একটি খাকির আত্মকাহিনী

ক্যাডেট লাইফের খুব প্রিয় একজন বন্ধুকে নিয়ে লিখলাম । জানি না কেমন হয়েছে। তবে এত বড় লেখার প্রচেষ্টা এটাই প্রথম। আশা করি ভুল ত্রুটী গুলো শুধ্রে দিবেন।


আমি খাকী।খাকী বলতে শুধু খাকী রং বুঝবেন না।খাকী শার্ট ও প্যান্ট। লোকে আমাকে আদর করে ছোট্ট নাম খাকী বলে ডাকে। লোক বললে ভুল হবে।যাদের সাথে আমার আনাগোনা তারা অন্য এক জাতি।ক্যাডেট জাতি।আমার জন্ম কোন হাইফাই টেইলার শপে নয়।ছোট্ট একটা ঘরে অনেক সহোদর ভাইয়ের সাথে অনেকটা তাড়াহুড়া মুডে আমাকে বানাতে দেখেছি। আমাকে বানানোর পর যখন আবারো খাকি বানানোর প্রয়োজন পরল তখনকার পরিস্থিতি দেখে আমার জন্মের পূর্ব অবস্থা কল্পনা করতে পারি।ঘটনা অনেকটা এই রকম।যাদের কে আমাকে দেয়া হবে তাদের দুপুরে বাইরে নিয়ে এসে লাইন করে দাড় করান হল। তারপর একে একে মাপ নেয়া হল।মাপ নিতে অত যত্ন আত্নি নাই। একটা খাতায় কি সব নাম্বার লিখে তারপাশে একে একে সব মাপ গুলো লিখল। যা হোক জন্মের পর একটু আফসোস ই হত।বড় বড় টেইলার শপ গুলোরে জামা বানানোর পর কত্ত সুন্দর করে ঝুলিয়ে রাখে। আমার ভাগ্যে অত কিছু জোটেনি।বানানোর পর কি একটা নাম্বার ওয়ালা কাগজ উপরে লাগিয়ে দিয়ে অন্য সব ভাইদের সাথে একসাথে বেধে এক কোনায় ফেলে রাখা হল। আর আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম আমার মুক্তির।বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। একদিন দেখলাম সাদা পোশাকের একজন লোক এসে আমাকে সাইকেলে বেধে নিয়ে গেল।তারপর রাখল আর একটা ছোট ঘরে। ঘরটা আগের মত না।সেখানে একটা খাট আছে।এক কোনায় দেখলাম অনেক গুলো ব্যাগ স্তুপ আকারে রাখা।কোথায় আছি আমার কোন ধারনা ছিল না। পরে শুনি ওই লোকটা যে আমাকে এনেছিল সে একজন হাউসবেয়ারা।আর ওটা তার রুম।নতুন জায়গায় কয়েক ঘন্টার মত কেটে গেল।হটাৎ কিছু দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনলাম।ক্রমেইতা বাড়তে থাকল।তারপর দৌড়ানোর থেমে গিয়ে একসাথে অনেকজনের কথা বলার শব্দ শুনতে পেলাম।সাথে চিল্লানি। SHUT UP… BAND START.. GIVE FROG JUMP…. COME HERE… GET OUTSIDE….BLOODY CHAP…… আর ও অনেক কিছুই বলতেছিল। কিন্তু বুঝতে পারলাম না।একটু পর দেখলাম সাদা পোশাকের সেই লোক মানে হাউস বেয়ারা আমার মত খাকী পড়া একজনের সাথে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকল।কিছুক্ষন কথা বলে ছেলেটা চিল্লায়া বলল “পোলাপান নতুন খাকি দিছে…….. নিয়া যা।” সবাই মনে হয় রুমের বাইরেই ছিল,ডাকার সাথে সাথে কয়েকজন এসে ঘাটাঘাটি শুরু করল।ওরা সম্ভবত নির্দিষ্ট নাম্বারের খাকি খুজতেছিল।
– এই আমার টা দেখত।।
– আমারটা নিয়ে আসিস।।
-ইয়েস!! পাইছি।।।
বাইরে থেকেও অনেকের গলা শুনতে ছিলাম।আমার উপরের নাম্বারছিল ১৫৭৫।অনেকে নেড়েচেড়ে দেখল কিন্তু কেউ নিল না। ছেলেটা সম্ভবত অলস টাইপ। ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন বলল ….
– ওই রেদোয়ানের টা দে তো।। হালায় যে কই ভাগছে???
একজন আমাকে নিয়ে গেল।তারপর ছুড়ে মারল একটা বেডের উপর। সেখানেই অনেক্ষন পড়ে থাকলাম।রুমের অন্যরা তাদের নতুন খাকি পরে দেখছিল। একটু পর রেদোয়ান যার জন্য আমকে বানানো হয়েছে সে রুমে আসল।
-কিরে নতুন খাকি দিছে নাকি??(নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল)
– হুম। দিল। পড়ে দেখ সব ঠিক আছে কিনা।।
রেদোয়ান আমার ভাজ খুলে পরল।
– প্যান্ট ঠিক আছে রে।। কিন্তু শার্ট টা মনে হয় একটু বেশিই লম্বা হইছে।
– আরে ব্যাপার না।( ওর রুমমেট বলল)
আসলেই।। রেদোয়ানের হাইটের তুলনায় আমি একটু বেশিই লম্বা ছিলাম। অতঃপর রেদোয়ান সেই অবস্থা তেই ঘুমিয়ে পরল।প্রায় এক ঘন্টা পর একটা বেলের আওয়াজে ওর ঘুম ভাঙল।ওর রুমমেট চেঁচিয়ে বলতে লাগল
– ওই হালা।।। লাস্ট বেল দিছে…… ওঠ।।।
– যা । আসতেছি।।
রেদোয়ান ঘুম থেকে উঠে কোন রকমে আমাকে খুলে একটা হাফ প্যান্ট আর হাফ শার্ট পরে টলতে টলতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।আমাকে ফেলে রাখল বিছানার এক কোনায়। রুমের অন্যরা তাদের খাকি গুলো কি সুন্দর হ্যাঙ্গারে ঝুলায় রাখছে।আমার দেখে খুব মনটা খারাপ হয়ে গেল।এভাবেই প্রায় দেড় ঘন্টার মত কেটে গেল। দেখলাম রেদোয়ান হাপাতে হাপাতে রুমে ঢুকল। সারা গা ঘামা। শার্ট এর বোতাম খুলে ফ্যানের নিচে বসে পড়ল।বাইরে অন্য সবার চিল্লাচিল্লি শুনতে ছিলাম। গোছল করার জন্য তাড়াহুড়া। কিন্তু রেদোয়ানের ভেতর কোন তাড়াহুড়া দেখলাম না। আর একজন বাইরে থেকে ওকে ডাকল।রেদোয়ান টাওয়াল কাধে ঝুলায়া হেলতে দুলতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।প্রায় পনের মিনিট পর ফিরল ভেজা গায়ে, টাওয়াল পড়ে। এদিকে বাইরে সবাই ততক্ষণে চিল্লাচ্ছিল ” বয়েস তাড়াতাড়ি আয়।। ডিউটি মাস্টার ঢুকে গেল। রেদোয়ান তাড়াতাড়ি করে কোন রকমে পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরে দৌড় দিল।ঘরটা আবার ফাকা হয়ে গেল।এতক্ষনে এদের সম্পর্কে বেশ কিছু জেনে গেছি। এরা ক্যাডেট। বাবা মা কে ছেড়ে এখানে আসছে পড়াশুনা করতে।তিন টা হাউসে এরা থাকে। আমি যেটাতে আছি সেটা ভাসানি হাউস।এরা ক্লাশ টুয়েলভ। এখানে এরাই সব চেয়ে সিনিয়র। যা হোক এর বেড আর টেবিলের এ পাশে যে অবস্থা তাতে কেউ সুস্থ ভাবে থাকতে পারে কিনা আমার সন্দেহ আছে। প্রায় ৪৫ মিনিট পর সবাই ফিরল।রেদোয়ান ও।দেখলাম সবাই পাঞ্জাবী খুলে ফুল শার্ট পরতেছে। রেদোয়ান পাঞ্জাবি খুলে খালি গায়ে বের হয়ে গেল। বাইরে ওরে চিল্লায়া গান গাইতে শুনলাম। রুমের অন্য দুইজন ড্রেস চেঞ্জ করছিল। এই দুই জনের নাম ও জেনে গেছি। জুহায়ের আর মাহমুদ।
–মাহমুদ তোর বইটা পড়া শেষ হইছে??
– আর একটু বাকি আছে। নাইট প্রেপে নিস।
-রেদোয়ান হালায় কই গেল??
-আল্লাই জানে।
বলতে বলতেই রেদোয়ানের আগমন।
– কিরে প্রেপে যাবি না!! তাড়াতাড়ি কর।
– তাই তো।।।
আবার বের হয়ে গেল।
– হালায় যে কি করে!!! ঠিক ঠিকানা নাই।
বাইরে থেকে কে জানি চিল্লায় বলে ওই পোলাপান এডজুট্যান্ট আইছে।।। তাড়াতাড়ি কর।
মুহুর্তে সব দেখি দৌড়াদৌড়ি লাগায় দেয়।রেদোয়ান রুমে ঢুকে কাভার্ড হাতাতে থাকে।
– ওই আমার শার্ট কই??
আবার দৌড় লাগায়।বাইর থেকে একটা শার্ট পরতে পরতে ঢোকে। তারপর কোন রকমে প্যান্ট পরে মুজা ছাড়াই জুতার ভেতর পা টা ঢুকায় দিয়ে ডৌড় দিতে যাবে এই সময় চিল্লায়া বলে ওই আমার টাই কই???? ওই ইশরাক টাই দে,, ওই সিফাত টাই দে…………….রুমের লাইট টা অফ করে দিয়ে চলে যায়।। আমি আবার একা। জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম বাইরে সব দৌড়াচ্ছে। । কেউ আবার বসে বসে লাফায়া লাফায়াও যাচ্ছে।। আজব দুনিয়া।।।।


