বিষন্ন বিরিওজা – ৩
—————————- ডঃ রমিত আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)
বিকাল বেলাটা সাশা আমার রূমে কাটালো। আমরা চা নাস্তা খেয়ে গল্পগুজব করে কাটালাম। এদেশে সামারে বিকালটা ভীষণ লেংদি হয়। দশটার দিকে সূর্য ডুবি ডুবি করল। আমাদের হিসাবে এটাকেই সন্ধ্যা বলতে হয়। সেসময় সাশা বলল, “চল আমার রূমে গিয়ে ডিনারটা সেরে নেই। তাই করলাম।
নিরুদ্বিগ্নভাবেই ভাবেই কেটে গেল বিকাল আর সন্ধ্যাটা। সাশার রূম থেকে আমার রূমে ফিরে দরজাটা লক করে ঘুরতেই চোখ আটকে গেল দেয়ালে সাটা সেই চুলটার দিকে। সেই মেয়েটির চুল, পোলশার মেয়ে, মাগ্দা যার নাম ছিল। মেয়েটি এখন আর এই পৃথিবীতে নেই। মেয়েটির চুলটি আছে। হয়তো কোন এক আবেগময় মুহুর্তে মেয়েটি তার চুল, তার শরীরের একটা অংশ দেয়ালে গেথে দিয়েছিল। তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য। ‘আমি না থাকি, আমার শরীরের একটা অংশ তোমার সাথে থাকবে’। ‘ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে’ – শরীরের মৃত্য হলেও আত্মার মৃত্যু হয়না। মানুষ মারা যাওয়ার পর তাকে সমাহিত করা হয় কেন? আবার হিন্দুরা পুড়িয়ে ফেলে। হিন্দু ফিলোসফি বলে, পঞ্চভুত থেকে মানুষের সৃষ্টি আবার যেন সেই পঞ্চভুতেই মিলিয়ে যায়। মুসলিম, ইহূদী আর খ্রীষ্টানরা সমাহিত করে। উদ্দেশ্য পুরো শরীরটিই যেন মৃত্তিকার অংশ হয়ে যায়। কিছুই যেন আর মাটির উপরে না থাকে। লেনিনের দেহ মমি করে রাখা হয়েছে, আজ সত্তুর বছরের উপর। নাস্তিক কম্যুনিস্টরা কাজটি করেছিল। এই নিয়ে এখন অনেক কথা হচ্ছে। ধর্মভীরুরা বলছে, এটা গ্রহনযোগ্য নয়, মৃত মানুষের দেহের স্থান মাটির উপরে নয়, মাটির নীচে। মাটির উপরে মৃতদেহ দীর্ঘকাল রাখলে তা অমঙ্গল বয়ে আনে। মৃত মেয়েটির শরীরের একটা অংশ, এখন আমার সামনে আছে। আমার রুমেই। সাথে সাথে কেমন একটা অস্বস্তি ঘিরে ধরল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, সেখানে জমাট অন্ধকার। অকারণে গাটা ছমছম করতে লাগলো। অকারণই বা বলছি কেন? এই দুদিন যা ঘটেছে ও শুনেছি তাতে তো ভয় লাগার সুস্পষ্ট কারণই আছে। সাশাকে বললে অবশ্য আমার রূমে এসে ঘুমাতো, কিন্তু সেটা বলতে যাইনি। কেমন যেন নিজেকে কাপুরুষ মনে হয়। আবার আমি একা রুমই ভালোবাসি, তাতে প্রাইভেসি থাকে।
ভয়ভীতি দূর করে নিজের হেফাজত পাওয়ার একটাই পথ – মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। তাই করলাম ওযু করে পাক-সাফ হয়ে এশার নামাজের সাথে আরো দুই রাকাত নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ার পর দোয়া করা, শুধু নিজের জন্য দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়না, মৃত-জীবিত সবার জন্যই দোয়া করতে হয়, তাই করলাম।
ভয় বা অস্বস্তি যেটাই বলি, অনেকটাই কমে এলো। ডিভানটা খুলে বিছানা তৈরী করে গা এলিয়ে দিলাম। রূমের বাতিটা নিভিয়ে দিলাম। গাঢ় অন্ধকারে রুমটা ভরে গেল। রূমে একা থাকার কারণে এম্নিতেই একাকিত্ব বোধ করি, এখন আবারো অস্বস্তি চেপে বসলো আমার বুকে। নাহ্ এভাবে অন্ধকারে থাকা যাবেনা । টিভি সেটটা অন করে দিলাম। একেবারে অন্ধকার না হয়ে কিছুটা হলেও যেন আলো থাকে। শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতে থাকলাম। পুরাতন রাশান টিভি, রিমোট সিস্টেম নাই, ভিতরে ভালভ্ এ্যারেন্জমেন্ট, খুব ভালো চলে। আমার আগে একজন বাঙালী ভাই ছয় বছর চালিয়েছিলেন, আমি গত চার বছর চালাচ্ছি। তারপরেও বেশ স্মুথ। ফিজিক্স ক্লাসে ডঃ ব্লেশেনকা বলেছিলেন, ভালভ্ এ্যারেন্জমেন্ট ইলেকট্রনিক্স ভারী হয় সত্য, কিন্তু টেকশই হয়। ভালো সার্ভিস দেয়। প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ‘টনিস’ চলছিল। এটা খারকভ শহরের নিজস্ব চ্যানেল। এবং এটাই সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম প্রাইভেট টিভি চ্যানেল। একটি অ্যামেরিকান ফিল্ম চলছিলো। শুরুটাই হলো খুন দিয়ে, তারপর এই হত্যাকান্ডকে ঘিরে নানা কাহিনী। অ্যামেরিকান ফিল্মগুলোর ধরনই বোধহয় এরকম। খুন, সেক্স, টাকা এইগুলোই কাহিনীর উপকরণ। ভালো ছবি যে হয়না তা নয়, কিছু কিছু ছবি এককথায় দুর্দান্ত। কিন্তু বেশীরভাগেরই ঐ টাইপ। সেই তুলনায় রাশান ফিল্মগুলোর বেশীরভাগই অসাধারণ। বিশাল কাঁচের জানালার পর্দাটা খোলা ছিল। বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে, একবার ভাবলাম পর্দাটা টেনে দেই। আবার ভাবলাম, না থাক, পর্দা টেনে দিলে নিজেকে আরো বেশী বদ্ধ মনে হবে। বাইরের বিরিওজা গাছগুলোর উপরে দিনের বেলায় নীলাকাশ দেখা যায়। রাতের আকাশ নিঃসন্দেহে কালো। সেই অন্ধকারের বুক চিরে হঠাৎ আলো ফুটে উঠলো। এক বিন্দু আলো। ভুল দেখছি না তো? না ঠিকই দেখছি। একটি তারা খুব ধীরে ধীরে একপাশ থেকে আরেক পাশের দিকে যাচ্ছে।না অবাক হলা না, অলৌকিক কিছু নয়, একেবারেই লৌকিক। দেশে থাকতে একবার এরকম গতিশীল তারা দেখে অবাক হয়েছিলাম, ফিজিক্সের শিক্ষকও বলতে পারেননি। প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনকারী দেশে এসে এখন আমি জানি ওটা স্যাটেলাইট। নিজের মনে হাসলাম – জানা থাকলে স্বাভাবিক, আর অজানা অনেক কিছুকেই অনেক সময় অলৌকিক মনে হয়। বাইরের অন্ধকার, বিজ্ঞানের অনন্য উপহার টিভির হালকা আলো। সব মিলিয়ে আবছা আলো আধারী পরিবেশে ধীরে ধীরে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।
একটা অস্পষ্ট আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলতে চেয়েও মেলতে পারলাম না। আমার কি ঘুম ভেঙেছে? এখন কটা বাজে? ঠাহর করার চেষ্টা করলাম ভোরের আলো ফুটেছে কি ফোটে নাই। আওয়াজটা আরেকটু স্পষ্ট হলো। ইলেকট্রিক ক্যাটল চলছে। কেউ কি ওটা চালিয়েছে?
গ্রীস্মের পাগল হাওয়ায় ঝিরঝিরে ভৌতিক শব্দ করছে বিরিওজার পাতা। মনে হলো জানালার বাইরে আলো নেই। তার মানে রাত। ধক করে উঠলো বুকটা। শুনেছি রাতের অন্ধকারেই অশুভ শক্তিরা ঘুরে বেড়ায়। ঢাকায় একবার ২১শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যরাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলো। ব্যপক তদন্তের পর পুলিশ রিপোর্ট দিল, এটা অশভ শক্তির কাজ ছিল। এবং তারা ২১শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যরাতের প্রোগ্রাম বাতিল করে, কেবলমাত্র ঐতিহ্যবাহী প্রভাত ফেরী দিয়েই অনুষ্ঠান শুরু করার সুপারিশ জানিয়েছিল।
মনে হলো ইলেকট্রিক ক্যাটলটা চালু করে কেউ ঘরের ভিতর হাটাহাটি করছে। আমার বুক দুরু দুরু করতে লাগলো। ঘাড় থেকে মেরুদন্ড বেয়ে শিরশির করে নিচের দিকে নেমে গেল ঠান্ডা ভয়ের স্রোত। সাহস সঞ্চয় করে ডাকতে শুরু করলাম, “কে? এখানে কে?” কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন স্বর বের হলো না। আমার ডাকার চেষ্টায় সব শব্দ থেমে গেল। এমনকি বিরিওজার পাতাগুলোও আর কাঁপছে না। নীরবতায় থমথম। আমার উৎকন্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। আমি চোখ খোলার চেষ্টা করে কোন কাজ হলোনা, সামান্য খোলা দুটি চোখের পাতার দৃষ্টিপথে পিসিগুলো সব অস্পষ্ট করে দিচ্ছে। অন্ধকারের বুক চিরে ক্ষীণ আলোর আভাস, একি কোন আবছা ভৌতিক আলো। সবটাই কেমন অদ্ভুত আর রহস্যময় ঠেকলো আমার কাছে। এমনভাবে কত সময় পার হয়ে গেল কে জানে?
অনেক পরে পরিপূর্ণরূপে ঘুম ভাঙলো। ইতিমধ্যে রাত পেরিয়ে অন্ধকার কেটে গেছে। পূব আকাশে মেঘের বুকে সবে রঙের ছোপ লাগতে শুরু করেছে। কানে এসে বাজলো মোরগের ডাক। এদেশে আযানের ধ্বনি শোনা যায়না, গীর্জার ঘন্টাও বাজেনা। ভোর বেলা কর্কশ ডাকে ঘুম ভাঙিয়ে দেয় বলে মোরগের উপর ভীষণ রাগ হতো ঘুমকাতুরে আমার। আজ সে ডাক মধুবর্ষণ করলো আমার কানে। ঘুম ভাঙার সাথে সাথে দুঃস্বপ্নটা কেটে গেল। কে জানে সত্যিই স্বপ্ন ছিল কি-না!
নাহ্ এই ভৌতিক রূমে আর থাকা যাবেনা। অন্য কোন রূম খুঁজে নিতে হবে। ব্রেকফাস্ট করে হোস্টেলের কমান্ড্যন্ট-এর কাছে যাব। কমান্ড্যন্ট-এর কথা মনে হতেই মেজাজ খিচড়ে গেল। আমার বয়সী ইয়াং একটা মেয়ে। নাম স্ভেতা। গায়ে-গতরে বড়সড় বলে দেখলে বয়স্ক মনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে ম্যাচিউরড ছেলেমেয়েরা থাকে, পিএইচডি স্টুডেন্টরাও থাকে, দু’একজন ইয়াং টিচারও থাকে। এখানে বয়স্ক দায়িত্বশীল কমান্ড্যন্ট থাকা উচিত। তা না করে দায়িত্ব দিয়েছে এই ছুকরীকে। আসলে ওর দাদা ছিল এর আগের কমান্ড্যন্ট। রিটায়ার করার আগে দাদাই ইউনিভার্সিটির রেক্টরকে রিকোয়েস্ট করে, নাতনিকে চাকরীটা পাইয়ে দেয়। এখন মেয়েটি ধরাকে সরা জ্ঞান করে কাউকে তোয়াক্কা করেনা। ঘুষ ছাড়া কাজ করেনা। আমাকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। কারণ দুয়েকবার বাক-বিতন্ডা হয়েছে। এখন আমি গিয়ে রূম চেইন্জ করতে চাইলে রূম তো চেইন্জ করবেই না, উল্টা এই রূমেই পাকা-পোক্ত থাকার ব্যবস্থা করার চেস্টা করবে। আমাকে অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করতে হবে।
প্যালেস্টাইনের খালেদের কাছে গেলাম। ও আমার ক্লাসমেইট। ওর স্ত্রী আবার ইউক্রেণীয়। ইউনিভার্সিটিতেই কি একটা চাকরী করে যেন। লম্বা চওড়া সুদর্শন খালেদ একসময় লেডী কিলার ছিল। এম্নিতেই আরবরা দেখতে সুন্দর হয়। মেয়েদের ভাষ্য মতে (শুধু রুশ মেয়ে নয়, ইউরোপীয়, এশিয়, দক্ষিণ আমেরিকান সব মেয়েদের মুখেই শুনেছি, পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর পুরুষ হলো আরবরা। তাই সব দেশের মেয়েরাই আরবদের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকত।) আরবরাও এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করে বেশ। খালেদও করত। হঠাৎ করেই কি হলো, নাতাশা নামের বয়সে অনেক বড় মেয়েটির সাথে ঘর-সংসার করতে শুরু করলো। প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারিনি, পরে ওর দেশীদের মুখেই শুনলাম। খালেদের সাথে সম্পর্কের ফলে নাতাশা হঠাৎ প্রেগনেন্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে খালেদ নাতাশার সাথে থাকতে শুরু করে। অল্প সময় পরে ফর্মাল বিয়েটাও সেরে নেয়। ওদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। সিরিয়ার রাফাত বলল, “নাহ্, খালেদকে বাহবাই দেব, এরকম পরিস্থিতিতে ছেলেরা গাঁ বাচানোর চেষ্টা করে। খালেদ তা না করে নাতাশাকে বিয়ে করেছে, মেয়েটির পিতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। ওয়েল ডান!”
