ইঙ্গমার বারিমানের সাক্ষাৎকার: প্লেবয়

প্রকাশ: জুন, ১৯৬৭; প্লেবয় ম্যাগাজিন

চলুন বারিমানের “দ্য সাইলেন্স” মুক্তি পাওয়ার সেই উত্তাল মাসগুলোতে ফিরে যাই। স্টকহোমের প্রতিটি সিনেমা হলে উৎসুক দর্শকদের ভীড়, তার দেখাদেখি আরও ডজনখানেক দেশে সাইলেন্স নিয়ে একরকম চাপা উত্তেজনা, একেক জনের হলে আসার কারণ একেক রকম- কেউ এসেছে এই সুয়েডীয় চলচ্চিত্রকারের বিশ্বনন্দিত ট্রিলজির (আগের দুটি হল “থ্রু আ গ্লাস ডার্কলি” ও “উইন্টার লাইট”) শেষ পর্ব দেখতে, কেউ এসেছে সমালোচকদের সেই কথার সত্যতা প্রমাণ করতে- এই “অ্যানাটমি অফ লাস্ট” নাকি বারিমানের ২০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনের সেরা কীর্তি। সিনেমা তিনটি “গড ট্রিলজি” নামে পরিচিত যাতে ভালোবাসার অন্বেষণকে দেখা হয়েছে আবেগের মৃত্যু থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের আসার কারণ এগুলো না, নির্লজ্জ মানুষের ঢল নেমেছিল সিনেমার ইতিহাসে অনন্য ইরটিক দৃশ্যগুলোকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে ভক্ষণ করতে। মার্কিন সংস্করণে প্রায় এক মিনিটের মত দৃশ্য কেটে রাখার পরও দ্য সাইলেন্সের অসামাজিক নারীপটে যা আঁকা ছিল তা কামাতুর জনতার কামতৃষ্ণা উস্কে দেয়ার জন্য যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর সুইডেনের আইনসভার সদস্যরা ৪৫ বছর বয়সী নির্মাতাকে পর্নোগ্রাফার অভিধায় অভিযুক্ত করেছে, সুইডেনের সকল লুথারান চার্চ থেকে বারিমানকে বলা হয়েছে “অশ্লীলতার যোগানদাতা”, বেনামী চিঠিপত্রে তারুণ্য ও নম্রতাকে কলুষিত করার অভিযোগ এনে তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। মূক জনতার সম্মিলিত শীৎকারেও বারিমান এতটা কষ্ট পাননি যতটা কষ্ট পেয়েছেন মানুষের এই কথা শুনে যে, তিনি নাকি যৌন দৃশ্যগুলো যোগ করেছেন কেবলই মানুষকে আঘাত এবং উত্তেজিত করার জন্য। এক সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, “আমি একজন শিল্পী। দ্য সাইলেন্স এর ধারণা মাথায় আসার পর আমাকে তা করতেই হয়েছে, এর বেশি কিছু না।” বারিমানের বাবা ছিলেন ইভানজেলিক্যাল লুথারান চার্চের সদস্য, সুইডেনের রাজার চ্যাপলেইন- এই বাবার ঘরে তার শৈশব-কৈশোরের জীবন ছিল তিক্ততায় ভরপুর, সেখানে আবেগের জড়তা আর নৈতিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া কিছুই ছিল না। এই জীবন ঝেড়ে ফেলে তিনি নিজস্ব রূপকথার জগতে প্রবেশ করেছেন। ৯ম জন্মদিনে, এক বাক্স টিনের যোদ্ধার বিনিময়ে তিনি এমন একটি খেলনা পেয়েছিলেন যা তার সৃজনশীলতার বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, সেটি ছিল এক ক্ষত-বিক্ষত জাদুর প্রদীপ। এর এক বছর পরেই তিনি মনে মনে দৃশ্যায়ন শুরু করেছিলেন, পুতুল নকশা করা শুরু করেছিলেন। স্ট্রিন্ডবার্গে তার নিজস্ব পাপেট থিয়েটারে নিজে সবকিছু করতেন- সবগুলো পুতুল নকশা করা, সবগুলো সূতা নিয়ন্ত্রণ করা আর সবগুলো চরিত্রের হয়ে কথা বলা। পরবর্তীতে স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি যুব মঞ্চে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন, এখানেই ১৯৪০ সালে শেক্সপিয়ারের “ম্যাকবেথ” এর একটি নাৎসিবিরোধী সংস্করণ তৈরি করেন। কিন্তু এর কারণে তার পরিবারের উপর আঘাত আসায় মঞ্চ নাটকটির খুব একটা পসার হয়নি।

ইঙ্গমার বারিমান

সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনের চেতনায় উদ্বেলিত বারিমান পরের বছর স্কুল ত্যাগ করেন, চলে যান শহরের বোহেমিয়ান অংশে- মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন, নাটকের এমন কিছু অবান্তর কাহিনী ভাবতে শুরু করেন যার কোনটাই তার শেষ পর্যন্ত লেখা হয়নি। এক সময় “সহকারী মঞ্চ ব্যবস্থাপক” হিসেবে স্থায়ী কর্মজীবন শুরু করেন, এগোতে শুরু করেন বেশ দ্রুত- ব্যবস্থাপক থেকে পরিচালক এবং সেখান থেকে মেধাবী নাট্যকার। বারিমান কিংবদন্তীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল তার ঔদ্ধত্য আর মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা (বিয়ে করেছেন চার বার)। ১৯৪৪ সালে একটি চিত্রনাট্য লিখে সুইডেনের বৃহত্তম সিনেমা কোম্পানি Svensk Filmindustri তে জমা দেন। কোম্পানি এটা থেকে সিনেমা করার সিদ্ধান্ত নেয়- নাম “টর্মেন্ট”, এর মাধ্যমেই সুইডেনের চলচ্চিত্র মঞ্চে একটি নতুন ক্যারিয়ার শুরু হয়, এর পরে তিনি আরও ২৫টি সিনেমা করেছেন। “The Seventh Seal”, “Smiles of a Summer Night”, “Wild Strawberries”, “The Magician”, “Brink of Life” এবং “The Virgin Spring” এর আন্তর্জাতিক মুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব চলচ্চিত্রের হর্তাকর্তারা এক নতুন মেধা আবিষ্কার করেছেন, সবাই তাকে আভান্ট-গার্ড আর্ট ফিল্মের গুরু মেনেছেন। বহু সমালোচকের সম্মিলিত প্রশংসায় তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রথম সারির নির্মাতা হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন।

বারিমান শ্যুটিং করার সময় মূল চিত্রনাট্য থেকে সামান্য বিচ্যুতিও মেনে নিতে পারেন না। তার স্টুডিওর ত্রিসীমানায় বাইরের কোন মানুষ বা দর্শনার্থীর উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না, সাংবাদিকদের তো নয়ই। শুধু শ্যুটিং সেটে নয়, সেটের বাইরেও তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চান না, তাদেরকে একেবারেই পছন্দ করেন না।

