লিস্টনিং টু দ্য উইন্ড অফ চেইঞ্জ – পর্ব ৬, ৭

লিস্টনিং টু দ্য উইন্ড অফ চেইঞ্জ – পর্ব ৬

——————————ডঃ রমিত আজাদ

গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে একটা ফোন এল।রিসিভার তুলতে ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো –
ঃ এখানে শিউলি আছে?
ঃ শিউলী? কি করেন তিনি? (আমি অবাক হয়ে বললাম)
ঃ আমার নাম পারভীন, আমরা একসাথে অনার্স পরীক্ষা দিয়েছি।
ঃ আপনি কত নাম্বারে রিং করেছেন?
ঃ ৪০৫৭০৪
ঃ হ্যাঁ, নাম্বার তো ঠিকই আছে, কিন্তু এ নামে তো এখানে কেউ থাকেনা।
ঃ তাহলে কি ও আমাকে ভুল নাম্বার দিল!
ঃ হতে পারে।
ঃ কাল গিয়ে ওকে ধরব। কি করেন আপনি?
ঃ আমি আপনার ছোট। এবার এইচ, এস, সি, পরীক্ষা দিয়েছি।
ঃ হ্যাঁ, গলার ভয়েস শুনে বুঝতে পারছি। কোন কলেজ থেকে?
আমি কলেজের নামটা বললাম।
ঃ ভালো ছাত্র নিশ্চয়ই?
ঃ না, তেমন ভালো ছাত্র নয়।
ঃ আপনার নাম?
ঃ রোমান।
ঃ আচ্ছা রাখি তাহলে।
আমার মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে গেল। বললাম
ঃ আপনার ফোন নাম্বার কত?
ঃ আমার? উঁ, আচ্ছা থাক, আমিই আপনাকে ফোন করব। কখন থাকেন আপনি?
ঃ আমাকে সকালে ও রাত্রে পাবেন।
ঃ আচ্ছা রাখি।

ফোনটা রেখে ভাবছিলাম মেয়েটা কে? কেন ফোন করেছিল? মেয়েটা কি আমাকে চেনে? আমাদের আশেপাশেই থাকে? নাকি কোচিং-এর কেউ? শিমুলকে তো ফোন নাম্বার দেইনি। অবশ্য দিলেও কিছু আসতো যেতো না। কিন্তু ও চায়নি তো? অবশ্য ফোন নাম্বার যোগার করাটা ব্যাপার না। কোচিং-য়ের অফিস থেকেই যোগার করা যায়। আমার বন্ধুদের কারো কাছ থেকেও নেয়া যায়। অতশত ভাবছিই বা কেন? মেয়েটার কন্ঠস্বর শিমুলের কন্ঠস্বরের মত মোটেও না। তাহলে? কে ও? নাহ্, আমি হয়তো ফ্যন্টাসি খুব বেশী করে ফেলছি। এমন হতে পারে ও আমাকে চেনেই না সত্যিই সে ভুল করেছে। তাহলে আবার ফোন করতে চাইল কেন? আজকাল এসব হয়। আমাকে সিনিয়ররা বলেছে। ছেলেমেয়েরা টেলিফোনে প্রেম করে। আমাদের সমাজ খুব বেশী রক্ষণশীল। তাই নারী-পুরুষ সম্পর্কে স্বাভাবিকতা নাই। ইয়াং বয়সের ছেলেমেয়েরা পরস্পরের সান্নিধ্যে আসতে চায়। কিন্তু সামাজিক বাধার কারণে এটা খুব কঠিন। মেয়েদের জন্য আরো বেশী। ছেলেরা যাও একটু গাঁ বাঁচিয়ে চলতে পারে। কিন্তু মেয়েদের বড় সমস্যা, একবার দুর্নাম হলে আর রক্ষা নেই। একদিকে তারুণ্যের চাহিদা, আরেকদিকে সমাজের রক্তচক্ষু, একেবারে শাঁখের করাত। তাই অনেকের কাছেই একমাত্র উপায় ঐ টেলিফোনটি। অনেক মেয়েই তাই মানসিক চাহিদা মেটাতে, টেলিফোনে কোন বন্ধু খুঁজে ফেরে। মনের মতো কাউকে খুঁজে পেলে টেলিফোনেই চলে প্রেমালাপ। কখনো কখনো সেটা সেক্স টকেও পরিণত হয়। আবার কখনো শালীণতার মধ্যেই থাকে। এভাবে অন্তত কিছুটা হলেও মনের ক্ষুধা মেটে।

রাতে একটি খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম। অপার নীল আকাশের নীচে, সবুজ টিলাময় একটি বিস্তির্ণ প্রান্তর, চারপাশে কোন ঘরবাড়ি নেই প্রকৃতির অপরূপ রূপ একেবারে দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। মায়ের নীচের মাটি ঢাকা পড়েছে ঘন তৃণদলে, আর এখানকার তৃণতরু এত সজল ও সবুজ যা সচরাচর চোখে পড়েনা। বিকেলের উষ্ণ রোদে শ্যামল উপত্যকা জুড়ে ফুটে থাকা ছোট ছোট ঘাসফুলগুলো কি মায়াই না রচনা করেছে। দূরে কোথাও উঁকি দিচ্ছে একঝাক সূর্যমুখী। চকিতে ছুটে গেল একটি চিত্রা হরিণ, কোন এক গাছের আড়াল থেকে বিরামহীন মধুর সুর মৃদুমন্দ বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছিল একটি মায়াবী কোকিল । সেই মায়াময় পরিবেশে সহসা আবির্ভুত হলো একটি রুপকথার রাজকন্যার মত অনিন্দ্যসুন্দরী মেয়ে। মধুর মিষ্টি মুখ, কাধ পর্যন্ত নেমে আসা কোঁকড়ানো চুল, ভ্রুর নীচে পাখীর নীড়ের মত দুটো চোখ, অপরূপ রূপতনু! এই সব কিছু দেখে শিরায় শিরায় রক্ত ছলকে উঠল। ফুলকে ফুল বলতে দ্বিধা কোথায়? বললাম, পাহাড়ী গোলাপ, তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে আঁকা? মেয়েটি অনুরাগে ব্লাশ শুরু করল। আমি ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম, আমার হাতের পাঁচটি আঙুলের অগ্রভাগ ওর ঐ অপূর্ব মুখশ্রীর সাত রঙের স্পর্শ চায়।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। অস্বস্তিকর কিছু একটা ঘটছে। চকিতেই বুঝতে পারলাম, আমার খাটটা দুলছে। ভূমিকম্প! হ্যাঁ, ভূমিকম্পই তো! টলমল করে উঠল আমার আত্মা। ধরফর করে উঠে বসলাম। দৌড়ে এলেন মা। “রোমান, রোমান, ভূমিকম্প!” মাকে অত উত্তেজিত মনে না হলেও, আশংকার ছায়া পড়েছে মুখে। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। দৌড় দেব? কোথায় দৌড় দেব? হাউজিং-এ সামনে কিছু ফাঁকা জায়গা আছে। ওখানে যাওয়া যায়। কিন্তু চারপাশে উঁচু উঁচু ছয়তলা দালান। ভাঙলে সব মাথার উপরেই পড়বে। আরেকটু সামনে রাস্তায় গেলে রক্ষা হতে পারে। ভিকারুন নিসা স্কুলের মাঠ আছে। খুব সকাল, ভোর ছয়টা হতে পারে। বাবা বাড়িতে নেই, পার্কে হাটতে গিয়েছেন। বড় আপা, ছোট আপা বাড়ীতে, কাজের মেয়েটিও আছে। সবাইকে নিয়ে দৌড়ে বাইরে চলে যাব কি? এই সব ভাবতে ভাবতেই দুলুনি বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু মনের আশংকা দূর হয়নি। ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগল। দিনটা ছিল ৬ই আগষ্ট, ১৯৮৮। এরপর কয়েকদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল ভুমিকম্পের কথা।