প্রায় চার ঘন্টা পর রেদোয়ান রে রুমে ঢুকতে দেখলাম।এবার সবার আগেই আসছে।হাতের দুইটা বই বেডের উপর ছুড়ে মেরেই আবার দৌড় দিয়ে রুমের বাইরে চলে গেল। একটুপর মাহমুদও রুমে এসে একই কাজ করল । জুহায়ের ওই কাজ করল না । দেখলাম জুতা মোজা খুলে হাতের বইটা নিয়ে শুয়ে পড়ল । গল্পের বই । মনে হয় হুমায়ন আহমেদের কোন উপন্যাস । বাইরে থেকে একজনকে চিল্লাতে শুনলাম ‘ওই শরীফ ভাই রিমোট কই?’ ‘শরীফ ভাই তাড়াতাড়ি আসেন ।‘
বাইরে অনেকগুলো দৌড়াদৌড়ির শব্দ । একটুপর বিকট শব্দে হিন্দী গান বাজতে লাগল । জুহায়ের বেশ মন দিয়ে বই পড়ছিল । এর মাঝে পাঞ্জাবী পায়জামা পরা একটা ছেলে এসে বলল জুহায়ের দোস্ত নামাজ শুরু হবে । তাড়াতাড়ি আয় । জুহায়ের হালকা একটা হাসি দিয়ে বলল “যা আসতেছি।” তারপর পাশ ফিরে আবার বই পড়তে লাগল । বাইরে হিন্দী গান একটার পর একটা বেজেই যাচ্ছে । এরই মাঝে ঘন্টা বেজে উঠল । গান থেমে গেল । আর কিছু চিল্লানি শুনতে পেলাম everybody switch off your light একটুপর আমাদের রুমের লাইটও বন্ধ করে দিল জুহায়ের । রুমে রেদোয়ান , মাহমুদ আরো কয়েকজন ঢুকল । আবছা আলো ছিল তবে কাউকে দেখা যাচ্ছিল না । একজন বলে উঠল ,
– কিরে আজ খেলবি না?
– খেলব তো । আর কে খেলবে ?
– ক্যান? তুই, আমি, জুহায়ের আর সিফাত ।
– তাহলে তো হয়েই গেল । স্যার যাক ।
এরমধ্যে মাহমুদ বলে উঠল ,
– খেল আর যাই কর , বেশি প্যাঁচাল পারবি না । আমি ঘুমাব ।
– ওকে যাহ!!! তোর কানে তুলা লাগায় দিবনি ।
সবাই হেসে উঠল ।
– যা হোক । কাল তো শুক্রবার । অপশনালে কি খেলবি ?
– ক্রিকেট ।
– আমি ঘুমাব ।
– ঘুমা । ইশরাক , মোহাম্মদকে বলে আয় টীম ঠিক করে রাখতে ।
– যাচ্ছি । তুই খালি তিতুমীরে সাজ্জাদকে একবার বলে দে ব্লক থেকে ।
দুজন রুম থেকে বের হয়ে গেল । একজন রেদোয়ান । আর একজন তাহলে ইশরাক । আবছা আলোয় চেহারাটা দেখে নিলাম । এদের সাথে যতই সময় কাটাচ্ছি ততই কৌতুহল বাড়ছে । কি আজিব জিনিস রে বাবা এরা ।
– ওই মাহমুদ দেখত স্যার গেছে নাকি?
– এত তাড়াতাড়ি??
– আরে স্যারে যায় না ক্যান হাউস থেকে?? স্যারের বাড়িঘর নাই? পিনিক উঠছে ।
– রেদোয়ানের সাথেই তো যাবি । ওই আসুক ।
এরমধ্যে রেদোয়ান এসে পড়ল রুমে । বেশ তাড়াহুড়া ভাব ।
– স্যার গেছে । লাইট জ্বালা । পর্দা টানা ।
– লাইটার আর বিড়ি নে । আগে খায়া আসি ।
– চল ।
কাভার্ডের নীচ থেকে কি যেন নিয়ে রেদোয়ান আর জুহায়ের বের হয়ে গেল । এতক্ষণে যা বুঝলাম এখানে এরা খালি লুকোচুরি খেলা খেলে । যেগুলো করতে নিষেধ আছে সেগুলো আরো বেশি বেশি করে । আমার মজাই লাগতে লাগল এদের দেখে ।
কিছুক্ষণপর দুজন রুমে ঢুকল । একজন কে চিনতে পারলাম । ইশরাক । অন্যজন বলল ,
– কিরে রেদোয়ান আর জুহায়ের কই ?
– টানতে গেছে ।
– পর্দা লাগায়নি ক্যান এখনও ?? খেলব না!!
– নিজ দায়িত্বে লাগায় নে ।
সেই দুপুর থেকে এই একই জায়গায় পড়ে আছি । জায়গার সামান্য পরিবর্তন হয়নি । অবশেষে হল ।যে ছেলে টা রেদোয়ান আর জুহায়েরের খোঁজ করছিল সে আমাকে বেড থেকে তুলে টেবিলের উপর রাখল । এবং সাথে সাথে আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আগের জায়গাতেই ভাল ছিলাম । এইটা পড়ার টেবিল!! পেঁয়াজের খোসা, শুকিয়ে যাওয়া মরিচ, পেপারের ছেঁড়া অংশ , হেড ছাড়া কলম, ভাঙ্গা কম্পাস , কাপড়-চোপড় কি নাই!! কথায় বলে না যায় দিন ভাল আসে দিন খারাপ ।
ইশরাককে দেখলাম রেদোয়ানের বেডের পাশে ঘাটাঘাটি করতে ।
– হালায় পর্দা কই রাখছে?
– এরমধ্যে রেদোয়ান আর জুহায়ের এসে পড়ে ।
– কি খুঁজিস ?
– পর্দা লাগাবি না? কই ?
– থাম ।
রেদোয়ান কাভার্ডের ভেতর থেকে সাদা বেড শীট বের করে লাগায় দিল জানালায় ।
– চল শুরু করি । দরজা লাগা ।
আমি ঠিক বুঝতেছিলাম না ওরা কি খেলবে এই রাতে? শেষ পর্যন্ত দেখলাম কাভার্ডের চিপা থেকে এক প্যাকেট কার্ড বের করে খেলা শুরু করল ।
– ১৬
– আছি ।
– ১৭
– আছি ।
– ১৮
– নে । ডাবল ।
– ডাবল দিয়ে দিলি!! আচ্ছা ব্যাপার না ।
রাত আরো গভীর হয় । এরা আর থামে না । খেলতেই থাকে , খেলতেই থাকে ।


সেই যে টেবিলের উপর রাখা হয়েছিল, তারপর থেকে ওখানেই আছি। সেদিন পাঞ্জাবি পড়া ছেলেটা জুহায়ের কে নামাজে ডাকতে এসেছিল। ওই এসে বলল,
– রেদোয়ান, জুহায়ের, মাহমুদ কাল তো প্রিন্সিপাল প্যারেড জানিস তো। নতুন খাকি পরিস। আর জুতা বের করে রাখ। রাতে জুনিয়র ডেকে পালিশ অরায় নেবো।
কোন কিছু না শুনেই পাশের রুমে চলে গেল। ওর নাম মোহাম্মদ। হাউস লিডার।
– কাল প্যারেড কখন রে মাহমুদ?
– ওই ৬ টার দিকে মনে হয়।
– ধুর!! দিন টাই নষ্ট।
রেদোয়ান বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে গেল। তারপর একটা চিল্লানি শুনলাম, “বয়েস ব্লক ক্রিকেট খেলবি কে কে তাড়াতাড়ি আয়।“

