#যা_পড়তে_চাই – ১

সপ্তাহান্তে ছ’টি দৈনিক পত্রিকা বাড়িতে আসে। সবগুলোই বাংলা ভাষার। ওগুলোর সাহিত্য পাতাগুলো সব পড়ার চেষ্টা করি।

আজ দৈনিক জনকন্ঠে একটি ছোট গল্প পড়া শুরু করলাম। শিরোনাম ‘প্রোপোজাল’। লেখকের নাম বলতে চাই না।

দ্বিতীয় প্যারায় একটি লাইনঃ ‘তাকে মতিঝিল থেকে যেতে হবে – নতুন এক ক্লায়েন্ট ওয়েট করছে’। কয়েক লাইন পরই আবার, ‘বাস আসছে না, রাস্তায় হেব্বি জ্যাম’।

আর পড়তে চাইলাম না। চোখ বুলিয়ে দেখলাম সারা গল্পে অজস্র ইংরেজী শব্দ।

গল্পের নাম ‘প্রোপোজাল’। মেনে নিলাম। ইংরেজী শব্দ। হতেই পারে। আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ইংরেজী শব্দে আমাদের সামাজিক কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছি, সে’ক্ষেত্রে ইংরেজী শব্দে শিরোনাম হতেই পারে। তবে গল্পের লাইনে-লাইনে ইংরেজী মেনে নেয়া যাচ্ছে না। ‘ক্লায়েন্ট ওয়েট করছে বিদ্ঘুটে লাগলো। ‘ক্লায়েন্ট’ শব্দটি মেনে নিতে রাজি আছি তবে ‘ওয়েট’ শব্দ মানতে পারলাম না। তারপর আবার ‘হেব্বি জ্যাম’। যাহ্, আর পড়বোই না। ‘হেব্বি’? সংলাপের মাঝে এসব শব্দ মেনে নিতে অসুবিধা নেই, তবে গল্পের আখ্যানে বা ধারা-বর্ণনায় যদি বিদেশী শব্দ লিখতে হয়, তাহলে বিদেশী ভাষায় লেখাই ভাল! তা না পারলে লেখারই বা প্রয়োজন কি!?

ক’দিন আগেই লেখক পাপড়ি রহমানের সাথে তর্ক করেছিলাম পড়া নিয়ে। তিনি এবং জ্যাকী কবীর বলেছিলেন সবকিছু না পড়তে। জ্যাকী’তো প্রতিদিনই বলছেন। আমার তর্ক ছিলঃ ‘সবই পড়তে চাই – ভাল, খারাপ সব। দু’টোই আমায় কিছু না কিছু শেখাবে।‘

মনে হয় তাঁদের সাথে তর্ক করা ঠিক হয় নি।

আমি নিজে বিদেশী শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে নই। আমার মনে হয় ভাষা একটি নদীর মত। ভাষা অনেক কারণে বদলে যায়। একটি ভাষার পরিবর্তন আসে যখন সে ভাষায় যারা কথা বলে ও পড়ে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন বদলে যায়। প্রতিদিন নতুন প্রযুক্তি, পণ্য ও অভিজ্ঞতা সামনে এসে দাঁড়ায়। সেগুলোর জন্য নতুন শব্দের প্রয়োজন হয়। ধরুন, কুড়ি বছর আগে কেউ যদি বলতো যে সে একটি ‘টেক্সট মেসেজ’ করেছে। আমরা কেউ বুঝতাম? তখন ‘টেক্সট’ শব্দের অর্থই’তো ভিন্ন ছিল।
‘টেক্সট ম্যাসেজ’ বা ‘এসএমএস’এর একটি বাংলা আমরা আবিষ্কার করেছিলাম – ‘ক্ষুদে বার্তা’, কিন্তু সর্বস্তরের মানুষ তা মেনে নেয়নি। বলুন তো ‘মোডেম’, ‘ফ্যাক্স মেশিন’ ‘কেবল টিভি’বা ‘টেলিভিশন’ এবং ‘ইন্টারনেট’এর বাংলা কী হবে? বলা মুশকিল।

আমার বন্ধু এবং আমার ভাষার অভিজ্ঞতা যদি একই হয়, তাহলে আমরা কী করবো? আমরা দু’জন বাংলাভাষী যদি ফরাসি ভাষা জানি, তাহলে বাংলা বলার সময় কিছু ফরাসি শব্দ বলে ফেললে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা স্বাভাবিক ভাবেই চলে আসবে। এভাবেই আমরা অন্য ভাষা থেকে শব্দ জোগাড় করি। ‘সুশি’ শব্দের বাংলা কী হতে পারে? তেমনি এমন অনেক খাবার বাংলাদেশে প্রচলন হয়েছে যেগুলোর বাংলা এখনও নেই। ভেবে দেখুন ইংরেজি ভাষায় ‘ব্রেকফাস্ট’ এবং ‘লাঞ্চ’ মিলে হয়েছে ‘ব্রাঞ্চ’।

তাই বলে যাঁরা সাহিত্য রচনা করবেন তাঁদেরও কি সে একই কাজ করতে হবে?!

তাই বলে ‘ওয়েট’? ‘হেব্বি’?

৫,১৯৯ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “#যা_পড়তে_চাই – ১”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂

    ওয়েট ভাইয়া, নিয়ার ফিউচার নয়, এইসব হেব্বি ট্র্যাশ থ্রোন এওয়ে হবে সুন! আপনি কি নোটিস করেছেন যে আমাদের স্পোকেন বাংলাটাও কিন্তু চেন্জ হয়ে গেছে! ইনফ্যাক্ট, বাংলা নিয়ে বসে থাকলে কিন্তু স্ট্যাটাসটা ঠিক থাকে না। আমরা এখন গ্লোবাল সিটিজেন, ইউ নো!

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ভাই, আগে মানুষ কম্পিউটার/ল্যাপটপে টাইপ করতে বসলে সাহিত্য রচনার প্রস্তুতি নিয়েই বসত।
    ভাষাটাও সেরকম থাকত।
    এখন সামাজিক মাধ্যমের বদৌলতে লেখা ও মুখের কথা একাকার হয়ে গেছে...

    টিভি, সিনেমাতে তো আরও আগে থেকে এসব চল শুরু হয়েছে...
    পাবলিক যদি খায়, তাহলে লেখকগণ লিখবে না কেন?

    যাদের ভাল লাগবে না- তারা এড়িয়ে চলবে বা চোখ বন্ধ করে রাখবে।
    আমি তো তাই করি... O:-) 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।