নিজের সাথে যুদ্ধ করে কাজ করার অভ্যাস সেই ছোট বেলা থেকে। ক্লাস সেভেন-টেন এ যখন হ্যান্ডস ডাউন করে পুশ আপ দিতে বলা হত, বিশেষ করে ৩০+ হলে এক পর্যায়ে নিজের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পুশ-আপ দিতাম। কিছু সিনিওর ভাই আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন, যেমন জুনায়েদ ভাই, আরেফাত ভাই।একজন কলেজ প্রিফেক্ত, আরেকজন হাউস প্রিফেক্ত। তারা আমাদের ক্লাস টেন লাইফ টাকে তাঁরা মোটামুটি ঘটনাবহুল করে রেখেছিলেন।মনে পড়ে একবার আরেফাত ভাই জুনিয়র প্রিফেক্ত (জেপি) থাকার সময় ১০০ পুশ-আপ দিতে বললেন। পোলাপাইন ৭০ এর পর সবাই শুয়ে পড়ল, আর কয়েকদিন ধরে আমাদের সবার হাতে ব্যাথা থাকল। অবস্তাকল কোর্সে ভারটিকাল রোপটা খুব চ্যালেঙ্গিং ছিল আমার জন্য। তারপর ও প্রতিবার নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে এটা পার করতাম।
সাস্কাতুনে এসেছি ২০১২ তে।প্রায় চার বছর হল, পশ্চিমা সংস্কৃতির আলো হাওয়া ভোগ করছি।মনের ভিতর একটা কৃতজ্ঞতা ও জমা হচ্ছে দিনে দিনে। আবার মাঝে মাঝে ভাবি, এই ইউরোপীয়রা এক সময় আমাদের দেশকে শাসন করেছে, শোষণ করেছে, এবার আমাদের পালা 🙂 সুতরাং, অনুভুতিটা ঠিক কৃতজ্ঞতা কিনা বলা মুশকিল।মোট কথা, এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই এবং এই লড়াই দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে।
গবেষণা একটা চ্যালেঙ্গিং পেশা।এই পেশার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, সব কিছুই অনিশ্চিত। আগে সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেছি, ফিক্সড জব ডেসক্রিপশন। বেতন ও খারাপ না। কেন একটা নিশ্চিত জব ছেড়ে অনিশ্চিতের পিছনে ছুটছি, সেটা নিয়ে নিজের সাথে যুদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাছুটি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য এসে অনেকে থেকে যায়। তাদের যুক্তি- প্রফেশনালিজম, ভাল সুযোগ পেলে কেন ছেড়ে দিতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা কারো কাছে চাকরি, কারো কাছে প্যাশান।আমার কাছে কোনটা এখনও বুঝে ওঠতে পারিনি। এটা নিয়েও চলছে নিজের সাথে যুদ্ধ।
সবার মত আমি ও Permanent Residency র জন্য আবেদন করেছি। আবেদন ও সফল হইছে, কানাডা তে সেটল করব কিনা সেটা নিয়ে একটা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। একদিকে দেশ, মাতৃভূমি, অন্যদিকে উন্নত জীবনের হাতছানি। খুবই জটিল পরিস্থিতি।এটা নিয়েও চলছে নিজের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ।
যদি কানাডাতে সেটল করি, আমার পরের প্রজন্ম বাংলাতে কথা বলতে পারবে না। অথবা ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলাতে কথা বলবে, কিন্তু লিখতে পারবে না। এই চিন্তা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মত। এটা যেন একটা গাছকে উপড়ে ফেলার মত, আর সেই গাছটা আমার পরিচয়, আমার বিশ্বাস। পৃথিবী এখন অনেক ছোট হয়ে আসছে সবার মতে। আমার চিন্তা কি খুব ওল্ড স্কুল হয়ে যাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে নিজের সাথে সব সময় চলছে যুদ্ধ।
আমার কালচারাল হানিমুন কেটে গেলেও বউয়ের টা এখনও কাটেনি।এটা একটা টেনশনের ব্যাপার।সব ডিসিশন মেকিং এ এটার একটা নেগেতিভ প্রভাব রয়েছে। উইমেন রাইটসের কথা বললে কানাডা পাবে ১০০, আর বাংলাদেশ পাবে অনেক কম।সূতরাং, কিভাবে তাকে একসময় দেশে ফেরানো যায়, কোন সেন্তিমেন্ত দিয়ে ঘায়েল করা যায়, সেটা নিয়ে চলছে যুদ্ধ।
একটা ব্যাপার পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে, এই সমাজে বেশি দিন থাকলে, নিজের সাথে যুদ্ধটা অনেক বেড়ে যাবে। সেই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয়ী হওয়া যাবে কিনা সে ব্যাপারে আমি বেশ সন্দিহান। কিন্তু জীবন সম্ভবত এমনি, যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
মাসুদ ভাই,
আপনারাও কম পাঙ্গা দেন নাই। :shy: :shy: :shy:
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।
~x( তাই কি? We possibly tried to handover the experience I guess 😀
An ordinary man with extra-ordinary ambitions
কিন্তু জীবন সম্ভবত এমনি, যুদ্ধ চলতেই থাকবে -- কথাটা ঠিকই। নিরন্তর এ যুদ্ধের যেন কোন অবসান নেই।