[পাঁচ] আমার ছোটটির বয়স তখন তিন কি চার। বাবার সাথে সবকিছুতে তার উত্সাহ। সবচাইতে কৌতুহলপূর্ণ জায়গা রান্নাঘর। একদিন সকালবেলা এবং উইকএন্ড। ওদের ডিমের প্রতি খুব একটা আসক্তি নাই। তাই আসক্তি জাগাবার জন্য আহ্বান করলাম, ”কে আমার সাথে ডিম ভাজা করবে?” বড়টির কোন উত্তর পাওয়া গেলো না। ছোটটি গুটি গুটি পায়ে ঢুকলো। আমি তখন একটি ডিম ওমলেট করবো বলে ভেঙে বাটিতে রাখছি। সে গভীরভাবে ডিম ভাঙার পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর আমাকে গম্ভীরভাবে বললো, ”বাবা, লুক, উই ব্রেক এগ্স লাইক দিস…” বলে একটি ডিম হাতে নিয়ে ফ্রীজের দরজায় বাড়ি মেরে ভাঙার চেষ্টা করলো। ওমনি পুরো ডিমটির কিছুটা তার হাতে এবং কিছুটা তার শরীরে মাখামাখি হয়ে গেল। আর যায় কোথা, সাথে সাথে একটি চিত্কাহর ভেসে এলো, ”আই অ্যাম নেভার গ’না ব্রেক এগ্সর অ্যাগেইন।” এবং কাঁদতে কাঁদতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
[ছয়] আমার বড় মেয়েটি যখন ক্লাশ ফোরে পড়তো তখন আমরা টরন্টো শহরে। সে স্কুলের অনেক কিছুর গল্পই আমার সাথে শেয়ার করে। একদিন আমাকে বলছে,
– ”বাবা, আমাদের ক্লাশে একটি মেয়ে আছে। ওর একটি ছোট বোন ও আছে আমার ছোট বোনটির সমান।”
– ”তা তে কি হলো?”
– ” ওরা বাঙালী; কিন্তু তোমার মতো করে বাংলা কথা বলে।”
সবকিছুই স্বাভাবিক। কেবল ’আমার মতো’ করে বাংলায় কথা বলে এটা উদ্ধার করতে পারলাম না। পরদিন একটু আগে আগে রওনা দিলাম স্কুল থেকে ওদের পিক আপ করার জন্য। ভাগ্যক্রমে ওই বাঙালী বোন-জোড়াকেও একসাথে পাওয়া গেল।
– ”তোমার নাম কি মা-মণি?”
পরিষ্কার সিলেটী অ্যাকসেন্টে মা-মণিটি তার নাম বললো। কথার টানে শুদ্ধ বাংলার লেশমাত্র নেই। সাথে সাথেই বুঝলাম ’আমার মতো’ বাংলার তাত্পতর্য।
(বাই দ্য ওয়ে, দশ বছরর সময় সিলট আইছি। আইয়া নু রিস্কাওলারে ডাইবার খওয়া হিকিলাইছি! আর কুব বালা খরি সিলেটি মাততাম ফারি!)
[সাত] আমার ছোট মেয়েটি বড় হয়ে উঠছে। ঠিক হলো এবছর সামারের বন্ধে সে বাবা-মা ও বড় বোন সহ বাংলাদেশে যাবে। বাংলা ভাষা শিখতে গিয়ে সে বেশ উত্সাটহিত হয়ে উঠলো। একদিন আমার সাথে তার কথাবার্তা চলছে এবং বাংলায়!
– ”বাবা, কি উপরে?”
– ”উপরে তো কিছু নাই!”
– ”না না উপরে নয়। বাংলাদেশে যখন কারো সাথে আমার প্রথমবারের মতো দেখা হবে, তখন কি আমি বলবো ’কি উপরে’?”
বহু কস্টে উদ্ধার করলাম ’হোয়াট্স আপ’!
[আট] এটি আমার এক সিনিওর বন্ধুর কাছ থেকে তার বাবা-বেলার কাহিনী শোনা। তার ছেলের বয়স বারো বছর। স্কুলে বন্ধুদের সাথে ইংরেজীর চাপে ছেলেটা বাসায়ও পুরোদমে ইংরেজীতে কথাবার্তা চালায়। বন্ধুবর একটু সতর্ক হবার চেষ্টা করলেন।
”সা’দ এখন থেকে বাসায় কেবল বাংলায় কথা বলবে, ইংরেজীতে নয়।”
সা’দ যথারীতি সম্মতি জানিয়ে দিলো।
রাতে তিনি ছেলেকে খেতে ডাকছেন – ”সা’দ খেতে আস।”
ও ঘরে পড়ার টেবিল থেকে সা’দ জিজ্ঞেস করল, ”বাবা, তুমি কি চাও এখন আমাকে খেতে?”
=)) Awesome.......
:clap:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
=)) =)) =)) =))
হেভি মজা পেলাম আজহার ভাই।
সার্থক শ্রম!