ত্রিভুজ প্রেমের হর্ষ বিষাদ (সম্পূর্ণ)

লেখাটি মূলতঃ একাডেমি ধারার অর্থাৎ অনেকটা তাথ্যিক। লেখাটিকে প্রবন্ধ বললে ভুল বলা হবে।

তামিলরা মূলতঃ ভারত হতে চা শ্রমিক হিসাবে শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল। আর তাদের নিয়ে গিয়েছিল বৃটিশরা । সিনহলিজরা এখানে আদিবাসী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠি। এছাড়া আছে কিছু শিবানুজ মানে শিব ভক্ত হিন্দু সম্প্রদায়। সিংহলী এবং শিবানুজদের বাস মূলভুমিতে। শ্রীলঙ্কার উত্তারাংশে বসবাস করে তামিল এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। ঐতিহাসিকভাবে তামিল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক নাই। পন্নাবালাম রামনাথন ১৯০০ সালে মুসলিম এবং তামিলদের একই জাতিগোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেন। তখন তামিল মুসলিম বিশেষতঃ মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করে। ১৯১৫ সালে যখন শ্রীলঙ্কায় জাতিগত দাঙ্গা দেখা দেয় ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র এর জন্য মুসলমানদের দায়ী করেন। তখন পন্নাবালাম রামনাথন যে তামিল মুসলিম ও মুসলিমদের কে নিজেদের গোত্রভুক্ত করতে ছেয়েছিলেন কৌশলে তিনি এই বিপদে পাশে দাঁড়ান নাই। তামিল এবং মুসলিমদের মাঝে একধরনের অবিশ্বাস দেখা দেয়। এছাড়া মুসলমানরা এসেছিল ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য হতে। এরা এসেছিল বণিক্‌ হিসাবে ব্যাবসা করতে। তাই তাদের নিকট খণ্ডিত শ্রীলঙ্কা হতে পূর্ণ শ্রীলঙ্কা অনেক বেশি ব্যাবসা বান্ধব হবে। ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কার শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টি সরকার আমদানী রপ্তানী সরকারীকরন করে। এতে মুসলিমরা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের জমি ও ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষায় অগ্রসর মুসলিমরা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। আজকের শ্রীলঙ্কার প্রায় শতকরা একশত ভাগ শিক্ষিতের হারের পিছনে মুসলমানদের অবদান অনেক। ১৯৭৭ সালে দেশের অর্থনীতি আবার পুজিবাজারে ফিরে আসে। কিন্তু মুসলিম বনিকদের যা ক্ষতি হওয়ার তা আবার পুষিয়ে নেওয়া সম্ভবপর ছিল না।১৯৮৫ সালে তামিল ও মুসলিম পুনরায় দাঙ্গা শুরু হয়। তামিল সহস্র কিছু ব্যক্তির হাতে নামাজরত অবস্থায় ৩ জন মুসুল্লি শহীদ হন। এই ঘটনায় সর্বাধিক লাভবান্‌ হয় ক্ষমতাসীন UNP সরকার। তারা মান্নার দ্বীপে তামিল এবং মুসলিমদের মাঝে একটি বিভেদ রেখা তৈরি করতে সমর্থ হয়। ১৯৮৫ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয় তাতে LTTE মুসলিমদের প্রতি ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। পরবর্তিতে তামিল্রা মুসলিমদের বন্ধুকের মুখে শরণার্থী হতে বাধ্য করে। তামিলদের পতনের পূর্বে মুসলিমরা শরণার্থী শিবির থেকে নিজেদের বাসস্থান ফেরার প্রহর গুনছে। মুসলিমদের প্রতি তামিলদের যে আচরণ ছিল তা গনহত্যার ন্যায়। এর ফলে তামিলরা মুসলিমদের সহানুভূতি লাভে চিরতরে ব্যর্থ হয়। ১৯৯০ সালে তামিলদের হাতে মুসলিমরা পুনরায় শরণার্থী হতে শুরু করে। এমনকি ১৯৮৫ সালের দাঙ্গার পর শ্রীলঙ্কান মুসলিম কংগ্রেস ও LTTE এর মধ্যে যে চুক্তি হয় তা অমান্য করে LTTE শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে মুসলমানদের মানববর্ম হিসাবে ব্যবহার করে। তামিলরা মূলতঃ এমন একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে চেয়েছিল যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠী ব্যতীত অন্য জাতি বসবাস করবে না।

