দ্যা শো মাস্ট গো অনঃ ২৬ মে ২০২৫
গত দুদিন থেকে আমাদের নব্য টিন এজার কন্যা আরিশার জ্বর। আমি তখন সেই মুহূর্তে ঢাকাতেই ছিলাম। রবিবারে আমার ছুটি ছিল, আর শনিবার ছুটি নিয়েছিলাম। ঈদের সময়ে কিছুটা লম্বা ছুটি হবে বলে পরপর তিন শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকছে। রবিবার সকালে আরিশা তেমন ভাল বোধ না করাতে ভোর সকালে রেডি হয়েও স্কুলে যাবে কি যাবে না তা নিয়ে দোটানায় ছিল; পরে সে স্কুলে যাবে বলেই ঠিক করল।
আরিশার মা-ই তাকে স্কুলে আনা-নেয়া করে। বাসায় থাকলে আমি স্কুল থেকে আরিশাকে আনতে যাই। আর স্কুলের পরে বাপ-বেটি মিলে টো-টো করে যত্র-তত্র ঘুরে বেড়াই। রবিবারে স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছি। আরিশার দেখা পাওয়ার পরে তাকে বললাম, “চল মা, বাইরে খাই।” সে বলে, “না পাপা, বাসায় যাব।” বুঝে গেলাম, তার শরীর বেশ খারাপ করেছে। জড়িয়ে ধরতেই দেখি গা বেশ গরম। গাড়িতে বসে বললাম, “মা, আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়।” সে যেন শোয়ার সাথে সাথেই যেন নেতিয়ে গেল। বাসায় এসেই নাপা খেয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১০২ ডিগ্রী জ্বর উঠে গেল, আরও কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা ১০৪-এ গিয়ে ঠেকল। চিন্তায় পড়ে গেলাম। পরিকল্পনা থাকার পরেও বিকালেও মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে বের হতে পারলাম না। মনটা বেশ খারাপ হলো, কারন পরদিন সকালেই আমাকে ফেনিতে চলে আসতে হচ্ছে।
সারারাত জ্বর গেল। নাপা খায় (জ্বরের সময় ট্যাবলেট খেতে পারে না, পরিমান হিসেব করে সিরাপ দিতে হয়), সাপোজিটরি নেয়, তবুও জ্বরটা যেন নেমেও নামে না। সারারাত এভাবেই গেল। ভোরের দিকেও বেশ জ্বর। একটু পরেই আমার বাস। বন্ধের আগের দিন ছুটি কাটিয়ে বন্ধের পরের দিন তো আর ছুটি চাওয়া যায় না। মন খারাপ করেই আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ পরপর বাসায় খোঁজ নেই। মেয়ের জ্বর বেড়েই চলেছে। আবার যথারীতি ১০৪। ডাঃ চাচুর (আমার বাবার ছোট ভাই) সাথে বাসে বসেই যোগাযোগ চালাচ্ছি, মনিও চাচুকে ফোন করে পরামর্শ নিয়ে চলেছে। চাচু আমাকে সাহস দেবার জন্যই যেন আমাকে ম্যাসেজ পাঠালেন, “চিন্তা করিস না, সেরে যাবে।”
এদিকে একটা ব্যাচের ছেলেমেয়েদের এসাইনমেন্ট দেয়া ছিল, সেটাই আবার তাদের সংক্ষেপে প্রেজেন্ট করতে হবে। আমার না থাকলেই নয়। সর্বশেষ একবার মেয়ের জ্বরের খোঁজ নিয়ে ক্লাসে ঢুকে গেলাম। সব কিছুই হলো। এমনকি ছেলেমেয়েদের এসাইনমেন্ট প্রেজেন্টেশনের পরে একসাথে ক্লাসের মধ্যেই গ্রুপ ছবিও তোলা হলো। ছবি তোলার জন্য আবার ক্লাসের বাইরে থেকে অন্য ব্যাচের একজনকে ধরে আনাও হলো। হাসিমুখেই সবকিছু করে গেলাম।
বিকালে ডিপার্টমেন্টের জরুরী মিটিঙেও থাকলাম। মিটিঙের মাঝেই চাচুর ফোন। সবার কাছে এক্সকিউজ চেয়ে নিয়ে বাইরে এসে ডাঃ চাচুর ফোন রিসিভ করলাম। উনি আরিশার কিছু টেস্ট সাজেস্ট করলেন। মিটিঙের পরে ঢাকায় একটা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সাথে ফোনে কথা বলে বাসায় টেকনিশিয়ান পাঠাতে বললাম। ফোনে মনিকেও সব জানালাম। সব কিছুই করতে হলো। সন্ধ্যার পরে অফিস থেকে কাজ গুছিয়ে বেরুতে বেরুতে রাত ৮টা। প্রথমে গেলাম লন্ড্রিতে, কিছু কাপড় ডেলিভারি নিলাম, কিছু আবার দিলাম। নামল ঝুম বৃষ্টি। দৌড়ে একটা রিক্সাইয় চেপে সোজা বাঙলোতে ফিরলাম।
এরপরে বাসায় এবং চাচুর সাথে কয়েকবার ফোনে কথা হলো। এই মধ্যরাতে মনি (আমার স্ত্রী)-র সাথে আবার কথা হলো। বাসায় বাবা অসুস্থ। নোশিন (আমার ছোট বোন) সারাদিন অফিসে ছিল, সন্ধ্যায় সে কিছুটা সময় দিতে পেরেছে আরিশা আর মনিকে। দিনের বেলায় বাসায় ছুটা বুয়া আসার পরে দোতালায় তার জিম্মায় বাবাকে রেখে আম্মাও তিনতলায় এসে কিছুক্ষণ আরিশা আর মনির সাথে ছিল। রাতে আরিশা ঘুমিয়ে পরার পরে মনির সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম। মায়ের মন তো, সে আবার কিছুক্ষণ পর পর জানতে চাচ্ছে, অনলাইনে রিপোর্ট আমার ইমেইলে এসেছে কিনা। আজ রাতে মনে হয় আর রিপোর্ট আসছে না।
যাহোক, সবশেষে মধ্যরাতে ক্লান্তি দূর করতে আরেকবার শাওয়ার নিলাম। তারপর এই লেখাটা। এখন মঙ্গলবারের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ৩৫মিঃ।