“ মরণ — তোমায় স্বাগতম ”
আমি জানি সে আসবে, ধীর পায়ে, ধীর লয়ে
হয়তো তখন মাঝ-দুপুর,
রোদ মেখে মেখে হেঁটে হেঁটে খুব হয়রান আমি
এই ক্লান্ত বেলায় তুমি এলে ধূলিমাখা নগরের রাজপথে
অথবা তখন নিশীথ বেলা, আকাশের তারাদের সনে জোনাকীর
মিটি মিটি লুকোচুরি খেলা তখন ও অবিরাম,
ঠিক তখনি আমায় চুপি চুপি ডাক দিলে নিভে যেতে
এই তারা-জ্বলা আকাশে, মোহগ্রস্ত এই আমি
হারিয়ে গেলাম জোনাকীর দলে, তোমারই নিবিড় আহবানে।
কিংবা তখন শণে-ছাওয়া পল্লী কুটিরের বুকে,
শুয়ে শুয়ে গুনে ফিরি আকাশের তারা,
বেড়ার ফাঁকে গলে আসা পূর্ণিমার আলোতে
তখন ও মুছে যায়নি আকাশ ভরা আবীরের রঙ,
পৃথিবীর সব রং মেখে নিয়ে শ্যাঁওলা-জমা জলার মাঝে
গোলাকার চাঁদ বুঝি ডুবি ডুবি করছে
আর তুমি ও তখন আমায় নিয়ে টুপ করে ডুবে গেলে
শ্যাঁওলা-ছাওয়া আঁধারের জলে
নয়তো তখন ক্লান্ত বিকেল —
সারা শরীরে আঁকা-বাঁকা সব লতা জড়িয়ে
পড়ে আছি- ধবল বিছানায়, নিস্পন্দ-নিথর
তখন ও বুকের থেমে থেমে কেঁপে উঠা দেখে
পরিচিত সব প্রিয় মুখ,
আশা নিরাশার ঢেউয়ে কেঁপে কেঁপে খুব অস্থির
হয়তো তখনি জানালার শার্সির ফাঁক গলে
আমার বুকে বড় এক কাঁপুনি দিয়ে গেলে
— তারপর তুমি-আমি
সবকিছু অচঞ্চল, স্থির।
ঠিক জেনো, হতে পারে তখন আমি মিছিলের ঢেউয়ে,
মানুষেরই ভীড়ে
চারিপাশে অগনতি সব মুখ, অচিন সব পা,
অজস্র হাত, মুষ্টিবদ্ধ…
মানুষের মত বাঁচতে চেয়ে আমিও আর সবার মত
ফুসফুসের সব বায়ু টেনে নিয়ে করে যাই সুতীব্র চিৎকার
ঠিক তখনই — সবকিছু নিস্তব্ধ কর দিতে
তুমি এলে বুলেটের ছলে —
আর তাই চারিধার রক্তাক্ত, নিথর
আমি জানি তুমি আসবে, ঠিক্ ঠিক্
বন্ধু, তোমায় —
আমার সাদা-কালো-নীল ভুবনে জানাই স্বাগতম …
আমি জানি তুমি আসবে, ঠিক্ ঠিক্
বন্ধু, তোমায় —
আমার সাদা-কালো-নীল ভুবনে জানাই স্বাগতম …