence of some form of fire (which can be considered evident in any source of light), and the culminating rite of the principal act of worship constitutes a “strengthening of the waters” (see Ab-Zohr). Fire is considered a medium through which spiritual insight and wisdom is gained, and water is considered the source of that wisdom.
৮। শেষ বিচার: প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর পরে শেষ বিচারের মুখোমুখি হতে হবে । বিচারের দিন মানুষের আত্মাকে একটি সেতু বা পুলের উপর দিয়ে যেতে হবে, পৃথিবীতে থাকাকালীন ঐ মানুষটি কোন পথে নিজেকে পরিচালিত করেছিলো তার উপর সব নির্ভর করবে। যিনি সৎ মানুষ ছিলেন তাকে অভিবাদন জানাবে সুরভীত এক কুমারী এবং সে দ্রুত ও নির্বিঘ্নে সেতু পেরিয়ে যাবে। আর যে দুনিয়াতে অসৎ পথে ছিলো তার দেখা মিলবে কুৎসিৎ দুর্ঘন্ধযুক্ত বৃদ্ধার সাথে, যে তাকে পা হড়কে সেতুর নীচে ফেলে দেবে এবং সে নরকে পতিত হবে।
Renovation and judgment: Zoroastrianism also includes beliefs about the renovation of the world and individual judgment (cf. general and particular judgment), including the resurrection of the dead. Individual judgment at death is by the Bridge of Judgment, which each human must cross, facing a spiritual judgment. Humans’ actions under their free will determine the outcome. One is either greeted at the bridge by a beautiful, sweet-smelling maiden or by an ugly, foul-smelling old woman. The maiden leads the dead safely across the bridge to the Amesha Spenta Good Mind, who carries the dead to paradise. The old woman leads the dead down a bridge that narrows until the departed falls off into the abyss of hell
৯। ধর্মান্তরকরণ:
Proselytizing and conversion: Zoroastrians do not proselytize and living Zoroastrianism has no missionaries. There may be historical reasons for this (amongst those in India proselytizing was/is a crime and the culprit faces expulsion), but in recent years, and with the exception of the Iranian priesthood, Zoroastrian communities are generally not supportive of conversion.
১০। বিভিন্ন ধর্মের বর-কনের মিশ্রিত বিবাহ:
Inter-faith marriages: As in many other faiths, Zoroastrians are strongly encouraged to marry others of the same faith, but this is not a requirement of the religion itself. Rather it is a creation of those in India. Some members of the Indian Zoroastrian community (the Parsis) contend that a child must have a Parsi father to be eligible for introduction into the faith, but this assertion is considered by most to be a violation of the Zoroastrian tenets of gender equality, and may be a remnant of an old Indian legal definition (since overruled) of ‘Parsi’. This issue is a matter of great debate within the Parsi community, but with the increasingly global nature of modern society and the dwindling number of Zoroastrians, such opinions are less vociferous than they were previously.
১১। জীবন, মৃত্যু ও পুনর্জন্মলাভ: জীবন হলো ক্ষণস্থায়ী জীবন হল ভালোমন্দের মধ্যে নিরন্তর এক যুদ্ধক্ষেত্র। , এখানে কর্তব্য হলো সত্য ও মিথ্যার যুদ্ধে একজন যোদ্ধা হিসাবে যুদ্ধ করা। জন্মের পূর্বেই আত্মা ছিলো, যা ‘আহুরা মাজদা’ মহাবিশ্ব সৃষ্টির সাথে সাথেই সৃষ্টি করেছিলেন। যরথুস্ত্রবাদ এই পৃথিবীতে পুনর্জন্ম-এ বিশ্বাস করেনা। মহাবিশ্বের নবীকরণের পূর্বে মৃত ব্যক্তির কোন পুনর্জন্ম হবে না, এমন বিশ্বাসই করে যরথুস্ত্রবাদ।
Life, death and reincarnation: In Zoroastrian tradition, life is a temporary state in which a mortal is expected to actively participate in the continuing battle between truth and falsehood. Prior to being born, the soul (urvan) of an individual is still united with its fravashi, of which there are as very many, and which have existed since Mazda created the universe. During life, the fravashi acts as a guardian and protector. On the fourth day after death, the soul is reunited with its fravashi, and in which the experiences of life in the material world are collected for the continuing battle in the spiritual world. In general, Zoroastrianism does not have a notion of reincarnation, at least not until the final renovation of the world.