মাহমুদ অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠছে। ছেলেটাকে যত্ন করে নতুন খাকি টা পড়তে দেখলাম। অনেকক্ষণ ধরে ও রেদোয়ান আর জুহায়ের কে ডাক দিল। কিন্তু কেউ ওঠে না। এদিকে সর্বশেষ ঘন্টা টাও দিয়ে দিল। জুনিয়র দের দৌড়ের শব্দ পেলাম। এবার রেদোয়ান উঠল। জুহায়ের ও। তাড়াহুড়া করে ব্রাশ করে আমাকে পড়ে নিল। সমস্যাটা হল বেল্ট পড়তে গিয়ে। রেদোয়ান বেল্ট খুজে পাচ্ছে না।
– জুহায়ের আমার বেল্ট দেখছিস?
– আমি ক্যামনে দেখমু? দেখ প্রিতমের কাছে মনে হয় এক্সট্রা আছে। জুতা মোজা পড়ে রেদোয়ান দৌড় দিল।
আমারো রুমের বাইরে আসা হল।
– প্রিতম? প্রিতম? ফরহাদ প্রিতম কই?
– চলে গেছে
– ওর কাভার্ড তালা মারা ক্যা? বেল্ট পাচ্ছি না। বেল্ট লাগবে।
– নাই তো আমার।
– এখন কি করি।
– যা শাকিলের কাছে আছে দেখ।
– আরে ওরা প্রিফেক্ট না। ওরাতো আগেই চলে গেছে।
– তাইলে আর কি। চল যাই। আজকে বেল্ট ছাড়াই প্যারেড কর।
রেদোয়ান বেল্ট ছাড়াই রওনা হল প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে।
গ্রাউন্ডের কাছে গিয়ে এককোনায় দাঁড়ায় থাকা জুনিয়র ডাকল।
– ওই জুনিয়র এদিকে আস।
– জ্বী ভাইয়া।
– তুমি সিক না?
– জ্বী ভাইয়া।
– বেল্ট খোল।(জুনিয়র বেল্ট খুলে রেদোয়ানের হাতে দিল।)
– যাও এবার হসপিটালে যেয়ে বসে থাক।
রেদোয়ান বেল্টটা পড়ে একটা আত্মতৃপ্তির হাসি দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে এগিয়ে গেল। স্টাফ বাঁশি বাজায় যাচ্ছে।
– এই তাড়াতাড়ি আসেন। পিছের পার্টি ডাবল আপ।


ভোর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। পিটি, প্যারেড কিছু ছিল না। তাই রেদোয়ানের ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি। মাহমুদ অনেকটা ক্ষ্যাপা কন্ঠেই বলল-
– রেদোয়ান, ব্রেকফাস্টের আর ৫ মিনিট আছে। আমি গেলাম। ওঠ। এবার রেদোয়ানের ঘুম ভাঙ্গল। কোন রকমে ব্রাশ করে, ড্রেস আপ করেই দৌড়। ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাইনিং হলের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। পিছে তাকায় দেখে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে সিফাত, সালেহ আরও কয়েকজন। সবাইকে অনেক খুশিই মনে হল। সালেহকে দেখলাম ওয়াশরুমে ঢুকে মুখ ধুতে। সবার একসাথে চিল্লানি শুরু হল।
– ওই শামীম ভাই!!! গেট খোলেন!!
একটু পর সাদা পোশাক পরা একজন লোক এসে গেট খুলে দিল। আকটা কাগজে নাম লিখে নিয়ে তারপর ঢুকতে দিল।
এটা ডাইনিং হল। ক্যাডেটরা এখানে খাবার খায়। অনেক বড় একটা জায়গা। দুই প্রান্তে দুইটা হাই টেবিল আছে যেখানে প্রিফেক্টরা মানে লিডাররা আর কর্তব্যরত শিক্ষক খায়। আর সাধারণ ক্যাডেটদের জন্য আলাদা টেবিল। তিনটা সারিতে সাজানো। হাউজ অনুযায়ী তিনটা সারি। তবে মাঝখানে বেশ খানিকটা ফাকা জায়গা আছে। রেদোয়ান ডান দিকের সারির একটা টেবিলের এক মাথায় বসল। ঠিক সামনে বসে আছে ইশরাক। বলল,
– কিরে টেবিল লিডার। আসলি তাহলে। ভাবছিলাম তোর পরাটা মেরে দিব।
– কি যে বলিস। তোদের ছাড়া আমি থাকতে পারি?
পাশ থেকে একটা জুনিয়র তার সামনের জনকে ইঙ্গিত করে বলল,
– রেদোয়ান ভাই…বার্সা কাল রাতে যা খেলল না। ভয় পাইছিলাম।
রেদোয়ানের মুখ দেখি হাসিতে ভরে উঠল। ওই পাশ থেকে ইশরাক বলল,
– আর বলিস না ফুয়াদ। মেসি যে খেলা খেলতেছিল!!! ভাবলাম কয়টা খাই আজ।
ফুয়াদের সামনের জন এবার ক্ষেপে উঠল,
– ভাই, আপনাদের রিয়াল কত ভাল খেলছে দেখছি। ফুটবল খেলতে নামছিল নাকি কুস্তি?
রেদোয়ান ভ্রুক্ষেপ না করে বলল,
– তাও তো রোনালদো খেলেই নাই। দেখতো বার্ত্রা কি এখনো দৌড়াচ্ছে?
রেদোয়ান, ফুয়াদ আর ইশরাক একসাথে হেসে উঠল। এবার ইশরাকের ডান পাশের জন, নাম ইব্রাহীম বলে উঠল,
– ভাই এক ম্যাচ জিতেই এত লাফালাফি। কয়েকদিন আগেই যে ৫ টা খাইলেন…ভুলে গেছেন??
– হ্যাহ!! আইছে। কয়টা কাপ জিতছস তোরা। রিয়ালের আশেপাশেও তো নাই।
এবার ইশরাকের বাম পাশের জুনিয়র রুবায়েদ বলে উঠল,
– এত ফালাফালি করার কিছু নাই। সিজন শেষ হতে এখনো অনেক দেরি। দেখা যাবে কাপ কে জেতে!!
বেল দিল। খাওয়া শেষ। সবাই উঠে চলে গেল।


এই মুহূর্তে রেদোয়ান ক্লাশ রুমে বসে আছে। ঠিক বসে না। ডেস্কে উপর হাত দুটো রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। যে ম্যাডাম টা ক্লাশ নিচ্ছিলেন তিনি দাড়া করিয়েছেন। রেদোয়ান আশেপাশের কিছু বুঝতেছে না। শুধু চোখ ঘষতেছে মাঝে মাঝে।
– কি রে!!! ঘুমাচ্ছিস কেনো?? আমি বলছি না আমার ক্লাশে ঘুমাতে পারবি না।
– ম্যাডাম ঘুম ধরলে আমার দোষ কি?
– ঘুম ধরছে মানে!!! এটা ঘুমানোর সময়?? রাতে কি করছিস?
– রাতেও ঘুমাইছি। ঘুম ধরলে আমি কি করব!!!
রেদোয়ান বিরক্তি নিয়ে চোখ ঘষল। ম্যাডাম ঝাড়ি দিয়ে বললেন,
– যা চোখে পানি দিয়ে আয়।
ক্লাশ থেকে বের হয়ে এল রেদোয়ান। টলতে টলতে টয়লেটে এসে দেখ আরো অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। আহুধু যে দাঁড়িয়ে আছে তা না। রীতিমত আড্ডা দিচ্ছে। টয়লেটে যে এত ভাল আড্ডা দেয়া যায় তা এদের না দেখলে বোঝা যাবে না। একজন রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
– বের করে দিল?? কি ক্লাশ??
রেদোয়ানের ঘুম ঘুম উত্তর,
– ফিজিক্স। ধুর!!!!! শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দিল না।
ভেতর থেকে একজন বলল,
– একজন লাগবে।। কেউ খেলবি??
– “ওই আমি খেলব। ” রেদোয়ান বলল। তারপর চোখে পানি দিয়ে ভেতরে ঢুকল। সেই কার্ড খেলা। এই খেলা টা খেলে এরা এত কি যে মজা পায় বুঝি না।
অনেকক্ষণ পর ক্লাশে ফিরল রেদোয়ান। এসে দেখে কোন টিচার নেই ক্লাশে। সবাই যে যার মত ঘুমাচ্ছে, কাগজ ছোড়াছুড়ি করছে না হলে আড্ডা দিচ্ছে। ভেতরে ঢুকতেই একজন ডাক দিয়ে বলল,
– রাতু এইদিকে আয়।। তোর জন্য অফার আছে।
– কি অফার??
ক্লাশের কোনার দিকের ওই আড্ডার দিকে যায় রেদোয়ান।
– মিল্কব্রেকের পর হিরণ পয়েন্টে ডুব দিতে পারলে এক কেস কোক।
– কি বললি!! এক কেস?
– হুম। এক কেস।
– আমি রাজি।
রেদোয়ানের চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। মুখ ভর্তি হাসি। একাডেমীক ভবনের সামনে একটা চৌবাচ্চা মতন জায়গা আছে। ওখান থেকে পানির ফোয়ারা ওঠে। অল্প গভীর। ওটার নামই হিরণ পয়েন্ট।
মিল্কব্রেক ডাইনিং হল থেকে ফেরার সময় রেদোয়ান আর ওর ওই অফার দাতারা সবাই ওলহামে এসে দাঁড়াল। সাথে আরো অনেক উৎসুক জনতা। সবাই ওর ক্লাশ মেট। জুনিয়র গুলাও ফেরার সময় উৎসাহ নিয়ে এদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছিল। যে কারনে আবার কয়েকজন প্রিফেক্টদের কাছে পানিশমেন্ট ও খেল। যা হোক, রেদোয়ান আশে পাশে একবার দেখে নিল কেউ আছে কিনা। তারপর কোন কথা না বলে একডুব দিয়ে উঠে পরল। আর সাথে সাথে ওর ক্লাশ মেট গুলা চিল্লায়া উঠল। ভেজা শরীরে রেদোয়ান চলল হাউসের দিকে। পিছনে তার জয়ধ্বনি।


নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা বড়সড় রুমের ভেতর। রেদোয়ান বেশ কিছু কাপড়ের সাথে জটলা বেধে আমাকে হাউসের সামনে ফেলে রেখেছিল। তারপর কয়েকজন এসে আমাকে আর অন্যান্য আরো পড়ে থাকা কাপড় গুলোকে তুলে এনে এখানে রাখল। আমি বুঝে উঠলাম না ঠিক কি কারনে আমাকে এখানে রাখা হয়েছে। কাপড় গুলো থেকে বেশ দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। আমারো একই অবস্থা ছিল। অনেকক্ষণ পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। সাথে আরো অনেক গুলো পটলা। দেখলাম একটা বিশাল চৌবাচ্চা। ওখানে একের পর এক কাপড় ধোয়া হচ্ছিল। বুঝলাম আমাদেরও এখানে ধুতে আনা হয়েছে। বেশ খানিকক্ষণ পর আমাকেও ধোয়া শুরু করল। কিন্তু যে ভাবে ধুতে থাকল তাতে মনে হল যৌবন মনে হয় আর বেশিদিন টিকবে না। আচ্ছা মত ধোয়ার পর শুকাতে দেয়া হল। তারপর আয়রন করে পাঠানো হল হাউসে। পুরো ব্যাপারটা ঘটতে বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। হাউসে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন বিকাল। ক্যাডেট দের মাঠে ফুটবল খেলতে দেখলাম। খুব ভাল লাগছিল। গেমস শেষ হলে রেদোয়ান হাউসের সামন থেকে আমাকে নিয়ে রুমে আসল। একটা আত্নতৃপ্তি নিয়ে বলল ” যাক, ভ্যাকেশনের আগে খাকি পেলাম।সেদিন রাতে কেউ আর প্রেপে গেল না। সবাই রুমে বসে গল্প করল। লাইটস অফের বেলের পর কেউ লাইটও অফ করল না। মোহাম্মদ এসে সবাইকে টাকা দিয়ে গেল। সবাইকে খুব খুশি মনে হল। মাহমুদ বলল,
– এই টাকায় কত কাজ রে। নতুন মুভি গুলার সিডি কিনতে হবে।একটা পেনড্রাইভ ও কিনব। পরেরবার আসার সময় মুভি আনতে হবে। জুহায়ের বলল , “ও ভাল কথা বলছিস। এর পরের টার্মে তো এথলেটিক্স আছে। অনেক ফাকা সময়। বেশি করে মুভি আনিস”
রেদোয়ান টাকা গুলো এলোমেলো ভাবে নাড়তে নাড়তে বলল “দোস্ত আমারে কেউ ১০০ টাকা ধার দে। যাও্যার টাকা শর্ট পরবে”
মাহমুদ হেসে ফেলল। জুহায়ের বলল, “তুই ফইন্নী সারাজীবন ফইন্নীই থাকবি”

রেদোয়ান হালকা ঘুমিয়ে পড়েছিল। কয়েকঘণতা পর ইশরাক এসে ডাকা শুরু করল ।
– ওই ওঠ। ২টা বাজে। টেংকি তে ঊঠবি না!!
– অ্যা!!
– ওঠ
– উঠতেছি।
উঠে একটা কাল গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ইশরাকের সাথে বের হয়ে গেল ।
ফিরল ঘণ্টা খানেক পর। ফিরে ব্যাগ গোছাতে লাগল। ব্যাগ ভর্তি করে বই নিল । বাসায় যেয়ে এবার মনে হয় খুব পড়াশুনা করবে। ব্যবহার করা কাপড় গুলো জটলা পাকিয়ে বাইরে ফেলে রেখে আসল। তারপর এসে আবার শুয়ে পড়ল।
এবার ঘুম ভাঙল মাহমুদের ডাকে।
– ওই বাঁশি দিচ্ছে বাইরে। ওঠ। আর ২০ মিনিট আছে।
– মাহমুদ,জুহায়ের ততক্ষণে খাকি পড়ে তৈরী বের হও্যার জন্য। রেদোয়ান তার প্রতিদিনের তাড়াহুড়া শুরু করল। রুমে একে একে সবাই আসছিল কোলাকুলি করার জন্য। কিন্তু রেদোয়ান তার সময় পেল না। অনেক তাড়াহুড়ার পর ব্যাগ নিয়ে যখন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌছাল ততক্ষণে সবাই ফলইন করে দাঁড়ায় গেছে। প্যারেড গ্রাউন্ডে বেশ কয়েকটা বাস দাড়ায় থাকতে দেখা গেল । রেদোয়ান যেয়ে সবার সাথে দাড়াল। হুজ্র মোনাজাত শুরু করল । তারপর সবাই বাসে উঠল। রেদোয়ান সিটে বসে কিছুক্ষণ আশেপাশে দেখল । বাসটা কলেজ থেকে বের হতেই চোখ বন্ধ করল । যখন চোখ খুলল ততক্ষণে রংপুর পৌছে গেছে।


রেদোয়ান ব্রেকফাস্টে লেট করছিলি!! তোর আজ ইডি আছে । লাঞ্চের পর রুমে এসে মোহাম্মদ কথাটা বলল ।
– সামান্য লেটের জন্য ইডি খাওয়া লাগে!! স্যার কে এইটুকু ম্যানেজ করতে পারলি না!!
রেদোয়ানের চোখে মুখে বিরক্তি।
– কি করব দোস্ত !! স্যার না জানায়েই নাম জমা দিয়ে আসছে ।
মুখ গোমরা করে রেদোয়ান রুম থেকে বের হয়ে গেল । এক্সট্রা ড্রিল । তারমানে রেদোয়ান আজকজে গেমস করতে পারবে না। গেমস টাইমে পানিশমেন্ট খাবে। প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে জুহায়েরের সাথে সিগারেট খেতে গেল । বিরক্তি নিয়ে বলল ,
– ধের ।। আজকের আমাদের লীগের ম্যাচ টা মিস করলাম ।
গেমসের প্যারেডে দেখলাম ইশরাক,সিফাত,প্রিতম ওরাও খাকী পড়ে এসেছে। তবে ক্লাশ টাইমের মত এপুলেট,বেল্ট ওগুলো পড়ে নি । প্যারেড দেয়া শেষ হলে স্টাফ চিল্লায়ে বলল,
– ইডি পার্টী এদিকে আসেন ।
এডজুটেন্ট ও এসেছে মাঠে ।
– দাঁড়ান । দাঁড়ান । লাইন করেন। কেউ নড়বেন না। স্যার আসছেন ।
এডজুটেন্ট এসে সামনে দাঁড়াল । রেদোয়ান ইশরাক কে ঘুতা মেরে বলল “সাথে থাকিস”
এবার এডজুটেন্ট বলল ,
– Bloody chaps , your time is five minutes. Give two চক্কর । just shoot .
এডজুটেন্টের কথা শেষ হতেই স্টাফ শুরু করল । কিছুটা জোরে
– অ্যায় দৌড়ান। দৌড়ান। কেউ হাটবেন না। দৌড়ান।
সবাই দৌড়ানো শুরু করল । কিন্তু যেভাবে দৌড়াচ্ছে তাতে মনে হয় না ৫ মিনিটে দুই চক্কর শেষ করতে পারবে। সবাই অনেকটা রিলাক্স মুডেই দৌড়াচ্ছে আর কথা বলছে। পিছন থেকে ভেসে আসছে স্টাফের বাঁশি আর চিল্লানি “অ্যায় পার্টি ডাবল আপ। দৌড়ান” দৌড়াতে দৌড়াতে সবাই ততক্ষণে প্যারেড গ্রাউন্ডের বিপরীত পাশে নারকেল গাছের আড়ালে চলে গেছে। রেদোয়ান ইশরাক কে বলল,
– দোস্ত ,স্যার নিজেও জানে যে ৫ মিনিটে শেষ করা সম্ভব না ।
– হুম। আর আগে যেয়েও লাভ নাই। পানিশমেন্ট সবাই সমানই খাব। যত ডজ মারা যায় ।
– হুম । চল বসে পড়ি। এখানে বস্লে কেউ দেখতে পারবে না। ওরা একটা চক্কর দিয়ে আসুক।
– চল।
ওরা একটা গাছের আড়ালে বসে পড়ল। সিফাত দৌড়াতে দৌড়াতে বলল “দেখিস, ধরা খাস না”
ইশরাক হাসি দিয়ে বলল, “তোর মত নাকি আমি!!”

