“কি আশিক ,ভয় পাচ্ছ নাকি ?”
”No please”-‘ভীতুর ডিম্ব ’ আশিক অস্বীকার করলেও no আর please শব্দ দুইটা উচ্চারণের ভাব-ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারলাম বেচারা কি রকম ভয়ের মধ্যে সময় পার করছে ।ডিম লাইটের আলোয় সবার চেহারা বোঝার চেষ্টা করছি।ক্ষণিকের মধ্যে এতটুকু বুঝলাম,আমার বাম পাশের বক্তারা হল কিছু বড় ভাই যারা তাদের পুঁটলি থেকে স্মার্ট ভৌতিক কাহিনি ছুড়ে যাচ্ছে আর ডানপাশের শ্রোতারা যথারীতি আমার নিষ্পাপ শিশুস্বরূপ বন্ধুরা;যারা কিনা সেই গল্পের আঘাতে বিচলিত হয়ে ভয়ের হিমসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।
“hey,,মামুন …… Why’re you so late?” অন্ধকারের মধ্য থেকে কে যেন প্রশ্নটা করল।যথারীতি এই প্রশ্নের জন্য আমার সেট করা উত্তর “sorry ভাই, washroom এ
ছিলাম”; “তাই বলে এতক্ষণ …….?”বুঝলাম এই উত্তরে ভাইয়া মোটেই সন্তুষ্ট হন নাই..তারপরও বললেন “যাও…ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বস”।আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে পড়লাম।
আজ সন্ধায়ই prep timeএ কে যেন বলছিল ,ভাইয়ারা রাত এগারটায় dorm number 13 এ আমাদের ক্লাস-এর সবাইকে একসাথে থাকতে বলেছে।ব্যাপারটা ফার্স্ট টাইম স্রেফ গুজব বলে চালিয়ে দিলেও এখন দেখছি কাহিনি সত্য।তবে এইসব gather আমি একদমই পছন্দ করি না দুইটা কারনে।এক.সকাল সাড়ে পাঁচটায় উঠে PT করাই লাগবে,তাই এসব time loss এর চেয়ে ঘুমটা বেশি প্রয়োজনীয়। দুই.বড় ভাইগুলা বড্ড বেশি কথা বলে,আমার মাথা ধরে যায়।
’serious’সাকিব মাঝে মাঝেই বলে”এদের আজাইরা লেকচার শুনতেই কি বাপ-মাএ ক্যাডেট কলেজ –এ পাঠাইছে ??”
যাই হোক,কিছুক্ষণ বসেই বুঝলাম,জমজামাট আসর।আজ মনে হয় রাত বারোটার আগে কোন ব্রেক আপ হবে না।ফ্যান গুলো বন্ধ থাকায় নাহিদকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম,”এই গরমে ফ্যান বন্ধ ক্যান ??”নাহিদ বলল,”ফ্যান বন্ধ রাখতে বলছে… ভাইয়াদের খেয়াল !”………….
করিম ভাই ইতিহাস পড়ানোর স্টাইলে বলতে থাকেন“১৯৭১-এ আমাদের হাউসেই ছিল এই অঞ্চলে পাকিস্তানিদের torching cell,হানাদাররা আশেপাশের গ্রাম থেকে বাঙালিদের ধরে নিয়ে এসে এখানে ভয়াবহ অত্যাচার করত;কত মানুষকে যে তারা এখানে মেরেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই;লাশের কাটা হাত-পা তোমাদের এই শেলফগুলোয় ঢুকিয়ে রাখতো,না হলে কলেজের পুকুরে ফেলে দিত…..আর আমাদের ফুটবল মাঠে ছিল ওদের গণকবর।আজকাল তেমন কিছু হয় না,কিন্তু স্বাধীনতার পরেই যেসব ক্যাডেট ভাইরা এই হাউসে উঠেছিল তাদের অনেকেই খারাপ খারাপ জিনিস দেখেছে……………” কথাটা বলে একটু নিঃশ্বাস ফেলেন করিম ভাই ”এই যেমন, মাঝে মাঝে রাত-বিরাতে কেউ কেউ দেখত,ফ্যানে রশি পেঁচিয়ে কে যেন ঝুলে আছ ; এই cupboardগুলার কোনায় রক্তের ছাপ ভেসে উঠে আবার অদৃশ্য হয়ে যেত,আবার অনেক বড় ভাই তাদের বিছানার নিচে মরা লাশ পরে থাকতে দেখেছে ;আর মেয়েদের কান্না,অস্ফুষ্ট আর্তনাদ টাইপের অদ্ভুত শব্দ তো অনেকেই শুনেছে …………”,করিম ভাইয়ের কাছ থেকে কথা ছিনিয়ে নেন ফেরদৌস ভাই“হুম..ফরিদ স্যারের কাহিনীটা বলি ?”আমিই জিজ্ঞেস করি”আমাদের ফরিদ স্যার ??”ফেরদৌস ভাই হেসে বলেন”হা,ফরিদ স্যার তো একটাই !”
