সবার শেষে কোনমতে শার্ট ইন করতে করতে একাডেমি ব্লকের দিকে ছুটছি। সেকেন্ড প্রেপ শুরু হতে কোন সময়ই আর বাকি নেই। আমি অবশ্য একা নই। সাথে আহসান। ডিউটি মাস্টার ব্লকের সামনে দাড়িয়ে না থাকলে সে যাত্রা বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী ছিল। উপরন্তু, বেল পড়ার ইমেডিয়েট পড়ে ডিউটি মাস্টার একটা রাউন্ডে যায় প্রায়ই। কিন্তু ভাগ্য যতোটা খারাপ হওয়া সম্ভব তোতাটাই। ব্লকের ১০০ গজ সামনে থাকতেই বেল দিল এবং ব্লকে ঢুকে সরাসরি ডিউটি মাস্টারের সাথে মোলাকাত। এ আবার যেন তেন ডিউটি মাস্টার নয়, স্বয়ং নুরুল হক। নুরুল হকের মূল প্যাশন হল সেকেন্ড প্রেপে সবার ভেস্ট চেক করা। তাই আগে থেকে জানা থাকলে প্রায় সবাই তার ডিউটির দিন ভেস্ট পড়ে যায়। একে তো লেট, তার উপর নুরুল হক। তবে নুরুল হকের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে; একই সাথে কয়েকটি ফল্ট হতে থাকলে সে গুরুত্ব বিচার করতে পারেনা। কোনটা ধরা দরকার আর কোনটা না ধরলেও চলে এ নিয়ে সে বিশেষ সংশয়ে থাকে। তাই লেট করার ব্যাপারটি না ধরে সে ধরল ভেস্ট। যথারীতি দুজনেই ভেস্ট ছাড়া।
মান্যবর নুরুল হক সাহেবের বাংলিশ কমান্ড; – হাউসে গিয়ে ভেস্ট পড়ে এসো।
আবার হাউসের দিকে ছুটলাম। এটুকুই শান্তি যে, লেটের ব্যাপারটিতে ধরা খাইনি। কিন্তু ভাগ্য তখনও দোদুল্যমান। হাউসে গিয়ে দেখি বেয়ারা তালা লাগিয়ে কোথায় যেন গেছে। হাউসে স্বাভাবিকভাবে ঢোকার কোন উপায় নেই। পৃথিবীর যেকোন ক্যাডেটই মনে হয়ে এ পরিস্থিতিতে ফিরে গিয়ে স্যারকে বলতো,
– স্যার, হাউস তালা মারা। ডিনারের সময় বেয়ারা আসতে পারে। তখন গিয়ে পড়ে আসবো।
কিন্তু আমার সাথে তখন ভয়ংকর ব্যতিক্রমী চরিত্রের অধিকারী আহসান। তার সিদ্ধান্ত আর দশজনের মতো হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। যা ভেবেছিলাম, আহসান বলল,
– সাথে আয়, আমার আরেকটা পথ জানা আছে।
পথটা হল হাউসের পিছন দিয়ে ওপেন এয়ার বাথরুমের গা বেয়ে। সেথানে লোহার একটা পাইপ বেয়ে পোর্চে উঠা যায়। আর আমাদের হাউসের পোর্চ প্রায় সব সময়ই খোলা থাকে। আমিও কি জানি ভেবে আহসানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলাম। তবে এতে ভীতির কারণ যা ছিল তা হল, পিছন দিকে যাবার সময় বেলায়েত ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে। এক হাত ও পায়ে খানিকটার পঙ্গুত্বের পরিচয় বহনকারী বেলায়েত ভাইকে (চৌকিদার) আমরা লুলায়েত বলে ডাকতাম। কারণ ক্যাডেট ফাঁসানোতে তার বিশেষ রেকর্ড ছিল। যাই হোক, হাউসে ঢুকে সুন্দরমতো লাইট জ্বালিয়ে ভেস্ট পড়ছি। নুরুল হক স্যারই তো বলেছেন, ভয়ের কোন কারণ নাই। আমরা কিভাবে ঢুকেছি তা-তো আর কেউ জানেনা। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ভিপি তথা বিশ্বাস স্যার লাইট জ্বলতে দেখে হাউসের সামনে এলেন। আমরা লুকিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ উঁকি মেরে চলে গেলেন। আমরা ভেস্ট পড়ে একই পথ ধরে বেরিয়ে এলাম। হাউস থেকে বেরোতে গিয়ে দেখি রাস্তার মাথায় বিশ্বাস স্যার ঠাঁয় দাড়িয়ে আছেন, আর তার সাথে বিশ্বস্ত অনুচরের মতো দণ্ডায়মান লুলায়েত। বিশ্বাসের রীতিসুলভ কণ্ঠ,