১২। মৃতদেহের সৎকার: : যরথুস্ত্রবাদ অনুযায়ী মৃতদেহের ক্ষয় হওয়া উচিৎ। মৃতদেহ যাতে ক্ষয় হয়ে মিলিয়ে যায় সেইভাবে সৎকার করতে হবে। জরথুশত্রবাদীদের একটি ধর্মীয় কৃত্য সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে। সেটি হল শেষকৃত্য। যরথুস্ত্র বিশ্বাস করতেন, চারটি উপাদানকে দুষিত করা উচিত নয়। এই চারটি উপাদান হল আগুন মাটি বাতাস ও পানি। কাজেই কোনও মৃত জরথুশত্রবাদীকে মাটিতে সমাহিত করা হয় না কিংবা আগুনে পোড়ানোও হয় না। তার বদলে বিশেষ ভাবে নির্মিত স্তম্ভে মৃতদেহটি ফেলে রাখে। সে স্তম্ভটিকে বলে নির্জনতার স্তম্ভ বা towers of silence । এখানে দ্রুত শকুনেরা মড়ার মাংসল অংশ খেয়ে ফেলে। সূর্যালোকে শুকিয়ে যায় হাড়। তখন হাড়গুলো জড়ো করে একটি হাড়দানিতে (Ossuary) রাখা হয়।
Disposal of the dead: In Zoroastrian scripture and tradition, a corpse is a host for decay, i.e. of druj. Consequently, scripture enjoins the “safe” disposal of the dead in a manner such that a corpse does not pollute the “good” creation. These injunctions are the doctrinal basis of the fast-fading traditional practice of ritual exposure, most commonly identified with the so-called “Towers of Silence” for which there is no standard technical term in either scripture or tradition. The practice of ritual exposure is only practised by Zoroastrian communities of the Indian subcontinent, where it is not illegal, but where alternative disposal methods are desperately sought after diclofenac poisoning has led to the virtual extinction of scavenger birds. Other Zoroastrian communities either cremate their dead, or bury them in graves that are cased with lime mortar.
১৩। দাসপ্রথা ও শ্রেণীপ্রথা বিরোধিতা: জরথুস্ত্র দাসপ্রথাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। তিনি প্রচলিত শ্রেণীপ্রথারও বিরোধিতা করেছিলেন।
In Zarathustrian’s philosophy and thought, there is no mention of slavery and dependency which is the inhumane trait of other religions.
১৪। সর্বজীবে দয়া: তিনি পশুর প্রতি কোন প্রকার হিংস্রতাকে প্রচন্ড অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন।
১৫। নর-নারীর সমতা: জরথুস্ত্রা নর ও নারীর সমতা বিধানের কথা বলতেন।
Equivalence of men and women which is mentioned in the Gathas (Zarathustrian) hymns
১৬। মাথা ঢেকে রাখা: যরথুস্ত্র মতবাদে মাথা ঢেকে রাখার বিধান আছে।
১৭। অলসতা বর্জন করতে হবে। অপরের শ্রমলদ্ধ ফলাফলের উপর অধিকার ফলানোকে তিনি নিরুৎসাহিত করেন। তিনি বলতেন সকলকে স্ব স্ব শ্রমলদ্ধ ফলের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।
Zarathustrian philosophy is struggle to thrive and condemning laziness which is frequently mentioned in the Gathas. Sluggishness and subsisting on other’s endeavors and robbing others properties are strongly condemned in the Zarathustrian philosophy and whoever is involved in such activities is considered oppressive. It is incumbent upon everybody to stand against such oppressors, fight against them and rescue the oppressed people form the oppressors. Everybody is supposed to depend upon his own endeavors and has to reap whatever he himself has sown.
জরাথ্রুস্টীয়বাদীগণকে প্রধানত অগ্নি উপাসক নামে সংজ্ঞায়িত করা হলেও অনেকের মতে জরথ্রুস্ত্রিয়বাদীদের অগ্নি উপাসনার ধারণাটি মূলত জরাথ্রুস্ট্রবাদ-বিরোধী বিতর্ক থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, অগ্নিকে জরাথ্রুস্ট্র ধর্মে শুদ্ধতার প্রতিনিধি এবং ন্যায় ও সত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এমনকি তাদের ফায়ার টেম্পল বা অগ্নি মন্দিরেও (জরাথ্রুস্ত্রীয় পরিভাষাটি আরও বিস্তৃত যার সরল অর্থ হল হাউজ অব ফায়ার বা আগুনের ঘর) এই একই ধারণা পোষণ করা হয়। বর্তমানকালে এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে যে অগ্নি প্রজ্বলনের কারণ হল তা সর্বদা যে কোন ঊর্ধ্বমুখী বস্তুবিশেষকে পুড়িয়ে ফেলে এবং তা কখনোয় দূষিত হয় না। আবার অনেকে মনে করেন একেশ্বরবাদ থেকে সরে এসে ‘অগ্নি’-র উপাসনা পরবর্তিকালে পুরোহিতরা চালু করেছিলো। তা সত্ত্বেও, সাদেহ এবং চাহারশানবে সুরি হল বৃহত্তর ইরানের সর্বত্র উদযাপিত দুটি অগ্নি-সম্পর্কিত উৎসব এবং এই দুটি উৎসবে সেই সময়ের রীতিতে ফিরে যাওয়া হয় যে সময়টিতে জরাথ্রুস্ট্রীয় ধর্ম অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ধর্ম ছিল।
জরাথ্রুস্টবাদে, পানি (আপো, আবান) এবং আগুন (আতার, আযার) হল ধর্মীয় পবিত্রতার প্রতিনিধি এবং এ-সম্পর্কিত শুদ্ধিকরণ আচার-অনুষ্ঠানসমূহকে ধর্মীয় জীবনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জরাথ্রুস্টীয় সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে, পানি এবং আগুন হল যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ সৃষ্ট প্রভাবশালী পদার্থ, এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে পানিকে সৃষ্টিগতভাবে আগুনের মূল উৎস মনে করা হয়েছে। আগুন এবং পানিকে জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়, এবং আগুন ও পানি উভয়কেই ফায়ার টেম্পলের চারপাশে প্রতীকীরুপে তুলে ধরা হয়। জরাথ্রুস্টবাদীগণ বিভিন্নভাবে প্রজ্বলিত আগুনের (যাকে যে কোন ধরনের আলোতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়) উপস্থিতিতে উপাসনা করে থাকেন, এবং উপাসনার মৌলিক কর্মের চূড়ান্ত আচারটি “জলরাশির শক্তি”রূপে সংযুক্ত হয়। আগুনকে একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জিত হয়, এবং পানিকে সেই জ্ঞানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আভেস্তা:
জেন্দ-আবেস্তা গ্রন্থটি জরথুস্ত্র রচিত গাথার সংকলিত রুপ। জেন্দ-আবেস্তা অর্থ জীবিত বাক্য (জীবিত বাক্য) (The Living Word)। এটি বস্তুত একটি আইনপুস্তক বা বিধিমালা। পারসিকদের মতে – একদিন পাহাড়ের উপর উপাসনায়রত ছিলেন জরথুস্ত্র। তখন আকাশে চমকাচ্ছিল বজ্রবিদ্যুৎ। এমন সময় তিনি ঈশ্বর ‘আহুর মাজদা’-র কাছ থেকে পুস্তকটি লাভ করেন। (এর সাথে মিল রয়েছে, ইহুদি ধর্ম প্রবর্তক মোসেস বা মুসা নবীর ঘটনার মতো, যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে টেন কমান্ডমেন্টস এবং তৌরাত লাভ করেছিলেন সিনাই পর্বতে)