তাই আমাদেরকে একটু ভয়ে ভয়েই এই মহান চলচ্চিত্রকারের সাথে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের আবেদন নিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল তিনি আমাদের আন্তরিকভাবে উত্তর দিয়েছেন, বলেছেন স্টকহোমে এসে তার সাথে দেখা করতে। তার আমন্ত্রণেই আমরা গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে স্টকহোমে এসেছি। বিমর্ষ নর্ডিক শীতের আবহে প্রায় এক সপ্তাহ আমরা স্টকহোমে থাকব।

আমরা কথা বলেছি ডাউনটাউন স্টকহোমের “রয়েল ড্রামাটিক থিয়েটার” এর ব্যাকস্টেজে বারিমানের ছোট্ট অফিসে বসে। জাতীয় মঞ্চের নব নিযুক্ত ম্যানেজার হিসেবে এখানে তিনি পুরোদমে কাজ করছেন- চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে শুরু করে Brecht, Albee ও Ionesco এর মত নাট্যকারদের নাটক মঞ্চায়ন, সবকিছু। প্রতি সকালে আমাদের সাথে ঘণ্টা খানেক কথা বলেছেন, কারণ তার মতে সকালেই তিনি সবচেয়ে জীবিত থাকেন। ঠিক ৯ টায় অফিসে আসেন, পরনে থাকে ভারী ঢিলেঢালা পশমী কাপড়ের পোলো শার্ট, উলের ক্যাপ, হালকা বাদামী রঙের উইন্ডপ্রুফ জ্যাকেট যাতে তখনও ড্রাই ক্লিনারের ট্যাগ লাগানো। সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হতো আমাদের পক্ষ থেকে একটা উষ্ণ হাসি দিয়ে, তিনি আমাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রথম প্রশ্নটা নিজেই করতেন, সব সময়।


বারিমান: তারপর, স্টকহোমে এসে এখনও হতাশ হননি?

প্লেবয়: হতাশ হওয়া উচিত নাকি?

বারিমান: খুব বেশিদিন তো এখনও থাকেননি। বিরক্তি একসময় আসবেই। আমি বুঝি না, মানুষ সব বাদ দিয়ে কেন এতদিন ধরে স্টকহোমে থাকে। দক্ষিণ থেকে এত উত্তরে আসাটা আসলেই বেশ বিদঘুটে। প্লেনে উত্তরের দিকে আসার সময় প্রথমে শহর ও গ্রাম দেখা যায়, কিন্তু আরও এগোলে কেবল গাছপালা-বনজঙ্গল, আরেকটু এগোলেও বন, মাঝখানে হয়ত একটা হ্রদ দেখা যায়, তারপর আবারও জঙ্গল- অনেক দূর পরপর হঠাৎ একটা বাড়ি চোখে পড়ে। তারপর হঠাৎ কোত্থেকে ফুঁড়ে উঠে স্টকহোম। সব বাদ দিয়ে এত উত্তরে এমন একটা শহর বানানো একেবারেই অযৌক্তিক। এখানে আমাদের থাকতে হয় একাকী। আমাদের দেশটা এত বড় অথচ জনসংখ্যা কত কম, পুরো দেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে গুটিকতক মানুষ। এখানকার মানুষেরা নিজেদের জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করে, একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ হয় না বললেই চলে। এটা তাদের জন্য খুবই কঠিন, এমনকি শহরে এলেও তাদের কোন লাভ হয় না। কিভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা-ই তারা জানে না। মুখ বন্ধ করে বসে থাকে। আর শীতকালটা তো কোন সাহায্যই করে না।

প্লেবয়: সাহায্য করে না মানে?

বারিমান: শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য খুবই কম, খুব বেশি হলে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত। এখান থেকে আরেকটু উত্তরে গেলেই দিন হারিয়ে যায়, চব্বিশ ঘণ্টাই সেখানে অন্ধকার। আমি শীত ঘৃণা করি। স্টকহোমের শীত আরও বেশি ঘৃণা করি। শীতকালে আমি সবসময় ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠি, একেবারে ছোটবেলা থেকে। ঘুম ভাঙার পর প্রথমেই আমার জানালার বিপরীতের দেয়ালটার দিকে তাকাই। নভেম্বর-ডিসেম্বরে সেখানে কোন আলোই দেখা যায় না। জানুয়ারিতে এক চিলতে আলোর দেখা মেলে। প্রত্যেক সকালে সেই আলোর রেখাকে একটু একটু করে বাড়তে দেখি। অন্ধকার এবং অসহনীয় শীতকালটা এভাবেই পার করি: যত বসন্তের দিকে এগোই আলোর রেখাটাও তত বাড়তে থাকে।

প্লেবয়: এখানকার শীত এত ঘৃণা করলে শীতের সময় উষ্ণ শহরগুলোতে চলে যান না কেন? এখানে শীতের সময়টা তো রোম বা হলিউডের মত সিনেমার রাজধানীতে গিয়েও কাজ করতে পারেন।

বারিমান: নতুন শহর আমার মধ্যে অতিরিক্ত সংবদনের জন্ম দেয়। একসাথে এত অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি সামাল দেয়া সম্ভব না; তারা সব আমার ওপর জেঁকে বসে। নতুন শহর আমাকে অভিভূত করে, আচ্ছন্ন করে রাখে, অস্থির করে তোলে।

প্লেবয়: একটা রিপোর্টে আপনি বলেছিলেন সুইডেন ছেড়ে যেতে আপনার ভীষণ ভয় হয়। এ কারণেই কি সুইডেনের বাইরে কোন সিনেমা তৈরি করেন নি?

বারিমান: তা নয়, ছবি তৈরির ক্ষেত্রে তা সামান্য কারণই বলতে পারেন। তাছাড়া পৃথিবীর সবখানে অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং স্টুডিওগুলো প্রায় একই। আমার শৈল্পিক নিয়ন্ত্রণ টুকু হারিয়ে ফেলার ভয়েই অন্য কোন দেশে ছবি নির্মাণ করিনি। যখন ছবি বানাই, ছবির শুরু থেকে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমি সুইডেনে বেড়ে উঠেছি, এখানেই আমার শিকড়। আর এখানে আমি পেশা নিয়ে কখনো হতোদ্যম হইনি, অন্ততপক্ষে প্রযোজকের দিক থেকে। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায় ২০ বছর ধরে একই মানুষের সাথে কাজ করছি। তারা আমাকে শুরু থেকে এই পর্যন্ত দেখছে। প্রযুক্তির চাহিদা চলচ্চিত্র নির্মাতাকে দাসে পরিণত করে, কিন্তু এখানে সবকিছু মানুষের সাহায্যে হয়। ক্যামেরাম্যান, অপারেটর, প্রধান ইলেকট্রিশিয়ান আমরা সকলেই একে অপরকে ভালোভাবে জানি এবং বুঝতে পারি সহজে। আমি কদাচিৎই তাদেরকে কী করতে হবে বলি। এটাই আদর্শ এবং এটা সৃজনশীল কাজকে সহজ করে তোলে। অবশ্যই মার্কিন কোম্পানির জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ একটা লোভনীয় ব্যাপার। কিন্তু তা প্রথমটির জন্য নয়, দ্বিতীয়টির জন্য। আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এবং প্রযোজকের সাথে একই সম্পর্ক ঠিক রেখে, কাজ করার পুরো সময়টাতে আমার নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে কি? আমার মনে হয় না।

প্লেবয়: আপনি একবার বলেছিলেন, এমন কি স্টকহোমে আপনার সেটের বাইরে কারও সাথে সাক্ষাৎ করবেন না, যেখানে বাইরের কারও প্রবেশ নিষেধ, কেন?

