“জানস, আমার বড় ভাই একটা রেজার কিনছে, ওইটা দিয়া যতই শেভ করে ততোই ধার বাড়ে!! ” সে বলছে আর আমরা শুনছি।
সে কে? ধরি তার নাম বাহাত্তর। হ্যাঁ, একটা সংখ্যা, ৭২। ৭২ এর নিরানববই শতাংশই ভালো, খালি একটু বানায় আর বাড়ায় বলে সব কিছু, তবে মানুষ কে বিশ্বাস করানোর এক অলৌকিক ক্ষমতা আছে তার।
৭২ এর আরও অনেক গুণ আছে। সে ভালো ক্রিকেটার, ভলিউম বাড়ানো থাকলে ভালো গান গায়, পরীক্ষার খাতায় খুব সুন্দর হাতের লেখায় বকওয়াজ লিখে হাইয়েষ্ট ও পায়। তবে তার সব চাইতে বড় গুন হলো চাপা মারা, আর ক্রিকেটীয় পারদর্শীতার সাথে অফে, লেগে কিংবা স্ট্রেটে(??) পারমাণবিক বোমা(সোজা বাংলায় “পাদ “) মারা। তার এই অলৌকিক ক্ষমতায় আমরা হতবিহ্বল।
এবার তার চাপাবাজির কিছু নমুনা দিচ্ছি, তার কাছে শোনামতে তার একজন অত্যন্ত নিকটাত্মীয় আছেন সৌদিআরব এ, যিনি একটি মার্সিডিজ এর মালিক এবং প্রতিদিন অফিস টাইমে মার্সিডিজ নিয়ে ভিক্ষা করতে যান। ভিক্ষাবৃত্তি করে তিনি নাকি দেশে টাকাও পাঠান। দেশের উন্নয়ন আজ সুনিশ্চিত!
৭২ যে শুধু অপ্রয়োজনে চাপাবাজি করত তাই না, প্রয়োজনেও করত।
ক্লাস সেভেনে ক্রিকেট কম্পিটিশন এর আগে সবাই যখন বাড়িয়ে বাড়িয়ে বললো সে তার এলাকার শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়, তখন ৭২ এসে বললো যে সে টাঙ্গাইলের জাতীয় দলের খেলোয়াড়! শুধু আমরা কেন, বড় ভাইরাও তাকে খেলার জন্যে ভিড়মি খেয়ে রাস্তা করে দিলেন।
আমাদের ইতিহাস শিক্ষক ছিলেন সাইফুল ইসলাম বাও। পড়া ধরে উনি বইয়ের সাথে বাওয়ে বাওয়ে মেলাতেন, এবং তার মারের ভয়ে সকলেই মুখস্থ বুলির বদলে অন্যকিছু বের করে দিয়ে আসত। তবে আমাদের ৭২ ছাড়ার পাত্র নয়! সে প্রথম দু লাইন ঠিকঠাক বলে তারপর কিভাবে কিভাবে তার দাদার পুকুরে আকবর আর হুমায়ুন রা মাছ ধরতে আসতো বলে গেলো! শিক্ষক তার ইতিহাস শুনে বিমোহিত হয়ে বললেন, “বাবা ৭২, সারাজীবন আমি ছাত্রদের ইতিহাস শিক্ষা দিলাম।আর আজ শেষ বয়সে এসে তোমার কাছে শিক্ষা নিলাম, কোন কিছু না জেনেও কিভাবে ইতিহাস গড়া যায়! তোমাকে আমি মার দিব না, স্যালুট দিব! ”
এবার আসি পাদ নিয়ে। আমাদের অংক শিক্ষক ছিলেন গোলাম সারোয়ার স্যার। স্যারের ক্লাসে একদিন পারমানবিক পাদ (অনিচ্ছাকৃত) নিক্ষেপ করলো ৭২। তারপর সে এমন ভাবেই চাপাবাজি করল যে স্যার বিশ্বাস করতে বাধ্য হলেন যে বোমা খানা উনিই মেরেছেন। সে গেল প্রথমবার, এর পর স্যার যখনই ক্লাসে আসেন, যেদিকেই যান, ৭২ শুধু লেগ আর অফ বুঝে নিয়ে বোমা মারে। বেচারা শিক্ষক লজ্জায় পড়ে গিয়ে পরবর্তীতে আমাদের ক্লাস নেয়াই বন্ধ করে দিলেন।
আরেকবার হঠাৎ রাতে পড়ালেখার সময় খবর এলো, ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশে নামবার সাথে সাথেই আততায়ীর গুলিতে টেন্ডুলকার আর শেহওয়াগ নিহত। ভারত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ক্যাডেট ও টিচার সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুদ্ধে নেমে যাবে। এই উপলক্ষে আগামীকাল কাল থেকে ক্যাডেট কলেজ ছুটি!
ইলেক্ট্রিসিটির অভাবে অন্ধকার রাতে গুজব ছড়ালো গুলির মতো। পড়ালেখার টাইমে ছাত্র থেকে শিক্ষকগনই বেশী উদ্বিগ্ন, কি হবে কি হবে। বউ পোলাপানদের কি করবেন। অবশেষে, ঘোষণা আসল যে এটা কোন এক কীর্তিমান ক্যাডেটের গুজব ছাড়া আর কিছুই না।
আমার ব্যাপক সন্দেহ কীর্তিমান ক্যাডেটটি আমাদের ৭২!
:)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) =)) :khekz: :))
চমৎকার।মজা পাইছি।ভাল থাকবেন। :clap:
জ্বী আপু... ইনশাল্লাহ ভাল থাকবো :))
সেইরম হইসে