– যাক তাও অনেক পোলাপান ইডি খাওয়ায় আমাদের লীগ ম্যাচ টা বাদ দিছে।
রেদোয়ান একটা তৃপ্তি নিয়ে কথাটা বলল।
– হুম। আমারো ম্যাচ ছিল তো আজ। ভাল হইছে বাদ দিছে। কুপন আছে রে তোর?
– ধের!! আমি তো কুপন তুলিই না।
– আমারো তো নাই। তাহলে আজ খাব কি?
– প্রতিদিন যেভাবে খাই। আরে জুনিয়র আছে না!!
– তাও কথা। ওইযে ওরা চলে আসছে । চল উঠি।
– চল
রেদোয়ান আর ইশরাক উঠে পড়ল। কয়েকজন দৌড়ে পার হতেই ওদের সাথে মিশে দৌড়ানো শুরু করল । ফিনিশিং পয়েন্টে যেয়ে সবাই খুব হাপাচ্ছিল। ওদের দেখাদেখি ইশরাক আর রেদোয়ান ও ভান করতে লাগল যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।
স্টাফ আবার চিল্লানো শুরু করল।
– অ্যাঁয় পার্টি ওঠেন। লাইন করেন। ফ্রর্ন্টরোল স্টার্ট।
সবাই মাঠে ডিগবাজি খাওয়া শুরু করল । রেদোয়ান ও ডিগবাজি দিতে লাগল। দুই একটা দেয়ার পর বসে বসে হাটতে থাকে আর ঘন ঘন এডজুটেন্টের দিকে তাকায়। এডজুটেণ্ট ওর দিকে তাকালেই আবার ডিগবাজি দেয়। আবার অন্য দিকে তাকালে হাঁটতে থাকে। বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল এভাবে। এবার স্টাফ তার মত পালটালো।
– অ্যাঁয় পার্টি শুয়ে পড়েন।
রেদোয়ান দেখি খুব খুশি হয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। স্টাফ বলল “রোলিং স্টার্ট”
সবাই গড়াগড়ি দিতে লাগল ঘাসের উপর। ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছে বলে মনে হল ওদের। একজন আরেকজনের গায়ের উপর উঠে যাচ্ছিল। তবে এডজুটেন্টের দিকে খেয়াল রাখছিল অবশ্যই। এডজুটেন্টকে ক্যাডেটদের সাথেব বাস্কেটবল খেলতে দেখা গেল । তাই ন্সবাই ইচ্ছা মত গড়াগড়ী দিচ্ছিল। এবার স্টাফ সবাইকে ব্যান্ড পজিশন করিয়ে পুশ আপ দিতে বলল। রেদোয়ান একবার বুক নামাল। সবার বিশ টা দেয়া শেষ হলে তারপর বুক তুলল। স্টাফ গেমস শেষ হওয়ার বাঁশি দিল। এডজুটেন্টেড় কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে যখন শেষ বাঁশি টা বাজালো তখন সবাই হাউসের দিকে দৌড় দিল। রেদোয়ান ও দৌড় দিল । তবে মাঠের দিকে। ফুটবলে কয়েকটা লাথি মেরে ক্যান্টিনের সামনে এসে বসল রেদোয়ান,ইশরাক,সিফাত,রোম্মান,রাকিব আরো বেশ কয়েকজন।
– মামা কুপন আনছস?? (রেদোয়ান বলল।)
– আরে থাম। জুনিয়র আসতে দে। (রোম্মান হাউসের গেটের দিকে তাকায় থাকল। )
বলতে বলতেই কয়েকটা জুনিয়র কে ক্যান্টিনের দিকে আসতে দেখল।
– ওয়ি জুনিয়র এদিকে আস।
– জ্বী ভাইয়া।
– কত কুপন এনেছ ভাইয়া। (রোম্মানের সুরেলা গলা। বাকীরা হেসে দিল)
– জ্বী ভাইয়া ১৫।
– কি খাবে?
– ভাইয়া, চানাচুর।
– আজকে চানাচুর না খগেলেও হবে। যাও একতা কোক নিয়ে আস।
– জ্বী ভাইয়া।।
জুনিয়র কোক কিনে দিয়ে যেতেই সবার লাফালাফি শুরু হল।
– ওই থাম। কেউ লাফাবি না। একপাশ থেকে শুরু করতেছি। সবাই একবার করে নিবি।
রোম্মান বেশ দৃড় কণ্ঠেই বলল। সবাই বসল। এক ঢোক করে নিতেই কোকের বোতল শেষ।
– কিছুই হল না। আরেকটা ধর।
– হুম আরো খাওয়া লাগবে। যে খিদা লাগছে!!
ক্যান্টিনে আরো বেশ কয়েকটা কোক, চানাচুর খেয়ে যখন শেহস ঘণ্টা টা বাজল তখন রুমে ফিরল রেদোয়ান। সবাই মোটামুটী গোসল করে রেডি। রেদোয়ান হেলতে দুলতে গান গাইতে গাইতে বাথরুমে গেল। শোনা গেল প্রতিদিনকার চিল্লানি টা “রেদোয়ান তাড়াতাড়ি কর,আর পাঁচ মিনিট আছে”


– দোস্ত তুই না দেখালে আমি শেষ ।
মুখ হাসি হাসি করে রদোয়ান ইকতিদারকে কথাটা বলল ।
– ক্যান ? পড়িস নি?
– আরে দোস্ত কি যে বলি । প্রেপে সবাই এত ডিসটার্ব করল । ভাবলাম রাতে লাইটস অফের পর পড়ব । কিন্তু ইশরাক কার্ড খেলা শুরু করল । ঘুমও হল না , পড়াও হল না । সকালে সে বই নিয়ে বসলাম । কখন যে ঘুমায় গেছি ………… নিজেও জানি না । খালি মিল্ক ব্রেকের বেল টা শুনলাম ।
ইকতিদার হেসে দিল ।
– আচ্ছা । যা ।
বিজয়ীর বেশে রেদোয়ান ক্লাশে ফিরে আসল ।

রেদোয়ান এ মুহূর্তে অডিটোরিয়আমে বসে আছে । আশে পাশে ক্লাশের সবাই । ওদের টেস্ট পরীক্ষা চলতেছে। আজ ফিজিক্স পরীক্ষা ।
– দোয়া কর রে । যাতে একটা সহজ গার্ড পরে । ( রেদোয়ান বলল ইকতিদারকে)
– হুম । তাপস স্যার না পরলেই হইছে ।
বলতে বলতেই স্যার খাতা নিয়ে ঢুকলেন । দুইজন স্যার । রেদোয়ান হতাশায় মাথা নিচু করল । আশে পাশের অন্যদের কেও বেশ হতাশ মনে হল । ইকতিদার উল্ট ঘুরে বলল
– তাপস স্যার ই তো আসল রে ।
– আজ ফেল শিওর । ( রেদোয়ান করুণ ভাবে মাথা নাড়ল)
স্যার খাতা দিয়ে দিলেন । সবাই মার্জিন টানা শুরু করল । রেদোয়ান উদাস ভঙ্গীতে খাতার দুপাশ ভাজ করে নাম, বিষয় গুলো লিখে ফেলল । ঘণ্টা দিলে আশে পাশের সবাই লেখা শুরু করল । কেউ কেউ আবার রেদোয়ানের মত চুল টানতে থাকল । স্যার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো অডিটোরিয়ামে চোখ বুলাতে লাগলেন । বাকি আরএকজন স্যার যিনি ছিলেন উনি এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারী করতে লাগলেন । রেদোয়ানের সময় যেন আর কাটে না । একটুপর ফিস্ফিস করে বলল ‘ইকতি দেখা’
ইকতিদার হালকা ডানে চেপে যেয়ে খাতাটা মোটামুটি দেখার মত করে দিল । রেদোয়ান প্রচণ্ড জোরে লেখা শুরু করল । একটা প্রশ্ন শেষ না হতেই স্যার দূর থেকে বললেন
– ওরে রেদোয়ান । আর চোখের ব্যায়াম করিস না রে ।
রেদোয়ানের মুখটা পুরা কাচুমাচু হয়ে গেল । লজ্জা পেয়েছে এমন ভান করে মাথাটা নীচু করে ফেলল ।
নিজে নিজে খাতার উপর কলম ঘুরাতে লাগল । বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল এভাবে । স্যারের মোবাইল্টা হঠাত বেজে উঠল । স্যার কথা বলা শুরু করতেই রেদোয়ান ইকতিদারকে ইশারা করল । আগের বারের চেয়ে এবার আরো দ্বিগুন গতিতে লিখতে লাগল । স্যার প্রায় ৫ মিনিট কথা বললেন । এর মাঝে কয়েকতা অংক করে নিল । স্যারের কথা বলা শেষ হতেই আবার সব চুপ । ইকতিদার আবার সোজা হয়ে বসল । সর্বশেষ সুযোগ টা পেল যখন খাতা স্টাপলিং করতে পিয়ন আসল।শেষ ঘণ্টা বাজলে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে আসল।সবাই গার্ড নিয়ে কথা বলছিল।এর মাঝে একজন জিজ্ঞাসা করল
– কিরে রেদোয়ান পাশ করবি তো??
– উমম,ইকতি যা দেখাইল,ঠিক থাকলে পাশ করার কথা ।
– হায়!হায়!পার্টি দিস ।
রেদোয়ান হেসে উঠল।ক্লাশে এসে বক্স, বোর্ড রেখে ডাইনিং হলের দিকে চলল।