পরবর্তী পর্ব রবিবার প্রকাশ করতে চেয়েছিলয়াম কিন্তু পারলাম না। তাছাড়া কোনো এক উদ্ভূত কারণে আমি বার বার চেষ্টা করেও ক্যাডেট কলেজ ব্লগে প্রবেশ করতে পারছিনা।তাই নতুন করে কিছু লেখার উৎসাহ পাছছিলাম না। আজ ফেসবুক হতে জানতে পারলাম আবার চালু হতে পারে। তাই সকালে কম্পিউটারের বসে লেখা শুরু করলাম।

শ্রীলঙ্কার সমস্যা হল জাতিগত সংহতি অভাব। পুর্বেই আলোচনা করা হয়েছে তামিল অ মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত বিরোধ নিয়ে। এবার আলোচনা করা হবে তামিল এবং সিনহলিজদের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা নিয়ে। শ্রীলঙ্কার জাতি বৈচিত্র হল সিনহলিজ ৭৪, তামিল ১৮ এবং মুসলমান ৭ অন্যান্য ১।

মজার ব্যাপার হল তামিলদের মাঝে আবার ২ টি ধারা আছে। এক ইন্ডিয়ান তামিল এবং দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান তামিল। শ্রীলঙ্কান তামিল হল ১২.৫ এবং ইন্ডিয়ান তামিল হল ৫.৫। ইন্ডিয়ান তামিল নিম্নবর্নের কিন্তু সিংহলী তামিল উঁচু বর্নের। এবং এই নিম্ন বর্নের হিন্দু তামিল্রা প্রতিনিয়তই শ্রীলঙ্কান তামিলদের কর্তৃক অবহেলার স্বীকার হয়। তামিলদের মাঝে এই চরম বর্নবাদ বিদ্ধেষের কারণে প্রায় ৪.৩% শ্রীলঙ্কান তামিল ৭.৬%ইন্ডিয়ান তামিল খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে তামিলদের হতে পৃথক্‌ ভাবে বসবাস করছে। এছাড়া ২০০১ সালের আদমশুমার এবং ২০০৪ সালের সম্পূরক তথ্য অনুযায়ী ২০৬৩১০ জন তামিল কলম্বোতে স্থায়ী অভিবাসী হয়। অতএব বোঝা যায় সব তামিলদের পৃথক্‌ আবাসভুমির জন্য যে আন্দোলন তাতে সমস্ত তামিলদের সমর্থন নেই। এখন প্রশ্ন আসে LTTE তবে কাদের represent করছে। আর এই প্রশ্নটির উত্তর অস্পষ্ট। তবে আমার মনে হয়েছে LTTE ইন্ডিয়ান তামিলদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমার অনুমানের পিছনে যুক্তি হল ১, তামিল সংকটে LTTE এর প্রতি তামিলনাড়ু জনগণের সহানুভূতি।২, তামিলনাড়ু ,কেরালা এবং অন্যান্য দ্রাবিড় অধ্যুষিত অঞ্চলে বাজপা এর ইতিবাচক ফলাফল। ৩, রাজাপাকসের ঘোষণা যদি প্রভাকরন জীবিত ধরা হত তবে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হত। শেষোক্ত কথাটি সরল ভাবে এটাই প্রমাণ করে প্রভাকরন ভারতীয় নাগরিক। তবে এসব কখনই প্রমাণ করেনা এটি ভারতীয় তামিল আন্দোলন। তবে তামিল বিরোধী শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী অভিযান নিয়ে যেসব প্রবাসী তামিল প্রতিবাদ করেছে তারা প্রায় সবাই ভারতীয় Diaspora. তাছাড়া LTTE এর আন্দোলনে অর্থ সহায়তা করছে যে সব তামিল তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তামিলনাড়ুতে বসবাস করে। আর তামিল Diaspora হতে তারা যে সমর্থন ও অর্থ সাহায্য পায় তাও মূলতঃ ভারতীয় Diaspora হতে প্রাপ্ত। অতএব এখন বলা যেতেই পারে যে এটি একটি ভারতীয় তামিল আন্দোলন। মাত্র ৫.৫% জনগণের জন্য শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল, পশ্চিম এলাকা নিয়ে একটি বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে পৃথক্‌ রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ অযৌক্তিক দাবি। তবে তারা যে বৈষম্যের কথা বলছে তা দূর করা সরকারের কর্তব্য। তবে তামিলরাও শ্রীলঙ্কান সরকারকে বৈষম্য দূর করার সুযোগ দেয়নি। কারণ ১৯৮৩ পরবর্তী সময় হতে জাফনা এবং তামিল অধ্যুষিত এলাকা শ্রীলঙ্কার সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে। তা না হলে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী পুনদখল করার কথা আসে কীভাবে। এবং তামিল পক্ষ হতে অস্বীকার করে বলা হয় এখন এসব এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই হল শ্রীলঙ্কান মুসলিম এবং তামিল বিরোধ সম্পর্ক আবার সিংহলী ও তামিল বিরোধ সম্পর্ক। অতএব কৌটিল্য নীতি অনুযায়ী তামিল এবং মুসলমানদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।
মুক্তিকামী মানুষ হিসাবে আমরা সকল মুক্তিকামী আন্দোলনকে সমর্থন করি এবং তাকে যৌক্তিক হিসাবে মানি। আমরা সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। কিন্তু তামিলদের মুক্তিকামি এবং পৃথক্‌ আবাসভুমির জন্য লড়াই কে ন্যায় সঙ্গত বলা যায়না। ১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আমরাও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছি। কিন্তু আমরা কখনও নিরীহ মানুষ হত্যা করিনি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়ও না। এমনকি যুদ্ধপরবর্তি আট্‌কে যাওয়া বিহাড়ীদের কেও আমরা অত্যাচার করি নাই। ওয়াসা অ ডেসা একবার জেনেভা ক্যাম্পে পানি ও বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। তা পুনরায় চালু করার জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা অনশনে নেমেছিলেন। কিন্তু তামিলদের মুক্তি আন্দোলনের নামে এই হত্যাকে আমি সমর্থন করতে পারছিনা। তামিলদের কর্মকাণ্ড কিছু ভয়াবহ চিত্র আমরা নিচে দেখতে পাব।

এবার তামিল আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করা হল।

১। ১৯৭২ সালে প্রভাকরন LTTE গঠন করলেন।
২। ২৩এ জুলাই LTTE জাফনায় ১৩ শ্রীলঙ্কান সৈন্য এবং তামিল বিরোধী আন্দলনকে স্তব্ধ করার জন্য ৬০০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। নিহিতের অধিকাংশই ছিল মুসলমান।
৩। ৮ই জুলাই ১৯৮৫ সরকার ও LTTE এর মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনা।
৪। ২৯শে জুলাই ১৯৮৭ ভারত ও শ্রীলঙ্কান সরকারে মাঝে চুক্তি স্বাক্ষর। ভারতীয় সরকার শান্তি রক্ষার জন্য শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনী নিয়োগ দিতে পারবে।
৫। ২৪ মার্চ ১৯৯০ ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রায় ১২০০ সৈন্য LTTE গেরিলাদের হাতে মারা যায়। ভারত শ্রীলঙ্কা হতে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।
৬। ২১শে মে ১৯৯১ রাজীব গান্ধি তামিল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোর্ণে মারা যান।
৭। ১ মে ১৯৯৩ রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা তামিল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মারা যান।
৮। ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৫ শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী জাফনা উপত্যকা দখল করে নেয়।
৯। ১৮ই জুলাই ১৯৯৬ LTTE গেরিলা মুল্লাত্তিউ অতিক্রম করে। এবং ১২০০ শ্রীলঙ্কান সেনা হত্যা করে।
১০। ৮ই অক্টোবর ১৯৯৭ আমেরিকা LTTE কে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করে।
১১। ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৮ তামিল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ১৭ জন নিরীহ বৌদ্ধ মারা যায়।
১২। ২৬ এ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ LTTE গেরিলা কিলিনছিছি অতিক্রম করে। এবং ১০০০ শ্রীলঙ্কান সেনা হত্যা করে।
১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০১ অস্ট্রেলীয় LTTE কে অবৈধ বলে ঘোষণা করলে কানাডা তা সমর্থন করে।
১৪। জুলাই ২০০১ সালে তামিল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ৪ জন নিরীহ ব্যক্তি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মারা যায়।
১৫। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০২ নরওয়ের মধ্যস্থায় LTTE ও শ্রীলঙ্কান সরকারের মধ্যে অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৬। ডিসেম্বর ২০০২ নরওয়ের মধ্যস্থায় LTTE ও শ্রীলঙ্কান সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলা হয় তামিল জনগণ তামিল ভাষা অধ্যুষিত বিশেষতঃ উত্তরাঞ্চল এবং পূর্বাচল স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে।
১৭। ৩ মার্চ ২০০৪ বিখ্যাত মুরালিধরন যিনি করুণা নামে পরিচিত LTTE ত্যাগ করে পৃথক্‌ সংগঠন করে তুলেন।
১৮। ২রা নভেম্বর ২০০৭ LTTE এর রাজনৈতিক শাখার প্রধান থামিলসেল্ভান শ্রীলঙ্কার বৈমানিক আক্রমণের নিহত হয়।
