মৃত এক ভায়ের চিঠি

মৃত এক ভায়ের চিঠি

(বোনদের কাছে লেখা একজন অকম্যর্ খেয়ালি ভায়ের চিঠি)
মোহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ ।

এমনই জনম পোড়া কপাল জীবন নিয়ে আমার
তোমাদের সাথে বসবাস ভালবাসা হল না আর
তাই হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম , থাকবো না
এই ঘরে বসবো না চেয়ারে, সিঁড়ি বেয়ে হাঁটবো না
যেন আর কোনদিন দেখা না হয় তোদের সাথে।
কত কথা কত জন কত রাগ আমাকে নিয়ে
আমি নছ্ছার বেয়ারা বাঁদর অসভ্য কোথাকার
জানি কত যে দোষ ছিল আমার হাজার হাজার।

জন্মের পর উঠেছি তোর কোলে, কতনা কষ্ট
করেছিস আমাকে নিয়ে। কাখে দাগ পরে আছে
আজো,আমি তবু বুঝি নে বুবু তোর কষ্ট টুকু।
ক্ষমা করে দিস, কতনা আদর ছিল এক দিন,
সব গেল ধুয়ে জলে আমার ভুলে আমিই বুঝিনি,
হাতের পরাটা ভাজি কপালে জোটেনা আজি
মুখটাও আমার করে না ইচ্ছে দেখতে তোর,
মাফ করে দিস সকল দোষ যা ছিল শুধুই মোর ।

কত গালাগালি খিস্তি খেউর কারন অকারণে
সময় অসময় যখন তখন ,ছিলাম কান্ডজ্ঞানহীন
বুদ্ধি বিধাতা দেয়নি এতটুকু তাই শুনিনি বারন।
তোর নামে কত কটু কথা বলেছি হেথা হোথা
ভাবিনি কভু তোরা কত ভালবেসেছিস সদা
শত উপদেশ, বুদ্ধি বালাই হীন আমি হাদাভোদা।
বুঝিনি কে আপন পর, বন্ধু সবার ভেবে হয়েছ ভুল
করেছে তাই আনন্দ আহ্লাদ মোকে ঠকিয়ে সবাই।

পালালে খুঁজেছিস এ পাড়া ও পাড়া হন্যে হয়ে
ফিরেছিস ঘরে ক্লান্ত শ্রান্ত , আমার কান ধরে
ভাবিনি কভু কারো বাসলে ভাল হয়ে যাব কালো
দিনে দিনে ডুবে যাব অন্ধকারের গহীন তলে,
বিয়ে নিয়ে জঞ্জাল ছিটকে দিল যে জীবন আবার
যেতে যেতে দুর সরে গেছি বহুদূর আপন হতে।
নিজের কমর্ে গড়া অস্থির ধরা তুলে দিল অন্তিম রথে
মাফ করে দিস সকলে তোরা চললাম না ফেরা পথে।

কত যে গল্প আমার সিরিয়াল নাটকের মত,
সত্য মিথ্যা গুজব মিলে সকলেরই করেছি বিব্রত,
যারে তারে দিয়েছি গাল যখন তখন, রেগেছি যখন।
বলিনি কি ? সালা শুয়োর বুঝিনি আপন পর ।
আমি ও তো শুনেছি গাল ভৎসর্না অনেক কটু কথা
আমার ও তো ছিল মন,আঘাতে অন্তরে পেয়েছি ব্যাথা
কে মোরে করেছে ক্ষমা? দিয়েছে ও মার বন্ধু লোক
তবু বলি, আমি আজ যাচ্ছি চলে তাহাদের জয় হোক ।

বোনরে আমার ! ছিলি তো আপন মায়ের মত
পর করে দিলি সবাই ,অস্থির করে দিল বেদনা যত,
জানিনা আমারে কেউ কি করেছিল কোন তুঁক তাক
আমার সমস্ত তলিয়ে গেল জীবন শুভংকর ফাঁক ।
স্বাথর্পরতা ডামাডোল, বাজাল যে যার নিজের ঢোল
আমি এক হলেম ঢুলি, চিন্তা করিনি মাথা খুলি
বাবার বেকার ছেলে অকম্যর্ কোথা টাকা মেলে
কি করে খাব মেতেছি তাইতো হাজার কোন্দলে।

চলে যাব তাই ভাবিনি কিছু সংসার জগত ঘিরে
খোদার ও বিচার সন্তান একটি ও আসেনি ঘরে,
ভাবিনি বড় হতে হবে চড়তে হবে কলের গাড়ী
যাইনি কখনো তাই এই ঘর বাড়ী তোদের ছাড়ি
যারা গেছে তারা আজ বড়,আছে টাকার ছড়া ছড়ি
সন্তান নিয়ে সুখের বসত নিজেরা গড়েছে বাড়ী,
নাই কোন আয় শুধু বসে খাই আমি তো আমডা ঢেকি
বউয়ের বকুনি গাল অষ্ট প্রহর করল মাতাল নাকি?

ঘর নাই, পর নাই , নাই আজ নাই কোন আপনজন
দিনে দিনে মোর অপরাধে সরে গেছে বন্ধু সুজন,
ভাই বোন দুরে,কাছে কেউ ডাকে না আমারি দোষে
বেয়ারা মূখর্ গোয়ার , ছোট বড় সব ফুশেছে রোষে।
এত অপরাধ এত অন্যায় এত সব কিতর্ী করে,
কি করে বল তোমাদের বোঝাই কি আমার অন্তরে?
তাই চলে যাই চুপচাপ এবার কাউকে না ডেকে
জানিনা এতটুকু মমতা এখনো আছে কি কারো বুকে?

আর আমি থাকবো না কাজে বলব না কথা বাজে
গেলাম চিরতরে, আর ফিরে আসব না তোদের মাঝে,
রাতে বিরাতে যাবো না কারো ঘরে করবো না উৎপাত
তোরা কেউ আর শুনবি না কথা কাটবে নিশ্চুপ রাত।
পানির কল ছাড়া, দরজা বন্ধ খোলা, গেটের তালা
আমিই করতাম সব, ভাবতাম চলবে না আমারে ছাড়া
জানি সব ভুল, ভুলে ভরা ভুল করা আমার জীবন
শুধাই তোদের আমারে ছাড়া তোরা আছিস কেমন?

হাজার বকলেও দেখিস মুখে মুখে আর কথা বলবো না
ঘুম ভেঙে জাগবো না আর, তোদের দুয়ারে যাবোনা,
জানি নিত্য সমস্ত কাজ চলবে সব স্বাভাবিক অনুষ্ঠান
ঈদ রোজা মৃত্যুবাষর্িকী জন্মদিন চিরায়ত সকল বিধান
শুধু দেখবি সব আছে হাসিখুশী শুধু একা আমি নেই
শুয়ে আমি মাটির তলে পৃথিবী তেমনি চলে,ছিল যেই।

চাইনা কিছু জমি জমা টাকা সমস্ত ধুলায় মিশে যাক
শুধু বলি যেন আমার জন্য তোদের ক্ষমাটুকু থাক।

মনিপুরীপাড়া, ঢাকা
৯/১১/২০১৫,

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।