যোগ-বিয়োগ

“তারপর, আবার কবে আসবেন?” মিথিলা হাস্যোজ্জল মুখে মাসুদকে জিজ্ঞেস করে।

মিথিলা মাসুদের খালাতো বোন। অন্যরকম চেহারার এ মেয়েটিকে দেখলে মাসুদ নিজের অজান্তেই শিহরণ অনুভব করে। কতবার সে চেষ্টা করেছে তার মনের কথা মিথিলাকে বলবে…কতবার সে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে…কিন্তু প্রতিবারই মিথিলার অতি সরম ব্যবহারে তাকে ফিরে যেতে হয়েছে। বা এমনওতো হতে পারে, পুরোটাই মিথিলার অভিনয়!

–      মন তো চায় প্রতি সপ্তাহেই তোমাদের বাসায় আসি, কিন্তু তা তো আর সম্ভব না।

–      প্রতি সপ্তাহে কেন আসবেন? আপনার তো এখানে প্রতি সপ্তাহে কাজ নেই!

মাসুদ মনে মনে চাপা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই মেয়েটা কি আসলেই কিছু বুঝে না?!

–      তাও ঠিক, আমার তো প্রতি সপ্তাহে এখানে আসার কোন দরকার নেই।

–      হুম…যাক, আমি যাই ভাইয়া…ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে।

বলে মিথিলা ঘরে চলে যাচ্ছিলো, মাসুদ তাকে ডাক দিলো।

–      মিথিলা, আসলে তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।

–      কি কথা ভাইয়া?

এমন সময় ঘরের বাইরে থেকে মাসুদের মা’র ডাক শোনা গেল…তাদের ট্রেনের সময় হয়ে গেছে।

মিথিলা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, “পরে কথাগুলো শোনা যাবে…আপনি তাড়াতাড়ি যান, নাহলে ট্রেন মিস করবেন। ”

মাসুদ আশাহত মনে বাইরে বেরিয়ে এল। মেয়েরা কেন এত নিষ্ঠুর হয়????

 

………………………………………………………

 

অধরাদের এইচএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা আর মাত্র কয়েকদিন পর। প্রতিদিনের মত সে তার সব বান্ধবীদের সাথে তাদের কলেজের গণিত শিক্ষক শাহেদ স্যারের কাছে প্রাইভেট পরতে এসেছে। অধরার চোখে-মুখে তখন উত্তেজনার চিহ্ন, গালে হালকা লালচে আভা। ঠিক করে রেখেছে, সে আজ একটা দুঃসাহসিক কিন্তু খারাপ কাজ করবে…তার নিজের তাগিদেই।

প্রতিদিনের মত শাহেদ স্যার আজও সব ছাত্রীদের কাছ থেকে হোমওয়ার্কের খাতা যোগাড় করছিলেন আর দেখছিলেন। অধরার খাতা দেখে তার ভ্রু সামান্য কুঁচকালো। সোজা তিনি তাকালেন অধরার দিকে। দেখলেন, লালচে চেহারার মেয়ে অধরার ঠোঁট-চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে। প্রাইভেট ছুটির পর তিনি অধরাকে থাকতে বললেন। মাথা নিচু করে বসে রইলো মেয়েটা।

–      তুমি যা করেছো, তা কি তুমি জেনে বুঝে করেছো?

–      আমি জানি না স্যার……কিন্তু স্যার, আমার মন থেকে যা এসেছে, আমি তাই করেছি। সত্যি স্যার, চিঠিতে যা লেখা আছে, তার একবর্ণও মিথ্যা না…বিশ্বাস করুন স্যার, আমি আসলেই……

বাঘের মত গর্জে উঠলেন শাহেদ স্যার, “চুপ কর বেয়াদব মেয়ে! কত বড় সাহস তোমার, ছাত্রী-শিক্ষকের পবিত্র একটা সম্পর্ককে তুমি নোংরা দিকে নিয়ে যাচ্ছো!!!” বলে থামলেম স্যার, দম নেওয়ার জন্য, “অধরা, তুমি কাল থেকে আর প্রাইভেটে আসবে না। আমার চোখের সামনে থেকে তুমি এখন যাও!” অধরা চুপচাপ বেরিয়ে এলো বাইরে।

তখন বিকাল বেলা। শেষ বিকালের ঘরে ফেরা পাখিরা দেখলো, একজন অপরূপ তরুণী অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে ফিরে চলছে তার বাড়ির দিকে!

 

…………………………………………………..

 

ঘরটি বেশ বড়সড়। রাতের প্রথম প্রহরের হালকা বাতাস ঘরের ভেতর জুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ঘরের মাঝখানে রাখা বিশাল বড় একটি খাট।

পাশাপাশি শুয়ে আছে দু’জন নারী-পুরুষ…একজন তার হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে আরেকজনের হাত, অনুভব করছে দু’জন দু’জনার উষ্ণ নিঃশ্বাস। দু’জনের চোখ বন্ধ থাকলেও তারা কেউ-ই ঘুমায়নি…দু’জনই ভাবছে দু’টো ভিন্ন ঘটনা।

একজন হচ্ছে মাসুদ চৌধুরী, আরেকজন তার সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী অধরা চৌধুরী!

ভাগ্যিস, মানুষ একজন আরেকজনের মনের কথা বুঝতে পারেনা!!!

 

৯০০ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “যোগ-বিয়োগ”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।