১৯। ২রা জানুয়ারি ২০০৮ সরকার চুক্তি প্রত্যাহার করে নেয়। এবং LTTE কে নির্মূল করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করে।
২০। ২রা জানুয়ারি ২০০৯ শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী খিলুনিছিছি দখল করে নেয়।
২১। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী মুল্লাত্তিউ দখল করে নেয়। LTTE গেরিলা বাহিনী বনে পালিয়ে যায়।
২২। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী ঘোষণা করে তারা সকল গোপন আস্তানা এবং পরিখা দখল করে নিয়েছে।
২৩। ১৪ এপ্রিল ২০০৯ LTTE গেরিলা বাহিনী ঘোষণা করে তারা অস্ত্র বিরতির জন্য প্রস্তুত। কিতু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে অস্ত্র ত্যাগের নির্দেশ দেয়।
২৪। ২০ এপ্রিল ২০০৯ শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী LTTE গেরিলা বাহিনী কর্তৃক জিম্মি ১০,০০০ সাধারণ জনগনকে উদ্ধার করে।
২৫। ১৬ই মে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট যুদ্ধে LTTE গেরিলা বাহিনী উপর বিজয় ঘোষণা করে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতি কে যদি মনে করেন যে শ্রীলঙ্কায় শান্তি ফিরে আসবে তবে ভুল হচ্ছে। এখন LTTE সুগঠিত ও সুশৃঙ্খলা বাহিনী হতে অনিয়ন্ত্রিত ও খণ্ডিত বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এরা এখন পূর্ব হতেও অধিক ভয়ঙ্কর। এদের এখন আর হারানোর কিছু নাই। এরা এখন জখম হওয়া নরখাদকের মত। এছাড়া LTTE গেরিলাদের অস্ত্র সম্পূর্ণ উদ্ধার করা সম্ভবপর না হলে তা শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তার পাশাপাশি তামিলনাড়ু এবং ভারতের নিরাপত্তার প্রতিও হুমকি স্বরূপ। আর হঠাৎ করে এই শক্তি শুন্যতার প্রলয় হতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানও নিরাপদ নয়। তাই এখন দেখতে হবে শ্রীলঙ্কা সরকার ও সদ্যনির্বাচিত মনমোহন কীভাবে তামিলদের সেন্টিমেণ্টকে সংযত রাখতে পারে। এবং পুনর্গঠনে তামিলদের কীভাবে অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অধিকার ও জাতীয়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং এখানে ভুল করার কোনো সুযোগ নাই। এছাড়া পশ্চিমা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সংগঠন কি ভূমিকা গ্রহণ করে তার উপর নির্ভর করছে তামিল পরিস্থিতি্র ভবিষ্যত এবং আঞ্চলিক শান্তি। এক কথায় সাধু সাবধান।

:gulli2:

২,৬২৯ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “ত্রিভুজ প্রেমের হর্ষ বিষাদ (সম্পূর্ণ)”

  1. শাওন (৯৫-০১)

    LTTE স্বম্পর্কে তেমন একটা ধারণা ছিলনা কিন্তু লেখাটি পড়ে অন্তত কিছুতো জানা হলো। তাছাড়া লেখাটির শেষ অংশে বেস কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  2. পোস্টটা অতিরিক্ত একপেশে মনে হল ... তামিল টাইগারদের সহিংস কার্যকলাপকে সমর্থন করা যায় না, কিন্তু তারপরও বেশিরভাগ জায়গাতেই একমত হতে পারলাম না ...

    কিন্তু তামিলদের মুক্তিকামি এবং পৃথক্‌ আবাসভুমির জন্য লড়াই কে ন্যায় সঙ্গত বলা যায়না।

    কিভাবে এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন? আমি কিন্তু বেশ অনেক প্রবাসী তামিলের সাথে কথা বলেছি, তারা সরাসরি কেউ এলটিটিই কে সাপোর্ট দেয়নি কিন্তু শ্রীলংকান সরকারের প্রতি তাদের ক্ষোভ স্পষ্ট, এবং তারা সুস্পষ্টভাবে অনেক ডিস্ক্রিমিনেশনের অভিযোগ করেছে ... এই পোস্টটা দেখতে পারেন, ঊনিশশো তিরাশি পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার একটা টাইমলাইন আছে ...

    ১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আমরাও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছি। কিন্তু আমরা কখনও নিরীহ মানুষ হত্যা করিনি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়ও না।

    এইটা নিশ্চিতভাবেই ভুল ... যুদ্ধের সময় বা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর অনেক বিহারী বাঙালিদের প্রতিহিংসার স্বীকার হয়েছে, এইটা অস্বীকার করার মধ্যে কোন গৌরব দেখি না ... যুদ্ধের সময় বিহারীদের ভূমিকা আমাদের বিপক্ষে ছিল, কাজেই কাউকে কাউকে সেটার মূল্য দিতে হয়েছে ... এইটা ন্যায় না অন্যায় না কোলাটারেল ড্যমেজ এই বিতর্কে যাব না, কিন্তু ইট হ্যাপেন্ড, এইটা মনে রাখা দরকার ... [এই মূহুর্তে অনলাইনে সূত্র খুঁজতে চাচ্ছি না, তবে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিজয় দিবসের একটা স্মৃতিকথায় বিহারী পরিবার হত্যার বিবরণ ছিল, চাইলে ঘাঁটাঘাটি করে নাম দিতে পারব; সময় লাগবে] ..
    .

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      বিখিপ্ত ঘটনা আর গনহত্যা একবস্তু নয়। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু নারকীয় তান্দবের কথা জানি। কিন্তু তারা কি মুজিব বাহিনির মুক্তিযোদ্ধা না সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সেটাও খেয়াল করতে হবে।

      জবাব দিন
      • কিন্তু আমরা কখনও নিরীহ মানুষ হত্যা করিনি

        বিখিপ্ত ঘটনা আর গনহত্যা একবস্তু নয়

        কনট্রাডিকটরি হয়ে গেল না? ঠিক কয়টা বিক্ষিপ্ত ঘটনা নিরীহ মানুষ মারার পর্যায়ে পড়ে না?

        কিন্তু তারা কি মুজিব বাহিনির মুক্তিযোদ্ধা না সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সেটাও খেয়াল করতে হবে।

        এখানে কি বোঝাতে চাইলেন বুঝলাম না, একটু ব্যাখ্যা করলে ভালো হইতো ...

        তবে ভাসা ভাসা মনে হল যে আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন বিপথগামী কিছু মানুষের কাজকর্মের দায়দায়িত্ব পুরা বাঙ্গালি জাতি নিবে না; সেক্ষেত্রে আমি প্রশ্ন করতে পারি আপনি এল্টিটিই র কাজকর্ম দিয়ে পুরা তামিল জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে রায় দিচ্ছেন কিভাবে?

        আর শ্রীলংকান সরকারের তামিল নির্যাতন বা তিরাশির আগের বৈষম্যগুলো নিয়ে কিছু বললেন না?

        জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    তথ্যবহুল পোষ্ট, অনেক অস্পষ্ট প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি।

    তবে তামিল বিরোধী শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী অভিযান নিয়ে যেসব প্রবাসী তামিল প্রতিবাদ করেছে তারা প্রায় সবাই ভারতীয় Diaspora.