বারিমান: আপনি কি জানেন ছবি বানানোটা কী? প্রতিদিন আট ঘণ্টার কঠিন শ্রমে আপনি পাবেন তিন মিনিটের ফিল্ম। যদি খুব ভাগ্যবান হন তবে যা সৃষ্টি হবে তার আয়ুষ্কাল হবে ৮ থেকে ১০ মিনিট। হয়তো বা তাও হবে না। এরপর আবার আট ঘণ্টা শ্রম দিয়ে দশ মিনিটের কাজ আশা করবেন। সেটের প্রত্যেকটা মানুষ উৎকীর্ণ হয়ে থাকে এই একটু সত্যিকারের সৃষ্টি দেখার জন্য। এ সময় শিল্পী এবং আপনার নিজেকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে হবে নির্দিষ্ট বলয়ে। আর বাইরের প্রেক্ষাপটে, যদি তা বন্ধুত্বপূর্ণও হয়, তা আপনার কাছে অপরিচিত মনে হবে। যে কোন সময় বহিরাগত কেউ সেটে প্রবেশ করে মনোযোগের বিঘ্ন ঘটাতে পারে অভিনেতাদের, টেকনিশিয়ানদের এমনকি আমারও। তা হয়তো আমার কাজের খুব অল্প সময় নষ্ট করবে। কিন্তু তাও আমরা নষ্ট করতে চাই না। খুব অল্প সময়েই আমি ভিন্ন কিছু তৈরি করি। আর সেজন্য আমি অনুতপ্ত হতে চাই না।

প্লেবয়: আপনার সমালোচকরা বলেন আপনার সেটে কাউকে ঢুকতে তো দেনই না বরঞ্চ অনেককে বের করে দেন। এমনকি রেগে গেলে ফোন ছুঁড়ে মারেন দেয়ালে অথবা চেয়ার ছুঁড়ে ফেলেন কাঁচের বুথে, এগুলো কি সত্য?

বারিমান: হ্যাঁ, এরকমই। যখন আমি তরুণ ছিলাম, টগবগে তরুণ, অন্য অনেক তরুণের মতই নিজের সম্পর্কে অনিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলাম। এবং যখন আপনি অনিশ্চিত ও অনিরাপদ তখন নিজ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক। নিজের পথ করে নেওয়ার জন্য আগ্রাসী হয়ে উঠবেন। আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। প্রাদেশিক মঞ্চে যখন নির্দেশক হিসেবে কাজ করছিলাম তখন আজ যে ব্যবহার করি তা করতাম না। তখন আমার অভিনেতা ও কলাকুশলীদের সম্মানের চোখে দেখতাম। কিন্তু যখন দিনের প্রতিটি মিনিটের গুরুত্ব বুঝতে পারলাম, যখন শান্ত পরিবেশ ও সেটের নিরাপত্তার বিষয়টা অনুভব করলাম তখনও কি আমি আগের মত রয়ে যাব, আমি চুপচাপ থেকে নিজেকে শেষ করে দেব এটা আপনি ভাবতে পারেন? মুভির সেটে একজন পরিচালক একটি জাহাজের ক্যাপ্টেনের মত, তার প্রাপ্য সম্মানটুকু তাকে আদায় করে নিতে হবে। আমি ২৫-২৬ বছর আগে এমন ব্যবহার করতাম না।

প্লেবয়: এই বদমেজাজের কাহিনী এখনও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

বারিমান: অবশ্যই, প্রকাশিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকরা তাদের সম্পাদক ও পাঠকদের কাছে এ ধরণের চটকদার খবর পৌঁছে দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। একজন পরিচালক মেজাজ না দেখিয়ে শান্তভাবে কথা বলে তার অভিনেতাদের মনোবল চাঙ্গা করে তুলেছে, পাঠকের কাছে এমন খবরের তো কোন আকর্ষণ নেই। মানুষ বছরের পর বছর এই ধরণের খবর আশা করে। আপনি কি বুঝতে পারছেন কেন আমি প্রেসের সাথে কলা বলা পছন্দ করি না? মানুষ বলে আমি সাংবাদিকদের চোখের সামনে দেখতেও ইচ্ছুক না, আমি তাদের সাথে যেকোন ধরণের সাক্ষাৎকার প্রত্যাখ্যান করি। এই একটি ক্ষেত্রে তাদের ধারণা সঠিক। যখন কোন সাংবাদিককে কথা বলার জন্য সময় দেই তখন তাদের সাথে ভাল ব্যবহারই করি। কথা শেষে পত্রিকা অফিসে গিয়ে তারা সব ভুলে যান, সম্পাদক আমার এইমাত্র বলা কথাগুলো ছুঁড়ে ফেলে পুরনো কথাগুলো আবার প্রকাশ করে। কেননা তারা মনে করে আমার সত্য কথার তুলনায় পুরনো গালগল্পগুলো অনেক চটকদার। কয়েক বছর আগে আমেরিকার একটি পত্রিকায় আমাকে নিয়ে এমনই একটা কাভার স্টোরি লেখা হয়েছিল।

প্লেবয়: টাইম ম্যাগাজিন?

বারিমান। হ্যাঁ, তাই। বের হওয়ার পর আমার স্ত্রী আমাকে পড়ে শুনিয়েছিল। পত্রিকায় যে মানুষটার কথা বলা হচ্ছিল তার সাথে পরিচিত হতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল আমার- কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সে খুব একটা ভাল মানুষ নয়, কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু পত্রিকার এই মানুষটার মধ্যে আমি নিজেকে খুঁজে পাইনি। আমি জানি সে সত্যিকারের কেউ নয়।

প্লেবয়: আপনার কিছু সিনেমার অর্থবোধকতা নিয়ে সমালোচনা করা হলে তার খুব সামান্যই আপনি মেনে নিয়েছেন, এটা কি সত্য?

