অংকুর মেধা বাংলাদেশ কর্তৃক ঢাকা মহানগরের জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত
আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক আঙ্গিকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব
শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধ।
উপস্থাপক: রমিত আজাদ, পিএইচডি (পদার্থ বিজ্ঞানী)
তারিখ ও সময়: বৃহস্পতিবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ অপরাহ্ন
এই সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি জনাব আব্দার রাজ্জাক, সম্মানিত প্রধান অতিথি ডক্টর আকবর আলী খান, সম্মানিত বিশেষ অতিথি ও আলোচক মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রম, প্রফেসর ডক্টর পিয়াস করিম, ডক্টর তুহিন মালিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব মুনির হায়দার, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক, এই সেমিনার আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ডক্টর শেখ আকরাম আলী এবং উপস্থিত সুধীমণ্ডলী, আপনাদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।
নেতৃত্বের সংকট বলতে কী বোঝায় বা নেতৃত্বের সংকট আদৌ আছে কিনা বা থাকলেও তার পরিধি কতটুকু ইত্যাদি আলোচনা করার জন্য আজকের এই আলোচনা সভায় আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের কারণে অনেক আঙ্গিক বা ডাইমেনশন অবশ্যই উল্লেখ করা সম্ভব হবে না। আমি একজন শিক্ষাঙ্গণের বিনীত পদচারী এবং দেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে এমন শত-সহস্র ব্যক্তিদের একজন মাত্র। অতএব আমি নিজেকে কোনো অবস্থাতেই এইরূপ একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য যথার্থ পারঙ্গম বলে মনে করি না। বিষয়টি অনেক ব্যাপক, দীর্ঘ বক্তব্য উপস্থাপনের অবকাশ আছে, কিন্তু সময় ও পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যই রাখবো। আমি নিজে ‘অংকুর মেধা বাংলাদেশ-এর একজন সদস্য হলেও, এই প্রবন্ধের প্রকাশভঙ্গী একান্তভাবেই আমার। আমার বক্তব্যে কোনো প্রকারের সীমালঙ্ঘন হলে অনুগ্রহপূর্বক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সাধারণভাবে নেতৃত্ব প্রসঙ্গে দুচারটি কথা না বললে, আলোচ্য বিষয়টির মূল কেন্দ্রবিন্দু বা ফোকাস নির্ণয় করা কঠিন হবে। গ্রাম বাংলার একটি সাধারণ চিত্র তুলে ধরি। সাধারণভাবে পাড়ায় মহল্লায় মুরুব্বীরা নেতৃত্ব প্রদান করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বা চেয়ারম্যানগণ নেতৃত্ব প্রদান করেন। মসজিদের ইমাম সাহেব মুসল্লীদের নামাজে যেমন নেতৃত্ব প্রদান করেন তেমনই সমাজেও মোটামুটি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃত, যেমন কিনা প্রাইমারী বা হাই স্কুলের শিক্ষকগণও। হাটে বাজারে বা ব্যবসা কেন্দ্রে দোকান মালিক সমিতি বা বণিক সমিতির নেতাগণ নেতৃত্ব প্রদান করেন। তরুণ ছেলেমেয়েদের অনেক ক্লাব থাকে, সেই ক্লাবেও নেতা থাকে। অনেক কর্মের মধ্যে মালিক এবং শ্রমিক এই দুই প্রকৃতি আছে, এবং উভয় প্রকৃতিতেই নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আছেন। ব্যবসায়ীকগণের নেতারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, সরকারী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সকলে সফল হচ্ছেন না। সমাজের মুরুব্বীদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ, সমাজের বিভিন্ন স্তরে বা বিভিন্ন পরতে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে, যদিও ব্যতিক্রম হিসেবে কোনো কোনো ব্যক্তি বা পেশাজীবী গ্রামে বা শহরে নিজ এলাকায় উদাহরণ সৃষ্টিকারী হিসেবে আবির্র্ভূত হন। সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বা বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক পর্যায়ে সাফল্য ও ব্যর্থতা উভয়ের জন্যই রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইতিবাচক বা নেতিবাচকভাবে দায়ী। কারণ, চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই জনজীবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ইত্যাদি বিবিধ কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত বা প্রভাবান্বিত করে।
পত্র-পত্রিকায় কিছু কিছু কলামে, টেলিভিশনগুলোর কিছু কিছু টক-শোতে, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের আলোচনা সভায় একটি কথা উঠে আসে। কথাটি হল এইরূপ যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতৃত্ব শুধু দুইটি রাজনৈতিক দলের হাতে কেন থাকবে? তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হওয়া প্রয়োজন, যেই তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি এই মূহূর্তে বিদ্যমান দুইটি রাজনৈতিক শক্তির বিকল্প হিসেবে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। এই বক্তব্যের বা চিন্তার ধারাবাহিকতায় আরেকটি বক্তব্য উঠে আসে। এই দ্বিতীয় বক্তব্যটি হল রাজনৈতিক নেতাদেরকে নিয়ে বা আরো সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে নিয়ে। এই দ্বিতীয় বক্তব্যটি হল যে, দলগুলোতে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন হয় না কেন? বাংলাদেশের সুধী সমাজের অনেকেই মনে করেন যে, দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক বলয় পরিস্ফূটিত হওয়া কঠিন আবার দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের ভেতরেও বিদ্যমান নেতৃত্বের অতিরিক্ত নতুন নেতৃত্ব পরিস্ফূটিত হওয়াও কঠিন। সুধী সমাজের অনেকেই মনে করেন যে, এই দুইটি কঠিন-এর কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের সংকট দৃশ্যমান।
