২৪ জুলাই ২০২২
আমার বর্তমান কর্মজীবনের নানান অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রায়ই লেখা হয় “শিক্ষকের ডায়রি” সিরিজটাতে। আমার আজকের এই লেখাটা আমার পূর্বের কর্মজীবন এবং কর্মস্থল বিষয়ক কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে।
আমার কর্মজীবনের শুরুটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই। আড়াই বছর নিজের ডিপার্টমেন্টেই বিভাগীয় প্রধানের অফিসিয়ালি এ্যাপয়েন্টেড খণ্ডকালীন সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। দারুন অভিজ্ঞতা। শিক্ষকদের বকা খেতে খেতে কাজ শেখা। আমার এযাবৎ কর্মজীবনের সবচেয়ে ভাল সময় ছিল সেটা। চাকরি বাঁচানোর টেনশন নেই, সিদ্ধান্ত নেবার বা দেবার টেনশন নেই, রেগুলার ফরম্যাট অনুযায়ি কাজ করে যেতাম। যেহেতু ডিপার্ট্মেন্টেরই ছাত্র আমি, কাজেই নেই কোন ড্রেসকোডের বালাই। মানানসই ভদ্র পোষাক হলেই হলো, এমনকি জিন্স-টিশার্ট হলেও। আর ক্যাডেট কলেজে পড়েছি বলে দীর্ঘ ছয় বছরের কৈশোরে আয়ত্বে চলেই এসেছিল কিভাবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে পোষাক নির্ধারণ করে চলতে হয়। তবে আইটি বেইজড ডাটাবেইজ বুঝতাম বলে ডিপার্টমেন্টের অনেক কিছুই আমি গুছিয়ে এনেছিলাম, যেটার বদৌলতে পড়াশুনার পাট চুকানোর পরে ডিপার্টমেন্ট থেকে আমার জন্য ইস্যুকৃত টেস্টিমনিয়ালটা এক্সেপশনাল কেইস হিসেবে অনেকটা ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেটের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট শেষ হতে না হতেই হাতে তিন তিনটা কর্পোরেট জবের অফার, একটা বেশ উঁচু মানের কোন এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের ব্যানারে, একটা বেশ নামী বেস্টঅয়্যার কোম্পানিতে, আরেকটা দেশের প্রথম সারির আমদানি-রপ্তানি ভিত্তিক কর্পোরেটে। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে তিন নম্বরটাতে জয়েন করলাম, সেটার অফারও এসেছিল সবার শেষে, আমার মাস্টার্সের একেবারে শেষের দিকে। আকর্ষণীয় অফিস ভবন, অনেকগুলো ফ্লোর মিলে সেই কর্পোরেট দপ্তর, বাসা থেকে লাঞ্চ নেবার ঝামেলা নেই। জয়েন করলাম কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ স্ট্যাটাসের একটা পোস্টে, আমার জন্য বরাদ্দ হলো বয়স এবং অভিজ্ঞতার চেয়েও বেশ বড় সাইজের এল-শেইপড অফিস ডেস্ক, কিছুদিনের মধ্যেই চলে এলো একেবারে আনকোরা ডেস্কটপ পিসি, সেইসাথে টেলিফোন সংযোগ। জয়েন করার তিন দিনের মধ্যেই পেয়ে গেলাম টিএনটি ইনকামিং-আউটগোইং প্যাকেজের সংযোগ সহ একটা পোস্টপেইড মোবাইল ফোন, তাও আবার প্রতি মাসে একটা ভাল অঙ্কের বিলের অফিসিয়াল সাপোর্ট সহকারে। যদিও সেই বাটন-প্রেসিং মোবাইল-ফোনসেটটা কিছুটা পুরোনোই ছিল, এতৎসত্বেও ২০০২ সালে আমার সেই ছাত্রজীবনের গন্ধ না যাওয়া মানসে সেটা ছিল বিরাট এক ঈর্ষণীয় প্রাপ্তি। এমন চাকরি পেলে সেই সময়ের সেই বয়সের যে কেউ বর্তে যাবে। স্যালারিটাও ছিল সেই পোস্টের হাইয়েস্ট জয়েনিং রেঞ্জের। আমার মধ্য-বিশের সেই বয়সের জন্য যেটা সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল তা হলো মাল্টিস্টোরিড সেই কর্পোরেটের পুরোটাই ছিল সেন্ট্রালি এয়ার-কন্ডিশন্ড। মাস্টার্সের থিয়রী পরীক্ষার শেষটা ছিল ৩০শে জুন, আর চাকরিতে জয়েন করেছিলাম ঠিক পরের দিন অর্থাৎ জুলাইয়ের ১ তারিখে। পরে অবশ্য আমাকে একদিন অর্ধবেলা ছুটি দেয়া হয়েছিল মাস্টার্সের ভাইভা পরীক্ষা এটেন্ড করার জন্য। আহা! আমি যেন তখন হাওয়ায় ভাসছি; ভাবখানা এমন যেন, আমাকে আর পায় কে!