বারিমান: আমি এগুলোকে পাত্তাই দেই না। এগুলো বিরক্তিকর। অধিকাংশ সমালোচকই জানে না কিভাবে একটি সিনেমা বানাতে হয়। চলচ্চিত্রের সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান অতি সামান্য। কিন্তু আমরা একটা নতুন প্রজন্ম পেয়েছি যাদের সিনেমা সম্পর্কে অনেক জানাশোনা রয়েছে। কিছু তরুণ ফরাসি সমালোচকের সমালোচনা আমি পড়ি। তাদের মতামতের সাথে সবসময় একাত্মতা প্রকাশ করি না, কিন্তু তারা যোগ্য। তাদের কোন বক্তব্য আমার বিপক্ষে গেলেও আমি তাদের স্বীকৃতি দেই।

প্লেবয়: আপনার সিনেমার নেতিবাচক সমালোচনা করা হয়েছে বেশ কয়েকটি কারণে, যেমন- ব্যক্তিগত অর্থবোধকতা, বেশ কিছু অংশের অস্পষ্টতা, প্রতীকধর্মীতা ইত্যাদি। এই অভিযোগগুলো স্বীকার করেন?

বারিমান: সম্ভবত আমি তা মনে করি না। কারণ সিনেমা বানানোর সময় পরিচালক দর্শকদের সিনেমার সাথে একাত্ম করতে চান। এটা অবশ্যই কঠিন কাজ। ব্যক্তিগত সিনেমা তৈরি করা সহজ, আমি মনে করি না কোন পরিচালকের সহজ সিনেমা বানানো উচিত। পরিচালক চেষ্টা করবেন তার একেকটি সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। সাধারণ জনগণের জন্য এটা ভাল। কিন্তু পরিচালকের কখনও ভুলে গেলে চলবে না তিনি কার জন্য সিনেমা বানাচ্ছেন। আর যাই হোক, আমার সিনেমা দেখে দর্শকরা মেধা খাটিয়ে সেটা নিমেষের মধ্যে বুঝে ফেলবে সেটা আমি চাই না, তারা সিনেমাটিকে হৃদয়ে ধারণ করুক সেটাই চাই। হৃদয়ই এখানে মুখ্য।

প্লেবয়: তারা আপনার সিনেমা কেমন বুঝেছেন জানি না, তবে এটা ঠিক যে অনেক আন্তর্জাতিক সমালোচক আপনাকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের শীর্ষস্থানীয় পরিচালকদের সারিতে সম্মানের আসন দিয়েছেন। এ ধরণের র‌্যাংকিং সম্পর্কে আপনার কী মত?

বারিমান: বহির্বিশ্বে সফলতাই সুইডেনে আমার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আমি মৌলিক সৃষ্টি নিয়ে কারও সাথে প্রতিযোগিতা করতে ইচ্ছুক নই। সাফল্যে সবসময় অনুপ্রাণিত হই, কাজের মাধ্যমে সেটা অর্জন করি। চলচ্চিত্র জগতে সাফল্য খুব ক্ষণস্থায়ী। প্যারিসে কয়েক বছর আগেও আমি ছিলাম সফল পরিচালক। তারপর আন্তোনিওনি আসল। তিনি নতুন একজন। কেউ কি তাকে চিনে? এই নবীন সৃজনশীল পরিচালক যখন সিনেমা বানাতে শুরু করলেন তখন আমি তার প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েছিলাম। ঈর্ষার বশবর্তী হয়েই ফিল্ম লাইব্রেরি থেকে নিয়ে তার সব সিনেমা দেখলাম। সিনেমার টেকনিক্যাল বিষয় সব যে তার জানা তা নয়। টেকনিক্যাল দিক থেকে আমি তার চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল। এটাই আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। এখন আমি অন্য কোন পরিচালকের সিনেমা দেখে ঈর্ষান্বিত বা ভীত হই না। কারণ জানি, ভীত বা ঈর্ষান্বিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

প্লেবয়: সিনেমার স্টাইল ও কৌশলের ক্ষেত্রে অন্য পরিচালকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন?

বারিমান: সিনেমা সম্পর্কে সবকিছু আমার নিজে থেকেই জানতে হয়েছে। মঞ্চের ক্ষেত্রে এটা ঠিক না, গোটেবর্গে চার বছর থাকার সময় এক বর্ষীয়ান পণ্ডিতের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। সে কঠোর হলেও মঞ্চ সম্পর্কে সবকিছু জানতো, তার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি। কিন্তু সিনেমার জগতে আমার কোন শিক্ষক ছিল না। যুদ্ধের আগে আমি স্কুলে পড়তাম, আর যুদ্ধের সময় কোন বিদেশী সিনেমা দেখার উপায় ছিল না। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্ত্রী ও তিন সন্তানের ভরণ পোষণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিলাম। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমি স্বশিক্ষায় খুব দক্ষ ছিলাম, যদিও এই গুণ সবসময় উপকারী না। কারণ স্বশিক্ষিতরা অনেক সময় টেকনিক্যাল বিষয়গুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়, টেকনিক্যাল নৈপুণ্য নিয়ে বেশি চিন্তা করে, এটা নিশ্চিত করার পরই কেবল অন্যদিকে মনোযোগ দেয়। আমার মনে হয় সিনেমায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কিছু বলা।

প্লেবয়: আপনার কি মনে হয় আমেরিকার নিউ ওয়েভ পরিচালকদের কিছু বলার আছে?

বারিমান: হ্যাঁ, আছে। আমি তাদের খুব বেশি সিনেমা দেখিনি। “দ্য কানেকশন”, “শ্যাডোস” এবং “পুল মাই ডেইজি” বারবার দেখার মত সিনেমা। যতদূর দেখেছি সে অনুসারে ফরাসি নিউ ওয়েভের তুলনায় মার্কিন নিউ ওয়েভ আমার বেশি পছন্দ। মার্কিনরা অনেক বেশি উৎসুক, আদর্শবাদী, তাদের সিনেমা নৈপুণ্যে ফরাসিদের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও সিনেমার মাধ্যমে তারা কিছু বলতে চায়। এই বলার চেষ্টাটাই ভাল। এটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার পছন্দের।

প্লেবয়: যেসব রুশ সিনেমা দেখেছেন সেগুলো কি ভাল লেগেছে?

বারিমান: খুবই ভাল লেগেছে। রুশদের কাছ থেকে শীঘ্রই চমৎকার কিছু বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি। কারণ জানি না, কিন্তু আমার মনে হয়। “চাইল্ডহুড অফ আইভান” দেখেছেন? এটাতে অনন্যসাধারণ কিছু বিষয় আছে। রাশিয়ার অনেক সিনেমাই বেশ খারাপ সন্দেহ নেই, কিন্তু সেখানে মেধা ও শক্তি আছে।

প্লেবয়: ইতালীয় পরিচালকদের সম্পর্কে কি মনে করেন?