উপরের অনুচ্ছেদে দুইটি বক্তব্য বা প্রশ্ন উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম বক্তব্য বা প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে লোকে বলে যে, ঐরকম কোনো রাজনৈতিক দল দেখা যাচ্ছে না, যারা প্রধান দুইটি দলের সুযোগ্য বিকল্প হিসেবে দণ্ডায়মান হতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে, উপযুক্ত বিকল্প তৃতীয় রাজনৈতিক দল বা শক্তি দৃশ্যমান নয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকগুলো দলেরই আকাঙ্খা যে, এরকম তৃতীয় শক্তি আসুক, আবার অনেকগুলো দল নিজেরাই ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তাঁরাই তৃতীয় শক্তি হবেন বা হবার পথে অগ্রগামী। আমার মতে, আকস্মিকভাবে কোনো একটি বা একাধিক দল সম্মিলিতভাবে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে না, এটা একটা প্রক্রিয়া, এটার জন্য সময় প্রয়োজন, এটার জন্য একাধিক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী সুযোগ প্রয়োজন, ভোটারগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাসের পরিবর্তন প্রয়োজন এবং ঐরূপ পরিবর্তনের জন্য উৎসাহ পাওয়া যায় এমন পরিবেশ প্রয়োজন। এ বিষয়ে কাল বিলম্ব স্বাভাবিক। যদি পরিবেশটি সৃষ্টি করার কাজ দ্রুত করা যায় তাহলে অন্য কাজগুলোও দ্রুত হয়। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি না থাকার কারণে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বা ধ্বংস হয়ে যাবে এমনটি বলা যাবে না। এতটুকু বললেই ভালো যে, তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি থাকলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য আরো একটি বিকল্প মানুষের সামনে থাকতো। আরো একটি বক্তব্য এই যে, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে একাধিক মাত্রার বা আঙ্গিকের চিন্তাধারা প্রয়োগের সুযোগ থাকতো। অতএব দেশের বৃহত্তর মঙ্গলের লক্ষ্যেই প্রধান দুইটি বলয়ের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক বলয় সৃষ্টি হলে মানুষ সেটাকে স্বাগতম জানানোর সম্ভাবনা আছে। এখানে একটি কঠিন প্রশ্ন জড়িত। বলয় সৃষ্টি হওয়ার পর মানুষ স্বাগতম জানাবে, নাকি মানুষ স্বাগতম জানালে বলয় সৃষ্টি হতে পারবে? বলয় আসলে সৃষ্টি হল কি হল না, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য নিখুঁত সুযোগ এবং সময় হল জাতীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এইরকম একটি সুযোগ জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতৃত্বের সংকটের সঙ্গে আগামী দিনের বা অদূর ভবিষ্যতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি নিবিড় সম্পর্ক ইতোমধ্যেই সংঘটিত হয়েছে। জনগণ যদি নির্ভয়ে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতামত ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে না পারে তাহলে, কোনো প্রকারের পরিবর্তন বা গুণগতমানের উন্নতি আশা করা অবাস্তব।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন দুটি বড় প্রশ্নকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। দুটি প্রশ্নই পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল। প্রথম প্রশ্নটি হল, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি, অতীতে যেমন ছিল তেমন আকারে অথবা সংশোধিত আকারে পুনরায় সংবিধানে সন্নিবেশিত হবে কিনা? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল হোক বা না হোক, বিদ্যমান সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা? এই দুটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনৈতিক দৃশ্যপট আবর্তিত হচ্ছে বা হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুইটি প্রধান জোট বা বলয় আছে। সা¤প্রতিককালে একটি বলয় মহাজোট নামে পরিচিত এবং আরেকটি বলয় ১৮ দলীয় জোট নামে পরিচিত। উভয় জোটে বড়, শক্তিশালী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল যেমন আছে, তেমনই মাঝারি আকারের, মাঝারি শক্তির অধিকারী ও মাঝারিভাবে প্রভাব বিস্তারকারী রাজনৈতিক দলও আছে। আরও বড় সত্য হল যে, উভয় বলয়ে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে যেগুলো আকারে ছোট, ক্ষুদ্র শক্তির অধিকারী এবং প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে উল্লেখযোগ্য নয়। তবে, একটি সম্মানজনক এবং উপভোগ্য তথ্য হল এই যে, কিছু কিছু ছোট দলের ক্ষেত্রে, দলের নেতাদের ব্যক্তিগত তথা সামাজিক-রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব সামগ্রিকভাবে দলের পরিচয় ও প্রভাব অপেক্ষা, তুলনামূলকভাবে বা আপেক্ষিকভাবে বেশি। ছোট দলগুলোর কথা বললাম, এখন বড় দলগুলোর প্রসঙ্গে একটুখানি বলি।
এটা স্বীকৃত যে, বাংলাদেশে প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষতম নেতারা প্রায় পঁচিশ বা ত্রিশ বছর যাবতই ঐ অবস্থানে আছেন। ঐ দলগুলোর অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে যখনই এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়, অথবা তাদের সম্মুখে এই প্রসঙ্গে সমালোচনা করা হয়, তখন যে উত্তরটি উঠে আসে সেটা হল এই যে, শীর্ষতম দুই নেতা তাঁদের দলের জন্য অপরিহার্য। শীর্ষতম দুই নেতার অভিজ্ঞতা, দলকে একতাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে চুম্বকীয় ভূমিকা, জনগণের নিকট উদ্ভাসিত ক্যারিশমা ইত্যাদি কারণেই তাঁরা দলের নিকট অপরিহার্য। অতএব, পাশ্চাত্যের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে অন্য দুটি মোটামুটি বড় দল হচ্ছে, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষতম নেতার মতো জাতীয় পার্টির শীর্ষতম নেতার জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে তাদের উচ্চতম পর্যায়ের সদস্যগণ কর্তৃক গোপন ব্যালটের মাধ্যমে শীর্ষতম নেতাদ্বয়কে নির্বাচন করা হলেও, বাস্তবে দেখা যায় যে, গ্রহণযোগ্য কারণেই তারাও অনেকবার নির্বাচিত হন। এই পর্যায়ে, তথা উপরের দুই-তিনটি অনুচ্ছেদের আলোচনার শেষে আমার উপসংহার হল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষতম পর্যায়ে নেতৃত্বের সংকট বা অভাব নেই কিন্তু আমার মূল্যায়নে মাঝারি বা নিম্ন পর্যায়ে সংকট বা অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। অতএব সংশোধনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
