শিক্ষকের ডায়রিঃ পর্ব-১০

আমি আগে বলতাম, “The world is full of emotional fools, and teachers are on the frontline.” তবে গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে শুধু শিক্ষকেরাই নয়, তাদের প্রিয় মুখগুলোও ওই ফ্রন্টলাইনের কম্পিটিশনে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন আয়োজনের এই দিনগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে অনেক দিন পরে দেখা হলো এমন কিছু প্রিয় মুখের যেসব কাণ্ডকীর্তি দেখলাম, তার সামান্য কিছু নমুনা এখানে দিলাম। এই লেখাটা সোশাল মিডিয়াতেও দিয়েছি, তবে কাউকে ট্যাগ করিনি, কারন এই ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আজ সমাজে এবং তাদের নিজ নিজ পরিসরে বেশ পরিচিত অবস্থানে চলে গেছে।

১। একজনের আবদার, “স্যার, আমার মাথায় একটু হাত বুলায় দিবেন?”

২। একজন দুদিন পরপর ফেসবুকে ট্যাগ করে ইমোশোনাল পোস্ট দিয়েই চলেছে।

৩। একজনকে আবার অনেক্ষণ অবস্থান করার পরে প্রায় ঠেলেই আমার অফিস রুম থেকে বিদায় করতে হয়েছে। (একটু বাইরে যায়, ঘুরেফিরে আবার আসে; বেচারার জন্য খুব মায়া লাগছিল।)

৪। দুয়েকজন মনে হয় ইচ্ছা করেই কাজ শেষ না করে বাসায় চলে যাচ্ছে, যাতে করে কাজের উছিলায় আবার ক্যাম্পাসে/ডিপার্টমেন্টে আসা হয়। (এটা আমার কাছে খুব মজা লেগেছে।)

৫। সকাল সকাল ক্যান্টিন থেকে বেশ কিছু সিংগারা-সামুচা আনিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখি, কারন সারাদিন ধরে প্রিয় মুখগুলো আসতেই থাকে; আর বাপের বাড়িতে এসে তারা কিছু না খেয়ে যাবে, তা কি হয়! আবার এই আইটেম দুটোই সবার আগে ক্যান্টিন থেকে উধাও হয়ে যায়। তবে, পুরোনো প্রিয় মুখগুলোর দুয়েকজন কান্ড দেখে আমি পুরাই অবাক; তারা নিজেরাই একগাদা খাবারদাবার সহ এসে হাজির। সবাই মিলে সারাদিন ধরে খেয়ে এবং বিলিয়েও শেষ করা যাচ্ছে না, এমন একটা অবস্থা।

৬। দুচারজন আবার কাজ বাদ দিয়ে এমন আড্ডায় জমে যায় যে, ভুলেই যায় সে কি উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে এসেছে। তাদেরকে ঠেলে ঠুলে কনভোকেশনের ফর্মালিটিজ শেষ করার জন্য পাঠাতে হয়।

৭। দুজনের কাণ্ড ছিল পুরোপুরি ইউনিক; ডিপার্টমেন্টের দরজায় এসেই ভেউ ভেউ করে কান্না শুরু করে দিল; মনে হচ্ছিল যেন বাপের বাড়ি থেকে এখনই বিদায় নেবার সময় হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ ধরে ফোঁপানো শেষ করে, দুচার পিস টিস্যু ভিজিয়ে, তারপরে সবগুলো দাঁত বের করে তাদের সে কি শান্তির হাসি। (স্বর্গীয় দৃশ্য; মুহূর্তগুলো ভিডিও রেকর্ড করতে পারলে ভাল হতো।)

১১০ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।