বারিমান: ফেলিনি চমৎকার। আমি যা নই ফেলিনি ঠিক তাই। আমার তার মত হতে চাওয়া উচিত। তার মধ্যে বারোক যুগের প্রচুর উপাদান আছে। তার সিনেমা প্রচণ্ড উদার, উষ্ণ, সহজবোধ্য এবং স্নায়ুর উপর খুব কম চাপ ফেলে। “লা দোলচে ভিতা” আমার খুবই পছন্দের সিনেমা, বিশেষ করে বাবার সাথের দৃশ্যটা অসাধারণ। বিশাল মাছের সাথে করা শেষ দৃশ্যটাও চমৎকার। ভিসকন্তির প্রথম সিনেমাটা খুব ভাল লেগেছিল- লা তেরা ত্রেমা। এটাই বোধহয় তার সেরা সিনেমা। আন্তোনিওনির “লা নোত্তে” ও খুব ভাল লেগেছিল।

প্লেবয়: জীবনে দেখা সেরা সিনেমা বেছে নিতে বললে কি এগুলোই বেছে নেবেন?

বারিমান: না, আমার মনে হয় সমসাময়িক সিনেমার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় তিনটি: দ্য ল্যাডি উইথ দ্য ডগ, রাশোমোন এবং Umberto D. ও হ্যাঁ, আরেকটা আছে, চতুর্থ, “মিস্টার হুলোস হলিডে”, এই সিনেমাটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম।

প্লেবয়: আচ্ছা আপনার সিনেমার কথায় ফিরে আসি। আপনার সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বিতর্কিত সিনেমা “দ্য সাইলেন্স” এর ধারণা কিভাবে পেয়েছেন?

বারিমান: এক বিশালবপু বৃদ্ধের কাছ থেকে। হ্যাঁ, ঠিক তাই। চার বছর আগে এক বন্ধুকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে তার রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, খুব মোটা ও প্যারালাইজড এক বৃদ্ধ পার্কে একটি গাছের নিচে চেয়ারে বসে আছে। দেখলাম, চার জন সুশ্রী ও হাশিখুশি নার্স এসে তাকে চেয়ার সমেত উঠিয়ে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে গেল। কেন জানি দৃশ্যটা অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল। আমার অন্য অনেক ছবির মত এবারও একটিমাত্র দৃশ্য থেকে চিত্রনাট্যের কাঠামোটা তৈরি করে ফেললাম। আমি প্রায় সব সময়ই এভাবে সিনেমার থিম পাই- ছোট্ট একটা অনুভূতি, কারো বলা ছোট্ট কোন কথা, হয়তোবা কোন ইশারা বা কোন অভিনেতার ছোট্ট একটি মুখভঙ্গি। এরকম ছোট ছোট ঘটনা থেকেই চিন্তা শুরু করি এবং এক সময় তা পূর্ণতা অর্জন করে। আরও সূক্ষ্ণভাবে বললে, আমার চিত্রনাট্যগুলো বেরিয়ে আসে আত্মার তাগিদ থেকে, এই তাগিদেরও রকমফের আছে, একেক সময় তা একেক রূপে আবির্ভূত হয়। আমার অধিকাংশ সিনেমাই শুরু হয় কোন বিশেষ দৃশ্য বা অনুভূতি দিয়ে। এই সূচনাকে ঘিরেই আমার কল্পনাশক্তি কাজ করে এবং সেটাকে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে আমার চিন্তাগুলো আলাদা আলাদা করে লিখে রাখি, নোটের আকারে। এভাবে মাথায় অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধারণা তৈরি হয়ে থাকে যাদেরকে বলা যায় মানসিক ফাইল। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর এই ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ দৃশ্যে রূপান্তরিত হয়। একটা প্রজেক্ট শুরু হওয়ার পর আমার সেই মানসিক ফাইলগুলো খুলে দৃশ্যায়ন শুরু করি, চরিত্রগুলো সেভাবেই সাজাই। অনেক সময় মানসিক ফাইল থেকে করা চরিত্রগুলোর সাথে চিত্রনাট্যের অন্য চরিত্রগুলোর বনিবনা হয় না। তখন ফাইলের চরিত্র ফাইলে ফিরিয়ে নিয়ে যাই, অন্য কিছু খুঁজতে শুরু করি। আমার সিনেমা শুরু হয় স্নোবলের মত করে, বরফের একটি ছোট্ট কণা থেকে খুব ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। এমনকি মাঝেমাঝে সিনেমা শেষ হলে শুরুর সেই ছোট্ট বরফকণার কথাই ভুলে যাই।

প্লেবয়: কিন্তু প্যারালাইজড বৃদ্ধ থেকে পাওয়া সেই ছোট্ট বরফকণা থেকে কিভাবে দ্য সাইলেন্স এর এক্সপ্লিসিট সেক্স ও মাস্টারবেশনের দৃশ্য উঠে এল তা সহজে বোঝা যায় না। যে এক্সপ্লিসিট দৃশ্যগুলো বিশ্বময় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তার সঠিক তাৎপর্য বোঝা কঠিন হয়ে গেছে। আপনি কেন পর্দায় সেক্স দেখানোর এই গ্রাফিক্যাল পন্থাটা বেছে নিলেন?

বারিমান: অনেক দিন ধরেই আমার সিনেমায় সেক্স দৃশ্যায়নের ব্যাপারে খুব প্রথাগত ছিলাম, খানিকটা ভয়েও ছিলাম। কিন্তু সিনেমায় সেক্স সঠিকভাবে বিকশিত করা বিশেষ করে আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমি কেবল ইন্টেলেকচুয়াল সিনেমা বানাতে চাই না। আমি চাই দর্শকরা আমার সিনেমা অনুভব করুক, তাদের চেতনায় সেটা প্রবেশ করুক। বোঝার চেয়ে এটাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। গ্রীষ্মকালের একটি সুন্দর সকালের দৃশ্যের সাথে সেক্স এর দৃশ্যের অনেক মিল আছে। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, গ্রীষ্মের সুন্দর সকাল চিত্রায়িত করার উপায় জানলেও সেক্সকে সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করার উপায় আমি এখনও বের করতে পারিনি। আর ভালোবাসার ইন্টেরিয়র অ্যানাটমি নিয়ে আমি খুবই আগ্রহী। সেক্স পরবর্তী সন্তুষ্টি দেখানোর চেয়ে তাই সে ইন্টেরিয়র অ্যানাটমি দেখানো আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

প্লেবয়: অনেকে বলছেন দ্য সাইলেন্স এর মার্কিন সংস্করণে প্রায় দুই মিনিটের মত ইরটিক দৃশ্য কেটে নেয়ায় মুভিটা তার স্বাভাবিকত্ব হারিয়েছে, তার মূল বৈশিষ্ট্যই নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এর সাথে কি আপনি একমত?

বারিমান: এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি করছিও না।

প্লেবয়: ঠিক আছে। কিন্তু এমন কি হতে পারে না যে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের এই সেন্সরের কারণে ভবিষ্যতে আপনি নিজের উপর একটি সেন্সরশিপ আরোপ করতে পারেন যাতে তা মার্কিন দর্শকরা কাটছাট ছাড়াই দেখতে পারে?