এইমাত্র প্রকাশিত আমার অনুভূতি বা মূল্যায়নকে একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করছি। বাংলাদেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ আছে। ৩টি হচ্ছে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বাকিগুলো ছেলেদের জন্য। গত বিশ-পঁচিশ বছর যাবত সরকার একটা প্রথা চালু করেছে যে, ঐ কলেজগুলোতে যদি কেউ পড়াশুনা করে, তাহলে দ্বাদশ শ্রেণী পাস করার পর, ঐ ছাত্ররা বাধ্যতামূলকভাবেই সামরিক বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত সেনা বা নৌ বা বিমান তথা যে কোনো বাহিনীতে অফিসার হিসেবে প্রবেশ করার জন্য, পরীক্ষা দিতে বাধ্য থাকবে। অর্থাৎ ক্যাডেট কলেজগুলো হলো হালকা মাপে, সামরিক বাহিনীর জন্য ফিডার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
সেনাবাহিনীর মতো অনেক বড় বড় সংগঠনের জন্য এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশার জন্যও, ফিডার প্রতিষ্ঠান থাকে। রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের জন্যও ফিডার প্রতিষ্ঠান থাকা প্রয়োজন, এবং কিছুটা হলেও আছে। কিন্তু সেগুলো পূর্ণভাবে সক্রিয় নয়। যথা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতৃত্ব যদি নির্বাচনের পদ্ধতিতে উঠে আসে তাহলে ঐ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রগণ গঠনমূলক রাজনীতি করতে আগ্রহী হয়। গঠনমূলক রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, ভোট দাতাগণের কল্যাণের জন্য কাজ করা এবং ভোট দাতাগণের নিকট জবাবদিহিতার অভ্যাস গড়ে তোলা। গত প্রায় দুই দশক বা তার থেকেও কিছু বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ রাজনীতির জন্য ফিডার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারছে না, কারণ শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্রদেরকে নিয়ে কোনো নির্বাচনী পদ্ধতিতে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হচ্ছে না। আমরা মনে করি এটি বাংলাদেশের নেতৃত্বের আগামী দিনের তথা সম্ভাব্য সংকটের অন্যতম কারণ।
রাজনীতির সঙ্গে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট জড়িত। দেশের বহু লোক মনে করে যে, রাজনীতি করার কাজটি নোংরা কাজ। দেশের বহু লোক মনে করে যে, সৎ, সাহসী, মেধাবী, শিক্ষিত ব্যক্তিগণের জন্য রাজনীতি নয় বরং জালিয়াতি, চালিয়াতি, পেশীশক্তির ব্যবহার, অস্বচ্ছতা, ইত্যাদিতে যারা পারদর্শী অথবা শুধুমাত্র রাজপথে মিছিল করতে পারবে, কম-বেশি অনুসারীদেরকে নিয়ে যে কোনো জায়গায় উপস্থিত হতে পারবে, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরকে নিঃশর্তভাবে প্রশংসা করতে পারবে এমন ব্যক্তিদের জন্যই উপযুক্ত ক্ষেত্র হল রাজনৈতিক অঙ্গন। রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যক্তিগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও, পরোক্ষভাবে দুর্নীতির চর্চা সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে। গত বিশ-তিরিশ বছর যাবত রাজনীতিতে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিগণ বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতির কারণে অভিযুক্ত হচ্ছেন, অভিযোগগুলো সত্য হোক বা মিথ্যা হোক সেটা পরে বিবেচ্য। অতি সা¤প্রতিককালে সরকারের অতি জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে বড় বড় মাপের দুর্নীতির অভিযোগ উপস্থাপিত হয়েছে মিডিয়া জগতে। যখন জ্যেষ্ঠ নেতাগণ অবলীলাক্রমে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হন, তখন রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক অঙ্গনের মাঝারি ও কনিষ্ঠ পর্যায়ের নেতাগণ সাহস ও উৎসাহের সাথে একইভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত সমাজ দূষিত ও কলুষিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পত্রিকাগুলো পর্যালোচনা করলে, দুর্নীতির যে সকল খবরাখবর বেরিয়ে আসে, তাতে মনে হয় যে, বাংলাদেশের কোনো অঙ্গনের কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিগণই, দুর্নীতির সংস্পর্শ থেকে মুক্ত নন; কেউ কম কেউ বেশি। অথবা কারোটা জানাজানি হচ্ছে, কারোটা জানাজানি হচ্ছে না। অতীতে একটা সময় ছিল যখন দুর্নীতি লুকিয়ে লুকিয়ে করা হতো, এখন দুর্নীতি করার জন্য প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়! অতীতে একটা সময় ছিল যখন দুর্নীীতবাজ ব্যক্তিগণকে সামাজিকভাবে তির®কৃত করা হতো কিন্তু বর্তমানকালে দুর্নীতির মাধ্যমে বড়লোক হওয়ার কাজটিকে সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে পুর®কৃত ও সমাদৃত করা হয়। এখন ধনী হওয়ার জন্য অনেক বছরের পরিশ্রম ও ধৈর্যশীল ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেউ সঠিক মনে করে না বরং মনে করে, কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সংক্ষিপ্ত বা শর্ট-কাট পদ্ধতিতে ব্যবসা করে বড়লোক হওয়াটাই উপযুক্ত মাধ্যম। যেহেতু বড়লোক হওয়ার প্রক্রিয়াকে কেউ প্রশ্ন করে না, তাই মানুষ অবলীলাক্রমে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হচ্ছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদে দুর্নীতিবাজগণ দুর্নীতি করছেন এমন কথা বলা যাবে না। কারণ, একটি সমাজে বা জনগোষ্ঠীতে শুধু রাজনীতিবিদগণই নেতৃত্ব দেন না, যদিও তাঁরাই প্রধান নেতা। পেশাজীবিগণের অঙ্গনেও নেতা আছে। আমার মূল্যায়নে এইরূপ সকল সংগঠন বা পেশার মধ্যেও নেতৃত্বের সংকট আছে তথা যোগ্য, মেধাবী ও সাহসী ব্যক্তিগণ এই সকল সংগঠনের নেতৃত্বে সাবলীলভাবে উঠে আসতে পারছেন না। এইসকল পেশা বা সংগঠনগুলোও বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য ফিডার প্রতিষ্ঠান হতে পারতো, কিন্তু হয়ে উঠছে না।
এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধের শিরোনামে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট শব্দটি জড়িত আছে। তাই বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসতে বাধ্য। এজন্য কিছুটা আলোচনা ইতোমধ্যে করলাম। সমাজ যতদিন রাজনীতি নামক কর্মযজ্ঞকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখবে, ততদিন রাজনীতিবিদগণ পূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন না অথবা এমনও বলা যায় যে, রাজনীতি নামক পেশাটি সর্বোত্তম না হলে উত্তম মেধা আকর্ষণ করতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, সমাজ তার দৃষ্টিভঙ্গি কখন বদলাবে?
