জাবুলানি বলের কীর্তি নাকি ওদের ‘কুকীর্তি’ ঠিক বোঝা গেল না। সবাই আনাড়ি পায়ে শট নিলেন, সেগুলো নানাভাবে এঁকেবেঁকে কোথা থেকে যে কোন দিকে গেল! এক বিশাল বপুর কৃষাঙ্গ মহিলা একটা বল তাঁর দিকে আসছে দেখে নর্তনকুর্দন করে লুফতে গিয়েছিলেন। পরের দৃশ্যটা মিস্টার বিনের কমেডি শো’কেও হার মানায়। বল ধরতে ছোট্ট একটা লাফ দিতে গিয়ে ফ্লাইট মিস করে সোজা বাংলায় একটা আছাড় খেলেন। হাসির সঙ্গে সঙ্গে দুঃখের ঘটনাও বটে, কাজেই সহানুভূতিশীল কেউ কেউ এগিয়ে গিয়ে তাঁকে টেনে তুলল। মহিলাকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত বলটাও এক শুভানুধ্যায়ী এনে দিল। কিন্তু পুরো ঘটনাপ্রবাহ কি এটা জানিয়ে দিয়ে গেল যে জাবুলানি বলের জাদু টুর্নামেন্টজুড়ে থাকবে? ইতিমধ্যে গোলরক্ষকরা এর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন, সুযোগ থাকলে নিখিল বিশ্ব গোলরক্ষক সমিতি গঠন করে এক দফা দাবিতে মানববন্ধনও করে ফেলতে পারতেন। কাল এক ফরাসি সাংবাদিকের মুখে শুনলাম, তাঁদের গোলরক্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে খেলে দেখিয়েছেন এ বল কতটা অকাজের। তারপর নাকি বলেছেন, ‘লেখেন। লেখেন। এ বিশ্বকাপে দারুণ সব গোল নিয়ে আপনারা লিখবেন। কিন্তু সেগুলো আসলে গোল হবে না, হবে প্রহসন।’
তাহলেও ওই মহিলার পতনের পুরো দায়টা জাবুলানিকে দেওয়া যাচ্ছে না। কিছুটা বোধ হয় তাঁদেরও কীর্তি, যাঁরা বলে শট নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কিনোন নামে একজনকে চিনতে পারেন, যিনি ‘ওয়েভিং দ্য ফ্ল্যাগ’ নামের গানটি দিয়ে মোটামুটি বাংলাদেশের ঘরে ঘরেও পেঁৗছে গেছেন। তাঁর সঙ্গে নামকরা আরো গায়ক, তাঁদের সুরে আজ সকার সিটিতে বসবে জমজমাট কিক-অফ কনসার্টের আসর। এ উপলক্ষেই দুপুরে এ আয়োজন, যেখানে পরিচয়পর্ব শেষে তাঁরা সারিবদ্ধ কয়েকটা বলে শট নিয়ে বিশ্বকাপের একটা আগমনী-ধ্বনি শোনাতে চাইলেন। রক গায়কদের পোশাক-আশাক বিচিত্র হয়, হাঁটাচলাও অদ্ভুতুড়ে, এর মধ্যে মালি থেকে আসা একজন তো এমন যে টিভি সাংবাদিকরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁর মুখটা ক্যামেরায় ধরতে পারলেন না। এখন তাঁদের পায়ে বল, কাজেই গোলমাল কিছু ঘটবেই। ঘটলও। হাসির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়াই যেত, যাচ্ছে না, কারণ, বলটা যে জাবুলানি! এ বল অনেক অনেক অপকীর্তির জন্ম দেবে বলে যে সুর তৈরি হয়েছে, তা বিশ্বকাপের আগমনী সংগীতকেই মাঝেমধ্যে চাপা দিয়ে দিচ্ছে।
