২২শে জুলাই ২০২২
যে কোন সংবেদনশীল (সেন্সিটিভ) বিবেচনাধীন বিষয়ে তথ্যের প্রাতিষ্ঠানিক গোপনীয়তা, গনমাধ্যমের প্রচারনা এবং আমজনতার মুখে মুখে তার রটনা নিয়ে ভাবছিলাম। কিছু সমসাময়িক প্রিন্ট/নিউজ/সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক বিষয়কে আধার করেই চিন্তাগুলো বিক্ষিপ্তভাবে মাথায় ঘুরছিল।
এমন বিষয়ে/বিষয়গুলোতে আমার একান্ত চিন্তা/ভাবনা হলো, যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিবেচনাধীন বিষয় সম্পর্কিত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার্থে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া অত্যাবশ্যক। এমনকি প্রয়োজনের স্বার্থে গনমাধ্যমের প্রকাশ্য প্রশ্নের জবাবে কিংবা পাব্লিক কোয়েশ্চেন-এর বিপরীতে “নো কমেন্টস” বলার রেওয়াজ তো রয়েছেই, যা কিনা অন্ততঃ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ক্ষেত্রবিশেষে তথ্যের গোপনীয়তার স্বার্থে ব্যাবহার করাই যায়। অবশ্য, এটা আমার একান্ত নিজস্ব অভিমত।
আমার দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে নানান সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কমিটির একজন সদস্য হিসেবে এবং সেইসাথে পেশাজীবনে বর্তমানে একজন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমাকেও স্ট্র্যাটেজিক কারনে এমন এক্সপ্রেশন (অবশ্যই নম্র অথচ দৃঢ় ভাবে) সময়/অবস্থান/সিচুয়েশনের বিচারে ছাত্রছাত্রীদের নানান প্রশ্নের জবাবে ব্যাবহার করতে হয়েছে; আসলে তা করতেও হয়। এখন পর্যন্ত আমার কাছে এটাকে কখনোই মিথ্যার আশ্রয় নেয়া বলে মনে হয়নি, বরং মনে হয়েছে দায়িত্বপালনকালে বৃহৎ স্বার্থে এটা একটা সাময়িক পদক্ষেপ, বা স্থানিক বিচারে এক ধরণের স্বস্তিদায়ক অবস্থান।
আবার গনমাধ্যমে এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে সোশাল মিডিয়ায় এমন বিষয়ের প্রচারনা/শেয়ারিং এবং মন্তব্য করার ক্ষেত্রেও মানবিক ও সামাজিক বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেয়া উচিৎ বলেই আমি মনে করি, এবং এটাও আমার একান্ত অভিমত।
একটা সংবেদনশীল বা বিবেচনাধীন তথ্য যে কোন পক্ষ থেকে প্রচারিত/উন্মোচিত হয়ে গেলে সেটা উৎসুক এবং অতি উৎসাহী আমজনতার মুখে মুখে চলার বিষয় হয়ে যায়। প্রিন্ট/অনলাইন/সোশাল মিডিয়া এবং আমজনতা প্রায়শই এমন ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্বেই ক্যাচি (এট্রাক্টিভ/চটকদার) মন্তব্য করা শুরু করে দেয়; পারলে যেন বিচারটাও করে দেয়, রায়ও দিয়ে দেয়, আর শাস্তিটা দিতে পারলে যেন মন্তব্যকারি সুখের স্বর্গেই চলে যেত।
এখানে এটা তো অন্ততঃ বিবেচনায় নেয়া উচিত, এতে করে একটা মানুষের মনের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে ঠেকে; ব্যাক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন কতটা বিঘ্নিত হয়। শুধু তাই-ই নয়, মৃত কোন ব্যাক্তিকে নিয়ে এমনটা ঘটে/রটে থাকলেও কিন্তু তখন সেটার ফল ভোগ করতে হয় কেবলমাত্র সেই মৃত ব্যাক্তির পরিবারের সদস্যদেরকেই। তাদের বাচ্চারা স্কুলে গেলে, সবার দৃষ্টিবান/প্রশ্নবান/বাক্যবান বাচ্চাদেরকে মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করে; আর এটাও সহজেই অনুমেয় যে, একই মানসিক এবং সামাজিক বিপর্যয় সেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বেলাতেও ঘটে। অথচ মূল/প্রকৃত বিষয়/ঘটনা তখনও হয়তো উন্মোচিত বা আলোকিত কোনটাই হয়নি।
আমার তো মনে হয় আমরা আসলে বুঝতেই চাই না এটা কতটা ভয়ঙ্কর। নিজে কোন সমালোচনামূলক/মুখরোচক সমস্যায় পড়লে তখনই যেন কেবল আমরা তার গভীরতা টের পাই, সেটা নিয়ে ভাবি। ব্যাক্তিপর্যায়ে আমরা প্রত্যেকেই তো নিজেদেরকে আধুনিক এবং মানবিক বলেই ভাবি এবং দাবি করি; অথচ চিন্তায়-কর্মে আমরা কতখানি আধুনিক কিংবা মানবিক?
আমরা পরিবর্তন চাই, অথচ পরিবর্তিত হতে চাই না। নিজের মনের, দৃষ্টিভঙ্গির এবং কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন ও পরিমার্জন যে অনেক ক্ষেত্রেই পারিপার্শ্বিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে কতটা স্বস্তি এবং শান্তি বয়ে আনতে পারে, তা যেন আমরা বুঝতেই চাই না।
একমত আহমদ
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য সংরক্ষণ আমানত স্বরূপ। ফাঁস করে দিলে কিংবা কারও অসংযত মন্তব্যে ফাঁস হয়ে গেলে তা হবে আমানতের খেয়ানত। একই কথা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক তথ্যের বেলায়ও প্রযোজ্য।
শেষের দুটো কথা একদম সত্য।