আমার মতে তখনই বদলাবে যখন একজন দুইজন করে বহুজন, মেধাবী, সৎ, সাহসী ব্যক্তি রাজনৈতিক অঙ্গনে নাম লিখাবেন। অপরপক্ষে, যেই একজন দুইজন ব্যক্তির কথা বলছি, তারা প্রশ্ন করেন এই বলে যে, আর তো কেউ নেই, আমরা একা একা কোথায় যাবো? এইরূপ একটি উভয় সংকটের মুহূর্তে ব্যক্তিগণকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তিগণ সমাজের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হবে যে, আমি নাম লিখালাম আপনারা আসুন। তথা আমি বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধলাম, আপনারাও এই সুযোগ গ্রহণ করুন।
অতএব এই সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায়, আমি তথা আমার মতো সাধারণ কিন্তু দেশ নিয়ে সচেতন নাগরিকগণ, আপনাদের সকলের এবং আপনাদের মাধ্যমে অন্যান্য সুধীজনের ও চিন্তাশীল ব্যক্তিগণের সহযোগিতা কামনা করি। আমার মতে, আমাদের উচিত মেধাবী, সাহসী ও গণমুখী ব্যক্তিগণকে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বাগতম জানানো এবং তাঁদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। পৃষ্ঠপোষকতা একাধিক নিয়মে হতে পারে যথা, ঐ ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণের গঠনমূলক সমালোচনা করে, ঐ ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে সাহস যুগিয়ে ও বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে, নিজের লেখনি শক্তি বা বাক শক্তির মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিগণের অনুকূলে আরও ব্যক্তিদেরকে সংগৃহীত করে তথা নিজ নিজ অর্থ ব্যয় না হলেও, শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
অংকুর মেধা বাংলাদেশের লক্ষ্য তথা মূলনীতি (দেশের কল্যাণে মেধার সন্ধানে) খেয়াল রেখে আমার আহ্বান হচ্ছে, দেশের নেতৃত্বকে আপনার এবং আমার মেধা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে, পরোক্ষভাবে অথবা প্রত্যক্ষভাবে। গা বাঁচিয়ে দূরে থেকে পর্যবেক্ষকের অবস্থায় বসে থাকার সময় আর নেই।
ধৈর্য সহকারে এতক্ষণ মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আলোচকগণের সমালোচনা আমার চিন্তার জগতে পাথেয় হয়ে থাকবে।
রমিত ভাই,
প্রবন্ধটিতে ভাবনা উস্কে দেবার মতো অনেক কথা/শব্দ রয়েছে। 'বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার' সময়ও বোধ হয় পার হয়ে এসেছে বাংলাদেশ।রাজনীতি বিষয়ে আমাদের উন্নাসিকতা আর উদাসীনতার চরম মাসুল ইতোমধ্যেই দিতে শুরু করিনি কি? তবু 'আমার কাজটা অন্যে করে দেবে', 'ভোট দিয়েই দায়িত্ব শেষ করলাম' - এই মানসিকতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসছিনা।
আপনার প্রবন্ধটি আালাদাভাবে পড়তে আমার ভালোই লেগেছে, কিন্তু এ সভায় জেনারেল ইব্রাহীমের উপস্থিতি আমাকে কিছুটা সন্দিহান করে তুলেছে। এই শ্রেণীর লোকেদের দেশকে কি দেয়ার আছে আর, কিভাবে, ভেবে পাইনা।কি জানি, হয়তো সবার সংগে মিলে ঝুলেই দেশকে গড়তে হবে। আমিই হয়তো বেশি সংশয়বাদী হয়ে উঠছি।অংকুর সম্পর্কেও কিছুই জানিনা।
শেষে: আপনার পুরো লেখাটাই 'বোল্ড' অক্ষরে হওয়াতে চোখে লাগছে। 'আনবোল্ড' করে দেখতে পারেন।
তোমার সুদীর্ঘ বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নূপুর। বোঝা যাচ্ছে তুমি মনযোগ দিয়ে পুরোটাই পড়েছ ও এই বিষয়ে চিন্তা করেছ।
জেনারেল ইব্রাহীম সম্পর্কে তোমার কোন নেগেটিভ ইমপ্রেশন থাকলে আমাকে সরাসরি বলতে পার।
জেনারেল ইব্রাহীম বীর প্রতীক, জেনারেল (অব.) আমিন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রম উনাদের প্রতি আমার কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল মাত্র এক বৎসর, কি কষ্টটাই না মা আমাকে নিয়ে করেছেন। যতটা না নিজের জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছেন, তার চাইতে বেশী দুশ্চিন্তা সম্ভবতঃ করেছেন আমার জীবন নিয়ে। দাদীর মুখে শুনেছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মা আমাকে বুকে জড়িয়ে কেঁদেছেন। স্বাধীনতা মানে কি? নিজের সন্তানটির পূর্ণ নিরাপত্তা। স্বাধীনতা মানে কি? নিশ্চিন্তে জানালা খুলে ঘুমানো। উপরোল্লিখিত দুজন জেনারেলই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। যারা সেদিন নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আমাদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।
