দশ পয়সার আইসক্রীম
————ডঃ রমিত আজাদ
(উৎসর্গঃ যার কায়া হয়েছে মৃত্তিকা ও মহাকালের অংশ, যার আত্মা ফিরে গিয়েছে তাঁর স্রষ্ঠার কাছে, সেই আমার শ্রদ্ধেয় দাদীমা-কে)
গভীর রাতের স্বপ্ন ভেঙে ডুকরে কেদে উঠি
চঞ্চলা হাওয়ার মায়াবী মেঘ স্বপ্ন হয়ে
গুন্জন তোলে এক শৈশব ফাগুনের কাব্য
স্মৃতির জলপ্রপাতের তুমুল জলরাশির ভেতর হারিয়ে যাই
ফেলে আসা জীবনের অথৈ স্রোতে
আমি তখন স্কুলে যেতে শুরু করেছি
স্কুলের গুরুত্ব বুঝিনা
শুধু বুঝি, সব শিশুকেই স্কুলে যেতে হয়
সকাল সকাল মা আমাকে সাজিয়ে দিতেন যত্নে,
তখন ইউনিফর্ম ছিল না,
যে যার মত পোষাকে চলে যেতাম স্কুলে,
অবাক হচ্ছেন?
আসলেই তাই ছিল কিন্তু,
বাংলাদেশটা তখন ছিল অন্যরকম
টাকা-পয়সা তেমন কিছু ছিলনা দেশের,
তবে জীবন ছিল অনেক সহজ বেশের
হাতে সেলাই করা কাপড়ের ব্যাগটা কাঁধে তুলে দিতেন মা
“যা বাবা মনযোগ দিয়ে ক্লাস করিস”
ঘরের দরজা ছাড়িয়ে,
ছোট্ট বাগানটা পেরিয়ে
মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যাবার পথে
দাদীমা চুপিসারে হাতে গুজে দিতেন একটি ছোট্ট কয়েন
মা রেগে বলতেন,
“না, না বাচ্চাদের হাতে পয়সা দেয়া ঠিক না”।
আমি হাত খুলে দেখতাম চকচকে কয়েনটি,
মূল্য তার দশ পয়সা,
কেউ হয়তো বলবেন, “মাত্র!”
আর আমার কাছে তা ছিল অমূল্য রত্ন
আমি খুশিতে ঝলমল করে উঠতাম
স্কুল থেকে ফেরার পথে
একটা দশ পয়সার আইসক্রীম খেতে পারব।
স্কুল ছুটির পর কিছু সময় দাঁড়িয়াবান্ধা খেলে
অবশিষ্ট ধুলোবালি ঝেড়ে
স্কুলের গেটে দাঁড়ানো আইসক্রীমওয়ালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই
ও হাতে তুলে দিত, শীতল বরফ, রঙিন সুগন্ধী
একটি দশ পয়সার আইসক্রীম
কি আনন্দেই না কামড় বসাতাম ঐ শক্ত বরফে!
যেন স্বর্গের অমৃত ধরা আমার নরম হাতে
প্রতিদিন ঘন তমসা কাটিয়ে যখন সকাল হতো
কেবল আনন্দ ছিল স্কুলে যাবার
অপেক্ষার প্রহর গুনতাম
স্কুলের জন্য নয়
ঐ দশ পয়সার জন্যে
শিশির ভেজায় রাত, জোৎস্নার শোভা বাড়ে
শরতের রূপশুধা ছুঁয়ে, বরষার বারি ঝরে
ভরদুপুরের নিস্তদ্ধতা ভেঙে, বর্নিল দিনগুলো ছেড়ে
সেই স্মৃতির কয়েনগুলো মেঝের উপর ঝনঝনিয়ে পড়ে
এই দীর্ঘ জীবনে কত কিছুই তো খেয়েছি
ম্যাগডোনাল্ডস থেকে শুরু করে ফাইভ স্টার হোটেল পর্যন্ত
কত দামী দামী আইসক্রীম!
দামী ক্যাফের কত রকমারী রঙের
মজাদার স্বাদের কত শত আইসক্রীম!
কিন্তু আমার একান্ত প্রিয়
ঐ দশ পয়সার আইসক্রীম
দুর্দান্ত।
আ হা ... সেই দিনগুলো।
অনেক ধন্যবাদ নূপুর।
কিছুতেই ভুলতে পারিনা সেই দিনগুলো
অনেক ধন্যবাদ নূপুর।
কিছুতেই ভুলতে পারিনা সেই দিনগুলো ।
সুন্দর :clap:
অনেক ধন্যবাদ সানাউল।