– হাউসে কি করছো।
– স্যার, নুরুল হক স্যার ভেস্ট পড়তে পাঠিয়েছেন।
এমন সময় লুলায়েতের তেলুয়া কণ্ঠের সুমধুর সুর ভেসে এলো,
– স্যার, এরা হাউসের পিছন দিয়া বায়া বায়া উপরে উঠছে।
বিশ্বাসের রুমে ডাক পড়লো। ভাবলাম, আজকে আর জান নিয়ে ফিরতে পারবোনা। কারণ, বিশ্বাস একবার যাকে পায় তাকে ঘন্টাখানেক তো বেত মারবেই, রক্তও বেরিয়ে যেতে পারে। সবাইকে শো করতে আবার তিনি বিশেষ পছন্দ করেন। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় বিশ্বাস মহোদয় তখনও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেননি। লুলায়েত আমাদেরকে ভিপি’র রুমে পৌঁছে দিয়ে তার দায়িত্বের সমাপ্তি টানলো। বিশ্বাস নুরুল হক স্যারকে ডেকে পাঠালেন। কাহিনীর সত্যতা শুনে বললেন,
– আপনি কি হাউসের পিছন দিয়ে রড বেয়ে উঠতে বলেছিলেন?
বাঁচার কোন সম্ভাবনাই ছিলনা। আহসান কিন্তু, প্রোফেশনালভাবে আমাদের অভিযানের নৈতিক দিকটার কথা বিশ্বাসকে বোঝাচ্ছিল, যদিও স্যার তেমন একটা কর্ণপাত করছিলেন না। আহসানের কথা মতে, ভেস্ট পড়ে আসাটা ছিল আমাদের নৈতিক দায়িত্ব(!!??)। সবার উপরে নীতি সত্য,তাহার উপরে নাই। আমাদের হাত পা ভাঙতে পারতো, কিন্তু তাউ বলেতো নীতি হারানো যায়না। বাহ! আনাড়ি আর হাবাগোবা কেউ শুনলে তো গলেই যেতো, হয়তো তার নজরেই আসতো না যে, আমরা প্রথমে ভেস্ট পড়ে যাইনি, স্যারের কথায় গিয়েছি।
সব শোনার পর, আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে ভিপি ব্যাপারটা হাউস মাস্টারের হাতে ছেড়ে দিলেন। হিসাব মিলাতে পারছিলাম না, ডিনারের আগ পর্যন্ত একাডেমি ব্লকের সামনে বেত্রাঘাতের শিকার না হওয়াটাই অনৈতিক মনে হচ্ছিল। ক্লাসে গিয়ে একটা হিসাবের সন্ধান পেলাম আমরা, ভিপি হিসেবে এই দিনটিই বিশ্বাসের শেষ কর্মদিবস। শেষ মুহূর্তে কে-না একটু ভালো সাজতে চায়। আসলেই তিনি, পরম সাধু বনে গিয়েছিলেন। কারণ হাতের নাগালে দুই দুইটা ক্যাডেট পেয়েও না মেরে ছেড়ে দিতে যে তার কতোটা কষ্ট হয়েছিল তা মির্জাপুরিয়ান মাত্রেরই জানা আছে। অবশ্য হাউস মাস্টারের হাতে আমাদের দুজনকে সে রাতে থার্ড প্রেপের পর মাত্র দুটা বেতের বাড়ি খেতে হয়েছিল। সেখানেই সব শেষ। আমার কাছে সেদিনের সবচেয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল, আহসানের অদ্ভুত এবং আশ্চর্যরকম সিদ্ধান্তের পরিচয় লাভ। ব্যাচে এই আহসান ছিল বলেই না জীবনকে মাঝে মাঝে অন্যভাবে ভাবা যেতো। এই ব্লগে অবশ্য আহসানের ট্যালেন্টের অনেক পরিচয়ই আপনারা একে একে পাবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত সবুর করুন।