এইবার আমিও সিরিয়াসলি ভয় পেতে শুরু করেছি;বুঝতে পারলাম হাতের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে।কারন এখনও পর্যন্ত আমি মনে করি কলেজে সবচেয়ে বড় ভীতির কারণ এই ফরিদ স্যার। বড় ভাইরাও স্যারের মাইর থেকে রেহাই পায় না আর আমরা চুনোপুঁটিরা তো এক মাইল দূর দিয়ে চলার চেষ্টা করি……..তবে একথা অনস্বীকার্য যে ,স্যার অনেক জানেন।ভাইরা বলে,”ফরিদ স্যারের নিঃশ্বাস দিয়েও জ্ঞান বের হয়”ফেরদৌস ভাই একটু কেশে কণ্ঠস্বর নামিয়ে শুরু করলেন “স্যার ছিলেন ঐ রাতে Night duty master।জানোই তো night dutyতে স্যাররা আমাদের হাউসের ছাদের চিলেকোঠা টাইপ রুমটাতেই থাকে।যথারীতি ফরিদ স্যারও ছিলেন।রাতে জেনেরাটর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে কারেন্ট চলে যায় আর স্যারও বাইরে বের হয়ে এসে সিগারেট ধরান…..খানিকক্ষণ পর ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে স্যার আবিষ্কার করলেন ছাদের উপর একটা মেয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে……বয়েজ ক্যাডেট কলেজে মেয়ে কোত্থেকে আসলো ??,স্যারের মাথা কাজ করছিল না।হাতের টর্চ জ্বালিয়ে দেখলেন ওখানে কেও নেই, ভাবলেন illusion ই হবে বোধ হয়……কিছুক্ষণ ছাদের হাঁটতে হাঁটতে আবার দেখেন ঐ মেয়েটিকে;মেয়েটি পরমা সুন্দরী;কিন্তু কি শীতল চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল স্যারের দিকে।কাঁচের উপর ছায়ার শরীর নিয়ে সে আসতে থাকে স্যারের দিকে। কাছে আসতেই স্যার লক্ষ্য করলেন মেয়ের হাতে একটা ট্রে আর তার উপর অস্পষ্ট কিছু একটা রয়েছে ;আরেকটু কাছে আসতেই দেখেন ট্রে–এর উপর একটা কাটা মাথা আর জমাট বাধা রক্তে ট্রের উপরটা লালচে হয়ে আছে……..আরো কিছুক্ষণ ভালভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারেন কাটা মাথাটা অচেনা কারো নয় বরং তার নিজের…………”এই বলে ভাই থামলেন ,আমরা সবাই একসাথে বলি ”তারপর??””তারপর,স্যার তো জ্ঞান হারালেন………তো স্যার আর জীবনেও ছাদে ওঠেননি;night duty থাকলে নিচতলায় হাউস অফিসেই শুয়ে থাকেন”। আমি দেখলাম সবাই তাদের চাপা নিঃশ্বাসটা ছেড়ে দিল।পাশ থেকে নাহিদ ফিসফিস করে বলে,”ব্যাপারটা আসলেই সত্যি রে মাম্মা,আমিও স্যারকে কখনো উপরে উঠতে দেখিনি”
ফেরদৌস ভাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার শুরু করেন“এই কাহিনির এক বছরের মাথায় House prefect ফাহিম ভাই এক পূর্ণিমার রাতে একটা inspection দিয়ে দোতালার balcony তে দাঁড়িয়ে ছিলেন,হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে যায়।সব নিথর চুপচাপ,শুধু তাল দিয়ে ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে চলেছে।তৎক্ষণাৎ তিনি দেখলেন একটা পিচ্চি বাচ্চা হাউস গার্ডেনের পাশে রেইন ট্রি গাছে উঠার চেষ্টা করছে। উনি shout দিলেন ”কে ওখানে ? Who’s that??”বাচ্চাটা লাফালাফি বন্ধ করে তার দিকে তাকাতেই পূর্ণিমার আলোয় উনি স্পষ্ট দেখলেন চোখের মণি নামক কোন বস্তু ছেলেটার নাই; পুরো চোখটাই সাদা।মুহূর্তের মধ্যে জেনেরাটর চালু হয়ে কারেন্ট আসতেই সব উধাও ! !” ইতিমধ্যে আমার পা অবশ হয়ে গেছে। আমি খেয়াল রাখছি বিছানার তল থেকে কেউ আমার পা চেপে ধরে নাকি ……………