আমার ভাগ্নে জাহিদ বলল, “আমি ঘর থেকে বের হওয়ার কথা ভাবিইনি, রাজারবাগের এই গলির মধ্যে কোথায় বের হবো? বের হয়েও কোন লাভ নেই। তাই ঘরেই ছিলাম, রাস্তায় না মরে ঘরেই মরা ভালো।

আমার ফুপাতো বোনের হাসবেন্ড দুলাভাই (বয়সে মুরুব্বী বাবার মতই বয়স) বললেন।
ঃ দেখতো রোমান যদি বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেত, তাহলে কারা বাঁচতো?
ঃ জ্বী কারো তো বাঁচার কথা নয় ঘরবাড়ী ভাঙলে তো সবাইই মারা যাবে।
ঃ না না, তোমার বাবার মত, আমার মতো অনেকেই সেদিন মর্নিং ওয়াক করতে বেড়িয়েছিল। তারা তো বেঁচে যেতেন।
মুরুব্বী মানুষ, উনার সাথে তর্ক করা ঠিক নয়। উনার মন রাখার জন্য বললাম
ঃ জ্বী ঠিক বলেছেন।
ঃ সুতরাং এখান থেকে শিক্ষণীয় হলো এই যে, খুব ভোরে উঠে মর্নিং ওয়াক করা উচিৎ।
পুরান আমলের মানুষ, সব কিছুর মধ্যেই শিক্ষণীয় কি আছে খোঁজে। আমি কোন তর্ক-বিতর্কে না গিয়ে আবারো মাথা নেড়ে সায় জানালাম।
কিন্তু আপা (উনার স্ত্রী) ছাড়লেন না। বললেন
ঃ ব্যাডায় বাইচ্চা থাকলে হইবে কি? ব্যাডার বউ পোলাপান সব মরবে!
দুলাভাইও নাছোড়বান্দা, বললেন
ঃ তারপরেও একটা পরিবারের সবাই মরে যাওয়ার চাইতে কেউ কেউ বেঁচে থাকা ভালো।

আমার মনে পড়ল কলেজে থাকাকালীন দুইটি ভুমিকম্পের কথা।প্রথমটি ঘটেছিল ১৯৮৬ সালে কয়েকদিন যাবৎ দিনের বেলায় শিয়াল ডাকছিল। রাতে শিয়ালের ডাক শুনে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু দিনের বেলায় শিয়ালের ডাক! অবাক হলাম। আমাদের ক্লাসের ইকরাম বলল
ঃ ভুমিকম্প হবে।
বুকটা ছাৎ করে উঠল। ওর কথার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলাম। এটা সংস্কার – মানুষের হাজার বছরের অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণের ফলাফল। কিন্তু ঐ কথা মন মানতে চাইছিল না। সংস্কারকে কুসংস্কার মনে করতে চাইছিলাম। কিন্তু দুয়েক দিন পর ঘটনাটি ঠিকই ঘটল।রাত প্রায় সাড়ে দশটার দিকে, যখন সবাই ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এসময় হঠাৎ দালান কোঠা দুলে উঠল। পড়িমরি করে ছুট লাগালো সবাই। যে যেদিক দিয়ে পারে। যারা একতলায় ছিল তারা চট জলদি পাশের মাঠে নেমে গেল। আর যারা দোতলা তিনতলায় ছিল তারা বিশাল ছাত্রাবাসের তিনটি সিঁড়ি দিয়ে, লাফিয়ে ঝাপিয়ে যে যেভাবে পারে নামতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের জন্য কারো হুঁশ বলতে কিছু ছিলনা।

দ্বিতীয়টি ঘটেছিল ১৯৮৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী। আমার জীবনের ইতিহাসে এটাই সব চাইতে বড় ভূমিকম্প। এটি ছিল ১৯৮৬-র ভূমিকম্পের দ্বিগুন। এবারও আগের মতই দিনের বেলায় শিয়াল ডেকেছিল। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে, কয়েকদিন যাবৎ আমাদের হৃদয়ও দুরু দুরু করছিল। এদিকে বেগ একটা কি সিনেমা দেখে এসে গল্প জুড়ে দিয়েছিল, নস্ট্রাডেমাস নামে এক জ্যোতিষী ছিল। দুনিয়ার সব চাইতে বড় জ্যোতিষী সে। পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে নানা ভবিষ্যদ্বানী করেছে কয়েক শত বছর আগেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলেছে, বলেছে হিটলারের কথা। সবই মিলে গিয়েছে। এখনও কিছু ভবিষ্যদ্বানী ফলা বাকী আছে, এর মধ্যে একটি হলো ১৯৮৮ সালে একটা বিশাল বড় ভূমিকম্প হবে। সেই ভূমিকম্পে নিউ ইয়র্ক সিটি ধ্বংস হয়ে যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিকে দিনের বেলায় শিয়ালের ডাক, আরেক দিকে নস্ট্রাডেমাসের কাহিনী সব মিলিয়ে বেশ শংকিতই ছিলাম। সেই বিশাল ভূমিকম্পে নিউ ইয়র্ক না হয়ে আমাদের সিলেটই যদি শেষ হয়ে যায়! ঘটনা সত্যিই ঘটল। আমরা তখন ক্লাসরূমে বসে রাতের পড়ালেখা করছিলাম। এসময় দরজায় এসে দাঁড়ালো আমাদের ক্লাসের সব চাইতে চঞ্চল অথবা দুষ্টু ছেলে মাহবুব। ওকে দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম, এখনই এসে ডিস্টার্ব শুরু করবে। কিন্তু ও কিছুই না করে দরজায় দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। হঠাৎ শুনি পিছনে দুপদাপ আওয়াজ। চকিতে কিছু বুঝতে পারলাম না। জন্মের পর থেকেই যুদ্ধের গল্প শুনেছি। সবাই পালাচ্ছে কেন! যুদ্ধ লেগে গিয়েছে নাকি! বুঝলাম না। যুদ্ধ লাগলে সবাই জানালা দিয়ে পালাবে। এ যে দেখছি সবাই দরজার দিকে ছুটছে। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝতে পারলাম না। সবার দেখাদেখি আমিও ছুটলাম দরজার দিকে। করিডোরে পৌঁছে এহতেশামের উৎকন্ঠিত কন্ঠ শুনলাম, “ভূমিকম্প, ভূমিকম্প!” আমার আত্মা উড়ে গেল। একতলায় ক্লাস রূম, সিঁড়ি ভাঙার ঝামেলা রইল না। করিডোরের কংক্রিটের রেলিং ডিঙিয়ে মাঠে নেমে গেলাম। এই রেলিং লাফ না দিয়ে পার হতে পারার কথা না। কিন্তু সেদিন সেটা ডিঙিয়েই পার হলাম। কিন্তু জীবনের ভয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে যে জায়গায় নামলাম, কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম তার তিন দিক দালান দিয়ে ঘেরা। এই একটি জায়গাই ছিল এরকম বদ্ধ, আর আমরা সেখানেই নামলাম! এখানে বিল্ডিং ভাঙলে আমাদের মাথায়ই পরবে। কিন্তু ঐ মুহূর্তে অন্য কোথাও যাওয়ার সময়ও ছিল না। মনে হচ্ছিল কয়েক সেকেন্ডেই দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। যাহোক কিছুক্ষণ পর ভূমিকম্প শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে সংবাদ মাধ্যম মারফত জেনেছিলাম সেই ভূমিকম্পের স্থায়িত্বকাল ছিল ৩৮ সেকেন্ড।

মানুষ অথবা যেকোন প্রাণী নিজের প্রাণকে যে কতটা ভালোবাসে তা এ সমস্ত পরিস্থিতিতে বোঝা যায়। আবার মানুষের জান-জীবন, তিল তিল করে গড়ে তোলা ধন-দৌলত, অর্থ-বিত্ত, কীর্তি-খ্যাতি সব কিছু যে এক নিমিষেই ধুলিস্মাৎ হয়ে যেতে পারে এটাও সেই মুহূর্তে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই ভয়াবহতার মধ্যে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, জীবন পদ্মপাতায় শিশির বিন্দু।

আমাদের ক্লাসের ক্লাসের সব চাইতে সাহসী দীর্ঘকায় ও শক্তিশালী বুলবুল একা এক রূমে থাকত। ও আমার রূমে এসে চুপিচুপি বলে, “রোমান আমার খুব ভয় লাগছে. তুই কি একটু আজ রাতে আমার সাথে ঘুমাবি?” “কেন?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম আমি। “আমার ভয় লাগছে”, প্রথমে আমি ভাবলাম ফাজলামো করছে। তারপর ওর ভয়ভীতির কথা মুখে শংকার ছাপ দেখে বুঝলাম, ফাজলামো না, সিরিয়াসলিই বলছে। আমি অবাকই হলাম আমার দ্বিগুন সাইজের একজন মানুষ, সাহসী হিসাবে যার খ্যাতি আছে, সেইই ভয়ে এত জড়সড় হয়ে আমার কাছে এসেছে, সাহস পাওয়ার জন্য। মায়াই লাগল। একজন মানুষ যখন বিপদে পড়ে আপনার কাছে আসে এর মানে সে আপনাকে ভরসা করছে। সেই সময় তাকে ফিরিয়ে দেয়া মানুষের কাজ না। আমি ওকে বললাম, “চল তোর রূমে যাই”।

পরদিন সকালে আবারো ফোন এলো। পরিস্থিতি আমার পক্ষে ছিল, বাড়িতে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। বাবা আর বড় আপা অফিসে, ছোট আপা ইউনিভার্সিটিতে, মা কাজের মেয়েটিকে নিয়ে মার্কেটে গি্যেছেন।
ঃ হ্যালো, রোমান আছে?
ঃ বলছি। আপনি কে বলছেন?
ঃ ভয় পেলেন মনে হয়?
ঃ না, চিনতে পেরেছি। আপনি গতকালের উনিতো?
ঃ হ্যাঁ, গতকালের উনিই।
ঃ তারপর বলুন।
ঃ আচ্ছা, আমি না আপনাকে একটা মিথ্যা কথা বলেছি।
ঃ কি রকম?
ঃ বলব না থাক।
ঃ আরে বলুন না, বলে ফেলুন।
ঃ না, আপনি মাইন্ড করবেন।
ঃ না, আমি কখনো মাইন্ড করিনা।
ঃ আমি না মাত্র মেট্রিক দিলাম।
ঃ আচ্ছা, আমিও এরকম একটা সন্দেহ করছিলাম।
ঃ তাই?
ঃ হ্যাঁ, ভাবছিলাম নেক্সট টাইম ফোন করলে ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে এমন একটা প্রশ্ন করব, দেখব আপনি উত্তর দিতে পারেন কিনা।
ঃ ওরে বাবা। জানেন কাল আমার খুব খারাপ লাগছিল। আমি কখনো মিথ্যা বলিনা।
ঃ নামটা কি ঠিক আছে? না ওটাও —-
ঃ না। নামটা ঠিক আছে।
ঃ আচ্ছা আপনার বাবা কি করেন?
ঃ তিনি সাংবাদিক।
ঃ আপনি কোথায় থাকেন?
ঃ ইস্টার্ন হাউজিং, সিদ্ধেশরীতে।
ঃ আপনার বাবা আমাদের কথা শুনছেন না?
ঃ বাবা তো অফিসে।
ঃ ও তাইতো। তাহলে মা, মা কি শুনছেন? না কি উনিও জব করেন।
ঃ মা এক সময় স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, পাশাপাশি উনি একজন আর্টিস্ট, ছবি আঁকেন।
ঃ উনি কি আমাদের কথা শুনছেন?
ঃ না, উনি এখন বাসায় নেই। আর শুনলেও অসুবিধা নেই।
ঃ আমি ফোনে আপনাকে চাইলে দেবেন।
ঃ হ্যাঁ, দেবেন।
ঃ কিন্তু আমার মা দারুণ বদমেজাজী।
ঃ আপনারা কি রক্ষণশীল?
ঃ না তা নয়। আসলে আপনি ছেলে তো, তাই বোধহয় অসুবিধা হয়না।
ঃ না, তা বলতে পারব না। আসলে এখন তো বড়ই হয়ে গিয়েছি। আর আমার মা লিবারাল।
ঃ ও! তা কি করছিলেন?
ঃ বই পড়ছিলাম।
ঃ অবসর সময়ে কি শুধু বইই পড়েন?
ঃ বেশীরভাগ সময় তাই করি। আপনি কোন স্কুলে পড়তেন?
ঃ সিদ্ধেশরী।
ঃ এখন কোন কলেজে পড়েন?
ঃ একই কলেজ।
ঃ ও, আচ্ছা রাখি।

ফোনটি রেখে দিলাম। আসলে এত তাড়াতাড়ি রাখার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু কেমন যেন সংকোচ হচ্ছিল। মেয়েটিকে চিনিনা, জানিনা ওর সাথে টেলিফোনে দীর্ঘ সময় আলাপ করা কি ঠিক হবে? কি করব বুঝতে পারছি না। আমার জীবনে এই প্রথম এটা ঘটছে।

বিকালের দিকে আমিন, গিয়াস আর মোস্তাহিদ এলো আমাদের বাসায় বেড়াতে। আমিন আর গিয়াস তো ঢাকায়ই থাকে, আগেও কয়েকবার বাসায় এসেছে। মোস্তাহিদকে দেখে অবাক হলাম। ওর বাবা সরকারী চাকরী করেন। বর্তমানে যশোরে পোস্টেড। বললাম,
ঃ কিরে কবে ঢাকা আসলি?
ঃ দিন পনের হয়।
ঃ ও কোথায় আছিস?
ঃ তোর কাছাকাছিই। মগবাজারে।
ঃ বাহ্। কোন আত্মীয়ের বাসায়?
ঃ না।
ঃ আংকেল কি ঢাকায় ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছে?
ঃ তাও না।
ঃ তাহলে কি? (একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
ঃ আরে ওতো নতুন হোস্টেল লাইফ শুরু করেছে। (বলল আমিন)
ঃ নতুন হোস্টেল লাইফ! বুঝলাম না।
ঃ রহস্যময় একটা মুচকি হাসি হাসল সুদর্শন মোস্তাহিদ।
ঃ হেয়ালী করিস না ঠিকমতো বল। (ধমক দিলাম ওকে।)
ঃ আমি কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি।
ঃ ও কোচিং-এ। সেতো আমিও ভর্তি হয়েছি। এর সাথে হোস্টেলের সম্পর্ক কি?
ঃ এই কোচিংটার হোস্টেল আছে।
ঃ তাই নাকি? তুই কি ঐ হোস্টেলে উঠেছিস?
ঃ হ্যাঁ।
ঃ বাহ্, বেশ মজা তো। সিলেট ছেড়ে আসার পর থেকে আমার মন খারাপ থাকে। সেখানে বন্ধু-বান্ধব মিলে গল্প-গুজব, দুষ্টামি-বান্দরামি করে কত মজায় ছিলাম না? আর এখানে অভিভাবকের হাতে বন্দি।
ঃ আরে মন খারাপ করিস না। চট করে আমাদের হোস্টেলে চলে আসবি। বেশ আড্ডাবাজি করা যাবে। তোর ভালো লাগবে।
ঃ গুড আইডিয়া! তোর ওখানেই আড্ডাবাজী করব। চিনিয়ে দিস হোস্টেলটা।
ঃ আজই আয়।
ঃ না, আজ থাক। সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আরেকদিন। তুই তো বাসা চিনে গেলি।আমি যেহেতু কাছেই আছি, ঝটপট চলে আসবি।

চার বন্ধুতে ভালো আড্ডাবাজী করলাম সারা বিকেল। আমাদের আমিন আবার কৌতুকের রাজা। সারা দুনিয়ার মজার মজার সব কৌতুক ওর ভান্ডারে আছে। ওকে ধরলাম,
ঃ বল লেটেস্ট কৌতুকটা বল।
ঃ লেটেস্ট কৌতুক? তবে শোন। – একটি প্লেনে উঠেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, রাশিয়ার গর্বাচভ, পাকিস্তানের জিয়াউল হক আর আমাদের খ্যাতিমান হ, ম, এরশাদ। ওদের সাথে উঠেছে এক বৃদ্ধ আর এক হিপি। হিপি যেমন হয় – ছেড়াভেরা কাপড়-চোপর লম্বা লম্বা চুল, সাথে একটা পিঠে ঝোলানো বিশাল ব্যাগ। প্লেন যখন আকাশে অনেক উপরে, এই সময়ে পাইলট ভয়াবহ ঘোষণা দিল, “ভাইসব, আমাদের প্লেনের চারটি ইন্জিনই বিকল হইয়া গিয়াছে। এখন বাঁচতে হলে আপনাদেরকে প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করতে হবে। কিন্ত ছোটখাট একটা সমস্যা আছে। আপনারা সংখ্যায় ছয়জন, আর প্যারাসুট আছে পাঁচটা। একটা শর্ট। এখন আপনারাই ঠিক করেন কারা প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করবেন আর কে প্লেনে থেকে যাবে। (অন্য কথায়, ঠিক করেন কে মরবে)। এই বলার সাথে সাথে জর্জ বুশ বললেন আমি পৃথিবীর সেরা দেশ ক্যাপিটালিস্ট শিবিরের নেতা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, আমার উপর পুরো ক্যাপিটালিস্ট শিবির নির্ভর করছে, আমাকে বাঁচতেই হবে। এই বলেই কারো তোয়াক্কা না করেই একটা প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করলেন। গর্বাচভ বললেন আমার উপর পরো কম্যুনিষ্ট ওয়ার্লড্ নির্ভরশীল, তার উপরে শুরু করেছি পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাস্তনস্ত নীতি, এইগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে বাঁচতেই হবে। বলেই বুশের মতই কারো তোয়াক্কা না করেই একটা প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করলেন। পাকিস্তানের জিয়াউল হক বলেন ইসলামিক রিপাবলিক মাত্র শুরু করলাম তার উপর মুসলিম পারমানবিক বোমা তৈরীও কমপ্লিট। এখন নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করব, আমার বেঁচে থাকা খুবই জরূরী। বলেই পূর্বের দুজনার মত একটা প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করলেন। এবার আমাদের কবি এরশাদ সাহেবের পালা। তিনি অপরের লেখা স্বরচিত একটি কবিতা পাঠ করলেন – “নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা, নতুন করে আজ শপথ নিলাম।” গরীব দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছি তাতে কি হয়েছে? নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে শপথ নিয়েছি তা বাস্তবায়ন করার জন্য আমাকে বেঁচে থাকতেই হবে। তা ছাড়া জন বাঁচালো ফরজও। বলেই তিনিও একটা প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করলেন। বৃদ্ধ আর হিপি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ডকারখানা দেখছিল। এবার বৃদ্ধ বলল, ” বাবা রথি-মহারথিরা তো সব যে যার মত নেমে গেল। বাকী রইলাম আমরা দুজন। প্যারাসুট মাত্র একটা। তা বাবা আমি তো বৃদ্ধ মানুষ। কদিন পর তো এম্নিই মারা যাব, তুমি ইয়াং, তোমার আরো অনেকদিন বাঁচা উচিৎ। তুমি বাবা লাস্ট প্যারাসুটটা নিয়ে জাম্প কর আমি প্লেনে থেকে যাই। হিপি বলল, “না দাদাভাই, আপনাকে প্লেনে থাকতে হবেনা। আমরা দুজনেই প্যারাসুট নিয়ে জাম্প করব, দুজনই বেঁচে যাব। বৃদ্ধ বলে তা কি করে সম্ভব? প্যরাসুটতো আছে মাত্র একটা। হিপি উত্তর দিল, “না, প্যারাসুট দুটা আছে।”
ঃ দ্বিতীয়টা আবার কোথা থেকে এলো?
ঃ আসেনি কোথাও থেকে। এখানেই ছিল।
ঃ বুঝলাম না।
ঃ দাদাভাই, জিয়াউল হক তাড়াহুড়োর মধ্যে ভুল করে প্যারাসুটের বদলে আমার ব্যাগটা নিয়ে লাফ দিয়েছে।
হাঃ, হাঃ, হাঃ – আমরা সবাই কোরাসে হাসলাম।