ওদিকে যেমন কার্লোস দুঙ্গাকে চাপা দিতে কোমর বেঁধে নেমেছেন ব্রাজিলের সাংবাদিকরা। মাটিচাপা দেওয়া সাংবাদিকদের পক্ষে সম্ভব নয়, সম্ভব কলমচাপা দেয়া। কিন্তু পরশু দুঙ্গার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে মনে হলো, তাঁরা মুখচাপাও দিতে যাচ্ছেন। ব্রাজিলিয়ানদের ভাষা পর্তুগিজ, অচেনা ভাষা, তার ব্যাকরণও অজানা; তবু বোঝা গেল, খুব চোটপাট হচ্ছে। শুনে কে বলবে, একজন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক কিংবা বিশ্বের সেরা ফুটবলশক্তির কোচ কথা বলছেন! তার চেয়ে বরং কোনো রিমান্ডে নেওয়া আসামি হিসেবেই তাঁকে মানাচ্ছিল।
পুরো সংবাদ সম্মেলনটায় দুঙ্গাকে নানান কায়দায় বিদ্রূপ করে যাওয়া হলো, আর দুঙ্গা ঠিক মাঠে যেমন ডিফেন্সের সামনে চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন, তেমনই অবিচল। তাঁরা ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে কিছু জিজ্ঞেস করলে, তিনি তার চেয়েও গলা চড়ান। তাঁর এ গলা চড়ানোয় তখন আবার সাংবাদিকদের দিক থেকে আপস-মীমাংসার স্বরে একটা নিচুলয়ের প্রশ্ন আসে। তখন দুঙ্গাও ভদ্র। তাঁর এ ভদ্রতাকে দুর্বলতা ধরে পরের জন আবার উদ্ধত। তখন দুঙ্গাও। অনেক বিষয়েই দ্বিমত, এর মধ্যে সেদিন যেটা নিয়ে উত্তেজনা, সেটা মাইকন ও রবার্তো কার্লোস। এবারের ব্রাজিল দলে অনেক জায়গায়ই জগৎজয়ী খেলোয়াড়ের অভাব, কিন্তু এ রাইট ব্যাকের পজিশনটায় একেবারে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান এবং টু ব্রাজিলের। এবং অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত যে মাইকন খেলবেন। দানি আলভেস বেঞ্চে থাকবেন। সেই পুরনো বিষয়টাই আবার তারা টেনে নিয়ে এসে এমন জলঘোলা করলেন যে একপর্যায়ে দুঙ্গা উঠেই চলে গেলেন। রাগ করে!
অভিজ্ঞদের কাছ থেকে জানা গেল, রাগ করে যাওয়া নয়। দুঙ্গার সংবাদ সম্মেলন নাকি এভাবেই শেষ হয়! অথচ দুঙ্গা যে ব্যাখ্যা দিলেন, সেটা ফুটবলীয় ট্যাকটিকসের দিক থেকে ঠিকই আছে। আলভেসকে তিনি ব্যবহার করবেন সুপার সাব হিসেবে, যখন দরকার তখনই নেমে, তাঁর গতি, ক্রস দিয়ে নতুন শক্তির সঞ্চার ঘটাবেন দলে। তাঁর মতো খেলোয়াড় একাদশে থাকবেন না, এটা দুর্ভাগ্য, কিন্তু এটা তো আর দুঙ্গার দোষ নয়। তিনি তো আর মাইকন ও আলভেসকে বলেননি যে তোমরা দুজন বিশ্বের এক-দুই নম্বর রাইট ব্যাক হও। তারপর আমি তোমাদের নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার কিংবা অন্য কোনো খেলা খেলব।