উনারা দুজনও ঐ সেমিনারে বক্তব্য রেখেছিলেন। জেনারেল আমিন পংকিল পরিবেশের কারণে রাজনীতিতে আসবেন না বলেছেন। জেনারেল ইব্রাহীম বলেছেন এই পংকিলতা আমাদেরকেই দূর করতে হবে।
আমাদের বংশের অনেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অনেকেই শহীদ হয়েছেন। অনেকে বেঁচে আছেন। তাদের কেউ কেউ নিজ গুনে সমাজের অনেক উঁচু স্তরে উঠে গিয়েছেন, আবার অনেকেই রয়ে গেছেন সাধারণ মানুষের কাতারে।
যারা সাধারণ মানুষের কাতারে রয়ে গেছেন, তাদের জন্য আমার একটি গানের কলি মনে পড়ে
"হয়তোবা ইতিহাসে, তোমাদের নাম লেখা রবেনা, বড় বড় মানুষের ভীড়ে, জ্ঞানী আর গুনীদের আসরে তোমাদের কথা কেউ কবেনা, তবু হে বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা, তোমাদের এই ঋণ, কোনদিন শোধ হবেনা।"
আমি খুব সাধারণ মানুষদের একজন। ঐদিনের সেমিনারে ঐ সব জ্ঞানী-গুনীদের ভীড়ে আমি নিতান্তই বেমানান ছিলাম। তারপরেও, আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়ার জন্য, অংকুর মেধা সংগঠনটিকে ধন্যবাদ।
জিয়ার ২৭ শে মার্চের যে ভাষণ টা পাওয়া যায় সেটা নাকি আমিন আহমেদের ভয়েস। উনাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন এ ব্যাপারে। আমাদের সময় উনি এ জি ও ছিলেন যতদূর মনে পড়ে।
ইব্রাহীম সাহেব সম্পর্কে হুমায়ুন আজাদের একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেলো।
হু আজাদ একবার শান্সুর রাহমান সম্পর্কে বলেছিলেন, শামসুর রাহমান জানেন না কার সাথে বিছানায় আর কার সাথে টিভিতে যেতে হয়।
ইব্রাহীম সাহেব সংগ্রাম না কি যেনো জামাতীদের পত্রিকায় ল্যাখেন,
শিবিরের হাত থেকে পুরষ্কার নেন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে,
জামাতিদের সাথে একই মঞ্চে, একই সার্থে বসেন,
আদিবাসী, পাহাড়িদের, উপজাতিদের উপর অত্যাচার চালানোর জন্যও তার মহান নামটি উচ্চারিত হয়। প্লিজ আজাদ ভাইয় বইলেন না যে আপনি এসব জানেন না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
জিয়ার ভাষণ আর আমিন আহমেদ এর এই কথিত সম্পর্কের সোর্স কি? আমি তো কখনো শুনিনাই! ইন্টারেস্টিং!
না, রাজীব এই সবকিছু আমার জানা ছিলনা। আবার শুধু অভিযোগ থাকলেই হবেনা, ভেরিফাই ও প্রমাণের ব্যাপারও থাকে। আমি অতি সাধারণ স্তরের মানুষ, এত উঁচু স্তরে গিয়ে সবকিছু ভেরিফাই করার সুযোগ-সামর্থ্য আমার নাই।
আমার মতামত যদি জানতে চাও, তবে বলব স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক কখনো ছিল না, এখনো নাই। আমার পারিবারিক পূর্বপুরুষেরা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।
নিরীহ-নিরাপরাধ মানুষের উপর অত্যাচার করাটাকে আমি কখনোই পজিটিভলি দেখিনাই, এখনো দেখিনা। সেটা যেপক্ষ থেকেই হোক না কেন।
তোমার কাছে একটি প্রশ্ন? মনে কর একজন বাংলাদেশী এমন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চায়, যার নেতা একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক, অতীতে দেশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য বিষয়ে অবদান রেখেছে, কোন বিদেশী শক্তির তাবেদারী করেনা, তিনি বা তার পরিবারের সদস্যরা দেশত্যাগী হয়ে ভিনদেশে বিলাসী না হয়ে, নিজ দেশের সব দুঃখ কষ্ট সয়ে দেশে থেকেই দেশের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যিনি সর্ব প্রকার বিতর্কের উর্ধ্বে, দেশের সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য। সেই বাংলাদেশীটিকে তুমি কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়ার পরামর্শ দেবে?
রমিত ভাই,
জেনারেল ইব্রাহীম সম্পর্কে যা বলার রাজীব বলে দিয়েছে।
আমিও বোল্ডের কারণে আগাতে পারি নি
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এখন আর বোল্ড নেই। ঠিক করে দিয়েছি।
আর কপি করে কোথাও পেস্ট করে, বোল্ড তুলে নিলেই তো পড়া যায়।
ভাইয়া, আর্থ-সামজিক প্রেক্ষাপটের সেমিনারে পদার্থ-বিজ্ঞানী পেপার পড়ছেন কেন? পেপার সিলেক্ট হল কিসের ভিত্তিতে?