“সেনাপ্রধান থেকে সি, এম, এল, এ, তারপর সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি। এভাবে ক্ষমতায় আসে জিয়াউল হক। আজ দশ বছর ধরে মার্শাল ল দিয়ে রেখেছে পাকিস্তানে।” বলল গিয়াস।
“একই পথ ধরেছে আমাদের এরশাদ, কবে যে এর শেষ হবে”। বলল মোস্তাহিদ।
“আরে শুনেছিস নাকি, এরশাদ সম্পর্কে একটি বিদেশী পত্রিকায় বেড়িয়েছে, ‘দ্যা রিচেস্ট প্রেসিডেন্ট ফ্রম দ্যা পুওরেস্ট কান্ট্রি’। বলল আমিন। “বলিস কি? এই হতদরিদ্র দেশের রাষ্ট্রপতি, পৃথিবীর সবচাইতে ধনী রাষ্ট্রপতি!” বলল গিয়াস। এবার আমি বললাম এরশাদের এই ধন সম্পদ উপার্জন নিয়ে একটা কৌতুক আছে। সবাই আমার দিকে তাকালো।
“বল বল তাড়াতাড়ি বল।” বলল আমিন।
“ফিলিপাইন সফরে গেল এরশাদ। প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক সেখানকার প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস। এত কিছু দেখে এরশাদ বলল, “ভাই তুমি এতো ধনী হলে কি করে?” মার্কোস বলল রহস্য জানতে চাও? চলো তোমাকে নিয়ে যাই। তারপর এরশাদকে নিয়ে হাজির করল একটি নদীর তীরে। “ঐ দেখো” বলল মার্কোস। “কি দেখব?” এরশাদের প্রশ্ন।
ঃ নদীর উপরের ব্রীজটি (মার্কোসের কথা)
ঃ ব্রীজটা তো কমপ্লিট হয়নি। অর্ধেক মাত্র।
ঃ আরে, এভাবেই তো ধনী হয়েছি।
বুঝে গেল এরশাদ, মার্কোসের রহস্য। কিছুকাল পর মার্কোস এলো বাংলাদেশে। এরশাদের অবস্থা আরো বিশাল। এই দেখে মার্কোসের চোখ তো ছানাবড়া।
ঃ ভাই তুমি এতো ধন০-সম্পদ কি করে করলে? (বলল মার্কোস)
ঃ চল তোমাকে দেখিয়ে নিয়ে আসি।
তারপর মার্কোসকে নিয়ে এরশাদ হাজির করল একটি নদীর তীরে। “ঐ দেখো” বলল এরশাদ। “কি দেখব?” প্রশ্ন মার্কোসের।
ঃ নদীর উপরে (এরশাদ বলল)
ঃ ওখানে তো কিছুই নাই। শুধু নদীর তীরে একটা ভিত্তিপ্রস্তর দেখতে পাচ্ছি।
ঃ আরে এভাবেই তো ধনী হয়েছি।
রহস্যময় হাসি হেসে বলল এরশাদ।
আরেক দফা কোরাসে হাসলাম আমরা।

এবার ইয়াং ছেলেদের স্বভাবসুলভ নারী বিষয়ক আলোচনা শুরু হলো।
ঃ তোদের হাউজিং-এ তো সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে আছে। (বলল আমিন)
ঃ তা আছে। ধনীদের মেয়ে। কিছুটা সুন্দরীতো হবেই।
ঃ ইটিশ-পিটিশ করিস না ওদের সাথে?
ঃ মাত্র তো এলাম। ইটিশ-পিটিশের সময় পেলাম কোথায়?
ঃ তাওতো কথা। যাহোক সুন্দরী মেয়ে অনেক আছে। টাংকি মারার ভালো যায়গা।
ঃ আমাদের হোস্টেলেও আছে। (বলল মোস্তাহিদ)
ঃ তোদের হোস্টেলে আছে মানে! ছেলেমেয়ে একই হোস্টেলে থাকিস নাকি?
ঃ না, মানে হোস্টেলে না। হোস্টেলের সাথে একটা বাসা আছে, সেখানে।
ঃ ও। সে তো পাশের বাসায় কোন না কোন মেয়ে থাকতেই পারে।
ঃ আরে এই মেয়েটি একসেপশনাল।
ঃ কি রকম একসেপশনাল?
ঃ হোস্টেলের ছেলেরা ওর সাথে টাংকিবাজি করে। যেখানে অন্য মেয়েরা লজ্জ্বা পায় বা এড়িয়ে যায়, সেখানে এই মেয়েটি টাংকির উত্তর দেয়।
ঃ এত আবার ভিন্নরকম ঘটনা। যেতে হবে তোদের হোস্টেলে।

(চলবে)

(মুছে যাওয়া দিন গুলি আমায় যে পিছু ডাকছে,
স্মৃতি যেন আমারই হৃদয়ের রঙে রঙে ছবি আঁকছে।
সে এক নতুন গানের দেশে, দিন গুলি ছিল যে মূখর কতো গানে,
সেই সুর বাজে যেন আমার কানে!
)

 