এ গ্রন্থের মূল কথা হল – বিশ্ব জগতের সব কিছু ঈশ্বরের নিয়ম বা অরত্ অনুযায়ী সৃষ্ট, চালিত এবং নিয়ন্ত্রিত। ঈশ্বর মানুষকে বিবেক সম্পূর্ণ করেছেন। বিবেকের মাধ্যমে মানুষের বেছে নিতে হবে “স্পেন্ত মইনু” বা শুদ্ধ শক্তি অথবা “আংগ মইনু” বা অসৎ শক্তি এই দুয়ের যে কোন একটা।
জানা যায় – খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১ অব্দে গ্রীকবীর আলেকজেন্ডার পারস্য জয়ের পর বিস্তর মুল্যবান গ্রন্থাদি ধ্বংস করেন।
ইতিহাস জানাচ্ছে – পারস্য সম্রাট আদর্শের বাবকানের শাসনামলে (২২৮-২৪১ খ্রিষ্টাব্দে ) জরথুস্ত্র উপদেশাবলী বা গাঁথা একত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। সম্রাটের সহযোগিতায় ফের পারস্য জরথুস্ত্র ধর্মের পুনরায় জাগরন ঘটে। এ সময় এ ধর্মের চল্লিস হাজার পুরহিত “মগি” বা মাগি সম্মিলিত হন পারস্যর প্রাচীন রাজধানী পার্সিপলিস নগরে। তাদের ভিতর সাতজন প্রতিনিধি গঠন করে সৃষ্টি করা হয় একটি ধর্ম সমিতি। এদের প্রধান ছিলেন “মগি আরদাবিরফ”, তিনি সম্রাট আদরশেরের আদেশে জরথুস্ত্র উপদেশ বা বানী একত্রে করে প্রনয়ন করেন বর্তমানের দুর্লভ “জেন্দআবেস্তা” গ্রন্থ।
যরথুস্ত্রইজমে সৃষ্টিতত্ত্ব:
যরথুস্ত্রইজমে বলা হয় যে, সৃষ্টির শুরুতে ছিলেন কেবল ‘আহুরা মাজদা’ (প্রজ্ঞাময় প্রভু), যিনি বসবাস করতেন অসীম আলোর জগতে। আর ছিলো অমঙ্গল শক্তি ‘আহরিমান’ সে বসবাস করতো চরম অন্ধকার জগতে। উল্লেখ্য জগত দুইটির মধ্যে ছিলো শূন্যগর্ভতা।
একদা, আহুরা মাজদা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি সৃষ্টি করবেন। প্রথম তিনি আকাশ সৃষ্টি করলেন, দ্বিতীয়ত তিনি সৃষ্টি করলেন বিশুদ্ধ পানি, তৃতীয়ত তিনি সৃষ্টি করলেন পৃথিবী, শুরুতে তা ছিলো সমতল ও গোলাকৃতি এবং সেখানে কোন পর্বত বা উপত্যকা ছিলো না, চতুর্থত তিনি সৃষ্টি করলেন উদ্ভিদ (তাদের কোন কাঁটা ছিলো না), পঞ্চমত তিনি সৃষ্টি করলেন ছোট বড় প্রাণীসমুহ।
তারপর ষষ্ঠত তিনি সৃষ্টি করলেন প্রথম মানব, তাঁর নাম গায়োমার্দ (Gayomard), তিনি ছিলেন উজ্জ্বল দীর্ঘকায় ও সুদর্শন। তিনি আরো সৃষ্টি করলেন আগুন। প্রজ্ঞাময় প্রভু (আহুরা মাজদা) আগুনকে আদেশ দিলেন খাদ্য তৈরী ও শৈত্য দূর করে মানুষের সেবা করতে।
অশুভ শক্তি আহরিমান অন্ধকার জগৎ থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো অভূতপূর্ব অপরূপ সৃষ্টজগত। প্রজ্ঞাময় প্রভু (আহুরা মাজদা) আহরিমান-কে ডেকে বললেন, “অশুভ শক্তি! আমার সৃষ্টদেরকে সাহায্য করো এবং তাদের মহিমাকীর্তন করো যেন তুমি অমর হও।” আহরিমান খেকিয়ে উঠে উত্তর দিলো, “কেন আমি আপনার সৃষ্টদেরকে সাহায্য করবো? কেন আমি তাদের মহিমাকীর্তন করবো? আমি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন! আমি আপনাকে আর আপনার সৃষ্ট জগতকে ধ্বংস করবো।” তারপর সে ফিরে গেলো তার অন্ধকার জগতে, এবং সেখানে গিয়ে তৈরী করলো পিশাচদের (demons), ডাইনিদের এবং দানবদের (monsters), এই উদ্দেশ্যে যে তারা অসীম আলোর জগতকে আক্রমণ করবে।
প্রজ্ঞাময় প্রভু সর্বজ্ঞ। তিনি জানতেন আহরিমান কি করছে, তিনি এও জানতেন যে অন্ধকার জগতের সাথে একটা বড় যুদ্ধ হবে। সুতরাং তিনি গঠন করলেন ছয়জন দেবদূত (spirit): ‘পবিত্র অমর সকল (The Holy Immortals)’ অসীম অন্ধকারত্ব থেকে তাঁর সৃষ্ট জগত-কে রক্ষা করার উদ্দেশ্য। উনাদের নাম: Khashathra, Haurvatat, Spenta Armaiti, Ameretat, Vohu Manah, Asha Vahishta। উনাদের বিভিন্নজনকে সৃষ্ট জগতের বিভিন্ন অংশকে রক্ষার দায়িত্ব দিলেন। এবং পরিশেষে মানবজাতিকে রক্ষার দায়িত্ব ‘আহুরা মাজদা’ নিজেই নিলেন।
আহরিমান এই ‘পবিত্র অমর’-দের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “‘আহুরা মাজদা’! আমি আপনাকে আর আপনার সৃষ্ট জগতকে ধ্বংস করবো। আপনি কখনোই জয়ী হবেন না”। এরপর আহরিমান ও তার পিশাচরা ঈশ্বরের সৃষ্টদেরকে একের পর এক আক্রমণ করতে শুরু করলো। তারা পানি ধ্বংস করতে চাইলো, কিন্তু ধ্বংস করতে পারলো না, শুধু তার মধ্যে তিক্ততা এনে দিলো। তারা পৃথিবী ধ্বংস করতে চাইলো, কিন্তু পারলো না, কেবল সেখানে পর্বত ও উপত্যকা উদ্ভুত হলো। এরপর তারা উদ্ভিদ-দের নির্জীব করতে চাইলো, কিন্তু তা পারলো না, কেবল সেখানে কাটার উদ্ভব হলো। অশুভ শক্তি আহরিমান ও তার পিশাচরা সুখের বিপরীতে দুঃখ তৈরী করলো, আনন্দের বিপরীতে যন্ত্রণা তৈরী করলো, বিশুদ্ধতার বিপরীতে দূষণ এবং জীবনের বিপরীতে মৃত্যু তৈরী করলো।
আহরিমান ভাবলো যে, আলোক জগতের বিরূদ্ধে সে জয়লাভ করেছে, সে মানবজাতিকে ধ্বংস করেছে, কিন্তু সে আসলে অজ্ঞ ও মূর্খ। যখন প্রথম মানব গায়ামার্দ (Gayomard) মারা যান, তারপর তাঁর অস্থি থেকে একটি রেউচিনি উদ্ভিদের জন্ম হয়। তার চল্লিশ বছর পর সেখান থেকে একজন মানব ও একজন মানবীর জন্ম হয়, তাদের নাম ছিলো মাশিয়া (Mashya) ও মাশিয়ানা (Mashyana)। তাঁরা দুজন প্রজ্ঞাময় প্রভু (আহুরা মাজদা)-র কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে তাঁদের সন্তান-সন্ততিরা অশুভ শক্তির সাথে ‘প্রজ্ঞাময় প্রভু’-র যুদ্ধে সাহায্য করবে। এরপর তাঁরা ১৫ জোড়া যমজ সন্তানের জন্ম দেন। তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি race-এ পরিণত হয়। তারপর প্রতিটি ব্যাক্তি সৎ চিন্তা, সৎ কর্ম ও সৎ বাক্য নীতি অনুসরন করতে থাকে। তারা প্রত্যেকেই প্রজ্ঞাময় প্রভু (আহুরা মাজদা)-র অনুগত হলেন আহুরা মাজদা-র সাথে আহরিমান-এর যুদ্ধে।
(চলবে)
(এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব)
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখখদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।