যাহোক, মাস খানেক পার হবার পর থেকেই কি যেন মিস করা শুরু করলাম। চকচকে জুতো আর গলায় টাই ঝুলিয়ে এক মাসের মধ্যেই যেন শখ মিটে গেল। বুঝতে পারছিলাম, আমি আর আমাতে নেই। অল্প বয়সের তখনকার সেই বুঝতে পারাটা আমার জন্য বর্তমান বিচারে এক বিরাট ব্লেসিং ছিল। মাত্র দ্বিতীয় মাসেই হাতে কুড়ি দিন সময় রেখে ধুম করে রেজিগনেশন লেটার সাবমিট করে দিলাম। পুরো অফিসে যেন কেউ একটা বাজ ফেলে দিল, সবার কানে-মুখে চলতে থাকল, নতুন ছেলেটা হঠাৎ চাকরি ছাড়ল, নিশ্চয়ই ভাল কোথাও অফার পেয়েছে। আমি বসতাম বিশাল ওপেন ফ্লোরের একটা কিউবিক্যাল-এ, আর ম্যানেজার আর সিনিয়র লেভেলের জন্য বরাদ্দ ছিল কাঁচের ডেকোরেটেড কেবিন। সিনিয়রদের বেশ কজন তো আমাকে কেবিনে বসিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চাকরি ছাড়ার কারন জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, “কোথাও অফার পেয়েছো?” আমিও রেগুলার স্মিত হেসে “না” (সত্যটাই) বলতে থাকলাম। আমাদের প্রচলিত স্বভাবে কয়েকদিন বাদেই আমাকে নিয়ে আর কারো কোন কৌতুহল রইলো না। তবে একদিন একজন কিউবিক্যাল-লেভেলের মধ্যম স্ট্যাটাসের সিনিয়র কলিগ বেশ মুখ অন্ধকার করে বলেই ফেললেন, “ভাল করেছো চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে। তোমার অল্প বয়স, খুব দ্রুতই মনের মতন করে কোথাও সেট হতে পারবে। আর আমাদের মতনেরা চাকরিটাকে শুধু সহ্য করে যাচ্ছি।” এমনই ছিল সেই কলিগের এক্সপ্রেশনগুলো। তার চোখেমুখে দেখা সেদিনের সেই অভিব্যাক্তি আমি কখনোই ভুলতে পারব না। সত্যি বলছি, তার চেহারাটা আমার ততটা মনে না থাকলেও তার চেহারার কষ্টটা আমি হয়তো কখনোই ভুলব না।
স্যুটেড-বুটেড জীবন বাদ দিয়ে ১৫ দিন বেকার ছিলাম। দুচারদিন মনের সুখে কাটালেও সপ্তাহ খানেক বাদেই জীবনটা বেশ দূর্বীসহ মনে হওয়া শুরু হলো। পড়াশুনার পাট চুকিয়ে চাকরি না পাওয়া বা দেরিতে পাওয়ার চেয়ে চাকরি পাওয়ার পরেও সেটা ছেড়ে দিয়ে বেকার থাকাটা যে কতটা কষ্টের হতে পারে, তার অভিজ্ঞতা আমার মতন খুব কম মানুষই হয়তো রয়েছে। দিনগুলো ভুলতে পারি না। পরিবারের ভেতরেও যেন সবাই কেমন-কেমন করে বিষয়টাকে নেয়া শুরু করল। ঘনিষ্ট এবং যোগ্যতা সম্পন্ন বন্ধুরাও ততদিনে চাকরিতে ঢুকে গেছে। কাজেই আড্ডা দেবার বা ভেন্টিলেট করার জায়গাটাও যেন আর রইলো না। সে এক আজব অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার হওয়া শুরু হলো। পেপার পত্রিকাগুলোর চাকরির যাবতীয় সার্কুলার প্রায় মুখস্থই করে ফেলেছিলাম।
এমন সময় ধামন্ডির এক মধ্যম সারির তবে বেশ পুরোনো একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সার্কুলার চোখে পড়ল। এ্যাপ্লাই করলাম ইংরেজির শিক্ষক পদে। দুচারদিন বাদে সেই স্কুল থেকে বাসার ল্যান্ডলাইনে ফোন এলো। আমাকে জানানো হলো আমার সিভি দেখে তাদের আইটি টিচারের শুন্যস্থানে তারা আমাকে বিবেচনা করছে, এবং আমি আইটি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতে রাজি থাকলে যেন অমুক দিনে এতটার সময় ইন্টারভিউয়ের জন্য সরাসরি হাজির হই। পকেট ফাঁকা, নিজের কোন সেভিংস নেই, যা চাকরি পাই সেটাই লাভ, গেলাম ইন্টারভিউ দিতে। মোটামুটি লম্বা ইন্টারভিউ হলো। মনে হলো আমাকে তাদের পছন্দই হয়েছে, কারন আমার স্যালারির এক্সপেক্টেশনস নিয়ে প্রশ্নপর্ব এবং ছোটখাটো একটা বার্গেইনিং শুরু হলো। ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন স্কুলের প্রিন্সিপাল, চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টর। কিছুক্ষণের কথাবার্তাতে আমার আগের কর্পোরেট স্যালারিটাই ফিক্সড হলো। বাইরে অপেক্ষা করতে বলা হলো। আর ইন্টারভিউ পর্ব শেষে আমাকে খুব দ্রুত জয়েন করতে বলা হলো। তবে আমি শুধু একটা দিন চেয়ে নিলাম, কারন একদিন পরেই আলিয়াস ফ্রঁসেজে আমার একটা টার্মের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল।
যতদূর মনে পড়ে ২০০২-এর সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক-জীবন শুরু করছিলাম। সেই স্কুলটাতে আমি সাড়ে আট মাস কাজ করেছিলাম। অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছিলাম কাজটাকে, স্কুলের বাচ্চাগুলোকে। পড়ানো যে একটা শিল্প, সেটা উপলব্ধির হাতেখড়ি আমার সেখান থেকেই। পরের বছর, ২০০৩-এর জুন মাসের ১ তারিখে, সামার সেমিস্টারে, আমি আমার বর্তমান কর্মক্ষেত্রে লেকচারার হিসেবে জয়েন করি, এবং জুনের ৭ তারিখ থেকে আমার বর্তমান কর্মক্ষেত্রের আমার ডিপার্টমেন্টের আন্ডারগ্র্যাডের প্রথম ব্যাচের প্রথম ক্লাসটা আমাকে দিয়েই শুরু হয়। সেই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ডিপার্টমেন্টে সিনিয়িরিটির দিক থেকে আমি ছিলাম তৃতীয় ফ্যাকাল্টি এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তখন ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের মধ্যে জুনিয়র মোস্ট।
যাহোক, আবার স্কুলে ফিরে যাই। স্কুলে জয়েন করার পর তখনকার বাচ্চা-বাচ্চা চেহারার আমাকে ম্যাক্সিমাম শিক্ষক তুমি বলেই সম্বোধন করতেন, আর সেটাতে আমিও কম্ফোর্টেবল ফিল করতাম, কারন হাতে গোনা কজন আমরা ছিলাম সমবয়সী, বাকি সবাই ছিলেন তুলনামূলকভাবে বেশ সিনিয়র। কাজ করা আমার নেশা। যোগ্যতা যত কমই থাকুক, দায়িত্ব দেয়া হলে নিজের যোগ্যতা প্রমান করে দেখানোটা মনে হয় আমার মতন এক্স-ক্যাডেটদের মজ্জাগত। পড়াশুনা ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে, আর আইটি ডিপ্লোমা থাকার সুবাদে হয়ে গেলাম কম্পিউটার শিক্ষক। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছিলাম, ও-লেভেলের কোর্স আমাকে দিয়ে পড়ানো ঠিক হবে না, আমি জুনিওর লেভেলের কোর্সগুলো সামলাতে পারব, আর ও-লেভেলের জন্য এক্সপেরিয়েন্সড কোন শিক্ষক কিংবা সিএসই গ্র্যাজুয়েট দরকার, প্রয়োজনে চার্টার্ড শিক্ষকের ব্যাবস্থা থাকতে হবে। চাকরি হারানোর ভয় দূরে ঠেলে সত্যিটাই জানালাম, এতে স্কুল কর্তৃপক্ষও মনে হয় আমাকে যথেষ্ট আস্থায় নিলেন।