বারিমান: না, কখনোই নয়।

প্লেবয়: সিনেমার বহুল বিতর্কিত দৃশ্যগুলোতে থুলিন ও লিন্ডব্লোম এর মত অভিনেত্রীদেরকে এত অকপটে অভিনয় করাতে রাজি করালেন কিভাবে?

বারিমান: শুধু তাদের না, অন্য সব অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরকে আমি যেভাবে পেয়েছি ঠিক সেভাবেই তাদেরকে এই দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করিয়েছি। আমার অভিনয়শিল্পীরা এটা মেনেই সিনেমায় আসেন যে আমার যে কোন সিনেমায় যে কোন দৃশ্যে অভিনয় করতে প্রস্তুত থাকবেন। আমরা খুব স্বাভাবিক ও সাবলীলভাবে আলোচনা করি, দৃশ্যটিতে তাদের কি করতে হবে। অনেকে দাবী করে, আমি নাকি অভিনেতাদের সম্মোহিত করে তাদের কাছ থেকে এমন অভিনয় আদায় করে নিই। যত্তসব আজগুবি কথাবার্তা! আমি কেবল তাদেরকে সেই জিনিসটা দিতে চাই যা ছাড়া কারও পক্ষে সফল অভিনেতা হওয়া সম্ভব না: আত্মবিশ্বাস। একজন অভিনেতা কেবল এটাই চায়। পরিচালক যা চাচ্ছেন তার পুরোটা অভিনয় করে দেখানোর ক্ষমতা তার মধ্যে তখনই আসবে যখন সে আত্মবিশ্বাসী হবে। তাই আত্মবিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা দিয়ে আমি আমার শিল্পীদের ঘিরে রাখি। আমি অনেক সময় তাদের সাথে সিনেমা নিয়ে কথা না বলে সাধারণ কথাবার্তা বলি যাতে তারা স্বাভাবিক থাকতে পারে। এটাই যদি জাদু হয় তাহলে বলতেই হয় আমি একজন জাদুকর। তারপরও একটা কথা না বললে নয় যে, দীর্ঘদিন ধরে একই অভিনেতা, কলাকুশলীদের সাথে কাজ করায় আমাদের স্টুডিওতে বিশ্বস্ততার একটা আবহ তৈরি হয়ে গেছে যা কাজে অনেক সাহায্য করে।

প্লেবয়: আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে আপনি বলেছিলেন, “আমি দরকার হলে আমার মেধাকে বেশ্যাবৃত্তিতে কাজে লাগাবো, অন্য কোন উপায় না থাকলে চুরি করবো, আমার বন্ধু বা অন্য কাউকে খুন করলে যদি শিল্পের সাহায্য হয় তবে তাই করবো।” এই বক্তব্যকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

বারিমান: আমি তখন অনেক বেশি রক্ষণাত্মক ছিলাম। যখন একজন মানুষ নিজেকে ভালভাবে জানে না, বিশ্বে তার অবস্থান এমনকি তার সৃজনশীলতা নিয়েও চিন্তিত থাকে তখন সে নিজেকে আক্রমনাত্মক উপায়ে প্রকাশ করতে চায়, কেবলমাত্র কঠোর সমালোচনা ঠেকানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু একবার সফল হয়ে যাওয়ার পর মানুষ সাফল্যের শর্তগুলো থেকে মুক্ত হয়ে যায়। লড়াইয়ে টিকে থাকার আর কোন প্রয়োজন পড়ে না, সে তার কাজে ভালভাবে মনোনিবেশ করতে পারে। তখন জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। নিজেকে পছন্দ হতে শুরু করে। যেমন এখন আমি জীবনটা আগের চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ করছি, বুঝতে শুরু করেছি যে এমন অনেক কিছু আছে যা আমি দেখি নি। নিজেকে খানিকটা বুড়োও মনে হচ্ছে, তবে খুব বেশি না।

আরেকটা ব্যাপার হল, আমি মনে করতাম জীবন বা শিল্পে সমঝোতার কোন স্থান নেই। ভাবতাম একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে খারাপ কাজ হতে পারে সমঝোতা করা। কিন্তু এটা ঠিক যে আমি নিজেই অনেক সময় আপোস করেছি। এটা আমাদের সবাইকেই করতে হয় এবং আমরা করি। এছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব না। কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় আমি অনেক কিছুর সাথে আপোস করে চলছি এটা জানার পরেও মেনে নিতে চাইতাম না, নিজেকে আপোসহীন বলে সান্ত্বনা দিতাম। মনে করতাম আমি সবকিছুর উপরে উঠতে পারব। কিন্তু এখন জানি যে সেটা সম্ভব না। এখন বুঝতে পেরেছি, সবচেয়ে বড় বিষয় হল বেঁচে থাকা এবং বেঁচে যে আছি তা বুঝতে পারা। মৃত বা অর্ধমৃত মানুষের সাথে বাস করা তো সম্ভব না। অনুভব করতে পারাটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উইন্টার লাইট এ আমি এটাই তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। এই সিনেমা আমাকে নিয়ে যদিও খুব কম মানুষই তা বুঝেছে। এখন যেহেতু আপনারা শীতের মাঝখানে স্টকহোমে এসেছেন, আশাকরি উইন্টার লাইট বুঝতে শুরু করবেন। এই সিনেমা সম্পর্কে আপনাদের মত কী?

প্লেবয়: আমরা আসলে সিনেমা সম্পর্কে আপনার মত নিয়েই বেশি আগ্রহী।

বারিমান: আচ্ছা আমিই বলি। এটা বেশ কঠিন সিনেমা, আমার বানানো সবচেয়ে কঠিন সিনেমাগুলোর একটি। দর্শকদের পরীশ্রম করতে হবে। “থ্রু আ গ্লাস ডার্কলি” থেকে প্রগতির মাধ্যমে এর জন্ম হয়েছে এবং এটা বাড়তে বাড়তেই এক সময় “দ্য সাইলেন্স” এর জন্ম দিয়েছে, অর্থাৎ সাইলেন্স এ এটার থিমই বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিনেমা তিনটি এক সাথে অবস্থান করে। এগুলো বানানোর উদ্দেশ্য ছিল, মানুষে মানুষে যোগাযোগের গুরুত্বকে নাট্যায়িত করা, মানুষের অনুভব করার ক্ষমতাকে চিত্রায়িত করা। অনেক সমালোচক বলেছেন ঈশ্বর এবং তার অনুপস্থিতিই এগুলোতে মুখ্য যা ঠিক না। এগুলোর মূল বক্তব্য ভালোবাসা রক্ষার শক্তি। এই সিনেমাগুলোর অধিকাংশ চরিত্রই মৃত, সম্পূর্ণ মৃত। কিভাবে ভালোবাসতে হয় বা কিভাবে অনুভব করতে হয় তা তারা জানে না। নিজেদের বাইরে কারও কাছে পৌঁছতে পারে না বলেই তারা হারিয়ে গেছে।