এটা কি দেশের মেধাবীরা কিভাবে রাজনীতিকে মূল্যায়ন করেন তার সেমিনার?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
অনেকটা সেরকমই।
দেশতো আমাদের সবার। আমরা সবাইই দেশকে নিয়ে ভাবব। একজন ইকনোমিস্ট যেমন দেশকে নিয়ে ভাববেন, তেমনি একজন ফিজিসিস্টও ভাববেন। সৈনিক ভাববেন, আইনজীবি ভাববেন, শিল্পি ভাববেন, লেখক ভাববেন, আমলা ভাববেন, শিক্ষক ভাববেন, ছাত্র ভাববেন, সবাই, সবাইই ভাববেন। সবার ভাবনা ও কাজের সম্মিলিত ফলাফলই তো একটি দেশ। আলোচনাটা ব্যপক। দু'এক বাক্যে ব্লগে বলা সম্ভব না। তুমি কি ঢাকায় থাক? ঢাকায় থাকলে আমার সাথে দেখা কর, সাক্ষাতে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
তুমি প্রবন্ধের কনটেন্ট সম্পর্কে কিছু বলো, সহমত, দ্বিমত, ভিন্নমত সবই শুনব।
অবশ্যই ভাববো। কিন্তু সব ব্যাপারেই ভাববো না। একজন ইকোনমিস্ট ফিজিক্সের থিওরী দিলে যেমন আমি মুচকি হাসবো, তেমনি হাসবো পদার্থবিদ আর্থ-সামাজিক বিষয়ে জ্ঞান দিতে চাইলে।
আমরা সবাই যদি সব ব্যাপারে এক্সপার্ট হতে চাই, তাহলে যা হব তা হচ্ছে "জ্যাক" । অন্য ভাষায় জোকার। এরা মোটেই দেশের উন্নতি জন্য কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। যা করবে তা হল "টাইম পাস" । অথবা নিজকে প্রচার করে বেড়ানো।
যুগান্তকারী কোন আবিস্কার যদি হত আপনার ল্যাবে, পাওয়ার/এনার্জি নিয়ে নতুন কোন কাজ, কি দারুন হত। আমরাও গর্ব করতাম, দেশও এগিয়ে যেত।
ও আর হ্যা, আমি ঢাকাতেই থাকি, দেখা হয়ে যাবে কোন একদিন।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
রমিত ভাই,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নিজে যা' পড়েছেন এবং পড়াচ্ছেন, তা'র বাইরে গিয়ে নের্তৃত্বের মতো একটা বিষয় নিয়ে কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপণ করেছেন। তবে আমার মনে হয় নন-প্রফেশনালদের পক্ষে এজাতীয় কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ, আলোচ্য বিষয়ে যথেষ্ঠ দখল না থাকলে সংশয় দূর করার বদলে উলটো ফল ফলতে পারে, অর্থ্যাৎ বিষয়টি সম্পর্কে বিদ্যমান ধারণা আরো ঘোলাটে হয়ে পড়তে পারে। আমার মনে হয় ফয়েজ ভাই এই বিপদটার কথাই বলতে চেয়েছেন। আমি তার সাথে একমত। আমার মতে, আপনার প্রবন্ধ নের্তৃত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার বদলে আরো অস্পষ্ট করেছে। এখানে যেমন রয়েছে কিছু ধারণাগত অস্পষ্টতা, তেমনি রয়েছে বিশ্লেষণের অভাব, যা'র কারণে সংকটের স্বরূপ বোঝা যায়নি। ফলে আগ্রহজাগানীয়া কোন সমাধানও নেই। কিছু উদাহরণ-
- ব্যবসায়ীদের নেতাদের কাজ ত' দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়, তাদের কাজ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা, অর্থ্যাৎ কিভাবে তাদের সকলের "মুলাফা" বাড়বে সেই দিকটা দেখা। সরকারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নির্ভর করে সরকারের শ্রেণীগত অবস্থানের উপর, সরকারে ব্যবসায়ীরা বেশি থাকলে এই দ্রব্যমূল্য না কমে বরং বেড়েই চলবে। একইভাবে অন্যান্য পেশাজীবি সংঘেরও এজেন্ডা আলাদা। সব ধরণের সংঘের নেতাদেরকে দিয়ে দূর্নীতি দমনের চিন্তা অবাস্তব। এই কারণে আপনার প্রবন্ধ বেশ কনফিউজিং হয়ে পরেছে।
শিরোনামে থাকলেও প্রবন্ধের কোথাও বর্তমান নের্তৃত্বের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোন তথ্য এবং বিশ্লেষণ নেই। যা' আছে, সেগুলো মূলতঃ জার্নালিষ্টিক বর্ণনা+জেনারালাইজেশন। সেখানে আপনার নিজস্ব উপলব্ধি+ব্যাখ্যা পেলাম না।
এর উত্তরে আপনি আপনি বলেছেন-
- এখানে কর্তা কে? কাকে দিয়ে আপনি এই কাজগুলো করানো যাবে বলে মনে করেন সেটার উল্লেখ নেই। জাতীয় নির্বাচন হলেই সেটা অটোম্যাটিক্যালী আপনার উল্লিখিত অনুকূল একটা পরিবেশ তৈরী করে ভাবাটা ঠিক নয়।
আমার মতে, আপনার প্রবন্ধে উত্থাপিত 'নের্তৃত্বের সংকট' বিষয়ক প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু নের্তৃত্বের বিষয়ে কিছু মৌলিক ধারণায় অস্পষ্টতার (যেমন, নের্তৃত্ব কি, কোথা থেকে নের্তৃত্বের উদ্ভব ও পরিবর্তনের সূচনা হয়, ইত্যাদি) কারণে আপনার প্রবন্ধ সেই প্রশ্নকে যথাযথ যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংকটের স্বরুপ তুলে ধরতে পারেনি।
রমিত ভাই,
আপনার প্রবন্ধের বিষয়ে আমার সামগ্রিক মন্তব্য হচ্ছে, এটা নের্তৃত্ত্বের সংকট বোঝা+সমাধান খোঁজার চেষ্টায় গতানুগতিক একটা আলোচনার বাইরে আসতে পারেনি। সংকট এবং এর সমাধানের চিন্তায় যে ধোঁয়াশা ছিল, তা' রয়েই গেছে। তবে আপনার প্রচেষ্টা অনেক মূল্যবান এই কারণে যে, আপনার নিজের পড়াশোনা+পেশাগত দায়িত্বের বাইরে এসেও আপনি যে শ্রম দিয়ে এই প্রবন্ধ লিখেছেন এবং তা' অনেকের সামনে পাঠ করেছেন, সেটা এই বিষয়ে পাবিলিক ডিসকোর্সকে নিঃসন্দেহে বেগবান করবে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ, তোমার এত বিশাল বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, ঠিক এটাই আমার প্রয়োজন ছিল - আমার প্রবন্ধের সমালোচনা। এই উদ্দেশ্যেই প্রবন্ধটি ব্লগে দেয়া, আমার কারিশমা দেখানোর জন্য নয় (বক্তৃতা আমি প্রথমবার দিচ্ছিনা ক্যাডেট কলেজ থেকে শুরু করে দেশে ও বিদেশে আমি বহুবার বক্তৃতা করেছি, এটা আমার কাছে নতুন কোন অভিজ্ঞতা নয়)। তুমি যা যা বলেছ সেখান থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে। আশা করি অন্যেরাও কিছু বলবে। সেমিনার-এর দিনও আলোচকবৃন্দ ও অন্যেরা অনেকে গঠনমূলক সমালোচনা করেছে। আমি সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহন করে ভবিষ্যতের কাজে লাগাবো।
মাহমুদ আমার সময় খুব কম। তাই ইচ্ছা থাকলেও খুব বেশী লিখতে পারি না। এই এখনই একটা ক্লাসে যেতে হবে। পরবর্তিতে তোমার মন্তব্য বিষয়ে আরো কিছু লেখার চেষ্টা করব।
খুব ভালো হয় তুমি ঢাকায় থাকলে, সাক্ষাৎ করা। বিস্তারিত আলাপ করা যাবে।
ফয়েজ, কন্টেন্ট নিয়ে কোন আলোচনাই পেলাম না!