সেই খালেদকে গিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। আমাদের কথার মাঝখানে নাতাশাও এলো। সব শুনে বলল, “ঠিক আছে কোন অসুবিধা নাই। তুমি আমার স্বামীর বন্ধু, আমি তোমাকে অবশ্যই হেল্প করব।”
আমিঃ কি করে?
নাতাশাঃ বারে! আমি তো এই স্টুডেন্ট টাউনের ডেপুটি ডিরেক্টর। আমি বললেই ডিরেক্টর তোমার সব ব্যবস্থা করে দেবে। স্ভেতার মত কমান্ড্যন্টরাতো সব আমাদের আন্ডারেই কাজ করে।
ধরে প্রাণ ফিরে পেলাম। কাজটা সহজেই হবে তাহলে। গুড!
বিকালের দিকে হোস্টেলের স্টুডেন্ট কমিটির প্রধান সের্গেই গারানঝা এলো।
গারানঝাঃ রিমন, শুনলাম রূম পাল্টাতে চাও?
আমিঃ চাই তো।
গারানঝাঃ স্ভেতা বাধা দিচ্ছে?
আমিঃ জানিনা। এখনো কিছু বলিনি। জানলে বাধা দিতেও পারে।
গারানঝাঃ না বাধা দিতে পারবে না। স্ভেতা কমান্ড্যন্ট হতে পারে, কিন্তু তোমাকে খাটো করে দেখলে হবেনা। তোমার একটা রাইট আছে। তুমি এখানে চার বছর ধরে আছো।
আমিঃ ঠিক। আমিও তাই মনে করি।
গারানঝাঃ চিন্তা করোনা। আমি আছি তোমার সাথে।
আমি মনে মনে ভাবলাম, ভালোই হলো আরেকজন পাওয়া গেল আমার পক্ষে। পরে জানতে পেরেছিলাম সের্গেই-এর সাথে স্ভেতার ঠান্ডা লড়াই চলছে। তারই রেশ ধরে সের্গেই এসেছে আমার সাথে সন্ধি করতে।
সের্গেই চলে যাওয়ার মিনিট বিশেক পর খালেদ এলো।
খালেদঃ ব্যাগ-ট্যাগ গোছাও।
আমিঃ কেন দেশে পাঠিয়ে দেবে নাকি? হা হা হা!!
খালেদঃ না দেশে না। অত ক্ষমতা এখনো হয়নি। আপাততঃ অন্য রূমে।
আমিঃ রিয়েলী।
খালেদঃ হ্যাঁ বন্ধু, আমার ওয়াইফ কল-কাঠি নেড়ে এসেছে। ডিরেক্টরের নির্দেশে স্ভেতা এখন তোমাকে অন্য রূম বরাদ্ধ করবে।
একটা প্রশান্তি বয়ে গেল আমার বুকে।
আমিঃ তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব!
খালেদঃ ধন্যবাদ দিতে হবেনা। আপাততঃ চা খাওয়াও এক কাপ।
তারপর ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে বলল।
খালেদঃ আরে বন্ধুর জন্য যদি এটুকুই করতে না পারলাম। তাহলে কিসের বন্ধু বল? তুমি আমি একই দেশের না হতে পারি। একই ধর্মের তো! মুসলমান-মুসলমান ভাই-ভাই। আমি প্যলেস্টাইনের মানুষ। আমাদের প্যলেস্টাইনের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের দরদের কথা আমি জানি।
আমিঃ ওহ্হো (খুশী ও কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলাম আমি)।
চা বানাতে বানাতে বললাম, “তোমাদের ইয়াসির আরাফাতের সাথে তো আমাদের মরহুম প্রেসিডেন্ট ………।” কথা শেষ করতে পারলাম না।
খালেদঃ জিয়াউর রহমানের কথা বলছ তো? আমি জানি ইয়াসির আরাফাত ও জিয়াউর রহমান ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল। অনেক ছবি দেখেছি, দেশে থাকতে। তখন কি ভাবতাম জানো?
আমিঃ কি?
খালেদঃ তোমাদের গরীব হলেও একটা দেশ আছে। আমাদের সেটাও নেই।
ওর কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। বললাম
আমিঃ হবে হবে। একদিন তোমাদেরও দেশ হবে।
আমার মন খারাপটা খালেদ বুঝতে পারলো। তাই পরিবেশ পুনরায় হালকা করার জন্য বলল।
খালেদঃ বাদ দাও, দুই কাপ চা খাব, চিনি বেশী করে দেবে?
আমিঃ মিল্ক দেব?
খালেদঃ নাহ্, ইংলিশ টি আমি খাইনা।
খালেদ বসে থাকতে থাকতেই স্ভেতা এলো। প্রবল জ্বরে পড়েছে, এরকম টাইট মুখভঙ্গি নিয়ে বলল।
স্ভেতাঃ এই নাও চাবি, পাঁচতলায় ৮৮ নং রূম তোমার নামে বরাদ্ধ করা হয়েছে। এই রূম ছেড়ে দিয়ে চাবিটা আমার হাতে দিয়ে দিও। দুদিন সময় দিলাম।
আমার হাতে চাবি দিয়ে ঘুরে দাড়ানোর সময় মুখ বেকিয়ে বলল,
স্ভেতাঃ তোমার হাত অনেক দূর পর্যন্ত লম্বা রিমন। উপরওয়ালা তোমাকে দুটা জিনিস দিয়েছে, একটা হলো সৌভাগ্য আরেকটা হলো মাথা। এই দুয়ের কল্যাণে অনেক দূর যেতে পারবে তুমি।
স্ভেতা চলে যাওয়ার পর খালেদ অট্টহাস্য দিয়ে উঠলো।
খালেদঃ হা হা এই প্রথম ঘাট খেয়েছে ও। ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেনা। এখন বুঝবে সবার কাছ থেকে ঘুষ চলেনা।
আমিঃ তোমাকে আর নাতাশাকে ধন্যবাদ।
খালেদঃ আরে রাখো ক’বার ধন্যবাদ দেবে? এখন প্রস্তুতি নাও। কবে যাবে নতুন রূমে?
আমিঃ আজই যাবো। এই ভুতের রূমে আর নয়।
খালেদঃ ঠিক আছে আজই যাও। তোমাকে মাল টানতে হেল্প করব আমি।
আমিঃ আরে না না। তোমাকে কিছু করতে হবেনা। আমি ম্যনেজ করে নেব।
খালেদঃ কাউকে না কাউকে তো লাগবেই। আমি আসবো সমস্যা নেই। ডিনারের পরে করি কাজটা?
আমিঃ ওকে। প্রবলেম সলভ্ড, আমি এখন অন্য কথা ভাবছি।
খালেদঃ কি কথা?
আমিঃ আমি না হয় এখান থেকে রেহাই পেলাম। কিন্তু তারপর? এরপর এখানে কাকে পাঠাবে? যাকে পাঠাবে সেও যদি আমার মত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়?
খালেদঃ তা জানিনা। স্ভেতাকে এখানে পাঠাতে পারলে ভালো হতো। ভুতে যদি চেপে ধরত তাহলে ওর দুর্নীতি কমত।
হা হা হা সমস্বরে হেসে উঠলাম দু’জনেই।
স্যুটকেস গোছাতে শুরু করলাম। দ্রুত করতে হবে। আজ রাতটা কিছুতেই এখানে কাটাতে চাইনা। স্যুটকেস গোছাতে গোছাতে হঠাৎ স্যুটকেসের পকেটে আবিষ্কার করলাম জিনিসটা। একটা কার্ড সাইযের পলিথিনের প্যাকেট, তার ভেতরে পেচিয়ে রাখা একটি লম্বা কালো চুল। লুবনার চুল । বিদেশে আসার সময় এই উপহারটি ও আমার হাতে তুলে দিয়েছিল। সেই থেকে আমার সাথে আছে।
(চলবে)
চলবে.... :clap:
ধন্যবাদ
ভাল লেগেছে। চলুক...
ধন্যবাদ, নিয়াজ