উইন্টার লাইট এর প্যাস্টর চরিত্রটি কিছুই না। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে সে প্রায় মৃত। অন্য সবার থেকে সে বিচ্ছিন্ন। কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে নারীটি। সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, কিন্তু শক্তিশালী, সে ভালোবাসতে পারে। যেসব নারী ভালোবাসতে পারে তারা ভালোবাসার মাধ্যমে অনেক কিছু রক্ষা করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল এই ভালোবাসা কিভাবে প্রকাশ করতে হয় তা উইন্টার লাইট এর নারীটি জানে না। সে কুৎসিত ও কদর্য। সে প্যাস্টরকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখে এবং এজন্যই প্যাস্টর তাকে ঘৃণা করে, কুৎসিত চেহারাও একটা কারণ। কিন্তু এই নারী একসময় ভালোবাসা প্রকাশ করতে শিখে যায়। সিনেমার শেষ দিকে যখন সবাই বিকেল তিনটার চার্চ সার্ভিসের জন্য জড়ো হয় কেবল তখনই এক দিক থেকে চিন্তা করলে নারীটির প্রার্থনা মঞ্জুর হয়। সার্ভিস প্যাস্টরের কাছে সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে পড়ে, তারপরও সেই শূন্য চার্চের সার্ভিসে যোগদানের মাধ্যমে সে ভালোবাসার পথে প্রথম পদক্ষেপ নেয়। এটা অনুভূতির দিকেও তার প্রথম পদক্ষেপ, কিভাবে ভালোবাসতে হয় তার দিকেও। এখানে তাই ভালোবাসাই আমাদের রক্ষা করে, ঈশ্বর নয়। আমরা সর্বোচ্চ এই ভালোবাসারই আশা করতে পারি।

প্লেবয়: ট্রিলজির অন্য দুটি সিনেমাতে এই থিমটি কিভাবে এসেছে?

বারিমান: লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রত্যেক সিনেমারই একটি যোগাযোগের মুহূর্ত থাকে , মানবিক যোগাযোগের মুহূর্ত: থ্রু আ গ্লাস ডার্কলি-র শেষ দৃশ্যে ছেলেটি বলে “Father spoke to me”; উইন্টার লাইটের শেষে প্যাস্টর শূন্য চার্চে কেবল মার্টার জন্য সার্ভিস পরিচালনা করে; দ্য সাইলেন্স এর শেষে ছেলেটি এস্টারের চিঠি পড়ে। প্রতি সিনেমাতেই এই মুহূর্তগুলো খুব ছোট কিন্তু প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয় হল অন্য আরেক জন মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। অন্যথায় আপনি মৃত, মাটির সাথে মিশে যাওয়া লক্ষ-কোটি মৃত মানুষের মতই। কিন্তু কেউ যদি যোগাযোগ, অন্যকে বোঝা বা ভালোবাসার পথে কেবল প্রথম পদক্ষেপটি নিতে পারে এবং এ নিয়ে তার মধ্যে কোন ভ্রম না থাকে তাহলে এটাই তার জীবনের জন্য যথেষ্ট। কারণ ভবিষ্যৎ যত কঠিনই হোক না কেন সে বেঁচে থাকতে পারবে, ভালোবাসাই তাকে রক্ষা করবে। কিন্তু ভ্রমের মধ্যে বাস করলে পৃথিবী ভরা ভালোবাসাও তার কিছু করতে পারবে না। ভালোবাসাই তো সবচেয়ে বড় বিষয়, তাই না?

প্লেবয়: অনেক সমালোচক তো মনে করেন, আপনার সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা “ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিস” এও এই থিম কাজ করেছে, এতেও ভালোবাসার মাধ্যমে মুক্তির সন্ধান করা হয়েছে। এই সিনেমার বৃদ্ধ চিকিৎসক চরিত্রটি সম্পর্কে এক সমালোচক লিখেছেন, “সারা জীবন নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখার পর অবশেষে সে সহানুভূতির সন্ধান পায়, হৃদয়ের পরিবর্তনই তার মুক্তি এনে দেয়।” এই কথা কি ঠিক?

বারিমান: কিন্তু সে নিজেকে পরিবর্তন করে না, করতে পারেও না। এটাই ঠিক। আমি মনে করি, মানুষ চাইলেই নিজের পরিবর্তন করতে পারে না, মৌলিক পরিবর্তন আসলেই অসম্ভব। আপনিও কি তা মনে করেন না? তারা এক মুহূর্তের জন্য আলোর সন্ধান পেতে পারে, সেই সময়ে নিজেকে দেখতে পারে, সচেতন হতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তটাই সব, এর বেশি আশা করা যায় না। উইন্টার লাইট এ নারী চরিত্রটি শক্তিশালী, সে দেখতে পারে। সে নিজের সম্পর্কে সচেতন হয়েছে, কিন্তু তাই বলে তাদের জীবন পরিবর্তিত হয়ে যাবে না। তাদের জীবন ভয়াবহই থেকে যাবে। মুক্তির মুহূর্তটি আসার পর তাদের জীবনে কি হয়েছে তা নিয়ে সিনেমা করার কথা আমি ভাবতেও পারি না, কোনকিছুর বিনিময়েই না। আমাকে ছাড়াই এই চরিত্রগুলোকে বাকি জীবন পার করতে হবে।

প্লেবয়: উইন্টার লাইট এর মার্টা চরিত্র সম্পর্কে বলতে হয়- আপনি নারী প্রোটাগনিস্ট চরিত্রগুলো রূপায়নে অনেক গভীরতা ও সহানুভূতি দেখিয়েছেন, অনেকেই আপনার এই দিকটার প্রশংসা করেছে। এটা কিভাবে করেছেন?

বারিমান: আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করবেন আমি নারীদের কিভাবে এত ভাল বুঝেছি। অনেক আগে থেকেই “নারী” বিষয়টি নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল, সিনেমাতে তাদেরকে এত উদ্ভটভাবে দেখানো হয় বলেই আগ্রহী হয়েছিলাম। আমি এ অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছি। নারীরা যেমন ঠিক তেমনভাবেই তুলে ধরেছি, অন্তত ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে তাদেরকে যেমন অদ্ভুতভাবে দেখানো হয়েছে তার পরিবর্তন করেছি। বর্তমানে নারী চরিত্র রূপায়নে বাস্তবতার একটু কাছাকাছি থাকলেই তা পুরনো সিনেমার চেয়ে অনেক ভাল হয়ে যায়, আগের সিনেমাগুলোর অবস্থা এতই খারাপ ছিল। যাহোক, গত কয়েক বছরে আমি বুঝতে পারছি, মৌলিক দিক দিয়ে পুরুষ ও নারী একই, তাদের সবার সমস্যাই এক ধরণের। তাই আমার সিনেমায় এখন আর নারীদের গল্প বা নারীদের সমস্যা বলে কিছু নেই, পুরুষের গল্প বা পুরুষদের সমস্যার সাথে তা একাকার হয়ে গেছে। সবকিছু আমার কাছে এখন কেবলই মানবিক সমস্যা। মানুষই এখন আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

প্লেবয়: আপনার পরবর্তী সিনেমাতে কি কোনভাবে অধুনা সমাপ্ত এই ট্রিলজির ছাপ থাকবে?

