ভাংতি টাকা প্রসংগ

বাজারে ভাংতি টাকার সমস্যা অনেক দিন যাবত। যতদূর মনে পরে, কমপক্ষে বছর দশেক হবে। এখন সমস্যাটি হয়েছে প্রকট। গতকাল এই ভাংতি টাকার অভাবে আমার ছোট ছেলেটি যেমন, তেমনি আমিও মনে খুব কষ্ট পেয়েছি। গতকাল ছিল মহান একুশে। ছেলেটিকে নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে, গেলাম বই মেলায়। এর আগেও দু’দিন গিয়েছি। বই যা কেনার ইতিমধ্যেই কিনে ফেলেছি। ছোট ছেলেটির চোখ এবার ছিল খেলনার দোকানগুলোতে। তার আবদার মত খেলনা কিনে দিয়েছি। তারপরেও মনে হয়েছে ও বিশেষ একটা কিছু খুঁজছে। প্রশ্ন করলাম, “বাবা তুমি কি বিশেষ কিছু খুঁজছ?” বলল, “বাবা ছোট সাইজের পাজল খুঁজছি।” বিভিন্ন দোকানে খুঁজছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে আরও দু’একটা খেলনা তার পছন্দ মত কিনে দিলাম। বলা বাহুল্য, সব জায়গাতেই ভাংতি টাকায় দাম পরিশোধ করতে হয়েছে। হঠাৎ করে এক জায়গায় সে তার কাঙ্ক্ষিত ছোট সাইজের পাজল পেয়ে গেল। দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম “দাম কত?”। দশ টাকা, দোকানি উত্তর দিল। সুলভ মূল্য। বললাম দাও একটা। তিনটি পাজ্‌লের মধ্যে থেকে আমার ছেলে একটি পছন্দ করল। দাম দিতে গিয়ে এবার বেকায়দায় পরলাম। পকেটে কোন ভাংতিই নেই। দোকানির দিকে ১০০ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ” ভাংতি দিতে পারবেন?”, “না, আমার কাছে ভাংতি নেই”, দোকানির উত্তর। সাথে আমার বন্ধু ছিল। সে তার মানিব্যাগ খুঁজে দেখল সবই বড় নোট। দোকানিকে বললাম, “ভাঙিয়ে দিতে পারবেন না?” “না, আমার কাছে ভাংতি নাই, আমার পাশের দোকানেও নাই”, দোকানির সাফ সাফ উত্তর। নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো। আমার ছেলে পছন্দ করা পাজ্‌লটি হাতে ধরে রেখেছিল। সেটা ফিরিয়ে দিতে হল। মনে খুব আঘাত পেলাম।

এ সমস্যায় প্রায় প্রতিদিনই পরছি। আর প্রতিদিনই আমাদের মধ্যে হচ্ছে ব্যক্তি সংঘাত। অথচ দোকানি বা আমরা কেউই দায়ী নই।

যারা দায়ী, অথবা যারা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে, তারা এই ব্লগ পড়ে বলে মনে হয়না। আর পড়লেও এই পোষ্ট তাদের মধ্যে কোন ভাবান্তর আনবে বলে মনে হয়না। তবুও পোষ্টটি লিখলাম। আপনাদেরকে বলে অন্ততপক্ষে মনটা হালকা হবে।

৮৪৫ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “ভাংতি টাকা প্রসংগ”

  1. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    আমার মনে হয়, মানুষের মধ্যে অর্থের লোভ যেমন কাজ করে, আমাদের মধ্যে তেমনি ভাঙতি টাকারও একটা লোভ ঢুকে গেছে। ভাঙতি থাকলেও সেটা আমরা নিজের কাছেই রাখতে চাই। খরচ করতে চাই না। বরং আরও জমানোর চেষ্টা করি। এই অভ্যাস থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    😀

    ভাইয়া, আমরা কিন্তু আবার সঞ্চয় করা উৎসাহিত করি। এই আপনার ছেলেই যদি, ছোট একটা মাটির ব্যাংকে টাকা-পয়সা জমানো শুরু করে এবং একদিন এভাবে অনেক টাকা জমিয়েও ফেলে, এই আপনি কিন্তু ভীষন খুশি হবেন। আজকের এই দুঃখ এবং সেদিনের খুশি তখন কাটাকাটি হয়ে যাবে।

    খুচরা পয়সা, বিশেষ করে দুটাকার নোটের এবং ১ টাকার কয়েন আসলেই সমস্যা, বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে একটা-দুটো করে মাটির ব্যাংকে ঢুকে যাচ্ছে গুটি গুটি পায়ে। জাতি হিসেবে আমরা কিন্তু সাশ্রয়ী ভীষন।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      মাটির ব্যাংকর কোন দোষ নাই। এটা শাসক চক্রের মিথ্যে অজুহাত। আমার ছোটবেলায় দেখেছি, আমরা সবাইই মাটির ব্যাংক পয়সা জামাতাম, কিন্তু ভাংতি টাকার কোন সমস্যা হয় নাই। সমস্যা হচ্ছে এখন। যতগুলো ভাংতি টাকা ছাপানো প্রয়োজন ততগুলো ছাপানো হয়না। এইতো সেদিন ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হলো। অথচ তখন ১০০০ টাকার নোট না ছাপিয়ে ওই অনুপাতে ভাংতি টাকা ছাপালেই মানুষের দূর্ভোগ অনেক কম হতো। আসলে আমাদের শাসক চক্রের উদ্দেশ্যই থাকে কিভাবে মানুষের দূর্ভোগ সৃষ্টি করা যায়।

      জবাব দিন
  3. নঈম (৮৭-৯৩)

    অর্থনীতিতে অতটা গভীর জ্ঞান নাই, তবু কেন জানি মনে হয় দেশের মুদ্রা ব্যাবস্থায় ভাংতি বেশী ও বড় নোট কম হলে মূল্যস্তর কিছুটা নেমে আসতো! মাহমুদ তুমি কোথায়?

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।