তোমার চিন্তারও সংকীর্ণতা রয়েছে।
আমি তো অতি সাধারণ একজন মানুষ।তোমার খুব সম্ভবতঃ জানা নাই এই পৃথিবীর অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ ও স্টেটসম্যান পেশাগত ও শিক্ষাজীবনে একেবারেই ভিন্ন ক্ষেত্রের ছিলেন।
তোমার অবগতির জন্য আরেকটি বিষয় জানাচ্ছি, আমি বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে অনেক অর্থনীতি, সমাজবিদ্যা ও রাষ্ট্রবিদ্যার ছাত্র আমার কাছে অনুরোধ নিয়ে আসত, তাদের আর্টিকেল লিখতে সাহায্য করার জন্য। সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছিও। সেইসব লেখা জার্ণালে ছাপাও হয়েছে।
আরেকটি অনুরোধ তোমাকে করব। ঢাকায় থাকলে আমার সাথে আমার সাথে একটু দেখা করতে, দীর্ঘ আলোচনা করা যাবে। আমার নেয়া 'রিসার্চ মেথডোলজি'-র দুয়েকটা ক্লাসও করে দেখতে পারো।
তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্টটা কি? (সম্পাদিত)
মাহমুদ ,
তোমাকে সামান্য বলতে চাই যে, আমি কেবল পদার্থবিজ্ঞান পড়েছি, আর কিছু পড়িনি তা নয় কিন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মূল সাবজেক্ট টির নাম ছিল, Physical and Mathematical Science। তবে এর পাশাপাশি আমাদেরকে আরো বেশ কিছু বিষয় পড়তে হয়েছে, যেমন দর্শন, রাজনীতিবিদ্যা (রাষ্ট্রবিদ্যা), সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, রিলিজিয়াস স্টাডি, সোশাল সাইকোলজি, আইন, ইত্যাদি। ফলে খ্যাতিমান অধ্যপকদের (এদের মধ্যে একজন ডঃ ইগর চুবাইস) সাহচর্যে এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কেও সামান্য জ্ঞান লাভ করেছি। উপরন্ত আমি কেবল পদার্থবিজ্ঞানই পড়াই তাও নয় কিন্ত, আমি বিজনেস ম্যাথমেটিক্স ও বিজনেস স্ট্যাটিসটিক্স, কোয়ান্টিটেটিভ এনালাইসিস, রিচার্চ মেথডোলজি (ফর বিজনেস স্টুডেন্টস) এ সমস্ত সাবজেক্টও পড়াই।
এছাড়া নেতৃত্ব দানের ছোটখাট অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। শুরুটা ক্যাডেট কলেজের প্রিফেক্টশীপ দিয়ে তারপর দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব একাধিকবার দিয়েছি। আমি নিজে এনজয় করেছি ইউক্রেনের খারকভ শহরের পাঁচ হাজার বিদেশী ছাত্রের সংগঠন (Organization of Foreign Students, Kharkov) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে।
এখানে কনফিউশনের কিছু নাই। এই পৃথিবীতে ব্যাবসায়ী গোষ্ঠির উদ্ভবের কিছুকাল পরেই ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে। এই সব সংগঠনগুলো মূলতঃ ব্যবসায়ীদের সেফগার্ড। এটা আমি জানি। তবে ইদানিং বাংলাদেশী কিছু মিডিয়াতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কিছু কিছু নেতা মূল্যহ্রাসে তারা অবদান রাখবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাদের সেটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্যই আমার ঐ প্যরাটি। আর এটা একটা স্ট্রাটেজিও। যাতে ব্যবসায়ী নেতারা একটু হলেও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব বুঝতে পারে।
তোমার রিমার্কস সঠিক। আমাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে যখন প্রবন্ধ লিখতে বলা হয়। আমি এই সবগুলো বিষয়ই উল্লেখ করেছিলাম। শুরু করেছিলাম সেই গ্রীক পূরাণের হিরো বা নেতা প্রমিথিউস দিয়ে। কিন্ত সংগঠনের মুরুব্বীরা আমাকে তা কাটছাট করার অনুরোধ জানান। তাদের বিভিন্ন যুক্তি ছিল, যেমন সময়ের স্বল্পতা, ও এটাই শেষ সেমিনার নয় আরো সেমিনার হবে সেখানে আমরা পরবর্তি আলোচনাগুলো করব, ইত্যাদি। যাহোক তোমার ও পাঠকদের দাবী থাকলে আমি পরবর্তিতে এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করব।
রমিত ভাই,