লিস্ট্নিং টু দ্য উইন্ড অফ চেইঞ্জ – পর্ব ৭

——————————ডঃ রমিত আজাদ

কৌতুক বলা হয় হাস্যরসিকতার জন্য। কখনো কখনো তা ব্যবহার করা হয় মিস্রির ছুরি হিসাবে। কিন্তু সেই কৌতুক যখন বাস্তবে পরিণত হয় তখন বিস্মিতই হতে হয়, এবং দু’য়েক সময় খারাপই লাগে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হককে নিয়ে কয়েকদিন আগে যে কৌতুক করলাম, সেটাই যে বাস্তব হয়ে যাবে ভাবিনি। সকালের দিকে মগবাজার ওয়ারলেস মোড় থেকে মৌচাকের দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে একটি দোকানে এক ভদ্রলোকের হাতে একটি ডেইলি নিউজপেপারে বড় বড় করে লেখা দেখলাম, ‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক নিহত’। আমি অবাক হয়ে এগিয়ে গিয়ে ঐ ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, “পত্রিকাটি একটু দেখতে পারি? জিয়াউল হক কি সত্যি সত্যিই মারা গেছে?” ভদ্রলোক একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন, মনে হলো সে বিস্মিত, মনে মনে হয়তো বলছে, ‘ইনি কি এতক্ষণ পরে জানলেন!’ আমি তাকে বললাম, “আমি সকালে পেপার না পড়েই ঘর থেকে বেরিয়েছি, জিয়াউল হক কিভাবে মারা গেল?” “বিমান দুর্ঘটনায়”, লোকটি উত্তর দিল। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। যেই কৌতুক আমরা উনাকে নিয়ে করলাম, সেটাই বাস্তব হলো!

পরবর্তিতে জানতে পারলাম যে, এক রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দশ বছর ধরে প্রবল প্রতাপে পাকিস্তান শাসন করা প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। দিনটি ছিল ১৭ই আগস্ট ১৯৮৮ সাল। আমার মনে আছে ১৯৭৭ সালে তিনি প্রধান মন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করে, সামরিক শাসন জারি করেন। এটি ছিল পাকিস্তানের তৃতীয় সামরিক শাসন। সামরিক শাসন জারির কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় ভুট্টোর শাসনামলে দেশব্যাপি ব্যপক বিশৃংখলা ও পরিশেষে একজন খ্যাতিমান বিরোধীদলীয় নেতার হত্যাকান্ড (যার সাথে ভুট্টোর জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা যায়)। এভাবে অবসান ঘটে ভুট্টোর শাসনামলের, এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দু’বছরের মত তার বিচার হয়, এবং বিচারের রায়ে তার মৃত্যুদন্ড হয়। সেসময় অনেকেই তাকে মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু জিয়াউল হক কারো কথা শোনেনি। জিয়াউল হক ভুট্টো সম্পর্কে বলেছিল, “বেজন্মাটাকে আমি ঝুলিয়ে ছাড়ব”।

পরিশেষে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে ১৯৭৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল তার ফাঁসি হয়। সেই সময় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও আমার মনে হয়েছিল উচিৎ শাস্তি হয়েছে তার। এই সেই ভুট্টো, যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গনহত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিল। ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে ঘুমণ্ত নিরস্ত্র মানুষের উপর অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়া অপারেশন সার্চলাইট থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে পুরো নয় মাস জুড়ে বিপুল হত্যাযজ্ঞের মূল পরিকল্পক ছিল এই ভুট্টো। এই নারকীয়তার আরেক নায়ক ইয়াহিয়া খানও অনেকগুলো বছর রোগভোগ করার পর মারা যায়। এত এত নিরাপরাধ মানুষ হত্যা করে তারা পার পায়নি। এই পৃথিবীতেই তারা অপকর্মের শাস্তি পেল।

যাহোক জিয়াউল হকের বিমান দুর্ঘটনাটি ছিল রহস্যজনক। সেখানে জিয়ার সাথে আরো ৩১ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিল পাকিস্তানের টপ লেভেলের ব্যক্তি । অন্যতম ছিলেন Chairman Joint Chiefs of Staff Committee জেনারেল আখতার আবদুর রহমান । এছাড়া পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লুইস রাফেল ও পাকিস্তানে মার্কিন মিলিটারি এইড মিশনের প্রধান জেনারেল হারবার্ট ওয়াসমও নিহত হয়। জানা যায় যে, একটি সি-১৩০ বিমান উড্ডয়নের পরপরই কন্ট্রোল রূমের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। তার কিছুক্ষণ পরই বিমানটি বিদ্ধস্ত হয়। সিনেট চেয়ারম্যান বৃদ্ধ গোলাম ইসহাক খান জাতীয় প্রচার মাধ্যমে শোক সংবাদটি প্রচার করেন। অনেকে বলে থাকেন এই গোলাম ইসহাক খান-ই ছিলেন জিয়াউল হকের শিক্ষাগুরু। পাকিস্তানকে ভুট্টোর হাত থেকে বাঁচাতে, তিনি এমন একজন জেনারেল খুঁজছিলেন যাকে দিয়ে মার্শাল ল কল করিয়ে ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়। পরিশেষে তিনি জিয়াউল হককে চুজ করেন এবং তাকে দিয়ে কাজটি করান। এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় পাকিস্তানের ব্যপক ক্ষতি সাধন হয়। বৃদ্ধ গোলাম ইসহাক খানকেই এই কঠিন সময় মোকাবেলার দায়িত্ব নিতে হয়। রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনাটির পিছনে বৃহৎ শক্তির হাত আছে বলে অনেকেই মনে করেন।কেউ কেউ খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছে, আবার কেউ কেউ ভারত ও ইসরাইলকে দায়ী করেছে। বোর্ড অফ এনকোয়ারির রিপোর্টে বলা হয়, সম্ভবত বিমানের অভ্যন্তরে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে যাত্রী ও ক্রুদের অচেতন করা হয়, যার কারণে কোন মেডে সিগনালও আসেনি। আবার অনেকে বলে বিমানে শেষ মুহূর্তে তোলা আমের ঝুড়িতে বোমা ছিল, তার এক্সপ্লোশনেই দুর্ঘটনা ঘটে।

জিয়াউল হকের মৃত্যুর জন্য যেই দায়ী থাকুক না কেন। তার শাসনামলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান নিজেই বলেছেন পাকিস্তান আমেরিকার একটি বিরাট মিত্র। এসময় আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। আফগান মুজাহিদরা সোভিয়েত বাহিনীর সাথে যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল তাতে সর্বান্তকরণ সাহায্য করে জিয়াউল হকের পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উপরন্তু জিয়ার শাসনামলেই পাকিস্তান পারমানবিক শক্তির অধিকারি হয়। এই পারমানবিক শক্তি অর্জনই জিয়ার কাল হয়েছে বলে অনেকে মনে করে। এদিকে জুলফিকার আলি ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টোকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা হলে, তিনি বলেন, “দীর্ঘ দশ বছর জিয়া দেশকে গণতন্ত্রহীন করে রেখেছিল, এখন তার অবসান হবে আশা করি। ভাবতেই পারছিনা যে, জিয়ার শাসনামল শেষ হয়েছে। যাহোক হায়াত-মউত উপরওয়ালার হাতে।” বেশ কয়েকদিন বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে ফিরল, জিয়াউল হকের মৃত্যু কাহিনী।

সকাল নয়টার দিকে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললাম। দেখি মোস্তাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে খুশী হয়ে গেলাম, বললাম
ঃ ওয়েল কাম, ওয়েল কাম। ভিতরে আয়।
ঃ না ভিতরে আসব না।
ঃ কেন? (অবাক হলাম)
ঃ তুই আয়।
ঃ কোথায়, আমাদের হোস্টেলে চল। অনেক ছেলেপেলে আছে। আড্ডা জমবে ভালো।
ঃ নট এ ব্যাড আইডিয়া। ঘরে বোরিং লাগছিল। ওখানে অনেক পোলাপান পাওয়া যাবে। চল যাই। ও হ্যাঁ, দাঁড়া আমিনকে ফোন করে দেই ওও চলে আসুক।
ঃ কোথায় আসবে ও?
ঃ মগবাজার মোড় বলে দেব। ওখান থেকে একসাথে যাব।
কাপড় পরে বেরিয়ে পরলাম ওর সাথে।

মগবাজার মোড় থেকে একটু ভিতরের দিকে ওদের হোস্টেলটা। আমার বাসা থেকে হাটা পথে দশ পনের মিনিট। রিকশা নিলে পাঁচ মিনিট। (ভি, আই, পি রোড তখন ছিল একটি, শাহবাগ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। আর সব রাস্তায়ই রিকশা চলত। ঐ রাস্তাটি খুব সম্ভবত: ১৯৮৬ সলে রিকশামুক্ত করা হয়, তখন জনগণ খুব খেপে গিয়েছিল চলাচলে অসুবিধা হয় বলে)। মোস্তাহিদদের হোস্টেলে পৌছে বেশ ভালোই লাগল। এটা মুলত চার তলা একটি রেসিডেন্সিয়াল বাসা। ওরা ভাড়া নিয়ে হোস্টেল বানিয়েছে। প্রত্যেকটা রুমে তিনজন করে স্টুডেন্ট থাকে। মোস্তাহিদদের রূমে ঢুকে দেখলাম আরো দুজন আমাদের বয়সী। মোস্তাহিদ ওদের সাথে সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
ঃ আমার বন্ধু আমিন আর রোমান। আর ওরা কামাল আর ইমতিয়াজ।
ইমতিয়াজ ছেলেটিকে খুব ভদ্র মনে হলো।
ঃ এখানে সবাই কি অন্য শহরের? (আমিন প্রশ্ন করল)।
ঃ আরে ব্যটা অন্য শহরের না হলে কি আর হোস্টেলে থাকে নাকি? (আমি বললাম)।
ঃ আমি ময়মনসিংহের। তবে ঢাকার আশ-পাশ থেকেও দু’একজন আছে। যেমন সাভার, ধামরাই, ইত্যাদি।
ঃ পরিবেশ ভালো তো?
ঃ না, পরিবেশ ভালো আছে। সুপারভাইজার সব সময় নজর রাখে।
ঃ তোমাদের কথা মোস্তাহিদ বলে সব সময়। সিলেটে একসাথে পড়তে। (বলল ইমতিয়াজ)
ঃ হ্যাঁ আমরা খুব ঘনিস্ট। সিলেটের কলেজে বেশ মজার জীবন কাটিয়েছি। কোচিং করছ? কোথায় ভর্তি হতে চাও?
ঃ সব জায়গায়ই পরীক্ষা দেব। তারপর যেখানে চান্স পাই। যেখানে ইচ্ছা সেখানেই পড়তে পারব, বাংলাদেশ কি সেই দেশ!
ঃ তা ঠিক। তারপরেও।
ঃ আমি পড়ালেখা করেছি সাধারণ কলেজে, তোমাদের মত নামীদামী ভালো কলেজে পড়তে পারিনি। তাই ইচ্ছা থাকলেও শেখার সুযোগ ছিল না।

ঃ তোমাকে খুব ভালো এবং ভদ্র মনে হচ্ছে ইমতিয়াজ। উপরওয়ালা তোমার মঙ্গল করবেন। আশা করি ভালো জায়গায় চান্স পেয়ে যাবে।
ঃ না তুমি বেশী বলছ। আরে জিয়াউল হক মারা গিয়েছে শুনেছ?
ঃ হ্যাঁ পেপারে পড়লাম।
ঃ মারল কে?
ঃ কে জানে? রাজনীতি বড় টাফ। আজ বাদশা, কাল ফকির, আজ জীবিত, কাল মৃত।
ঃ আমেরিকা নাকি মেরেছে?
ঃ জিয়াউল হক তো আমেরিকার বড় মিত্র ছিল। তাছাড়া আফগান ওয়ারে তো রাশিয়ার এ্যগেইনস্টে জিয়াউল হক ছিল আমেরিকার কী পার্সন।
ঃ পারমানবিক বোমা একটা কারণ হতে পারে।
ঃ পারমানবিক বোমা কি কারণ হবে?
ঃআমেরিকা কখনোই চায়নি যে একটা মুসলিম রাষ্ট্র পারমানবিক শক্তির অধিকারী হোক।
ঃ মুসলিমদের সাথে আমেরিকার শত্রুতা কিসের?
ঃ জানিনা। তবে তারা মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধি চায়না। ইজরাইলের কোন ভূমিকা থাকতে পারে।
ঃ পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা আছে এরকম আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা তো হয়নি।
ঃ সেতো ইন্ডিয়াও দেয়নি।
ঃ ইন্ডিয়ারও পারমানবিক বোমা আছে নাকি?
ঃ অবশ্যই আছে। অনেক আগে থেকেই আছে। তারা পারমানবিক বোমা তৈরীর পরিকল্পনা করে অনেক আগেই। তারপর বিভিন্নভাবে টেকনোলজী যোগার করতে শুরু করে।
১৯৪৬ সালের ২৪শে জুন জওহারলাল নেহেরু (ভারতের হবু প্রধানমন্ত্রী) ঘোষনা দেন
As long as the world is constituted as it is, every country will have to devise and use the latest devices for its protection. I have no doubt India will develop her scientific researches and I hope Indian scientists will use the atomic force for constructive purposes. But if India is threatened, she will inevitably try to defend herself by all means at her disposal

১৯৬২ সালের অক্টোবরে চীনের সাথে এক যুদ্ধে ভারত হিমালয়ে তার কিছু টেরিটোরি হারায়। যার ফলে ভারত পারমানবিক অস্ত্র সম্পর্কে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করে।
নেহেরু ঘোষণা দিলেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। টেকনোলজি তারা বিভিন্ন দেশ থেকে যোগার করে ভারী পানিটি যোগার করে কানাডা থেকে। ১৯৫৫ সালে কানাডা পাবলিকলি এ্যানাউন্স করে যে, তারা একটি হেইভি ওয়াটার রিএ্যাক্টর তৈরীতে ভারতকে সাহায্য করবে। ইন্দিরা গান্ধী কানাডা সরকারকে আশ্বাস দিয়েছিল যে এটা তারা পিস পারপাস-এ ব্যবহার করবে। কিণ্তু তিনি তা করেননি বরং অস্ত্র তৈরীতে ব্যবহার করেন। ফাইনালি ইজরাইলের সহায়তা নিয়ে পারমানবিক অস্ত্র তৈরী সম্পন্ন করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ই মে রাজস্থানের পোখরানের মরুভূমিতে সেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে টেস্ট করা হয়।

ঃ ইস্রাইল হেল্প করেছে? ইজরাইলের পারমানবিক বোমা আছে নাকি? (বলল আমিন)।
আমি বললাম
ঃ আছে। ১৯৫৬ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করলে। বৃটেন ও ফ্রান্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসময় ফ্রান্স ইজরাইলকে মিশর আক্রমন করে সিনাই দখল করে নেয়ার পরামর্শ দেয়, যাতে এই ছলে ফ্রান্স ও বৃটেন মিশরে প্রবেশ করে সুয়েজ খালের পূর্ণ কর্তৃত্ব নিতে পারে। এর বিনিময়ে ফ্রান্স ইজরাইলকে পারমানবিক রিএ্যক্টর তৈরী করে দেবে। যাতে পরবর্তিতে ইজরায়েল পারমানবিক বোমা বানাতে পারে। ইজরাইল এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করে ১৯৫৭ সালে প্যারিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ইজরাইল ১৯৬৩ সালে উইপন টেস্ট করলেও পরিপূর্ণরূপে পারমানবিক শক্তির অধিকারী হয় ১৯৬৭ সালে, ছয়দিন ব্যাপি আরব-ইজরাইল যুদ্ধের পরপরই।

ঃ ইন্ডিয়া বানায়, পাকিস্তান বানালো, আর বাংলাদেশ? কবে পারমানবিক বোমা বানাবে বাংলাদেশ? (বলল কামাল)
সবাই হেসে উঠল।
ঃ ককটেল ককটেল আমরা ককটেল বানাই। (বলল আমিন)
আবারো হাসলাম সবাই। এই হাসতে হাসতে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমরা কি চিরকাল পিছিয়েই থাকব? শৌর্যে বীর্যে মেরুদন্ড সোজা করে কি আমরা কি কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াবো না? আমাদের জাতীয় কবিই তো লিখেছেন, ‘চির উন্নত মম শীর’।

ঃ পারমানবিক বোমা তৈরী করা ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে হালাল না হারাম? (কামাল প্রশ্ন করল)
ঃ আমার তো মনে হয় হারাম। বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজি (সঃ) বলেছিলেন – যুদ্ধে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের হত্যা না করতে, নিরীহ পশু হত্যা না করতে এমন কি ফলাদি বৃক্ষও না কাটতে। এর মানে তো ম্যাসিভ ডেসট্রাকশন একেবারেই হারাম। পারমানবিক বোমা তো ম্যাসিভ ডেসট্রাকশনই করে। আর রেডিয়েশন তো খুবই খারাপ জিনিস। এটা মানব জাতির জন্য আশির্বাদ নয়, বরং অভিশাপ।

ঃ অভিশাপ। এই যে শুনি নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন খুবই শক্তিশালী অনেক ইলেকট্রিসিটি প্রোডিউস করে, এগুলো কি তাহলে। ভালো না খারাপ? (বলল কামাল)
ঃ আপাততঃ ভালো মনে হলেও, আলটিমেটলি খারাপ। পদার্থবিজ্ঞানীরা কেবল ফিজিক্স নিয়েই আছে। তারা বায়োলজিতে মোটেও ইন্টারেসটেড নয়। এই পৃথিবীর ফ্লোরা আর ফাউনা নিয়ে তারা ভাবেই না। অথচ রেডিয়েশন ফ্লোরা আর ফাউনার ভীষণ ক্ষতি করে। (আমি বললাম)।

কামাল আর ইমতিয়াজ হা করে আমার পান্ডিত্য কথা শুনছিল। মোস্তাহিদ ওদের বলল,
ঃ অবাক হোসনা। রোমান আমাদের ক্লাসে ফিজিক্স-এর সব চাইতে ভালো ছাত্র। বিশ্বাস স্যারের একান্ত প্রিয়। তাছাড়া এস, এস, সি, তে ও ফিজিক্স-এ বোর্ড হাইয়েস্ট মার্কস পেয়েছিল। আমাদের ফার্স্ট বয়ও ওর কাছ থেকে ফিজিক্স বুঝে নেয়।
ঃ তাই বল। তা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কি ফিজিক্স নিয়েই পড়বে নাকি?
ঃ ইচ্ছা তো সেরকমই আছে। দেখি এখন চান্স পাই কিনা!
ঃ ঢাকা ইউনিভার্সিটি? ভালো মনে করেছিস, চল যাই ঢাকা ইউনিভার্সিটি ঘুরে আসি। (মোস্তাহিদ বলল)
ঃ কি করবি ওখানে গিয়ে? (বলল আমিন)
ঃ আরে ঘরে বসে বোর হয়ে গেছি। চল ঘুরে আসি।
ঃ ঘোরার তো আরো যায়গা আছে, পার্টিকুলারলি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেই যেতে হবে কেন?
ঃ ভবিষ্যতে যেখানে পড়বি সেখানে যাবিনা?
ঃ হ্যাঁ, ভালো বলেছিস। চল যাই।
ঃ যাব তবে তার আগে একটু দেখতে চাই। (বলল আমিন)
ঃ কি দেখতে চাস? (বলল মোস্তাহিদ)
ঃ ঐ যে বলেছিলি না। তোদের হোস্টেলের পাশের বাসায় একটা মেয়ে থাকে সবার সাথে টাংকি মারে।
ঃ ও, আচ্ছা। দাড়া দেখি বারান্দায় আছে কিনা মেয়েটা ।
সবাই মিলে উকিঝুঁকি দিলাম।
ঃ না বারান্দা ফাঁকা, কেউ নেই। চল যাই।
একটু হতাশ হলাম আমরা। কিন্তু ক্ষণিকের জন্য। তারপরের মুহূর্তে হৈচৈ করে সবাই বেরিয়ে পড়লাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

(চলবে)

আণবিক আঘাতে,
হিরোসিমা কাঁদে,
বিপন্ন নাগাসাকি,
বিবেকের ডাকে,
এসো একসাথে,
বন্ধ করি বিশ্বে যুদ্ধ।

৬০৮ বার দেখা হয়েছে