    ভাইয়া, এখানে আমার আপত্তি আছে। টরন্টোতে গত ২ মাস যাবত তামিল প্রতিবাদ কর্মসূচী চলছে, ব্যাপক ভাবে, এবং এখানকার পত্রিকায় তা মিডিয়া কাভারেজও পেয়েছে। আমি নিজেও কিছু তামিলদের সাথে কথা বললাম। এবং এই প্রতিবাদকারীদের ৮৫% হল শ্রীলঙ্কান তামিলরা।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    মাসুদ,

    শুরুতেই তোমাকে ধন্যবাদ লেখাটা শেষ করেছো বলে। আমি কিছু দ্বিমত করছি তোমার সাথে। ভুল ধরার মাধ্যমে তোমার বক্তব্যকে খন্ডন করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অতি সরলীকৃত ধারণা কিভাবে আমাদের স্বাভাবিক বিচার-বিশ্লেষণকে সীমিত করে, সেটা দেখিয়ে দেবার জন্য একটা বিস্তারিত সমালোচনা করি তোমার পোষ্টের।

    যে বিষয়ে লিখেছো, তা'র জটিলতা বিবেচনায় তোমার সাহসের তারিফ না করলে অন্যায় হয়। তবে, আমার মনে হয় তোমার অবস্থান পরিষ্কার হত যদি আরেকটু সিষ্টেম্যাটিক উপায়ে তোমারই উল্লিখিত তথ্যগুলোর দিকে নজর দিতে। কিছু অসংগতি ধরিয়ে দেই,

    ১। তামিলরা চা' শ্রমিক হিসেবে শ্রীলংকায় 'যায় নাই', তাদেরকে এক ধরণের দাস-শ্রমিক (indenture labor) হিসেবে 'ধরে নিয়ে যাওয়া' হয়েছিলো (একই উপায়ে মালয়েশিয়া, ফিজি, ওয়েষ্ট ইন্ডিজেও)। স্বেচ্ছায় মাইগ্রেট করার সাথে এর বিস্তর ফারাক আছে, যা একটা জাতির পরবর্তী ইতিহাসকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে।

    ২। মুসলমানদের সাথে তামিলদের দ্বন্দ্বের কারণ কিছুই উল্লেখ করো নাই। আবার শ্রীলংকার সরকারের অর্থনীতি জাতীয়করণের সাথে মুসলমানদের ক্ষতির কথা বলেছো, কিন্তু তার সাথে তামিলঅদের কি সম্পর্ক তা' বলোনি।

    ৩।তামিলদের মধ্যে বর্ণভেদটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা দরকার ছিল। বলেছো যে, আন্দোলনকারী তামিলরা (LTTE) মূলতঃ ভারত থেকে আগত+নিম্ন বর্ণের তামিলদের প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের সাথে সিসংহলিজ+উচ্চবর্ণের তামিলদের সুসম্পর্ক নাই। আবার বলেছো, ইন্ডিয়ার তামিলনাড়ুর তামিলরা এদের সমর্থন করে। তাহলে কি তামিলনাড়ুর সবাই নিম্নবর্ণের তামিল? আবার বলেছো, ২০৬৩১০ জন তামিল কলম্বোতে স্থায়ীভাবে বাস করে, অতএব তারা LTTE-কে সমর্থন করে না।- কিভাবে এটা প্রমাণ হলো? সারাবিশ্বের বেশিরভাগ তামিল যেখানে তাদের সমর্থন করে+নিয়মিত টাকা পাঠায়?

    ৪। বলেছো- "৩, রাজাপাকসের ঘোষণা যদি প্রভাকরন জীবিত ধরা হত তবে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হত। শেষোক্ত কথাটি সরল ভাবে এটাই প্রমাণ করে প্রভাকরন ভারতীয় নাগরিক।"- উঁহু, এর কারণ, প্রভাকরণ রাজীব গান্ধী হত্যা-মামলার আসামী, তাই তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করার দাবী করে আসছে ভারত।

    -তোমার নিজেরই দেওয়া তথ্য বিশ্লেষনে উপরে উল্লিখিত অসংগতিগুলো থাকার কারণে তোমার সিদ্ধান্তটা এসেছে, তা' নিম্নরূপঃ

    এটি একটি ভারতীয় তামিল আন্দোলন। মাত্র ৫.৫% জনগণের জন্য শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল, পশ্চিম এলাকা নিয়ে একটি বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে পৃথক্‌ রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ অযৌক্তিক দাবি।

    জনসংখ্যার শতকরা হার দিয়ে কখনোই কোন জাতির স্বাধিনতা'র অধিকার পরিমাপ করা যায়না+হয়না। আর প্রায় দুইশ বছর আগে বলপূর্বক স্থানান্তরিত হয়ে আসা এই তামিলদের কিছুতেই আর ভারতীয় বলার জো নেই। একই প্রকৃয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, মরিশাস, ফিজি, মালয়েশিয়া, গায়ানা, সুরিনাম, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, প্রভৃতি দেশেও কয়েক মিলিয়ন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ আছে যারা সেই সিব দেশের সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত (সুরিনামের বর্তমান প্রেসিডেন্ট; ফিজির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র চৌধূরী)।

    তামিলদের আলাদা রাষ্ট্রের দাবীকে বুঝতে হলে সবার আগে নজর দিতে হবে তাদের দাবীগুলোর কারণ কি, তারা কেনো শ্রীলংকা সরকারের অধীনে থাকতে চায় না,-এসবে। আর তাদের ইতিহাস ১৯৭২ সালে নয়, শুরু হয়েছে ১৯০০ সালে যখন বৃটিশ কলোনিয়াল সরকার তাদের দাস-শ্রমিক হিসেবে শ্রীলংকায় নিয়ে গেছে।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      চা শ্রমিক বললে কিন্তু তারা দাস শ্রমিক হতে পারবেনা এমন কোনো কথা নাই।
      মসুলমানদের সাথে তাদের

      পন্নাবালাম রামনাথন ১৯০০ সালে মুসলিম এবং তামিলদের একই জাতিগোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেন। তখন তামিল মুসলিম বিশেষতঃ মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করে। ১৯১৫ সালে যখন শ্রীলঙ্কায় জাতিগত দাঙ্গা দেখা দেয় ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র এর জন্য মুসলমানদের দায়ী করেন। তখন পন্নাবালাম রামনাথন যে তামিল মুসলিম ও মুসলিমদের কে নিজেদের গোত্রভুক্ত করতে ছেয়েছিলেন কৌশলে তিনি এই বিপদে পাশে দাঁড়ান নাই।
      নিম্ন বর্নের তামিল এবং তামিলনাড়ুর তামিলদের সুম্পর্ক নিয়ে আপনার প্রশ্নটাই বুঝতে পারছিনা।

      তামিলদের মধ্যে বর্ণভেদটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা দরকার ছিল। বলেছো যে, আন্দোলনকারী তামিলরা (LTTE) মূলতঃ ভারত থেকে আগত+নিম্ন বর্ণের তামিলদের প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের সাথে সিসংহলিজ+উচ্চবর্ণের তামিলদের সুসম্পর্ক নাই। আবার বলেছো, ইন্ডিয়ার তামিলনাড়ুর তামিলরা এদের সমর্থন করে। তাহলে কি তামিলনাড়ুর সবাই নিম্নবর্ণের তামিল? জাই হক যখন ইরাকে মুসলমান নিগৃহিত হয়। তখন কি আমরা খোজ নেই যে কারা victim হলো। শুধু মুসল্মান বলেই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। তাই নয় কি।আর হা হিন্দুরা যে মুসলমান হলো তা কিন্তু তারা বর্নবাদ বৈষম্য ও ণিপীড়োনের কারনে হয়েছে।মুসলমানদের মহানুভবতায় হইনি। ঠিক সেই কারনেই লঙ্কার দুই তামিলদের মাঝে বিবাদ। আর তামিলনাড়ুর তামিলদের সমর্থন ঐতিহাসিক অ আঞ্চলিক্তার কারনে।
      ৪ নং পয়েন্টা আমি মেনে নিচ্ছি। আপনার কথা সঠিক।

      জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমি ভাবছি, এলটিটিই যদি জিতে নতুন দেশ গঠন করে ফেলত তাহলে ইতিহাস কিভাবে লেখা হত? ভারত কখন স্বীকৃতি দিত?

    আমার এই এক সমস্যা, সব কিছু উল্টায় চিন্তা করি 🙁


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।