রেদোয়ান প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। রাত বারোটার মতন মনে হয় বাজে তখন। হঠাত রুমে সিফাত,ইশরাক,নাহিদ,ফরহাদ,প্রিতম আরো বেশ কয়েকজন ঢুকল। তারপর সবাই মিলে রেদোয়ান কে ঘিরে চিল্লায়া উঠল “REDWAN, HAPPY BIRTHDAY. ”
বিকট চিৎকারে রেদোয়ান ঘুম থেকে উঠে চোখ ঘষতে লাগল। উপরের দুই হাউস থেকেও চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।
– রেদোয়ান হ্যাপি বার্থডে
– ফইন্নী,হ্যাপি বার্থডে
– মঙ্গা, হ্যাপি বার্থডে
ঘোর কাটলে রেদোয়ানের মুখে একটা হাসি ফুটল। আর তখনই ঘটল একটা মর্মান্তিক ঘটনা। সবগুলো মিলে ওর ঘাড় নামিয়ে বেধরক মার শুরু করল। মারের ধরন দেখে যে কেউ বলবে এখানে কোন পকেটমার ধরা পড়েছে।শুধু পার্থক্যটা হল সবাই হাসতে হাসতে মারতেছিল।মার দিয়ে যেন কত মজা। বেশ কিছুক্ষন এভাবে চলার পর নাহিদ বলল,
– থাক।অনেক হইছে।এবার খাবার দাবার বের কর।খিদা লাগছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে দেখি দুই বেডের মাঝখানে একটা জায়গা তৈরী করে পেপার বিছাল।তারপর মুড়ি আর চানাচুরের প্যাকেট বের করল মাহমুদের কাভার্ড থেকে।জাহিদ কোথা থেকে জানি পেয়াজ মরিচ কেটে আনল।তারপর মুড়ি মাখিয়ে সবাই খাওয়া শুরু করল।খাওয়ার ভেতর তাড়াহুড়া আর কাড়াকাড়ি দেখে মনে হল যেন কে কত তাড়াতাড়ি কত বেশি খেতে পারে সবেই তার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।খাওয়া শেষ করে সবাই ধীরে ধীরে বের হয়ে গেল। নাহিদ হাত চাটত চাটতে বলল
– ভাল মত খাইতে পারলাম না রে …….
রেদোয়ান একটা তৃপ্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পরল। মজা হল সকাল বেলা থেকে।
সকালে পিটিতে লেট করলে :
-স্টাফ আজকে ওর বার্থডে … নাম নোট কইরেন না…
– ওকে , যান…… বার্থডে বইলা নাম নোট করলাম না.
ড্রেস ইন্সপেকশন এর ফল ইন এ :
– আপনার জুতা পালিশ নাই, শেভ নাই, মেটাল পালিশ নাই, ভেস্ট পড়েন নাই, …… ফ্রন্ট রোল শুরু… শুরু ফ্রন্ট রোল…
– স্টাফ , বাদ দেন আজকে … আজকে পোলাডার জন্মদিন…
– আচ্ছা যান … কালকে থেকে কিন্তু এগুলা চলব না…
ক্লাস রুমে :
– স্যার টয়লেট এ যাব…
-No visiting toilet in my class……
– স্যার আজকে যাইতে দেন … আজকে ওর বার্থডে…
– ওকে যাও……
গেমস এ : এডজুট্যান্ট ডাকছে
– U bloody idiots… what is the condition of your PT shoe?? go ..get a shell…
– স্যার আজকে ওর বার্থডে…
– SO!!!! go bloody …HURRY UP!! ( এইবার আর বাচতে পারল না tongue emoticon )
পানিশমেন্ট খাওার পর:
– U ..birthday boy ..come here…. go to cafeteria..and enjoy what u want.. treat is on me…
– Thank u sir… (সব ব্যাথা ভুইলা গেছে )
সবশেষে বার্থডে ক্যাডেট রুমে শুয়ে মনে মনে বলে – ” THE BEST BIRTHDAY EVER ….

১০
– ওই পোলাপান , ভিপি স্যার পারমিশন দিয়ে দিছে ।কাল থেকে হাউস রেস্ট। আজকে সবাই সব বই নিয়ে যাস হাউসে।
ইমরান ক্লাশে ঢুকে কথাটা বলল।
– কি বললি ?? আরেকবার বল ।
ক্লাশের সবাই এ মুহূর্তে চুপ।
– কাল থেকে হাউস রেস্ট । বলে ইমরান হেসে ফেলল ।
আর সাথে সাথে পুরা ক্লাশ হই হুল্লোড়ে ফেটে পড়ল ।ইমরানের নামে একটা থ্রি চিয়ার্স দিয়ে ফেলল সবাই ।ইমরান এদের কলেজ প্রিফেক্ট । সারাবছর ওর কাছে খুব একটা ভাল খবর পাওয়া হয়না সবার । হয় খবর নিয়ে আসে কারো জরিমানার না হয় ইডির । মাঝে মাঝে সবার চাপে বিভিন্ন খেলা দেখার পারমিশন আনতে যেয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে । ওরও সুখ নাই । ক্লশে ঠিকমত থাকতে পারে না। সব সময়ই হয় স্যারদের কাছে না হয় স্টাফ রুমে ঘোরা ফেরা করে ।মাঝে মাঝে পুরা একাডেমী টাইম কাটে এ্যাডজুটেন্ট এর রুমে । প্রেপ টাইমে জুনিয়র দের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেই পার হয়ে যায় । আজ ওর মুখ থেকে একটা ভাল খবর শুনে সবাই আসলেই অনেক খুশি । কেউ কেউ আবার বলল
– সাব্বাশ ইমরান । এতদিনে একটা কাজ করলি ।
লাস্ট একাডেমী ………লাস্ট একাডেমী বলে চিল্লাতে চিল্লাতে কেউ কেউ ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেল । পাশের ক্লাশেও চিল্লাচিল্লি শোনা গেল । ওরাও মনে হয় এতক্ষণে খবর টা পেয়ে গেছে । সবাই পিছনেরত কাভার্ড থেকে বই বের করা শুরু করল । কেউ কেউ বোর্ডে আকাকি করতে লাগল । পিছনের বোর্ডটাতে বড় করে GOOD BYE লিখল । চারদিকে যেন উৎসবের আমেজ । রেদোয়ান নাহিদকে বলল
– দোস্ত চল ছাদ থেকে একটু ঘুড়ে আসি ।
নাহিদ আর রেদোয়ান ক্লাশ থেকে বের হয়ে একডেমীর ছাদে আসল । এসে দেখি আগে থেকেই ইশরাক,সিফাত,মনির,সাহিদ,সানি বসে আড্ডা দিচ্ছে । ওরাও আড্ডায় যোগ দিল । ছাদের এ ধার টা থেকে পুরা কলেজ টা খুব সুন্দর দেখা যায় । সেড দিয়ে অনেকে বই নিয়ে হাউসের দিকে যাচ্ছিল । কয়েকজন আবার মাঠের পাশে বসেছিল ।
সাহিদ একটু আবেগী হয়ে বলল,
– ভেবে দেখছিস দোস্ত। কাল থেকে আর এই খাকী পড়ে একডেমীতে আসা হবে না।
মনির উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় রে ।।

১১
ওরা হাউস রেস্টে আসার পর থেকে আমার আর কোন ব্যস্ততা নেই। সারাদিন ওই টেবিলের উপরই পরে আছি। মাঝখানে একবার ধুপিখানায় পাঠানো হয়েছিল।সেখান থেকে ফিরে আবার এই টেবিল।রেদোয়ানের ও খুব অলস সময় যাচ্ছে। সারাটাদিন ঘুমায়। বিকালের দিকে ব্লকে ক্রিকেট খেলে। লাঞ্চও ঠিক মত করে না। আর সারারাত জেগে ঘুরে বেড়ায়। সামনে নাকি এইচএসসি পরীক্ষা। মাহমুদ বেশ পড়াশুনা করছে বেশ কদিন হল। রেদোয়ান পড়ে না দেখে মাঝে মাঝে ওর উপর ক্ষেপে যায়। রেদোয়ান একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আরে তুই আছিস না। ।
একদিন সকাল ১০ টার দিকে মোহাম্মদ জোরে জোরে সবাইকে ডাকতে লাগল।
” বয়েজ, এ্যাডজুটেন্ট স্যার ডাকছে বাইরে। তাড়াতাড়ি কর। খাকী পড়িস।”
সবার বেশ তাড়াহুড়া লেগে গেল। এইকয় দিনে যেভাবে থেকেছে তাতে কারো ড্রেস,জুতা,মোজা ঠিক নাই। বেশির ভাগই ঘুমাচ্ছিল। তাদের ঘুম থেকে উঠে ব্যাপারটা বুঝতেই বেশ কিছুক্ষন লাগল। কোন রকমে রেডি হয়ে রেদোয়ান যখন হাউস থেকে বের হল ততক্ষণে সবাই ফলইন করে দাড়ায় গেছে।রেদোয়ান কে দেখে স্টাফের হুংকার,
– ডাবল আপ।।
রেদোয়ান ফলইনের একদম কোনায় গিয়ে দাঁড়াল। এর মধ্যেই এ্যাডজুটেন্ট এসে পড়ল।
– স্যার আসতেছে। সব সাবধান।। হাইট হবে।।
স্টাফ কিছুটা নীচু গলায় বলল।
ইমরান সবাইকে সাবধান করায়ে প্যারেড দিল।
– How are you,boys?
– Fine, sir.
– Sure?
– Yes, sir.
– How thw study is going on?
– Fine, sir.
– ওকে,যে জন্য ডেকেছি………… উমমমম……:আমি জানি তোমাদের কাছে অনেক আন অথরাইজড আইটেম আছে। কাছে কি আছে বলতে থাকো।আমার যদি মনে হয় তোমরা সত্যি বলতেছ না তাহলে এখনি হাউস চেক করব। তখন যার কাছে যা পাব,বুঝতেছই কি হবে।। এখন বললে কিছু হবে না। So, this is a chance for you. আমি চাইনা পরীক্ষার মাঝে তোমাদের বেশি জ্বালাতে। ডান পাশ থেকে স্টার্ট।