উল্লেখ্য আমরা তখন ক্লাস ইলেভেনে। ইলেভেনের মাঝামাঝি সময়ের কাহিনী এটা। নজরুল হাউসের নিচ তলায় আমি থাকতাম “নীলিমা” রুমে আর আহসানের রুম ছিল “সাগরীকা”।
bhoyonkor bishu dekhi voyanok hoye uthsilo...polapanre khali bet marto...nuru pagla ar bishu ai duita silo amar and probably amader batch er onekeri khubi oposoder teacher..ai duita mile to toder life ta jibon kore disilo....nyways keep the stories coming...valo theko shobai..
আদনান ভাই,একটা খবর দেই।
নুরুল হক স্যার প্রিন্সিপাল হইসে...
দুনিয়ায় ইনসাফ বইলা কিছু আর থাকলোনা... 🙁
bolish ki...ai hai...ai lok to polapanre akdom haai kore dibe...toder shathe akta ghoto na share kori..amader ek friend sh eri...ooh akbar nuru r upor khepsilo..nuru ajaira amader extra drill dito...amije koto bichitro karone extra drill khaisi..nyway amar oi friend korlo ki akbar bashai giye sir ke kisu sandal(bangla kore por) kine shundor kore wrap kore post kore dilo...and she ai kajta onek sr er shathei korse..ami khali vabtam parcel khule sir er mukh er vab kmon hoisilo...torao vebe moja pa..
bolish ki...shesh porjonto nuru...polapaner to khobor ase re..
ki bepar ager reply ta to gotokal raate display te ashe nai!!!!!!!!
আদনান ভাই ব্লগ থাকতে মন্তব্যে শেয়ার কেন? খুব তাড়াতাড়ি এইসব পার্সেল কাহিনী নিয়ে লেখা আশা করছি।
haa jhub taratari asha kortesi kahini niye ashbo...apatoto comment er upor diye jai...
তাইলে তো ধরে নিতে পারি, আজ-কালের মধ্যেই আপনার কাহিনী পড়তে পারবো। চালায়া যান।
শালা......।অইদিন যদি ব্লক এ ব্যাক করতাম তাইলে বারেক ভাই ফাইশা যাইত।
কারন আমি বারেক ভাই রে বাজার এ পাঠাইসিলাম চানাচুর লয়া আসতে।
আমি ত ধরা খাইতাম শিউর!!!বারেক ভাই ও বাশ খাইত!!!!
কথাটা একদম ঠিক আছে।বিশু সত্যই ভয়ংকর।
আহারে সেই দিনটার কথা আবার মনে পইড়া গেল।
আবু সাঈদ যে কি জিনিশ ভাই!! সে যে আমাদের ব্যাচ রে কি করে নাই!! পরে ওসব নিয়ে লিখবো! এখন ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে তাই সময় বের করতে পারতাছি না কিছু লিখার ~x( ~x( ~x(
খালি পরেয় আর কমেন্ট করেই পালায় যাইতেছি!
একবার অ্যাথলেটক্সের পর সবাই যখন চিল্লাচিল্লি/মাস্তি করতেছিলাম,আলম ভাই/রেজওয়ান ভাইরা স্লোগান দিলঃ "বিষু রে!বিষু রে!" :goragori: =))
=)) =)) =))
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: