কত কথা জমিয়ে রেখেছি, তোমাকে বলবো বলে
—————— ড. রমিত আজাদ
কত কথা জমিয়ে রেখেছি, তোমাকে বলবো বলে,
তুমি কি আসবে না আর?
এসোনা, একবারের জন্য হলে এসো,
আমি হৃদয়ের গহীন বনে ছটফটে বিহঙ্গসম
এতোকালের পুশে রাখা কথাগুলো বলবো।
আমাদের বাগানের গাছগুলোর কথা বলবো,
ফুলের ঝোঁপগুলোর কথা বলবো,
এখনো ওরা কেমন করে ফুল ফোটায় বসন্ত এলে,
কত রঙের মাতম ওঠে আগের মতোই।
কুঞ্জের পাখীগুলোর কথা বলবো,
ঐ যে ওরা, ডিম দিয়েছিলো ছোট ছোট চারটি,
মনে পড়ে?
সেই ডিমগুলো ফুটে ছানা হয়ে কবে উড়ে গেছে!
তারপর আরো কতোবার পাখী এলো, গান গেলো,
আমি একাকী দেখেছি ওদের সুখ।
আমার সুখ ওদের আর দেখা হলোনা!
আমার অফিসের সহকর্মীদের কথা বলবো,
কেউ কেউ তোমার মতো চুপচাপ, ইন্ট্রোভার্ট,
কেউ আবার আমার মতো বড্ড রসিক, গপ্পোবাজ!
আমার পরম বন্ধু, যে আমার সব কথা জানে,
সেই কম্পিউটারটির কথা বলবো,
তুমি অবাক হয়ে দেখবে ওকে চালু করতে গেলে
তোমার নাম লিখে ক্লিক করতে হয়।
হ্যাঁ, তোমার নামেই ওর নাম রেখেছি, পাসওয়ার্ড দিয়েছি।
আমার কাজের ঘরটির কথা বলবো,
যেখানে সাজানো রূমটিতে টেবিলটা অদ্ভুত এলোমেলো,
জানো আমি এখনো আগের মতোই অগোছালো আছি,
কলমদানীতে কলম থাকে অনেকগুলো সেই আগের মতোই,
তবে সেই কলমগুলো দিয়ে লিখে কালিতে সয়লাব করে
হাত মাখিয়ে তুমি আর লাজুক হাসোনা।
তোমার ঐ কালি মাখানো হাতের স্থলে,
আমি দেখতে চেয়েছিলাম মেহেদীর রঙে রাঙানো সলজ্জ্ব হাত!
আমার লেখা কবিতাগুলোর কথা বলবো,
তোমারগুলোর মতো সুন্দর হয়না কখনো,
জানো তবুও লোকে পড়ে, কেউ কেউ ভালোও বলে!
একটি কবিতার বই লিখেছি সাহস করে,
প্রচ্ছদ করেছি তোমার আঁকা ছবি দিয়ে,
উদ্দেশ্য একটাই, তা দেখে তুমি যেন বুঝতে পারো,
তুমি আমার না হলেও, আমি এখনও তোমার!
আমার করা গবেষণাগুলোর কথা বলবো,
নিরস কাটখোট্টা গবেষণার চাইতে,
আমার তো কবিতা লিখতেই বেশি ভালো লাগে!
তারপরেও করি কিছু গবেষণা, ক্যারিয়ারের খাতিরে।
হায়রে, কিসের ক্যারিয়ার? কার ক্যারিয়ার?
তোমাকে ফেলে ক্যারিয়ার ধরে,
জীবনটাই অর্থহীন হয়ে গেলো!
তুমি কি একবারও ভাবোনা আমার কথা?
ক্ষণিকের জন্যও কি আমার কথা মনে পড়েনা?
নাকি পরম মমতায় জড়ানো বাঁধন মিথ্যে?
মন তো দিয়েছিলাম মন ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নয়।
এখনো হঠাৎ স্নায়বিক বিহ্বলতায়,
মাঝে মাঝে হাত কেঁপে কেঁপে ওঠে,
অথবা চট করে থেমে যাই কাজের মাঝে,
কয়েক মুহুর্তের জন্যে চলষ্মান মস্তিষ্ক স্থবির হয়ে যায়।
ভয় পাই কবে যেন আমি নিজেই নিস্তব্ধ হয়ে যাই!
“কি ভুল হয়েছে?”
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া খুব কঠিন,
যখন কোন কিছুই সঠিক থাকেনা।
আজ জীবন নামক মরুতে,
আমি একটি একাকী তরু।
যদি আবার কোনদিন তোমার সাথে দেখা হয়,
আমি শোনাবো না কোন ব্যাথার গান,
তুলবো না কোন বিরহের সুর,
বলবো না কোন স্মৃতির অনুগল্প,
আমি শুধু বলবো,
তুমি বড্ড ভালো!
মিছে তোমাকে দুষেছি,
সব দোষ আমি মেনে নিলাম,
তুমি নও, আমিই পাতক।
অভিশাপ যদি দিতে চাও, দিয়ে দাও।
I have treasured in my heart, so many words to tell you
—————————– Dr. Ramit Azad
একেবারে অন্য রকম এক লেখা, আবেগ, কথকতা ...
আলাদা এক আমেজ দিয়ে গেলো ।
অনেক ধন্যবাদ লুৎফুল ভাই।
বেশ বেশ! সবাই দেখি কবিতা লিখছে! মানে সবাই হৃদয়ের সাথে কথা বলছে।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
জ্বী মোস্তফা ভাই, হৃদয়ের কথা লিখছি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এক দম অন্য এক রমিত আজাদ। মন ছুঁয়ে গেলো।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অনেক ধন্যবাদ সাইদুল ভাই।
চমৎকার হৃদয়স্পর্শী কবিতা। আষাঢ়ের প্রতি সন্দেহ জাগছে, সে-ই ইতিহাসবিদকে কবি বানিয়ে দিল কিনা!
জীবনের সাতকাহন, অবলাই থেকে যায়। স্বগতোক্তিতে অথবা কবিতাক্ষরে সীমিত হয়ে পড়ে। টুউউ স্যাড!
টাইপোঃ পুশে>পুষে
পুনশ্চঃ পুনরায় এলাম, ক্যাপশন ছবিটার জন্য ধন্যবাদ জানাতে! 🙂
যে শিউলিগুলো করতলে স্থান পেলো, মালা গাঁথা হোক বা না হোক, তারা তো ধন্য হলো।
আর যেগুলো পড়ে র'লো, তাদের জন্যও নিদেন পক্ষে একটা কবিতা চাই।
চমৎকার দুটি মন্তব্য করেছেন খায়রুল ভাই। এত সুন্দর যে, আমার আর উত্তর দেবার ভাষা নেই।
"যে শিউলিগুলো পড়ে র'লো, তাদের জন্যও নিদেন পক্ষে একটা কবিতা চাই।" -- অবশ্যই! অবশ্যই! আমি তাদের জন্যও একটা কবিতা লিখবো।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।