বিবেকের শুভঙ্করী

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। কোথায় যেন পড়েছিলাম। ঠিক মনে নেই তবে পুনরাবৃত্তি দেখছি বলে বিশ্বাস করি। আবেগ আজ আঁকড়ে ধরেছে বাঙালির বিবেকের জমিন। গগনবিদারী শ্লোগানে অন্যায়ের ভিত কেঁপে কেঁপে উঠতে দেখছি। একেকটি শ্লোগান যেন, একেকটি জীবন্ত উল্কাপিণ্ড হয়ে আছড়ে পড়ছে নিমিষেই। ৪১ বছর পর দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে আবার। ২৫ শে মার্চ কি কিছু মনে করিয়ে দেয়না এই স্বাধীনতা-বিরোধী দালালদের ? ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বোধ হয় একটু দেরি হয়ে গেছে। বাঙালি দমবার নয়, এই জাতি অধিকার আদায়ে কখনও পিছ পা হয় নি। তবুও কতো কিছুই না ঘটে। ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার স্পর্ধা যখন দেয়া হয়েছিলো, বাঙালি ছিল তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত, অর্ধনগ্ন, অভুক্ত। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ, যেখানে ”অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান” এর অভাব সিন্দাবাদের ভুতের মত ঘাড়ে চেপে বসে, সেখানে দেশপ্রেমের আবেগ তুচ্ছ হয় দাড়ায়। অশিক্ষা ছিল সেখানে প্রভাবক। ঠিক দুটি দশক পেরোতেই বাঙালি আবার দেখলো গণজাগরণ। স্বৈরাচারীর শিকল ছিঁড়ল রক্তিম শ্লোগানে, ”স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক”…… এতদিনে সিন্দাবাদের ভূতের হাত থেকে কিছুটা নিষ্কৃতির পথে বাঙালি। তাই, গণতন্ত্র এলো বধূর বেশে, বাঙালির কাঁধে চেপে পালকি করে। ভাবলো বাঙালি, ”বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে এইবার। দেশ তোমার, আমার, সবার”….. পাকিপ্রেমিরা তখন দাঁত কেলিয়েছিলো, তারা বলল, ”রাত বাকি, তো বাত বাকি”………

 

পেরোলো অন্যায়ের আরও দুটি দশক। দাবার গুঁটি গুনতে গুনতে বেমালুম ভুলেই গেলেন আমার দুই আপা, বাঙালি দিন দিন তাঁর পায়ের নীচের কাঁদা মাটিতে সিমেন্ট ঘসতে শুরু করেছে। সাথে যোগ হল হাস্যকর ট্রাইবুনালের ব্যভিচারী রায় আর ওই যে বঙ্গবীর (শুয়োরের বাচ্চা)-এর ভিক্টরির দুটি আঙুল। ব্যাস। বাকিটা ইতিহাস টেনে নিলো তাঁর অক্ষয় অতল গর্ভে।

 

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। দেখিনি কোন গণআন্দোলনে জনতার ঢেউ। তবে আমি শুনেছি, শাহবাগে মুক্তিকামী মানুষের অধিকার আদায়ের বজ্র কণ্ঠ। যুদ্ধ দেখিনি তো কি হয়েছে? বিপ্লব যে আমার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত। জাতীয় সঙ্গীতের সাথে আমার আবার দা-কুমড়ো সম্পর্ক, শুনলেই চোখ ভিজে যায়। অনেক ভেবেছি। এমন কি শুধু আমার সাথেই হয়? না, ভুল ভেবেছিলাম। আমি হাজারো অশ্রুতে দেখেছি দেশপ্রেম। দেখেছি স্বাধীনতা, ভালবাসা নামক দুর্জয় শব্দগুলোকে নুতন করে সংজ্ঞায়িত হতে। নাটকের দৃশ্য বদল হয়েছে এইবার। ধর্মকে পুঁজি করে সাধারন জনগনকে অধিকার বঞ্চিত করার ফলাফল ওদের জীবদ্দশায় দিয়ে দিলাম আমরা। কর্মফলে বিশ্বাস না রেখে উপায় কি এখন??