আপনি আমার বক্তব্য ভুল বুঝেছেন। আমি বলতে চেয়েছি এই যে, পদার্থবিদ্যায় পেশাগত পড়াশোনা+পড়ানোর কারণে আপনার যে স্পেশালাইজড জ্ঞান লাভের সম্ভাবনা, তার থেকে নের্তৃত্বের মতো বিষয়ে আপনার দখল কম থাকার সম্ভাবনা বেশি। আমার এই ধারণা আপনার এই ব্লগের পরিসরে সঠিক বলে মনে করছি। তাছাড়া পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে আপনার পড়াশোনা থাকলেও তা' আপনার লেখায় ফুটে ওঠেনি। আর অন্যান্য যেসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান বলে উল্লেখ করেছেন, সেগুলোও বোঝা গেল না আপনার ব্লগ থেকে। যেমন, সোস্যাল সাইকোলজীর যেকোন ইন্ট্রোডাক্টরি বইয়ে একটা চ্যাপ্টার থাকবেই নের্তৃত্ব নিয়ে, সেটার কোন ছাপ দেখলাম না এই ব্লগে। আর রিসার্স মেথোডলজি, কোয়ান্টিটেটিভ রিসার্চ এইসব কোর্স পড়ানোর সময় অবশ্যই 'প্রশ্ন+উপাত্ত+বিশ্লেষণ+উপসংহার' এই ধারা অনুসরণ করেন, সেটাও নের্তৃত্বের সংকট আলোচনায় অনুসরণ করেননি দেখছি।
আমি এতোসব উল্লেখ করছি এইটা বোঝানোর জন্য যে, আপনি ব্যক্তিগত ভাবে কি করেছেন+করছেন সেসবের চেয়ে (বা বক্তৃতায়) আপনার মতামত কিভাবে তুলে ধরছেন, সেইটার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ণ হয়। কাজেই, ব্লগের আলোচনায় সেসব নিয়ে না-আসাই ভালো, এতে আলোচনার ফোকাসটা ঠিক থাকে। তা নাহলে আলোচনা ব্যক্তির প্রশংসা/সমালোচনায় পরিণত হতে পারে।
আপনার শেষ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলছি, দূর্নীতি দমনের প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে আপনার পরিকল্পনা থেকে আমার মনে হচ্ছে, নের্তৃত্বের ধারণায় আপনার সাথে আমার বড় ধরণের মৌলিক মতপার্থক্য আছে।
কোন কথায় দুঃখ দিয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ আমি কোন দুঃখই পাইনি। আমি তোমার আলোচনা, সমালোচনা, প্রশংশা, নিন্দা, মতামত, ভিন্নমত সবকিছুকেই স্বাগত জানাই।
বরং উল্টো, তুমি আমার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়েছ, কমেন্ট করেছ, আমাকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করছ, এতে আমিতো আনন্দিত।
প্রবন্ধে সবকিছু আসেনাই সেটা আমিও জানি। কেন আসেনি সেটা আমি উল্লেখ করেছি। সমস্যা কি পরবর্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করব। তথ্য, উপাত্ত, এনালাইসিস সব কিছুই রাখার চেষ্টা করব। তবে একটু সময় লাগবে। আমার দুটা জিনিসের বড় অভাব ১। সময়, ২। টাকা।
যাহোক, তোমাকে আবারও ধন্যবাদ মাহমুদ। আমার ক্যাডেট কলেজগুলোর ছোট ভাই, বড় ভাই, শিক্ষক সবাইকেই আমি খুব ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, আপন মনে করি। তাদের যেকোন সমালোচনা আমি পজেটিভলিই নেই।
ফয়েজ,
তোমার ভাবনাটার সংগে খানিক দ্বিমত পোষণ করছি।
কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে কোন বিশেষজ্ঞকে শুধু সেই বিষয়ের কাজ করলেই চলেনা; উক্ত ব্যক্তিটি নেতৃত্বে থাকুন বা না থাকুন তাঁকে ধীরে আরো অনেক বিষয় বুঝে নিতে হয় সেই প্রতিষ্ঠানের (বা সংগঠনের) কাজগুলো সুচারুভাবে করার জন্যে।
একজন চিকিৎসক, পদার্থবিদ, জীববিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা স্থপতিকে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে নিজনিজ বিষয়ের বাইরে গিয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পড়াশোনা এবং জ্ঞানার্জন করতে হয় - যেমন সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, ম্যানেজমেন্ট বা সাইকোলজি।এভাবেই মেধাবী ব্যক্তিগণ অবদান রাখছেন বিশ্বব্যাপী।
সেজন্যে বহুক্ষেত্রেই এমন বিশেষজ্ঞদের অত্যন্ত সফলতার সংগে বিষয়ান্তরে লাফ দিতে দেখা যায় - যেমন পদার্থবিদ হয়ে উঠছেন বায়োলোজিস্ট, কিংবা ইকোনমিস্ট কিংবা পলিটিকাল স্ট্রাটেজিস্ট।এভাবেই প্রাসংগিক দেশ পরিচালনা বা রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক ব্যাপারটিও। আমাদের উপমহাদেশে মেঘনাদ সাহা এর অন্যতম উদাহরণ।
স্পেসিফিকালি উনার ল্যাবেই যুগান্তকারী আবিষ্কার না হলেও, ইনি কিন্তু যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেই পারেন প্রজ্ঞা আর নিষ্ঠার বিনিময়ে (যেখানে শুধু নিজ গবেষণাতেই শ্রম দিলে হবেনা, প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার প্রতিটি ইট-বালি-সিমেন্টেরও খোঁজ রাখতে হয়) যেখানে আরো মেধাবী অনেকে আবিষ্কারের নেশায় মেতে রইবে ভবিষ্যতের কয়েক দশক।
অভুতপূর্ব মন্তব্য নূপুর। এই কথাগুলো আমার মনের মধ্যে থাকলেও গুছিয়ে বলতে পারিনি। এই গুছিয়ে বলতে পারার গুনটা তোমার আছে নূপুর।
তোমাকে ধন্যবাদ।