ম্যারাডোনার কী হালচাল! তিনি তাঁর দল নিয়ে আছেন জোহানেসবার্গের ‘যমজ শহর’ প্রিটোরিয়ায় এবং নিজে আড়ালের ভেতর। প্রতিদিন বাধ্যতামূলক সংবাদ সম্মেলন, তিনি অখ্যাতদের সামনে ঠেলে পাঠাচ্ছেন! সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে ডিফেন্ডার নিকোলাস বারদিসো এসে জানিয়ে গেলেন, নাইজেরিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচটা জিতলেই নাকি তাঁদের মধ্যে গতির সঞ্চার হয়ে যাবে এবং সেই গতি বাড়িয়ে বাড়িয়ে তাঁরা থামতে চান ১১ জুলাই, জোহানেসবার্গে। কিন্তু ম্যারাডোনার দলে, মেসির দলে, তেভেজ-হিগুয়াইনের দলে ওঁদের কথায় কি আর মন ভরে! কিন্তু তিনি যে ম্যারাডোনা, ফুটবল যেন তাঁকে যা ইচ্ছে করার অধিকার দিয়েছে। করছেনও। দুই চীনা সাংবাদিক পরপর দুই দিন প্রিটোরিয়ায় গিয়ে বিচিত্র ইংরেজিতে আফসোস করছেন, কতগুলো ইয়েন খরচ হয়ে গেল ম্যারাডোনাকে দেখতে…। অথচ… ম্যারাডোনাকে দেখতে আজও সেই উন্মাদনা। আজও তিনি সেই স্বপ্নের নায়ক। তারকা যেমন দূরে থেকে নিজের মর্যাদা বাড়ায়, তিনি এ জোহানেসবার্গের হট্টগোলের বাইরে নিজেকে রেখে যেন দেখাচ্ছেন, আমি সামনে না এলে, আমি মুখ না খুললে অনেক কিছুই হয় না।
দুঙ্গাকে তোপের মুখে রেখে, ম্যারাডোনাকে স্বনির্ধারিত আড়ালের জীবনে রেখে বিশ্বকাপ কিন্তু শুরু হয়ে যাচ্ছে আগামীকালই। এবং সকার সিটিতে আজ এর প্রথম আগমনী সুর বাজাতে তৈরি কিক অফ কনসার্টের নামী-দামি সব তারকা। ফুটবলে কাল শুরু, গানে গানে আজই।
ফুটবল আর গান কোথায় একীভূত! জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ‘ওয়েভিং দ্য ফ্ল্যাগ’-এর গায়ককে। তিনি একটুও না ভেবে বললেন, দুটিই বৈশ্বিক। গান যেমন বিশ্বের সব মানুষের, ফুটবলও তেমনি।
সবার, সব মানুষের উৎসবের সুরেলা আবাহন আজ। যে আবাহনে মানবতার কথা আছে, ঐক্যের সুতো আছে, আনন্দের অবিরল ধারা আছে।
দিন বাদ দিয়ে ক্ষণ গণনা শুরু করুন। আর মাত্র…
—
মোস্তফা মামুন
জোহানেসবার্গ
গোল 🙂
অফসাইড । 🙁
আরে ব্যাপার না, গোল তো রংপুরের পক্ষেই দিলাম 😉
ঝগড়া করার অপরাধে দু'জনকেই লাল কার্ড...। আউট...। এখন আমিই :ahem:
মামুন ভাই,
ভালো লেগেছে...চালিয়ে যান...।
মামুন ভাই, জানি অনেক ব্যস্ততা আর দৌঁড়ের মধ্যে লেখা দিচ্ছেন... :-B
তবুও একটা আবদার ছিল... O:-)
পোষ্টের লেখার মাঝে মাঝে যদি দু'একটা ছবি দিতেন... ;;)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ছবি ... :thumbup: :thumbup: :thumbup:
মামুন ভাইখুব ভালো হৈসে..........................।
মামুন ভাইকে দুখ করতে দেখেছিলাম উনি কোনদিন কাকার হলুদ কার্ড দেখেননি বলে... আজ একেবারে লালকার্ড পর্যন্ত দেখে ফেললেন 😀
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ওয়ার্ল্ড কাপ নিয়ে তর্কাতর্কি করার জন্যে একটা স্টিকি ব্লগ থাকা উচিৎ। সব খেলার পরে ঐখানে কমেন্টের মধ্যে আমরা তর্কাতর্কি করতে পারতাম। আহসান বা কামরুল বা এহসান ভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।