সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হাসান সাহেবের মেজাজটা খিটখিটে হয়ে গেল। বিছানায় ছোট ছেলেটা বিপুল উৎসাহে পিপি করে দিয়েছে। আর সেই পিপির কোমল এবং উষ্ণ পরশেই তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে। বিরক্ত হয়ে গোসল করতে যাওয়ার সময় বাথরুমের দরজায় বাড়ি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন। গোসল সেরে বের হয়ে পাঞ্জাবি পড়ে বাইরে যাওয়ার সময় দেখে্ন তাঁর পাঞ্জাবির হাতায় গোল হয়ে ঝোলের দাগ বসে আছে।
নীলু তার বাবাকে প্রচন্ড ভয় পায়। বাবা তাকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যায় এবং এই সময়টাতে নানা রকম উপদেশ দেয়। তার বেশির ভাগ উপদেশ হচ্ছে নানার বাড়িতে যেসব মানুষ আছে তারা পিশাচ প্রক্রিতির এবং সেই মানুষদের সাথে যেন সে কখোনও কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখে। কিন্তু নীলু তার মামাদের অনেক পছন্দ করে। বড় মামার বাসায় গেলে উনি নীলু মা ,নীলু মা বলে ছু্টে আসেন। মামী সারাবছর বাতের ব্যাথায় বিছানায় থাকেন, তিনি পর্যন্ত রান্নাঘরে গিয়ে নীলুর প্রিয় সরিষা বাটা ইলিশ রাঁধতে শুরু করেন।
নীলুকে স্কুলে পৌছে দিয়ে হাসান সাহেব তাঁর স’মিলে রওনা দিলেন।আজ তাঁর বাসার সামনে তিনটা গাছ কাটা হবে। অনেক দিন পর খুব ভাল ক্লায়েন্ট পাওয়া গিয়েছে। নীলু অবশ্য এটা নিয়ে খুব ঝামেলা করছিল। সে গাছ তিনটা কাটতে আপত্তি জানাচ্ছে কারন গাছের আগায় নাকি দুটা কাকের বাসা আছে। এবং সে বাসাতে নাকি দুটা কাকের বাচ্চাও আছে। হাসান সাহেব অবশ্য এসব ছেলেমানুষী ব্যাপার পাত্তা দিলেন না। তিনি যন্ত্রপাতি নিয়ে রওনা হলেন।
নীলু স্কুল থেকে ফিরে দেখে তার বাসার সামনে কাকগুলো বিষন্ন গলায় ডাকাডাকি করছে এবং তার অতি আদরের তিনটা গাছের মধ্যে দুইটা গাছ ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। তার চোখ ভর্তি করে পানি চলে আসল। সে দৌড়ে গিয়ে না কাটা গাছটি জড়িয়ে ধরল। হাসান সাহেব মেয়ের এই কান্ড কারখানায় খুব বিরক্ত হলেন। তিনি মেয়েকে দুটো শক্ত চড় কষালেন এবং টানতে টানতে বাসায় নিয়ে গেলেন।
রাতে নীলুর প্রচন্ড জ্বর আসল। জ্বরের ঘোরে সে উল্টাপাল্টা কথা বলতে লাগলো। নীলু ঘোরের মধ্যে দেখতে লাগল হাজার হাজার গাছ নীলুর দিকে এগিয়ে আসছে আর বলছে ‘নীলু এসো, নীলু এসো। অন্ধকার ওই জগৎ থেকে তুমি আমাদের এই আলোতে এসো। আমরা তোমাকে চাই। আজ থেকে তুমি আমাদের এই আলোর জগৎ এর নাগরিক…………………
রাত ১১টায় নীলু মারা গেলো।
নীলুর জন্য ভালবাসা
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম