রাজ-এর মাথায় হঠাৎ একটা শয়তানি খেলে গেল ।
ওকে কষ্ট দিয়ে দিপ্তি শান্তিতে থাকবে, এইটা মেনে নাওয়া যায় না, ভাবল সে ।
কত্ত বড় খারাপ মেয়েটা , কাল সারাটা বিকাল ওকে টেনশনে রেখেছে। সেই কখন থেকে দিপ্তির একটা খোজ খবর কিচ্ছু পায়নি সে । একটা কল ও না, এমনকি ফেসবুক এ একটা পোক ও না…
পরে দেখে, ফেসবুক আইডিটাই ডিয়েক্টিভেটেড, দুইটা মোবাইল ও অফ।
কি কারণ ভেবে পেল না রাজ। অবশ্য ওর মন খারাপের কোন কারণই লাগে না সাধারনত…
ছোট বাচ্চাদের মত একটুতেই মন খারাপ করে ফেলে আর ছিঁচকাঁদুনী সভাবটাতো রয়ে গেছে ছোট থেকেই । কখন ও কেউ কিছু বললেই হল, সাথে সাথে দিবে কেঁদে!!! যেন তেন কান্না না তাও, একেবারে ৯৮ এর বন্যা
পুরা।নিজের মনেই হাসল রাজ, বেচারিকে হয়তো তাই ই এত ভাল লাগে, যে জন্য হয়তো সে ওর বেস্টফ্রেন্ড । কিন্তু যাই হোক, এই মুহূর্তে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে তাঁর। কখন ও মন খারাপ হলেই সে রাজ কে জানায় সে, তাকে
ফোন না দিয়ে থাকতে পারে না । তা হোক না সেটা তাঁর ছোট বোনের তাকে বাংলা সিরিয়াল দেখতে না দাওয়ার মত হাস্যকর কারন কিংবা রান্না খারাপ হওয়ায় ছোট ভাইয়ের তীব্র পচানি …
কিন্তু কাল সে তা করেনি…
সে কি জানতো এই সারাটা সময় রাজ মোবাইল টা নিজের কাছে নিয়ে ছিল কখন ফোন আসবে সেই অপেক্ষায় !! সে কি জানতো টেনশনে মান সম্মানের মাথা খেয়ে সে দিপ্তির সব ফ্রেন্ডদের অনবরত বিরক্ত করে গেছে ।
আর সে কিনা এই মধ্য রাত্রে একটু আগে ফোন করে বলে, “সরি দোস্ত, মাথাটা আজ ঠিক ছিল না ।”
রেগে যেয়ে রাজ তো কথাই বলতে পারেনি, কোন রকমে শান্ত হয়ে কয়েকটা ওয়ার্ড উচ্চারন করেছিল শুধু, “ক্যান? কি হইসে? রেগে গেলে ওর কথায় ঢাকাইয়া টান চলে আসে,।
“কোন কারণ না, এমনি ই- নিজের জন্যই মন খারাপ ছিল।”, এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল দিপ্তি।
“মানে ???” আর রাগ ধরে রাখতে পারল না সে।
“এইতো কিছু না রে… তোর খবর কি!! কয়টা মেয়েকে পটালি এই ফাঁকে?”
আর একটা কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি সে। ধাম করে ফোনটা রেখে দেয় সে…
ফোনটা রেখে দেওয়ার পরপর ই বুঝল কাজটা ঠিক করেনি । এখন শিওর সে সাঁরা রাত বেচারা বালিশ টাকে নোনতা করে ফেলবে চোখের পানিতে। মোবাইলটা বেজে উঠেছে, আবার কল দিয়েছে দিপ্তি।
একবার ভাবল কলটা ধরবে সে, পরক্ষনেই চিন্তাটা নাকচ করে দিল। একটু শাস্তি ওকে পেতেই হবে, ভাবতে লাগলো সে কি করা যায়। তখন ই মাথায় এল বুদ্ধিটা…
যেই ভাবা, সেই কাজ। ফোন টা অফ করে রাখল । ফেসবুক আইডিও ডিয়েক্টিভেটেড।
এখন বুঝবে মজা সে, কতটা পেইন সে রাজ কে দিয়েছে গত কয়েক ঘণ্টা । ফ্রেন্ড দের ও বলে রাখল যাতে কেউ ওর খোজ না দেয়।
এরপর মনের আনন্দে সকালে কিনে আনা “Darksider” গেমসটা ইন্সটল করতে দিল। রাত টা দিব্বি পার হয়ে যাবে, ভাবল রাজ ।
আর একবার ভাবল, কাজটা কি ঠিক হল?? খুব মন খারাপ করবে হয়তোবা। ল্যাপটপ কিনতে চাওয়ায় বাবার কাছে ঝাড়ি খেয়ে গতবার যেমন হয়েছিল। কিন্তু রাজ জানে, দিপ্তি আর যাই হোক ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারবে না। ওকে হাসাতে রাজ এর হাইয়েস্ট হলে ১ মিনিট লাগবে।
অবশেষে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে সে “Darksider”খেলতে বসে গেল ।
যথারীতি সকাল ৭টায় ঘুমায়ে, বিকালে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম ভাঙল তাঁর। ছুটির দিন বলে বাঁচা, নাইলে হয়তো গায়ের উপর আম্মুর ঢেলে দাওয়া বালতি ভর্তি পানি খেয়ে উঠতে হতো!!
টা যাই হোক, উঠেই প্রথম মনে পড়ল দিপ্তির কথা । এখনও রাগ করে বিছানায় ভেটকি মেরে আছে কিনা কা জানে । আনমনে মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। ফোনটা অন করলো। সাথে সাথে মেসেজের বন্যায় ভেসে গেল। সব ই অলমোস্ট এক ই কথা,
“আমি সরি রে। প্লিজ এই পিচ্চি মাথা খারাপ গাধী তাকে মাফ কর। প্লিজ…”
একদম শেষ মেসেজটায় যেন একটু ভিন্ন কিছু পেল রাজ । পড়তেই পুরা মাথা খারাপ হয়ে গেল ওর । লেখাটাএই রকম ছিল,
“ঐ রাজ, আমার ভাল লাগছে না রে । প্রচণ্ড খারাপ লাগছে, একবার ফোন অন কর, কথা বলি। মাথা ঘুরাচ্ছে আমার…। কেমন বমি বমি আসছে…”
অন্য সময় হলে হাসতে হাসতে গড়াই পড়ত বিছানা থেকে। কিন্তু তখন আর হাসি পেল না ওর। দ্রুত ফোন দিল দিপ্তির মোবাইলে… কয়েকবার ফোন করার পর ওর ছোট বোন ধরল। বলে, ” আপুতো অনেক অসুস্থ ভাইয়া, মারাত্মক জ্বর। ডক্টর রেস্ট নিতে বলে গেছে”
এরপর কিছু কথা বলে ফোনটা রাখল।যদি পিচ্চিটা মিত্থা না বলে তাহলে দিপ্তি অনেক অসুস্থ।
দ্রুত ফ্রেশ হয়ে শার্ট, প্যান্ট পড়ে নিল সে। দিপ্তির বাসায় যেতে হবে এক্ষনি…
বেল দিতেই দরজা খুলে গেল । এবং সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে বড় “জাক-অ্যাস” বলে মনে হল রাজের । হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো সে। ঐ যে কি সুন্দর মিস ভেটকি ওরফে দিপ্তি সরকার দরজায় দাড়িয়ে আছেন । পিছনে দাড়িয়ে তাঁর গুনধর বোনটিও সবগুলো দাত বের করে আছে…
“হাহাহা। আমাকে কষ্ট দিবি??? এত সোজা!! হাহাহা। লাউডস্পিকারে তো শুনলাম কে যেন কেঁদে দিচ্ছিল আর একটু হলে”…হাসতে হাসতে বলল দিপ্তি…
হতভম্ব রাজ ভিতরে ঢুকে পিচ্চিটার গাল টান্তে টান্তে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,” হুম। আর আমি কিনা ভাবলাম “পিচ্চি মাথা খারাপ গাধীটা” বুঝি আমাকে মামা বানিয়েই দিল এইবার 😛 ” …
পরক্ষনেই দেখল বেচারির মুখটা কাল হয়ে গেছে…
এরপর ওকে শান্ত করতে সেদিন অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছিল রাজ কে। কিন্তু সেদিন সে বুঝতে পারেনি দিপ্তির হঠাৎ কেঁদে দেওয়ার কারন…কিংবা কে জানে বুঝতে চায়নি হয়তো…
আগের লেখাগুলোর মত অত মুড়মুড়ে হইলো না কিন্তু আসিফ।
আছো কেমন?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
achi to valoi... :p :gulli2:
@Asif@