রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -২
অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। আর তার মধ্যে রহস্যময় একটি সত্তা আমরা – ‘মানুষ’। এই দু’য়ের সম্পর্কও কম রহস্যময় নয়। মহাবিশ্বের বিবর্তন বা বিকাশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল মানুষ, সেই মানুষই আবার গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করছে তার চারপাশের মহাবিশ্বটিকে। কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়? এই সব প্রশ্ন অবিরাম ঘুরে ফিরে মানুষের মস্তিস্ক থেকে হৃদয় আর হৃদয় থেকে মস্তিস্ক পর্যন্ত। এইসব চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসার যতটুকু উত্তর এ যাবতকাল আমাদের জানা হয়েছে দর্শন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে। সেইসব উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করব আমার এই সিরিজে।
গত পর্বে বস্তু (matter) সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়েছে। এই পর্বে আলোচনা করব গতি নিয়ে।
গতি
গতি কথাটিকে আপাতভাবে সরল মনে হলেও এর দার্শনিক ব্যাখ্যা কিন্তু অত সহজ নয় আর দৈনন্দিন ধারণা থেকে একেবারেই ভিন্ন।
আমরা সাধারনতঃ বলে থাকি যে, একটি অবজেক্ট অন্য একটি অবজেক্টের সাপেক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করলেই তাকে গতি বলা হয়। বলবিজ্ঞান-এর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সত্য, কিন্তু দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপর্যাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে একটি নির্দিষ্ট অবজেক্ট-এর বাইরে অন্যান্য অবজেক্ট-এর অস্তিত্ব আছে, কিন্তু বস্তুর বাইরে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। গতির দার্শনিক ব্যখ্যার আলঙ্কারিক উপমা নিম্নের ঘটনায় দেখা যেতে পারে – গ্যাস আয়তনের বৃদ্ধি দেখা যায় যখন একটি শিশু বায়বীয় বা তরল মাধ্যমে একটি রবার বেলুন ফোলায়।
একটি হ্রদে পানির স্রোত মিশ্রিত হওয়া যদি আমরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে আমরা স্পস্টভাবে দেখতে পাবো যে, হ্রদের পানির গতি কোন শূণ্যতা (vacuum) সৃস্টি করেনা। ইতিপূর্বে দখলকৃত পানির স্রোতকে তাৎক্ষণিকভাবেই নতুন পানির স্রোত দখল করে নেবে। বস্তুর গতি বলতে বিচ্ছিন্ন (isolated) কোন কিছু বোঝানো যাবেনা; কোন একটি পরমাণু, গ্রহ অথবা গ্যালাক্সির অবস্থানের পরিবর্তন সবসময়ই প্রতিবেশী কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত/সহগামী।
এটা উল্লেখযোগ্য যে, পরম শূণ্যতা (absolute vacuum) বলে কিছুই নেই।পুরো মহাবিশ্বই (Universe) পদার্থ (substance), কণিকা (particle) অথবা ক্ষেত্র (field) দ্বারা পরিপূর্ণ। পাশাপাশি একথা বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দুতেই সদাবিরাজমান মহাকর্ষ ক্ষেত্র (gravitational field)। বস্তুর ঘনতম মিশ্রণ হলো একটি বহুল পরিচিত জ্যোতিস্ক (astronomical object) যার নাম ব্ল্যাক হোল।
বস্তুর গতি মানে তার ঘনত্ব (density), গঠন (composition), সম্পৃক্তি (saturation) এবং ঘনীভবন (concentration)-এর নিম্নসীমা থেকে ঊর্ধ্ব সীমা এবং তদ্বিপরীত ঊর্ধ্ব সীমা থেকে নিম্নসীমা পর্যন্ত অবিরাম পরিবর্তন । এই পথ স্বাভাবিকভাবেই সরলরৈখিক নয়, বরং নানা প্রকৃতির কখনো বৃত্তাকার, কখনো বিপরীতমুখী, পাশাপাশি ত্বরান্বিত (accelerated) অথবা মন্দিত (retarded) পরিবর্তন ।
দর্শন শাস্ত্রে গতির কতগুলো ধর্ম রয়েছে। এগুলো হলো বস্তুগততা (materiality), পরমতা (absoluteness) এবং সুনির্দিস্টতা (concreteness)। গতির বস্তুগততা মানে আমরা বুঝব যেখানে বস্তু নাই, সেখানে গতিও নাই। গতি কেবলমাত্র বস্তুরই ধর্ম। উধাহরণস্বরূপ, পথচারী, ইলেকট্রন, পিস্টন, ধুমকেতু এরা সকলেই গতিশীল এবং সকলেই বস্তু । গতির পরমতা বলতে আমরা এই বুঝব যে, গতিহীন কোন বস্তু হয়না। বস্তু মাত্রই গতিশীল। সকল বস্তু সকল অবস্থাতেই সর্বদাই গতিশীল। স্থিতি একটি আপেক্ষিকতা মাত্র, পরম স্থিতি বলে কিছু নেই।
গতির তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হলো সুনির্দিস্টতা। বিষয়টি হলো এমন যে, যে কোন বস্তুর গতির প্রকৃতি ও রূপ নির্ভর করে বস্তুটির গঠনের উপর। গতি চিরন্তন বটে তবে তা কখনো সুনির্দিস্ট কখনো আপেক্ষিক রূপে দেখা দেয়। গতির বাহক (carrier) এবং মৌলিক আইনের (fundamental laws) উপর নির্ভর করে গতির বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। যেমন, যান্ত্রিক (mechanical) (বাহক – মনুষের দ্বারা পরিমাপযোগ্য, অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র নয় আবার অতি বৃহৎ নয় এমন কায়া; আইন – নিউটনীয় (চিরায়ত) বলবিদ্যার আইন)। ভৌত (physical) অর্থাৎ তাপীয় (thermal), বৈদ্যুতিক (electrical), আলো ইত্যাদি ( বাহক – অণু, পরমাণু, ইলেকট্রন ইত্যাদি ক্ষুদ্র কণিকা, আইন – আনবিক পদার্থবিদ্যা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ইত্যাদি ক্ষুদ্র কণিকার বিজ্ঞানের আইন), জৈবিক (biological) (বাহক – জীব, আইন – প্রাকৃতিক নির্বাচন (natural selection) অর্থাৎ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াবার আইন)। মনস্তাত্ত্বিক (psychological) (বাহক – মস্তিস্ক এবং স্নায়ু), সামাজিক (social) ( বাহক – মানুষ এবং মানব সমাজ, আইন – সমাজবিদ্যার আইন)
এদিকে ৯০-এর দশকের ধারণাগুলো অনুযায়ী আমরা জানি যে, বিজ্ঞান যে সকল গতির প্রকারভেদের কথা বলে তার সাথে উপরের ৬টি প্রকারের পুরোপুরি মিল খুঁজে পাওয়া যায়না, বরং তা একটি বহুবিধ শাখা-প্রশাখা সম্বলিত বৃক্ষের সাথে তুলনীয়। পদার্থবিজ্ঞানীরা ভূবিজ্ঞান (geology), সাইবারনেটিক্স (cybernetics), গতির ইনফর্মেশন রূপ এবং মৌলিক কণিকা গুলোর গতি অধ্যয়ন করছে। বর্তমানে এমন সব বস্তুরও সন্ধান পাওয়া গি্যেছে যার উৎস ও গতির প্রকৃতি অন্ধকারাচ্ছন্ন। এর উজ্জ্বল উদাহরণ কোয়াজার (quasar)।
রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৩
প্রথম পর্বে বস্তু (matter) সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে গতি (motion) নিয়ে। এবারের পর্বে আলোচনা করব স্থান ও কাল (space and time) নিয়ে।
স্থান ও কাল
স্থান কি ও কাল কি এই জিজ্ঞাসাও মানুষের চিরন্তন। মানব জ্ঞান ও মানব জাতির ইতিহাসে এটি মৌলিক প্রশ্ন সমূহের একটি। মানব ইতিহাসের গতিধারায় স্থান ও কালের ধারনাও পাল্টেছে বহুবার। বস্তুর এই গুনাগুন (attributes) দুইটিকে সম্মিলিত ভাবেই অধ্যয়ন করা হয়।
স্থানের প্রকৃতি, গুনাবলী ও অস্তিত্বের ধরণ নিয়ে বিতর্ক চলছে সেই অনাদিকাল থেকে। যেমন প্লেটোর ট্রিটিজ (treatise) Timaeus অথবা সক্রেটিসের khora (অর্থাত্ “স্থান”), অথবা এরিস্টটলের (ডেল্টা বইয়ের IV নং অধ্যয় ) topos (অর্থাৎ জায়গা)-এর সংজ্ঞা, অথবা ১১ তম এর শতাব্দীর আরব polymath আলহাজেন-এর “স্থান সম্পর্কিত ডিসকোর্স (Qawl fi al-Makan)”-এর মধ্যে “স্থানের জ্যামিতিক ধারণা” “space qua extension” হিসাবে আলোচিত হয়েছে।
রেনেসাঁ-র যুগেও এই সকল চিরায়ত দার্শনিক প্রশ্নগুলো আলোচিত হয়েছে । তারপর ১৭ শতাব্দীতে বিশেষত চিরায়ত বলবিজ্ঞানের প্রথম যুগে তাদেরকে পূণর্বিন্যাসও করা হয়েছে। স্যার আইজাক নিউটনের মতে, স্থান হচ্ছে পরম – অর্থাৎ স্থান স্থায়ীভাবে এবং স্বাধীনভাবে চিরকাল ছিল ও আছে। সেই স্থানে বস্তু থাকুক বা না থাকুক তার উপর স্থান নির্ভরশীল না।
