ইসলামের স্বর্ণযুগ – পর্ব ৩
———- ড. রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
অতি প্রাচীন কালে মানুষের ধর্ম কি ছিলো? তারা কি একেশ্বরবাদী ছিলেন না পলিথেইস্ট ছিলেন? যদি একেশ্বরবাদী থেকে থাকেন তা হলে পলিথেইজম শুরু হলো কবে থেকে? আবার যদি পলিথেইস্ট থেকে থাকে তাহলে একেশ্বরবাদী হলেন কবে থেকে? এসব প্রশ্ন মানব মনে জেগে ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু এসব প্রশ্নের জবাব পেতে হলে তো ইতিহাস পড়তে হবে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, ইতিহাস লেখা শুরু হলে কবে? এটা খুব সহজেই বোঝা যায় যে, ইতিহাস লিখতে হলে অক্ষর জ্ঞান থাকতে হবে, সুতরাং ভাষার লেখ্যরূপ চালু হওয়ার আগে যে ইতিহাস লেখা সম্ভব ছিলো না এটাই নিশ্চিত। যতদূর জানা যায় যে পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার বয়স ১২০০০ বছরের বেশি নয়। তার মানে ভাষার লেখ্যরূপের বয়সও ১২০০০ বছরের বেশী হতে পারেনা। কিন্তু এই পৃথিবীতে হোমো স্যাপিয়েন্স-এর আগমণ দুইলক্ষ বছর আগে। আর মানব মনে স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্মিকতার জন্ম হয় ৫০০০০ বছর আগে (বলা হয় যে আধ্যাত্মিকতার জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই সত্যিকারের মানবের জন্ম হয়, এর আগে মানব অনেকটা পশুস্তরেই ছিলো)। তাহলে ১২০০০ বছরের আগে যা ঘটেছিলো তা জানা যাবে কি করে? এখানেই আসে হিস্ট্রী আর প্রি-হিষ্ট্রী ব্যাপারটি। ইতিহাস লেখার আগের জমানাটাকে বলা হয় প্রি-হিষ্ট্রী বা প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
কি ছিলো বা কেমন ছিলো প্রাগৈতিহাসিক যুগে সেই সম্পর্কে আবার দুই রকম বর্ণনা পাওয়া যায় – ধর্মীয় ইতিহাস বলে একরকম আর অধর্মীয় ইতিহাস বলে আরেক রকম। যেমন আব্রাহামিক রিলিজিওন বলে যে আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) ছিলেন একেশ্বরবাদী। তাহলে পৌত্তলিকতা বা পলিথেইজমের জন্ম হয় পরে। আবার অধর্ম ইতিহাস বলে আদিতে মানব সমাজ ছিলো পলিথেইস্ট পরবর্তিতে একেশ্বরবাদের উদ্ভব হয়। তবে এই অধর্ম ইতিহাস আবার নির্ভর করে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও তৎসংক্রান্ত গবেষণার ফলাফলের উপরে। সুতরাং অধর্ম ইতিহাস ধ্রুব কিছু নয়, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের সাথে সাথে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। আপাতত যা বলা হচ্ছে তা এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে।
নিওলিথিক বিপ্লব:
প্রথমে বিপ্লব শব্দটির অর্থ পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বিপ্লবের ফলে পরিবর্তন ঘটে, তবে যে কোন পরিবর্তনই বিপ্লব হবে না। যে পরিবর্তনে সমাজ কাঠামোটাই বদলে যাবে সেটাই বিপ্লব। মানুষ একসময় বোহেমিয়ান ছিলো, তারপর একসময় স্থায়ীভাবে কোন এক জায়গায় বসবাস করতে শুরু করলো। নিওলিথিক বিপ্লবকে কৃষি বিপ্লবও বলা হয়। হ্যাঁ কৃষির সাথেই এর মূল সম্পর্ক – মানুষ যখন জমি কর্ষন করে নিজের খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে শিখলো তখন মানুষ ঐ জমির পাশেই নিজের স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তুললো – এটাই নিওলিথিক বিপ্লব।
ধারনা করা হয় যে, ঘটনাটা প্রথম ঘটেছিলো ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেষে একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি উর্বর ভূমিতে (Fertile Crescent)। এর অন্তর্ভুক্ত বর্তমান মিশরের পূবের একাংশ (এর দুই ধারে রয়েছে নীল নদী), ফোয়েনিসিয়া (Phoenicia), আসিরিয়া (Assyria) (ফোয়েনিসিয়া, আসিরিয়া বর্তমানে সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত), মেসোপটিমিয়া (বর্তমান ইরাকের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া তা আরো ঘটেছিলো নিউ গিনির কুক সোয়াম্প এলাকায়, বর্তমান চীনের Yangtze এবং Yellow River basins, Southeast Asian peninsula, পাকিস্তানের মেহেরগড় ও সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের কতক অঞ্চল। আরও কিছুকাল পরে মধ্য মেক্সিকো, আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল, উত্তর আমেরিকার পূর্বদিক, ইত্যাদি।
এই স্থায়ী বসবাসের ফলে সমাজ জীবনও একটি স্থায়ী রূপ পাওয়া শুরু করে। জাতির উদ্ভব ও জাতীয় সংস্কৃতিও সৃষ্টি হতে শুরু করে। আমার এই প্রবন্ধে আমি জাতীয় সংস্কৃতির বিস্তারিত আলোচনায় যাবোনা, কেবল তার ধর্মীয় দিকটি নিয়েই আলোচনা করবো। একথা বালাই বাহুল্য যে, ধর্ম জাতীয় সংস্কৃতির একটি অংশ, এবং উল্টোভাবে ধর্ম জাতীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।
পলিথেইস্ট ও মূর্তিপূজারী ধর্ম/মিথ:
অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। আর তার মধ্যে রহস্যময় একটি সত্তা আমরা – ‘মানুষ’। এই দু’য়ের সম্পর্কও কম রহস্যময় নয়। মহাবিশ্বের বিবর্তন বা বিকাশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল মানুষ, সেই মানুষই আবার গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করছে তার চারপাশের মহাবিশ্বটিকে। কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়? এই সব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে মানুষের মস্তিস্ক থেকে হৃদয় আর হৃদয় থেকে মস্তিস্ক পর্যন্ত।
আদি জমানায় মানুষের চিরন্তন জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তর দিত মিথ। প্রতিটি প্রাচীন জাতিরই কোন না কোন মিথ রয়েছে। সঙ্গতভাবেই, তদানিন্তন ধর্মবিশ্বাসগুলোও ছিলো মিথ নির্ভর। এবার কিছু জাতির প্রাচীন ধর্মগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
শুরু করছি আমাদের বাংলাদেশকে নিয়েই।
বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস ও ধর্ম:
হযরত নূহ (আঃ)-এর প্রোপৌত্র বঙ্গ-এর নামানুসারেই আমাদের দেশের নাম বঙ্গ হয়েছে বলে একটি সূত্রমতে পাওয়া যায়। সেই বঙ্গ-এরই বংশধর আমরা। আরেকটি সূত্রমতে বঙ্গ শব্দের অর্থ সূর্য-দেবতা। রাজা বঙ্গ-ই ছিলেন বঙ্গ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, তাই তাঁর নামানুসারেই দেশের নাম হয় বঙ্গ। আজ থেকে বিশ হাজার বছর পূর্বের প্রস্তর যুগের নিদর্শন বাংলায় পাওয়া গিয়েছে। প্রায় চারহাজার বছরের পুরনো তাম্রযুগের ধ্বংসাবশেষ বাংলায় পাওয়া গিয়েছে । আমাদের ভূমির মূল বসতি স্থাপনকারীরা অনার্য ছিলেন। আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা অস্ট্রিক বা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষায় (ইদানিংকার কোল, ভীল, সান্তাল, শাবারা ইত্যাদি-র সাথে মিল থাকতে পারে) কথা বলতেন বলে ধারনা করা হয়।
আর্য সাম্রাজ্যের বাহিরে অবস্থিত এই দেশের মানুষ (জাতি)-কে, আর্য কর্তৃক রচিত গ্রন্থ ঋগবেদে ‘শত্রু” আখ্যা দেয়া হয়েছে (Dasa is a term that initially had the connotation of “enemy,” as relating to tribes identified as the enemies of the Indo-Aryan tribes in the Rig Veda) ঋগবেদে দস্যু শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থ এই দাড়ালো যে, আর্যরা আমাদের শত্রু জ্ঞান করতো।
মহাভারতে (৬।৯) অঙ্গ, বঙ্গ ও কলিঙ্গ রাজ্য তিনটাকে ভারতবর্ষ বা প্রাচীন ভারতের নিকটবর্তী রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১২ বছর তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে অর্জুন বঙ্গ ও কলিঙ্গের সকল পবিত্র স্থানে এসেছিলেন। মহাভারতের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, পান্ডব ও কৌরবদের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রে বঙ্গ-বাসীরা দুর্যোধনের পক্ষে (পান্ডবদের বিপক্ষে) অংশ নিয়েছিলো। Vangas sided with Duryodhana in the Kurukshetra War (8:17) along with the Kalingas. They are mentioned as part of the Kaurava army at (7:158). Many foremost of combatants skilled in elephant-fight, belonging to the Easterners। বঙ্গ-এর হস্তিবাহিনী ছিলো দুর্ধর্ষ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দশ হাজার সৈন্যের এক পর্বতসম বাহিনী নিয়ে বঙ্গ বীরেরা দুর্যোধনের পিছনে অবস্থান নিয়েছিলো। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় বঙ্গের রাজা ছিলেন ভগদত্ত।
খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে বাংলার বেশিরভাগ এলাকাই শক্তিশালী রাজ্য মগধের অংশ ছিল । মগধের কথা রামায়ণ এবং মহাভারতে পাওয়া যায়। গৌতম বুদ্ধের (খ্রীষ্টপূর্ব ৫৬৩ থেকে ৪৮০ পর্যন্ত) সময়ে এটি ছিল ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের মধ্যে একটি । মগধের ক্ষমতা বাড়ে বিম্বিসারের (রাজত্বকাল ৫৪৪-৪৯১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) এবং তার ছেলে অজাতশত্রুর (রাজত্বকাল ৪৯১-৪৬০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) আমলে । বিহার এবং বাংলার অধিকাংশ জায়গাই মগধের ভিতরে ছিল তবে বাইরেও অনেক জায়গা ছিলো। গৌতম বুদ্ধ-এর ভাষা ছিলো মগধি প্রাকৃত (মগধি প্রাকৃত ও পালি ভাষা খুব কাছাকাছি)। তিনি আর্য ছিলেন কি অনার্য ছিলেন এই নিয়েও প্রচুর বিতর্ক রয়েছে (Johannes Bronkhorst’s book “Greater Magadha” was a very fine example of a revisionist history. It argued that the Aryan culture had not penetrated to Buddha’s region of birth and life (Magadha) and hence did not have a caste system and a very insignificant population of Brahmins)। তবে তাঁর প্রচারিত দর্শন যে অবৈদিক (heterodox) ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই।
দার্শনিক এরিস্টটলের শিষ্য আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী ৩২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয়। রাজ্যপিপাসু আলেকজান্ডার জানতেন যে দক্ষিণ এশিয়ার একেবারে পূর্বদিকে এক মহাপরাক্রমশালী জাতি আছে যার হস্তিবাহিনী ভয়াবহ। এই জাতি ইতিমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শক্তিশালী সমুদ্রভ্রমণকারী জাতি হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। সমুদ্রপথে দূরবর্তি জাভা, সুমাত্রা, শাম ইত্যাদি দেশের সাথে তারা বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেছে। মহাভামসা ইতিহাস গ্রন্থ অনুযায়ী এই দেশের (বঙ্গদেশ) রাজপুত্র বিজয় সিংহ (খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৪) লঙ্কা জয় করে তার নাম সিংহল দেন। এছাড়া তারা মালয় দ্বীপপুঞ্জ ও শামদেশেও তাদের নিজস্ব উপনিবেশ স্থাপন করে। যুদ্ধনেশাগ্রস্ত আলেকজান্ডার-কে এই রাজ্য জয়ের নেশায় পয়ে বসলো। তিনি হুকুম দিলেন তাঁর বাহিনীকে পুর্বমুখে ঐ দেশের দিকে অগ্রসর হতে। কিন্তু এতটা পথ জয়ী হয়ে আসা আলেকজান্ড্রীয় সেনাবাহিনী এবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই তারা অজুহাত দেখাতে থাকে যে তারা রণক্লান্ত এবং আর সামনে তারা যেতে চায়না। আলেকজান্ডার অনড় হয়ে বসলে তার বাহিনী বিয়াসের কাছে বিদ্রোহ ঘোষনা করে এবং আরও পূর্বদিকে যেতে অস্বীকার করে। গ্রীক পরিব্রাজক মেগাস্থানিস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডিকা’-য় উল্লেখ করেছেন, এই জাতির নাম গঙ্গাঋদ্ধি (Gangaridae)। যার অর্থ “Wealth of the Ganges”। দিওদোরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus) উল্লেখ করেছেন, ভারত উপমহাদেশের সবচাইতে শক্তিশালী জাতি ছিলো গঙ্গাঋদ্ধি জাতি, এর রাজা বিশ হাজার অশ্ব, চার হাজার হস্তি, দুই হাজার রথ ও দুই লক্ষ পদাতিক সৈন্যের এক শৌর্যপূর্ণ বাহিনী নিয়ে আলেকজান্ডারের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হন। আলেকজান্ডার তখন তাঁর সহকারী কইনাস (Coenus) এর সাথে দেখা করার পরে ঠিক করেন ফিরে যাওয়াই ভাল। গ্রীক পলিম্যাথ টলেমী (৯০-১৬৮ খ্রীষ্টাব্দ) লিখেছেন গঙ্গারিডী জাতি গঙ্গা নদীর মোহনার পাঁচটি মুখের পুরোটাতেই রাজত্ব করতো। অর্থাৎ সেই রাজ্যের অবস্থান যেখানে ছিলো সেটাই আজকের বাংলা। অনুমান করা হয় যে এই বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলো বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার ‘কোটালিপাড়া’-য়।বাংলাদেশের নরসিংদির উয়ারি-বটেশ্বর প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, গঙ্গাঋদ্ধি সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ বলে অনেকে মনে করেন। গঙ্গারিডী রাজ্য বাংলারই প্রাচীন রূপ, গঙ্গাঋদ্ধি জাতি আমাদেরই পূর্বপুরুষগণ।
(Gangaridai (Greek: Γανγαρίδαι Gangaridae; Bengali: গঙ্গাঋদ্ধি Gônggarriddhi, meaning “Wealth of the Ganges” ; Sanskrit: Ganga Rashtra,meaning “Nation on the River Ganges”) was an ancient sate found around 300 BC where the Bengal region lies today (present-dayBangladesh and the West Bengal state in India). It was described by the Greek traveller Megasthenes in his work Indica. Greek and Latin historians suggested that Alexander the Great withdrew from India, anticipating the valiant joint counterattack of the mighty Gangaridai and Prasii (Nanda) Empires, the latter located in central Bihar. The capital of the Gangaridai was situated at Kotalipara in present-dayGopalganj District, Bangladesh)
(Revolt of the Alexandre’s army: East of Porus’ kingdom, near the Ganges River, were the Nanda Empire of Magadha and further east the Gangaridai Empire (of modern day Bangladesh). Fearing the prospect of facing other large armies and exhausted by years of campaigning, Alexander’s army mutinied at the Hyphasis River (Beas), refusing to march farther east. This river thus marks the easternmost extent of Alexander’s conquests.[123]
As for the Macedonians, however, their struggle with Porus blunted their courage and stayed their further advance into India. For having had all they could do to repulse an enemy who mustered only twenty thousand infantry and two thousand horse, they violently opposed Alexander when he insisted on crossing the river Ganges also, the width of which, as they learned, was thirty-two furlongs, its depth a hundred fathoms, while its banks on the further side were covered with multitudes of men-at-arms and horsemen and elephants. For they were told that the kings of the Ganderites and Praesii were awaiting them with eighty thousand horsemen, two hundred thousand footmen, eight thousand chariots, and six thousand war elephant : Plutarch 1919, LXII, Plutarch (1919). Perrin, Bernadotte, ed. Plutarch, Alexander. Perseus Project. Retrieved6 December 2011)
পৃথিবীর প্রাচীনতম দর্শন বাংলার সন্তান মহাজ্ঞানী কপিল প্রবর্তিত সাংখ্য দর্শন। এই সাংখ্য দর্শন ষম্পর্কে উল্লেখ করেছেন উপমহাদেশের আরেক তারকা কৌটিল্য (350 – 275 BCE) তাঁর বিশ্বখ্যাত অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে। (Anvikshaki comprises the Philosophy of Sankhya, Yoga, and Lokayata (Atheism ?). (Kautilya’s Arthashastra, page 9 ))। সাংখ্য দর্শনের উপর ভিত্তি করেই বৌদ্ধ দর্শন। গৌতম বুদ্ধের সময়েই বাংলার মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলো, এবং স্বয়ং বুদ্ধও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তবে সাংখ্য দর্শন ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তনের পূর্বে বাংলার জনগণ কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন সেটা সম্ভবত সুস্পষ্ট নয়। তবে বাংলার জনগণ যে বৈদিক ধর্মে বিশ্বাস করতো না এটা সুস্পষ্ট।
কোনো কোনো ঐতিহাসিক দ্রাবিড় জাতিকে বাংলার আদি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ‘আর্যোপনিবেশের পূর্বে যে প্রাচীন জাতি ভূমধ্যসাগর হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত স্বীয় অধিকার বিস্তার করেছিল তাহারাই বোধ হয় ঋগ্বেদের দস্যু এবং তাহারাই ঐতরেয় আরণ্যকে বিজেতৃগণ কর্তৃক পক্ষী নামে অভিহিত হইয়াছে। এই প্রাচীন জাতিই বংগ মগধের আদিম অধিবাসী।’ ভারতবর্ষে দ্রাবিড়দের আগমন ঘটেছে সুপ্রাচীনকালে, প্রাগৈতিহাসিককালে এবং তারা এসেছে সেমেটিকদের আদি আবাসভূমি পশ্চিম এশিয়া থেকে। অর্থাৎ ব্যাবিলন বা মেসোপটেমিয়াই ছিলো দ্রাবিড়দের উৎপত্তিস্থল। সেইদিক বিবেচনা করলে বাংলার মানুষের আদি ধর্ম ব্যাবিলন বা মেসোপটেমিয়ার ধর্মই হওয়ার কথা। সেই প্রাচীন কালে মানব চলাচলের একটি মানচিত্রে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে মানবের এক অংশের আগমণ fertile crescent থেকে এবং আরেকটি অংশের আগমণ চীনের পীত নদীর অববাহিকা থেকে। তাই যদি হয়ে থাকে তবে বাংলার প্রাচীন ধর্ম ব্যাবিলনীয় ধর্ম ও প্রাচীন চীনের ধর্মের সংমিশ্রণ হবে।
দ্রাবিড় অধ্যুষিত সিন্ধু, পাঞ্জাব ও উত্তর ভারত আর্যদের দখলে চলে যাওয়ার পর তাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে অধিকাংশ দ্রাবিড় দক্ষিণ ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
বৈদিক আর্যগণ প্রথম দিকে উপনিবেশ গড়ার ক্ষেত্রে নানা কারণে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে আসার ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিল অথবা সামরিক শক্তিতে পারবে না বুঝতে পেরে অনাগ্রহের ভান করেছিলো । আর্গুমেন্ট হিসাবে তারা বলেছিলো যে, তাদের দৃষ্টিতে পূর্বাঞ্চলীয় ভূখন্ডে ছিল অশুচি ও দস্যু বা বর্বর জনগোষ্ঠীর বাস।
মৎস্য পূরাণের এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, এক অন্ধ বৃদ্ধ সাধু ভুলবশত নিম্নগাঙ্গেয় উপত্যকার স্রোতে ভেলা ভাসিয়েছিলেন। বালী নামের এক নিঃসন্তান রাজা বংশ রক্ষা ও রাজ্যের উত্তরাধিকারীর জন্য বৃদ্ধ সাধুকে আশীর্বাদ করার অনুরোধ করেন। সাধুর আশীর্বাদে রাজা তাঁর বৃদ্ধা রানীর গর্ভজাত পাঁচটি পুত্র সন্তানের জনক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। পাঁচ পুত্রের নাম রাখা হয় অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্র ও সূক্ষ্ম। রাজার পাঁচ পুত্র সন্তানের নামে বাংলার পাঁচটি ভূখন্ডের নামকরণ হয়। পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত এ পাঁচটি ভূখন্ডই পরবর্তীকালে বাংলা ও বিহার অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলা ভূখন্ড আর্যদের নিকট এতোটাই অপবিত্র ছিল যে, তারা সতর্কতার সঙ্গে এতদঞ্চলে প্রবেশ ও স্থায়ী বসবাস গড়া থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিলো। সাধু ছিলেন অন্ধ এবং গঙ্গার জলস্রোতের অনুকূলে ভাসমান ভেলার গতির ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না বলেই তাঁর ভুলের কারণে দুর্ঘটনাবশত: আর্যদের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ সূচিত হয়েছিল।
উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা মেহেরগড় ও তার ধর্মবিশ্বাস:
‘আর্য’ শব্দটি এসেছে ‘অরি’ শব্দ থেকে। ‘অরি’ মানে বিদেশী। ভিনদেশ থেকে তারা আমাদের দেশে বা অঞ্চলে এসেছিলো বলেই বোধহয় তাদের এইরূপ নামকরণ হয়েছে। অনেকেরই সাধারণ ধারণা হলো যে, আমাদের উপমহাদেশে আর্যদের আগমণের পূর্বে উল্লেখযোগ্য কোন সভ্যতা ছিলোনা। এবং আর্যরাই অত্র অঞ্চলের প্রথম সভ্য জাতি। এই জাতীয় প্রচার-প্রচারণাও চলে। বিষয়টি একেবারেই ভুল। আর্যদের আগমণের পূর্বে আমাদের উপমহাদেশে বিশাল সভ্যতা ছিলো, এবং সম্ভবত এটিই পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা।
সিন্ধু সভ্যতার সাথে এখন মোটামুটি সবাই পরিচিত। সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা (৩৩০০ – ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ; পূর্ণবর্ধিত কাল ২৬০০ – ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)। এই সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিন্ধু নদ অববাহিকা। প্রথম দিকে এই সভ্যতা পাঞ্জাব অঞ্চলের সিন্ধু অববাহিকায় বিকাশ লাভ করে। পরে তা প্রসারিত হয় ঘগ্গর-ভাকরা নদী উপত্যকা ও গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল পর্যন্ত বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমদিকের রাজ্যগুলি, দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান এবং ইরানের বালোচিস্তান প্রদেশের পূর্ব অংশ এই সভ্যতার অন্তর্গত ছিল।
পূর্ণবর্ধিত সময়কালে এই সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা নামে পরিচিত। হরপ্পা ছিল এই সভ্যতার প্রথম আবিষ্কৃত শহরগুলির অন্যতম। ১৯২০-এর দশকে তদনীন্তন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে এই শহরটি আবিষ্কৃত হয়। ১৯২০ সাল থেকে সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নস্থলগুলিতে খননকার্য চলছে। ১৯৯৯ সালেও এই সভ্যতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসামগ্রী ও আবিষ্কৃত হয়েছে। মহেঞ্জোদাড়ো সিন্ধু সভ্যতার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
হরপ্পা ভাষা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত হয়নি এবং এই ভাষার উৎস অজ্ঞাত। যদিও ইরাবতম মহাদেবন, অস্কো পারপোলা, এফ জি বি কুইপার ও মাইকেল উইটজেল প্রমুখ বিশেষজ্ঞেরা এই ভাষার সঙ্গে প্রোটো-দ্রাবিড়ীয়, এলামো-দ্রাবিড়ীয় বা প্যারা-মুন্ডা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন।
তবে বর্তমানে সিন্ধু সভ্যতার চাইতেও পুরাতন সভ্যতা পাওয়া গিয়েছে যার নাম মেহেরগড় সভ্যতা।
মেহেরগড় (Urdu: مﮩرگڑھ ) য়ে ৭০০০খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ৩২০০ খ্রীষ্টপূর্ব আবিস্কৃত হয়েছে। মেহেরগড় সভ্যতা ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ (ফরাসি) এবং রিচার্ড মিডৌ আবিস্কার করেন। মেহেরগড়ে খননকার্য করে ৩২০০০ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এখন এর বর্তমান অবস্থান পাকিস্তানে। বালুচিস্তানের কাচ্চি সমতলভূমিতে বোলান নদীর পাড়ে কোয়েটা শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে মেহেরগড়ের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে । এই সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলি হল কিলে গুল মহম্মদ, কোট ডিজি, গুমলা, মুন্ডিগাক, রানা ঘুনডাই, আনজিরা এবং মেহেরগড়। মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল: প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে আনুমানিক ৭০০০ খ্রিস্টপূবাব্দে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । এই সভ্যতা বহু বছর স্থায়ী হয়েছিল বলে মনে করা হয় । সভ্যতার বৈশিষ্ঠ : মেহেরগড়ের খনন কার্যের ফলে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে চাষবাসের কিছু প্রমাণ মিলেছে এবং বহু দূর দেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্যের সম্পর্কের প্রমাণও পাওয়া যায় । এখানকার মানুষ যে ঘরবাড়ি তৈরি করে গ্রাম স্থাপন করেছিল, প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যে তার প্রমাণ মেলে। (ক) প্রাচীনতর পর্যায়ে একাধিক ঘর নিয়ে বাড়ি তৈরি করা হত । এইসব বাড়ি তৈরি হত রোদে শুকানো ইটের সাহায্যে । এই সময় তারা চাষবাস, পশুপালন ও শিকার করত । মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হত এবং কোঁকড়ানো অবস্থায় সমাধিস্থ মৃতদেহ পাওয়া গেছে। (খ) পরের দিকে কৃষিকার্য ও পশুপালনের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় । এই সময় তারা মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার করতে শুরু করেছিল । বাড়িগুলিও আকারে বড়ো হয়েছিল । এইসব বাড়ি থেকে ছোটো শিলনোড়ার পাথর, উনুন, হাড় দিয়ে তৈরি হাতিয়ার ইত্যাদি জিনিস পাওয়া গেছে । সমাধির মধ্যে যে সব জিনিস পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ঝিনুকের তৈরি লকেট, পুঁতি ও ঝিনুক জাতীয় জিনিসের মালা, পাথরের লকেট, হাড়ের আংটি, পালিশ করা পাথরের কুডুল ইত্যাদি প্রধান । তখনকার মানুষ যব, গম, কুল, খেজুর ইত্যাদি চাষ করত । জন্তুজানোয়ারের মধ্যে হরিণ, হাতি, নীলগাই, বুনো ভেড়া ও ছাগল, শুয়োর, গোরু ইত্যাদির হাড় পাওয়া গেছে । গরু, ভেড়া, ছাগল এবং সম্ভবত কুকুরও পোষ মানানো হত । শুধু চাষবাস বা পশুপালন এখানকার মানুষের উপজীবিকা ছিল না । ব্যবসা বাণিজ্যও করত । এখানে পাওয়া সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে মনে হয় সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানের সঙ্গে এদের ব্যাবসাবাণিজ্য চলত । মেহেরগড়ে যে সব পাথর পাওয়া গেছে তা থেকে মনে হয়, তাদের বাণিজ্য অন্তত তুর্কমেনিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । পাথর দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র বা জিনিসপত্র তৈরি হত । ধাতুর ব্যবহার অজ্ঞাত হলেও, সমাধি থেকে তামার তৈরি একটি পুঁতি পাওয়া গেছে । এখানে পাথরের তৈরি কুড়ুল পাওয়া গেছে । মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্ব: মেহেরগড় সভ্যতার আবিষ্কার কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ । প্রথমত, এখানে গম ও যব চাষের যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা থেকে বোঝা যায় যে, এই দুটি শস্যের সূত্রপাত পশ্চিম এশিয়া থেকে ভারতে আমদানি করা হয়নি । দ্বিতীয়ত, এই সভ্যতা নব্যপ্রস্তর যুগের হলেও তামা, সিসা প্রভৃতি ধাতুও পুরোপুরি অজ্ঞাত ছিল না । তৃতীয়ত, এখানকার মানুষ দূরবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য করত । চতুর্থত, এখানে কাঁচা মাটি দিয়ে পুরুষমূর্তি ও পোড়া মাটির নারীমূর্তি পাওয়া গেছে । তবে এই সব মূর্তির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কতটুকু ছিল, তা সঠিক ভাবে বলা যায় না । পরিশেষে, এই সভ্যতার আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, সিন্ধু সভ্যতার আগে নব্যপ্রস্তর যুগে বালুচিস্তান অঞ্চলে একটি মোটের উপর উন্নত গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা ছিল। এই জন্য অনেকে এই সভ্যতাকে আদি সিন্ধু সভ্যতা বলে অভিহিত করেছেন। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার একটি।
মেহেরগড় সভ্যতার ধর্মবিশ্বাসের বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে সেখানে মৃত ব্যাক্তিদের কবর দেয়া হতো। এই কবর দেয়ার পদ্ধতি ছিলো দুই রকম – একটি মৃতদেহকে সরু মাটির ঘরে কবর দেয়া ও কয়েকটি মৃতদেহকে একত্রে একটি ঘরে কবর দেয়া। মৃতদেহ সমাহিত করা হতো পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে।
সিন্ধু সভ্যতার ধর্মবিশ্বাস:
সিন্ধু সভ্যতার নগরীগুলো (হরপ্পা, মোহেনজোদারো, ইত্যাদি) পরিকল্পিত নগরী ছিলো বলে মনে করা হয়। সেখানে কয়েকটি সামাজিক সম্প্রদায় ছিলো; যেমন, পুরোহিত, বণিক, কারুশিল্পী, সৈনিক ও মুচলেকাবদ্ধ মজুর সম্প্রদায়। তবে সেখানে জন্মসূত্রে নির্ধারিত কোন জাত-পাত প্রথা ছিলো না।
সেই যুগের ধর্মবিশ্বাসের যে ধারণা পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় এক ধরনের যোগাসনে আসীন ত্রি-আননের এক দেবমূর্তির ভাস্কর্য ও তাঁর সঙ্গে যেন যুক্ত হয়ে থাকা কয়েকটি কৃষ্ণসারমৃগের ছোট ছোট মূর্তি। এই দেবমূর্তির কেশদাম দুটি শৃঙ্গের আকারে বিন্যাস্ত। মূর্তিটির দুইদিকে দাঁড়িয়ে আছে বন্য জীবজন্তু। স্যার জন মার্শাল যখন এখানকার খননকার্যের তদারকি করছিলেন তখন তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, এই দেবমূর্তিটি হলো পশুপতি শিবের। এছাড়া সিন্ধু উপত্যকায় পাওয়া গিয়েছে প্রচুর সংখ্যক পোড়ামাটির স্ত্রীমূর্তি। এগুলি সেখানকার মাতৃ-দেবতার উপাসনারই সাক্ষ্য দেয়।
মেসোপটেমিয়া (ব্যাবিলনীয়) সভ্যতার ধর্মবিশ্বাস:
মেসোপটেমিয়া (প্রাচীন গ্রীকঃ Μεσοποταμία অর্থ-দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমি, আরবিঃ بلاد الرافدين ) বর্তমান ইরাকের টাইগ্রিস বা দজলা ওইউফ্রেটিস বা ফোরাত নদী দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। অধুনা ইরাক, সিরিয়ার উত্তরাংশ, তুরষ্কের উত্তরাংশ এবং ইরানের খুযেস্তান প্রদেশের অঞ্চল গুলোই প্রাচীন কালে মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত ছিল বলে মনে করা হয় । মেসোপটেমিয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়ায় অতি উন্নত এক সভ্যতার উম্মেষ ঘটেছিল। ব্যাবিলন হলো মেসোপটিমিয়ার ভিতরেই একটি নগরীর নাম। এটা বর্তমান ইরাকের ভিতরে একটি ধ্বংসাবশেষ। ইরাকের প্রাক্তন ডিক্টেটর সাদ্দাম হোসেনের সামার প্যালেস থেকে ব্যাবিলনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যেত। সুমেরীয় সভ্যতা :
মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে আক্কাদ ও দক্ষিণাংশে সুমের। এ সুমেরকে কেন্দ্র করেই আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ নাগাদ মেসোপটেমিয়ায় এক উন্নত সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। জাতিতে অসেমিটিক সুমেরবাসীই আদি মেসোপটেমিয়ার জনক। আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেমিটিক জাতির একটি শাখা দজলা ফোরাত (বর্তমানে টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস) উপত্যকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। সমাজ ও সভ্যতার দিক দিয়ে অনগ্রসর এই সেমিটিক শাখাটিই স্থানীয় সুমেরীয়দের ঘরবাড়ি তৈরি, জলসেচ সর্বোপরি লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। অ্যাসেরীয় সভ্যতা :
মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে অ্যাসেরীয়রা প্রাধান্য বিস্তার করে। ক্যাসাইটদের আক্রমণে প্রাচীন ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে তারা এই সভ্যতার উত্তরাধিকার লাভ করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ অব্দের মধ্যেই অ্যাসেরীয়রা সমগ্র উত্তর মেসোপটেমিয়া দখল করে নেয়। অ্যাসেরীয়রা মূলত ব্যাবিলনীয় সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হলেও সভ্যতার ইতিহাসে তাদের নিজস্ব অবদানও কম নয়। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, কারুশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মৌলিক উদ্ভাবনী ক্ষমতার ছাপ সুস্পষ্ট। অ্যাসেরীয়রা প্রথমদিকে ব্যাবিলনের কিউনিফর্ম লিপির ব্যাপক ব্যবহার করে। পরে তারা আর্মেনিয় ভাষাও বেশ ব্যবহার করে। অ্যাসেরীয় রাজারা প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণেও সচেতন ছিলেন। রাজা সেনাচেরি তার রাজধানী নিনেভায় কাদার চাকতি সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি বিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। তবে রাজা আসুরবানিপাল প্রতিষ্ঠিত নিনেভায় গ্রন্থাগারকে এশিয়ার প্রথম গ্রন্থাগার বলা হয়। এখানে ২২,০০০ এর বেশি কাদার চাকতির পুস্তক ছিল। এগুলো অধিকাংশই ব্রিটিশ যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
ধর্মীয় দিক থেকে অ্যাসেরীয়রা বহু দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের পূজা করত। তাদের প্রধান দেবতা ছিল আসুর। এরপর ছিল ইশতারের স্থান। অ্যাসেরীয়রাই প্রথম বৃত্তের ডিগ্রি নিরূপণ এবং অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে তাদের অবদান অতুলনীয়। তারাই প্রথম পাঁচটি গ্রহ আবিষ্কার করে এগুলোর নামকরণ করেছিলেন। সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত মেসোপটেমিয়া অঞ্চল মিশরীয় সভ্যতার থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল এবং বহিঃশত্রুদের থেকে খুব একটা সুরক্ষিত ছিলনা বলে বারবার এর উপর আক্রমণ চলতে থাকে এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই ব্রোঞ্জ যুগে আক্কাদীয়, ব্যবিলনীয়, আসিরীয় ও লৌহ যুগে নব্য-আসিরীয় এবং নব্য-ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে উঠে।[১]
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ সালের দিকে মেসোপটেমিয়া পার্সিয়ানদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল কিন্তু পরে এই ভূখন্ডের আধিপত্ত নিয়ে রোমানদের সাথে যুদ্ধ হয় এবং রোমানরা এই অঞ্চল ২৫০ বছরের বেশি শাসন করতে পারে নি। । দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিকে পার্সিয়ানরা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চল তাদের শাসনেই থাকে, এরপর মুসলিম শাসনামল শুরু হয় । মুসলিম খিলাফত শাসনে এই অঞ্চল পরবর্তীতেইরাক নামে পরিচিতি লাভ করে ।
মেসোপটেমিয়ানদের বিশ্বাস ছিল যে পৃথিবী একটি বিশাল ফাঁকবিশিষ্ট স্থানে অবস্থিত একটি গোলাকার চাকতি। তারা আরও বিশ্বাস করত যে আকাশে স্বর্গ এবং মাটির নিচে রয়েছে নরক। জল সম্পর্কে তাদের ধারনা ছিল যে পৃথিবী জল দিয়েই তৈরী এবং এর চারপাশজুড়ে জলই আছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানরা বহুইশ্বরবাদে বিশ্বাসি ছিলো কিন্তু সময়ের ধারার সাথে কিছু কিছু গোষ্ঠির ধর্মমত পরিবর্তীত হতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ানদের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবির মূর্তিপূজার প্রমান পাওয়া যায়।
এই অঞ্চলের মানুষদের ধর্মীয় দেবতার নাম ছিল যথাক্রমে ‘আন’ (আকাশ), ‘মাকি’ (পৃথিবী), ‘এনলিল’ (বাতাস) এবং ‘এনকি’ (সমুদ্র)। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাসমতে এরাই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের নিয়ন্ত্রক ছিল। বর্ণিত ৪-দেবতার পূজা করাই ছিল প্রাচীন ইরাকী লোকদের প্রধান কাজ। ইরাকের একটি প্রাচীন সভ্যতার নাম ছিল ব্যাবিলন, যার ঈশ্বর ছিল সূর্যদেবতা ‘বেল’। পরবর্তীতো যার নাম হয় ‘মার্ডুক’। ‘ইশতার’ ছিল ব্যাবিলনের যুদ্ধের দেবী। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ধ্বংসের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে বর্ণিত ধর্মেরও বিলুপ্তি ঘটে। এ ছাড়াও সুমেরু সভ্যতার অন্যান্য দেবতারা ছিল যথাক্রমে ‘আনু’ স্বর্গের নিয়ন্ত্রক দেবতা, ‘আরুরা’ ও ‘মায়মি’ সুমেরীয় দেবী, যারা মানুষ তৈরীতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিল, ‘এনলিল’ বাতাসের দেবতা, ‘এনকি’ পানি ও জ্ঞানের দেবতা, ‘নান্না’ ছিল চাঁদের দেবী, ‘ইনান্না’ ছিল প্রেম ও যুদ্ধের দেবী, ‘উটি’ ছিল সূর্য ও বিচারের দেবতা, ‘নানলিল’ ও ‘এনলিল’ ছিল স্বামী-স্ত্রী মানে দম্পতি দেবতা।
ধর্ম পালনের দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মানুষেরা অনেক অগ্রগামী ছিলো। প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যেমন ধনি, দরিদ্র, ব্যাবসায়ী, কামার, মজুর, কৃষক ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেদের বসার ব্যাবস্থা ছিল। এসব লোকজন যার যার নিজস্ব জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রনামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিষ উৎসর্গ করত। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্মব্যাবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।
আঠারশ শতকের দিকে উদ্ধারকৃত ব্যাবিলোনিয়ানদের আরাধ্য দেবীর একটি মূর্তি
হযরত ইব্রাহিম [আ.]:
হযরত ইব্রাহিম [আ.] বা জনাব ইব্রাহিম [আ.](আরবি: ابراهيم, হিব্রু: אַבְרָהָם), বাইবেলের তোরাহ অনুসারে আব্রাহাম (Abraham) (আনুমানিক ১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৮৬১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জন্ম – মৃত্যু ১৮১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭১৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ), ইসলাম ধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল। কা’বুল আহবার-এর মতে তিনি ১৯৫ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ‘আযর’। উনার পিতা অগ্নি পূজক আজর ছিল নমরুদের মন্ত্রী। তাঁর এক স্ত্রীর নাম ‘সারা’। তাঁর চার পুত্র ছিলেন: ‘ইসমাইল’ (Ismail), ‘ইসহাক’ (Isaac), ‘মাদয়ান’, ‘মাদায়েন’। মতান্তরে তাঁর ৬-১২জন পুত্র ছিলেন। ইসলাম ধর্মমতে, হজরত ইব্রাহিম [আ.]-এর উপর ২০খানা সহীফা অবতীর্ণ হয়। ইসলাম ধর্মমতে তিনিই প্রথম মিসওয়াক করেন, প্রস্রাব সেরে পানি দ্বারা পরিষ্কার হোন, খৎনা করেন, হালুয়া তৈরি করেন এবং মেহমানদারির প্রচলন করেন। যতদূর জানা যায়, ইরাকের নাসিরিয়া থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার এবং বাগদাদ থেকে ৩৯৬ কিলোমিটার দূরে ‘উর’ নামক স্থান যা প্রাচীন বাবেল শহর নামে পরিচিত। এখানে একটি বিধ্বস্ত দোতলা বাড়ি, যেখানে হযরত ইব্রাহীম আঃ প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে জন্ম গ্রহন করেন । ১৯৬৭ সালে এক প্রত্নতাত্বিক গবেষনায় দেখা গেছে ইব্রাহীম আঃ এর সময়ে এই নগরীতে ৪০ ফুট উঁচু ১১৮০টি মন্দির ছিল। বাবেল শহরের ম্যাকফেলা গুহায় উনার কবর রয়েছে। ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি মেসোপটিমিয়া বা ব্যাবিলনের মানুষ পলিথেইস্ট বা বহুঈশ্বরবাদী ছিলো। অতএব বোঝাই যায় যে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্মের সময় তারা পলিথেইস্ট মূর্তিপূজারীই ছিলো। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) প্রথম এই পলিথেইজম ও মূর্তিপূজার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি তাদেরকে একেশ্বরবাদের দিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রাচীন মিশরের ধর্মবিশ্বাস:
প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস মিশরীয় পুরানে প্রতিফলিত হয়েছে। তিন হাজার বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মিশরে পৌরানিক ধর্মীয় বিস্বাশ প্রচলিত ছিল। মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরানও বিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৌরানিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। পৌরানিক ধর্মে মূলতঃ বহু দেব-দেবীর অস্তিত্ব থাকলে, প্রাচীন সাম্রাজ্যের কালে আখেনআতেনের (৪র্থ আমেনহোতেপ) শাসনামলে কিছুকালের জন্য সূর্যদেব আতেনকে কেন্দ্র করে একেশ্বরবাদের চর্চা করতে দেখা যায়। কিন্তু আখেনআতেনের মৃত্যুর সাথে এই চর্চাও লোপ পায় এবং আগের বহু দেব-দেবী সম্বলিত পৌরানিক ধর্ম ফিরে আসে।
প্রাচীন সাম্রাজ্যে মিশরীয়গণ পলিথেইস্ট ছিলো। তাদের পুরাণের দেব-দেবীগন ছিলেন অনেকটা আঞ্চলিক, অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা চলত । সেই হিসেবে প্রাচীন সাম্রাজ্যের দেবকূলকে পাঁচটি প্রধান দলে ভাগ করা যায় ।
হেলিওপোলিসের নয়জন দেব-দেবী – আতুম, গেব, আইসিস, নুট, ওসাইরিস, নেপথিস, সেত, শু এবং তেফনুত ।
হার্মোপোলিসের আটজন দেব-দেবী – নুনেত ও নু, আমুনেত ও আমুন, কুকেত ও কুক, হুহেত ও হুহ
এলিফ্যান্টাইনের খুম-সাতেত-আনুকেত ত্রয়ী
থিবিসের আমুন-মাত-খেনসু ত্রয়ী
মেম্ফিসের প’তাহ-সেকমেত-নেফেরতেম ত্রয়ী
মিশরীয়দের ধারনা ছিল সূর্যদেবতা ‘আমন রে’ এবং প্রাকৃতিক শক্তি,শস্য ও নীলনদের দেবতা ‘ওসিরিস’ মিলিতভাবে সমগ্র পৃথিবী পরিচালনা করেন। এই দুই
দেবতার পাশাপাশি মিশরীয়রা মেঘ দেবতা,বিড়াল,কুম ীর ,ষাড়,আরো কিছু সংখ্যক পশু পক্ষীকে ভক্তি করে পূজো করত। পিরামিড,বিজ্ঞান ,মমি,দর্শন,সাহি
ত্যে ধর্মের প্রভাব পিরামিড ও ভাস্কর্য ও চিত্রকলা: খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ অব্দে খুফু নামক জনৈক রাজা বর্তমান কায়রো নগরী হতে দক্ষিণ পশ্চিমে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত মরুভূমিতে ১৩একর জমির উপর ১লক্ষ কারিগর ও শ্রমিকের সাহায্যে সর্বপ্রথম পাথর জমিয়ে লম্বায়৭৫৫ফুট এবং উচ্চতায় ৪৮১ ফুট পিরামিড তৈরী করে।
প্রাচীন গ্রীসের ধর্মবিশ্বাস:
প্রাচীন গ্রিসের ধর্ম ছিলো বিশ্বাস ও অর্চনার সমন্বয়। জন-মানুষের ধর্ম ও কাল্ট অনুশীলন দুটোই সেখানে ছিলো। এদের মধ্যে অমিল যেমন ছিলো, মিলও তেমনি ছিলো। অন্যান্য প্রাচীন জাতির ন্যায় গ্রীসের অধিবাসীরাও প্রাকৃতিক রহস্য বুঝতে না পেরে প্রকৃতিকে ভয় পেত। তারা বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাসী ছিলো এবং বিশ্বাস করত যে, দেবদেবীগণ প্রকৃতির মধ্যে বাস করে এবং প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেবদেবীদের তারা বর্ণনা করতো anthrope method-এ অর্থাৎ তাদেরকে মনুষ্যরূপেই কল্পণা করত, তবে তারা ছিল সর্বৈব শক্তির অধিকারী এবং চিরঞ্জীব। দেবতাদের সাথে মানুষের পার্থক্য হলো – মানুষ মরণশীল, কিন্তু দেবতারা মরে না।
বেশিরভাগ গ্রিকই অলিম্পায়ান দেব-দেবীদের বিশ্বাস করতো। তারা বিশ্বাস করতো যে সুউচ্চ দুর্গম অলিম্পাস পর্বতে দেবতারা বসবাস করেন। এরকম কিছু দেবতার নাম হলো জিউস, পসিদোন, হেদেস, আর্তেমিস, আফ্রোদিতি, আরেস, দিয়োনিসাস, আথেনা, হেরমেস, হেরা, এ্যাপোলো, ইত্যাদি।
এই সব দেব-দেবীদের মধ্যে দেবত্বের ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগ ছিলো। জিউস ছিলেন সকল দেবতাদের উপর নিয়ন্ত্রণকারী দেবরাজ। প্রকৃতির বিভিন্ন অংশ আবার বিভিন্ন দেবতা নিয়ন্ত্রন করতেন।
গ্রীকরা মনে করত যে, মেঘতাড়ন দেবরাজ জিউসের ইচ্ছায় পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত ঘটে, অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। যে মানুষ ও অন্যান্য দেবতারা তাকে রাগিয়ে দেয়, শক্তিশালী দেব জিউস স্বর্ণময় বিদ্যুৎবাণে তাদের আঘাত করে। রুদ্রদেব জিউসের মতই গ্রীকরা ভয় পেত পৃথিবী ঝাকানো সমুদ্রদেব পোসেইদোনকে। বিশাল ত্রিশূল দিয়ে মর্তভূমি প্রচন্ডবেগে আলোড়িত করে সে, সমুদ্রে ঘূর্ণিবাত্যা সৃষ্টি করে, জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। আর দিন আসে তখনই, যখন তুষার শুভ্র অশ্ববাহী স্বর্ণরথে চড়ে সূর্যদেব হেলিওস আকাশে এসে প্রবেশ করে। অরণ্যের দেবতাদের বলা হত স্যতিরোস এবং তাদের কল্পণা করা হত পশমাবৃত ছাগলের পা সম্বলিত মনুষ্যরূপে। গ্রীক মানসে ঝর্ণার দেবী কল্পিত হয়েছে তরুণীরূপে, নাম নিম্ফি।
গ্রীকরা আরও মনে করত অর্থনীতির প্রতিটি শাখায় যথা, কৃষিকাজ, পশুপালন, শিকার, তন্তুবায় বৃত্তি ও অন্যান্য যাবতীয় হস্তশিল্প রক্ষাকারী দেবদেবী রয়েছে। শুরা উৎপাদনের দেবতার নাম ছিল দিওনিসিউস, আঙ্গুরের চাষ ও মদ্য প্রস্তুত করার বিদ্যা মানুষকে সে শিখিয়েছে। এ কারণে বসন্তকালে আঙ্গুর ক্ষেতে কাজ আরম্ভ করার পূর্বে এবং ডিসেম্বরে পক্ক আঙ্গুর থেকে টাটকা মদ তৈরীর পর এই দেবতার সম্মানে উৎসবের আয়োজন করা হত। যখন গ্রীকরা ধাতব জিনিষপত্রাদি তৈরী করা শিখল, তখন হেফেন্তুস সম্বন্ধীয় পুরাণের উদ্ভব ঘটে। হেফেন্তুসের কর্মশালা ভূ-গর্ভে। আগ্নেয়গিরি হচ্ছে তার পাতালস্থ কর্মশালার নিস্ক্রমণ পথ। হেফেন্তুসকে কল্পনা করা হয় সাধারণ কামারের মত, যার পোশাক-আশাক সব সময় ঝুলকালিতে মাখা। ব্যবসা বাণিজ্য বিকাশের সাথে সাথে উদ্ভূত হল রক্ষক দেব হের্মিস। হের্মিস জিউসের বিভিন্ন আদেশ পালন করত। এই জন্যে তাকে প্রায়শ: এক শহর থেকে আরেক শহরে উড়ে যেতে হত। তাই পাখাধারী পাদুকা পায়ে তাকে কল্পণা করা হয়েছে। আবার কোন কোন দেব-দেবী বিমূর্ত বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতো। যেমন আফ্রোদিতি নিয়ন্ত্রন করতো প্রেম। অন্যদিকে কলাশাস্ত্রের দেবতা হল অ্যাপোলো। নৃত্য, সংগীত, কাব্য, ইতিহাস ইত্যাদি বিদ্যার ধারিক দেবীদল তাকে সর্বদা অনুগমন করে। গ্রীকরা আরও ধারণা করত উঁচু অলিম্পীয় পর্বতে বাসকারী প্রধান দেবদেবী তথা-জিউস, অ্যাপোলো ও অন্যান্যদের জীবনযাত্রা সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোকজনের অনুরূপ।
পূর্বেই বলা হয়েছে যে দেব-দেবীদের আচরণ মানুষের মতই ছিলো। দেব-দেবীরা মানুষের সাথে সম্পর্কে যেত, এবং এর ফলে সন্তানের জন্মও হতো। দেব-দেবীরা নিজেদের মধ্যেও বিবাদে লিপ্ত হতো। যেমন পূরাণ ইলিয়াডে পাওয়া যায় যে ট্রয়ের যুদ্ধে জিউস, আফ্রোদিতি, আরেস ও এ্যাপোলো ট্রয়ীদের পক্ষ নিয়েছিলো। আর হেরা, আথেনা ও পসিদোন নিয়েছিলো গ্রিকদের পক্ষ। কিছু কিছু দেব-দেবীরা নগরীর ভারও নিতো। যেমন এথেন্স নগরীর ভার ছিলো দেবী আথেনার উপরে আর এ্যাপোলোর ভার ছিলো দেলফি ও দেলোসের উপর।
মোটকথা, গ্রীকরা বিশ্বাস করত দেবতারা মানুষের জীবনকে সবদিক থেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারাই কাউকে করেছে সম্ভ্রান্তবংশীয় ও ধনী, আবার কাউকে নি:স্ব, গরীব বা অন্যের ক্রীতদাস করে। দেব নির্ধারিত এই নির্দিষ্ট নিয়মের বিরুদ্ধে যে রুখে দাঁড়ায়, তাকে দেবতাদের কোপানলে পড়ে অশেষ সাজা ভোগ করতে হয়। এদিকে অমর হওয়া সত্ত্বেও দেবতারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলো না। তাদেরকে ভাগ্য মেনে নিতে হতো। যেমন ট্রয়ের যুদ্ধের পর ওদিসি যখন বাড়ী ফিরে যাচ্ছিলো, তার ভাগ্যেই ছিলো যে সে বাড়ী ফিরে যাবে, দেবতারা তা রুখতে পারেনি। তারা কেবল তার ফেরার পথটিকে দীর্ঘায়িত ও কষ্টকর করতে পেরেছে।
প্রাচীন চীনের ধর্মবিশ্বাস:
চীনের পীত নদীর তীরে গড়ে উঠেছিলো অতি প্রাচীন এক সভ্যতা। এই নদীটিকে চীন জাতির মাতা নদী বলা হয়। চীনারা নিজেদেরকে এই নদীর সন্তান বলে মনে করে। এই নদীর অববাহিকাই চৈনিক সভ্যতার ক্রোড়ভূমি। আনুমানিক ৬০০০ বছর আগে এই সভ্যতার উদ্ভব হয়েছিলো বলে মনে করা হয়।
খ্রীষ্টপূর্ব ১৬০০ শতকের দিকে চীনের পীত নদীর তীরে শ্যাং রাজবংশ রাজত্ব করতে শুরু করে। তদের সময়েই চীনের প্রাচীনতম লিখিত রেকর্ড পাওয়া যায়। সে সময়ে চীনারা পলিথেইস্ট ছিলো ও বহু দেবদেবীর উপাসনা করতো। যে দেবরাজের উপাসনা সে সময় চীনারা করতো তাঁরা নাম Shang Di (Shangdi or Shang-ti (Chinese: 上帝; pinyin: Shàngdì), also written simply as Di or Ti (Chinese: 帝; pinyin: Dì; “Emperor”), is a supreme god and sky deity in China’s traditional religions. At a point he was identified as Tian, “Heaven”, the “Universe”, the “Great All”.) পূর্বপুরুষদের পূজা সেখানে বিশেষ গুরুত্ব বহন করতো, যেহেতু তারা বিশ্বাস করতো যে, পূর্বপুরুষরা দেবতায় পরিণত হয়। সুপ্রাচীনকালে লোকেরা প্রকৃতিকে পুঁজা করতেন এবং দেবতা ও ভূতে অন্ধ বিশ্বাস করতেন । বদমাশদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্যে লোকেরা জাদুবিদ্যা আবিষ্কার করেন ।
The Shang Dynasty (1600 BCE-1046 BCE) was originally a clan living along the Yellow River। The Shang were the oldest Chinese civilization to leave behind written records, called oracle bones—turtle shells, cattle shoulders or other bones on which were written important clues to Chinese history. Oracle bones were often used to determine what the gods/nature wanted. If the kingdom needed to know something such as ‘will the king have a son’ or ‘should we go to war’, it would be carved into bone or shell. They would then heat the bone until it cracked. The crack lines would reveal the wishes of the gods–this process of learning what the gods want is called divination. During the Shang Dynasty people worshipped many gods. Ancestor worship was very important since they believed their family members became god-like in the after life. Shang government invented new ways to make bronze crafts. Thousands of bronze artifacts have been found including some that weigh nearly 2000 pounds. Its important to understand that other smaller cultures existed in the same time as the Shang in different parts of China, but the Shang left written records and seem to be the most advanced. Eventually, the Shang were defeated by the Zhou clan.
খ্রীষ্টপূর্ব ১০৪৬ সালের দিকে ঝৌ রাজবংশ রাজত্ব করতে শুরু করে, এবং তারাই চীনে দীর্ঘতম সময় রাজত্ব করে। এই সময়েই চীনে তাওইজম (বা দাওইজম) ও কনফুসিয়াসইজম নামের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন প্রতিষ্ঠা পায়। ‘তাও’ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। তবে মূলত এটি ‘পথ’, ‘শিকড়’ ‘তত্ত্ব’ বা ‘মূলনীতি’ অর্থে বুঝায়। পরবর্তীকালে আড়াই হাজার বছর আগে চীনের পূর্ব চৌ আমলে বসবাসকারী দার্শনিক লাওচি ” নৈতিকতা শাস্ত্র” রচনা করেন । এ শাস্ত্রে তিনি ধীরস্থির চিন্তাধারা ও জীবনযাত্রার পদ্ধতির পক্ষপাতী ছিলেন । তিনি মনে করতেন যে, নাম ও স্বার্থের উপর মানুষের বেশি নজর দেয়া উচিত নয় । মানুষের অন্যদের উপকার করা উচিত । প্রায় দু হাজার বছর আগে চীনের পূর্ব হান আমলে লোকেরা “নৈতিকতা শাস্ত্রের” চিন্তাধারার সংগে প্রকৃতি ও স্বর্গকে পুঁজা করার অনুষ্ঠানের সমন্বয় করে তাও ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন । তাও ধর্মাবলম্বীরা যথেচ্ছ দেবতাকে বিশ্বাস করেন । তারা মনে করেন যে, আত্মশোধনের পর মানুষের আত্মা পরিষ্কার থাকে । চীনের লাওচিকে তাও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বলে বিবেচিত হয় । নৈতিকতা শাস্ত্র তাও ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রে পরিণত হয়। তাও আরও দু’টি ধারণার সঙ্গে সহজাতভাবে যুক্ত। যথা- ইন ও ইয়ং। এ মতে, প্রতিটি কাজ একটি বিপরীত-কাজ তৈয়ার করে। এই পরিস্থিতি এড়ানো যায় না। অর্থাৎ, আমরা যা করি বা যা কিছু ঘটে তার মধ্যে দিয়ে তাও-র প্রকাশ ঘটে। তাই-এর প্রকৃত অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে গ্রহণ, স্বীকৃতিদান এবং স্বভাবগত উন্নয়ন। তাও প্রচলিত পাশ্চাত্য ধারার তত্ত্ববিদ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে। তাও হল সক্রিয় ও প্রকৃতির হোলিস্টিক ধারণা। এর মধ্যে নেই সংখ্যার ধারণা বা পরমাণুবাদ। এটি জগৎকে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র করে ভেঙ্গে বিশ্লেষণ করে না। বরং, অখণ্ডতার প্রতি তার যত আগ্রহ।
The Zhou Dynasty (1046 BCE-256 BCE) lasted longer than any other dynasty in Chinese history.During the Zhou Dynasty (1046 BC–256 BC) Taoism (also spelled Daoism) and Confucianism developed—the two most important Chinese philosophies. The great Chinese philosopher Confucius developed a way of life called Confucianism. Confucianism says that all people can be taught and improved if they do the right things. People should focus on doing the right thing for others, make family the most important, and respect elders of society. Confucianism is still important today, but it did not become widely followed in China until the Han Taoism Symbol of Yin YangDynasty. The founder of Taoism was named Laozi. Taoism is all about following the “Tao”, which means the “way” or “path”. The Tao is the driving force behind all things in the universe. The Yin Yang symbol is usually associated with Taoism. Taoists believe you should live in harmony with nature, be humble, live simply without too many possessions and have compassion for all life. These philosophies are different from religions because they don’t have an all powerful god or gods, although the idea of ancestors and nature are often treated like gods. The power of the emperor was also related to religious beliefs. The Zhou talked about the Mandate of Heaven as the law that allowed Chinese emperors to rule—it said that the ruler was blessed by Heaven to rule the people. If he lost the blessing of heaven he should be removed. Things that proved the ruling family had lost the Mandate of Heaven were natural disasters and rebellions. For example, if a draught or flood was particularly bad, people may begin to think the ruling family had lost the Mandate of Heaven.
প্রাচীন মায়ান ধর্ম:
মায়ানরা বসবাস করতো প্রাচীন পৃথিবীর দক্ষিণ আমেরিকায়। তাদের ছিল বহু দেবদেবী। তাদের মৃত্যুর দেবতার নাম ছিল ‘আহপুছ’। এই দেবতা ‘ইয়াম-কিমিল’ নামেও পরিচিতি ছিলেন মায়ানদের কাছে। ‘চিয়াক’ ছিল মায়ানদের উর্বরতার দেবতা। এ দেবতা কৃষি, বৃষ্টি ও আলো নিয়ন্ত্রণ করতো। আজটেক দেবতা ‘টলোলাকের’ সঙ্গে তার মিল ছিল। এই দেবতা অমর ছিল। আরেক মায়া সূর্য দেবতার নাম ছিল ‘কিনিস আহাউ’। ‘কুকুলচান’ ও ‘ইতজামনা’ ছিল আরো ২-জন অমর মায়ান দেবতা। কুকুলচানের পিতা ছিল স্বর্পরাজ। ‘ইক’ নামের আরেক দেবতাকে পূজা করতো মায়ানরা। ‘বি’ দেবতা ছিল জীবন ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রক। দেবী, ‘ইক্সচেল’ ছিলেন রংধনু, পৃথিবী ও চাঁদের নিয়ন্ত্রক। ‘ইক্সটাব’ ছিল আত্মহত্যাকারী আরেক মায়ান দেবতা। বিলুপ্ত মায়ানরা নানা দেবদেবীর পূজা করতো, তবে তারা সময়কে বেশ গুরুত্ব দিতো। বিশেষ সময়ে তারা বলিদান বা উৎসর্গ করতো দেবতার সামনে। যাজকরা বিশেষ ক্যালেন্ডারে সময় নির্ধারণ করতো পূজা ও বলিদানের জন্যে। বলিদানের সময় মায়ানরা বিশেষ মানুষের বুক চিরে হৃদপিন্ড বের করে তা দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করতো। হত্যাকারীর হাত ও পা রেখে দিতো মায়ানরা বিশেষ বিশ্বাস হেতু। এ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হতো এ জন্যে যে, শিশুদের মায়ানরা নিষ্পাপ মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো যে, বিশ্ব তথা ইউনিভার্সের তিনটি নকশা হচ্ছে নরক, আকাশ ও পৃথিবী। মায়ারা নরককে গুহা মনে করতো এবং সেখানে ‘বল’ দেবতার বিচারালয় বা আদালতের মাধ্যমে পৌঁছানোতে তারা বিশ্বাস করতো। প্রধান দেবতা ‘কিনিচ আহুয়া’ ও ‘ইতজামনা’-কে মায়ানরা আধিপত্যবাদী আকাশচারী দেবতা মনে করতো। আরেকজন ক্ষমতাসীর দেবতা ছিল ‘এল’। ‘এল’ ছিল নরকের প্রধান দেবতার একজন। মায়ানরা তারামন্ডলীকে বিভিন্ন দেবতা মনে করতো। তারা ঋতু পরিবর্তনকে দেবতাদের কাজ বলে মনে করতো। মায়ানদের দেবতা গ্রীক দেবতাদের মত আলাদা ছিলনা। তারা মনে করতো দেবতারা একত্রিত হয়ে সব কাজ করে। তারা একাধিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিল। মায়ানরা তাদের জীবনে দেবতাদের নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসতো ও ভয় করতো, এ জন্যে তারা তাদের সকল কাজের শুরুতে দেবতার উদ্দেশ্যে পূজা দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতো। মায়ানরা বাস করতো প্রাচীন মেক্সিকোর দক্ষিণে এবং উত্তর ও মধ্য আমেরিকায়। খ্রীস্টের জন্মের অন্তত ২০০০ বছর আগে মায়ানরা তাদের সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। বর্তমান রাজনৈতিক বেলিজ, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, এলসালভাদরের চাপাস, তারাস্কো ও ইয়ুকাটান ছিল মায়ানদের সম্যদ্ধ অঞ্চল। এখনও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে মায়ানরা বসবাস করে ও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছে। মায়ানদের পঞ্জিকার হিসাব শুরু হয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৩১১৪ সন থেকে। মায়া নগরগুলোতে তথা ইউকাতানে ধর্মীয় স্মৃতিসৌধ, মন্দির-পিরামিড, সজ্জিত কবর এখনও দৃশ্যমান ছিল। মায়ানরা টেলিস্কোপ আবিস্কারের অনেক আগেই অরিয়ন নক্ষত্রের দিক নির্দেশনা, সৌর বছরের দৈর্ঘ্য ও শুক্রের জোতির্বিদ্যা সঠিকভাবে অঙ্কন করেছিল। মায়ানদের অন্যতম দেবতা ছিল ‘ডাভিইং’। কিন ছিল মায়া বর্ষ পঞ্জিকার একটি সময়, যা একটি দিনের অনুরূপ ছিল। ধর্মীয় রীতিতে মায়ানরা বিশ্বাস করতো যে, প্রতিটি সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তই পবিত্র। তাদের ধারণা ছিল অনেকগুলো সূর্যের প্রতিকৃতি পর্যায়ক্রমে আসে নরক থেকে স্বর্গের উদ্দেশ্যে। মায়ানদের ভাষায় এক হাজারেরও বেশী বর্ণলিপি ছিল।
ইনকা সভ্যতা ও তাদের ধর্মবিশ্বাস:
পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। এরপর আন্দেজ পর্বতমালার পুবমুখি বিস্তার। পেরু নামে একটি দেশ। এই পেরুর পুবেই কুজকো নগর। এসবই আন্দেজ পর্বতমালার মধ্যে। যে আন্দেজ পর্বতমালাটির বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে ২,৫০০ মাইল!
সেই কুজকো নগর ঘিরেই সূত্রপাত হয়েছিল কুজকো রাজ্যের (কিংডম অভ কুজকো) যা পরে হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম পরাক্রমশালী ইনকা সাম্রাজ্য। ইনকা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিল পেরু, বলিভিয়া, উত্তর আর্জেন্টিনা, চিলি ও ইকিউডোরে। এত বিশাল সাম্রাজ্য সড়ক পথে যোগাযোগ রক্ষা করত ইনকারা। এই উদ্দেশ্যে ইনকারা নির্মান করেছিল বিস্ময়কর সড়ক; যাকে বলে, ‘ইনকা ট্রেইল’। কৃৎকৌশলের দিক থেকে যা ছিল সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর। মনোরম উপত্যকা ও দুর্গম গিরির ভিতর দিয়ে চলে গেছে ইনকা ট্রেইল। আজও ধ্বংসাবশেষ দেখে চেনা যায়। মূল ২টি পথ ছিল- উত্তর-দক্ষিণে। সামরিক ও বেসামরিক উভয়শ্রেনির লোকই চলাচল করত। আর চলত লামা ক্যারাভান। সাধারণ লোকের সে পথে চলতে হলে ইনকা সম্রাটের অনুমতি লাগত। পথের মাঝে ছিল সেতু। সেতুতে টোলব্যবস্থা ছিল। ইনকাসাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। সাম্রাজ্যের সময়কাল ১২০০ থেকে ১৫৩৩। ১৫৩৩ সালেই তো স্প্যানিশ লুটেরারা এল তারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলো যে এটিই দক্ষিণ আমেরিকার সবচাইতে উন্নত সভ্যতা। যে উদ্দেশ্য তারা এসেছিলো সেটাই তারা করলো লুট করে নোলো সর্বস্ব। ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম মানকো কাপাক। তিনি ও তার বংশধরের সময়েই ইনকা জাতি রচেছিল দক্ষিণ আমেরিকার বিস্ময়কর সভ্যতা। ইনকারা ওদের রাজ্যকে বলত তাহুয়ানতিনসুইউ। মানে চতুস্কোন ভূমি।
ইনকা শাসকরা ছিলেন অভিজাত রাজকীয় বংশের। সম্রাটকে বলা হত ইনকা। পরে অবশ্য সভ্যতার নামই হয়ে যায় ইনকা। সম্রাটের অন্য নাম সাপা ইনকা। সাম্রাজ্য পরিচালনতা করত রাজকীয় পরামর্শসভা। পুরোহিত প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সেনাপতির সমন্বয়েই গড়ে উঠত রাজকীয় পরামর্শসভা। এরা সর্ম্পকে আত্মীয়। অভিজাতদেরও কাউন্সিল ছিল। তারা সাম্রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করত। ইনকা যোদ্ধারা অন্য নগর আক্রমন করে জয় করলেও স্থানীয় শাসনকর্তাকে হত্যা করত না যদি সে শাসনকর্তা ইনকা আইন মেনে চলত, বিদ্রোহ না করত, কর দিত আর শষ্য ভান্ডার মজুদ রাখত। ইনকাদের কর ব্যবহা ছিল কঠোর। খাদ্যশষ্য মজুদের কলাকৌশল রপ্ত করেছিল বলেই ইনকা সভ্যতা নাকি অত উন্নত স্তরে পৌঁছেছিল-ঐতিহাসিকদের এই মত। সাম্রাজ্যজুড়ে ছিল স্টোরহাউজ। ৩ থেকে ৭ সাত বছরের খাদ্যশষ্য মজুত থাকত সেখানে। মাংসও শুকিয়ে নোনা করে রাখত। আলুকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারে যেখানে তা নয়-দশ বছর ধরে সংরক্ষিত থাকে। তার নাম চুনিও। পদ্ধতিটি এখনো প্রচলিত আছে।
চাষবাস হত উপত্যকায় আর পাহাড়ের ঢালে। ইনকাদের প্রধান খাদ্যই ছিল আলু ও ভূট্টা। মানবসভ্যতায় আলু ইনকাদের অবদান। আলু আর ভুট্টা ছাড়া খেত ওল। চাষ করত মরিচ, মরিচের জন্মভূমিও পেরু-বলিভিয়া বলে মনে করা হয়। সাম্রাজ্যের পশ্চিমে প্রশান্ত সাগর, আর বিখ্যাত হ্রদ টিটিকাকা। ভূট্টা পিষে এক ধরনের পানীয় তৈরি করে খেত ইনকারা। পানীয়ের নাম: চিচা।
বহুদেবতায় বিশ্বাসী ছিল ইনকারা। ভিরাকোকা ছিলেন প্রধান দেবতা। তিনিই ছিলেন ইনকাদের স্রষ্টা। আরেকজন দেবতার নাম ছিল ইনতি। ইনি ছিলেন সূর্যদেব। ইনকাদের বলা হয়: “সূর্যের সন্তান।” ইনকা শব্দটি এসেছে এই ইন্তি শব্দ থেকেই। ইনকারা সূর্যপূজক বলেই উচুঁ পাহাড়ের ওপর তৈরি করত পাথরের মঞ্চ। ইনতিহুয়াটানা। ইন্তি শব্দটা লক্ষ করুন।ইনকারা ছিল ধর্মপ্রাণ। তারা ভাবত যেকোনও মুহূর্তেই অমঙ্গল হতে পারে। কাজেই পুরোহিতদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন ছিল ইনকা সমাজে। ইনকা সমাজে নারীপুরোহিতও ছিল।
পলিথেইজম-এর কিছু বিশ্লেষণ:
Polytheism is the worship of the collection of gods named pantheon. They are of all shapes and sizes like trees, animals, stars etc. and anthropomorphic gods they take the shapes and characteristics of human or anything in between like Zeus, Brahma, Jupitar etc.
পলিথেইজম পৃথিবীকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে, এবং প্রতি ভাগের জন্য এক-একটি দেবতা নিয়োগ করে, যেমন, সমুদ্রের দেবতা, সূর্যের দেবতা, ইত্যাদি। এর শেষ হয় বিভিন্ন দেবতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে (হোমারের ইলিয়াডে দেব-দেবীদের মধ্যে এই সংঘাতের উল্লেখ রয়েছে)। যেমন, শান্তির দেবী যেমন আছে, তেমনি যুদ্ধের দেবতাও আছে; আবার কুমারীত্বের দেবী যেমন আছে, তেমনি নিষেক-এর দেবীও আছে; সৃষ্টির দেবতা যেমন আছে, তেমনি ধ্বংসের দেবতাও আছে। এরা একে অপরের বিপরীত, একজনকে সন্তষ্ট করার পূজা করলে অন্যজন ক্রোধান্বিত হতে পারে। কথা দাঁড়ালো কি? একজন মরণশীল মানুষ এক দেবতাকে খুশী করতে গিয়ে আরেক দেবতাকে ক্রোধান্বিত করতে পারে। গলে এটা সৃষ্টি করবে বিশৃঙ্খলা (chaos)। তবে একথাও সত্য যে জীবন এবং জগৎ কিছুমাত্রায় chaotic।
বিজ্ঞানহীন একটি পৃথিবীতে, যেখানে প্রকৃতি অনিশ্চিত (unpredictable), সেখানে একঝাক দেবতাকে টেনে আনা হয় flexibility-র জন্য। যেহেতু কারো কার্যক্রমই পরিপূর্ণভাবে ভালো বা মন্দ নয়, প্রত্যেকেরই কার্যের স্বাধীনতা আছে। এই পলিথেইজম-এর উপস্থিতিতে একজন মানুষ যেই কাজই করুক অথবা না করুক তা কোন না কোন দেবতার মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার করবেই।
গ্রীসে একেশ্বরবাদের পক্ষে যিনি প্রথম বলেছিলেন জিনোফেনস। জিনোফেনস-এর রচিত যে লেখাগুলো বেঁচে আছে তা উল্লেখযোগ্য এক ধরনের সন্দেহবাদ প্রকাশ করে। চতুর্থ শতকে এই নিয়ে প্রচুর আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তিনি তদানিন্তন প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসকে বিদ্রুপ করেছিলেন এই বলে যে তারা human projections (এটি মনোবিজ্ঞানের এমন একটি বিষয় যে, মানুষ অন্যের দোষ ধরে বেড়ায় কিন্তু তার নিজের মধ্যেই যে ঐ দোষগুলো আছে তা খেয়াল করে না)। তিনি বহু ঈশ্বরবাদী (polytheistic) ধর্মবিশ্বাসকে সমালোচনা করেন এবং এই করতে গিয়ে তিনি তাঁর পূর্বেকার কবি হোমার ও তাঁর সময়কার কবি হেসোইড প্রমুখের সমালোচনা করেন। একটি উদ্ধৃতি বলে, “মানবের মধ্যে যা কিছু ভর্ৎসনা ও তিরষ্কার যোগ্য রয়েছে যেমন চৌর্যবৃত্তি, ব্যাভিচার, প্রতারণা; ইত্যাদি সবই দেবতাদের মধ্যে রয়েছে।” Sextus Empiricus বলেছে যে, খৃস্টান আত্মপক্ষসমর্থনকারীরা (apologists) এই পর্যবেক্ষণের তারিফ করেছেন। আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লিমেন্ট (Clement of Alexandria) প্রায়শঃই জিনোফেন-কে উল্লেখ করতেন এই বলে যে, জিনোফেন ছিলেন সেই দেবতাদের বিরোধী মৌলিকভাবেই যাদের বর্ণনা হতো নরত্বারোপমূলক (anthropomorphic) (অর্থাৎ তাদেরকে মানবের মতই মনে করা হতো)।
আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লিমেন্ট বলতেন, ” যদি গরু ও সিংহদের হাত থাকতো ও তারা সেই হাত দিয়ে আঁকতে ও সৃষ্টি করতে পারতো যেমনটা মানব করে, তাহলে গরুরা গরুদের মত করে এবং সিংহরা সিংহদের গঠন ও আকৃতির মতো করে দেবতাদের চিত্রায়ন করতো। ইথিওপিয়ানরা তাদের দেবতাদের মুর্তি গড়ে থ্যাবড়া নাক আর কালো রঙের। আর থ্রাশিয়ানরা তাদের দেবতাদের মুর্তি গড়ে ফ্যাকাশে ও লাল-চুলো করে। ” আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লিমেন্ট আরেকটি উদ্ধৃতিতে গ্রিসের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বলেছেন,
১। ” এক ঈশ্বর সকল দেবতা ও মানবের মধ্যে মহান, তার রূপ বা ভাব নশ্বর মানবের রূপ বা ভাব-এর মতো নয়।
২। কিন্তু নশ্বর মানব মনে করে যে, দেবতারা নশ্বর মানবের মতোই জন্ম নেয় এবং তারা ধারন করে নশ্বর মানবের মতোই রূপ, পোষাক ও কন্ঠস্বর।”
জিনেফেনস হোমারিয় ধর্মতত্ত্ব (Homeric theology)-কে নাকচ করছেন এর অর্থ আবার এই নয় যে তিনি ঐশ্বরিক সত্তা-কে অস্বীকার করছেন, বরং তাঁর দর্শন সেই সময়কার প্রচলিত গ্রীক ধর্মবিশ্বাস যা সেই সময়কার লেখকদের ধর্মশাস্ত্র (বৈভব) সংক্রান্ত ধারণা তার সমালোচনা করেছেন। তিনি ঈশ্বর সম্পর্কে আরো ধারণা দেন যে ঈশ্বর সমগ্র মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করছেন, আবার একই সাথে তিনি মহাবিশ্ব থেকে কায়িকভাবে নিজেকে বিযুক্ত রেখেছেন। জিনোফেনস এমন বিশ্বাসকে সমর্থন করেছেন যে, “ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়, মানব ও দেবতাদের মধ্যে সর্বচ্চো ও সর্বশ্রেষ্ঠ। এবং তিনি দেহ ও মন কোনদিক থেকেই নশ্বর মানবদের মতন নন।” তিনি মানতেন যে, মহান ঈশ্বর একজনই আছেন। ঈশ্বরই একমাত্র অমর সত্তা, গোলাকৃতি গঠনের, নিজের ভিতরে সবকিছুকেই ধারন (comprehending) করছেন, তিনি মহাজ্ঞানী এবং সব কিছুকে গতিশীল করছেন, কিন্তু তাঁর প্রকৃতি মানবের দেহ ও মন কোনটির প্রকৃতির সাথেই মিলে না। পলিথেইজম যেহেতু নরাত্বরোপমূলক (anthropomorphic)তাই এখানে দেব ও দেবী দুই-ই আছে। মনোথেইজম-এ স্রষ্টা নারী বা পুরুষ নন। দার্শনিক প্লেটো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না। গণতন্ত্রের সাথে পলিথেইজম-এর সাদৃশ্য রয়েছে। পক্ষান্তরে প্লেটো বিশ্বাস করতেন ফিলোসফার কিং-এ, যার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে একেশ্বরবাদের।
বেশীরভাগ পলিথেইজম-এর কোন পবিত্র গ্রন্থ নাই। আর যাদের আছে তাদের একাধিক ধর্মীয় গ্রন্থ আছে ফলে হারমোনিক একক কোন চিন্তা-ভাবনা তাদের অনুসারীদের মধ্যে নাই। There are 4 Vedas, all of them criticizing each other. There are 18 Upanishads criticizing all the 4 Vedas and each other. মানবের মধ্যে যা কিছু ভর্ৎসনা ও তিরষ্কার যোগ্য রয়েছে যেমন চৌর্যবৃত্তি, ব্যাভিচার, প্রতারণা; ইত্যাদি সবই দেবতাদের মধ্যে রয়েছে।
মূর্তিপূজা প্রগতিকে শ্লথ করে দেয়: মূর্তিপূজায় কোন কিছুকে সীমিত করে ফেলা হয়। মানুষের চিন্তাভাবনাকেও সীমিত করে ফেলা হয়। মিশরের ফেরাউন জনগণকে ব্যস্ত রাখার জন্য পিরামিড নির্মান করেছিলো, কোন উন্নতির জন্য নয়।
এ’ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সাকার ও নিরাকার’ প্রবন্ধ থেকে একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “টলেমির জগৎতন্ত্র আমাদের ধারণাযোগ্য। পৃথিবীকে মধ্যে রাখিয়া বদ্ধ কঠিন আকাশে জ্যোতিষ্কগণ সংকীর্ণ নিয়মে ঘুরিতেছে ইহা ঠিক মনুষ্যমনের আয়ত্তগম্য; কিন্তু অধুনা জ্যোতির্বিদ্যার বন্ধনমুক্তি হইয়াছে, সে সীমাবদ্ধ ধারণার বাহিরে অনন্ত রহস্যের মধ্যে গিয়া পড়িয়াছে বলিয়া তাহার গৌরব বাড়িয়াছে। জগৎটা যে পৃথিবীর প্রাঙ্গণমাত্র নহে, পৃথিবী যে বিশ্বজগতে ধূলিকণার অধম এই সংবাদেই আমাদের কল্পনা প্রসারিত হইয়া যায়। আমাদের উপাস্য দেবতাকেও যখন কেবলমাত্র মনুষ্যের গৃহপ্রাঙ্গণের মধ্যে বদ্ধ করিয়া না দেখি,………..।”
দেবতাদের তুষ্টির জন্য নরবলী দেয়ার প্রচলন সব পলিথেইস্ট প্র্যাকটিস-এই ছিলো। যেমন, মিশরে নীল নদের তুষ্টির জন্য সেখানে কুমারীদের বিসর্জন দেয়া হতো। দক্ষিণ আমেরিকায়ও দেবতাদের তুষ্টির জন্য কুমারীদের হত্যা করা হতো। পক্ষান্তরে মনোথেইজমে মানুষের জীবনের মূল্য যেকোন অবজেক্ট-এর জীবনের চাইতে বেশী।
পরবর্তি পর্বে মনোথেইজমের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে এবং মূর্তিপূজার বিরোধিতা যেই মহামানবরা করেছিলেন তাদের নিয়ে আলোচনা করা হবে।
(চলবে)
(এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব)
অনেক খেটে লিখছ, প্রসংশার দাবী রাখে। তবে ইসলামের স্বর্নযুগ যদি লেখার মূল লক্ষ্য হয় তবে মনে হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ডটা একটু বেশি ছড়িয়ে যাচ্ছে। আরেকটা কথা- একান্তই আমার নিজস্ব মত, এই বিষয়ে যত লেখা লেখি দেখি, সে তুলনায় পিছিয়ে পড়ার উপরে গবেষনা মূলক লেখা দেখি না বললেই হয়। এদিকটায় একটু নজর দেবে?
মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।
৯৬ জন পড়ার পর আপনিই প্রথম মন্তব্য করলেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড ইচ্ছে করেই বড় করে লিখছি। যেকোন কিছুর পিছনে তার ঐতিহাসিক কারণগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ছাড়া তো আর ঘটন হয়না। কেউ কেউ পটভূমি জানে, তাদের কাছে ওটা ইন্টারেস্টিং না। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত সার্ভে করে দেখেছি, বেশীরভাগই (৯০%-এর উর্ধ্বে) পটভূমি জানেনা। ইতিহাস সাবজেক্ট-টি আমাদের দেশে বড় বেশী অবহেলিত। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মুসলমানেরই পবিত্র কোরান শরীফটি বাংলা অর্থসহ পুরোটা পড়া নাই।
ইসলামিক গোল্ডেন এজ সম্পর্কেও বেশীরভাগই কিছু জানেনা। অনেকেই সমাজবিদ্যার জনক ইবনে খলদুনের নামই শোনেনাই (উনার লেখা বই পড়া তো আরো পরের কথা), আল-জাহিজ, আল-জাজির, আল-হাইয়াম, ইবনে সাহিল দের কথাতো বাদই দিলাম। বিষয়টি মোটামুটি বিষদভাবে সবাইকে জানাতে চাই বলেই এই সিরিজটি লিখছি।
মুসলমানদের পিছিয়ে পড়া প্রসঙ্গেও লিখবো। তবে সেটা তো খুব বেশীদিন আগের কথা নয়। আর এখন তো মুসলমানরা আবার উন্নতি করছে। কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশতো এখন অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সমৃদ্ধ!
"কারণ ছাড়া তো আর ঘটন হয়না" - এমসিসিতে আমার ইতিহাস শিক্ষক মরহুম মাযহারুল হক স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। তিনি ইতিহাস পরীক্ষার খাতায় ইতিহাসবেত্তাদের লেখা কোটেশন দেখতে পছন্দ করতেন, যেমন করতেন দোহা স্যার। আমরা সেই সে সময় মাযহার স্যারের একটা পরীক্ষার জন্য ইতিহাসবিদ কে, আলীর লেখা ইতিহাস বই থেকে একটা কোটেশন মুখস্থ করেছিলাম- "Everything must have a cause and nothing comes out of nothing"। এই কোটেশনটা আমার বন্ধু দীপুর খুব ফেভারিট ছিলো এবং সে সুযোগ পেলেই কথাটা উচ্চঃস্বরে ব্যবহার করতে কসুর করতোনা। দীপু আমাদের খ্যাতনামা ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর বড়ভাই, বুয়েটপাস প্রকৌশলী, দীর্ঘদিন ইন্দোনেশিয়াতে চাকুরী কাম ব্যবসা করে এখন সম্ভবতঃ মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে থিতু হয়েছে।
"ইতিহাস সাবজেক্ট-টি আমাদের দেশে বড় বেশী অবহেলিত" - অস্বীকার করার উপায় নাই। আমরা এত ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছি, তবুও ভীষণ লজ্জা পাই যখন কোন কোন বন্ধুকে দেখি গল্পের মত ইতিহাসের নানা কাহিনী আওড়ে যায়। অথচ ইতিহাস সম্পর্কে আমার জ্ঞান নিতান্তই স্কেচী এবং বুকিশ!
ইতিহাসবিদ কে, আলীর ভাতিজার নাম কর্ণেল ড. শেখ আকরাম আলী। তিনি দীর্ঘকাল বি.এম.এ.-র ইনস্ট্রাকটর ছিলেন। স্যারের সাথে আমার ঘনিষ্টতা আছে।
"nothing comes out of nothing" এই বক্তব্যে নিয়ে অবশ্য অনেক আলোচনা আছে। এটা মূলত গ্রীক ফিলোসফি 'Ex Nihilo Nihil Fit' মানে, শূণ্যতা থেকে কোন কিছুই আসতে পারেনা, বা শূণ্যতা থেকে কেবল শূণ্যতাই আসতে পারে। এই দর্শনটি পরে রোমান ফিলোসফিতে সংক্রামিত হয়, এবং সেখান থেকে বাইবেলে। এই দর্শনের কারণেই লক্ষ্য করে থাকবেন যে রোমান নাম্বারে কোন 'জিরো' বা 'শূণ্য' নাই। কারন তারা বলতো how could nothing be something? এই নিয়ে গভীর সমস্যায় পড়েছিলেন মুসলিম গণিতবিদ আল-খোয়ারিজমী। অবশেষে তিনি পবিত্র কোরান পাঠ করতে শুরু করেন, এবং এক জায়গায় উনার চোখ আটকে যায় -- 'তিনি বললেনঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেনঃ এটা আমার পক্ষে সহজ। আমি তো পুর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি এবং তুমি কিছুই ছিলে না।' [An angel] said, "Thus [it will be]; your Lord says, 'It is easy for Me, for I created you before, while you were nothing.' "
Surah: সূরা মারইয়াম ( Mary ) আয়াত ১৯:৯।
এই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় যে, সৃষ্টিকর্তা শূণ্যতা থেকেই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ 'Ex Nihilo Nihil Fit' গ্রীক দর্শনের এটা সম্পূর্ণই বিপরীত। অতঃপর মুসলিম গণিতবিদ আল-খোয়ারিজমী 'শূণ্য' (সিফর) নামক একটি নতুন সংখ্যা ইনট্রোডিউস করেন। অবশ্য চট করে এটা উনাকে করতে দেয়া হয়নি। খলিফা মামুন বলেছিলেন, "দেখো খোয়ারিজমী, আমি এই মুসলিম জাহানের খলিফা, আমার এক আদেশে পুরো জাহানের যেমন একটা উপকার হতে পারে তেমনি একটা ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। তাই যেকোন আদেশ দেয়ার আগে আমাকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। যাহোক, বাহাস হবে। বাহাসে তুমি যদি তোআমর আবিষ্কারের উপকারিতা ও সত্যতা প্রমাণ করতে পারো কেবলমাত্র তখনই এটা চালু করার আদেশ আমি দিতে পারি, তার আগে নয়।" অবশেষে তিন দিন বাহাস হয়। এবং এই বাহাসে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং খলিফা মামুন।
এই সিরিজের কোন একটি পর্বে আমি পুরি বিষয়টি বর্ণনা করবো, আশা রাখি।
শুধু ভাতিজা নয়, কে, আলীর ছেলেও একসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তিনি মরহুম লেঃ কর্ণেল মোসাদ্দেক আলী। মটর সাইকেল দূুর্ঘটনায় তিনি অকালমৃত্যু বরণ করেছিলেন।
শূন্যের ইতিহাস জেনে ভালো লাগলো।
কে, আলীর ছেলের বিষয়টি জানতাম না। দুর্ঘটনার বিষয়টি শুনে খারাপ লাগলো।
এত বড় একটা আলোচনার জন্য যে সময় ও শ্রম দিয়েছো, আশাকরি তা তোমাকে এবং চিন্তাশীল পাঠকদেরকে সমৃদ্ধ করবে।
"কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়?" - শুরুতেই এই সব প্রশ্ন পাঠকদের চিন্তা প্রক্রিয়াকে উসকে দেবার জন্য যথেষ্ট। তার সাথে আলোচনার শেষের দিকে কবিগুরুর পর্যবেক্ষণঃ
"জগৎটা যে পৃথিবীর প্রাঙ্গণমাত্র নহে, পৃথিবী যে বিশ্বজগতে ধূলিকণার অধম এই সংবাদেই আমাদের কল্পনা প্রসারিত হইয়া যায়" - সে চিন্তাকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
"তবে একথাও সত্য যে জীবন এবং জগৎ কিছুমাত্রায় chaotic।" - এই "কিছুমাত্রার" ব্যাপকতাই কত গভীর ও দীর্ঘবিস্তৃত!
চমৎকার আলোচনা হয়েছে, রমিত। এ ধরণের সিরিয়াস আলোচনায় মন্তব্যের খরা থাকবেই। এজন্য তুমি নিরাশ হয়োনা।
আপনার মতন সিনিয়র ও প্রজ্ঞাবান ব্যাক্তির এমন সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই।
আপনার ব্যাস্ত সময়ের মধ্যেও যে কষ্ট করে এগুলো পড়ছেন এজন্য আপনাকে অাবারও ধন্যবাদ।
বরাবরের মতই হৃদয়গ্রাহী
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অনেক ধন্যবাদ সাইদুল ভাই