 

এখন বলছি ৩৫ বা ৩৫ ঊর্ধ্ব ”মন-বৃদ্ধ” মানুষের গল্প। জি… আপনাদের বলছি। আপনারা বারবার আমাদের নিরুৎসাহিত করার আশায় ”শ্রুতিমধুর শুদ্ধ বাক্য” ব্যবহার করে চলেছেন নির্দ্বিধায়। বলছেন, ”কি করতে পেরেছ তোমরা?” আমি বারবারই হেসেছি আর বলেছি, ”৫২ কি মনে পড়ে না?? ৭১ কি সপ্ন দেখায় না??” …… জানি। আপনারা জীবনের চক্রপিষ্টে বউয়ের ”শাড়ি-চুড়ি”র ফাঁদে আটকে আছেন। মনে রাখবেন, কোন বৃহত্তর স্বার্থে নিজের বিবেকে প্রশ্ন করার সুযোগ জীবন বারবার দেয় না। আর যদি প্রশ্ন করার শক্তি হারিয়ে থাকেন, তবে দয়া করে নিরুৎসাহিত করবেন না। ছুটির দিনের দুপুরের ভাত-ঘুম আপনার জন্য। আমাদের জন্য নয়।

 

এখন বলি নিরপেক্ষদের কথা। আপনারা বলেন, ”যুদ্ধের থাকবে কেউ পক্ষে কেউ বা বিপক্ষে। বাঙলাদেশ স্বাধীন না হলে মুক্তিযোদ্ধারা হতো দেশদ্রোহী আর রাজাকারেরা বীরশ্রেষ্ঠ। ওরে আমার জ্ঞাণের ঢেঁকি, কেন বুঝেন না, মুক্তিযোদ্ধারা তো আর আপনার মা-বোনকে ধর্ষণ করতে যায়নি, ঠাণ্ডা মাথায় আপনার দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করেননি। আপনার মা-বোনেরা তাদের কাছে ”গনিমতের মাল” বলে গালি শুনেননি। এই কাজগুলো সিদ্ধহস্তে করেছে, রাজাকারেরা। আপনাদের ”নিরপেক্ষ বিবেকের” কাছে প্রশ্ন করুন। যা জবাব পাবেন, তা শুনে নিজের গালে নিজেই চড়াতে থাকবেন দিবানিশি।

 

এইবার বলি আমি আমার কথা, আমাদের কথা। ধর্মনিরপেক্ষ দেশের নাগরিক আমরা। সংবিধান অনুসারে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আর জামাত-শিবির (মূলত পাকিপ্রেমি)-দের দলীয় সংবিধান হল ”আল্লাহ্‌ সকল ক্ষমতার উৎস” আবারও বলছি, আমি ধর্মবিরোধী নই। ধর্ম যার যার, দেশ সবার। আমি বিশ্বাস করি এই জামাত-শিবিরের সংবিধান আমাদের স্বাধীনতার চেতনায় গড়া সংবিধান পরিপন্থী। আমাদের মনে রাখতে হবে জামাতি ইসলাম হল সেই স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তি যারা সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দেশকে পঙ্গু করতে বসেছিল। রাজাকারের বিচারের সাথে সাথে এই ভন্ড গোষ্ঠীকে বাঙলায় নিষিদ্ধ করতে হবে।

 

আমি বলছি, যাদের জামাতিরা ”মালাউন”, ”কাফের” বলে তারা আমার ভাই। আমার সহযোদ্ধা। সাহস থাকলে আর একবার বলে দেখ শুয়োরের বাচ্চারা। দেখি জোর আছে কার কতো??

 

আজ আমাদের বিপ্লবে কোন ধর্ম নেই। নেই কোন দল। ঈশ্বর সব জাতির উপর কোথায় এতোটা দয়াশীল হন?? বিঃ দ্রঃ ” চ ”- তে ”চৌধুরী মইনুদ্দিন”— তুই রাজাকার, তুই রাজাকার। (বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম নীল নকশাকারী)

 

৬৮৪ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।