দশ বছরের ক্যাডেট জীবনঃ বিদায়বেলার কথা

আইইউটি-তে ‘০৫ ব্যাচে আমরা মির্জাপুরের ৬ জন আছি। কলেজে ছয় বছর কাটিয়ে আসার পর কখনও ভাবিনি আবার একই প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবো। অন্তত আমি ভাবিনি। প্রথম আইইউটি-তে এসে যখন ইমন আর তুহিনকে দেখলাম তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিলো বলে বোঝাতে পারবো না। তিনজনে মিলে এক রুম নিয়ে নিলাম। পরে দেখলাম আমাদের কলেজের আরও তিনজন আছে: শামীম, জিহাদ আর মামুন। এ বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ ছিল না যে, সবাই মিলে আরেকটা ক্যাডেট জীবন শুরু করছি। আমরা একসাথে ৬ বছর না ১০ বছর কাটাচ্ছি; ৬ বছর ক্যাডেট হিসেবে আর ৪ বছর সেই ক্যাডেট জীবনের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে।

একে একে সব সিনিয়রের সাথে পরিচয় হলো। আমাদের ইমেডিয়েট সিনিয়র ব্যাচেই মির্জাপুরের ৫ জন ছিলেন। দুই ব্যাচ সিনিয়র ব্যাচে ছিলেন আরও ৭ জন। তিন ব্যাচ সিনিয়র ব্যাচে ছিলেন তৌফিক ভাই, আশিক ভাইরা। একে একে সবাই চলে গেলেন। মাথার উপর এখন কেবল একটা ব্যাচ। ইমেডিয়েট ব্যাচের পাঁচ জন। বিদায় বেলায় কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এমনিতেই আমাদের ব্যাচের ৬ জন আছি, ইমেডিয়েট জুনিয়র ব্যাচে ২ জন আছে, আর দুই ব্যাচ জুনিয়র ব্যাচে প্রায় ৮ জন আছে। লোকবল কম না। অবশ্য সিনিয়র মির্জাপুরিয়ানদের ফেয়ারওয়েল দেয়ার চিন্তাটা আমরা ধার করেছি বলা যেতে পারে, আইইউটি-তে রংপুরিয়ানরা অনেক আগে থেকেই প্রতি বছর বিদায়ী ব্যাচকে ফেয়ারওয়েল দিয়ে আসছে। এবার আমরাও শুরু করলাম। নতুন একটা ট্রেডিশন শুরু হলো: আইইউটিতে একটা বিশুদ্ধ মির্জাপুরীয় ট্রেডিশন।

বিদায়বেলার কাহিনী কিছুই লিখতে পারছি না। যাই লিখি মনে হচ্ছে, ঠিকমতো ফুটিয়ে তুলতে পারলাম না। আমার বিশ্বাস, সিনিয়র ভাইদের বিদায় দিতে কেমন লাগে সেটা সবাই খুব ভালো করে জানেন। ধরে নেন, সেই ইলেভেনের অনুভূতিটাই আমরা নতুন করে সিম্যুলেট করার চেষ্টা করেছি। সিম্যুলেশন কিন্তু, ইলেভেনে বড় ভাইদের বিদায় দেয়ার অনুভূতি হুবহু নকল করার দুঃসাহস করি না।
কিছু লিখতে পারলাম না। ছবি দিয়ে দিলাম কয়েকটা। জানি এতেও কিছু ফুটে উঠবে না। তাও দেই, কিছুটা শেয়ার করি:

cake

৩৬তম ব্যাচের বিদায় উপলক্ষ্যে কেক। কেক দেখলেই কি বাড্ডে মনে হয়। তাইলে সরি 😛

cake kata

কেক কাটছেন ইমেডিয়েটরাই। বাম থেকে যথাক্রমে: মারুফ ভাই, রেজওয়ানুর ভাই, হানিফ ভাই, ওয়ালিউল্লাহ ভাই ও সানিয়াত ভাই। কাটার সময় কিন্তু সবাই মিলে বাড্ডের গানই গাইতেছিলাম: হেপি বাড্ড…..

khaoa daoa

খাওউয়া দাওউয়া চলছে। তবে সবাই মনে হয় শেষ মুহূর্তটার কথা ভাবতেছে, মনে মনে…. ওয়ালি ভাইয়ের মুখটা দেখেন..

khaoa daoa shesh

খাওয়া দাওয়া শেষে কেক, আইসক্রিম আর চকলেটের ফাঁকেও কষ্ট লুকিয়ে ছিলো। তবে হাসি দিয়ে আমরা সবাই তা ঢেকে রাখার চেষ্টা করি।

rich man

কিছু একটা দিলাম। সেই কলেজের ট্রেডিশনের মতোই। স্যুভেনির মাত্র।

all mirazpurian iutians

রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে সবাই একসাথে হলাম, একটি ছবিতে। এখানে যারা আছে তাদের একেকজন হয়তো একেক প্রান্তে থাকবে, কিন্তু ছবিটা তাদের চিরকালই এক করে রাখবে.. সিসিবি-তে।

৩২ টি মন্তব্য : “দশ বছরের ক্যাডেট জীবনঃ বিদায়বেলার কথা”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)

    ভাল কথা বলছিস ... ক্যাডেট লাইফ আসলে ছয় বছর না। ক্যাডেট লাইফ শুরু হয়, শেষ হয় না।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. বাহলুল (৯৩-৯৯)

    আমরা আই,ইউ,টি তে ৪ বছর রংপুর ক্যাডেট কলেজের ৪ জন নর্থ হলের ২২৭ নাম্বার রুমে ছিলাম। ৪ জনই আবার ক্যাডেট কলেজের একই হাউজের (তিতুমীর হাউজ) ছিলাম। আই,ইউ,টি লাইফ পুরা ক্যাডেট কলেজের মত কাটছে।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমরাও রুমে সব ক্যাডেট। তিন জন আমাদের কলেজের আর একজন এফসিসির। অন্য কলেজের সব পোলাপান আশেপাশেই আছে। মেকানিক্যালের জিহাদ আর শামীম পাশের ব্লকেই। ক্যাডেট সার্কেলটা সবসময়ই জমজমাট থাকে। নন-ক্যাডেট পোলাপানরাও মৌজ-মাস্তির জন্য এই দিকেই আসে।

      জবাব দিন
  3. তাইফুর (৯২-৯৮)

    কেকের উপর লিখছে কে রে ?? হাতের লিখা এতো খারাপ। গ্র্যাজুয়েশন এর 'ডি' তে আবার মুছামুছি করছে।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    ক্যাডেট ক্যাডেট ছাড়া থাকতে পারে না । এমনকি বুয়েটেও আমার বন্ধু বান্ধবের মাঝে বেশিরভাগ ক্যাডেটই ছিল। এখনও আমি দেখি ক্যাডেট ছাড়া স্পেশাল বন্ধু খুব কম ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।