আমাদের কাব্য

ব্যস্ত সকলি, বাঁচিবে যেন,যদি দিতে পারে ছাড়ি,

নাড়ীর বাঁধন কাটিব কে্মনে বুঝিবার নাহি পারি।

সকলেই বলে যাও,যাও,যাও,এই তল্লাট ছাড়ো,

খুঁটিটা তুলে এ আঙ্গিনা থেকে অন্য কথাও গাড়ো।

ছয়টি বছর! কেমন করিয়া নিঃশেষ হল প্রায়,

সায়াহ্নে এই জীবনবেলার,কতো কথা ছিলো হায়!

 

সপ্তমে সেই ভীরু ভীরু পায়ে এই আঙ্গিনায় আসা,

তখন কি হায় বুঝেছিনু হায়! এই হবে মোর বাসা !

বিদায়ের কালে মা-বোন কাঁদিলো চোখ ঢাকি আঁচলে,

বাবাও যে মুখ ঘুরিয়ে রাখে “চোখে কি পরলো” বলে।

ছোট্ট ভাইটি কিচ্ছু বোঝেনা,কেবলি মুচকি হাসে,

বিষাদেরা কেন গুমরি কাঁদে, কি গোপন উল্লাসে?

যাইবার কালে বোন বলে ভাই,”চিন্তার কিছু নাই”,

“নভেল-গল্প” জমিয়ে রাখবো, এবার তাহলে যাই?

অশ্রুজল মুছাইয়া দিয়া, সব গেল মোরে ছাড়ি,

শূন্যতা যেন ফুলিয়া উঠিল আমার এ বুক ভরি।

রাতের আধারে বিষাদ অশ্রু, কথা শুনিল না আর,

দুই-চোখ ভরি,অঝোরে ঝরিল,সব ভিজে একাকার।

কেন বাবা তুমি,আনিলে মোরে,এ কোন কঠোর জেলে?

চাই নাগো আর,কিছু আমি শুধু মায়ের আদর পেলে।

ছোট্ট হৃদয় কড়া অভিমানে, বিছানা-বালিশ ভাসে,

সেদিনের ছোট আমার সে কথা, ভাবি আজ হাসি আসে।

সেদিনের পর ,ছোট্ট ছেলেটি কাঁদেনিতো কোনদিন,

কান্না জমিছে,বেরুবে যেদিন বাঁজিবে যে শেষ বীন।
“কাঁদুনে স্বভাবে ছোট্ট ছেলেটি দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠি,

কত বড় ছেলে,হয়ে গেছে সে যে,মিলিয়া গিয়াছে ছুটি।

কত স্মৃতি মোর,এদের সাথে,কি করে যাবো যে ফেলি,

আর কটা দিন সময় দে আয়, স্মৃতির দুয়ার খুলি।
নবম-দশম কেমনে কাটিল,যেন এক আঁখিপলে,

সেই সময়টা শ্রেষ্ঠ যে মোর,সব সময়ের দলে।

দিন-রাত শত বাঁদরামো করে,শুতে যাইতাম যবে,

জীবন এত মধুময় হবে,ভাবিয়াছিলাম কবে?

কত খেলা হায় জমিয়া উঠিত আমাদের ছোট ঘরে,

মেসি,কাকা আর রোনালদো কি এতটা জমাতে পারে?

ক্লান্ত,শ্রান্ত আমরা রাতে,কষিয়া দিতাম ঘুম,

ইচ্ছাদেবী ঘুরে ঘুরে দিত মোদের কপালে চুম।

আর একবার আসো দেবী আর একটা কথা যে রাখো,

কলেজ জীবনে শেষ কটা দিন,মধুমায়া ভরে মাখো।
একাদশের সেই উড়ন্ত দিন, সব যেন ছাড়া ছাড়া

ঘুরিয়া ফিরি,উড়িয়া বেড়াই,মন যে বাঁধনহারা।

সকলে চাহিল বাঁধিতে,বলে “এ্কটু থামনা দাদা,”

উত্তরে বলি “দেখেছো কি কভু,’এগার’ পরেছে বাঁধা?”

হঠাৎ আসিল শিক্ষা-সফর,কে যাবি,কে যাবি?চল!

চষিয়া বেড়াব বাংলা আমার,আমরা তরুণ দল।

ফিরিবার কালে কি শেল বিঁধিল হৃদয়ের ছোট কোনে,

সেই ফেরা যে শেষ ফেরা হবে,হঠাৎ পড়িল মনে।

সকলে কাঁদিল, পাষান ছেলেটি,কাঁদেনিতো সেইদিন,

কান্না জমিছে,বেরুবে যেদিন,বাঁজিবে যে শেষ বীন।

 

একাদশ শেষে দ্বাদশের বেলা গুটি পায়ে হেঁটে আসে

সবচে’ বড়,সবচে’ বৃহৎ বছর আঠারো মাসে।

সব ছোটোদেরই গোপন বাসনা,বড় সে কবে যে হবে,

মোরা বুঝি আজ বড়দের মত, জ্বালা কারো নাই ভবে।

ছোটদের মত সারা দিন ধরি,ছোটা হয় নাকো আর,

ব্যাথা হাসি ভরা সেই দিনগুলি,মনে পড়ে বার বার

চারিদিকে আজি ছেয়ে গেছে ,সব নতুন ফুলের ঝাঁক,

মোর দিন শেষ, ঝরিয়া পড়িব, আর কটা দিন যাক।

একই বৃন্তের পঞ্চাশ ফুল, যাবে আপনারই পথে,

ছয় বছরের পথ শেষ করি, উঠিবে আপন রথে।

তোদের ছাড়িয়া যাইতেই হবে ভাবিয়া যে মন পোড়ে,

কে উঠিবে আর,সূর্যেরও সাথে, রোজ কাক ডাকা ভোরে?

কার কথা শুনি সকলে বসিয়া হাসিব আপন মনে,

হাসির মাঝেতে কানে হাত দিয়া, কেইবা পড়িবে কোনে?

কেইবা ঘুমুবে পিছনে বসিয়া সারা দিনরাত ভরি,

কেইবা বাঁচিবে বুদ্ধি বেচিয়া, “বুদ্ধি” নামটি ধরি।

কে যাবি কোথায়, জীবনেরও পথে, ছাড়ি বন্ধন সব,

হবে নাকও আর একই পথে হাঁটা, হবে নাক কলরব।

যাই দেখি আজ মনে হয় সেটি পাওয়া হবে নাক আর,

নিষ্ঠুর এই কলেজ আঙ্গিনা, কভু নাহি দিবে ছাড়।

যাইবার কালে তোদের দুচোখ অস্রুসজল হবে,

সেই ছবিখানা আমার হৃদয়ে শেষ স্মৃতি হয়ে রবে।

গলাগলি করে কাঁদিব সকলে ভুলিতে আপন শোক,

“বায়ান্ন” রবে সকলের হৃদে,এই শেষ চাওয়া হোক।
কলেজ থেকে পাস করে আজ বাইরে..কিন্তু কলেজ এর স্মৃতি আজ মনে খুব কষ্ট দেয়।সেখানে থাকার সময় এই কবিতাটা লিখেছিলাম।আমার যে ৫০ তা বন্ধু ছিল,আমার সারা জীবনেও মনে হয় এমন বন্ধু পাব না।কবিতাটা শেষ সময়ে লেখা.তাই হয়তো কিছুটা বিষাদ সুর লেগে ছিল।।

ও বলাই বাহুল্য আমাদের ব্যাচ নং ৫২ ছিল!

৪৭৮ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “আমাদের কাব্য”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।