সবার ডানে দেখলাম কৌশিক দাড়ায় আছে। তারপাশে আমিন। কৌশিক শুরু করল,
– স্যার, কিছু নাই।
– স্যার, পঞ্চাশ টাকা।
– স্যার, দুইশ টাকা।
– স্যার, একটা লাইটার।
– স্যার, কিছু নাই।
– স্যার, পারসোনাল গেঞ্জি।
সবাই একে একে একেকটা আজব নাম বলছিল। যখন রেদোয়ানের পালা আসল, জোরে করে বলল,
– স্যার, একটা এক টাকার কয়েন।
ঠোটের কোনায় হালকা হাসি। সামনে কিছু লম্বা ছেলে ছিল দেখে বোধহয় ওর হাসিটা এ্যাডজুটেন্ট দেখতে পেল না।
একে একে সবার বলা শেষ হলে এ্যাডজুটেন্ট! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর শান’ত কন্ঠে বলল,
– বুঝছি,তোমরা এভাবে ঠিক হবা না। monkeys are always monkey.
পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করে সবাইকে বলল,
– কি এইটা?
– স্যার, মোবাইল। (সমস্বরে)
– কার এটা?
সবাই চুপ।
রেদোয়ান “স্যার,আপনার ” বলে উঠবে এই সময় দেখল সাহিদ হাত তুলছে। ” হায় হায়!!! এত কিছু কখন ঘটল?? আমি তো ঘুমায় ছিলাম।” রেদোয়ান বিড়বিড় করল।
এডজুট্যান্ট শান্তস্বরে বলল,
– If you don’t deposit your unauthorized items,i am going forward this to AHQ. As well as I will check the houses now. So decision upti you. Who all possess mobile raise your hand.

কেউ হাত তুলবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু দেখলাম ঐ কোনায় কে যেন হাত তুলছে। কৌশিক। লম্বা তো, তাই বোঝা যাচ্ছে।
একে একে আকাশ,মনির,সৌরভ,হাসনাইন, কিবরিয়া আরো অনেকে হাত তুলল। রেদোয়ানের পাশে দাঁড়ানো সিফাত হাত তুলল। সিফাতের দেখাদেখি ইশরাক। প্রায় পনের জনের মত হয়ে গেল। এডজুট্যান্ট এর ঠোটের কোনায় হাসি।
– যারা হাত তুলছ, আমার ডান পাশে এসে দাড়াও। এবার যাদের কাছে সিগারেট আছে হাত তোল।

এবার সবার আগে নাসিফ হাত তুলল। তারপর ইকতিদার, সাজ্জাদ, জুহায়ের, নাহিদ। রেদোয়ান মনে হয় দ্বিধার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত হাত তুলল। ওদেরকেও আলাদা করা হল।

– বাকি যারা আছ, তোমাদের কার কাছে কি আছে?

– স্যার, পেনড্রাইভ।
– স্যার, ওয়াটার হিটার।
– স্যার, সিম কার্ড।
– স্যার, পাঁচশ টাকা।
– স্যার, এক প্যাকেট কার্ড।
অনেকে অনেক কিছু বলল। সবাই এভাবে সব বলে দিবে ভাবি নাই। এত ফিলিংস!! একজন কে বাঁচাতে সব বলে দিল। মুগ্ধ।।

– তোমাদের জন্য সময় পাচ মিনিট । যে যা নাম বলছ, সব নিয়ে আস। your time starts now.

সবাই দৌড় দিল। রেদোয়ান রুমে এসে কাভার্ডের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বাইরে চলে আসল। অনেকেই চলে এসেছে। বাকিরা আসতেছে। রেদোয়ান সিগারেটের প্যাকেট টা জমা দিয়ে ফলইনে দাঁড়ালো। কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই এসে পড়ল। সব জমা দিয়ে আবার ফলইনে দাঁড়ালো।

– ok boys, I am happy with your efforts. But i know still some of you have something. Be carefull about that. কয়েকদিন পর পরীক্ষা । ভালভাবে পড়। কলেজের শেষ কয়েকটা দিন মজা কর।
– yes sir.
– কারো কিছু বলার আছে?
– No sir.
– ok,carry on.

ইমরান পারমিশন নিল। এডজুট্যান্ট চলে গেল।জমা দেয়া জিনিস গুলো নিয়ে গেল স্টাফ। সবাই হাউসে ফিরে আসল। রেদোয়ান বেডে বিসে ক্ষ্যাপা মুডে বলল
– ধের!!! এখন কি খাব??
জুহায়ের শান’ত গলায় বলল,
– ব্যাপার না ম্যান।। আবার সাপ্লাই আসবে।

১২
রেদোয়ানকে সকাল থেকে খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে পড়াশুনার ব্যাপারে। এর কাছ থেকে সিলেবাস চায় তো আর একজনকে বলে সাজেশন দিতে। কাড়ো কাছে গাইড খোঁজে। এভাবেই চলছে। সত্যিকার অর্থে পড়তে বসা এখনো সম্ভব হয়নি। মাহমুদ বই নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেছে অনেক আগে। মনে হয় অন্য কোথাও পড়ছে। জুহায়ের বেডে শুয়ে শুয়ে পড়ছে। আর রেদোয়ান। । ঐযে।। সকাল থেকে অনেক সিরিয়াস। পড়াশুনা নিয়ে।
– দোস্ত কাল সাবজেক্টিভ ফাটায়াই ফেলব। ( উত্তেজিত স্বরে রেদোয়ান)
– চুপ থাক। আমার এখনো অনেক বাকি। ( জুহায়ের থামায় দেয়)
আবারো বইয়ের পৃষ্ঠা উলটাতে থাকে। কিন্তু আসল্র কি পড়বে ঠিক করে উঠতে পারে না। এভাবে দিন পার হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আজ নামাজের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী রেদোয়ান। রুম থেকে খানিকটা আগেই বের হয়ে গেল। নামাজের পর এসে কি পড়ব,ক্যামনে পড়ব……….. সবার কাছ থেকে শুনতে শুনতেই সময় চলে গেল। ডিনারের পর এসে বই নিয়ে বসল। কয়েকটা পেজ ন পড়তেই কে যেন চিল্লায়ে বলল ” বয়েজ, এক্সট্রা ডায়েট। মিস্টি দিছে।” শোনা মাত্রই দৌড়। রুমে আর ফিরল না। একটু পর ব্লকে বেশ শোরগোল শুনতে পেলাম। মনে হল তিন হাউস থেকে সবাই এই হাউসে এসেছে। সবার মুখেএক কথা ” ভাই,দোয়া করিস। ”
অতঃপর সবকিছু শেষে লাইটস অফের পর রেদোয়ান যখন রুমে আসল তলহন ওকে আসলেই সিরিয়াস মনে হল। বেডে বসে বই হাতে নিয়ে পড়তে থাকল। বেশ কিছুক্ষন এভাবে পড়ার পর অবস্থান পরিবর্তন করে শুয়ে পড়ল। পাশ ফিরে বই হাতে পড়তে লাগল। বেশ মনোযোগী। খুব ভাল লাগছিল ওকে এভাবে পড়তে দেখে। কিন্তু একটু পর খেয়াল করলাম ও আসলে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।

রেদোয়ান কে এ অবস্থায় যদি ওর বাবা- মা দেখত,খু খুশি হতেন।ছেলেটা সকাল থেকে পড়েই যাচ্ছে,পড়েই যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে একবারে গোসল করে এসে টাওয়াল পরা অবস্থা তেই পড়তে লাগল। ব্রেকফাস্টের জন্য যখন স্টাফ বাশি লাগল তখন কোন রকমে তাড়াতাড়ি করে ড্রেস পড়ে নিয়ে আবার বই হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে ডাইনিং হলের দিকে গেল। সাথে পেনসিল বক্স আর হার্ডবোর্ড নিল। পেনসিল বক্সে কলম পাচ্ছিল না। তবে সেটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত বলে মনে হল না। মাহমুদ অবস্থা বুঝে একটা কলম বের করে দিল। ডাইনিং হলে এমনকি পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময়ও বাসে পড়তে থাকল। এখন পরীক্ষাহলে বসে পড়ছে। সময় শেষ হওয়াতে কলেজ থেকে আসা পিয়নের কাছে বই জমা দিয়ে আশে পাশে তাকাল। সামনে ইকতিদার,পিছনে রাহফিন।বামে আরিফ। ডানপাশে মনির কে দেখে স্বস্তির হাসি দিল রেদোয়ান।
পরীক্ষার ঘণ্টা দিল। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। এইচএসসি পরীক্ষা। রেদোয়ান লিখতে লাগল। লিখেই যাচ্ছে, লিখেই যাচ্ছে।মাঝে মাঝে একটু বলাবলি করতেছে। একঘণ্টা না যেতেই এক্সট্রা পেজ নেয়ার উৎসব শুরু হল। কে কত নিতে পারে।
অত:পর পরীক্ষা শেষ করে হই হুল্লোর করতে করতে কপ্লেজে ফিরে লাঞ্চে টেবিলমেটদের বলল, ” জাস্ট অস্থির একটা পরীক্ষা দিলাম। ”