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস এবং এপিকুরাস মনে করতেন স্থান হলো সমসত্ত্ব (homogenous) ও অসীম শূণ্যতা, যা কম বেশী পরমাণু দ্বারা পরিপূর্ণ।
অন্যান্য প্রাকৃতিক দার্শনিকরা, যাদের মধ্যে Gottfried Leibniz-এর নাম উল্লেখযোগ্য, তিনি ভেবেছিলান যে স্থান হচ্ছে বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের একটি সংগ্রহ, যা নির্ধারিত হচ্ছে একে অপরের থেকে তাদের দূরত্ব এবং দিকবিন্যাস দ্বারা। ১৮ শতাব্দীর দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ জর্জ বার্কলে তার রচনা “Towards a New Theory of Vision” – এ “স্থানিক গভীরতার দৃশ্যমানতা” (visibility of spatial depth) সম্পর্কে নতুন ধরনের বিবৃতি প্রদান করেন।
পরবর্তীতে, অধিবিদ্যাবিদ (meta-physician) ইমানুএল কান্ট বলেন স্থান বা সময় কাউকেই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যভাবে (empirically) হৃদয়ঙ্গম করা যাবে না, তারা একটি পদ্ধতিগত কাঠামোর উপাদান যা মানুষ তার সকল অভিজ্ঞতা কাঠামোগত করার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে গণিতবিদরা অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন, যেখানে স্থান আর সমতল নয় বরং বক্র।
আমাদের এ যাবৎকাল যা জানা আছে তার মধ্যে সময় সম্পর্কে লিখিত প্রাচীনতম লেখাটি মিশরীয় চিন্তাবিদ প্টাহহোটেপ (Ptahhotep (c. 2650–2600 BCE))-এর তিনি বলেছিলেন: “Do not lessen the time of following desire, for the wasting of time is an abomination to the spirit.” আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ বেদ (খ্রীস্টপূর্ব ২০০০ সালে লিখিত বলে ধারণা করা হয়)-এ বিশ্বতত্ব (cosmology)-এর বর্ণনা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে এই মহাবিশ্ব চক্রাকেরে বারংবার সৃস্টি, বিকাশ, ধ্বংস ও পূনর্জন্মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি চক্রের বয়স ৪৩২০০০০ (তেতাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার ) বছর ।
গ্রীকরা যেমন ধারণা করেছিল যে, এই মহাবিশ্বের রয়েছে অসীম অতীত এবং এর কোন শুরু নাই। গ্রীকদের বিপরীতে মধ্যযুগীয় দার্শনিক ও ধর্মতত্ববিদরা এই ধারণা বিকশিত করেন যে, মহাবিশ্বের একটি সসীম অতীত ও প্রারম্ভ রয়েছে । এই দৃস্টিভঙ্গী উৎস হলো তিনটি আব্রাহামীক ধর্ম (Abrahamic religions): ইহুদী, খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্ম। যে সকল দার্শনিক এই ধারণাকে বিকশিত করেন তারা হলেন, খ্রীস্টান দার্শনিক জন ফিলিপোনাস, ইহুদী দার্শনিক সাদীয়া গাওন, মুসলিম দার্শনিক আল কিন্দি, আল গাজ্জালী প্রমুখ। অসীম অতিতের ধারণার বিপরীতে তারা দুইটি যুক্তি ব্যব হার করেন, প্রথমতঃ “সত্যিকারের অসীম বলে কোন কিছু থাকা সম্ভব না”। যা বলে “ঘটনসমুহের (events) অসীম সময়গত ক্রমাগত প্রত্যাবর্তনই হলো সত্যিকারের অসীম” (An infinite temporal regress of events is an actual infinite.”), ” “ঘটনসমুহের অসীম সময়গত ক্রমাগত প্রত্যাবর্তনের কোন অস্তিত্ব নেই (∴ An infinite temporal regress of events cannot exist)”
দ্বিতীয় যুক্তিটি হলো, ” সত্যিকারের অসীমকে পরবর্তীকালীন যোগ দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব না (An actual infinite cannot be completed by successive addition.”)। ড্বিতীয় যুক্তিটি খ্যাতিমান হয়ে ওঠে ইমানুয়েল কান্ট যখন তাকে তার নিবন্ধ the first antinomy concerning time – এ ব্যবহার করেন।১১ শতকের শুরুতে মুসলিম বিজ্ঞানী আল হাজেন (Ibn al-Haytham (Alhacen or Alhazen) তার গ্রন্থ ‘আলোকবিজ্ঞান’-এ স্থান উপলদ্ধি ও তার জ্ঞানতত্ব বিষয়ক প্রয়োগ (space perception and its epistemological implications ) নিয়ে আলোচনা করেন। পূর্বে স্থানের দৃষ্টিগত যে উপলদ্ধি ছিল, আল হাজেনের পরীক্ষামূলক প্রমাণের পরে সেই ধারনা বদলে যায়। তিনি টলেমি ও ইউক্লিডের স্বজ্ঞাজনিত স্থান উপলদ্ধি ( intuitiveness of spatial perception )-কে একবাক্যে বাতিল করেন, তিনি বলেন, পারস্পরিক সম্পর্ক স্থির করার লক্ষ্যে, আকৃতি ও দূরত্ব সম্পর্কে বাস্তব ধারণা না থাকলে দৃষ্টি আমাদেরকে প্রায় কিছুই বলতে পারবে না (Without tangible notions of distance and size for correlation, sight can tell us next to nothing about such things.”
দক্ষিণ আমেরিকার ইনকারা স্থান ও কাল-কে একীভূত (single concept) মনে করত, তারা স্থান-কাল-এর একটি নাম দি্যেছে, পাচা (pacha), আন্ডিজ পর্বতমালার অধিবাসীরা এখনো এই ধারণাই পোষণ করে।
নিউটন-লেইবনিজ স্থান-কাল বিতর্কঃ
স্থান ও কাল নিজে নিজেই সত্যিকার অবজেক্ট (real objects ) নাকি তারা সত্যিকার অবজেক্ট সমূহের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক এই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল দুই খ্যাতিমান বিজ্ঞানী স্যার ইসাক নিউটন ( Isaac Newton ) ও গটফ্রীড লেইবনিজ (Gottfried Leibniz)-এর মধ্যে। স্যার ইসাক নিউটন মনে করতেন স্থান ও কাল বস্তুর উপর নির্ভরশীল নয়। স্থান আরও যথাযথভাবে বললে চরম স্থান হলো একটি শূণ্য আধার যা নানাবিধ কায়া (body) ধারণ করে। এই আধার (স্থান) গতিহীন, অবিরাম ও সকল বিন্দুতে ও সকল দিকে সমসত্ত্ব (homogeneous)। এখানে কায়াগুলো থাকে তবে কায়াগুলো স্থানকে অথবা স্থান কায়াগুলোকে কোনভাবেই প্রভাবিত করেনা। একইভাবে সময় হলো পরম যা কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। সময়ের তীর অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকে বহমান। স্থান যেমন কায়ার আধার সময় তেমনি ঘটনার আধার । নিউটন আরো মনে করতেন স্থান ও কাল পরস্পরের উপর নির্ভরশীল নয়।
পক্ষান্তরে স্যার আইজাক নিউটনের ধারণা বা তত্ত্বের বিরোধী আর একটি ধারণা বা তত্ত্ব প্রতিস্ঠিত হয় এরিস্টটলের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করেন গটফ্রীড লেইবনিজ । এই ধারণা অনুযায়ী স্থান ও কাল বস্তু থেকে বিচ্ছিন্ন নয় বরং তার উপর নির্ভরশীল। স্থান হলো কিছু কায়ার মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাল হলো কিছু ঘটনার মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক । যেখানে কায়া নাই সেখানে স্থান নাই এবং যেখানে ঘটনা নাই সেখানে কাল নাই। মহাবিশ্বের আবির্ভাবের সাথে সাথে জন্ম হয়েছে স্থান ও কালের। আবার মহাবিশ্ব কোন দিন যদি তীরোভুত হয়ে যায়, তার সাথে সাথে স্থান ও কাল-ও তীরোভূত হবে।
এদিকে জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন যার আপেক্ষিকতত্ত্ব (Theory of Relativity) নামের বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনা বিজ্ঞানের জগতে সূচনা করেছে এক নতুন যুগের, তিনি স্থান ও কাল সম্পর্কে দিয়েছেন আরো একটি নতুন ধারণা। পরবর্তি পর্বে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
(চলবে)
রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -২ , ৩ পড়েছি আপনার পরবর্তি সিরিজ পড়ার আপেক্ষায় আছি।