আমার সেদিনের সকালের ঘুম ভেঙ্গেছিল একটা ফোন কলে। আর সেই দূর্বিসহ দূঃসংবাদ। প্রাথমিক শক কাটিয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখানে ওখানে ফোন করছিলাম, এই আশায়, কেউ একজন বলুক যে সংবাদটা সঠিক ছিল না।
আগের রাতেও হিমেলের সাথে ফোনে অনেক্ষণ ধরে কথা হলো। সে কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকায় আসবে বলছিল, তার ইণ্টার্ণ রিপোর্ট জমা দেবার জন্য। হিমেল শুধু আমার ছোট ভাই (কাজিন) ছিল না, আমরা দুজন ছিলাম সুখ দুখের সাথী। দীর্ঘদিন একই বিছানা শেয়ার করে ঘুমিয়েছি। নিজের আপন ছোট ভাইয়ের মতই নির্দ্বিধায় আমার যে কোন জামা কাপড় (যেটা আমার গায়ে লাগত না), সে পরে বেড়াত। অহেতুক অহঙ্কার তার মাঝে দেখিনি, বরং দেখেছি অনুকরণীয় আত্মসম্মানবোধ। কাজিনদের মধ্যে আমার চেয়ে এতটা ক্লোজ তার সাথে মনে হয় কেউই মেশেনি। সেই বয়সের আর দশজনের মত প্রচুর জামা-জুতার শখ তার কখনোই ছিল না; বরং আমাকে সে বলত, প্রয়োজনের আতিরিক্ত কাপড়-চোপড় তার কাছে নাকি ঝামেলার মনে হতো।
সে এমবিএ পড়ার সময় থেকে আমাদের বাসায় থাকা শুরু করে। আমার বাবা তার বড় মামা। আব্বা তাকে নিজের ছোট ছেলে হিসেবেই ট্রিট করতেন। বাসার যেকোন কাজে/অনুষ্ঠানে সে ছিল সবার প্রধান ভরসার পাত্র। এমনকি আমার বন্ধু এবং কলিগ মহলেও সে সবার সাথে সাবলীল ভাবে মিশে যেত।
আমার বাবা ঢাকা থেকে যখন পঞ্চগড়ে বদলি হয়ে যান, আমাকে বলেছিলেন, “ছেলেটাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম, এখন তোমার দায়িত্বে রেখে যাচ্ছি। ওর পড়াশুনাটা যেন সুন্দরমত শেষ হয়, সেটা দেখো।” … রাস্তায় গাড়িতে বসে এই লাইন কটা লিখতে আমার সত্যিই ভীষণ কষ্টে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
আমার বিয়ের সময় দুজন মানুষের কথা মনে করে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। একজন আমার জন্মদাত্রী মা, আরেকজন এই হিমেল।
হিমেল আমাকে বলত, “ভাইয়া তোর বিয়েতে তো কিছু ঘড়ি গিফট হিসেবে আসবেই, সেখান থেকে একটা আমাকে দিস”। আশ্চর্য বিষয়, আমার বিয়ের অনুষ্ঠানের গিফট আইটেমগুলোতে একটাও ঘড়ি ছিল না; থাকলে আমি অনেক কষ্ট পেতাম।