জাপান ভ্রমণ ২০১৬ (পর্ব ২)

ভিসা সংগ্রহের পরের স্টেপ বিমান ভ্রমণ। দীর্ঘ ২০-৩০ ঘণ্টার ভ্রমণ, মাঝখানে প্রায় ১০ ঘণ্টার যাত্রা বিরতি। টিকেট কাটা হল EVA AIRWAYS থেকে, TAIWAN ভিত্তিক একটি এয়ার লাইন। যেতে হবে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে ১৬ ঘণ্টা। তাইপে তে প্রথম ল্যান্ডিং, তারপর সেখান থেকে ওসাকা। ২০১২ সালে কানাডা আসার সময় হংকং হয়ে ভাঙ্কুভার এসেছিলাম ১০ ঘণ্টায়।যা হোক ১৬ ঘণ্টা একটু বেশীই। লম্বা যাত্রা হওয়ায় টেনশনে ছিলাম, বিশেষ করে মালয়েশিয়া এয়ার লাইন MH370 আকাশে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে।কিন্তু পূবের জাপান, সূর্যোদয়ের জাপান তখন   ডাকছে আমাকে, সব ভয়ডর একপাশে সরিয়ে রেখে চেপে বসলাম মস্ত এক এয়ার বাসে। পরের ১৫-১৬ ঘণ্টা কেটে গেল ৩-৪ টি সিনেমা, সুন্দরী বিমানবালাদের পরিচর্যা, উপাদেয় খাবার আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুমে।বিমান হারিয়ে যাওয়ার চিন্তা উঁকি দিয়েছিল মাঝে মাঝে, কিন্তু পাত্তা দেইনি। তবে মনে মনে প্রার্থনাও বাদ যায়নি। আসলে, বিমান যাত্রাটা  সবসময় একটা জুয়া খেলার মত মনে হয় আমার কাছে।

ছবিঃ মনিশঙ্কর মণ্ডল ও আমি, হোটেল গাঊন  এবং জাপানি খাবার শুসি

সাত সকালে যখন ওসাকাতে নামলাম, তখন এক অজানা কৌতূহল, ভাল্লাগা আর টেনশন এসে ভর করল। টেনশন টা Conference কে কেন্দ্র করে। সাধারণত, Conference এ Presentation শেষ না করা পর্যন্ত আমি ভালভাবে সব কিছু উপভোগ করতে পারিনা। খাবার বিস্বাদ লাগে, ঘুরে বেড়ানো অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, আর Presentation টাইম টা শুধু  মনে  মনে কল্পনা করতে থাকি। বিশ্বসেরা গবেষকদের সামনে নিজের কাজকে প্রদর্শন করাটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ বটে। কাজটি করছি গত ৫ বছর ধরে, কিন্তু এই টেনশন টা  থেকেই গেছে।অনেক টা কলেজে সিনিওরদের সাথে মীট থাকার মত। ক্যাডেট কলেজ এই একটি ক্ষতি করেছে, “অহেতুক ভয়” জিনিসটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যা হোক, ফিরে আসি জাপান ভ্রমণে।।বিমান বন্দর থেকে হোটেল এ  আসার পথে আবিস্কার করলাম, আমার ক্রেডিট কার্ড ঠিকমত কাজ করছে না এবং সাথে ক্যাশ ও বেশি নেই। তখন মনে হল, মাঝে মাঝে স্ত্রীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত।যা হোক, আশীর্বাদ হিসাবে দেখা দিলেন বড় ভাই ও সহকর্মী– মনিশঙ্কর মণ্ডল।তাঁর  ক্রেডিট কার্ড কাজ করছে। সুতরাং, এরপর থেকে সব ট্যাক্সি ভাড়া তাঁর কার্ড থেকে যেতে লাগল। চিন্তা কিসের, টাকা দিবে প্রফেসর!

ওসাকা জাপানের বড় শহর গুলোর মাঝে অন্যতম।বিমান বন্দরটি অনেকটা সাগরের ভিতরে এবং শহর থেকে বাইরে। রাস্তা গুলোতে সব সয়ংক্রিয় টোল সিস্টেম, ট্যাক্সি থামানে লাগেনা, টোল হয় নাম্বার প্লেটএর বিপরীতে। সারি সারি বিল্ডিং আর ট্রাফিকে ঠাসা স্ট্রিট গুলো পার হয়ে যখন হোটেল এ পৌঁছলাম, তখন সকাল ৮ টা। জেট ল্যাগে ঢুলুঢুলু দুই চোখ। বেশি কথা না বাড়িয়ে বিছানায় এলিয়ে দিলাম শরীর। হোটেল এর কামরা গুলো একটু ছোট ছোট, বেডগুলো ও তাই। তবে একটি জিনিসের কমতি ছিলনা , আতিথেয়তা। হোটেল থেকে আমাদের জন্য বিশেষ গাঊন দেয়া হল, যা আমি আগে কানাডার কোন শহরে বা এমনকি জার্মানিতে ও পাইনি। যখন চোখ খুললাম, তখন ওসাকা তে পরিচ্ছন্ন  বিকাল।

বিকালে শুরু হল আমাদের খাদ্য আহরণ অভিযান। প্রচুর জাপানি দোকান, অনেক খাবার দাবার, কিন্তু সব ক্যাশ লেনদেনে বেচাকেনা। পেটের ক্ষুধা আর একটু বিরক্তি যখন মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠা শুরু হল, তখন ই ভাগ্য সহায়। গ্লবালাইজেশন কে ধন্যবাদ, আন্তর্জাতিক শপগুলোতে ক্রেডিট কার্ড নেয়। আগে শুনে ছিলাম জাপানিরা সবকিছু কাঁচা খায়।তবে মনে হল ওরা প্যাকেটজাত খাবার ও বেশি খায়। ভাত থেকে শুরু করে সব কিছুই প্যাকেটে পাওয়া যায়। জাপানি শুসি আর নুদুলস নিয়ে কৌতূহল ছিল, খেয়েছে এমন অনেকের উচ্ছাস দেখে।কিনে ফেললাম বেশ কয়েক প্যাকেট। বিল হল কয়েক হাজার ইয়েন। একটু ঘাবড়ে গেলেও পরে বুঝলাম, জাপানে কোন পয়সার ব্যাপার নেই, সবই টাকা। সে হিসাবে ১০-১২ কানাডিয়ান ডলার, সহনীয় বিশেষ করে যখন টাকা দিবে প্রফেসর!

পরের দিন থেকে শুরু হল ব্যস্ত শিডিউল, এবং আমাদের ওসাকা আবিস্কার । Conference এ ভাগ্যক্রমে পেয়ে গিয়েছিলাম কয়েকজন বাংলাদেশী ভাই বোন কে।

(চলবে…)

পুনশচঃ বাংলা লেখা থেমে গেছে ২০০৩ সালে। তাই বাংলা চর্চার মাধ্যম হিসাবে CCB কে বেছে নেওয়া,  আশাহত হলে দুঃখিত।

 

 

 

 

 

 

 

৫,২৬৫ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।