[এই লেখাটার জন্ম বেশ কিছুদিন আগেই। ব্লগের পেইজের কোন একটা সমস্যার কারনে লগ ইন করতে সমস্যা হচ্ছিল। আজ হঠাৎ ব্লগটা ওপেন করতে পারার সাথে সাথেই লেখাটা এখানে দিয়ে দিলাম।]
১৫ জানুয়ারি ২০২৩, সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিঃ
ভার্সিটি থেকে কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরে মোবাইল হাতে নিয়েই সোশাল মিডিয়ার একটা নোটিফিকেশন পেলাম। ওপেন করতেই দেখি কোন এক পাবলিক পেইজে “Best Teacher You’ll Never Forget” এমন এক পোস্টের কমেন্ট বক্সে আমার এক পুরোনো ছাত্রী আমার নাম ট্যাগ করেছে। শিক্ষকতায় আমার মতন প্রায় কুড়ি বছর পার করা একজন শিক্ষকের জীবনে প্রাক্তন কোন ছাত্রের কাছে এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসা পাওয়াটা এক অমূল্য অর্জন। হয়ত এতটা আমি ডিজার্ভ করি না, কিংবা হয়ত এটা তার নেহায়েতই এক সাময়িক ইমোশনাল এক্সপ্রেশন, আবার এমনও হতে পারে যে, সে আমার মতন এক মধ্যবয়স্ক মানুষকে কিছুটা আনন্দ দেবার বা মন ভাল করানোর চেষ্টা করেছে। উদ্দেশ্যে যাই হোক, আমার ভাল লেগেছে; আমি আমার ক্লাসের সেই পুরোনো ছাত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ব্যাক্তি পর্যায়ে আমি আমার প্রিয় শিক্ষকদের লিস্ট বানাই না, কখনোই বানাইনি। শিক্ষাগুরুর ভূমিকায় মা-বাবা থেকে শুরু করে ক্যাডেট কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই আমার কখনোই ভুলতে না পারার তালিকার প্রিয় শিক্ষক। তবে প্রাতিষ্ঠানিক “বেস্ট টিচার” হিসেবে মনের অজান্তেই একজন মানুষ আমার চিন্তাকে সবসময়ই দখল করে রয়েছেন। তিনি হলেন আমার ক্যাডেট কলেজ জীবনের বাংলার অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন স্যার। স্যারকে একক ভাবে কেবলমাত্র আমিই আমার বেস্ট টিচার হিসেবে দাবী করতে পারি না, কখনোই পারিনি, কেননা তাঁর পুরোনো ছাত্রদের মাঝে তিনি কতটা ভালবাসার পাত্র সেটা ক্যাডেট কলেজ কমিউনিটির যে কোন শিক্ষক-ছাত্রের মিলনমেলাতেই বোঝা যায়। আমি আমার কন্যাকে দেখাই আর বলি, “ওই যে দেখ মা, যে স্যারকে সবাই ঘিরে আছে, উনিই তোর পাপার বেস্ট টিচার।” স্যারের সাথে মাঝে মাঝে, কখনো বা কিছু দিনের বিরতিতে ফোনে কথা হয়, এবং সেটাও বেশ দীর্ঘ সময় জুড়েই হয়; খুব শান্তি পাই মনে। আমার স্ত্রী যদি টেবিলে ভাত বাড়তে থাকে আর টের পায় যে আমি ডঃ জয়নুদ্দীন স্যারকে ফোন করতে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “আগে খেয়ে নাও। এক দেড় ঘন্টার আগে তো তোমার কথা শেষ হবে না।”
এ এক অদ্ভুত ভাল লাগা। এরই নাম বোধ হয় নিঃস্বার্থ ভালবাসা। নেই রক্তের সম্পর্ক, নেই কোন স্বার্থের টান, বয়সের কত ফারাক, তবুও এত অদ্ভুত ভালবাসা। আমার সকল শিক্ষাগুরুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা এবং আন্তরিক শ্রদ্ধা। ছাত্রদের মাঝে শিক্ষকেরা বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।