বারিমান: না, আমার নতুন সিনেমাটা কমেডি, ইরটিক কমেডি, খানিকটা ভূতের গল্প। এটা আমার প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র এবং আপাতত কিছুদিনের জন্য এটাই আমার শেষ সিনেমা হতে যাচ্ছে।

প্লেবয়: সিনেমাটার নাম কী?

বারিমান: “অল দি উইমেন”। আমেরিকার দর্শকরা এটা পছন্দ করতে পারে। এর থিম সঙ্গীত হচ্ছে “ইয়েস, উই হ্যাভ নো ব্যানানাস”। এটা করে আমি বেশ আনন্দ পাচ্ছি। ইতিমধ্যে একজন সুয়েডীয় লেখককে বলে দিয়েছি যে, এই সিনেমার মাধ্যমে “Bergman Ballyhoo Era” শুরু হতে যাচ্ছে। ফাইনাল কাটিং শেষ করতে আর বেশি দিন বাকি নেই। আপনি তো জানেনই, আমি নিজের সিনেমাকে ইচ্ছেমত কাটছাট করতে ইতস্তত করি না। নিজের সিনেমাকে কাটছাট করার সাথে অনেক পরিচালকের যে ভালোবাসা-ঘৃণার সম্পর্ক থাকে তা আমার মধ্যে নেই। ডেভিড লিন একবার আমাকে বলেছিলেন, তিনি শ্যুটিং শেষে সিনেমা কাটছাট করাটা একেবারেই পছন্দ করেন না, এটা তাকে রীতিমত অসুস্থ করে ফেলে। সেদিক থেকে আমি পুরোপুরি মুক্ত।

প্লেবয়: একটু আগেই আপনি বললেন, আপাতত কিছুদিনের জন্য এটাই আপনার শেষ সিনেমা হতে যাচ্ছে। এই কিছুদিনটা কত দিন?

বারিমান: সম্ভবত দুই বছর। আমি এই রয়েল ড্রামাটিক থিয়েটারে পরিচালক হিসেবে পুরোদমে কাজ শুরু করতে চাই। বেশ কয়েকটি কারণে মঞ্চ আমাকে খুব আকর্ষণ করে: প্রথম কারণ এর চাহিদা সিনেমার চেয়ে অনেক কম। সিনেমার ফুটেজ তৈরির জন্য যে পরিমাণ যন্ত্রপাতি লাগে তার দয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়, আর মঞ্চে আপনি কখনোই নিঃসঙ্গ বোধ করবেন না। মঞ্চ মানেই অভিনেতা ও পরিচালকের মধ্যে সম্পর্ক, পরবর্তীতে দর্শক ও পরিচালকের সম্পর্ক। অভিনেতাদের তাৎক্ষণিক অভিব্যক্তিতে দর্শকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া- বিষয়টা খুবই চমৎকার। এটা খুব অকপট ও জীবন্ত। সিনেমা একবার করে ফেললে আর পরিবর্তনের উপায় নেই, কিন্তু নাটক প্রত্যেক বার মঞ্চস্থ করার সময় পরিবর্তনের উপায় আছে, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সাপেক্ষে এই পরিবর্তন আনা যায়। মঞ্চ মানেই সার্বক্ষণিক পরিবর্তন, এখানে উন্নতির দুয়ার সব সময়ের জন্য খোলা। মঞ্চ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারতাম বলে আমার মনে হয় না।

© Playboy


সূত্র: PLAYBOY INTERVIEW: INGMAR BERGMAN; A candid conversation with Sweden’s one-man new wave of cinematic sorcery
বি:দ্র: এই সাক্ষাৎকারের অধিকাংশ বঙ্গানুবাদ “চরাচর” পত্রিকার বিশেষ ইঙ্গমার বার্গম্যান সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৭ সালের অগাস্টে, বারিমানের মৃত্যুর পরপর। পত্রিকার বাংলা অনুবাদটি করেছিলেন “অয়ন আয়শ্‌”। তার অনুবাদ থেকে অনেক কিছু হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে। প্রায় অর্ধেক অংশ তাই অয়নের অনুবাদ থেকে নেয়া। তিনি যে অংশ অনুবাদ করেননি তা আমি নিজে করেছি। তার অনুবাদের বেশ কিছু বাক্য পরিবর্তন করেছি।

১৪ টি মন্তব্য : “ইঙ্গমার বারিমানের সাক্ষাৎকার: প্লেবয়”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    প্লেবয় ম্যাগাজিন যে এধরণের চমৎকার কাজও করে থাকে জেনে চমৎকৃত হলাম। :shy: আমি এককালে এই ম্যাগাজিন পড়তাম "ভোকাবুলারি" বাড়ানোর উদ্দেশ্যে।এদের আর্টিকেলগুলোতে যথেষ্ট উচ্চমানের শব্দ থাকে-"প্লেবয়" নাম শুনলেই সবাই যেটা মনে করে অমনটা নয় মোটেই।

    মুহম্মদ, আপাতত এইটুকু।জিন্স কিনতে যাচ্ছি-এসে আবার মন্তব্য করব।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      হ মাসরুফ ভাই, আমিও প্লেবয় এর এইরূপ আগে জানতাম না।
      কিন্তু এখন বুঝলাম, প্লেবয় আম্রিকার বেশ উঁচু মানের একটা ম্যাগাজিন। আম্রিকার "কসমোপলিটান" বা কলকাতার "সানন্দা" যেমন মেয়েদের ম্যাগাজিন হিসেবে অনেক নাম কুড়াইছে, ঠিক তেমরি প্লেবয় নাম কুড়াইছে ছেলেদের ম্যাগাজিন হিসেবে।
      ছেলেদের যৌন চাহিদার প্রতি তারা বেশি যত্নবান, কিন্তু শুধু যৌন না, সবগুলা চাহিদার দিকেই তাদের কমবেশি নজর আছে... 🙂

      জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      মাসরুফ যে কারণেই হোক পড়তি তো। অন্তত তোর এই সত্যিটা স্বীকার করার সৎসাহস দেখে মুগ্ধ হলাম।
      আর কি কি পড়তি?
      বাংলাদেশের কোনো লেখকের বই পড়তি না, ভোকাবুলারির জন্য???


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ইমার বারিমান ও যা আর ইঙ্গমার বার্গম্যান ও তাই। তবে প্রথমে একটু ধন্ধে পইড়া গেছিলাম।
    তা তুই argentina, barcelona, real madrid, uganda র কি উচ্চারন করিস?
    আচ্ছা লা ডলচে ভিটা নিয়া কি লিখে ফেলেছিস? না লিখলে লেখ।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।