লেখাটি কিছু সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হল। লেখাটি পজে গ্রন্থের উত্তরভাব।অবশিষ্টাংশ আজ যোগ করা হল।
গ্রন্থ – পজে
লেখক – ব্লেইস পাস্কেল
অনুবাদ/সম্পাদনা – জাভেদ হুসেন
প্রকাশক – বাংলা
মানুষ নিয়মে বাধা থাকে না। নিয়মকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। তারমানে সে যে নিয়মকে ভাঙল সে আসলে কোনো নিয়মই ছিল না। নিয়ম আসলে যার নিয়ম তার পরিচয় বহন করে। তাকে পাল্টে না ফেললে নিয়মও ভাঙ্গার কথা না। কিন্তু মানুষ যেহেতু নিয়ম ভাঙছে তার মানে সে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। চিন্তার সূত্রগুলো বের করা যেতে পারে শুধুমাত্র ঐতিহাসিকভাবে মানব জাতির সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের বাস্তবায়নের মাধ্যমে। কারণ ঐ বাস্তবায়নই হচ্ছে চিন্তার আয়না যেখানে সে নিজের মুখ দেখবে। এমনি করে সে নিজের মাঝ থেকে নিজের জন্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। এমনি করে হেগেল চিন্তাকে বোঝার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রয়োগকে টেনে আনলেন। যেহেতু চিন্তা নিজেকে প্রকাশ করে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে, মানুষের কাজ কারবারের মধ্য দিয়ে, তাই একে কাজ কারবারের মধ্য দিয়েই বুঝতে চাওয়া ভালো। এতদিন একে বুঝতে চাওয়া হচ্ছিল শুধুমাত্র চিহ্ন, গণিত এইসবকে সাক্ষী মেনে। এখন সে হয়ে গেল কোনো মানুষের কাজের ধরন।
হেগেল ঐতিহাসিকভাবে কাঠামোর জেলখানা হতে চিন্তাকে জামিন দিলেন। কিন্তু ভুল আইন দেখানোর কারণে চিন্তা আর মানুষ বেকসুর খালাস পেলোনা। অনেকটা এরকম লূডভিগ ফয়েরবাখ এর বিশ্লেষণ মতে যদি বলি সবুজ রাঙ্গার পাতা তবে পাতার মালিক হয়ে যায় সবুজ রঙ তাও আবার এই সবুজ রাং এর পাতার বাইরে কোনো বস্তুগত অস্তিত্ব নাই। পাতা এখানে গৌণ হয়ে গেলো মুখ্য হলো সবুজ। হেগেলর চিন্তা জগতের বিশ্লেষণও ছিল এ রকম। তিনি চিন্তা কে মানুষের না বলে মানুষের মালিকানা চিন্তাকে দিয়ে দিলেন। চিন্তা আর মানুষ এক নয়। এক্ষেত্রে আগেই ধরা হয় চিন্তা মানুষের রক্ত মাংসের শরীরের বাইরের একটি ভিন্ন স্বত্ত্বা। কিন্তু ফয়েরবাখ ও বেশিদুর এগুতে পারলেন না। যখন তাকে প্রশ্ন করা হল কি করে মানুষ মানে চিন্তাশীল শরীর পরিবেশের সঙ্গে তাতক্ষণিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এখানেই তার দুর্বলতা ছিল। কারণ স্বতন্ত্র মানুষ যা প্রত্যক্ষ করে আর যে জ্ঞানের সহায়তা নেয় তা আরো অনেক স্বতন্ত্রের তৈরি এবং প্রভাবিত। তত্ত্ব আর প্রয়োগের সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা ঘটে তা ফয়েরবাখের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল।
হেগেল মানুষকে চিন্তার উপর দাঁড় করালেন তার ইতিহাসকেও খুঁজে বের করলেন। কিন্তু হেগেলের মতে চিন্তা নিজেকে প্রদর্শন করে, মানুষ মেনে নেয় তার পথ নির্দেশ এবং নিজেকে গড়ে তুলে। হেগেলের লজিক মতে কেট্লি ভর্তি গরম জলের সঙ্গে ফরাসী বিপ্লবের পার্থক্য শুধু পরিমাণ আর গুনে।
আসলে তখন সামাজিক শ্রমের যে বিভাজন অপরিণত নতুন পেশাজীবীদেরকে সমাজ গড়ে তুলেছিল তার বাস্তবতা হেগেলের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। কিন্তু এরপর সামাজিক শ্রম স্বতস্ফূর্ত ভাবে পরিপূর্ণরুপে ভাগ হয়ে গেলো।নিজের ঘরে কাজ করা মানুষ এখন কারখানায় কাজ করে। সে জানেওনা কার জন্য তার এতো পরিশ্রম। যা সে তৈরি করে তা যে কোথায় চলে যায় সে বুঝতেই পারে না, কিন্তু তৈরি করে সে নিজের হাতেই। ফলে জগতটাকেও সে বুঝে আংশিকরুপেই।চিন্তার কপালেও একই ঘটনা ঘটল। সে হয়ে গেল কতিপয় বিশেষজ্ঞ্বদের কাজ কারবার। বিজ্ঞান হয়ে গেল সেই চিন্তা যা বিশেষজ্ঞ্বদের হাতে বিশেষ বিশেষ রূপ নেয়।তার মানে চিন্তা হয়ে গেল জনসাধারণের ধরা ছোয়ার বাইরে অনেক উচুঁতে। সেই উঁচু হতে নির্দেশ আস্তে লাগল সাধারণ মানুষকে কি করতে হবে, কেমন করে করতে হবে। সে নির্দেশ আসে কখন বিজ্ঞানের নামে, কখনও জাতীয়তাবাদ কখন ধর্মের নামে। জ্ঞানের জগতে একনায়কতন্ত্র গড়ে উঠলো।
এবার কার্ল মার্ক্সের আগমন, হেগেলের বিশ্লেষণে মানুষ মাথার উপর দাঁড়িয়ে ছিলো, মার্ক্স তাকে পায়ের উপর দাঁড় করালেন। তিনি বললেন মানুষ স্বতন্ত্রভাবে প্রকৃতির সঙ্গে তাতক্ষণিক সম্পর্ক এলে চিন্তা করতে পারেনা। মানুষ তখনি চিন্তা করতে পারে যখন সে নিজেকে সমাজের মাঝে খুঁজে পায়। মানুষের প্রত্যক্ষণ তাতক্ষণিকভাবে বিষয় অনুধাবন করতে পারে না। সে তা সমাজের মাঝে, বাস্তব কাজ ও তার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অনুধাবন করতে শিখে। তাহলে বাস্তব মানুষের চিন্তার গুণ কিনা এটা তাত্ত্বিক নয় প্রায়োগিক প্রশ্ন।
হেগেল আগেই বলে গিয়ে ছিলেন প্রত্যেক যুগের চিন্তার একটা ধরন থাকে, সেই চিন্তাকে সেই ধরন দিয়েই বুঝতে হবে। মার্ক্স এবার তার নিজের চিন্তার সাথে তার সম্প্রসারণ ঘটালেন।
পুঁজির যারা মালিক তারাই সমস্ত মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় আজকের দিনের কর্ণধার। কিন্তু পুঁজি নিজে মুনাফা ছাড়া অন্য কিছুই বুঝেনা। মানুষ তার কাছে শুধু ভোক্তামাত্র। পুজিঁর এই অন্ধ লজিকই হয়ে উঠছে আজকের সবার জীবনব্যাবস্থা।বস্তুর দাম সম্পর্কে দেখালেন বস্তু অ তার দাম কি করে সমাজের মানুষের সঙ্গে অন্যান্য বস্তুর সম্পর্ক নির্ণয় করে। এই সূত্র ইট পাথরে যে ফল দেয় ইনফরমেশন টেকনলজিতেও তার হেরফের হয়না। ইনফরমেশন চাল ডাল এর মত খরিদ করার পণ্য।
😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
🙂 🙂
এইটা বরিশালের ২৯৯(অফিশিয়াল, আনঅফশিয়ালি মানে ট্যাগ করা হয়নি সেগুলো মিলিয়ে আরো বেশি) নং পোস্ট...
আশা করি বরিশালের কোন সেলিব্রেটি ব্লগার শেবাগের মত একটা ছক্কা মারা পোস্ট দিয়ে ৩০০ পূর্ণ করবে...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
পুনঃপুনঃ ………………হল আরেকটি সিরিজ যেখানে কোনো গ্রন্থের বিশেষ অংশ হুবুহু কিংবা কিঞ্চিত সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হবে।
প্যাসকেলকে কেবল গণিতবিদ হিসেবেই চিনতাম। আজ নতুন করে চিনলাম।
হেগেলের দর্শন এবং কিয়ের্কেগরদের হেগেল বর্জন সম্পর্কে খুব আগ্রহী। আরও বিস্তারিত আশা করছি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
এখানে কিন্তু বলা হইছে এটা গ্রন্থের উত্তরভাব। অরথাত এটা পাস্কেল হেগেল সম্পর্কে বলেন নাই। যিনি বাংলায় সম্পাদনা করেছেন জাভেদ হুসেন তিনি বলতে পারবেন কে এই উত্তরভাব রচনা করেছেন।
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
কাজ বা কর্ম ছাড়া দর্শন-বিজ্ঞান-সাহিত্য কোনকিছুরই বেইল নাই 😛 ।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমার তাই মনে হয়। বাস্তবতা বিবর্জিত চিন্তা নতুন logic তৈরি করতে পারে। আনতে পারে দারশনিকদের জন্য চিন্তার নতুন খোরাক কিন্তু সাধারন মানুষের জন্য তা কতটুকু পরিবর্তন মানে ভাগ্য বদলাতে পারবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
আমার লেখাখানি আপনাদের কাছে পাঠযোগ্য মনে মনে হয়েছে, এতে আমি ধন্য মনে করছি। আপনাদের দন্যবাদ