এক সময় গল্প শেষ হয়।এতক্ষণ গরমে বসে থেকে আমি একেবারে ভিজে গোসল ।ভাইরা চলে গেলে আমি বন্ধুদের বলি “কেও কি shower নিবি ?” ”নারে দোস্ত,আজকে আর ঐদিকে যাব না”আমিও বুঝলাম সবারই খারাপ অবস্থা ।কিন্তু কি করব? এখন গোছল না করলে রাতের ঘুম হারাম আর বাথরুমে যেতেও মনে হচ্ছে পুলসিরাত পাড়ি দিতে হবে।একজনকে গার্ড দাঁড় করাতে পারলে ভাল হত।কিন্তু কারও এতটুকু ইচ্ছা নাই।শেষমেশ অনেক সাহস সঞ্চয় করে একা একাই গেলাম বাথরুমে।শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছি।মনে হচ্ছে পানির ফোঁটাগুলো কাঁটার মত গায়ে এসে বিঁধছে।সব চুপ,খালি পানি পরার শব্দ।তৎক্ষণাৎ আবিষ্কার করলাম,শাওয়ার দিয়ে পানি পরছে না,পরছে রক্ত !! তাড়াতাড়ি গামছাটা পরেই বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি সব কলই খোলা আর তা দিয়ে সারা বাথরুম রক্তাপ্লাবিত। ঘটনা না বুঝতেই দেখি কালো আলখাল্লা পরা একটা ছায়া মূর্তি বাথরুমের দরজা ভেজিয়ে দাঁড়ানো আর প্রতি মুহূর্তে ঐটা কাছেই আসছে।আমি জীবনে এই প্রথম আমার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি এবং মনে হচ্ছে এতা এখনি বন্ধ হয়ে গেল…টের পেলাম হাত-পা মৃগীরোগীদের মতো কাঁপছে……………হঠাৎ একটা অজানা শক্তি এসে আমার উপর ভর করে।নিজের উপর হারিয়ে ফেলি নিয়ন্ত্রন। দৌড়ে গেলাম ঐ কালোমূর্তির কাছে………………”আল্লাহু আকবার”বলে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারলাম একটা ঘুষি …তারপর চোখ বন্ধ করে আরেকটা পরে শুরু করলাম লাত্থি ।একসময় ভুতটা মাটিতে পরে যায়;“আর মারিস না………আরে আমি তোর ফেরদৌস ভাই”ভাইয়ের গোঙানিতে তখন অন্যভাইরাও ছুটে এসেছে।ফেরদৌস ভাই কোনরকমে উঠে দাঁড়ালেন। আমি স্পষ্ট দেখলাম,তার মুখে ঘুষির দাগ বসে গেছে।
কবির ভাই বললেন“কিরে ফেরদৌস ,ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই ভয়ে পেয়ে গিয়েছিস ??”ফেরদৌস ভাই কান্নার সুরে বলল”হ্যাঁ রে দোস্ত,ভুতেরও সাজা পেতে হল”।
৮ টি মন্তব্য : “ভয়”
মন্তব্য করুন
হাহাহহা।
বিশাল মজা পাইছি।
ভয়ও পাইছি ।
সেইম কাহিনি আমাদের হইসিল.........হা হা হা......এখন মনে পড়লে মজাই লাগে । 😛
আশিক মানেই মজা
ভালো ছিল দোস্ত :clap: :clap: :clap: ;;) ;;) ;;) (সম্পাদিত)
রক্তিম প্রসাদ প্রাচীরে বন্দি সবুজ মায়া
এরি মাঝে খুজে ফিরি নিজের অচেনা ছায়া..
ভাবতেই ভাল লাগছে......সেই একই কাহিনি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে... আমরাও ডর্ম-১২ এ বসে এই ধরনের কাহিনি শুনেছি এবং একসময় শুনিয়েছি... হা হা হা হা হা
ব্লগে স্বাগতম, দেখি তো কেমন :frontroll: দেওয়া শিখেছো ... 😡 😡
:boss: thanx to all
ভালো ছিল দোস্ত
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
amader montasin forhad er bed er niche walkman rakhto...tar sound shune o voy e amar sathe pray bed share korto...ha ha ha...Mahmud,Red-37th,JCC