একেতো এক্স-ক্যাডেট, তার ওপরে আবার করপোরেট ঘুরে আসা। স্কুলের ক্লাস এবং অন্যান্য কাজ আমার কাছে অনেক রিল্যাক্সিং মনে হতে লাগল। সেই সাথে আবার মাত্র এক শিফটের কাজ। দুপুরের পরে ছুটি এবং আমি সম্পূর্ণ ফ্রি। ল্যাবের গেট আপ এবং সেট আপ-এ মনোযোগ দেয়া শুরু করলাম। কম্পিউটারগুলো মোটামুটি পুরোনো কনফিগারেশনের। আমার কালেকশনে উইন্ডোজ এবং অফিস-প্যাকেজের যতগুলো ভার্সন ছিল আর যত ড্রাইভার সফটওয়্যার ছিল সেগুলো এবং একটা স্টার স্ক্রু-ড্রাইভার সাথে নিয়ে কাজে লেগে গেলাম স্কুল বন্ধের সময়টাতে। হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন অনুযায়ী কম্পিউটারগুলোকে জাতে ওঠানোর চেষ্টা করলাম যেন অন্ততঃ স্কুল খোলার পরে বাচ্চাদের ক্লাসগুলোতে সমস্যা না হয়। মোটামুটি গুছিয়েও নিলাম পুরো বিষয়টা।
চলতে থাকল আমার স্কুল-শিক্ষক-জীবন। দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন সকাল-সকাল একসাথে এত্তগুলো কিউট-কিউট সব বাচ্চা। বাচ্চাদের মজার-মজার সব কান্ড-কারখানা। টিফিন-টাইমে মাঝে মধ্যে তাদের সাথে খেলা। স্কুলের কালচারাল প্রোগ্রাম গুলোতে নিজের ক্যাডেট কলেজ কালচারাল প্রিফেক্টশীপের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো। তার ওপরে আবার সপ্তাহে দুদিন ছুটি, নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো, এর পরেও রয়েছে অন্য জবের চেয়ে তূলনামূলক লম্বা ভ্যাকেশন। কর্পোরেটের মতন কোন ড্রেসকোড মেইন্টেইন করতে হচ্ছে না, এটা ছিল আমার জন্য বিশাল এক স্বাধীনতা। আর ইউনিফর্ম/ড্রেসকোড অনুযায়ী সেই স্কুলে বাচ্চাদেরকে টাই পরতে হতো না। আসেপাশে ছিল আরো বেশ কয়েকটা গ্ল্যামারাস এবং কম্পিটিটিভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, সেখানে এই স্কুলের ইউনিফর্মে টাই নেই, এটা আমার কাছে মার্কেট কম্পিটিশনের বিচারে একটু অবাকই লাগছিল। এই বিষয়টা নিয়ে স্কুলের প্রিন্সপালের সাথে একদিন কথা হচ্ছিল। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ছিলেন দেশ-বিদেশ ঘোরা মাতৃসুলভ একজন সিনিয়র লেডি। তিনি খুব চমৎকার একটি কথাতেই আমাকে বুঝিয়ে বললেন, আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বাচ্চাদের ইউনিফর্মে টাই থাকা উচিৎ নয়। আমি এই একটি কথায় অভিভূত হয়ে গেলাম।
এখন নিজের বাচ্চার স্কুল ইউনিফর্মেও আমি টাই প্রেফার করি না। খুব বেশি ফরমাল বা অফিসিয়াল প্রয়োজন ছাড়া নিজেই এখন আর টাই পরি না। এখন আমার নিজের কাছেই মনে হয়, আমাদের দেশের আবহওয়ায় স্বাস্থ্য এবং স্বস্তির বিচারে প্রাতিষ্ঠানিক ড্রেসকোড নিয়ে হয়তো আমাদের পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।
অভিজ্ঞতার চমৎকার মসৃণ বয়ান। ইন্টারেস্টিং লেখা।