১৩
এরমধ্যে বেশ কয়েকটা পরীক্ষাও হয়ে গেল। একই রকম ভাবে দিনগুলো যাচ্ছিল। কলেজে ওদের দিনও শেষ হয়ে আসতেছে। শুনলাম পরীক্ষা শেষ হলেই নাকি ওরা একবারে কলেজ থেকে চলে যাবে। আমার অবস্থাও খুব একটা ভাল না। গায়ের রঙ আর আগের মত নাই। যত্ন আত্নি তো কোনকালেই পাইনি। ওসব নিয়ে আর আফসোস ও হয় না। যা হোক, আজকে সবাইকে কেন জানি চিন্তিত মনে হচ্ছে। ফিজিক্স সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা। কিন্তু ব্যাপারটা হল আজকে যে গার্ড এসেছে সে একটু কড়া। খুব ভাল ভাবে নজর রাখছে। কাউকে দেখাদেলহি করতে দিচ্ছে না। রেদোয়ান ছটফট করছে। বেয়াহ কয়েকবার ওয়ার্নিং ও খেয়েছে। পাশে মনির লিখে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখানোর চেষ্টা করায় স্যার ওকেও ধমক দিয়েছেন। বলেছেন পরেরবার খাতা কেড়ে নিবে। রেদোয়ান অস্বস্তি নিয়ে খাতার উপর কলম ঘুরাতে লাগল। ছোট ছোট কয়েকটা প্রশ্ন নিজের মত করে লিখল। কিন্তু ইকুয়েশন আর অংকগুলা কিছুতেই মিলাতে পারছে না। এরমধ্যে একঘণ্টা পার হয়ে গেল। স্যার আগের মতই কড়া নজর রাখতে লাগলেন। দেড়ঘণ্টা পার হয়ে গেল। স্যার আগের মতই আছেন। রেদোয়ান একফাকে বলল ” মনির, ফেল হয়ে যাবে।”
মনির একটু নড়ে বসল। এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনের জনের আড়ালে নিয়ে খাতাটা দেখার মত করে দিল। রেদোয়ানও ঝড়ের গতিতে লিখতে লাগল,আর স্যারকে দেখতে লাগল। স্যার এদিকে মাথা ফেরাতেই ও মাথা সোজা করে।এভাবে কিছুক্ষণ লেখার পর স্যারের চোখে পড়ে গেল ব্যাপারটা। স্যার মনিরের খাতা কেড়ে ইতে চাইলেন।মনির অনেক অনুনয় বিনয় করে খাতাটা রাখল। তারপর আবার আগের মত অবস্থা। আর সময় আছে পনের মিনিট। খাতা সেলাই করতে পিয়ন আসল। ক্লাশে হালকা কথা বলা শুরু হতেই মনির আবার খাতা মেলে ধরল। আর রেদোয়ান ঝড়ের চেয়েও দ্রুত গতিতে লিখতে লাগল। কয়েকটা ইকুয়েশন আর অংক লিখতেই আবার স্যারের কাছে ধরা। স্যার এবার সরাসরি মনিরের খাতা নিয়ে গেলেন। রেদোয়ান অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো। মনির কোন পরলহ না করে অংক মুখস্থ বলতে লাগল। সেষ পাচ মিনিটে মোটামুটি একটা ভাল নাম্বার পাওয়ার মত লেখা হয়ে গেল রেদোয়ানের। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় মনির কে জিজ্ঞাসা করল, ” কিরে, সব লিখতে পারছিস তুই?”
– সব আর কই পারলাম! তোরে দেখাতে যায়া একটা ইকুয়েশন তো সলভ ই করতে পারলাম না। ব্যাপার না। অবজেক্টিভ তো ভাল হইছে। এ প্লাস এমনিই হবে। আর তুই সব ঠিক ভাবে লখছিস তো? যা দেখছিস সেগুলো ঠিক ভাবে লিখলে তোরও এ প্লাস।
– আবার জিগায়।
তৃপ্তির হাসি দিয়ে ওরা এগিয়ে যায়।

১৪
একে একে সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল ওদের।আমার ধারনা ছিল ওদের সব আবেগ বোধহয় নিজেদের জন্যই। কিন্তু অবাক হলাম লাস্ট প্রাকটিকাল এক্সাম দিয়ে এসে হাউসে ফিরে রেদোয়ান আমাকে আঁকড়ে কেঁদে উঠল। চিৎকার করে বলতে লাগল “এই খাকী আমি আর কোনদিন পরব না।কেন সময় এত তাড়াতাড়ি যায়!” ওর চোখের জলে আমি সিক্ত হলাম। পৃথিবীতে আমার শ্রেষ্ঠ অনুভূতি টা ওই সময়েরই। জন্ম থেকে আমার মনে জমা হতে থাকা একরাশ আফসোস নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। মনে হতে লাগল যেন ওই ছোট্ট ঘরটাতে জন্ম হওয়াই আমাকে দেয়া বিধাতার শ্রেষ্ঠ উপহার।
মাহমুদের ও মন খারাপ। জুহায়ের টাওয়াল কাধে বের হয়ে গেল।বাইরে থেকে মোহাম্মদের গলা শোনা গেল
” বয়েজ গার্ডেন পার্টি ৭ টায়। তাড়াতাড়ি কর।”

১৫
সময় একেবারেই শেষ। সারাটা রাত রেদোয়ানের একেবারেই নির্ঘুম কেটেছে। ব্যগ গোছাল ।অনেক জুনিয়র এসে ইচ্ছা মত অনেক কিছু নিয়ে গেল । সেই চারজন মিলে কার্ড খেলল। আড্ডা দিল । বাইরে হাটা হাটি করল। সময় তা খুব দ্রুতই কেটে গেল। ভোরের আলো ফুটল। সাথে সাথে বাড়তে থাকল আবেগের পরিমান । প্রতিদিন প্রেপে যাওয়ার মত করে ডিনার ড্রেস পরল । তবে আজ কোন চাঞ্চল্য নেই রেদোয়ানের মাঝে ।ভ্যাকেশনে যাওয়ার সকালের মত তাড়াহুড়াও নেই। রুমে যারাই আসল সবাইকেই জড়িয়ে ধরল পরম আবেগে। তারপর রুমের সব কিছু আবার এক ঝলক দেখে নিয়ে ওর প্রস্থান । আমার ভবিষ্যৎ কি জানা নেই।কারো গায়ে হয়ত আর চড়া হবে না। স্টোর রুমে অথবা কোন রুমের পাপস হিসেবে হয়ত পড়ে থাকব। তবে এখনো সেই টেবিলের উপরই পড়ে আছি। গায়ে লেগে আছে রেদোয়ানের তাজা অশ্রু গন্ধ। জানালার ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছিল। একে একে সবাই বিদায় নিচ্ছে সবার কাছ থেকে। শেষ ব্যক্তিটাও চলে যায়। সেই চিরচেনা রেদোয়ান। আর লেখা হয়ে যায় “একটি খাকির আত্মকাহিনী “।

৩,১৫২ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “একটি খাকির আত্মকাহিনী”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ইশরাক,
    অনেক বড় লেখা পর্বে ভাগ দেবার কথা ভাবতে পারো। শুরুটা পড়লাম। সময় নিয়ে পড়বো। তারপর এসে মন্তব্য করবো --- কথা দিলাম। যেমন যেমন মনে হলো জানাবো।
    একটা পর্যবেক্ষণ -- দেখতেছিল, হাসতেছিল এসবের জায়গায় দেখছিল হাসছিল হবে।
    তোমার আরো লেখা পাবার প্রত্যাশায়

    জবাব দিন
  2. ক্যডেট কলেজের ছাত্রদের জিনিয়াস বা হিরো এই টাইপের মনে হতো একসময়। খুবই আকাঙ্খার বস্তু ছিল এদের লাইফস্টাইল জানার। এক সময় অনেক কিছু জানছি। আজ আরো অনেক কিছু জানলাম। খাকির আত্মকথা চমৎকার হয়েছে। ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  3. আমি ভাবসিলাম জুহায়ের নামের লোক দুনিয়াতে এক পিস ই আসে। এমসসিসি (০৯-১৫)। আমার বহুত জিগড়ী দোস্ত এর নাম।
    গল্পটা পরতে পরতে নাফিস এর কথা মনে পরল। কুপন এর আত্নকাহিনী লেখসিল। হাউজ বেয়ারার বর্ণনা টা বোধ হয় সব ক্যাডেট ঈ এক ভাবে দিবে আজীবন।
    গল্প।
    আর কখন যে নিজেই হারায় গেসিলাম গল্পের ভিতরে, অইটা খেয়াল নাই। একদম নতুন এক্স ক্যাডেট তো, অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি গুলা একটু বেশিই টাটকা।
    বত্ব কোন জায়গায় যেন একটা লাইন পরসিলাম, তিন অক্ষরের "য" ফলা সহ একটি নাম। ক্যাডেট একটি BRAND....

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।