মাত্রই ফিরলাম ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ময়মনসিংহ থেকে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এ ধরণের প্রতিযোগীতা সঞ্চালনের সুযোগ পেলাম। ধন্যবাদ সংশ্লিস্ট সবাইকে, আমাকে এ কাজে যোগ্য ভেবে নেয়ার জন্য। প্রতিযোগীতার সার্বিক আয়োজন এবং অন্যান্য দিক যথারীতি মানসম্পন্নই ছিল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে সেজন্যে ধন্যবাদ।
যদিও আমার আজকের আলোচনার বিষয় এগুলোর কোনোটাই নয় বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে আলোকপাত করাই আমার আজকের উদ্দেশ্য।
আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে খেলাধূলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশ কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি কিংবা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা একটা বড় ব্যাপার। ক্যাডেট কলেজগুলো এদিক দিয়ে মেয়েদের জন্য দারুণ সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। কারো ভেতর যদি খেলার প্রতি আগ্রহ কিংবা ভালোবাসা থাকে তাহলে সেটাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও চর্চার মাধ্যমে শাণিত করার দুর্লভ সুযোগ পাওয়া যায় এখানে।
তারই ফল প্রত্যক্ষ করলাম আমি এই দুবার রেফারী হিসাবে কাজ করতে গিয়ে। বাস্কেটবল এবং টেবিল টেনিসে এমন কিছু দক্ষতা ও নৈপুণ্য দেখার সুযোগ আমার হয়েছে যা আমাকে সত্যি আশ্চর্য করেছে। আমি নিশ্চিত অন্য ইভেন্টগুলোতেও এমন দক্ষ খেলোয়াড় খুব দুর্লভ নয়। এত অল্প বয়সেই মেয়েদের ভেতর এই দারুণ প্রতিভার ঝলক আমাকে মুগ্ধ করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমি উপরোক্ত খেলা দুটির সাথে জড়িত। ক্যাডেটজীবন থেকে খেলছি, পরবর্তীতে বেশ কিছু পেশাদার জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়ের সাথেও পরিচয় হয়েছে। সুতরাং, এটুকু আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে, প্রতিভা চিনতে আমার ভুল হয় না।
এদের মধ্যে এমন বেশ কিছু মেয়ে আছে যারা জাতীয় পর্যায়ে শুধু খেলা নয়, খেলে কৃতিত্বপূর্ণ ফল করার সামর্থ্য রাখে। দরকার শুধু খেলাটাকে চালিয়ে যাওয়ার শক্তি, সাহস আর ইচ্ছা।
আমাদের দেশে খেলাকে একমাত্র ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার সময় হয়ত এখনও আসেনি। তাই আমি সে কথা বলছিও না। আমি কেবলমাত্র এটুকু বলতে চাই যে, ওরা যেন খেলাটা একদম ছেড়ে না দেয়। কলেজ ছেড়ে বের হওয়ার পর শুধুমাত্র অভ্যাস হিসেবে হলেও যেন খেলাটাকে ধরে রাখে নয়তো এতো মূল্যবান প্রতিভার অপচয় ঘটবে কেবলি একঘেঁয়ে ছকে বাঁধা জীবনে, যা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।
খেলাধূলা মানুষকে দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী আর জীবনের প্রতি সহজ দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে শেখায়; জীবনে হারজিত যা-ই হোক হাসিমুখে মেনে নিয়ে সামনে এগোবার অতি মূল্যবান শিক্ষাটা আমি অন্তত খেলতে খেলতেই শিখেছি।
তাই আমি মনে করি খেলাধূলার অভ্যাসটা ধরে রাখাটা জীবনের পরবর্তী পর্যায়গুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর, মেয়েরা প্রকৃতিগতভাবেই একটু বেশি সংবেদনশীল হওয়ার ফলে হতাশা, একাকীত্ব, জীবনের বিবিধ জটিলতা কিংবা মানসিক দ্বন্দ্বজনিত আঘাতগুলো ওদের জন্য সবসময়ই বেশি মারাত্মক। এসব কারণে খেলাধূলার অভ্যাস অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষেধকের ভূমিকা পালন করে। মন এবং শরীরকে অন্য দিকে ধাবিত করতে এর জুড়ি নেই।
তাই আমি অবারো বলব, আমার ক্যাডেটরা কিংবা নবীন এক্স-ক্যাডেটরা;জীবনের গন্ডিবদ্ধ ব্যস্ততায় আটকে তো যাবেই, কিন্তু নিজেদের ভালোবাসার এই ছোট্ট জানালাটা কষ্ট করে হলেও খোলা রেখো। নিজেদের প্রতিভাকে এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে না দিয়ে সেই প্রিয় খেলার মাঠ, হৈ চৈ, ঝাঁপাঝাঁপি আর হারজিতের হাসিকান্নার হাজারো স্মৃতির সম্মানে হলেও মাঝে মাঝে অন্ততঃ মাঠে ফিরে যেও। কখনো মন বিষণ্ন হলে কিংবা একা বোধ হলে, নির্জনে আশ্রয় খুঁজে না নিয়ে যেন ফিরে যেতে পারো সেই প্রিয় কোলাহলে। এই আনন্দ আজো সীমাহীন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
আজ আর নয়। আমার পরমর্শ কিংবা অনুরোধ যাই হোক, এটা নিয়ে যেন একটু বিশদ চিন্তা তোমরা করো। শুভকামনা রইলো সবার জন্য।
মোবাশশির
:thumbup:
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাল লাগলো স্যার, এই খেলাধূলার চর্চাটা যদি কয়েকজনও চালিয়ে যায় তাহলে সেটাই হবে প্রাপ্তি। কেন জানি মনে হয় এখনকার বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরা একটু খেলাধূলা বিমূখ, অথচ শারীরিক, মানসিক বিকাশে এর গুরুত্ব অনেক। অভিভাবকেরা আগ্রহী না সাধারণ খেলাধূলা করাতে, সবার চাহিদা শুধু ক্লাসে প্রথম হওয়া।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:clap: :clap: :clap: 🙂 🙂 ::salute::
আহসান ভাইয়ের মন্তব্যের শেষ লাইন টুকুই বলতে চাই। অভিভাবকেরা আগ্রহী না সাধারণ খেলাধূলা করাতে, সবার চাহিদা শুধু ক্লাসে প্রথম হওয়া।
আর সাথে অ্যাড করতে চাই, এখনকার ছেলে মেয়েরা স্মার্ট ফোন বা কম্পিঊটারে খেলে উরায় দিবে, কিন্তু মাঠে নামবে না। আসলে বাইরের ছেলে মেয়েরা জানেই না , মাঠে খেলার মজা কতটুকু।
জীবনে হারজিত যা-ই হোক হাসিমুখে মেনে নিয়ে সামনে এগোবার অতি মূল্যবান শিক্ষাটা আমি অন্তত খেলতে খেলতেই শিখেছি। - চমৎকার শিক্ষা তুমি আরোহণ করে নিয়েছো খেলার মাঠ থেকে। :boss:
আহসান আকাশ এর কথাটা আজ অনেকাংশে সত্য, অধিকাংশ অভিভাবকের ক্ষেত্রে- অভিভাবকেরা আগ্রহী না সাধারণ খেলাধূলা করাতে, সবার চাহিদা শুধু ক্লাসে প্রথম হওয়া।
আমাদের ছোটবেলায় এই ঢাকার বুকেই পাড়ায় পাড়ায় তিনটে জিনিস থাকতোঃ ব্যায়ামাগার, পাঠাগার আর খেলার মাঠ। বাণিজ্যিক কারণে খেলার মাঠগুলোকে গ্রাস করার মূল্য যে কতটা চরমভাবে দিতে হচ্ছে, সেকথা কেউ ভাবেনা। খেলাধূলা সুস্বাস্থ্য ছাড়াও মনের আনন্দ দেয়, আত্মবিশ্বাস দেয়, নির্মল বিনোদন দেয়।
একটি প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ।